পাচারের অর্থ-সম্পদ দেশে ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেসব সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সে অনুযায়ী পাচারের সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। শুধু নির্ধারিত হারে কর দিয়ে নগদ টাকা দেশে আনা যাবে।
সংশোধনীতে নতুন করে একটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো, দেশের বাইরে কারও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে সেই সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে ওই সম্পদের মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানা অথবা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
নতুন বাজেটে এটিসহ আর কিছু কর প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে অর্থবিল-২০২২ পাস হয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এসব সংশোধনী আনেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত আনতে গত ৯ জুন ঘোষিত বাজেটে বিশেষ সুযোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, স্থাবর সম্পদ দেশে আনার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর দিয়ে ফেরত আনা যাবে। আর কেউ যদি নগদ টাকা দেশে আনতে চায় তাকে কর দিতে হবে ৭ শতাংশ।
এ নিয়ে দেশ জুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মূলত এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট প্রস্তাবে এই সংশোধন আনা হয়েছে।
সংশোধনীতে শুধু নগদ টাকা আনার সুযোগ রেখে বাকি দুটি অর্থাৎ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে।
কোম্পানির করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখার টাকার বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে তারা কম হারে করপোরেট কর পরিশোধের সুবিধা পাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা ছিল বছরে ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোম্পানিকে ছাড় দেয়া হয়েছে।
নতুন কোম্পানির বার্ষিক রিটার্ন জমার নিয়ম সহজ করা হয়েছে। যেসব কোম্পানির ব্যবসার বয়স এক কিংবা দুই বছর সেসব কোম্পানি শুধু টিআইএন সনদ দিলেই রিটার্ন গ্রহণ করা হবে। সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক দলিলপত্র জমা না দিলেও চলবে। তবে তৃতীয় বছর থেকে সব ডকুমেন্টসহ রিটার্ন জমা দিতে হবে।
শ্রমিকদের কল্যাণে সব প্রতিষ্ঠানে একটি তহবিল থাকার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, মালিক পক্ষ ওই তহবিলে যে পরিমাণ টাকা দেয় তা কোম্পানির খরচ হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে করে কোম্পানির ওপর করের চাপ কমে।
প্রস্তাবিত বাজেটে খরচের বিধান বাতিল করলেও সংশোধন করে তা ফের আগের অবস্থানে নেয়া হয়। তবে এই সুযোগ এক বছরের জন্য বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন:ব্যবসা শুরু করতে নিয়ম-নীতিমালা আরও সহজ করতে চায় ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
এ জন্য ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়নের সময় এক বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার মতিঝিলের চেম্বার ভবনে ব্যবসা সহজীকরণ শিরোনামে আলোচনা সভায় এ দাবি জানান মেট্রো চেম্বার নেতারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
এমসিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম সভায় সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামরান টি রহমান, সহ-সভাপতি হাবিবুল্লা এন করিম। এ সময় এমসিসিসিআইয় পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মেট্রো চেম্বার বলেছে, ব্যবসার খরচ কমানোর অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে কিভাবে কম সময়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। এ প্রক্রিয়ায় কিছু উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ব্যবসা শুরু করতে বিভিন্ন সরকারি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নিতে হয়।
এমসিসিআইয়ের নেতারা বলেন, প্রায় সবক্ষেত্রে এখন এক বছরের জন্য নতুন লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়নের অনুমতি দেয়া হয়, যা পেতে অনেক সময় লাগে। এতে সময় মতো ব্যবসা শুরু করতে পারেন না উদ্যোক্তারা।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স ইস্যু এবং নবায়ন প্রতিবছরের জন্য না করে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় বাড়ালে ব্যবসায় আরও উন্নতি হবে বলে মত দেন এমসিসিআই সভাপতি।
তৈরি পোশক রপ্তানিকারক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতের রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশ রাখছি। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং ইস্যুর সময় ৫ বছর বাড়ালে আমরা উপকৃত হবো।’
মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা সময় বাড়াতে রাজি। তবে অন্যান্য সরকারি দপ্তর ও সংস্থা এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তা হলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য উচ্চ হারে কর এবং এবং অগ্রিম আয় কর আদায় করা হয়। এটি কমানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’
ব্যবসায়ীরা যেনো নির্বিঘ্নে লাইসেন্স পান সে জন্য তার সংস্থা থেকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র তাপস।
আরও পড়ুন:পোশাক, জুতা, লাইফস্টাইল, ইলেকট্রনিক্সসহ নিত্যপণ্য সাদমার্ট, প্রিয়শপ, এয়ারব্রিঙ্গার, দ্য মল, জাদরু ডটকম, গিয়ারডিওসহ ২০টির বেশি অনলাইন সাইট থেকে কেনাকাটা করে বিকাশ পেমেন্টে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক পাচ্ছেন গ্রাহক।
নির্দিষ্ট অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও ফেসবুকভিত্তিক শপ থেকে কেনাকাটা করলেও এ সুবিধা মিলবে।
৩১ আগস্ট পর্যন্ত গ্রাহক এই সুবিধা পাবেন।
গ্রাহক প্রতি লেনদেনে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা এবং অফার চলাকালে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতে পারেন। বিকাশ অ্যাপ বা ইউএসএসডি কোড *২৪৭# ডায়াল করে বা পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অফারটি পেতে পারেন গ্রাহক।
অফারের আওতাভুক্ত সব মার্চেন্টের তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য https://www.bkash.com/online-shops - এই লিংকে পাওয়া যাবে।
ফেসবুকভিত্তিক শপ থেকে পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, লাইফস্টাইল, খাদ্যসহ নানা পণ্য কিনে বিকাশ পেমেন্টে মিলছে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক।
২৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্দিষ্ট ফেসবুক শপ থেকে বিকাশ পেমেন্টে কেনাকাটা করে এই ক্যাশব্যাক পাবেন গ্রাহক। একজন গ্রাহক প্রতি লেনদেনে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা এবং অফার চলাকালে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক পেতে পারেন।
অফারের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এই লিংকে - https://www.bkash.com/facebook-shops।
বিকাশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও অফারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য পাবেন গ্রাহকরা।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর এবার দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহনে ব্যবহৃত লাইটার জাহাজের ভাড়া ১৫ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) সভায় ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) অভ্যন্তরীণ পরিবহনে ব্যবহৃত লাইটার (ছোট আকারের) জাহাজগুলো পরিচালনা করে থাকে। এর আগে গেল নভেম্বরে লাইটার জাহাজের ভাড়া ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর লাইটার জাহাজের ভাড়া সমন্বয় না করে উপায় ছিল না। তাই সভায় ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত গত শনিবার থেকে কার্যকর ধরে নেয়া হচ্ছে।’
তিনি জানান, নভেম্বরের পর লাইটার জাহাজের যা ভাড়া ছিল, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, বরিশাল ও চাঁদপুরের জন্য তার ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরের অন্যান্য গন্তেব্যের জন্য ১৫ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বহির্নোঙ্গর থেকে বন্দরের ভেতরের ভাড়া আগের মতই থাকছে।
সাধারণত বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির পর বড় জাহাজ বা মাদার ভেসেল থেকে বহির্নোঙ্গরে তা লাইটার জাহাজে লোড করা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে এই লাইটার জাহাজেই পণ্য পৌঁছে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই গত তিন মাসে অনাদায়ী এই ঋণ বাড়ল আরও ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সব মিলিয়ে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।
মার্চে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। তিন মাসে তা বেড়েছে ১১ হাজর ৮১৬ কোটি টাকা।
করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ ও ২০২১ সাল জুড়ে কয়েক দফায় কোনো ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা সামান্য পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল। এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধার বেশিরভাগই শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এর পরপরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
কেবল টাকার অঙ্কে নয়, শতকরা হিসাবেও খেলাপি বেড়েছে। জুন শেষে বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। মার্চ শেষে খেলাপি ছিল ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
জুনে মোট ঋণ দেয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, যা মার্চে ছিল ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।
২০২০ সাল থেকে দফায় দফায় খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা বাড়ানো হয়। এখন অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো গেলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করছেন না। ব্যাংকগুলো নানামুখী চেষ্টা করেও তাদের থেকে টাকা আদায় করতে পারছে না।
২০২১ সালে ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ হলেও তা নিয়মিত দেখানো হয়। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কেউ এ হারে টাকা দিলে আগের তারিখ দেখিয়ে নিয়মিত থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ১৮ জুলাই ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে ব্যবসায়ীদের বড় ছাড় দিয়ে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোসহ নগদ এককালীন জমা দেয়ার হার কমিয়ে ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
এর ১৬ দিনের মধ্যে সংশোধনী দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া নতুন সার্কুলারে ঋণ খেলাপিদের আরও ছাড় দেয়া হয়। পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়িও করা হয়।
খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে
রাষ্ট্রীয় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ও বেসিক- এই ছয় ব্যাংকের জুন শেষে মোট ঋণ ২ লাখ ৫২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৫ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মার্চ শেষে এই ছয় ব্যাংকের মোট ঋণ ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ০১ শতাংশ।
তিন মাসে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা।
টাকার অঙ্কে খেলাপি ঋণ বেশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে
বেসরকারি ব্যাংকগুলো জুন পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ১০ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৬২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৬ দশমিক ০১ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের ঋণ ছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত তিন ব্যাংক
কৃষি, প্রবাসীকল্যাণ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন- বিশেষায়িত এ তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এটা তাদের বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তারা বিতরণ করেছে মোট ৩৫ হাজার ৪৭২৮ কোটি টাকার ঋণ।
মার্চে এ তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০১ শতাংশ। তারা বিতরণ করে মোট ৩৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার ঋণ।
এই তিন ব্যাংকে তিন মাসে খেলাপি ঋণ টাকা অংকে বাড়লেও শতকরা হিসাবে কমেছে।
বিদেশি ৯ ব্যাংক
বিদেশি মালিকানার ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ৬৭ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
মার্চে এই ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ৬৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে দেশের শীর্ষ ধান ও চাল উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে জেলার পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বাড়তি দামেও বাজারে গুটি স্বর্ণ চালের দেখা পাচ্ছে না ক্রেতা।
বাজারে ধানের সংকটের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে ধানের সরবরাহ কম। ধান পাওয়া যা যাচ্ছে তাও ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি বলে মিলমালিকরা জানিয়েছেন।
দিনাজপুরে চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত শহরের বাহাদুর বাজার এনএ মার্কেট। এই মার্কেটের কয়েকজন পাইকারি দোকানদার জানান, গত শুক্রবার এই বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট ৩ হাজার ২০০, আঠাশ ২ হাজার ৬৫০, উনত্রিশ ২ হাজার ৪৫০, সুমন স্বর্ণ ২ হাজার ৩৫০, গুটি স্বর্ণ ১ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পাঁচ দিনের ব্যবধানে বুধবার এই বাজারে ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, আঠাশ ২ হাজার ৯০০, উনত্রিশ ২ হাজার ৬৫০, সুমন স্বর্ণ ২ হাজার ৬২০, গুটি স্বর্ণ ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া গুটি স্বর্ণ চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন।
দক্ষিণ বালুয়াডাঙ্গার বাসিন্দা জরিনা বেগম বলেন, ‘চাল কিনতে বাজারে এসে জানতে পারলাম, ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। আমি তো টাকা হিসাব করে নিয়ে আসছি। এখন চাল কীভাবে কিনব। সমস্যা হবে শুধু আমার মতো গরিবের। এভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মরণ ছাড়া উপায় নাই।’
এনজিও কর্মী নাজমা বানু বলেন, ‘আমি গত জুনে ৫০ কেজির এক বস্তা চাল কিনেছিলাম ২৭০০ টাকায়। আজ চাল কিনতে আসছি। দোকানদাররা সেই চাল বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেশি চাচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে চলা খুব কঠিন হয়ে পড়তেছে। আমি একটি এনজিওতে চাকরি করি। চালের দাম বাড়লে তো আর আমার বেতন বাড়ে না। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।’
শহরের পাগলার মোড় এলাকার দিনমজুর রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি দিনমজুর হিসেবে কাজ করি। দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাই, সেটা দিয়ে চাল ও শাকসবজি কিনতে শেষ হয়ে যায়। ছয়জনের পরিবারে দিনে তিন বেলা খেতে তিন কেজি চাল প্রয়োজন। চাল কিনতে প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি টাকা শাকসবজি কিনে শেষ হয়। মাসে এক দিনও ভালো তরকারি খেতে পারি না। এভাবে চালসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়লে ভবিষ্যতে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।’
এনএ মার্কেটের রণজিৎ চাল ঘরের স্বত্বাধিকারী রণজিৎ সাহা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মিলগেটে চালের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে মিল থেকে জানানো হচ্ছে, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান নেই। যেসব ধান পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের উৎপাদন কম হচ্ছে। উৎপাদন এবং মিল থেকে বাজারে চাল সরবরাহে পরিবহন খরচ বেড়েছে।’
পাইকারি চাল বিক্রেতা কৃষ্ণ চন্দ্র শীল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ কারণে অনেক ক্রেতার সঙ্গে ঝগড়াও লেগে যাচ্ছে। বাজারে দাম বাড়ার কারণে ক্রেতার অভাব দেখা গিয়েছে। ক্রেতা চালের দাম শুনেই চলে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহসভাপতি ও পাটোয়ারী বিজনেস হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বাজার পরিস্থিতি জানান নিউজবাংলাকে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বিদ্যুতের লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান নেই। ধান বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। বিদ্যুতের কারণে ধান থেকে চালে রূপান্তর কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাল পরিবহনের জন্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এসব কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে জোনভিত্তিক সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখন থেকে শিল্পাঞ্চলগুলোর একেক এলাকায় একেক দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ভিন্ন ভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক ছুটি পুনর্বিন্যাস করা হলো। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ শ্রম আইনের ক্ষমতাবলে এই ছুটি কার্যকর হবে।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সারা দেশকে সাতটি জোনে ভাগ করে সপ্তাহের সাত দিনই কোনো না কোনো জোনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে দিনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যাবে। একইসঙ্গে শিল্প-কারখানায় নির্বিঘ্নে উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১১৪(২) ধারার ক্ষমতাবলে সারা দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রজ্ঞাপনের ২ নম্বর কলামে বর্ণিত বার বা সময়ে জনস্বার্থে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ধার্য করা হলো। পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে সারা দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন, বৈদ্যুতিক এলাকা এবং এলাকার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কারখানা বন্ধের দিনের সার্বিক তথ্য জানতে ক্লিক করুন www.dife.gov.bd ওয়েবসাইটে।
জোনভিত্তিক এই ছুটির ব্যবস্থা নিয়ে এর আগে ৭ আগস্ট বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৈঠকে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিটিএমএ ও বিকেএমইএর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সপ্তাহের একেক দিন একেক এলাকার শিল্পকারখানা বন্ধ রাখার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। জোনভিত্তিক কারখানা বন্ধ রেখে দৈনিক ৪৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চাইছে সরকার। সপ্তাহের একেক দিন একেক এলাকার শিল্প-কলকারখানা বন্ধে সরকারের প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন।’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে শিল্পাঞ্চলে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। একদিনে সব এলাকায় ছুটি না দিয়ে রেশনিংয়ের মাধ্যমে একেক দিন একেক এলাকায় ছুটি চালু করলে বিদ্যুতের কিছুটা সাশ্রয় হবে। লোডশেডিংও কিছুটা কমে আসবে। শিল্প-মালিকরা এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন।’
বৈঠক শেষে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে দিনে ৪৯০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। আমরা বলেছি যে কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশেই যেন এরকম ছুটি কার্যকর করা হয়।’
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম আহসান বলেন, ‘এক সময় যখন নিয়মিত লোডশেডিং হতো তখন এরকম ছুটির ব্যবস্থা চালু ছিল। সরকার চাচ্ছে এখন আবার সে ধরনের সূচি চালু করা হোক। তবে ডায়িং ও স্পিনিং ফ্যাক্টরিকে কিছুটা ছাড় দেয়া যায় কিনা সে বিষয়টি বিবেচনার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।’
আরও পড়ুন:জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রচারে মন্ত্রিসভা নির্দেশ দিলেও সরকার এখন দাম কমানোর উপায় খুঁজছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসি ও পেট্রোবাংলাকে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রল ও অকটেনের দাম যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৬ টাকা করে বাড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পিছু হটার এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রস্তাবনা তৈরি করতে এরই মধ্যে বিপিসি ও পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জ্বালানি বিভাগের দেয়া এই নির্দেশনায় আমদানি খাতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কতটা কমিয়ে কীভাবে তা জনগণের সহ্যসীমায় রাখা যায়, তার বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাবনা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর তিনি তা অনুমোদন দিলে এনবিআরের কাছে পাঠানো হবে।’
বিপুল পরিমাণ কর
তেলের মূল্য বৃদ্ধির দায় নিজেরা না নিয়ে তা জাতীয় রাজস্ব বিভাগের (এনবিআর) ওপর চাপাচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি বাবদ উচ্চহারের ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ সরকার বড় আকারের রাজস্ব আদায় করে। জ্বালানি আমদানির ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর মাধ্যমে বিপিসির লোকসান কমাতে ২০২১ সালেই জ্বালানি বিভাগ এনবিআরকে চিঠি লেখে।
এতে বলা হয়, ‘এনবিআর আমদানি ট্যাক্স কমালে একদিকে যেমন বিপিসির লোকসান ঠেকানো যাবে, তেমনি লোকসান এড়াতে মূল্য বাড়ানোর ঝুঁকিও নিতে হবে না। ফলে জনগণের ওপর বাড়তি দরের চাপ সামলানো যাবে ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ জানিয়েছে, সব রকমের কর প্রত্যাহার করলে, প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য কম করে হলেও ৩৬ টাকা কমানো সম্ভব।
ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, ডিজেল ও অকটেনের আমদানির ওপর কাস্টমস শুল্ক ও অন্যান্য কর বাবদ রাজস্ব কর্তৃপক্ষটি প্রায় ৩৪ শতাংশ কর আদায় করে।
এর মধ্যে কাস্টমস শুল্ক হলো ১০ শতাংশ, ভ্যাট বা মূসক ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ২ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ। এখন ১১৪ টাকার প্রতি লিটার ডিজেল থেকে ৩৬ টাকা কর আদায় করছে সরকার।
জ্বালানি বিভাগের সেই কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি বিভাগের এই চিঠির কোনো উত্তরই দেয়নি জাতীয় রাজস্ব বিভাগ। উল্টো বিপিসির হিসাবে জমা থাকা উদ্বৃত্ত টাকা নিয়ে নেয় সরকার।
‘এই টাকা না নিলে অন্তত ২১ মাস লোকসান দিয়ে আগের দামেই তেল বিক্রি করতে পারত বিপিসি’-বলছিলেন তিনি।
বিপিসির হিসাব অনুযায়ী ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে সংস্থাটি শুল্ক, কর ও লভ্যাংশ বাবদ সরকারি কোষাগারে ৫৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা জমা দিয়েছে।
২০২০ এবং ২০২১ অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে ৯ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বিপিসি।
অবশ্য বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে সাত বছর মুনাফা করলেও তার আগের ১৪ বছর টানা লোকসান করেছে বিপিসি। মুনাফার টাকায় সেই সব লোকসান সমন্বয়ও করা যায়নি।
তেলের মূল্যবৃদ্ধি স্থায়ী কিছু নয়: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি কোনো স্থায়ী কিছু না। এটা একটি সাময়িক পদক্ষেপ। বিপিসিকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এটা করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা সমন্বয় করব। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। সবাই মাথা ঠান্ডা রাখলে, ধৈর্য ধরলে এই সংকট আমরা সামলাতে পারব।’
কঠিন সময়ে তেলের বাড়তি দর মানুষকে ফেলেছে ব্যাপক চাপে
করোনা-পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতির মধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা-পরবর্তী বিশ্ব পড়েছে কঠিন পরিস্থিতিতে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, সার সংগ্রহ করতে দেশে দেশে রিজার্ভ পড়েছে চাপে। এর বাইরে নয় বাংলাদেশও।
বাড়তি আমদানি ব্যয় মেটাতে ছয় মাসেই রিজার্ভ কমেছে সাত বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের দারুণ ঊর্ধ্বগতিতেও পরিস্থিতি বাগে আনা যাচ্ছে না। ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হতে হতে ঠেকেছে ৯৫ টাকায়। খোলাবাজারে দর এর চেয়ে ২৫ টাকা বেশি।
খোলাবাজারে ডলারের দর ১২০ টাকা উঠে যাওয়ার পর অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে দরপতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে জ্বালানির দর বৃদ্ধিজনিত কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পর নতুন করে বাড়ছে পণ্যমূল্য।
আর্থিক চাপে মানুষ ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে। নির্দিষ্ট আয়ের মানুষরা শখ আহ্লাদ বাদ দিয়ে, সন্তানের পেছনে ব্যয় কমিয়ে, এমনকি খাবারের ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তেলের বাড়তি দর সরকারকে রাজনৈতিকভাবেও চাপে ফেলেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমাগত আক্রমণের মুখে সরকারের দৃশ্যত কোনো শক্তিশালী জবাব নেই। এই পরিস্থিতি আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে চাপে ফেলতে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সতর্ক করে দিয়েছেন, তেলের দাম বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
তেলের দাম বাড়ানোর দুই দিন পরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে কমলে দেশেও কমবে তেলের দাম।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে এবং বাংলাদেশ কম দামে কেনা শুরু করেছে।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ অবশ্য জানিয়েছেন, তেলের দাম কমাতে দুই মাস সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য