মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ১০ লাখ (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাটির দর। দুর্বল হচ্ছে টাকা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও বেশ কমে এসেছে। বৃহস্পতিবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের সামান্য ওপরে অবস্থান করছে।
ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের জোয়ারের কারণে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ছয় দিনে (১ থেকে ৬ জুলাই) ৭৪ কোটি ১০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গড়ে প্রতিদিন এসেছে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্সে এই উল্লম্ফন না হলে আকুর দেনা শোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসত বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত এক সপ্তাহ ধরে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সায় বিক্রি হলেও ব্যাংকগুলো এর চেয়ে ৩/৪ টাকা বেশি দরে নগদ ডলার বিক্রি করছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে আমেরিকান ডলারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। রপ্তানি আয় বাড়লেও ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বেড়েছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। এরপরও কিছুতেই বাগে আসছে না ডলারের তেজী ভাব।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করলেও ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় এনেছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকায়, আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করেছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকা দামে। খোলা বাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৭ থেতকে ৯৮ টাকার মধ্যে। মে মাসে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৯৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯৭ টাকায়।
গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে; দুর্বল হতে শুরু করে টাকা। তার আগে এক বছরেরও বেশি সময় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ছিল ডলারের দর।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে ওই অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তারই ধারাবাহিকতায় বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, চলে পুরো অর্থবছর।
চাহিদা মেটাতে নতুন অর্থবছরেও (২০২২-২৩) ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ১১ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনীতি নিয়ে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে; অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে অর্থনীতি; রিজার্ভ কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে, বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বিশাল ঘাটতিতে পড়ে ওলোটপালট হয়ে গেছে সব হিসাবনিকাশ। সেই আমদানি খরচ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টের ১১ দিনে পণ্য আমদানির জন্য ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। আগের মাস জুলাইয়ের এই ১১ দিনে ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। তার আগের মাস জুনের ১১ দিনে খোলা হয়েছিল ২ দশমিক ৩৩ বিলিরয়ন ডলারের এলসি।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৫৫৫ কোটি (৫.৫৫ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা জুনে ছিল ৭৯৬ কোটি (৭.৯৬ বিলিয়ন) ডলার। অর্থাৎ জুন থেকে জুলাই মাসে এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ। জুনে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ডলার। জুলাইয়ে সেটি ১১৭ কোটি ডলার কমে ৬৫৮ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক আর্থিক বছরে পণ্য আমদানিতে এত ব্যয় হয়নি।
অন্যদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ২০২০-২১ অর্থবছরের মতো উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। আগস্টের প্রথম ১০ দিনেই ৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো মাসেই ১০ দিনে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি দেশে।
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা) টাকার অঙ্কে ১০ দিনের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৭ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
এ হিসাবে প্রতিদিন এসেছে ৮ কোটি ১৩ লাখ ডলার বা ৭৭২ কোটি টাকা।
বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকার বেশি দরেও রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ আরও বেশি।
মাসের বাকি ২০ দিনেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে, এমন আশার কথা শুনিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জুলাই মাসের মতো আগস্ট মাসেও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’
জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে এটি বেশি ১২ শতাংশ।
প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের আগস্ট মাসের ১০ দিনে (১ থেকে ১০ আগস্ট) ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত (১ মাস ১০ দিনে) ২৯১ কোটি (২.৯১ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ২৫৪ কোটি ৭০ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
করোনা মহামারির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ধাক্কায় ওলটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে কয়েক দিন আগে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে যখন দেশজুড়ে ক্ষোভ-হতাশা এবং আগামী দিনগুলোতে কী হবে, এই প্রশ্ন সবার মধ্যে, তখন স্বস্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ। মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের কথা। ভরা করোনা মহামারির মধ্যেও ওই অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
‘মহামারির মধ্যে ওই সময় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন প্রবাসীরা’- এই মন্তব্য করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সংকট কাটাতেও সবার আগে এগিয়ে এসেছেন প্রবাসীরা। আবার বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন।’
আরেক অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের ফলে আমদানি কমতে শুরু করেছে। এই মুহূর্তে এটা সত্যিই স্বস্তির খবর। এভাবে আমদানি কমলে আর রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়লে খুব শিগগিরই আমাদের সংকট কেটে যাবে।
‘এখানে একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা কিন্তু এখনও ভালো অবস্থায় আছে। রপ্তানি বাড়ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। আমদানি কমছে। সমস্যা যেটা, সেটা হচ্ছে, ডলারের অস্থির বাজার এবং ব্যালান্স অফ পেমেন্টে বড় ঘাটতি নিয়ে। মূল্যস্ফীতি এখনও খুব বেশি ওপরে উঠেনি। জ্বালানি তেলের মূল্যস্ফীতির কারণে সেটা হয়তো বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা করতে হবে, সেটা হলো, ডলারের বাজারকে যে করেই হোক স্থিতিশীল করতে হবে। টাকাকে শক্তিশালী করতে হবে। আর এ জন্য কিছু সময়ের জন্য হলেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানো উচিৎ। তাহলে বাজারে টাকার সরবরাহ কমে আসবে; টাকার চাহিদা বাড়বে, ডলারের বিপরীতে শক্তিশারী হবে।
‘এই কাজটি এখন সরকারের নীতিনির্ধারক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরুরিভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।’
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল; গড়ে প্রতিদিন ৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২০-২১ অর্থবছরে। সে সময় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি (২৪.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। ওই অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৭৯ ডলার প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছিল।
এসব হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্সে রয়েছে ঊর্ধ্বগতি। এই প্রবণতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে এবং এই অর্থবছরে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে বলে মনে করছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ লোক কাজের সন্ধানে বিভিন্ন দেশে গেছেন। তারা ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেছেন। সে কারণেই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এই ইতিবাচক ধারা পুরো অর্থবছর জুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি।’
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ে; ঈদের পর কমে যায়। তবে এবার কোরবানির ঈদের আগে যে গতিতে রেমিট্যান্স এসেছে, সেই ধারা ঈদের পরেও অব্যাহত আছে।
দেশে গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহে ঢল নামে। ঈদের ৯০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরে ২১ দিনে এসেছে ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
ঈদের পরেও কেন রেমিট্যান্স বাড়ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ডলারের দর বেশ খানিকটা বেড়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ দুই শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। এসব কারণে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সে কারণেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।’
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে আশা করছি এখন মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।’
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো এই দরে ডলার কিনেছে। তবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ব্যাংকগুলো ১১০ টাকা পর্যন্ত দরে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার সংগ্রহ করেছে।
সে হিসাবে কোনো প্রবাসী এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ১ ডলার দেশে পাঠালে ১১০ টাকার সঙ্গে নগদ প্রণোদনার ২ টাকা ৫০ পয়সা যুক্ত হয়ে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন।
কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে ডলারের দর প্রায় একই। সে কারণেই প্রবাসীরা এখন অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ঝুঁকি নিয়ে দেশে টাকা না পাঠিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন বলে জানান ব্যাংকাররা।
রেমিট্যান্স বাড়ার আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখানে কর্মরত আমাদের প্রবাসীরা বেশি আয় করছেন। দেশেও বেশি টাকা পাঠাতে পারছেন।
‘দেশে ডলারের সংকট চলছে। মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে। রিজার্ভ কমছে। এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স বাড়া অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো হবে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমন পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছর জুড়ে (২০২১-২২) ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
এই অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি পরিমাণ রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।’
দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর হালচাল নিয়ে তৈরি করা পাক্ষিক প্রতিবেদনেও রেমিট্যান্স নিয়ে সুসংবাদের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ২১ জুলাই প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে। করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সব প্রবাসী তাদের কর্মস্থলে ফিরেছেন। টাকার বিপরীতে ডলার বেশ খানিকটা শক্তিশালী হয়েছে।
‘এই বিষয়গুলো আগামী মাসগুলোতে রেমিট্যান্স বাড়াতে সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়, রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং চলতি অর্থবছরে গত বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আসবে।
আরও পড়ুন:
খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই গত তিন মাসে অনাদায়ী এই ঋণ বাড়ল আরও ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
মার্চে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। তিন মাসে তা বেড়েছে ১১ হাজর ৮১৬ কোটি টাকা।
করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ ও ২০২১ সাল জুড়ে কয়েক দফায় কোনো ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা সামান্য পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল। এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধার বেশিরভাগই শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এর পরপরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
কেবল টাকার অঙ্কে নয়, শতকরা হিসাবেও খেলাপি বেড়েছে। জুন শেষে বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। মার্চ শেষে খেলাপি ছিল ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
জুনে মোট ঋণ দেয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, যা মার্চে ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।
২০২০ সাল থেকে দফায় দফায় খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা বাড়ানো হয়। এখন অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো গেলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করছেন না। ব্যাংকগুলো নানামুখী চেষ্টা করেও তাদের থেকে টাকা আদায় করতে পারছে না।
২০২১ সালে ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ হলেও তা নিয়মিত দেখানো হয়। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কেউ এ হারে টাকা দিলে আগের তারিখ দেখিয়ে নিয়মিত থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে ব্যবসায়ীদের বড় ছাড় দিয়ে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ নগদ এককালীন জমা দেয়ার হার কমিয়ে ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
এর ১৬ দিনের মধ্যে সংশোধনী দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া নতুন সার্কুলারে ঋণ খেলাপিদের আরও ছাড় দেয়া হয়। পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়িও করা হয়।
খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে
রাষ্ট্রীয় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ও বেসিক- এই ছয় ব্যাংকের জুন শেষে মোট ঋণ ২ লাখ ৫২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৫ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মার্চ শেষে এই ছয় ব্যাংকের মোট ঋণ ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ০১ শতাংশ।
তিন মাসে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা।
টাকার অঙ্কে খেলাপি ঋণ বেশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে
বেসরকারি ব্যাংকগুলো জুন পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৬২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ০১ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের ঋণ ছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত তিন ব্যাংক
কৃষি, প্রবাসীকল্যাণ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন- বিশেষায়িত এ তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এটা তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তারা বিতরণ করেছে মোট ৩৫ হাজার ৪৭২৮ কোটি টাকার ঋণ।
মার্চে এ তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০১ শতাংশ। তারা বিতরণ করে মোট ৩৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার ঋণ।
এই তিন ব্যাংকে তিন মাসে খেলাপি ঋণ টাকা অংকে বাড়লেও শতকরা হিসাবে কমেছে।
বিদেশি ৯ ব্যাংক
বিদেশি মালিকানার ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ৬৭ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
মার্চে এই ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ৬৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:খেলাপি ঋণ আদায় ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে আইএফআইসি ব্যাংকে বার্ষিক রিকভারি সভা হয়েছে।
রাজধানীর পুরনো পল্টনে সোমবার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ এ সারওয়ার।
এ সময় অন্যদের মধ্যে ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চীফ রিস্ক অফিসার শাহ মোঃ মঈনউদ্দিন, হেড অব লোন পারফরমেন্স ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন রফিকুল ইসলাম, হেড অব স্পেশাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট মোমেনিনা বিনতে মাকসুদসহ প্রধান কার্যালয়ের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ও শাখা ব্যবস্থাপকরা উপস্থিত ছিলেন বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (ইউএনসিডিএফ) কেস স্টাডিতে বাংলাদেশের ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল রেমিট্যান্সের সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
'মহামারি করোনার সময় নগদ লেনদেন থেকে ডিজিটাল রেমিট্যান্সে স্থানান্তর: বাংলাদেশে ব্র্যাক ব্যাংকের একটি কেস স্টাডি’ শীর্ষক গবেষণাটিতে ডিজিটাল সার্ভিস কীভাবে সাধারণ মানুষকে আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং তাদের আর্থ-সামাজিকভাবে ক্ষমতায়িত করেছে তা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ইউএনসিডিএফ ব্লগে প্রকাশিত এই কেস স্টাডিতে রেমিট্যান্স বাজারের অন্তর্দৃষ্টি এবং যে দেশটি প্রতি বছর ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স গ্রহণ করে, সে দেশে রেমিট্যান্স কীভাবে আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ডিজিটাল মাধ্যমে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২০ সালের প্রথমে মহামারির শুরুর দিকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশংকা সুষ্টি হয়েছিল; যা অর্থনীতিতে, বিশেষ করে অভিবাসী পরিবারগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। কিন্তু ২০২০ সালে বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রেমিট্যান্স ১ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেলেও, বাংলাদেশে তার উল্টোটা ঘটেছিল। ওই বছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ইউএনসিডিএফ’র কেস স্টাডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিট্যান্সে ডিজিটাল লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ওয়ালেট ৩৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ডিজিটাল ট্রান্সফার নগদ রেমিট্যান্সের চেয়ে শুধু সাশ্রয়ী, দ্রুত ও নিরাপদই নয়; এর মাধ্যমে আরও ক্ষুদ্র অংকের, আরও বেশি বেশি লেনদেন করা সম্ভব। বিকাশ মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে প্রাপ্ত লেনদেনের প্রায় ৮৬ শতাংশই ২০০ আমেরিকান ডলারের কম, যার পরিমাণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রাপ্ত লেনদেনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং নগদ অর্থের ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ।’
রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের ডিজিটাল চ্যানেলে সুবিধা উন্নত করতে এবং রেমিট্যান্স-লিঙ্কড, ভ্যালু-অ্যাডেড সার্ভিসের ব্যবহার জোরদার করতে ব্র্যাক ব্যাংক ইউএনসিডিএফ’র সঙ্গে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠান দুটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং ড্যাটা ম্যাপিং পরিচালনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বাজারের একটি বিশদ মার্কেট পর্যালোচনা করেছে এবং প্রায় আট লাখ আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স গ্রাহককে নিয়ে ৩৮ লাখ লেনদেনের রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছে।
২০২০ সালের মে মাসে ইউএনসিডিএফ’র সহায়তায় ব্র্যাক ব্যাংক বিদ্যমান ডিজিটাল রেমিট্যান্স ডেলিভারি চ্যানেল- যেমন সরাসরি ক্রেডিট এবং বিকাশ মোবাইল ওয়ালেট সেবাকে আরো উন্নত করেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সম্মানিত যে, আমাদের ডিজিটাল রেমিট্যান্সের সাফল্যের গল্পটি ইউএনসিডিএফ তুলে ধরেছে। এর থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ভালো কাজগুলো আড়ালে থাকে না। ডিজিটালাইজেশনের পরিধি ও বিস্তৃতি আরও বাড়াতে এই স্বীকৃতি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।’
তিনি বলেন, ‘মহামারির শুরুতে আউটলেট থেকে নগদ সংগ্রহ করা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেই সময় ক্যাশলেস রেমিট্যান্স চ্যানেলের প্রচার এবং স্বীকৃতি দেয়া ইউএনসিডিএফ’র একটি খুব সময়োপযোগী পদক্ষেপ ছিল। আমরা যে রকম সাড়া পেয়েছি তা আগামী দিনে ডিজিটাল রেমিট্যান্সের বিশাল সম্ভাবনার কথাই বলে।’
আরও পড়ুন:
সার্বিক লোন কার্যক্রম সহজ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে এবার সেন্ট্রালাইজড ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের (সিএডি) আধুনিকায়ন ও কেন্দ্রীয়করণ করেছে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী তারেক রিয়াজ খানের তত্ত্বাবধানে চলছে কেন্দ্রীয়করণ বিপ্লব। তারই অংশ এই ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট।
৭ আগস্ট পদ্মা ব্যাংকের মিরপুর ট্রেনিং ইনিস্টটিউটে ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের আধুনিকায়ন ও কেন্দ্রীয়করণের উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রিয়াজ খান।
তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাংকের অন্যতম বড় শক্তি হল সিএডি। তাদের শক্তিশালী করাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ব্যাংকের আর্নিং অ্যাসেটের মান উন্নয়নের পাশাপাশি কোনো লোন যাতে ব্যাড লোন হয়ে না যায় তা এখন আগে থেকেই তদারকি করা যাবে। সবকিছু যাচাই বাছাই করে দেয়া হবে প্রতিটি লোন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারিতে এখন অনেক কিছু সহজ ও দ্রুত সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আহসান চৌধুরী, এসইভিপি ও আরএমডি অ্যান্ড ল’ হেড ফিরোজ আলম, এসইভিপি ও প্রিন্সিপাল মিরপুর ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট সাবিরুল ইসলাম চৌধুরী, এসভিপি ও হেড অব ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্ট হাবিবুর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলা ডলারের দৌড় থামাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও কমছে না মুদ্রাটির তেজি ভাব, কাটছে না সংকট।
ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে কয়েক মাস ধরে। বেড়েই চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। কমছে টাকার মান। দুই মাসের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ; এক বছরে বেড়েছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ মাস ৮ দিনে (১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ১৫০ কোটি (দেড় বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবারও রাষ্টায়ত্ত জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণন সংস্থা বাংলাাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল আমদানি এবং বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প করপোরেশনের (বিসিআইসি) সার আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খুলতে ব্যাংকগুলোর কাছে ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
এ হিসাবে এই ১ মাস ৮ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৪ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনোই এত কম সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে এত বেশি ডলার বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি উল্লম্ফন ও আমদানি ব্যয় কমায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদা পূরণের জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার ছাড়া হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ এটি। যখন বাজারে ডলারের ঘাটতি দেখা দেবে তখন ডলার বিক্রি করা হবে। আবার যখন সরবরাহ বেশি হবে তখন কেনা হবে।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে, এখন বেশি বিক্রি করা হচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তাণ্ডবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব দেশের মতো আমাদেরও আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সে কারণেই বেশি ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। রিজার্ভের ওপরও চাপ পড়ছে।
‘তবে সুখের খবর হচ্ছে, আমদানি কমতে শুরু করেছে। রপ্তানির পাশাপাশি রেমিট্যান্সও বাড়ছে। শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’
এদিকে কিছুদিন ‘স্থির’ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।
এর আগে সবশেষ ২৫ জুলাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
অন্যদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে সোমবার ডলারের দর উঠেছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক সোমবার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা। আর সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১২ শতাংশ।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, ব্যাংকগুলোতে তার চেয়ে ৭ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০৫ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেক ব্যাংক ১১০ টাকা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক। সোমবার ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে লেখা চিঠিতে এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের কারসাজি রোধে খোলা বাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনার পর এবার ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার
ডলার বিক্রির কারণে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ চাপের মধ্যে রয়েছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসের ৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
১২ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির ফলে আরও কমে গেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচক।
আরও পড়ুন:প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক।
দেশি পাঁচ ব্যাংক হচ্ছে- ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ও সাউথইস্ট ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম সোমবার রাতে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘ট্রেজারি অপারেশনে অতিরিক্ত মুনাফা করায় পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডলার সংরক্ষণ করে দর বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়ায় জরুরিভিত্তিতে ওই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণ করতে সোমবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
এদিকে কিছুদিন ‘স্থির’ থাকার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে আরও ৩০ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৫ টাকা।
এর আগে সবশেষ ২৫ জুলাই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা।
অন্যদিকে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে সোমবার ডলারের দর উঠেছে ১১৫ টাকা ৬০ পয়সা।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক সোমবার ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা। আর সোনালী ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে টাকা-ডলার বিনিময় হার ঠিক হয়ে থাকে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী। সোমবার ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৯৫ টাকা। আর এটাই আজকের আন্তব্যাংক দর।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১২ শতাংশ।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, ব্যাংকগুলোতে তার চেয়ে ৭ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।
অনেক ব্যাংক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০৫ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেক ব্যাংক ১১০ টাকা দিয়ে ডলার সংগ্রহ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য