জ্বালানি সাশ্রয়ে লোডশেডিং করা ও দেশবাসীকে মিতব্যয়ী হতে সরকারের আহ্বানের পর দুই কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে বড় পতনের যে চিত্র দেখা গিয়েছিল, তৃতীয় দিনে এসে তা কিছুটা থেমেছে। তবে সূচকের পতন ঠেকানো যায়নি।
সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার সকালে সূচক কিছুটা বাড়লেও বেলা শেষ হয় ১৪ পয়েন্টের পতনের মধ্য দিয়ে। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহের চার দিন তো বটেই, আগের সপ্তাহের টান তিন কর্মদিবস মিলিয়ে সাত দিন সূচক পড়ল।
এই সাত কর্মদিবসে সূচক পড়ল মোট ২২৮ পয়েন্ট। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহের চার দিনে পড়ল ১৮৫ পয়েন্ট।
সূচকের অবস্থান ৬ হাজার ১৩৮ পয়েন্ট কেবল চলতি বছরের সর্বনিম্ন এমন নয়, গত এক বছরে পুঁজিবাজার এতটা নিচে নামেনি।
২০২১ সালের ৩০ জুন সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৪২ পয়েন্ট। তবে সে সময় বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। টাকা এক যুগের মন্দাভাব কাটিয়ে পুঁজিবাজার এগিয়ে যাচ্ছিল আর বিনিয়োগকারীরা ছিল ফুরফুরে মেজাজে।
ছন্দপতন শুরু হয় সেপ্টেম্বরে সূচক ৭ হাজার ৩০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যাওয়ার পর। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে মতভিন্নতা, এরপর আরও নানা ইস্যুর পর বর্তমানে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাশ্রয়ী নীতি ঘোষণার বিষয়।
গত সোমবার প্রতি দিন এক ঘণ্টা করে এবং এতেও সামাল দিতে না পারলে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং, সপ্তাহে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ, রাত আটটার পর দোকান বন্ধের ঘোষণা আসে। সেদিন দেখা দেয় আতঙ্ক। এক দিনেই সূচক কমে যায় ৮৭ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার আতঙ্ক এতটাই জেঁকে বসে যে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন আতঙ্কে আগের কর্মদিবসে লেনদেন যে পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল, অনেকটা সেখানে নেমে আসে। কোনো রকমে তিন শ কোটির ঘর অতিক্রম করে।
সেদিনই সূচক ৮৭ পয়েন্ট কমে গিয়ে শেষ বেলায় এসে কিছুটা ঘুরে দাাঁড়ায়। তবে বেলাশেষে ৬৩ পয়েন্টের পতন বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বড় করে।
তবে এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়ের ফয়সালা হওয়ার আশা তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার হিসাব বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে করার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বছরের পর বছর ধরে এটি বিএসইসির চাওয়া ছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোগ নিতে রাজি হয়নি।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই চিঠি পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা। কিন্তু আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা এতেও কোনো সাড়া দেয়নি।
তবে আগের দিনের তলানি থেকে লেনদেনের উঠে আসাটা একটি ইতিবাচর প্রবণতা হিসেবে দেখা যায়। দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৬৬৫ কোটি ৫৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা, যা আগের দিনের দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রথম ২৭ মিনিটে আগের দিনের তুলনায় ৩৫ পয়েন্ট সূচক বেড়ে লেনদেন হতে দেখা যায়। এর পরেই ক্রেতা সংকটে দর হারায় শেয়ারগুলো। সূচক আগের দিনের চেয়ে আরও নিচে নেমে যায়। তবে শেষে দুই ঘণ্টায় কিছুটা দর ফিরে পায় শেয়ারগুলো।
গত দুই দিনের তুলনায় আজ কিছু বেশি সংখ্যক শেয়ারের দর বেড়েছে। তারপরও দর বৃদ্ধির তুলনায় পতনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
১১০টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২১৮টির দাম। আর আগের দামেই লেনদেন হয়েছে ৫৩টি কোম্পানির শেয়ার।
আগের দুই কর্মদিবসেই দর হারিয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন শটি করে কোম্পানির শেয়ার।
আবারও বিপুল সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারদর দিনের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ বা কাছাকাছি নেমে হাতবদল হতে দেখা গেছে। তবে বহু কোম্পানির ক্রেতা ছিল না আগের কয়েকদিনের মতোই।
লেনদেনের বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এখনও আতঙ্ক রয়েছে। তবে কয়েকদিন কমে শেয়ারের দাম একটা পর্যায়ে এসেছে, যার কারণে যেসব বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিশ্চুপ ছিল তারা কিছুটা ইন্টারেস্ট শো করছে। তাদের অ্যাক্টিভিটি বেড়েছে, যার কারণে ট্রানজেকশন বেড়েছে।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসির শেয়ারদরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থামছে না। এই কোম্পানিটি দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করছে। আজ শেয়ারটির দর আজ বেড়েছে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের দুই দিনও বেড়েছিল ৮ শতাংশের বেশি করে।
ধারাবাহিক লোকসানে থাকা কোম্পানিটিকে ২০১৭ সালে শেয়ার প্রতি ৬৯ টাকা ৫৫ পয়সা লোকসান গুনতে হয়েছিল। এর পর আর কোনো তথ্য নেই ডিএসইর ওয়েবসাইটে।
দ্বিতীয়স্থানে ছিল এইচ আর টেক্সটাইল। ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১০৬ টাকা ২০ পয়সার দর দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা ১০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দর বেড়েছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের। ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫১ টাকাক ৯০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। ৭ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ৯৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে সর্বশেষ শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায়।
পঞ্চম স্থানে থাকা প্রাইম টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৬ দশমিক ০১ শতাংশ বা ২ টাকা ২০ পয়সা। গত ২২ মে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৪ টাকা ২০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে আজ সর্বশেষ ৩৮ টাকা ৮০ পয়সাতে লেনদেন হয়েছে।
তালিকার সপ্তম স্থানে থাকা কেডিএস অ্যাক্সেসরিজের দর বেড়েছে ৫ দশমিক ০৫ শতাংশ। আগের দিন বেড়েছিল ৪ দশমিক ০১ শতাংশ।
২২ মে থেকে কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে। ওই দিন শেয়ারের দাম ছিল ৫০ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে বেড়ে এখন দর ৭০ টাকা ৭০ পয়সা।
দর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে উৎপাদনে না থাকা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি ও ক্রাউন সিমেন্ট।
দর পতনের শীর্ষ ১০
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। আগের কার্যদিবসে শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ৬০ টাকা। ২ শতাংশ কমে দর দাঁড়িয়েছে ৫৮ টাকা ৮০ টাকায়।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস। ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর কমে এক হাজার ৯৯৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে এক হাজার ৯৫৭ টাকা ৭০ পয়সায়।
প্রায় একই হারে দর কমেছে রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, লিবরা ইনফিউশন, বিডি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স এবং সিভিও পেট্রোকেমিক্যালসের, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, শাইনপুকুর সিরামিক ও প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট সূচক কমেছে রবির কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে এক দশমিক ৮৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
ইউনাইটেড পাওয়ারের দর ১ দশমিক ২৯ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ২ দশমিক ০৩ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বার্জার পেইন্টস, তিতাস গ্যাস, ওয়ালটন হাইটেক, পাওয়ার গ্রিড, সামিট পাওয়ার, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও আইপিডিস ফাইন্যান্সের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১৫ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট।
সূচকে পয়েন্ট যোগ করল যারা
সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি। কোম্পানিটির দর ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ দর বেড়েছে।
ম্যারিকোর দর ১ দশমিক ০৭ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট।
আইসিবি সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ।
এ ছাড়া আইএফআইসি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বেক্সিমকো ফার্মা, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ক্রাউন সিমেন্ট, এম এল ডায়িং ও এনসিসি ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮০ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:মুল্য সূচক ও লেনদেনে টানা এক সপ্তাহ পতনের পর চলতি সপ্তাহের তিন কর্মদিবসে একেবারে বিপরীত চিত্র দেখা গেল পুঁজিবাজারে। প্রতিদিনই বেড়েছে সূচক, সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন।
পুঁজিবাজার নিয়ে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে অতীতের দূরত্ব ঘুঁচেছে, সেই সঙ্গে ডলারের বাড়তি দামও কিছুটা কমে আসছে, এর পাশাপাশি নানা গুজব গুঞ্জনের মধ্যে বিএসইসি ঘোষণা দিয়েছে ফ্লোর প্রাইস উঠবে না- এই তিন মিলে বিনিয়োগকারীদের চিড় ধরা আস্থায় প্রলেপ লাগছে অনেকটাই।
চলতি সপ্তাদের প্রথম কর্মদিবস রোববার ২৬ পয়েন্টর পর জাতীয় শোক দিবসের ছূটি কাটিয়ে দ্বিতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার সূচক বাড়ে আরও ৫০ পয়েন্ট। শেষ কর্মদিবস বুধবারও এই উত্থানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এদিন সূচক বাড়ে ২৪ পয়েন্ট।
আগের সপ্তাহের চার কর্মদিবসে ১৬৩ পয়েন্ট সূচক পতনের পাশাপাশি লেনদেনও নেমে আসে অর্ধেকে। তার আগের সপ্তাহে বিএসইসির দেয়া ফ্লোর প্রাইস ও পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট ক্রয়মূল্যে গণনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার আসার পরও এই পতনে বিস্ময়ের পাশাপাশি ছড়ায় হতাশা।
তবে নতুন সপ্তাহে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনের গতি বাড়ায় এটা স্পষ্ট হয় যে, নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন। আর তারা শেয়ার কেনা শুরু করায় দরও ধীরে ধীরে বাড়ছে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন হাতবদল হয়েছিল ৬৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার শেয়ার। দ্বিতীয় কর্মদিবসে তা বেড়ে হয় ১ হাজার ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮ হাজার টাকা। বুধবার তা আরও বেড়ে হয় ১ হাজার ১৫৯ কোটি ৬০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
বেড়েছে ১৫৬টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৩২টির আর আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ৯২টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর সিংহভাগই লেনদেন হচ্ছে সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইসে।
এদিন সূচক বাড়াতে সহায়তা করেছে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, ওয়ালটন, বেক্সিমকো লিমিটেড, ইউনাইটেড পাওয়ারের মতো বড় কোম্পানির দর বৃদ্ধি। বিপরীতে যেসব কোম্পানির দর কমেছে, সেগুলোর মধ্যে সূচকে প্রভাব ফেলার মতো কোম্পানি ছিল কমই।
গত এক মাস ধরে আগ্রহের শীর্ষে থাকা বস্ত্র খাত আবার ছিল লেনদেনের শীর্ষে, যদিও আগের দিনের বিপরীত অবস্থানে গিয়ে এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে।
খাত হিসেবে সবচেয়ে ভালো দিন গেছে সাধারণ বিমায়। এই খাতে একটি কোম্পানির দর কমার বিপরীতে বেড়েছে ৩৬টির দর আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি চারটির দর।
বিবিধ খাতে দুটির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ৯টির দর আর আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে তিনটি কোম্পানি।
বাকি সব খাতেই বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে বস্ত্রে। ৩৪টি কোম্পানি দর হারিয়েছে, বেড়েছে ১১টির দর আর আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ১৩টি কোম্পানি।
দর হারালেও এই খাতটিতে সবচেয়ে বেশি ২০৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
বিবিধ খাতে ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং প্রকৌশল খাতে ১০৭ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। অন্য কোনো খাতে লেনদেন শত কোটি টাকা ছাড়াতে পারেনি।
একটি মাত্র কোম্পানি দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুয়ে লেনদেন হয়েছে। সেটি হলো আনলিমা ইয়ার্ন, যেটি চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে লোকসান দিয়েছে। আগের দিন দর ছিল ৩৭ টাকা ৭০ পয়সা। বাড়ার সুযোগ ছিল ৩ টাকা ৭০ পয়সা। এই পরিমাণই বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৪১ টাকা ৪০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে দশে এদিন একক কোনো খাতের প্রধান্য দেখা যায়নি। এতে ছিল জীবন বিমা খাতের সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, বস্ত্র খাতের দেশ গার্মেন্টস, প্রকৌশল খাতের কেডিএস অ্যাকসেসোরিস ও সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, সেবা ও আবাসক খাতের শমরিতা হাসপাতাল, সাধারণ বিমা খাতের এশিয়া প্যাসিফিক ও সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স এবং সিমেন্ট খাতের লাফার্জ হোলসিম ও হেইডেলবার্গ।
দরপতনের শীর্ষ তালিকাতেও দেখা গেছে সাধারণ বিমা খাতের প্রাধান্য, যদিও এদিন এই খাতটিই সার্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে। এই তালিকার শীর্ষে ছিল অবশ্য বস্ত্র খাতের তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, যেটি দর হারিয়েছে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।
অন্য ৯ কোম্পানি হলো প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ও পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
আরও পড়ুন:
আগের সপ্তাহে টানা দরপতনের চাপ কাটিয়ে পুঁজিবাজেরর পথ খুঁজে পাওয়ার যে আভাস রোববার পাওয়া গিয়েছিল, জাতীয় শোক দিবসের ছুটি শেষে তা আরও স্পষ্ট হলো।
বস্ত্র, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং আর্থিক খাতের সম্মিলিত উত্থানে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেন দুটিই বেড়েছে।
দুই কর্মদিবস পর লেনদেন আবার হাজার কোটি টাকার ওপরে উঠেছে। সেই সঙ্গে কেটেছে বিনিয়োগকারীদের মনের চাপ।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট শেয়ারের ক্রয়মূল্যে নির্ধারণে বিনিয়োগকারীদের এক যুগের দাবি পূরণ করার ঘটনায় গত ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩১ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধি নিয়ে উৎফুল্ল থাকা পুঁজিবাজার পরের সপ্তাহে ভীষণভাবে হতাশ করে বিনিয়োগকারীদের। টানা চার দিন সূচকের পাশাপাশি কমে লেনদেন। এই চার দিনে সূচক কমে ১৬০ পয়েন্টের বেশি আর লেনদেন পাঁচ শ কোটির ঘরে নেমে আসে।
তবে এর মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটে যা বিনিয়োগকারীদের চিড় ধরা আস্থা মেরামতে সহায়ক হয়ে উঠে। ফ্লোর প্রাইস উঠে যাবে-এমন গুজব ছড়ানোর কথা জানতে পেরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানায়, ফ্লোর তুলে নেয়ার কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সার্বিক সূচকে ২৬ পয়েন্টের উত্থানের পাশাপাশি লেনদেন বাড়ার পর আগের সপ্তাহের চাপ কিছুটা কাটে।
এদিন বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলারে জানায়, ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের গণনাও হবে শেয়ারের ক্রয়মূল্যে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে যাবে কি না বা গেলেও কতটা যাবে, এই প্রশ্নের মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সার্কুলারটি এই বার্তা দেয় যে, পুঁজিবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এতদিন যে রক্ষণশীল মনোভাব ছিল, গভর্নর পরিবর্তনের পর সেটি অনেকটাই দূর হয়েছে।
মঙ্গলবার ডিএসইতে সূচক বেড়ে শুরু হয় লেনদেন, শেষ পর্যন্ত বাড়ে আরও। ৫০ পয়েন্ট বেড়ে সূচকের অবস্থান এখন ৬ হাজার ২২৫ পয়েন্ট।
বেড়েছে ২৩৭টি কোম্পানির দর, কমেছে ৪২টির আর আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে ১০২টি যেগুলোর সিংহভাগই ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে।
একদিনে লেনদেন প্রায় চার শ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮ হাজার টাকা। এতে স্পষ্ট হয়েছে যে, আগের সপ্তাহে যারা বিনিয়োগ না করে বাজার পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন, তারা এখন কিনতে শুরু করেছেন।
সবচেয়ে ভালো দিন গেছে বস্ত্র খাতে। এই খাতে দুটি কোম্পানির দর কমার বিপরীতে বেড়েছে ৪৮টির দর। আর আগের দিনে লেনদেন হয়েছে আটটি।
লেনদেনেও এগিয়ে এই খাত। মোট লেনদেনের ২২ শতাংশের বেশি হয়েছে একটি খাতেই। হাতবদল হয়েছে ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার।
কেবল একদিন নয়, গত এক মাস ধরেই লেনদেনের শীর্ষে এই খাতটির অবস্থান দেখা যাচ্ছে। কোম্পানিগুলোর অর্থবছর এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং যে কোনো দিন সেগুলো লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা করতে যাচ্ছে।
লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থায় ছিল বিবিধি খাত। হাতবদল হয়েছে ১৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। একটির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ৯টির দর আর আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে চারটি কোম্পানির শেয়ার।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে চারটি কোম্পানির দর কমার বিপরীতে বেড়েছে ২৩টির দর, আগের দিনের দরে লেনদেন হয় আরও চারটি কোম্পানি। লেনদেনে এর অবস্থান ছিল তৃতীয়। হাতবদল হয়েছে ৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
প্রকৌশল খাতেও দুটি কোম্পানির দরপতন, আটটির দর অপরিবর্তিত থাকার দিন বেড়েছে ৩২টির দর। লেনদেনে খাতটির অবস্থান ছিল চতুর্থ। হাতবদল হয়েছে ৭৯ কোটি ৩০ লাখ টাকার।
আর্থিক খাতে একটি কোম্পানির দরও কমেনি। বেড়েছে ১৯টির আর তিনটি ছিল আগের দিনের দরে। খাতওয়ারি লেনদেনে অবস্থান ছিল পঞ্চম। হাতবদল হয়েছে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার।
এই খাতে ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া কোম্পানিগুলোর দর তুলনামূলক ভালো কোম্পানির চেয়ে বেশি বেড়েছে। এই প্রবণতাও সাম্প্রতিক।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতেও দুটি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৩টির দর। আগের দিনের দরে ছিল ৬টি কোম্পানি। হাতবদল হয়েছে ৬৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
লেনদেনে সপ্তম অবস্থানে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালান খাত। হাতবদল হয়েছে ৪৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। কেবল একটি কোম্পানি দর কমেছে, আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে চারটি, বাকি ১৮টির লেনদেন হয়েছে দর বেড়ে।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতেও প্রায় সব কোম্পানির দর বেড়েছে।
এসডিজি ও এমডিজির লক্ষ্যগুলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা, শিল্প-বাণিজ্য, রাষ্ট্র পরিচালনা নীতিতে দেখা যায় বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সে সময়ের নেয়া শিক্ষা নীতি, শিল্প-বাণিজ্য নীতি, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিলে; তার সেসব নীতির মাঝে আজকের এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা), এমডিজির (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) লক্ষ্যগুলোই দেখতে পাব আমরা।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদৎ বার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলে রোববার দুপুরে এ আয়োজন ছিল।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার ফলে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরাই আমাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা-নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি, যার সুযোগ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুই। বাঙালির শত বছরের সংগ্রাম-ত্যাগের পর বঙ্গবন্ধুই দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক, ধর্মীয়, নৈতিকদর্শনসহ সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের প্রশংসা করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুষ্ঠু রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেন অধ্যাপক শিবলী। দেশের কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অতুলনীয় নেতৃত্বের গুণের মাধ্যমে দেশের সকল সমস্যার সমাধান করে চলেছেন।’
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের নিহত সদস্যসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
জাতীয় শোক দিবসে সকলকে শহীদদের জন্য দোয়া করার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস আলোচনা করেন।
অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের জন্য যেসব অবদান রেখেছেন, যা কিছু করেছেন; সেসব আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জানাতে হবে এবং ছড়িয়ে দিতে হবে।’
নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর আপোষহীন অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৪৯ সালে ২৭ জনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। যাদের ২৬ জনই মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরিয়েছেন। একমাত্র বঙ্গবন্ধুই মুচলেকা দেননি, আপোষ করেননি।’
বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, আব্দুল হালিম, ড. মিজানুর রহমান, ড. রুমানা ইসলামসহ কমিশনের কর্মকর্তারা আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্বতন্ত্র পরিচালক হাবিবুল্লাহ বাহারের মৃত্যুতে আলোচনা সভা ও মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে রোববার বিকেলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে এক্সচেঞ্জটির পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
হাবিবুল্লাহ বাহার ৯ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে মারা যান। ৪ আগস্ট ব্রেন স্ট্রোক হলে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
সেদিনই জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়৷
হাবিবুল্লাহ বাহার ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান।
ব্যাংকের পর এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যাংকের মতো আর্থিখ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমাও গণনা করা হবে শেয়ারের ক্রয়মূল্যে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে এ সম্পর্কিত একটি সার্কুলার জারি করে দেশে কার্যরত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাছে পাঠানো হয়।
এতে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের কোন কোন উপাদান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে, সে বিষয় সুস্পষ্ট করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এতে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে শেয়ার ধারণের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ার, ডিবেঞ্চার, কর্পোরেট বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট এবং পুঁজিবাজারের অন্যান্য নিদর্শনপত্রে বিনিয়োগ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে বাজারমূল্য-এর পরিবর্তে ক্রয়মূল্য বিবেচনা করতে হবে।'
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের পর নানা সময় ব্যাংকে বিনিয়োগের সীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনা পদ্ধতি পাল্টানোর দাবি ছিল। কোনো শেয়ারের ক্রয়মূল্য বা বাজার মূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি হিসাব করেই এই লিমিট গণনা করা হতো। এর ফলে শেয়ারের দর বেড়ে গেলে ব্যাংকগুলো তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হতো। ফলে বাজারে শেয়ারের বিক্রয়চাপ তৈরি হতো।
এ কারণে শেয়ারের ক্রয়মূল্য ধরে এক্সপোজার লিমিট নির্ধারণের দাবি ছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও এই সুপারিশ করে আসছিল। কিন্তু ফজলে কবির গভর্নর থাকাকালে এই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
আবদুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনোভাব পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এর মধ্যে গত ১৮ জুলাই এক্সপোজার লিমিটের হিসাব পরিবর্তনে মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় থেকে ফিরতি চিঠিতে একটি কৌশলী মতামত দেয়া হয়।
এতে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেই বাজার মূল্য হিসেবে বিবেচনার মত দেয়া হয়। এর ফলে এক্সপোজার লিমিটের সংজ্ঞায় বাজারমূল্য থাকলেও কার্যত ক্রয়মূল্যতেই সেটি নির্ধারণের সুযোগ তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সেই মত মেনেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট হিসাবের ক্ষেত্রে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকেই বাজারমূল্য হিসেবে নির্ধারণের বিষয়ে গত ৪ আগস্ট সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়, সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, কোনো ব্যাংক কোম্পানির একক ও সমন্বিত উভয় ভিত্তিতে শেয়ার ধারণের ঊর্ধ্বসীমা নিধারণে সংশ্লিষ্ট শেয়ার করপোরেট বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও অন্যান্য পুঁজিবাজার নিদর্শনপত্রে বাজারমূল্য হিসাবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রয়মূল্যকেই বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
বাজার মূল্যে এক্সপোজার লিমিটের যে সমস্যা ছিল
এতদিন বাজারমূল্য বা ক্রয়মূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটিকে ধরে এক্সপোজার লিমিট বিবেচনায় করায় বাজারে বিক্রয়চাপ দেখা দিত। কোনো ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যে শেয়ার কিনলে সেটির দর বেড়ে গিয়ে সীমা অতিক্রম করে গেলেই তা বিক্রি করে দিতে হয়। এতে বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি হয়। আর ব্যাংক যেহেতু বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে তাই বিক্রির চাপটাও বেশি থাকে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর প্রাধান্য বেশি। ব্যাংকের বিক্রয় চাপ তারা সামাল দিতে পারে না।
গত ৩০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে বৈঠক শেষে জানানো হয়, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে আরেক দফা বৈঠক হবে। এরপর দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সেই বৈঠক আর হয়নি।
এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। ফজলে কবির অবসরে যাওয়ার পর গভর্নর হয়ে আসেন আবদুর রউফ তালুকদার।
তিনি পদে আসার আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ১৯ বছর পর বদলি করা হয়, যাকে পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল নীতির জন্য দায়ী করা হয়।
এর মধ্যে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার হিসাব গণনার পদ্ধতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পুঁজিবাজার নিয়ে সংস্থাটির নীতি পরিবর্তনের আভাস হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
প্রবাসীদের বিনিয়োগ সহজ
এর মধ্যে গত ২৮ জুলাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা সহজ করে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলেও ব্যাংক হিসাব খোলার জটিলতা দীর্ঘদিন ধরে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করে আসছিল। যে কারণে প্রবাসীরা ইচ্ছা সত্ত্বেও বিনিয়োগ করতে পারছিলেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে কাগজপত্র বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়নের শর্ত আরোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিএফআইইউর কোনো নির্দেশনায় এই শর্তের কথা উল্লেখ নেই। তাই প্রবাসীদের ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস থেকে সত্যায়নের দরকার নেই।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণ ওয়ান: স্কিম টু মিউচুয়াল ফান্ড গত বছরের মতো এবার আর আনরিয়েলাইজড গেইনের হিসাব প্রকাশ করেনি। গত বছর এই হিসাব প্রকাশের পর বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ার পর এবার রিয়েলাইজড গেইনের ওপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ইউনিটধারীদেরকে ১৫ শতাংশ হারে অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের বিপরীতে দেড় টাকা হারে লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
রোববার ফান্ডটির ট্রাস্টি কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপক এইমস অব বাংলাদেশ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফান্ডটির ইউনিট প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৩৪ পয়সা।
আগের বছর এই আয় ১ টাকা ২১ পয়সা হলেও আনরিয়েলাইডজ গেইনসহ আয় দেখানো হয় ৬ টাকা ৮ পয়সা। অর্থাৎ অর্থাৎ বাকি ৪ টাকা ৮৭ পয়সা তাদের আয় হতো শেয়ার বিক্রি করে। কিন্তু বিক্রি না করলেও সেটি তাদের আয় হিসেবে দেখানো হয়।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী একটি ফান্ড তার আয়ের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ নগদে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করবে।
গ্রামীণ টু গত বছর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৩৯ পয়সা আয় করেছিল। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা এই ফান্ডটির লভ্যাংশ নিয়ে ব্যাপকভাবে উৎসাহী ছিলেন। এক পর্যায়ে ইউনিটদর ২১ টাকা ৮০ পয়সা হয়ে যায়।
এরপর রিয়েলাইজড গেইনের ওপর ভিত্তি করে যখন ১৩ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়, তখন বিনিয়োগকারীরা তীব্রভাবে হতাশ হন।
তবে এবার ফান্ডটি আর আনরিয়েলাইজড আয় প্রকাশ করেনি কোনো প্রান্তিকে। এরা তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ১ টাকা ১ পয়সা আয় দেখানোর পর ইউনিটদরে আর উল্লম্ফন হয়নি।
ফান্ডটির বর্তমান ইউনিটদর ১৫ টাকা ৮০ পয়সা। এই হিসাবে এর ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে দেয়া হবে।
২০২২ তারিখে ক্রয়-মূল্যে ফান্ডটির প্রতি ইউনিটের সম্পদ মূল্য (এনএভি) ছিল ১১ টাকা ৬৭ পয়সা। ওইদিন বাজার-মূল্যে এর ইউনিটপ্রতি সম্পদ ছিল ২০ টাকা ৫২ পয়সা।
লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ঠিক করা হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ কেউ লভ্যাংশ নিতে চাইলে সেদিন ইউনিট ধরে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন:আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমলেও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালিত ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড দারুণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
ফান্ডগুলো ৬ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। ফান্ডগুলোর ইউনিট মূল্যের বিবেচনায় প্রতিটির লভ্যাংশের হার দেশে যেকোনো সঞ্চয়ী হিসাবের মুনাফার হারের চেয়ে বেশি। এমনকি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলেও এত বেশি হারে মুনাফা পাওয়া যায় না।
রোববার ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বোর্ড গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে এই লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড। আর সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৬০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে এফবিএফআইএফ মিউচুয়াল ফান্ড।
কোম্পানিটি মোট ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে। এগুলোর মুনাফা পুঁজিবাজারের এক বছরের সার্বিক অবস্থার তুলনায় বেশ ভালো। ২০২১ সালের প্রথম কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সার্বিক সূচক ছিল ৬ হাজার ২১৯ পয়েন্ট, যা অর্থবছর শেষে গত ৩০ জুন ছিল ৬ হাজার ৩৭৬ পয়েন্ট।
এক বছরে বেড়েছে ২.৫২ শতাংশ। তবে তিনটি ফান্ডের ইউনিট মূল্যের বিবেচনায় বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পাবেন এর চেয়ে বেশি।
কেবল এই পরিসংখ্যানে বোঝা যাবে না, গত এক বছরে পুঁজিবাজারে কতটা কঠিন সময় গেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইসির সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ৭ হাজার ৩০০ পয়েন্ট পেরিয়ে যখন ৮ হাজারের পথে ছোটার স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল, তখন শুরু হয় দীর্ঘ দর সংশোধন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বাজার আপন গতিতে ফেরার আশা তৈরি করেও শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা সিদ্ধান্ত, এরপর ইউক্রেনে রুশ হামলার পর অর্থনীতির চাপে পড়ার মধ্যে বাজারে নামে ধস।
এই পরিস্থিতিতেও রেইস পরিচালত দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবার লভ্যাংশ বাড়িয়েছে। দুটির লভ্যাংশ অনেকটাই কমে গেছে। বাকিগুলোর লভ্যাংশ আগের বছরের কাছাকাছিই বলা চলে।
রেইসের সব মিউচ্যুয়াল ফান্ডের গড় ইউনিটদর ৬ টাকা ১ পয়সা। এর মধ্যে গড়ে লভ্যাংশ মিলবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এই ১০টি ফান্ড সম্মিলিতভাবে ২০২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এই ফান্ডের মধ্যে ছয়টি ফান্ড আয়ের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। রিজার্ভ থেকে তারা এই লভ্যাংশ দেবে। বাকি ছয়টি ফান্ড তাদের আয়ের কিছু অংশ রিজার্ভে রাখবে।
যারা এই লভ্যাংশ নিতে চান, তাদেরকে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ইউনিট ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ সেদিনই হবে ফান্ডগুলোর রেকর্ড ডেট।
ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিট দর ৭ টাকা ৪০ পয়সা। ১১ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা হওয়ায় ইউনিট মূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ হবে ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আবার করমুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীর প্রকৃত মুনাফা আরও বেশি।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২২ পয়সা। গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৯২ পয়সা আয় করে ৬০ পয়সা বা ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
গতবার আয় বেশি করলেও লভ্যাংশ কম দেয়ার কারণ তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩৫ পয়সা লোকসান দিয়েছিল। গত বছরের আয় থেকে আগের বছরের লোকসান সমন্বয় হয়েছিল।
এক বছরে টালমাটাল পুঁজিবাজারেও ফান্ডটি ২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির ইউনিটদর ৫ টাকা ৪০ পয়সা। এটি বিনিয়োগকারীদেরকে লভ্যাংশ দেবে ৭ শতাংশ। অর্থাৎ এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ যত আয় করেছে, লভ্যাংশ তার প্রায় দ্বিগুণ।
গত বছর এই ফান্ডটি ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৮৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৮ পয়সা। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৩ পয়সার লোকসান সমন্বয় করে লভ্যাংশ ঘোষণা হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
ফান্ডটির ইউনিটদর বর্তমানে ৫ টাকা ৪০ পয়সা। এটিও লভ্যাংশ দেবে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। এই ফান্ডের ডিভিডেন্ড ইল্ড ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৫৫ পয়সা। গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৪ পয়সা আয় করে সাড়ে ৮ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৮৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৩ পয়সা লোকসান সমন্বয় করেছিল ফান্ডটি।
এই ফান্ডটি এবার ১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিটমূল্য ৫ টাকা ৪০ পয়সা। ফান্ডটিও ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিটমূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড ইল্ড ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৩১ পয়সা মুনাফা করে এর দ্বিগুণের চেয়ে লভ্যাংশ দেবে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৮০ পয়সা অর্থাৎ ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সে বছর ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৬১ পয়সা। তার আগের বছর ইউনিটে ১ টাকা ৮০ পয়সা লোকসান সমন্বয়ের কারণে লভ্যাংশ কম হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ১৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এটিরও ইউনিটদর, লভ্যাংশ এবং ইল্ড ওপরের তিনটি ফান্ডের সমান।
৫ টাকা ৪০ পয়সায় যারা ইউনিটটি কিনেছেন, তারা ৭০ পয়সা হিসেবে ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ পাবেন লভ্যাংশ হিসেবে।
এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৩৫ পয়সা মুনাফা করে এর দ্বিগুণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৭৫ পয়সা অর্থাৎ সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই বছর ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২ টাকা ৩২ পয়সা। এই আয় থেকে তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৫৮ পয়সার লোকসান সমন্বয় হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
ট্রাস্ট ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির ইউনিটমূল্য বর্তমানে ৬ শতাংশ। তারা লভ্যাংশ দেবে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। এই ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা তার বিনিয়োগের ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন।
ফান্ডটির এবার ইউনিটপ্রতি আয় হয়েছে ৭৯ পয়সা। অর্থাৎ এটি এবার আয়ের কিছুটা কম লভ্যাংশ দেবে। ইউনিটপ্রতি ৯ পয়সা রিজার্ভে যোগ হবে।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ২৪ পয়সা আয় করে ৯ শতাংশ, অর্থাৎ ৯০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল। আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাাক ৩৭ পয়সা লোকসান সমন্বয় করে সেই লভ্যাংশ ঘোষণা হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এফবিএফআইএফ
এই ফান্ডের মুনাফার হার এবার সবচেয়ে কম; ইউনিটপ্রতি ৬০ পয়সা বা ৬ শতাংশ। তবে ইউনিটমূল্য বিবেচনায় নিলে তা যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
বর্তমানে একেকটি ইউনিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ এর ডিভিডেন্ড ইল্ড ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৬৯ পয়সা। এর মধ্যে ৯ পয়সা রেখে দিয়ে বাকিটা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হবে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৯৩ পয়সা আয় করে ৪০ পয়সা অর্থাৎ ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৫৫ পয়সার লোকসান সমন্বয় হয়েছে গত বছর।
এই ফান্ডটি এবার ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিটমূল্য ৬ টাকা ২০ পয়সা। ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিটমূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড ইল্ড ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি মুনাফা করেছে ৭১ পয়সা। এর মধ্যে কেবল ১ পয়সা রাখা হবে রিজার্ভে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা আয় করে ৭৫ পয়সা অর্থাৎ সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৮ পয়সার লোকসান সমন্বয় হয়েছে গত বছর।
এই ফান্ডটি এবার ১০ কোটি ৩ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির বর্তমান ইউনিটমূল্য ৬ টাকা ৩০ পয়সা। ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিটমূল্যের তুলনায় লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড ইল্ড ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি ২৪ পয়সা আয় করে এর তিন গুণ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৫৪ পয়সা আয় করে ১ টাকা ৩০ পয়সা অর্থাৎ ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সেই আয় থেকে তার আগের বছরের ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২৬ পয়সা লোকসান সমন্বয় করা হয়েছিল।
এই ফান্ডটি এবার ২০ কোটি ২৯ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড
এই ফান্ডটির মুনাফা অনেকটাই কমে গেছে। ৭ টাকা ৪০ পয়সা ইউনিট দর ফান্ডটির। এবার লভ্যাংশ দেবে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে ইউনিটপ্রতি ৬৫ পয়সা।
ইউনিটদরের তুলনায় লভ্যাংশ কম এলেও বিনিয়োগকারীর ডিভিডেন্ড ইল্ড এফডিআরের সুদহারের তুলনায় বেশ ভালো। বিনিয়োগের ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাওয়া যাবে লভ্যাংশ হিসেবে।
ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি সবচেয়ে কম ১৯ পয়সা মুনাফা করেছে।
গত বছর এই ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৬১ পয়সা মুনাফা করে ১ টাকা ৩০ পয়সা অর্থাৎ ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সেই মুনাফা থেকে তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৩৫ পয়সা লোকসান সমন্বয় করেছিল ফান্ডটি।
এই ফান্ডটি এবার ৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা লভ্যাংশ দেবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য