পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় ইত্যাদি ইস্যুতে নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারকে নিয়ে বেশ আশাবাদী পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখা, ডুবে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেনে তোলাসহ নানা বিষয়ে গভর্নরের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি বেশ আশাবাদী এসব বিষয়ে।
নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন শিবলী রুবাইয়াত। তিনি জানান, পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা যেমন চলছে, তেমনি রুগ্ন কোম্পানিগুলোতে প্রাণ ফেরানোর উদ্যোগও চলছে।
আগামী এক বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানি উৎপাদনে ফিরে আসবে বলেও আশাবাদী বিএসইসি প্রধান।
মার্কেটে মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হলেই একটি আলোচনা সামনে চলে আসে যে, দুটি রেগুলেটরের এর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। মানি মার্কেটের রেগুলেটর হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক মেজারস নেয় যেটা স্টক মার্কেটের রেগুলেটর হিসেবে আপনাদের জানা থাকে না। সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলা হয়। এই সমন্বয়হীনতা কতদিন চলবে এবং এটাকে প্রশমিত করার জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
হ্যাঁ, যেটা বলছেন সেটা ঠিক যে, ২০১২ সালের আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারের কোনো বিষয়ে কথা বলতে হলে তা রেগুলেটরের সঙ্গে আলোচনা করে করতে হয়। কারণ মার্কেটটা খুবই স্পর্শকাতর।
কিন্তু আমরা খেয়াল করেছি আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংক সেটা আগে করেনি। অন্যদিকে, আমরা যখন গভর্নেন্সকে গুরুত্ব দিচ্ছিলাম, করপোরেট গভর্নেন্স আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে এনআরসি কমিটি করতে বলার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, কমিটি করতে হবে না, সেটাও আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে।
এতে যেটা হয়, তালিকাভুক্ত ব্যাংকের গভর্নেন্সগুলোর যে সকল বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি, আমরা কিছু একটা বলছি সেটা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে উনারা না করে দিলে আমরা অপমানিত হই। গভর্নেন্স ইস্যুটা উপেক্ষিত হয়।
তারপরও আমাদের বাজারের বিভিন্ন এক্সপোজার লিমিট, বা আইসিবিকে বিভিন্নভাবে বিব্রত করা বা বন্ড, যেটা সারা পৃথিবীর উন্নতির চাবিকাঠি সেটাতে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হতে হয়।
আপনি বন্ড মার্কেটকে ভাইব্রেন্ট করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বন্ডে বিনিয়োগ ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে গণনা করা হলে বন্ড মার্কেটকে ভাইব্রেন্ট করবেন কীভাবে?
আমি তো সেটা ডে ওয়ান থেকে বলার চেষ্টা করছি। আমার চোখের সামনে এক লাখ থেকে দুই লাখ, দুই লাখ থেকে তিন লাখ, করতে করতে এখন বাংলাদেশের পাঁচ লাখ, ছয় লাখ টাকার বাজেট হচ্ছে। প্রত্যেক বছর এই যে লাখ কোটি টাকার বাজেট বেড়ে যায়, ওই পরিমাণ টাকা কি ট্যাক্স থেকে আহরণ করতে পারবেন? এরকম ৫০ হাজার এক লাখ কোটি টাকা এক বছরের মধ্যে?
এটা কোনোদিন সম্ভব না। কিন্তু অ্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম নিতেই হবে। যে গতিতে উন্নয়ন হচ্ছে, ধরা যাক পদ্মা ব্রিজ, ৩০ হাজার কোটি টাকা লাগল শুধু ব্রিজেই, এরকম ব্রিজ কিছু বানাতে গেলেই দুই, চার, পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাগবে। হাইওয়ে, রোড, সামনে এয়ারপোর্ট করতে লাগলে হাজার হাজার কোটি টাকা লাগবে। অন্যের কাছ থেকে লোন নেবেন নাকি নিজের টাকায় করবেন?
বড় বড় স্থাপনাকে মার্কেটে আনা হয়, সে রকম পরিকল্পনা দেবার ইচ্ছে আছে কি?
সেটাই আমি বলতে চাচ্ছিলাম। মানুষকে ট্যাক্সের বা রাজস্বের চাপে ফেলে বা যেকোনোভাবে চাপে ফেলে টাকা এনে অ্যানুয়াল ডেভেলপমেন্ট করা সম্ভব না। পৃথিবীর কোনো দেশ পারে নাই।
এত পরিমাণ টাকা হয়তো তেল সমৃদ্ধ দেশ ছাড়া কেউ অন্য কোনো উৎস থেকে না নিয়ে করতে পারেনি। বন্ড এসব ক্ষেত্রে হেল্প করে। ব্যাংক লোন, বিদেশি লোন, সরকারের রাজস্ব, এগুলো ছাড়া বন্ড হচ্ছে অলটারনেটিভ ফাইন্যান্সের বড় উৎস।
এখন যদি বলা হয়, বন্ডের এক্সপোজার লিমিট এতটুকু, তাহলে মানুষ বিনিয়োগ করতে পারবে না। জনগণ বিনিয়োগ করার সাথে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ লাগবে।
এখন সামনে হয়তো একটা ব্রিজ হবে বন্ডের টাকায়। রাজস্ব খাত থেকে টাকা এ বছর হয়তো পাচ্ছি না, দুইটা ছয় লেনের রাস্তা করতে হবে, ম্যাগনেটেড রেল করতে হবে ঢাকা টু কক্সবাজার বা চিটাগং, এগুলো সব প্রজেক্ট তো আপনি রাজস্ব খাত দিয়ে পারবেন না। তখনই বন্ড হয় একটা অলটারনেটিভ সোর্স।
এটাকে কোনো লিমিটের মধ্যে, এক্সপোজার লিমিটের মধ্যে বেঁধে রাখলে তখন আর কোনো উন্নতি হয় না। যদি লোন দেয়ার ক্ষেত্রে লিমিট না দেয়া হয় তাহলে বন্ডে লিমিট কেন?
তারপর আবার এত অল্প লিমিট দেয়া হয়েছে যে বন্ডের আর উন্নতি হচ্ছে না। এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আমি খুব আশাবাদী যে, নতুন গভর্নর আসছেন, উনার সঙ্গে বন্ড নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।
লিস্টেড নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট, যেগুলো খুবই পঙ্গু অবস্থায় আছে সেগুলোকে কীভাবে রিভাইভ করে আমানতকারীর টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বা বিনিয়োগকারীকে সুরক্ষা করা যায়, এগুলো নিয়ে উনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। উনি খুবই বিনয়ী একজন লোক। আশা করি, ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করে আমরা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারব।
সুকুক বন্ড বাজারে এসেছে, ট্রাকজেকশন হচ্ছে। ট্রেডের ক্ষেত্রে হাওলা চার্জ একটি বড় বাধা বলে আপত্তি রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এ বিষয়ে কী বলবেন?
সেটার জন্য ট্রেড করতে অসুবিধা হলে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আমাদের সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। আমরা এমন কিছু করব না, যেটা ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ করতে অসুবিধা হয়। আমাদের কমিশন সার্ভিস চার্জ কোনো অন্তরায় হলে অবশ্যই তা রিভিউ করব।
বেশ কিছু কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করে উৎপাদনে আনার প্রক্রিয়া চালু করেছেন আপনারা। এর মধ্যে ফ্যামিলিটেক্সও আছে। এই কোম্পানিটির পুনর্গঠিত বোর্ড থেকে তো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো হচ্ছে না।
ফ্যামিলি টেক্স উৎপাদনে আছে। একবার বলা হয়েছিল বন্ধ হয়ে গেছে। তারা মনে হয় সাবকনট্রাক্ট করছে, প্রোপার এক্সপোর্ট করছে না। আমরা তাদের বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে চেষ্টা করেছি। তাদের ম্যানেজমেন্টকে হেল্প করে কোনোভাবে বের করে আনা যায় কি না।
কিন্তু স্বতন্ত্র পরিচালকরাও বলছেন, কোম্পানির কারেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য এখান থেকে বের হয়ে আসাটা কঠিন হবে। সঙ্গে ব্যাংক লায়াবিলিটিটাও হয়ে গেছে অনেক। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে অন্য চিন্তা করতে হবে। কোম্পানিটিকে নতুন ম্যানেজমেন্ট, নতুন ওনার, বা কোনো স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানে ফেলে রিভাইভ করা যায় কি না।
এরকম অনেক কোম্পানিকে আমরা রিভাইভ করেছি। ১২ থেকে ১৩টি কোম্পানি প্রোডাকশনে চলে গেছে। আরও ২০, ৫০ কোম্পানি ২, ৩ বছরের মধ্যে প্রোডাকশনে চলে আসছে। এর মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে।
২০, ৩০ বছর ধরে যেসব বিনিয়োগকারী হতাশ হয়েছেন, কোনোদিন তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাবেন কি না, এটা নিয়ে একটা সাংঘাতিক রকমের দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তারা কিন্তু বের হয়ে আসছে।
আমরা এভাবে চেষ্টা করছি, কোনো কোম্পানি বন্ধ না করে, বন্ধ হওয়ার কারণ খুঁজে বের করে কোম্পানি চালু রাখতে।
কোম্পানি বন্ধের কারণ হতে পারে বিভিন্ন। আমাদের সেখানে দৃষ্টিপাত করতে হবে। কিন্তু বন্ধ হতে দেয়া যাবে না। কারণ এত টাকা বিনিয়োগ করে, ক্যাপিটাল ইনভেস্ট করে, জমিজমা, মেশিন, বিল্ডিং করার পর কিছু ম্যানেজমেন্টের গাফিলতির কারণে এটা বন্ধ হতে দেয়া যাবে না।
কতগুলো কোম্পানিকে চালু করতে পেরেছেন?
বন্ধ ছিল রিং শাইন। এখন সেটা চালু হয়েছে। সেটার জন্য বায়ার আসছে। এমারেল্ড অয়েল চালু হয়ে গেছে। ইউনাইটেড এয়ারের টেকনিক্যাল অডিট, রেগুলার অডিট হয়ে গেছে। এখন সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে কাজ চলছে।
ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এখন চালু, যেটা সাংঘাতিকভাবে ইরোশান হচ্ছিল সেখান থেকে বের হয়ে এখন প্রফিটে চলে আসছে।
সিএনএ টেক্সটাইল বন্ধ ছিল। চালু হয়ে গেছে। আরেকটি গ্রুপের সহায়তায় প্রোডাকশনে যাচ্ছে। এ রকম অনেক মুভমেন্ট হচ্ছে এখন। বলে শেষ করতে পারব না, এরকম অনেক। আমাদের হাতে দরখাস্ত আছে প্রায় ২০ বা ২৫টা। যারা বন্ধ কোম্পানি টেকওভার করে চালু করতে চায়।
বাংলাদেশে এখন প্রচুর টেক্সটাইল ও গার্মেন্টেসের অর্ডার আসছে। প্রচুর রাসায়নিক, ফুটওয়্যার, চামড়াজাত পণ্যের অর্ডার আসছে। এই ধরনের যত বন্ধ কোম্পানি ছিল, সেগুলো চালু করার জন্য আবেদন আছে। নতুন কোম্পানি চালু করতে যে সময় লাগবে, তার বিপরীতে এক্সিস্টিং একটা কোম্পানিকে রিপেয়ার করে, মেইনটেন্স্যাসের কাজ শেষ করে, লাইসেন্স রিনুয়াল করে তাড়াতাড়ি শুরু করা যাবে।
যারা বন্ধ ছিল, খুব স্লো চলছি, তারাও এখন অর্ডার পাচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক লায়াবিলিটির জন্য হেল্প পাচ্ছে না। তখন নতুন দুই চারজন ডাইরেক্টর বা ইনভেস্টর ঢুকিয়ে, সেগুলোকে উজ্জীবিত করা হচ্ছে।
আমার মনে হয় না এক বছর পরে আর বেশি কোম্পানি থাকবে যেগুলো ওটিসিতে পড়ে ছিল বা মেইন বোর্ডে থেকেও বন্ধ ছিল। আমরা সব ইনশাল্লাহ চালু করে দিতে পারব।
স্বল্পমূলধনি কোম্পানিকে মূলধন বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের মূলধন বাড়ানোর প্রয়োজন কি-না তা কোম্পানি বলবে। রেগুলেটর পারে কি?
দুইটা বিষয় আছে, একটা করে বলি। একটা হলো যে, ৩০ কোটির পেইড আপ ক্যাপিটাল থাকা উচিত। আপনারা দেখবেন, বাজারে যেসব শেয়ারের দাম অনেক বেশি ৫০০, ১০০০ বা ২০০০ টাকা সেসব কোম্পানিগুলোর বাজারে ফ্লোট কম। ফ্লোট কম হওয়ায় ভালো কোম্পানিগুলোর ডিমান্ড ক্রিয়েট হতে হতে প্রাইস এরকম হাই পর্যায়ে চলে গেছে।
পাঁচ কোটি বা দশ কোটি টাকার পেইড আপ ক্যাপিটাল, খুবই ভালো কোম্পানি, তাদেরকে বলি, এত কম পেইড আপ ক্যাপিটাল ও এত কম ফ্লোট শেয়ার রাখলে প্রাইস অ্যাবনরমাল হয়ে যাচ্ছে। আবার বেশি লোক আপনাদের শেয়ার হোল্ডার হতেও পারছে না। পেইড আপ ক্যাপিটালটা আমাদের আইন অনুযায়ী, আগে যখন করেছেন তখন এই আইনটা ছিল না। এখন হয়েছে, এখন কমপ্লাই করেন।
যেহেতু সেগুলো ভালো এবং বড় কোম্পানি। তারা বলছে, স্যার, আমাদের এই টাকাটা তো দরকার নাই। হঠাৎ যদি ২০, ৩০ কোটি টাকা রেইজ করে কী করব? লায়াবিলিটি বাড়বে, বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে হবে। এই মুহূর্তে নিজেরই রিটেইন আর্নিং আছে শত কোটি টাকা, পেইড আপ বাড়িয়ে আরও টাকা দিয়ে তো কোনো কাজে লাগবে না।
তারা আমাকে বলেছে, স্যার, আমরা বিএসইসির সবকিছু সম্মান করি। আমাদেরকে একটু সময় দেন। আমরা ডিসেম্বর পর্যন্ত বলেছিলাম তারা হয়তো আগামী বছর পর্যন্ত সময় চাচ্ছে। তবে গ্র্যাজুয়ালি একটা একটা করে কোম্পানি পেইড আপ বাড়াচ্ছে।
স্টক ডিভিডেন্ড দেয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অনেক শর্ত দেয়া হচ্ছে, আবার ডাবল রেকর্ড ডেটের মধ্যে যেতে হচ্ছে, তাহলে?
এটা কিন্তু সবার জন্য না। যারা এ ক্যাটাগরির, বি ক্যাটাগরির তাদের কিন্তু লাগছে না। এটা তাদের জন্য প্রযোজ্য যারা স্টক ডিভিডেন্ড দিয়ে যাচ্ছে, ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয় না। এদের সংখ্যা চার, পাঁচ, ছয় বা দশটা কোম্পানি, এর বেশি না।
সেটা করা হয়েছে কারণ, তারা কোনোদিন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয় না, অথবা পাঁচ, ১০ বছর ধরে দেয় না। তাদেরকে বলি, আপনি স্টক দিতে দিতে পেইড আপ এত বেড়ে যাচ্ছে যে, কয়েকদিন পরে আপনার ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা থাকবে না। হয়তো সেই কোম্পানির লাভ হয় ১৫ কোটি টাকা, তার পেইড আপ হয়ে গেছে ২০০ কোটি টাকা। ২০০ কোটির ১০ শতাংশ হবে ২০ কোটি টাকা। তার লাভ হয় ১৫ কোটি, সে তো লভ্যাংশই দিতে পারবে না। সেই কারণে তাদেরকে আমরা স্টক দিয়ে পেইড আপ ক্যাপিটাল বাড়ানোটা নিরুৎসাহিত করি।
যখন দেখি তার প্রফিট প্রায়ই পেইড আপের ১০ শতাংশের কাছাকাছি হয়ে গেছে, তখন তো আর তাকে বোনাস দিতে দেয়া যাবে না। তাহলে জনগণ আর লভ্যাংশ পাবে না। যাদের কম তাদেরকে উৎসাহিত করি।
পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিয়ে সবশেষ কী পরিস্থিতি দাঁড়াল?
স্পন্সর ডিরেক্টরদের ২ শতাংশ আর সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ধারণ নিয়ে অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন। এটা কিন্তু আমরা খুব স্ট্রংলি ইমপ্লিমেন্ট করেছি।
সম্প্রতি তিনটা কোম্পানি ফুলফিল করে ফেলেছে। বাকি যে কোম্পানিগুলো আছে তাদের মধ্যে ছয়, সাতটা বন্ধ। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি, নতুন ম্যানেজমেন্ট দিয়ে রিভাইভ করতে।
যেহেতু তাদের মধ্যে এটা করার একটা চেষ্টা আছে, সেহেতু আমরা তাদের প্রতি রুড হয়নি। সময় দিচ্ছি। তারাও হয়তো ২, ৩ মাসের মধ্যে করে ফেলবে, যার কারণে এই বিষয়টা নিয়ে আমরা অতটা চিন্তিত না।
এসএমই বোর্ড চালু করেছেন। বিনিয়োগ শর্ত শিথিলের পরে বাবল তৈরি হয়েছে এরকম বলছে অনেকেই। আপনার বক্তব্য কী?
এসএমই বোর্ডে আগে ২০ শতাংশ দর বাড়তে পারতো। এটা কমিয়ে মেইন মার্কেটের মতো ১০ শতাংশ করে দিয়েছি। এই মার্কেটে ২০, ৩০ কোটি টাকা যে ট্রানজেকশন হয়, সেখানে অত বড় ঝুঁকি আমরা দেখি না।
শত শত কোটি টাকার মার্কেট হলে আমরা ভালোভাবে সেটাকে কোনো রুলস রেগুলেশন দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতাম।
আরও পড়ুন:দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবারও সূচকের পতন হয়েছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, লেনদেন শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টায় ৬৩ হাজার ৩২৬টি লেনদেনের মাধ্যমে ১৭৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কেনাবেচা হয়েছে, যা মঙ্গলবারের একই সময়ের তুলনায় ৪৭ কোটি টাকা কম।
গতকাল মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
আজ সকালে ৩৭৩টি কোম্পানি লেনদেন করেছে। এর মধ্যে ১৪০টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৫৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৮০টির শেয়ার। এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র মনোভাবকেই তুলে ধরে।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২৮৩ দশমিক ০৭ পয়েন্টে স্থির হয়।
এদিকে ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক শূন্য দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৪ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে, তবে ডিএস৩০-এর ব্লু-চিপ শেয়ারগুলোর সূচক ১১ দশমিক ০৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৩১ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেঞ্চমার্ক সূচক উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘আগাম শেয়ার নিষ্পত্তি, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে তারল্য সহায়তা এবং সম্ভাব্য মূলধন লাভের কর কমানোসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কারণে বাজারে এই ইতিবাচক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।’
বিনিয়োগকারীদেরও সচেতনভাবে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখা যাচ্ছে। তারা হয় পূর্ববর্তী বিনিয়োগ থেকে মুনাফা সুরক্ষিত করেছে বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উপার্জনের প্রতিবেদনসহ স্টকগুলোতে মূলধন পুনরায় বিনিয়োগ করেছে। এই নির্বাচনমূলক পদ্ধতি আশার সঞ্চার করায় তা সামগ্রিক বাজারের গতিতে অবদান রেখেছে।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৬ দশমিক ৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে পাঁচ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় বাজার লেনদেন ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ৬০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা হয়েছে।
আগের পাঁচ সপ্তাহে ৬১৬ পয়েন্ট হারানোর পর টানা দুই সপ্তাহে ২০২ পয়েন্ট যোগ করেছে ডিএসইএক্স।
ডিএসইর খাতভিত্তিক সূচকগুলোকেও বেশ ভালো করতে দেখা গেছে। ৩০টি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ ইনডেক্স ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে লেনদেন শেষ করেছে। একইভাবে শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ডিএসইএস সূচক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায়।
বাজার কার্যকলাপের একটি প্রধান সূচক বাজার লেনদেন এই সপ্তাহে তিন হাজার ২৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের দু’হাজার ৮৩ কোটি টাকার লেনদেনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সে হিসাবে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৬০৬ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের গড় ৪১৬ কোটি টাকার তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘর্মেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) যাচ্ছেন। এমন খবরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার।
দেশের দুই শেয়ারবাজারে বুধবার উল্লেখযোগ্য উত্থানের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারও। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট ডিএসইর সূচক বৃদ্ধি শুরু হয়। সূচক বৃদ্ধির এই ধারা ১১ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ওই চারদিনে সূচকের উত্থান হয় ৭৮৬ পয়েন্ট। এরপর ১২ আগস্ট শুরু হয় ধারাবাহিক পতন।
টানা দরপতন আর লেনদেন খরার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচক। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে এ বাজারটিতেও সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস দুই শেয়ারবাজারেই মূল্যসূচক বাড়লো।
গতকাল বুধবার থেকে বাজার বড় আকারে ঘুরে দাঁড়ায়। ওইদিন ডিএসইর সূচকে বেড়েছে ১১৮ পয়েন্টের বেশি। আর আজ বৃহস্পতিবার বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা শেয়ারবাজারের গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজেই বিএসইসিতে যাচ্ছেন। যেখানে এর আগে কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টা যাননি। শেয়ারবাজারের জন্য এটি একটি ভিন্ন বার্তা। শেয়ারবাজারের প্রতি অর্থ উপদেষ্টার এমন আগ্রহের কারণে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জানান, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসব সহায়তার আওতাভুক্ত হবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
রাশেদ মাকসুদ বলেন, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার মধ্যে কিছু থাকবে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, আর কিছু বিষয় মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
যেসব নীতি পদক্ষেপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল জোগানে সহায়তা, জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণ (নেগেটিভ ইক্যুইটি) রয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার কর হার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয় ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা এবং সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের কার্যক্রম বেড়েছে। এক লাখ ৩৬ হাজার লেনদেনের মাধ্যমে মোট ১৫ দশমিক ৮ কোটি শেয়ার ও ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে, যার মোট লেনদেনের পরিমাণ ৩৪৬ কোটি টাকা। যদিও এটি সোমবারের ৩৫৭ কোটি টাকা থেকে সামান্য কম।
মঙ্গলবার মোট ৩৯৪টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৩১২টি কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে, ৫৭টির কমেছে এবং ২৫টি অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেনের এই অবস্থা বিস্তৃত বাজার পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৭ দশমিক ৩২ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে। ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ২৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১১৩ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে এবং বিশেষায়িত ব্লু-চিপ সূচক ডিএস৩০ ৫২ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৫৮ দশমিক ২৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দর বৃদ্ধির সেরা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মতিন স্পিনিং মিলস পিএলসি, বিডিকম অনলাইন লিমিটেড, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এসিআই লিমিটেড, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, বাংলাদেশ অটোকারস লিমিটেড এবং জেমিনি সি ফুড পিএলসি।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএএসপিআই সূচক ২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ১৭ দশমিক ৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সিএসইতে দেখা যায়, এক হাজার ৮৩৩টি লেনদেনের মাধ্যমে মোট ৫১ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ ১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। এই বাজারে সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮০টি কোম্পানির মধ্যে ১০২টির মুনাফা বেড়েছে, ৫২টির কমেছে এবং ২২টির শেয়ারমূল্য অপরিবর্তিত রয়েছে। এটিও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বেক্সিমকো) শেয়ার কারসাজির দায়ে নয় বিনিয়োগকারীকে ৪২৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোনো কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে এতো বড় অঙ্কের অর্থ জরিমানা এর আগে আর করা হয়নি।
উল্লিখিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মারজানা রহমানকে ৩০ কোটি, ট্রেড নেক্সট ইন্টারন্যাশনালকে চার কোটি এক লাখ, মুশফিকুর রহমানকে ১২৫ কোটি, মমতাজুর রহমানকে ৫৮ কোটি, জুপিটার ব্যবসাকে ২২ কোটি ৫০ লাখ, অ্যাপোলো ট্রেডিংকে ১৫ কোটি ১০ লাখ, এআরটি ইন্টারন্যাশনালকে ৭০ কোটি, আবদুর রউফকে ৩১ কোটি এবং ক্রিসেন্ট লিমিটেডকে ৭৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এছাড়াও কমিশন সভায় নয়টি কোম্পানির আইপিও/আরপিওর তহবিলের ব্যবহার পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত হয়।
কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেস্ট হোল্ডিং, ইনডেক্স এগ্রো, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, রিং শাইন টেক্সটাইল, সিকদার ইন্স্যুরেন্স ও সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিএলসি) শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বুধবার বিএসইসির এক আদেশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম ও পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে উঠা-নামা করেছে, যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়, উল্লিখিত স্ক্রিপের ইউনিটের এমন অস্বাভাবিক উঠা-নামার পেছনে বাজার কারসাজি, অভ্যন্তরীণ লেনদেন, অন্যান্য বাজারের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণ উদঘাটনে ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচা তদন্ত করবে ডিএসই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তারা বড় অঙ্কের শেয়ার কিনছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে এই ব্যাংকের শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়েছে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় দেশসেরা এই ক্রিকেটারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে এই কারসাজি করেন সাকিব আল হাসান।
সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি শেয়ারবাজারের আলোচিত চরিত্র আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তারা বাবা আবুল কালাম মাতবর, মো. জাহিদ কামাল, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট, ইসহাল কমিউনিকেশন ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কারসাজিতে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে এসব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকেও জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে একাধিক শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম উঠে আসে। তবে কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তাকে জরিমানা করেনি বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির বিষয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিব আল হাসানের নাম জড়ায়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কারসাজির জন্য তাকে জরিমানা করা হয়নি। এবারই প্রথম সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ মিললো।
এর আগে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ তদন্তে সাকিবের নাম যতবার উঠে আসে সবগুলোতেই আলোচিত শেয়ার কারসাজিকারী আবুল খায়ের হিরুর নাম ছিল। সাকিবের বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ না মিললেও হিরুর বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ মেলে এবং তাকে জরিমানা করা হয়।
এবারও সাকিবের সঙ্গে শেয়ার কারসাজিতে হিরুর নামে উঠে এলো। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় হিরুকে ২৫ লাখ এবং সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জারিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ১০ লাখ, মো. জাহিদ কামালকে এক লাখ, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে এক লাখ, ইসহাল কমিউনিকেশনকে ৭৫ লাখ ও লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিএসইসির এর আগে ‘দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম’-এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নিয়োগ বাতিল করে। গত ২৮ আগস্ট জরুরি সভা করে এই সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য