বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামার পর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকের ওপর চাপ কমাতে এক দিনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর একটি হচ্ছে- দেশের ব্যাংকগুলো এখন তাদের আমদানির খরচ মেটাতে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম থেকে ঋণ নিতে পারবে। প্রথমবারের মতো এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে- আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।
আর সবশেষটি হলো- রপ্তানিকারকের রিটেনশন বা প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমা করা বিদেশি মুদ্রার ৫০ শতাংশ অনতিবিলম্বে নগদায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে এই কোটার হিসাবে নতুন করে জমা রাখার হার অর্ধেক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলদা এই তিনটি সার্কুলার জারি করা হয়।
অফশোর ব্যাংকিং বিষয়ে ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী স্থানীয় ব্যাংকগুলো তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজ করতে ছয় মাস মেয়াদের জন্য অফশোর ব্যাংকিংয়ের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ ঋণ নিতে পারবে। তবে এই অর্থ শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল এবং সরকারের আমদানি বিল পরিশোধে খরচ করতে হবে।
এই সিদ্ধান্ত চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের অভ্যন্তরে পৃথক ব্যাংকিং সেবা। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান ও বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয় না। কেবল মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল মুনাফায়।
এ ছাড়া রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আরও দুটি আলাদা সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলা সংক্রান্ত সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েব পোর্টালে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অপ্রয়োজনীয় আমদানি রোধ এবং আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না- সে বিষয়টি জানতে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরকারি আমদানি ছাড়া অন্য যেকোনো আমদানি ৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি হলেই এই রিপোর্ট করতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ইআরকিউ বিষয়ক আরেক সার্কুলারে রপ্তানিকারকের রিটেনশন বা প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমা করা বিদেশি মুদ্রার ৫০ শতাংশ দ্রুত নগদায়ন করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে এই কোটার হিসাবে নতুন করে জমা রাখার হার অর্ধেক করা হয়েছে।
প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয়ের নির্দিষ্ট অংশ ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখা যায়। স্থানীয় মূল্য সংযোজনের মাত্রা অনুযায়ী রিটেনশন কোটার হার ১৫ শতাংশ কিংবা ৬০ শতাংশ হতে পারে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই হার ৭০ শতাংশ।
বৃহস্পতিবারের সার্কুলারে রিটেনশন কোটা হিসাবে বিদেশি মুদ্রা জমার মাত্রা ৫০ শতাংশ কমিয়ে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তও চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামার পর বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে এক দিনে এই তিন পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বেশ কিছুদিন ধরে চলা ডলারের অস্থির বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’আনতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রপ্তানি আয় বাড়লেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে, দুর্বল হচ্ছে টাকা। এর পরও কিছুতেই বাগে আসছে না ডলারের তেজিভাব।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
বুধবারও টাকার মান আরেক দফা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৫০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বুধবার এক ডলারের জন্য ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছে; মঙ্গলবার লেগেছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা।
গত এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া ও চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দেয়। আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও ডলারের বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না।
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। বাজার ‘স্থিতিশীল’রাখতে গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় নতুন অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৩ দিনে (১ থেকে ১৩ জুলাই) ৫৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
এর ফলে রিজার্ভ দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
অথচ করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে ওই অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
আগস্ট থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, চলে পুরো অর্থবছর।
সেই ধারাবাহিকতায় চাহিদা মেটাতে নতুন অর্থবছরেও (২০২২-২৩) ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমদানি ব্যয় কমাতে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণসহ ২৭ পণ্যে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, রপ্তানি বিল পাওয়ার এক দিনের মধ্যে নগদায়ন, বিদেশ ভ্রমণে কড়াকড়িসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
ঈদের আগে মার্চ মাসে রেকর্ড রেমিট্যান্সের পর এবার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মাস শেষ হওয়ার আগেই দেশের রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশের রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের বিপিএম-৬ পরিমাপ অনুসারে। গ্রস রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়।
মার্চের ৯ তারিখ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করায় গ্রস রিজার্ভ নেমে আসে ২৫ বিলিয়নের নিচে এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের থেকেও কমে যায়।
আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬-এর মান অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ হয়েছিল ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা এ কয়েক দিনে আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠে এসেছে।
এর আগে মার্চের প্রথম ২৬ দিনে আসে ২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে যেকোনো মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য আগামী ১৭ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ঠিক ছিল মঙ্গলবার। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান নতুন এ দিন ঠিক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনে পাঠানো হয়।
দেশের অভ্যন্তরের কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করে বলে ধারণা করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬- এর ৫৪ ধারা ও ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা করেন।
মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের ৮০ শতাংশ ফেরত আনা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাকি অর্থ আদায়ে মামলা চলছে। মামলায় জিতে বাকি অর্থও ফেরানো সম্ভব।
রাজধানীর একটি হোটেল শনিবার ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানই ২০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। সেসব অর্থ উদ্ধারে কাজ চলছে। বিদেশিরাও সহযোগিতা করছেন।
গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন তথা এফবিআইসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। বিদেশি আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত ৫ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩০০ কোটি ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ২৫০ কোটি ডলার।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স বছরে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষে উঠে এসেছে দুবাই।
একে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে গভর্নর জানান, সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাইয়ে আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট (হস্তক্ষেপ) করার চেষ্টা করছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার কোটি ডলার হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘চার মাস চলার মতো রিজার্ভ আছে। তাই ভয়ের কিছু নেই।’
আরও পড়ুন:নতুন বছরে প্রথম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পদ্মা ব্যাংক পিএলসির, যা ব্যাংকটির ১২১তম সভা।
ব্যাংকের হেড অফিসে গত ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সভাটি।
মো. শওকত আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ সভায় অন্য পরিচালকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন, তামিম মারজান হুদা, শাহনুল হাসান খান, ডা. ফারহানা মোনেম, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান, ব্যারিস্টার-এট-ল’ এবং এইচএম আরিফুল ইসলাম এফসিএ।
সভা পরিচালনা করেন পদ্মা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. তালহা (চলতি দায়িত্বে)।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এটা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারণ এই সময়কালে মোট ১৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছর এটা ছিল ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, সরকার অনাবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থ প্রেরণে উৎসাহিত করায় দেশে রেমিট্যান্সের প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১২ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। বিএফআইইউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সোমবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একইসঙ্গে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
হিসাব তলব করা সাংবাদিকরা হলেন- সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বাদল, ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বাংলাদেশ পোস্টের বিশেষ প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম হাসিব, নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দ্বীপ আজাদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসসের সাবেক প্রধান বার্তা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হোসনে আরা মমতা ইসলাম সোমা, দৈনিক জনকণ্ঠের ডেপুটি এডিটর ওবাইদুল কবীর মোল্লা, দৈনিক জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান, ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত এবং গ্লোবাল টিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেয়ার তারিখ থেকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউ-তে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশে সুশাসনের ভিত্তি মজবুত হওয়ায় অর্থ পাচার উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অর্থ এখন আর বিদেশে ডাইভার্ট হচ্ছে না; বরং তা দেশের মধ্যেই অবস্থান করছে।
শনিবার টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘যারা অর্থ নিয়ে দেশ ছেড়েছে, তাদের অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো, হয়তো একটু সময় লাগবে। তবে আমরা হাল ছাড়ব না।’
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একসময় আমাদের রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছিল। ব্যালেন্স অফ ক্রেডিটের কারণে মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছিল। আমরা সেই সংকট থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন রিজার্ভ আর কমছে না।
‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এক ডলারও বিক্রি করেনি। ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের ঘাটতিও দূর হয়েছে। বর্তমানে এটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। গত পাঁচ মাসে অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।’
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘বিদেশে কর্মরত ভাই-বোনদের পাঠানো টাকা এখন খুব দ্রুত এবং নিরাপদে পরিবারের হাতে পৌঁছাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতিহাস বলে, ইসলামী ব্যাংক দেশের এক নম্বর রেমিট্যান্স সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান।’
ব্যাংকিং খাতে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। তবে আমরা আশা করছি, আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে খাদ্যপণ্যের দাম কমে একটি স্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি আমানতকারী প্রতিষ্ঠান, যা জনগণকে সেবা দেয়।’
ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অফ ডাইরেক্টরসের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল, এফসিএস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, রিস্ক কমিটির চেয়ারম্যান ড. এম মাসুদ রহমান এবং ইনডিপেন্ডেন্ট ডাইরেক্টর মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব।
অনুষ্ঠানে শরীয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য