ব্যাংকিং খাতে পাহাড়সম খেলাপি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঋণখেলাপিদের আবারও বড় ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলি বা নিয়মিত করতে পারবে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের ধরন বিবেচনা করে ব্যাংকের পর্ষদ ঠিক করবে কী ধরনের সুবিধা দেয়া যেতে পারে। তবে ঋণ নিয়মিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে।
‘ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ ও পুনর্গঠন’ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে; আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে শোধ করা যাবে। আগে ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো। আবার নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে।
তবে নতুন নীতিমালার মাধ্যমে জাল-জালিয়াতি ও অনিয়ম-প্রতারণার ঋণ এই সুবিধার আওতায় নিয়মিত করা যাবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি এবং নীতি বিভাগ সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে স্বয়ং গভর্নর অনুমোদন করতেন।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব, বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। নতুনভাবে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণীকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হলো।
এতে আরও বলা হয়েছে, এই নীতিমালা ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ ও পুনর্গঠনের ন্যূনতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিলি ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যা তাদের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে।
ব্যাংকের নীতিমালায় প্রজ্ঞাপনে দেয়া শর্তের চেয়ে নমনীয় কোনো শর্ত যুক্ত করা যাবে না।
নীতিমালায় অনুৎপাদনশীল খাতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অথবা উৎপাদনশীল খাতের অলাভজনক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ থাকতে হবে।
কোনো ঋণগ্রহীতা প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের আবেদন করলে ব্যাংক আবশ্যিকভাবে আবেদনপত্র গ্রহণের তিন মাস সময়ের মধ্যে তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ ছাড়া ঋণ পুনঃতফসিলি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের দায় বিবেচনায় নিয়ে গ্রাহকের সামগ্রিক ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা যাচাই করতে হবে।
শ্রেণীকৃত ঋণ সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃতফসিলীকরণ করা যাবে। তবে খেলাপি ঋণ আদায়ের স্বার্থে বিশেষ বিবেচনায় চতিুর্থ বার পুনঃতফসিল করা যাবে।
ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের ক্ষেত্রে মেয়াদি ঋণে ১০০ কোটি টাকার কম হলে সর্বোচ্চ সময়সীমা হবে ছয় বছর। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউন পেমেন্টের হার হবে সাড়ে ৪ থেকে ৭ শতাংশ। ১০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে হলে সর্বোচ্চ সময়সীমা হবে সাত বছর এবং ডাউন পেমেন্টের হার হবে সাড়ে ৩ থেকে ৬ শতাংশ। ৫০০ কোটি টাকার ওপর হলে সর্বোচ্চ সময়সীমা হবে আট বছর এবং ডাউন পেমেন্টের হার হবে আড়াই থেকে ৫ শতাংশ।
তবে তলবি ঋণে ৫০ কোটি টাকার কম হলে সর্বোচ্চ সময়সীমা হবে পাঁচ বছর এবং ন্যূনতম ডাউন পেমেন্টের হার হবে ৪ শতাংশ, ৫০ থেকে ৩০০ কোটির কম হলে সর্বোচ্চ সময়সীমা ছয় বছর এবং ডাউন পেমেন্টের হার হবে ৩ শতাংশ। ৩০০ কোটি টাকার ওপরে হলে সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ সাত বছর এবং ডাউন পেমেন্টের হার হবে আড়াই শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহকের ঋণ হিসাব দ্বিতীয় পুনঃতফসিলীকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ সাত বছর হলে তৃতীয় পুনঃতফসিলীকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ছয় বছর এবং চতুর্থ পুনঃতফসিলীকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
এ ছাড়া কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ প্রথম বার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ তিন বছর এবং দ্বিতীয় ও তৎপরবর্তী প্রতিবার পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ২ বছর ৬ মাস।
ঋণের পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাস হবে। তবে গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় উক্ত গ্রেস পিরিয়ডের মেয়াদ সর্বোচ্চ এক বছর নির্ধারণ করা যাবে।
নীতিমালার আওতায় ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের পর পুনঃতফসিলকৃত ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ৩ শতাংশ (রপ্তানিকারক ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে ২ শতাংশ) নগদে আদায় সাপেক্ষে ঋণগ্রহীতাকে নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে এবং ঋণগ্রহীতার বিদ্যমান ঋণসীমা বৃদ্ধি করা যাবে।
তবে নতুন ঋণ মঞ্জুরি বা ঋণসীমা বৃদ্ধির আগে গ্রাহক প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মর্মে ব্যাংক কর্তৃক নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের পুরোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের নতুন ঋণ প্রদানে ব্যাংক কর্তৃক সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নিয়মিত মেয়াদি ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সার্কুলারে বলা হয়েছে, নিয়মিত (অশ্রেণীকৃত: স্ট্যান্ডার্ড বা এসএমএ) মেয়াদি ঋণের বিদ্যমান অবশিষ্ট মেয়াদের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করে ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে। কোনো ঋণ হিসাবকে ঋণের মেয়াদের মধ্যে শুধুমাত্র একবার এরূপ পুনর্গঠন সুবিধা প্রদান করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্ট গ্রহণ না করে মেয়াদি ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে।
ঋণ পুনর্গঠন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদ/নির্বাহী কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। পুনঃতফসিলকৃত কোনো ঋণ পুনর্গঠন করা যাবে না।
নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী, তলবি ঋণ, চলমান ঋণ বা মেয়াদি ঋণ বিভিন্ন প্রকৃতির হওয়ায় এ-জাতীয় ঋণসমূহকে একত্রিত করে একক ঋণ হিসেবে পুনঃতফসিল করা যাবে না। তবে একই প্রকৃতির একাধিক ঋণ হিসাবকে (পুনঃতফসিলের ক্রম একই হওয়া সাপেক্ষে) একত্রিত করে একক ঋণ হিসেবে পুনঃতফসিল করা যাবে।
শ্রেণীকৃত কোনো ঋণ এ প্রজ্ঞাপন জারির আগে চার বা ততোধিক বার পুনঃতফসিলকৃত হলে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ হিসাবটি সর্বশেষ একবার পুনঃতফসিল করা যাবে, যা চতুর্থ বার হিসেবে গণ্য হবে।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত এরূপ পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ থাকবে।
চতুর্থ বার পুনঃতফসিলীকরণের পরও কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লে পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাংককে আবশ্যিকভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাল-জালিয়াতি বা অন্য কোনো ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণের ক্ষেত্রে এসব সুবিধা প্রদান করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে সার্কুলারে।
মহামারি করোনার কারণে দেয়া ছাড় উঠে যাওয়ার পর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংক খাতে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নতুন করে অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
পাশাপাশি করোনায় অর্থনীতি গতি ধরে রাখতে যে দেড় লাখ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে, তারও বড় একটা অংশ অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। এই কারণে এখন ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে চাইছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বন্যার কারণে এর আগেও ঋণখেলাপিদের অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করেছে।
ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে এ ডিভিডেন্ড প্রদান করা হবে।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসানুল আলমের সভাপতিত্বে বুধবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা এবং অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, এফসিএস উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ২৫ জুন ব্যাংকের ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং সাধারণ সভায় যোগদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৬ মে।
সভায় অন্যান্য আলোচ্যসূচির সঙ্গে ৩১ মার্চ শেষ হওয়া ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়।
আরও পড়ুন:চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তথ্যমতে, এপ্রিল মাসের প্রথম ১৯ দিনে বৈধপথে ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার এসেছে।
এর আগে মার্চ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে এসেছে ২১০ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিবপুরে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারী সাগর শেখকে অজ্ঞান করে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুইজন।
ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় সাগর শেখকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিবপুর গলাকাটা বাজারে বিপ্লব হোসেন এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন। সোমবার দুপুরে ব্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ কাজ করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞান করে। আশপাশের লোকজন টের পাওয়ার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার আগে তারা ব্যাংকে অজ্ঞাত দুজনকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন, তবে তারাই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তাদের প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে সাগরকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতরা এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে ডাকাতি করেছে বলে ধারণা তার।
বিপ্লব হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মচারীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। চোখ খুলে তাকাচ্ছে, কিন্তু তার চেতনা ফেরেনি। তাকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে না চোখে চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।’
মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে ভর্তি কর্মচারী সুস্থ হলে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:ঈদের আগের সপ্তাহে (১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত) প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সে এই বাড়তি গতির মূল কারণ প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, গত মার্চ মাসে প্রতি সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে, এপ্রিলের প্রথম ৫ দিনে রেমিট্যান্স ভালোই এসেছে। মূলত, প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠানোর কারণেই বেড়েছে রেমিট্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, টানা দু’মাস রেমিট্যান্স আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার পর ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর বাড়ার ঘটনায় মার্চে রেমিট্যান্স দুশ’ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে।
মার্চে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৯ কোটি ডলার দেশে পাঠান। ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ২১৬ কোটি ডলার এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগের বছরের একই মাসের ২০২ কোটি ডলারের তুলনায় গত মার্চে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছে।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চ মাসের বেশিরভাগ দিনে ডলারের বিনিময় দর কমে দাঁড়ায় ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১১৩ টাকায়। সে তুলনায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দর ছিল ১২০ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত।
তারা বলছেন, ডলারের দাম কমার এই ঘটনা প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। আর তার প্রভাব পড়ে রেমিট্যান্সের সার্বিক চিত্রে।
আরও পড়ুন:দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চলেছে বেসিক ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং সিটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিনের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এই কৌশলগত একীভূতকরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র: ইউএনবি
বেসিক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণ স্বেচ্ছায়ই হতে যাচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়। ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একীভূতকরণের সুপারিশ করার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও উভয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
সংযুক্তিকরণ সত্ত্বেও আগামী তিন বছর দুই ব্যাংক আলাদাভাবে তাদের আর্থিক হিসাব দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশে ব্যাংক একীভূতকরণের বিস্তৃত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সম্ভাব্য সংযুক্তিকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পর জনগণকে জানানো হবে।
এ নিয়ে মোট আটটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক পাঁচটি আর বেসরকারি ব্যাংক তিনটি। গত মার্চ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূত করার ধারা শুরু হয়।
এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মন্তব্য