সামষ্টিক অর্থনীতি নয়, মধ্যমেয়াদে সমস্যাগুলো দেশের অর্থনীতির মূল সমস্যা বলে অভিমত দিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা।
রোববার গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত এক সেমিনারে এ মতামত দিয়ে তারা বলেছেন, বাজার ব্যবস্থা, ব্যাংক খাত, নিয়ন্ত্রক সংস্থার যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। স্থানীয় সরকার বলতে কিছু নেই। অর্থনীতির নার্ভ ব্যাংক খাতের সুশাসনের দুর্বলতা, ভ্রান্ত নীতি– এসব কারণে অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সেমিনারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত। দুর্নীতি, অর্থপাচার, সুশাসনের অভাব- এসব আগে থেকেই ছিল। নতুন করে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি। অর্থনীতিতে চলমান সংকট আমরা কাঠিয়ে উঠতে পারব। তবে মধ্য মেয়াদে প্রতিবন্ধকতাগুলোর সমাধান না হলে কোনো সুবিধা মিলবে না।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রাসাদ বানালেন আর ভেতরে নড়বড়ে। তাতে কি কিছু লাভ হবে?
ব্যাংক খাতকে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই খাত নড়বড়ে হলে অর্থনীতি ভালো হবে না। যা করা দরকার তা না করে উল্টো কিছু করা হয়। ডলার বিক্রি করে রিজার্ভ ঠিক করা যাবে না। ব্যাংক খাতের নীতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মালিকদের চাপে। মুদ্রা নীতি প্রকাশ করায় এক বছরে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ভারতে চারবার করা হয়। সুশাসনই ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘দারিদ্র্য কমানোই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। কভিডের আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ শতাংশ। কভিড–পরবর্তী সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ শতাংশ।’
দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারের স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য কমাতে হলে বাড়াতে হবে কাজের সুযোগ এবং সামাজিক সুরক্ষায় আরও বেশি নজর দিতে হবে।
দেশে আয়ের বৈষম্য বৃদ্ধিকে আরেকটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদ। এলডিসি উত্তরণে দেশের রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে পারে। এজন্য এখন থেকে সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
শিল্প স্থাপনের জন্য মেয়াদি ঋণ দরকার বলে জানান এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত ব্যাংকগুলো মেয়াদি ঋণের জোগান দিতে পারছে না ঠিকমতো। এজন্য আমরা একটি বিনিয়োগ ব্যাংক করার দাবি জানাচ্ছি। তাহলে আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।‘
সংকট মোকাবিলায় ডলার খরচে সাশ্রয় এবং রপ্তানি বাড়ানোর কথা বলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
আরও পড়ুন:গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সম্প্রতি যুব্তরাজ্যের কেএমবি ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার লিমিটেড সঙ্গে লন্ডনের একটি স্থানীয় হোটেলে রেমিটেন্স প্রেরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত এবং কেএমবি ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার লিমিটেড, ইউকে-এর সিইও কামরু মিয়া নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেএমবি ইন্টারন্যাশনাল মানি ট্রান্সফার লিমিটেড, ইউকে-এর মাধ্যমে সহজে, দ্রুত ও কম খরচে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সকল শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে পারবেন।
ইউরোপের অন্যান্য দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরাও শীঘ্রই এই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
ইসলামী ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাকাডেমির (আইবিটিআরএ) উদ্যোগে ‘অডিটিং ফর অ্যাচিভিং এক্সিলেন্স ইন ব্যাংকিং অপারেশন্স’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
আইবিটিআরএ-এর প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালার বিভিন্ন সেশন পরিচালনা করেন ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আলতাফ হুসাইন, ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর নাইয়ার আজম, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী, রাজা মিয়া, নাজমুস সাকিব, রেজাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ।
ব্যাংকের অডিট অ্যান্ড ইনস্পেকশন ডিভিশনের ১০০ জন কর্মকর্তা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশি আয় বা রেমিট্যান্সের বিপরীতে কোনো ধরনের উৎসে কর না কাটার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ।
গত রোববার দেশের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংককে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের এক নির্দেশনায় ২০২৩ এর ১২৪ ধারা অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং বাবদ পাওয়া রেমিট্যান্সের ওপর উৎসে কর আদায় করতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। অনেকে ধারণা করেন, ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হবে। এ নিয়ে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তাই বিষয়টি স্পষ্ট করতে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়, আয়কর আইন ২০২৩ এর ১২৪ ধারা অনুযায়ী, আইটি ফ্রি ল্যান্সিং খাত থেকে কোনো উৎসে কর কাটা যাবে না।
দেশে সেপ্টেম্বর মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ (১৯৬ মিলিয়ন ডলার) কমে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা প্রায় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের মাস আগস্টের তুলনায় ২২৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার কমেছে। খবর ইউএনবির
প্রবাসীরা আগস্ট মাসে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। ফেব্রুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও একধাপ কমে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা গত ৪০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল। এরপরে, কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশি প্রবাসীরা চলতি বছরের জুন মাসে ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে এবং জুলাই মাসে তা ছিল ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যখন খোলা বাজারে বিনিময় হার ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর হুন্ডির চাহিদা বাড়লে রেমিট্যান্স কমে যায়।
গত মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি। তাই বেশি লাভের আশায় প্রবাসীরা বৈধ মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তারা।
গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশ মোট ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছে। যার পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনটি ভিন্ন শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের মূল্য নির্ধারণ করছে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ের প্রতি ডলারের দাম দিচ্ছে ১১০ টাকা ৫ পয়সা। রপ্তানি বিল ক্যাশিং প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫পয়সা দেয়া হয় এবং আমদানি ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য ১১০ টাকা ৫ পয়সা দেয়া হয়।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এটি অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার একটি রেসিপি।
তিনি বলেন, ডলারের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা অবৈধ চ্যানেলের (হুন্ডি) মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। খোলা বাজার এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর একই রকম না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি শিগগিরই উন্নতি নাও হতে পারে।
মনসুর বলেন, ‘রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাবে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে কম রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে, কারণ দেশ থেকে নির্বিচারে অর্থ পাচার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে রেকর্ডসংখ্যক শ্রমিক রপ্তানি করলেও, রেমিট্যান্সের পরিমাণ ক্রমাগত কমছে; যা পরিসংখ্যানের সঙ্গে মেলে না।
আরও পড়ুন:৪০ কেজিতে মণ হলেও মাছ চাষীদের কাছ থেকে ৪২ কেজিতে মণ হিসাবে মাছ কিনে থাকেন পাইকাররা। তারপরও তাদের পোষাচ্ছে না। প্রশাসনের নির্দেশে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করার পরপরই বেঁকে বসেছেন পাইকররা। আড়ত থেকে তারা মাছ কিনবে না, আর কিনতে হলে প্রতি মণে আরও এক কেজি বেশি দাবি তাদের।
বাইরে থেকে আসা পাইকারদেরও মাছ কিনতে নিষেধ করছেন তারা। এমনকি হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাছ বিক্রি বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে নওগাঁর পৌর মাছ বাজার।
প্রায় ৫০ বছর ধরে এ মাছ বাজারে প্রতিদিন মাছ বিক্রি হয়ে আসছে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২২টি আড়তে বেচাকেনা হয় মাছ। ফলে নওগাঁসহ আশপাশের জেলার মাছ চাষীদেরও গন্তব্য এ বাজারটি। সাধারণত ৪২ কেজিতে মণ ধরে আড়তে মাছ দিয়ে থাকে মাছ চাষীরা। পরে খুচরা বিক্রেতারা অল্প পরিমাণে মাছ কিনে নিজেদের সুবিধামতো সন্ধ্যা পর্যন্ত তা বিক্রি করে থাকে।
সাধারণত মাছ চাষী ও পুকুর চাষীদের কাছ থেকে প্রচলিত কাঁটার দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে মাছ কিনে পরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তা ডিজিটাল মিটারে বিক্রি করতেন পাইকাররা। তবে সম্প্রতি আড়তেও ডিজিটাল মিটারে মাছ কেনাবেচার জন্য প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সরকারি নির্দেশনা পেয়ে রোববার থেকে নওগাঁ পৌর মাছ বাজারে চালু হয়েছে ডিজিটাল মিটারে পরিমাপ করে মাছ কেনাবেচা। এ নিয়ে পাইকার-আড়তদারদের মধ্যে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।
ডিজিটাল মিটারে পাইকাররা মাছ কিনতে নারাজ। ফলে একে অপরকে দোষারোপ করা শুরু করে দুপক্ষ। একপর্যায় পাইকাররা সংঘবদ্ধ হয়ে আড়ত থেকে মাছ কেনা বন্ধ করে দেন। ফলে আজ দীর্ঘক্ষণ ধরে বন্ধ রয়েছে পৌর বাজারের মাছ কেনাবেচা। এতে ভুগতে হচ্ছে মাছচাষী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। এদিকে আড়তে মাছের কেনাবেচা বন্ধ থাকায় আড়তদারদেরও উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে মাছ বাজারটিতে।
সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন
এর আগে ওই বাজারটিতে ডিজিটাল মিটার চালু করতে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলে জানান পৌর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গৌতম হাওলাদার ভুট্টু। তখন থেকে একেক করে সবাই ডিজিটাল মিটারের ব্যবহার শুরু করলেও আড়তে প্রচলিত কাঁটার দাঁড়িপাল্লাই ধরে রাখেন পাইকাররা।
এ বিষয়ে গৌতম হাওলাদার বলেন, ‘ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি করা নিয়ে কয়েকদিন আগেও পাইকারদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। অক্টোবরের ১ তারিখের মধ্যে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য প্রশাসন থেকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে আজ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। কিন্ত পাইকাররা এ প্রক্রিয়া মানতে নারাজ।
‘এখানে ২২টি আড়তে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। নিজেদের সুবিধার্থে পাইকাররা এখন সিন্ডিকেট তৈরি করছে। বাইরে থেকে যেসব পাইকার মাছ কিনতে আসছেন, তাদেরও মাছ না কিনতে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে জেনেছি। এভাবে চলতে থাকলে মাছ চাষীরা এখানে মাছ বিক্রি করতে আসবেন না। ফলে সবার জন্যই সমস্যা তৈরি হবে।’
নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘আড়তদাররা ডিজিটাল মিটার চালু করার জন্য কয়েকদিন আগেই আমাকে অবগত করেছিলেন। সেসময় তাদের বলা হয়েছিল, জনগণ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- সেদিকে নজর রেখে তাদের কাজ করতে হবে। ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করা হলে পরিমাপে স্বচ্ছতা থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে শুনছি, ডিজিটাল মিটার ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে নানা বিড়ম্বনা শুরু করেছেন তারা। তাই দুই পক্ষকে (আড়তদার ও পাইকার) নিয়ে বসে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে সবার জন্য মিটার চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।’
আড়তদারদের বক্তব্য
মামুন মৎস্য আড়তের স্বত্ত্বাধিকারী মোস্তফা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুজ্জামান মামুন জানান, দিনে গড়ে প্রায় এক লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা করা হয় একেকটি আড়তে। সে হিসাবে একেকটি আড়তে মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মতো মাছ বিক্রি হয়। আশপাশের প্রায় ৫০টি বাজারের ব্যবসায়ীরা এই বাজারে মাছ কিনতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য পাইকারদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করি। আলোচনার পর পাইকরারা সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের কাছ থেকে তারা মাছ কিনবেন না। এমনকি বাইরে থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা আসেন, পাইকাররা তাদেরও মাছ না কিনতে উল্টো হুমকি দেন।’
নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও আড়তদার সমিতির উপদেষ্টা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। কিন্তু গুটিকয়েক পাইকারের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। চাষীরা মাছ বিক্রি করতে আসলে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে বলে শুনতে পারছি।
‘তারা একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। পাইকাররা যদি ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না? এসব সমস্যা সমাধান না হলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে।’
যা বলছেন পাইকাররা
পাইকারদের দাবি, ডিজিটাল মিটারে মাছ পরিমাপ করা হলে ওজনে ঠিকঠাক পাওয়া যাবে না। তারা বলছেন, ডিজিটাল মিটারে পরিমাপের কিছুক্ষণ পর ওই মাছ আবার পরিমাপ করলে ওজন কমে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে পৌর মাছ বাজারের পাইকার ফেরদৌস প্রামানিক বলেন, ‘আগে কাঁটাতে ৪২ কেজিতে মণ হিসাবে মাছ কেনা হতো। হঠাৎ করে আজ আড়তে ডিজিটালে মিটারে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে।
‘আগে কাঁটাতে মাছ পরিমাপের সময় ঝুড়িতে পরিমাপ করা হতো। এতে ঝুড়িতে ওঠানোর পর থেকেই মাছের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত পানি ঝরে যেত, তাই ওজন ঠিক থাকত। এখন ক্যারেটে পানিসহ ওজন করা হলে আমাদের জন্য লোকসান হবে। এতে ওজনে ঠিক পাব নাকি, সেটিও জানি না।’
এই সমস্যা দূর করতে ৪২-এর জায়গায় ৪৩ কেজিতে মাছের মণ পরিমাপের কথা জানালেন আরেক পাইকার আফাজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে কাঁটার ওজনে মাছ কিনে ডিজিটাল মিটারে বিক্রি করতাম। কোনো সমস্যা হতো না। এখন যেহেতু ডিজিটাল মিটারে মাছ কেনা শুরু হয়েছে, ৪২ কেজিতে মণের বদলে আরেক কেজি বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য মাপ ঠিক রাখতে সুবিধা হবে।’
পৌর মাছ বাজারের পাইকার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম তোতা বলেন, ‘নিয়ম সবার জন্যই সমান, কোনো সমস্য নাই। আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ কিনছি। আর এখানে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট নেই। বরং আড়ৎদাররা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।’
নওগাঁ শহরের পলিটেকনিক কলেজপাড়া এলাকার মাছ চাষী সাগর হোসেন বলেন, ‘ডিজিটাল মিটার চালু হওয়াতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। পরিমাপ ডিজিটাল হলে দামে ঘাটতি যাবে না। মিটারে ওজন দেখা যায়, কিন্তু কাঁটার পল্লা হলে আমরা বুঝতে পারি না অনেক সময়। সামনের দিকে একটু হেলে যাওয়া মানে কয়েক কেজি বেশি চলে যাওয়া। হিসাব ডিজিটাল মিটারে হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। আগে কাঁটার ওজনে যেহেতু ৪২ কেজিতে মণ ছিল। ডিজিটাল মিটারে ৪৩ কেজিতে মণ হলেও আমাদের সমস্যা নাই।’
তিনি জানান, আড়তদাররা মাছ বিক্রি করতে আসা চাষীদের কাছ থেকে দামের চার শতাংশ ও মাছবাহী গাড়ির জন্য ৫০ টাকা খাজনা নিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন:তৃতীয়বারের মতো ওয়ালটনের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
দুই বছরের জন্য তরুণ এ ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করেছে দেশের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন।
এর আগে ২০১৫ সালে মিরাজ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থাকার সময় দুই বছরের জন্য ওয়ালটনের ‘ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর’ হয়েছিলেন।
রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটনের করপোরেট অফিসে সম্প্রতি মিরাজ ও ওয়ালটনের মধ্যকার এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) নজরুল ইসলাম সরকার।
ওই সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, মো. শাহজালাল হোসেন লিমন, মো. মাহমুদুল ইসলাম ও দিদারুল আলম খান (চিফ মার্কেটিং অফিসার), সিনিয়র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রবিউল ইসলাম মিলটন এবং পাওয়ার প্লে কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুর রহমান পলাশ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ওয়ালটনের ডিএমডি নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ক্রিকেট ও দেশের অন্যান্য খেলাধুলায় সর্বদা পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে ওয়ালটন। জাতীয় ক্রিকেট দল যেমন বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করছে, তেমনি ওয়ালটনও বিশ্ব প্রযুক্তি পণ্য খাতে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করছে। মিরাজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অত্যন্ত প্রতিভাবান ও অন্যতম অলরাউন্ডার। তার মতো মেধাবী অলরাউন্ডার ক্রিকেটারকে তৃতীয়বারের মতো ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।’
অনুষ্ঠানে মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়ালটন বরাবরই এগিয়ে। দেশের সর্বস্তরের খেলাধুলা ও খেলোয়াড়দেরও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ওয়ালটন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময় যখন আমার তেমন পরিচিতি ছিল না, ওই সময় ওয়ালটন আমাকে ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর করেছে। এরপর টানা তিনবার আমাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের মর্যাদা দিল ওয়ালটন। এটা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন পরিবারের একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। দেশ-বিদেশে ওয়ালটনকে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি ওয়ালটনের ব্র্র্যান্ড ইমেজকে আরও বৃদ্ধি করতে আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকব।’
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক পতন ঘটেছে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমায় দেশের বাজারেও পড়েছে এর প্রভাব। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে স্বর্ণের দরপতন হচ্ছে, দেশের বাজারে তার অর্ধেক মূল্য কমছে না।
আন্তর্জাতিক বাজারে এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের মূল্য ৭৬ দশমিক ৮০ ডলার কমে গেছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরলে বিশ্ববাজারে এক ভরি স্বর্ণের দাম কমেছে ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা। এর বিপরীতে দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম কমেছে ১ হাজার ২৮৪ টাকা।
মূল্যহ্রাসের এমন বৈষম্যের কারণে স্বর্ণের দামে দেশ ও বিশ্ববাজারে বড় ধরনের পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশের বাজার থেকে এক ভরি স্বর্ণ কিনতে ১৬ হাজার ডলারেরও বেশি গুনতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈঠকের পর ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম পুনর্নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে সময় সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ লাখ ২৮৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ২২৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৫ হাজার ৪১২ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮১ হাজার ৭৬৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯৩৩ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৮ হাজার ১১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তখন থেকে এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্বর্ণের গহনা কিনতে এর চেয়েও বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কারণ বাজুস নির্ধরিত দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করে দেশের বাজারে স্বর্ণের গহনা বিক্রি হয়। সেই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে সবকিছু মিলিয়ে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতার পকেট থেকে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭ টাকা বেরিয়ে যায়।
দেশের বাজারে স্বর্ণের বর্তমান মূল্য নির্ধারণের সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৯০৩ ডলার। বর্তমানে তা কমে ১ হাজার ৮৪৮ ডলারে নেমে গেছে। অর্থাৎ দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর পর বিশ্ববাজারে দাম কমেছে ৫৫ ডলার।
স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই স্বর্ণের দাম কমেছে। সপ্তাহের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৯২৪ দশমিক ৯৯ ডলার। সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা ৭৬ দশমিক ৮০ ডলার কমে প্রতি আউন্সের দাম ১ হাজার ৮৪৮ দশমিক ১৯ ডলারে নামে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য