ঈদের পরও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সপ্রবাহে বেশ ভালো গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
১০ জুলাই রোববার দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নেমেছিল। ঈদের ছুটির আগে সাত দিনেই ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ছুটির পর তিন দিনে (১২ থেকে ১৪ জুলাই) পাঠিয়েছেন ৩৩ কোটি ডলার।
সব মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ১৪ দিনে (১ থেকে ১৪ জুলাই) ১২৪ কোটি (১.২৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ১৪ দিনের এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১১ হাজার ৬৫০কোটি টাকা। গড় হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৮৩১ কোটি টাকা।
এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে রেমিট্যান্সের অঙ্ক ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের দরের চেয়েও বেশি দামে রেমিট্যান্স দেশে আনছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৯৬/৯৭ টাকায় প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স দেশে আনছে।
এ হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১৪ দিনে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
রেমিট্যান্সপ্রবাহে নিম্নমুখী ধারায় শেষ হয় ২০২১-২২ অর্থবছর। ৩০ জুন শেষ হওয়া এই অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।
২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুসহ প্রয়োজনীয় অন্য কেনাকাটা করতে অন্যবারের মতো এবারও পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সে কারণেই রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
‘সবচেয়ে ভালো খবর হচ্ছে, ঈদের পরও রেমিট্যান্সের গতি বেশ ভালো।’
সিরাজুল বলেন, ‘প্রণোদনা বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হওয়ায় ওই দেশগুলো থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় রেমিট্যান্স বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরজুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর।
এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’
আরও পড়ুন:
মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরতা কমানো ও হুন্ডি প্রতিরোধে এবার সারা দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় নগদ বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বর্তমানে বৈদেশিক লেনদেনে নিয়োজিত অথরাইজড ডিলার ব্যাংকগুলোর (এডি) শাখা থেকেই কেবল নগদ ডলার কেনাবেচনার অনুমতি রয়েছে। তবে মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি সপ্তাহেই ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের সেবা চালুর অনুমোদন দেয়া শুরু হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার শাখার সংখ্যা খুব কম। যেগুলো আছে সেগুলোর বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকা ও কয়েকটি বিভাগীয় শহরে। ফলে নগদ ডলার কেনাবেচার জন্য মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয়।
এ ধরনের সেবা কোন এলাকার কোন শাখায় চালু করা হবে, সেই সম্ভাব্য তালিকা চেয়ে আগামী রোববার দেশের সব ব্যাংকের কাছে চিঠি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাথমিকভাবে শাখাগুলোতে একটি ডেস্কের মাধ্যমেই এ সেবা চালুর অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খোলাবাজার থেকে যে কেউ ডলার কিনতে পারেন। ব্যাংক থেকে কিনতে পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট করতে হয়। যে কারণে অনেকে এখন খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে শেয়ারবাজারের মতো বিনিয়োগ করছেন, যা অবৈধ। এতে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
সবশেষ বুধবার খোলাবাজারে এক ডলার কিনতে ১২০ টাকা গুনতে হয়েছে৷ অথচ আন্তব্যাংকে ডলার রেট ৯৫ টাকা।
আন্তব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ২৫ টাকা। আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল এ পর্যন্ত এক শ’র বেশি মানি চেঞ্জার পরিদর্শন করেছে।
এর মধ্যে ৪২টি প্রতিষ্ঠানকে ডলার কেনাবেচায় বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শোকজ করা হয়। আর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে। লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ডলারের দাম বৃদ্ধির পেছনে কারসাজির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ইসলামী ব্যাংক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
এ সময় ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী, ওমর ফারুক খান ও জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাকসুদুর রহমান, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান ভুঁইয়া ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলামসহ ব্যাংকের নির্বাহী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) অংশীদারিত্বে চালু করা অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং বন্ডের সাবস্ক্রিপশন সমাপনী (ক্লোজার) অনুষ্ঠান সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রথম এই হাউজিং বন্ডের লক্ষ্য সারা দেশে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের শহুরে ও গ্রামীণ পরিবারগুলোকে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন ঋণ প্রদান করা।
আইএফসি এই বন্ডে ৫ কোটি আমেরিকান ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা সাবস্ক্রিপশন করেছে। এটি একটি ডিনোমিনেটেড, নন-কনভার্টিবল, প্রাইভেটলি প্লেসড, রিডিমেবল, আনসিকিউরড, ফিক্সড কুপন বিয়ারিং এবং পাঁচ বছরের সিনিয়র বন্ড, যা ব্র্যাক ব্যাংককে এর অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং ফাইন্যান্স প্রোগ্রাম সম্প্রসারণে সাহায্য করবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন আইএফসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হোল্টম্যানের কাছে গত ৪ আগস্ট ঢাকায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে বন্ড সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ সময় ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব অব ট্রেজারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন্স শাহীন ইকবাল, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব এসএমই ব্যাংকিং সৈয়দ আব্দুল মোমেন, হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মাহীয়ুল ইসলাম এবং আইএফসির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ও কান্ট্রি অ্যাঙ্কর এহসানুল আজিম; সিনিয়র অপারেশন্স অফিসার এফআইজি আপস্ট্রিম মিসেস আয়েশা বেগ ছাড়াও উভয় প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এই সাশ্রয়ী আবাসন ঋণ সুবিধার মাধ্যমে দেশের মানুষ পাকা ও আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সহজে গৃহঋণ নিতে পারবেন। এই ঋণ সুবিধার আওতায় আবাসন, নির্মাণ এবং এর আনুষঙ্গিক শিল্পের প্রসার ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে আইএফসি এবং ব্র্যাক ব্যাংক যৌথভাবে একটি বাণিজ্যিকভাবে সম্ভাবনাময় ঋণ নিয়ে এসেছে, যা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের গৃহঋণ চাহিদা মেটাবে, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন উৎসাহিত করবে এবং হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে; অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে অর্থনীতি; রিজার্ভ কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বিশাল ঘাটতিতে পড়ে ওলোটপালট হয়ে গেছে সব হিসাবনিকাশ। সেই আমদানি খরচ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টের ১১ দিনে পণ্য আমদানির জন্য ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। আগের মাস জুলাইয়ের এই ১১ দিনে ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। তার আগের মাস জুনের ১১ দিনে খোলা হয়েছিল ২ দশমিক ৩৩ বিলিরয়ন ডলারের এলসি।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৫৫৫ কোটি (৫.৫৫ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা জুনে ছিল ৭৯৬ কোটি (৭.৯৬ বিলিয়ন) ডলার। অর্থাৎ জুন থেকে জুলাই মাসে এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ। জুনে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ডলার। জুলাইয়ে সেটি ১১৭ কোটি ডলার কমে ৬৫৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক আর্থিক বছরে পণ্য আমদানিতে এত ব্যয় হয়নি।
অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ২০২০-২১ অর্থবছরের মতো উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। আগস্টের প্রথম ১০ দিনেই ৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো মাসেই ১০ দিনে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি দেশে।
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) টাকার অঙ্কে ১০ দিনের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৭ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
এ হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৮ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ৭৭২ কোটি টাকা।
বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকার বেশি দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
মাসের বাকি ২০ দিনেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে, এমন আশার কথা শুনিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুলাই মাসের মতো আগস্ট মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’
জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে এটি বেশি ১২ শতাংশ।
প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের আগস্ট মাসের ১০ দিনে (১ থেকে ১০ আগস্ট) ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত (১ মাস ১০ দিনে) ২৯১ কোটি (২.৯১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ২৫৪ কোটি ৭০ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় ওলটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে কয়েক দিন আগে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে যখন দেশজুড়ে ক্ষোভ-হতাশা এবং আগামী দিনগুলোতে কী হবে, এই প্রশ্ন সবার মধ্যে, তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ। মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের কথা। ভরা করোনা মহামারির মধ্যেও ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
‘মহামারির মধ্যে ওই সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন প্রবাসীরা’- এই মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সংকট কাটাতেও সবার আগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। আবার বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন।’
আরেক অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের ফলে আমদানি কমতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে এটা সত্যিই স্বস্তির খবর। এভাবে আমদানি কমলে আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়লে খুব শিগগিরই আমাদের সংকট কেটে যাবে।
‘এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কিন্তু এখনও ভালো অবস্থায় আছে। রপ্তানি বাড়ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। আমদানি কমছে। সমস্যা যেটা, সেটা হচ্ছে, ডলারের অস্থির বাজার এবং ব্যালান্স অফ পেমেন্টে বড় ঘাটতি নিয়ে। মূল্যস্ফীতি এখনও খুব বেশি ওপরে উঠেনি। জ্বালানি তেলের মূল্যস্ফীতির কারণে সেটা হয়তো বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা করতে হবে, সেটা হলো, ডলারের বাজারকে যে করেই হোক স্থিতিশীল করতে হবে। টাকাকে শক্তিশালী করতে হবে। আর এ জন্য কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো উচিৎ। তাহলে বাজারে টাকার সরবরাহ কমে আসবে; টাকার চাহিদা বাড়বে, ডলারের বিপরীতে শক্তিশারী হবে।
‘এই কাজটি এখন সরকারের নীতিনির্ধারক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরুরিভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।’
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল; গড়ে প্রতিদিন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২০-২১ অর্থবছরে। সে সময় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৭৯ ডলার প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছিল।
এসব হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্সে রয়েছে ঊর্ধ্বগতি। এই প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং এই অর্থবছরে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ লোক কাজের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারা ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। সে কারণেই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এই ইতিবাচক ধারা পুরো অর্থবছর জুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি।’
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ে; ঈদের পর কমে যায়। তবে এবার কোরবানির ঈদের আগে যে গতিতে রেমিট্যান্স এসেছে, সেই ধারা ঈদের পরেও অব্যাহত আছে।
দেশে গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নামে। ঈদের ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরে ২১ দিনে এসেছে ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
ঈদের পরেও কেন রেমিট্যান্স বাড়ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।’
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। তবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকা পর্যন্ত দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে।
সে হিসাবে কোনো প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ ডলার দেশে পাঠালে ১১০ টাকার সঙ্গে নগদ প্রণোদনার ২ টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন।
কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর প্রায় একই। সে কারণেই প্রবাসীরা এখন অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে দেশে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।
রেমিট্যান্স বাড়ার আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখানে কর্মরত আমাদের প্রবাসীরা বেশি আয় করছেন। দেশেও বেশি টাকা পাঠাতে পারছেন।
‘দেশে ডলারের সংকট চলছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। রিজার্ভ কমছে। এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর জুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালচাল নিয়ে তৈরি করা পাক্ষিক প্রতিবেদনেও রেমিট্যান্স নিয়ে সুসংবাদের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ২১ জুলাই প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সব প্রবাসী তাদের কর্মস্থলে ফিরেছেন। টাকার বিপরীতে ডলার বেশ খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।
‘এই বিষয়গুলো আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স বাড়াতে সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আসবে।
আরও পড়ুন:
খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই গত তিন মাসে অনাদায়ী এই ঋণ বাড়ল আরও ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
মার্চে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। তিন মাসে তা বেড়েছে ১১ হাজর ৮১৬ কোটি টাকা।
করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ ও ২০২১ সাল জুড়ে কয়েক দফায় কোনো ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা সামান্য পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল। এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধার বেশিরভাগই শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এর পরপরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
কেবল টাকার অঙ্কে নয়, শতকরা হিসাবেও খেলাপি বেড়েছে। জুন শেষে বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। মার্চ শেষে খেলাপি ছিল ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
জুনে মোট ঋণ দেয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, যা মার্চে ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।
২০২০ সাল থেকে দফায় দফায় খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা বাড়ানো হয়। এখন অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো গেলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করছেন না। ব্যাংকগুলো নানামুখী চেষ্টা করেও তাদের থেকে টাকা আদায় করতে পারছে না।
২০২১ সালে ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ হলেও তা নিয়মিত দেখানো হয়। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কেউ এ হারে টাকা দিলে আগের তারিখ দেখিয়ে নিয়মিত থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে ব্যবসায়ীদের বড় ছাড় দিয়ে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ নগদ এককালীন জমা দেয়ার হার কমিয়ে ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
এর ১৬ দিনের মধ্যে সংশোধনী দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া নতুন সার্কুলারে ঋণ খেলাপিদের আরও ছাড় দেয়া হয়। পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়িও করা হয়।
খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে
রাষ্ট্রীয় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ও বেসিক- এই ছয় ব্যাংকের জুন শেষে মোট ঋণ ২ লাখ ৫২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৫ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মার্চ শেষে এই ছয় ব্যাংকের মোট ঋণ ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ০১ শতাংশ।
তিন মাসে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা।
টাকার অঙ্কে খেলাপি ঋণ বেশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে
বেসরকারি ব্যাংকগুলো জুন পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৬২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ০১ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের ঋণ ছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত তিন ব্যাংক
কৃষি, প্রবাসীকল্যাণ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন- বিশেষায়িত এ তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এটা তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তারা বিতরণ করেছে মোট ৩৫ হাজার ৪৭২৮ কোটি টাকার ঋণ।
মার্চে এ তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০১ শতাংশ। তারা বিতরণ করে মোট ৩৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার ঋণ।
এই তিন ব্যাংকে তিন মাসে খেলাপি ঋণ টাকা অংকে বাড়লেও শতকরা হিসাবে কমেছে।
বিদেশি ৯ ব্যাংক
বিদেশি মালিকানার ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ৬৭ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
মার্চে এই ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ৬৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:খেলাপি ঋণ আদায় ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে আইএফআইসি ব্যাংকে বার্ষিক রিকভারি সভা হয়েছে।
রাজধানীর পুরনো পল্টনে সোমবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ এ সারওয়ার।
এ সময় অন্যদের মধ্যে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চীফ রিস্ক অফিসার শাহ মোঃ মঈনউদ্দিন, হেড অব লোন পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন রফিকুল ইসলাম, হেড অব স্পেশাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট মোমেনিনা বিনতে মাকসুদসহ প্রধান কার্যালয়ের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ও শাখা ব্যবস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইউএনসিডিএফ) কেস স্টাডিতে বাংলাদেশের ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল রেমিট্যান্সের সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
'মহামারি করোনার সময় নগদ লেনদেন থেকে ডিজিটাল রেমিট্যান্সে স্থানান্তর: বাংলাদেশে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি কেস স্টাডি’ শীর্ষক গবেষণাটিতে ডিজিটাল সার্ভিস কীভাবে সাধারণ মানুষকে আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং তাদের আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত করেছে তা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ইউএনসিডিএফ ব্লগে প্রকাশিত এই কেস স্টাডিতে রেমিট্যান্স বাজারের অন্তর্দৃষ্টি এবং যে দেশটি প্রতি বছর ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স গ্রহণ করে, সে দেশে রেমিট্যান্স কীভাবে আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ডিজিটাল মাধ্যমে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২০ সালের প্রথমে মহামারির শুরুর দিকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশংকা সুষ্টি হয়েছিল; যা অর্থনীতিতে, বিশেষ করে অভিবাসী পরিবারগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। কিন্তু ২০২০ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রেমিট্যান্স ১ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেলেও, বাংলাদেশে তার উল্টোটা ঘটেছিল। ওই বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ইউএনসিডিএফ’র কেস স্টাডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিট্যান্সে ডিজিটাল লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ওয়ালেট ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ডিজিটাল ট্রান্সফার নগদ রেমিট্যান্সের চেয়ে শুধু সাশ্রয়ী, দ্রুত ও নিরাপদই নয়; এর মাধ্যমে আরও ক্ষুদ্র অংকের, আরও বেশি বেশি লেনদেন করা সম্ভব। বিকাশ মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত লেনদেনের প্রায় ৮৬ শতাংশই ২০০ আমেরিকান ডলারের কম, যার পরিমাণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রাপ্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং নগদ অর্থের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ।’
রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের ডিজিটাল চ্যানেলে সুবিধা উন্নত করতে এবং রেমিট্যান্স-লিঙ্কড, ভ্যালু-অ্যাডেড সার্ভিসের ব্যবহার জোরদার করতে ব্র্যাক ব্যাংক ইউএনসিডিএফ’র সঙ্গে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠান দুটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং ড্যাটা ম্যাপিং পরিচালনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বাজারের একটি বিশদ মার্কেট পর্যালোচনা করেছে এবং প্রায় আট লাখ আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স গ্রাহককে নিয়ে ৩৮ লাখ লেনদেনের রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছে।
২০২০ সালের মে মাসে ইউএনসিডিএফ’র সহায়তায় ব্র্যাক ব্যাংক বিদ্যমান ডিজিটাল রেমিট্যান্স ডেলিভারি চ্যানেল- যেমন সরাসরি ক্রেডিট এবং বিকাশ মোবাইল ওয়ালেট সেবাকে আরো উন্নত করেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সম্মানিত যে, আমাদের ডিজিটাল রেমিট্যান্সের সাফল্যের গল্পটি ইউএনসিডিএফ তুলে ধরেছে। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ভালো কাজগুলো আড়ালে থাকে না। ডিজিটালাইজেশনের পরিধি ও বিস্তৃতি আরও বাড়াতে এই স্বীকৃতি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।’
তিনি বলেন, ‘মহামারির শুরুতে আউটলেট থেকে নগদ সংগ্রহ করা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেই সময় ক্যাশলেস রেমিট্যান্স চ্যানেলের প্রচার এবং স্বীকৃতি দেয়া ইউএনসিডিএফ’র একটি খুব সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিল। আমরা যে রকম সাড়া পেয়েছি তা আগামী দিনে ডিজিটাল রেমিট্যান্সের বিশাল সম্ভাবনার কথাই বলে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য