শুধু পাবলিক সেক্টর নয়, বেসরকারি বিনিয়োগ ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নের পর যে পদক্ষেপটি এখন নিতে হবে, তা হলো আরও বিনিয়োগের জন্য অর্থ জোগাড় করা। এই বিনিয়োগ প্রাইভেট সেক্টর থেকে আসা উচিত। এখানে পাবলিক সেক্টরের ভূমিকা রয়েছে। তা হলো অবকাঠামোগত সহায়তা দেয়া। রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক প্রদান করা। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাইভেট সেক্টর এই সুযোগগুলো গ্রহণ করে বিনিয়োগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে না।’
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘পদ্মা ব্রিজ অ্যান্ড অপরচুনিটিজ ফর বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারটির আয়োজন করে গ্রিন ডেল্টা ক্যাপিটাল লিমিটেড। এতে সহায়তা দিয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও গ্রিন ডেল্টা সিকিউরিটিজ।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ।
ড. মসিউর বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক না হলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে সীমাবদ্ধতা চলে আসে। অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা চলে আসে। অর্থনীতির সমৃদ্ধি প্রাইভেট সেক্টরের প্রকৌশলে গড়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা অর্জন করতে হলে বিনিয়োগকারীদের হাতে মূলধন নিশ্চিত করতে হবে।’
মূলধন জোগাড় ও বিনিয়োগের উপায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা সঞ্চয় করে তাদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করা যায়। যাদের কাছে মূলধন আছে তাদের সবাইকে সেরা উদ্যোক্তা বা সম্পদ ব্যবস্থাপক হতে হবে এমন নয়। কিছু মধ্যস্থতাকারী থাকবে, যারা এই সম্পদ মজুত করবে। এটিকে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করতে পারবে। এটাই মধ্যস্থতাকারী এবং ফিন্যানশিয়াল মার্কেটের ভূমিকা।’
আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের দায়িত্ব পালনে ফিডুশিয়ারী (জিম্মাদার) রেসপনসিবিলিটি যথাযথভাবে পালন করার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ফিডুশিয়ারি রেসপনসিবিলিটির মানে হলো, অন্যের টাকা বিনিয়োগ করলে সেটার মুনাফা যেন তাদের প্রত্যাশা পূরণ করে।’
দেশের বন্ড মার্কেটকে আরও বিস্তৃত করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা। বলেন, ‘বন্ড মার্কেটের ওপরে আমাদের আলোচনা বলে দেয় অনেক রিসোর্সেস আছে এটাকে মবিলাইজ করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্রাউড ফান্ডিংয়ের কথা বলেছি। এর অর্থ হলো অনেক মানুষ মিলে ছোট ছোট অঙ্কের অর্থ জোগান দেয়া। ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প মূলধন নিয়ে শুরু করে, কিন্তু ওই টাকা পুনরায় বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বড় হয়ে উঠছে। এই টাকা ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আরো সম্প্রসারণ করে। কিন্তু এসব অর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল উৎপাদন, কৃষি ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ হয় না।’
ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘এই ক্রাউড ফান্ড মবিলাইজ করার একটা বড় সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে ইনফরমাল সেক্টরকে ফরমাল সেক্টরে রূপান্তরিত করা যাবে। ফরমাল সেক্টর বিস্তৃত করা গেলে রেভিনিউ আদায় বেড়ে যাবে সরকারের। অর্থনীতিতে উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রিন ডেল্টা ক্যাপিটাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান নাসির এ চৌধুরী।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রফিকুল ইসলাম সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে অনুষ্ঠিত হয় প্যানেল আলোচনা। প্যানেল মডারেটর হিসেবে ছিলেন একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক।
প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানের শেষে ভোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা চৌধুরী।
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা, বাঙালির স্বাধীনতার লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনে নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী আজ, ৮ আগস্ট। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিলেন মহীয়সী এই নারী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক লেখনীতে বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নেপথ্য ভূমিকা উঠে এসেছে। আন্দোলন-সংগ্রামে নীরব সমর্থন, শক্ত হাতে সংসার মোকাবেলা এবং সন্তানদের মানুষ করার পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধুকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহ দিয়ে গেছেন।
স্বামীর জেল-জুলুম এমনকি ফাঁসি হতে পারে জেনেও তাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধা দেননি। বরং ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার বার্তা দলের নেতাকর্মীদের পৌঁছে দিতেন তিনি। ক্ষেত্রবিশেষে নেতাকর্মীদের পরামর্শ এমনকি সিদ্ধান্তও দিয়েছেন অকুতোভয় এই নারী। বলা হয়ে থাকে, শেখ মুজিব দীর্ঘ আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে শুধু বাঙালি জাতির পিতা নন, বিশ্ববরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন তারই প্রেরণায়।
বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অফুরান প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ ছয়-দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারে বারে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি, তখন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বঙ্গমাতার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন।
আগরতলা যড়যন্ত্র মামলায় প্যারোলে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি নিয়ে একটি কুচক্রী মহল বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল। তখন প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এই মহীয়সী নারী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সপরিবারে খুনি চক্রের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ হন।
কর্মসূচি
বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে।
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে ‘বাঙালির গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের সংগঠক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ।
এছাড়াও বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে আরও দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর একটির আয়োজনে রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
অপর আলোচনা সভাটি হবে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের আয়োজনে এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
এদিকে মহিলা লীগের উদ্যোগে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনে অসহায় ও দুস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বিকালে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলে নৈশ কোচে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাদের মধ্যে ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনও আছেন।
রোববার রাতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ জনকে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব জানায়।
এর আগে আলোচিত এ মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন, রাজা মিয়া, মো. আব্দুল আউয়াল ও মো. নুরনবী। গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন। ওইদিন তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় বলে চিকিৎসকরা জানান।
এ ঘটনায় বাসের যাত্রী কুষ্টিয়ার হেকমত আলী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা করেন।
মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাসে ডাকাতি ও এক নারী যাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর ঢিবির কাছে বাসের গতি থামিয়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ ও মানুষের জন্য কীভাবে আত্মত্যাগ করতে হয় নারীরা তা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
গণভবন থেকে এই আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ‘বঙ্গমাতা: এ প্যারাগন অফ উইমেন লিডারশিপ অ্যান্ড ন্যাশন- বিল্ডিং ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনও উদ্বোধন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি মিসেস সেলিনা হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতির পিতার পাশে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন। সংসার, রাজনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘বঙ্গবন্ধু রাজবন্দি থাকাকালে তিনি বিভিন্ন মামলা মোকাবিলা, সংসার দেখাশোনা এবং দলীয় কর্মীদের আর্থিক সহযোগিতা করতেন। সংসারের কোনো ব্যাপারে তিনি বঙ্গবন্ধুকে বিরক্ত করতেন না। জেলখানা থেকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বার্তা সংগ্রহ করে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে দিতেন।’
বঙ্গমাতার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের প্রতিটি পরতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য অবদান রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অনেক সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিজেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে গর্ব অনুভব করি।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। বঙ্গমাতার নামে প্রতিষ্ঠিত এ সেন্টার জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-বিষয়ক গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর অবদান রাখবে বলে আশা করি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সম্মেলনের দুটি সেশনে চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এমনিতে যাত্রীসংকটে ভাড়া কমিয়ে দেয়া লঞ্চের ভাড়া শতভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন মালিকরা। জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বা ৪১ শতাংশ বাড়ানোর পর তারা এই দাবি তুলছেন।
রোববার বিকেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে পাঠানো প্রস্তাবে ভাড়া বাড়ানোর এই দাবি জানান তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।’
সোমবার দুপুরে নৌ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত বৈঠকে কত ভাড়া বাড়ানো হবে, সে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা ও অকটেনের নাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার।
এর প্রতিক্রিয়ায় এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লায় কিলোমিটারে ৪০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।
গত নভেম্বরে যখন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়, তখন লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৩৫ শতাংশ।
তখন ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সার বদলে ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বের জন্যও ১ টাকা ৪০ পয়সার বদলে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে।
অর্থাৎ এবার মালিকরা ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কিলোমিটার প্রতি ৪ টাকা ৬০ পয়সা এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি পথের জন্য কিলোমিটারপ্রতি ৪ টাকা ভাড়া ঠিক করতে চাইছেন।
এই ভাড়া বাস ভাড়ার হারের চেয়ে অনেকটাই বেশি, যদিও নৌপথের ভাড়া সাধারণত সড়কপথের চেয়ে কম থাকে।
বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে নগর পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি আড়াই টাকা এবং দূরপাল্লায় ৫১ আসনের বাসের ক্ষেত্রে ২ টাকা ২০ পয়সা হারে ভাড়া ঠিক করা আছে। কোনো বাস আসনসংখ্যা কমালে আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়াতে পারবে।
বাস ও লঞ্চের ভাড়া কতটা বাড়তে পারে, তার একটি অনুমিত হিসাব অবশ্য দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি লঞ্চ ভাড়া বাড়তে পারে ৪২ পয়সা।
কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না লঞ্চমালিকরা। লঞ্চমালিক নেতা সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘বাসের হারে আমাদের বাড়ালে চলবে না। আমাদের ক্ষেত্রে আরও বেশি বাড়াতে হবে।’
বাংলাদেশে লঞ্চের প্রধান পথ ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে বৃহত্তর বরিশাল, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর রুটে। নৌপথেই এতদিন যাত্রী বেশি থাকলেও গত ২৬ জুলাই থেকে পদ্মা সেতু চালুর পর পরিস্থিতি উল্টে গেছে।
যাত্রীরা সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে তুলনামূলক দ্রুত রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের ফেরাতে ভাড়া অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে লঞ্চে। শতভাগ ভাড়া বাড়লে তারা যাত্রী কতটা পাবেন, এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আরও পড়ুন:অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে।
ঢাকার বিশেষ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে রোববার মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এ জন্য আগামী ১৪ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করে আদালত।
মামলাটিতে অভিযোগপত্রের ৩৩ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
দুদকের মামলায় আসামিরা হলেন ডিআইজি মিজান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে মাহমুদুল হাসান। এর মধ্যে সোহেলিয়া ও মাহবুবুর পলাতক।
২০১৯ সালের ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
২০২০ সালের ১ জুলাই মিজানকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান বিচারক।
ওই মামলার বর্ণিত সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের সময় দুদক কর্মকর্তা এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার কথা নিজে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেন ডিআইজি মিজান। ওই মামলাটি ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।
ঘুষ লেনদেনে দুদকের করা মামলায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুদকের বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত ডিআইজি মিজানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম।
এর মধ্যে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। অন্যদিকে মানিলন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন দুদকের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:কামরুল ইসলাম কর্মস্থল মেরুল-বাড্ডায় যেতে মালিবাগ মোড় থেকে বাসে ওঠার পর তার কাছ থেকে ভাড়া চাওয়া হয় ১৫ টাকা। পথের দূরত্ব হবে বড়জোর তিন কিলোমিটার।
কেন ১০ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা দিতে হবে- কামরুল প্রশ্ন তুললে হেলপার বলেন, ভাড়া বেড়েছে। তখন তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, এই পথের দূরত্বে তিন কিলোমিটার। ফলে নতুন হার আড়াই টাকা হিসাবে ভাড়া আসে সাড়ে ৭ টাকা। আগে ২ টাকা ১৫ পয়সা হিসাবে ভাড়ার সময় সর্বনিম্ন ভাড়া বাবদ ১০ টাকা দিতেন। এবারও তাই দেবেন।
কিন্তু হেলপার মানতেই চাইছিলেন না। তিনি বলতে থাকেন, ১৫ টাকা করে অন্যদের কাছ থেকে আদায় করেছেন। কিন্তু কামরুল ধমক দিলে পরে তিনি ১০ টাকা নেন।
ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার পর গত নভেম্বরে বাস ভাড়া বাড়ানোর পরও একই নৈরাজ্য দেখা গিয়েছিল। তখন কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা হারে ভাড়া ঠিক করা হয়। কিন্তু আগে থেকেই এর চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছিল। এর পরও ভাড়া আরও বাড়ানোর পর সরকারি হারের চেয়ে আরও বেশি আদায় করা হয়।
এবারও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে যত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, বিভিন্ন রুটে আগে থেকেই তার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটি থেকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড হয়ে রামপুরা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্বে আগের হিসাবে ভাড়া আসে ২৩ টাকা ৬৫ পয়সা। নতুন হিসাবে ভাড়া আসে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা।
কিন্তু আগে থেকে আদায় করা হচ্ছিল ৩০ টাকা। এখন আরও ৫ টাকা বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে ৩৫ টাকা।
এ তো মোট দূরত্বের হিসাব। বাড়তি ভাড়া আদায়ে কয়েক বছর ধরে ওয়েবিল নামে যে পকেট কাটার উপায় বাসমালিকরা বের করেছেন, সে কারণে স্বল্প দূরত্বে আরও বেশি ঠকছেন যাত্রীরা।
সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করায় আগের হিসাবে এই টাকায় যাওয়ার কথা ৪ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। কিন্তু ইস্কাটন থেকে রামপুরা পর্যন্ত দুটি ওয়েবিল বসিয়ে এরচেয়ে কম দূরত্বে আদায় করা হচ্ছিল ২০ টাকা।
এখন ভাড়া বাড়ার পর ওয়েবিল থেকে ওয়েবিল পর্যন্ত ১৫ টাকা করে দাবি করা হচ্ছে ৩০ টাকা।
খুচরা ১ বা ২ টাকার নোটের অভাবে বাস ভাড়ার ক্ষেত্রে ১১, ১২ কিংবা ১৩ বা ১৪ টাকার হিসাব উধাও হয়ে গেছে আগে থেকেই। ফলে ১০ টাকার বেশি কোনো ভাড়া নেয়া হলে সেটি ১৫ টাকা হয়ে যায়। কোনো কোনো বাসে ১০ টাকার বেশি আদায়ের একক ২০ টাকা।
বাসে ভাড়ার চার্ট থাকার যে বিষয়টি বরাবর নির্দেশ আসে, সেটিও প্রতিবার উপেক্ষা করে মালিকপক্ষ। এবারও তাই হয়েছে। আগের মতোই ভাড়ার চার্ট না থাকায় ইচ্ছামতো আদায় করা যাচ্ছে। আর যানজটের নগরে স্বল্প দূরত্ব দীর্ঘ অনুভূত হওয়ায় কোনো জায়গা থেকে অন্য কোথাও দূরত্ব কত, সেটিও বোঝা যায় না।
শনিবার রাতে নতুন হারে ভাড়া নির্ধারণের সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, ওয়েবিল অবৈধ। কোথাও এই অভিযোগ থাকলে তাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নেবেন।
গত নভেম্বরেও একই কথা বলেছিলেন তিনি। হুমকি দিয়েছিলেন, ওয়েবিলে চালালে বাসের রুট পারমিট বাতিল করে দেবেন। তবে বাস্তবতা হলো, এই হুমকি কাগুজে হয়ে রয়েছে। স্পষ্টত, তিনি জানেন না ওয়েবিল আছে কি না।
বাস মালিকদের সমিতি সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েতউল্লাহ নভেম্বরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ঢাকায় ওয়েবিলে বাস চলবে না। ভাড়া কাটা হবে কিলোমিটার হিসাবে। কিন্তু আগের বহুবারের নানা ঘোষণার মতোই বাস মালিকরা ওয়েবিল মানেননি। যাত্রীরা ঝগড়াঝাটি করে একপর্যায়ে ক্ষ্যান্ত দিয়েছেন।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে কারওয়ান বাজারের দূরত্ব ৪ দশমিক ১ কিলোমিটার। নতুন হারেও এই পথের ভাড়া আগের মতোই ১০ টাকা রাখার কথা। কারণ দূরত্ব অনুযায়ী হয় ১০ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু রোববার সকাল থেকে আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা।
এ নিয়ে বাসের সহকারী ও চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হচ্ছে। শ্রমিকদের ভাষ্য, তেলের দাম বাড়ছে, ভাড়া ১৫ টাকা করেই দিতে হবে।
রোববার দুপুরে ইমতিয়াজ মাহমুদ মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজার আসেন অভিনন্দন পরিবহনের একটি বাসে।
তিনি বলেন, ‘কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ৫০ পয়সা হারে এই দূরত্ব হিসাব করে বাস ভাড়া দিতে চাইলে হেলপার রাজি হয়নি। তার দাবি, এখন ভাড়া ১৫ টাকা। আমরা হিসাব বুঝি না।’
কমলাপুর থেকে রামপুরায় নিয়মিত যাতায়াত করা নূর। জানান, বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাসের সহকারীদের সঙ্গে কয়েকজনের তর্ক হয়েছে।
রাইদা বাসের সহকারী আলম বলেন, ‘আমাদের মালিক যেভাবে বলে দিয়েছে আমরা সেভাবেই ভাড়া নিচ্ছি।’
প্রতিবার বাস ভাড়া নতুন করে নির্ধারণের পর বাড়তি ভাড়া আদায়ে বিআরটিএ যে ব্যর্থ কৌশলগুলো নিয়ে থাকে, এবারও সেভাবেই কাজ করছে।
এবার বাড়তি ভাড়া আদায় ঠেকাতে রাজধানীতে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
একটি আদালত পরিচালনা করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ আনোয়ার জানান, কিলোমিটারের হিসাবের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের প্রমাণ তারা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। যারা কিলোমিটার হিসাবে আড়াই টাকার বেশি করে ভাড়া নিয়েছে তাদের জরিমানা করছি।’
বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধের পাশাপাশি গাড়ির রুট পারমিট ও অন্য কাগজপত্র ঠিক আছে কি না এসব বিষয় দেখা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির তীব্র প্রতিক্রিয়া
রাজধানীতে বাস ভাড়ার নৈরাজ্যের সময় বিআরটিএর কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যাত্রীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ভাড়া সমন্বয় করার পর মালিকরা কিলোমিটার ধরে হিসাব করেন। কিন্তু আগে যে বাড়তি ভাড়া নিতেন, তার সঙ্গে নতুন করে তাদের মতো বাড়তি ভাড়া ঠিক করে নেন। ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা নেন। ৬০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা নেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি, প্রতিটি স্পটে হিসাব করে ভাড়া সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হোক। গাড়ির ভেতর ডিজিটাল বোর্ড লাগানো হোক। যা দেখে যাত্রী, চালক, সহকারী ও তদরকি সংস্থা সবাই বুঝতে পারবে।’
মোজাম্মেল মনে করেন, ওয়েবিল থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে- বিআরটিএ চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যে প্রমাণ হয়, বাস ভাড়া আসলে কী হয়, সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানেই না।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির নেতা বলেন, ‘যাত্রীরা যে বাসেই উঠুক তারা ওয়েবিল দেখতে পান। কিন্তু বিআরটিএ চেয়ারম্যান তা জানেন না। এসব কথা শুনে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, বাস মালিকদের সঙ্গে ওনাদের কোনো আঁতাত আছে কি না। নইলে উনি বা ওনার কর্মকর্তারা কেন দেখতে পান না।’
ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে নামকাওয়াস্তে অভিযান চালিয়ে বাস ভাড়ার নৈরাজ্য দূর করা যাবে না বলেও মনে করেন মোজাম্মেল। বলেন, ‘মিডিয়ায় যতদিন আলোচনা থাকে, ততদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে তৎপর থাকেন। একই ইস্যুতে দিনের পর দিন নিউজ করাও সম্ভব হয় না। নতুন ইস্যু আসে, আর বাড়তি ভাড়ার কথা সবাই ভুলে যায়।’
আরও পড়ুন:১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদকারীদের চিহ্নিত করে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনে নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা যোদ্ধাদের চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটি/কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
রোববার বিচারপতি খসরুজ্জামান ও বিচারপতি ইকবাল কবির লিটনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বাকির উদ্দিন ভুইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন বিপুল বাগমার।
রুলে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, সংস্কৃতি সচিবকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের পর আইনজীবী বাকির উদ্দিন ভুইয়া বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তৎকালীন সামরিক সরকার মিছিল-মিটিং সব বন্ধ করে দেয়।
‘ভয়াল পরিস্থিতির মধ্যেও নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, যশোর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ হয়। পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় মুজিব বাহিনী নামে দুটি সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী গঠিত হয়। তখন কয়েক হাজার বঙ্গবন্ধুভক্ত ছাত্র-তরুণ-যুবক এই দুই বাহিনীতে যোগদান করেন। তারা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহে লিপ্ত হন।’
আইনজীবী আরও জানান, তৎকালীন সরকার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন শুরু করে। ওই সময়ের ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার জাতীয় মুক্তি বাহিনী ও জাতীয় মুজিব বাহিনীকে নানাভাবে সহযোগিতা করত। কিন্তু ১৯৭৭ সালে ভারতে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় মোর্চা সরকার’ তাদের বাংলাদেশে সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করে। তখন তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দিন। জেল, জুলুম ও নির্যাতন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৪৭ বছর পার হলেও সেই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অনেকেই চরম কষ্ট-অবহেলায় জীবনযাপন করছেন। এ কারণে গত ১ আগস্ট নেত্রকোণার আনিস খোন্দকার, সাইদুল কাদির, সুনামগঞ্জের ইউসুফ আলী, পরিমল সরকার ও গাজীপুরের স্বপন চন্দ হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি শেষে আদালত রুল দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য