দেশে মূল্যস্ফীতির হার গত ৯ বছরের সর্বোচ্চ জানিয়ে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস যে তথ্য প্রকাশ করেছে. তা মানতে চাইছেন না অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তার দাবি, বিবিএস পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রকৃত তথ্য উঠে আসে না। আসলে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতিতেই প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়।
বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির গড় হিসাবেই প্রকৃত তথ্য প্রতিফলিত হয়।’
আগের দিন বিবিএসের হালনাগাদ প্রকাশিত প্রতিবেদনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হার ৭.৫৬ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়, যা গত ৯ বছর মধ্যে সর্বোচ্চ।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে হচ্ছে গত বছরের একই মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই মাসের পার্থক্য উঠে আসে।
অন্যদিকে একটি অর্থবছরের ১২ মাসের মূল্যস্ফীতির গড় হিসাবকে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি বলা হয়।
বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘হিসাবটি করা হয়েছে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মাসিক ভিত্তিতে। এটি করতে হবে বছরের গড় হিসাবের ভিত্তিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কত বাড়ল, সেটাই প্রকৃত হিসাব।
‘এ হিসাবে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫.৯ শতাংশ। গড় হিসাবে মূল্যস্ফীতি এখনও সহনীয় অবস্থায় আছে।’
অবশ্য বিবিএস পয়েন্ট টু পয়েন্টের পাশাপাশি গড় মূল্যস্ফীতির হিসাবও প্রকাশ করেছে। জানানো হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬.১৫ শতাংশ।
অর্থনীতি এখনও ভালো অবস্থানে
একজন সাংবাদিক বলেন, ইউক্রেন -রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আছে কি না?
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখছি। আমাদের অর্থনীতি যতটা খারাপ অবস্থা বলে বলা হচ্ছে আসলে তা নয়। অনেক দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতি এখনও অনেক ভালো অবস্থানে।
‘২০০৯ সালে যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন রিজার্ভ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। সেই রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারে গেছে। …কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
আইএফের কাছে ঋণ এখনই নয়
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ এর কাছে এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ প্রস্তাব দেয়া হয়নি বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হবে।...তবে এখন আমাদের ঋণ নেয়ার প্রয়োজন নেই। যখন প্রয়োজন হবে সবাইকে জানানো হবে।’
আইএমএফের সফর নিয়মিত ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘সব সময় বাংলাদেশে আসে। এটি তাদের নিয়মিত সফর। তারা যেসব পরামর্শ দিয়েছে আমরা সেগুলো শুনেছি। তাদের পরামর্শগুলো খারাপ নয়। ভালো প্রস্তাবগুলো অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। তবে এমন কিছু করা হবে না, যাতে দেশের ক্ষতি হয়।
‘আমরা আইএমএফের সঙ্গে এমন কোনো চুক্তি করব না যাতে দেশের স্বার্থের পরিপন্থি হয়। যা কিছু করা হবে দেশের মঙ্গলে।’
এশিয়ার কিছু দেশকে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। এই তালিকায় বাংলাদেশ আছে কি না-জানতে চাইলে
তিনি বলেন, ‘এশিয়ার মধ্যে নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশ আছে। এই তালিকায় বাংলাদেশে আছে কি না তা আমার জানা নেই।’
আরও পড়ুন:শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে গত এক বছরের লভ্যাংশ হিসাবে সাত কোটি টাকা জমা দিয়েছে চার কোম্পানি।
কোম্পানিগুলো হলো মেঘনা পেট্রোলিয়াম, লাফার্জ হোলসিম, বিএসআরএম এবং লিন্ডে।
দেশি, বিদেশি এবং বহুজাতিক মিলে ২৬৫টি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর তাদের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত এ তহবিলে জমা দিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সচিবালয়ে দেশে শীর্ষস্থানীয় এই চার কোম্পানির প্রতিনিধিরা শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের হাতে নিজ নিজ কোম্পানির পক্ষে লভ্যাংশের চেক হস্তান্তর করেন।
প্রতিমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া চার কোম্পানির লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৯৫ লাখ ৭৪ হাজার ৪ টাকা।
লাফার্জ হোলসিমের পক্ষে চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এবং মানবসম্পদ পরিচালক আসিফ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯২ হাজার ২৭ টাকার, বিএসআরএমের পক্ষে হেড অফ করপোরেট অ্যাফের্য়াস সৌমিত্র কুমার মুৎসুদ্দির নেতৃত্বে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৮ হাজার ২৯৩ টাকা জমা দেয়।
এ ছাড়া মেঘনা পেট্রোলিয়ামের জসিম উদ্দিন ১ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮৪ টাকা এবং অক্সিজেন কোম্পানি লিন্ডে বাংলাদেশের পক্ষে মানবসম্পদ বিভাগের সহযোগী পরিচালক সাইকা মাজেদের নেতৃত্বে ৭৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার চেক জমা দেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ তহবিলে বিভিন্ন কোম্পানির দেয়া লভ্যাংশের পুঞ্জিভূত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭৪৭ কোটি টাকা। শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী সরকার এ ফাউন্ডেশন তহবিল গঠন করে।
এ তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কর্মস্থলে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে, আহত, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিকের চিকিৎসা এবং শ্রমিকের মেধাবী সন্তানের উচ্চশিক্ষায় সহায়তা দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ২৩৭ শ্রমিককে এ তহবিল থেকে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে।
চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক গোকুল কৃষ্ণ ঘোষ, বিএসআরএম-এর আইআর এবং এমপ্লয়ি এনগেজমেন্ট সিনিয়র ম্যানেজার মো. ইসমাইল, মেঘনা পেট্রোলিায়ামের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার জসিম উদ্দিন আহমেদ এবং লিন্ডে বাংলাদেশের আইআর ও এডমিনের সহযোগী জেনারেল ম্যানেজার সুফিয়া ওয়াহেদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:স্থানীয় ওষুধশিল্পের সুরক্ষায় প্যাটেন্ট আইন সংশোধন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে বুধবার আয়োজিত ‘এলডিসি উত্তরণে ওষুধ শিল্পের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে ওষুধশিল্পের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পৃথক একটি রোডম্যাপ তৈরির কথা বলেন। একই সঙ্গে পোশাকশিল্পের মতো এই খাতে প্রণোদনার প্রস্তাব দেন তারা।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশীয় ওষুধশিল্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এটি মোকবিলায় আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে স্থানীয় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্যাটেন্ট আইন সংশোধন করতে হবে।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবিলম্বে ওষুধশিল্প পার্ক (এপিআই পার্ক) চালু হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘এর ফলে ভবিষ্যতে ওষুধশিল্পে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে এবং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ওষুধশিল্প দ্রুত এগিয়ে যাবে।’
ট্রিপস চুক্তির আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় প্রয়োজনীয় প্রচার চালানোর আহ্বান জানান সালমান এফ রহমান।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান। এলডিসি-পরবর্তী সময়ের জন্য ওষুধশিল্পকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি খাত এবং শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি শক্তিশালী অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল্ডের চেয়ারপারসন নিহাদ কবির, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রাহমানসহ অনেকে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান এমপি বাংলাদেশের প্যাটেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান।
নিহাদ কবির মেধাস্বত্বসংক্রান্ত কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্যাটেন্ট আইন সংশোধন করা হবে বলে আশ্বাস দেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা।
দেশের ওষুধশিল্পে পোশাক খাতের মতো প্রণোদনা দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন রিজওয়ান রাহমান।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মুক্তাদির বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রিপস চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধাগুলো যাতে অব্যাহত রাখা যায় সে ব্যাপারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপির প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ। ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম।
আরও পড়ুন:চলমান ডলার সংকটে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য নিয়ম আরও শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট স্থাপন বা প্রবাসী রেমিট্যান্স দেশে আনার চুক্তি করতে আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি লাগবে না। ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট স্থাপনের পর প্রয়োজনীয় তথ্যসহ শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ও পলিসি বিভাগ বুধবার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার সব অথরাইজড ডিলারদের কাছে পাঠিয়েছে।
এর আগে দেশের কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিদেশি কোনো মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হত। সেই সঙ্গে ওই দেশে থাকা বাংলাদেশ মিশন বা হাইকমিশনের কাছ থেকেও বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জের বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশপত্র আনতে হত।
নতুন নিয়মে চুক্তি করার পর বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে। আর বাংলাদেশ মিশনের প্রত্যয়নপত্র ছাড়াও চুক্তি করা যাবে।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ কমেছে। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।
এ অবস্থায় বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশে আনতে অনেক ব্যাংকের নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউজ রয়েছে। যাদের নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউস নেই তারা বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠায়।
এক সময়ে দেশীয় ব্যাংকের মালিকানায় পরিচালিত এক্সচেঞ্জের নিজস্ব প্রতিনিধি বা সাব-এজেন্ট দেয়ার সুযোগ ছিল। মানি এক্সচেঞ্জের আড়ালে যাতে হুন্ডি বা অবৈধ অর্থের লেনদেন না হয় সে জন্য ২০০৭ সালের এক নীতিমালার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে সুযোগ বন্ধ করে দেয়।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনকারী সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ–সিপিডি।
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন এড়ানো যেত কি?’ শীর্ষক সংলাপে এ প্রশ্ন তুলেছেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল তখন দেশের ভেতরে বেশি দামে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ লাভ করেছে বিপিসি। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে সংস্থাটি জ্বালানি তেল বিক্রি করে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে। বাকি ৩৬ হাজার কোটি টাকা গেল কোথায়?’
সরকারি ব্যয়ের স্বচ্চতা নিশ্চিত করতে বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং একইসঙ্গে পুরনো হিসাবের খতিয়ান জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি জানায় সিপিডি।
সিপিডি মনে করে, বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাব জনগণের সামনে আসা উচিত। ভোক্তার ওপর দায় না চাপিয়েও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা যেত।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন, বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রমুখ।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিপিসি বলেছে যে মুনাফার ৩৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে, কীভাবে বিনিয়োগ হয়েছে তার হিসাব হিসাব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালে ৪ হাজার ১২৬ কোটি, ২০১৬ সালে ৯ হাজার ৪০ কোটি, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি, ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা লাভ করেছে বিপিসি। এছাড়া ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি, ২০২০ সালে ৫ হাজার ৬৭ কোটি এবং ২০২১ সালে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা লাভ হয়েছে বিপিসির। এই লাভের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় হয়েছে তার সঠিক হিসাব জনগণ জানে না। দেশের স্বার্থে বিপিসির লাভ-লোকসানের হিসাব জানা প্রয়োজন।’
সিপিডির এই গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘শুনেছি প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু টাকা খরচ হয়েছে। বিপিসি নাকি সবচেয়ে ধনী গ্রাহক। বিপিসির ২৫ হাজার কোটি টাকা অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে। তাহলে এসব টাকা কার? বিপিসি চাইলে এই সংকট সময়ে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে পারত।’
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে নেপাল ও পাকিস্তানে বেশি। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম। নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
‘দাম কাদের চেয়ে বেশি? সিংগাপুর, হংকং ও জার্মানির চেয়ে বেশি। যাদের মাথাপিছু আয় ৫০ হাজার ডলারের কাছাকাছি তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যখন তুলনা করব তখন সে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও প্রেক্ষাপট মাথায় রাখাটা জরুরি।’
সিপিডির এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে প্রথমেই পরিবহন সেক্টরের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষি পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়বে। অনেক কৃষক কৃষিকাজ ছেড়ে দেবে।
‘কৃষিজ উৎপাদন কমে যাওয়ায় খাদ্যপণ্য আমদানি বেড়ে যাবে। শিল্পের উৎপাদনেও খরচ বাড়বে। তার ফলে ব্যবসার লভ্যাংশ কমে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ ধাপে ধাপে সব সেক্টরে খরচ বৃদ্ধি পেয়ে দেশের মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। এর প্রভাব পড়বে জীবনযাত্রায়। বিশেষ করে এর বড় ধাক্কাটা আসবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও গরিবদের ওপর।’
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি ও রেশনিং কার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে বুধবার নিউজবাংলার প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এপ্রিল, মে ও জুনে দেশের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হয়। জুলাইয়ে এসে কিছুটা কমে এলেও এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই মূল্যস্ফীতি আগের চেয়েও বেড়ে যাবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানির সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই জ্বালানির দাম বাড়লে পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। তার প্রভাব সার্বিক অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার ওপরে পড়বে। অর্থাৎ দাম বাড়লে, খরচ বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।’
এ পরিস্থিতিতে গরিব মানুষ কষ্টে আছে, তাদের এই কষ্ট লাঘবে সরকার কী করবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবার জন্যই সরকার। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গরিব মানুষের কষ্ট অনেক বেশি হয়। ইতোমধ্যে তাদের কষ্ট লাঘবে সরকার ওএমএস, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তবে নতুন করে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থেকে গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিতে আরও কী সহায়তা দেয়া যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ডলারের দাম বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক সংকট। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের দেশে দেশে বাড়ছে ডলারের দাম। যারা যুদ্ধ করছে তাদেরও বাড়ছে, যারা যুদ্ধে উসকানি দিচ্ছেন তাদেরও বাড়ছে।
‘বাংলাদেশেও তার প্রভাব আছে। তবে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। শিগগিরই ডলারের দাম স্বাভাবিক হবে।’
শিগগিরই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জ্বালানির দাম বাড়ায় অর্থনীতিতে সার্বিক ক্ষতির প্রভাব কেমন হবে তার কোনো অ্যাসেসমেন্ট করা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানির দাম বাড়ানোর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের মতো করে দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। এখন দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে পণ্যমূল্য বাড়ছে। যার প্রভাব পড়বে মানুষের জীবনযাত্রা ও উৎপাদমুখী সব কর্মকাণ্ডে।
‘এখন এই প্রভাব কতটা প্রকট হতে পারে বা কতটা সহনীয় থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চয় অর্থ মন্ত্রণালয় একটা প্রভাব খতিয়ে দেখবে।’
একই সঙ্গে অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এই পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের বাজারে অস্থিরতার সময় দেশি-বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে পদ থেকে অব্যাহতির বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কোনো কিছুই নিয়মের বাইরে হওয়া উচিত নয়। ব্যাংক চলে নিয়মের মধ্যে। নিয়মেই বলা আছে কী পরিমাণ টাকা ব্যাংকে রাখা যাবে, কী পরিমাণ বিনিয়োগ করা যাবে, আরও কী করতে হবে সেটিও বলা আছে। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে শাস্তি পেতে তো হবেই।’
আরও পড়ুন:মানি এক্সচেঞ্জে নজরদারি, পুলিশের অভিযান, দামে কারসাজির অভিযোগ নিয়ে ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে সরিয়ে দেয়া- কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছে আন্তর্জাতিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম। সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে ২৫ টাকা বেশিতে এখন ১২০ টাকায় খোলাবাজারে কিনতে হচ্ছে মুদ্রাটি। দেশের ইতিহাসে এর আগে এই ঘটনা কখনও ঘটেনি।
গত ২৭ জুলাই খোলাবাজারে ডলারের দর উঠেছিল ১১২ টাকা। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির পর কয়েক দিন সেখান থেকে কিছুটা কমে ১০৮ টাকায় থিতু হয়।
কিন্তু চলতি সপ্তাহ থেকে আবার শুরু হয় ঊর্ধ্বগতি। সোমবার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায়।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দর সেদিনও ছিল ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। পরদিন তা আরও ৩০ পয়সা বাড়িয়ে করা হয় ৯৫ পয়সা।
এরপর দিন খোলাবাজারে আবার লাফ দেয় ডলার। এক দিনে বাড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা।
খোলাবাজার ব্যবসায়ীরা বলছেন, তীব্র সংকট রয়েছে ডলারের। প্রবাসীদের দেশে আসা কমেছে, বিদেশি পর্যটকরাও কম আসছেন। এ কারণে ডলারের সরবরাহ কম।
দিলকুশা দোহার মানি এক্সচেঞ্জে ডলার কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রতি ডলার ১২০ টাকা চাচ্ছে। ব্যাংকরেট ৯৫ টাকা বললে প্রতিষ্ঠানটি বলে, ওসব বলে লাভ নেই। আমাদের যে রেটে দিতে পারব সেটা বলেছি। এতে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকে গিয়েও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো বলছে ডলার নেই।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরে ডলার মিলছে না ব্যাংকেও। ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সেও দর অনেক বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। তখন ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ও খোলাবাজারের দরের মধ্যে পার্থক্য ছিল কমই। বরং গোটা বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে দর ধরে রাখতে চেষ্টা করেছে।
তবে মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে খাদ্য, জ্বালানি, শিল্পের উপকরণের দর বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেয়। আর দাম বাড়তে থাকায় এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে অবৈধভাবে মজুদও করার তথ্য মিলছে।
খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর বিভিন্ন মানি চেঞ্জারে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এ পরিদর্শন কার্যক্রম চালায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পাশাপাশি অবৈধভাবে ডলার মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ফলে ডলারের বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখন নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে সব চেষ্টাই এখন নিষ্ফল।
আরও পড়ুন:সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশে দেশটির রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড জানিয়েছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত বা অপ্রদর্শিত অর্থ রাখার সুযোগ তাদের কোনো ব্যাংকে নেই। তিনি এও জানিয়েছেন, বাংলাদেশিদের মধ্যে কারা টাকা জমা রেখেছে, সে বিষয়ে তার দেশের সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়তে তার দেশের উদ্যোগের বিষয়টিও তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, ‘সুইস ব্যাংক আন্তর্জাতিক সব প্রক্রিয়া মেনেই কাজ করে। সেখানে কালো টাকা বা দুর্নীতির অর্থ রাখার কোনো সুযোগ নেই।’
সুইস ব্যাংক বলতে সুইজারল্যান্ডের কোনো একক ব্যাংককে বোঝায় না। সুইস নাশনাল ব্যাংক বলতে যে প্রতিষ্ঠানটি আছে, সেটি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশটির যেকোনো ব্যাংকে রাখা টাকাই সুইস ব্যাংকের টাকা হিসেবে আলোচনায় আসে।
গত জুনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সুইস ব্যাংকগুলোতে এখন বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার বেশি। টাকার অবমূল্যায়নে এই অঙ্ক এখন ৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে গত ১২ মাসে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে।
এই অর্থ জমা নিয়ে বরাবর তুমুল বিতর্ক হয় বাংলাদেশে। সমালোচকরা বলে আসছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ এটি।
অবশ্য বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে অবৈধ উপায়ে পাচার হওয়া অর্থ যেমন সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা হয়, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও দেশটিতে অর্থ জমা রাখেন। তাই সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশিদের মোট অর্থের মধ্যে বৈধ-অবৈধ সব অর্থই রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব মেলে না এ কারণে যে, সাধারণত সুইস ব্যাংক অর্থের উৎস গোপন রাখে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমা রাখেন।
এই হিসাব প্রকাশের আগের বছর সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ ফেরত আনার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। এরপর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) সঞ্চয়কারী বাংলাদেশিদের নামের তালিকা চায় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব ব্যাংকে টাকা জমাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানাতে বলা হয়। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে দেয়া হয়নি।
সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড কালো টাকা রাখার স্বর্গরাজ্য নয়। এই বিষয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সুইস ব্যাংক অবৈধ অর্থকে কোনোভাবেই উৎসাহিত করে না। সুইজ ব্যাংক বিশ্বের একটি অন্যতম ব্যাংকিং ব্যবস্থা, আমাদের জিডিপির অন্যতম একটি বড় অংশ। সুইজ জাতীয় ব্যাংক প্রতি বছর বাংলাদেশি গ্রাহকদের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় ব্যক্তিগত টাকা সংরক্ষণ হার বাড়ছে না, বরং কমছে।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিরা কত টাকা জমা রেখেছে ওই তথ্য প্রতি বছর সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক দিয়ে থাকে। ওই অর্থ অবৈধপথে আয় করা হয়েছে কি না, এটি আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কারও তথ্য চায়নি
অন্য এক সুইস প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট করে কারো সম্পর্কে তথ্য চায়নি।
অর্থপাচার নিয়ে সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য পেতে হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আমরা যেকোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও চুক্তি করতে পারি। ইতোমধ্যে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে সব তথ্য সরবরাহ করেছি।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে নাথালি চুয়ার্ড বলেন, ‘গত বছর দুই দেশের বাণিজ্য এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এ দেশের স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম সুইস সরকারের সহায়তায় হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সুইস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সুইস সরকার ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। আগামী দিনগুলোতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
আগামী দিনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তির প্রসারে সুইস সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুইজারল্যান্ড সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে। সুইজারল্যান্ড চায় রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদে প্রত্যাবাসন হোক।
‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অবস্থায় আমরা বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করব। আমরা জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য নই। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে এখন রয়েছি। সেখানে আমরা বিষয়গুলো তুলে ধরব।'
অনুষ্ঠানে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) এর সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দীনের সঞ্চালনায় সংগঠনটির সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসসহ উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির অন্যান্য সদস্যরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য