২০১২ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এর পরই শুরু হয় স্বপ্নের এই সেতু নিমার্ণের কর্মযজ্ঞ। সেতু নির্মাণে বিদেশি কেনাকাটায় বিপুল অঙ্কের যে বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন, তা জোগানের আশ্বাস দেন সে সময়কার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
জরুরি প্রয়োজনে আতিউর রহমান বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার জুমে যুক্ত হয়ে নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে পদ্মা সেতুতে বিদেশি মুদ্রা সরবরাহের গল্প শোনান তিনি। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী বিপ্লব আনবে, একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে সে বিষয়েও বিস্তারিত বলেছেন।
আতিউর বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্যতার বড় জায়গাটায় না গেলাম, সর্বনিম্ন সমীক্ষাটিই যদি গ্রহণ করি, তাও তো জিডিপি বাড়ার হার ন্যূনতম এক শতাংশ হবে। এটাই হলো আমাদের পদ্মা সেতু, যা বাংলাদেশের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি, অহংকার ও সাহসের প্রতীক, যার স্বপ্ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে বিরাট বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতা এখনও আছে। পদ্মা সেতু চালুর ফলে আগামীর অর্থনীতিতে তার চেয়েও বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছে।’
নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে পেয়েছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আতিউর রহমান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহস কখনোই কম ছিল না। সেই সময়ও তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্বব্যাংক যে নোংরামি করেছিল, তা আমাদের ক্ষুব্ধ করে। সেটা আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমরা বাজেট নিয়ে মিটিং করেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে।
‘মিটিং শেষ করার পর আমি ও প্রধানমন্ত্রী বসেছিলাম। সেখানে আমরা জানতে পেরেছিলাম, কী ধরনের নোংরামি বিশ্বব্যাংক শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন অভিযোগ আনা হয়েছিল, যেটা আমাদের জন্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী সাহস জুগিয়েছিলেন এটি বলে যে, আমরা কি পারব না এই পরিমাণ অর্থ জোগাড় করতে?’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন সরকার গঠন করেন, তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে। পরের বছরই এটা আমরা ১০ বিলিয়নে নিয়ে গেলাম। তার পরের বছর থেকে এটা বাড়ছে। যখন আমরা পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে আলাপ করছি, তখন এটা ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন হয়ে গেছে। সেই সময়ই প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় বাড়ছে।
‘প্রধানমন্ত্রীর সাহসের বড় জায়গা হলো যে, তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গ্রোথ (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) দেখতে পেয়েছিলেন। বাংলাদেশে যে এত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে, এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে গতিশীল দেশ হবে এবং সেখানে যে এমন এক সময় আসবে, যখন বাংলাদেশের এক্সপোর্ট দ্রুত এগিয়ে যাবে, এগুলো তিনি অনুধাবন করেছিলেন বলে সাহস করেছিলেন।
‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আমরাও বলেছিলাম অবশ্যই সম্ভব। এক দিনেই তো এই পরিমাণ ডলার লাগবে না। ১.৪ বিলিয়ন ডলারের কথা বলা হচ্ছে; সেটা তো একবারেই লাগছে না। কোনো বছরে হয়তো ২০০ মিলিয়ন ডলার, কোনো বছরে হয়তো ৫০০ মিলিয়ন ডলার লাগবে। এভাবে ভেঙে ভেঙে আমরা ফরেন এক্সচেঞ্জ দিতে পারব।
‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কথা দিয়েছিলাম, একটা কমফোর্ট লেটার দিতে হয় যে কনসালট্যান্ট কাজ করবে তাকে। অগ্রণী ব্যাংক কমফোর্ট লেটার দেয়ার কাজটা করেছে। আমার মনে আছে, ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের কর্মকর্তা আর অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তারা মিলে আমরা একটা সভা করেছিলাম। সে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, অগ্রণী ব্যাংক তার তহবিল থেকে ফরেন এক্সচেঞ্জ দেবে। বাজারে কিনতে পাওয়া গেলে কিনবে এবং না পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমর্থন দেয়া হবে।
‘এর বাইরেও আলোচনা হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিকে কমফোর্ট লেটার অগ্রণী ব্যাংক দেবে। খুব দ্রুত সময়ে যাতে অনুমোদন দিতে পারে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তার ব্যবস্থা করেছিলাম। যখনই ফরেন এক্সচেঞ্জ কোথাও পাঠাতে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন লাগে। আমরা বলেছি, যতবার লাগবে ততবার দেবার প্রয়োজন নেই। একবারে আমরা দিয়ে দেব। পদ্মা সেতুর যত খরচ লাগে, বছরের শুরুতে একবারে আমরা সেই অনুমোদন দিয়ে দেব। এ রকম একটা সুবিধা আমরা করেছিলাম।’
সে সময়কার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। চিঠিতে রিকুয়েস্ট আসবে না বাংলাদেশ ব্যাংকে। সরাসরি আমাদের সংশ্লিষ্ট জেনারেল ম্যানেজারের কাছে আসবে অগ্রণী ব্যাংক বা অন্য যেকোনো ব্যাংক থেকে এবং সরাসরি সেখানে অনুমোদন দিয়ে দেয়া হবে।
‘এ রকম অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে যেটাকে বলে রেগুলেটরি কমফোর্ট, সেটা আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দিতে সমর্থ হয়েছিলাম। আমাদের এই ব্যবস্থাটা খুব কাজে লেগেছিল। এ রকম সংকটকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে উন্নয়নমুখী পদক্ষেপ নিতে পেরেছিল, তার প্রশংসা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এর জন্য তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘কোভিডকালে উন্নয়নমুখী পদক্ষেপে বাংলাদেশ ব্যাংক ভূমিকা রাখতে পেরেছিল। এটা সম্ভব হয়েছিল আমাদের প্রবাসীদের কারণে। প্রবাসীরা এমনই অনুপ্রাণিত ছিল পদ্মা সেতুর ব্যাপারে। সেই সময় আমরা শত শত ইমেইল ও এসএমএস পেয়েছি। তারা জানতে চেয়েছিলেন, কোথায় কীভাবে ডলার পাঠাবেন। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম, যখন আমাদের দরকার হবে, তখন আমরা চাইব।’
পদ্মা সেতু কোথায় নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে এমন প্রশ্নের জবাবে আতিউর বলেন, “পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়। পদ্মা সেতু আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক, সক্ষমতার স্মারক। পদ্মা সেতুর কারণে আমাদের জাতীয় মননে ‘আমরাও পারি’ সংস্কৃতিটি বেশ জোরদার হয়েছে।
‘প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার, যিনি এই পদ্মা সেতুর কারিগরি কমিটির প্রধান ছিলেন, তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে এবং একটি অনুষ্ঠানে বলছিলেন, বিশ্বব্যাংক যে অন্যায় অভিযোগ এনেছে, তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। এই পদ্মা সেতু আমরা করতে পারি এবং করব। এর ফলে আমাদের যে সক্ষমতা তৈরি হবে, তাতে আমরা এ রকম আরও ১০টি সেতু ভবিষ্যতে তৈরি করতে পারব। আমাদের প্রকৌশলীরা, কন্ট্রাক্টররা, ব্যবস্থাপকরা এই পদ্মা সেতুতে এমনভাবে হাত পাকাবে যে ভবিষ্যতে আমরা এর চেয়ে বড় বড় সেতু তৈরি করব।’
আতিউর রহমান বলেন, ‘এটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিক থেকে চ্যালেঞ্জিং সেতু। পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরস্রোতা নদী হলো পদ্মা। ১২৮ মিটার গভীর পিলারের ওপরে সেতু বসাতে হয়েছে। এটি কঠিন বাস্তবতার মধ্যে বসাতে হয়েছে। আমাদের জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে কারিগরি টিম এটাকে গাইড করেছে। সেনাবাহিনীর প্রকৌশলী, আব্দুল মোনেম গ্রুপ এবং বিদেশিরা একসঙ্গে মিলে এখানে আমরা কাজ করেছি। এর ফলে এ রকম মেগা প্রকল্প আমরা করতে পারব। এই সক্ষমতার বীজ প্রধানমন্ত্রী আমাদের মধ্যে বুনে দিলেন। এটা প্রথম অর্জন।
‘দ্বিতীয়ত, পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ বাংলার সঙ্গে সারা বাংলাদেশের একটা সংযোগ বেড়ে গেল। কানেকটিভিটি আরও বাড়বে, যখন রেল চালু হবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, সেতু চালু হওয়ার পরে আমাদের জাতীয় আয়ে বছরে আরও ১.২৬ শতাংশ যুক্ত হবে। ওই ২১টি জেলার যে জিডিপি, সেখানে সাড়ে ৩ শতাংশ হারে বাড়তি জিডিপি যুক্ত হবে। যতই দিন যাবে ততই তা বাড়তে থাকবে।
‘বঙ্গবন্ধু সেতু যেটি রয়েছে, সেটির আলোকে বলছি। সেখানে প্রায় ২ শতাংশ নতুন জিডিপি যুক্ত হয়েছে বছরে। আমাদের এখানেও যুক্ত হবে। আমরা আরেকটি হিসাব করে দেখেছি, পদ্মা সেতুর কারণে অর্থনীতির যে বিস্ফোরণ ঘটবে, দক্ষিণ বাংলায় তার প্রভাবে কলকারখানা, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ, রিসোর্টে হবে। ট্যুরিজমের সুযোগ বাড়বে। বরিশাল, খুলনায় জাহাজ শিল্প গড়ে উঠবে। পায়রা ও মোংলা বন্দরের ক্যাপাসিটি অনেক বাড়বে।
‘রেলে ও সড়কে কলকাতা যেতে সময় অর্ধেক হয়ে যাবে। এর কারণে এই অঞ্চলে ভুটান, নেপাল, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম–এসব জায়গাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে আমরা ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে ও রেলের সঙ্গে যুক্ত হব। দক্ষিণ বাংলায় অনেক রাস্তাঘাট রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার হয় না। এই কানেকটিভিটির কারণে এগুলোর ব্যবহার বেড়ে যাবে এবং সক্ষমতা বেড়ে যাবে।’
পদ্মা সেতু দারিদ্র্য কমাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আতিউর বলেন, ‘প্রতি বছর পদ্মা সেতুর কারণেই ১.০২ শতাংশ দারিদ্র্য কমবে। এই ২১ জেলার যে দারিদ্র্য, তা আমাদের দেশের গড় দারিদ্র্যের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। অথচ পদ্মা সেতু হওয়ার পরই আরও ১ শতাংশের বেশি করে দারিদ্র্যের হার কমতে থাকবে।
‘যে কর্মসংস্থান হবে, তাতে টোটাল লেবার ফোর্সের ১.২ শতাংশ করে কর্মীর বাড়তি কর্মসংস্থান হবে। সেটা হিসাব করলে দেখা যায়, ২ লাখেরও বেশি মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থান হবে। এটা বাড়তেই থাকবে। ৫ বছরের মধ্যে এটা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।’
কৃষকরা কী সুফল পাবেন, তা নিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘কৃষকরা যারা পণ্য উৎপাদন করেন, তারা কিন্তু ঢাকার বাজার ধরতে পারছিলেন না। তারা ঘাটে এসে বসে থাকতেন; ট্রাক বসে থাকত, মাল পচে যেত, সেগুলো এখন দ্রুত চলে আসবে।
‘এ ছাড়া ছোট ব্যবসায়ী, যাদের কাঁচামাল নরসিংদী থেকে বা ঢাকা থেকে নিতে কষ্ট হত, এগুলো এখন সহজেই চলে যাবে। সুতরাং পণ্য ও মানুষের এই চলাচলের ফলে অর্থনীতিতে চাঙা ভাব চলে আসবে। আরেকটি ঘটনা ঘটবে, জামিলুর রেজা স্যারই বলেছিলেন। পদ্মা সেতু এমন সম্ভাবনা তৈরি করবে যে, সেতুর ওই পারে আমরা সাংহাইয়ের মতো নতুন শহর তৈরি করতে পারব। আমরা সেই দিকেই যাচ্ছি। সেখানে নতুন বিমানবন্দর হতে পারে। সেখানে ইতোমধ্যে বেশ কিছু অবকাঠামো শুরু হয়েছে। একটি তাঁতপল্লি হচ্ছে জাজিরাতে।’
ফরিদপুরের সম্ভাবনা নিয়ে আতিউর রহমান বলেন, ‘ফরিদপুর একটা বড় সেন্টার হিসেবে গড়ে উঠবে। ভাঙ্গা একটি নতুন স্মার্ট শহর হয়ে যাবে। শরীয়তপুর, মাদারীপুর এসব জায়গায় নতুন নতুন শহর গড়ে উঠবে। সুতরাং আমার মনে হয় যে, পদ্মা সেতু আমাদের অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ইরানের ইস্পাহানে বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের হামলার খবরে শুক্রবার পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে উল্লেখ করে রয়টার্স জানিয়েছে, এশিয়ার শেয়ার ও বন্ডে ধস নামে, যেখানে উল্লম্ফন দেখা যায় স্বর্ণ ও অশোধিত জ্বালানি তেলের দামে।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি জানার পর পুঁজিবাজার ও তেলের বাজারে শুরুতে যে প্রভাব পড়ে, সেটি কমে এসেছে। হামলার পরিসর ছোট এবং কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি বলে ইরানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন বাস্তবতা সৃষ্টি হয়।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিভিত্তিক এমএসসিআইয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সূচকের পতন হয় দুই দশমিক ছয় শতাংশ, যেটি পরবর্তী সময়ে কমে দাঁড়ায় দুই শতাংশে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কায় ব্রেন্টের অশোধিত জ্বালানি তেলের দাম শুরুতে চার দশমিক দুই শতাংশ বাড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কমে বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই দশমিক চার শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধি কমার পর ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্টের অশোধিত তেলের দাম দাঁড়ায় ৮৯ দশমিক ২২ ডলারে।
সিরিয়ার দামেস্কে গত ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় নগর ইস্পাহানে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানায়, ইস্পাহানের একটি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানা যায়নি।
‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের খবরে বলা হয়, ‘ইস্পাহান প্রদেশের পরমাণু ক্ষেত্রগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ইস্পাহানের কাছে বিস্ফোরণের পর কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। সেখানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়নি।
ইস্পাহান শহরের কাছে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে রেকর্ড ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে অষ্টমবারের মতো স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী- ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৬৫৬ টাকা বেড়ে ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৩৮৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ দশ দিন আগে ৮ এপ্রিল বাজুস ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করে। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের স্বর্ণের বাজারে উচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
অবশ্য স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সেসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১১৯ টাকা।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার ক্রমিক নম্বর নিয়ে বুথ-৪ এ প্রবেশ করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট সংগ্রহ করলেন ভোটার। গোপন কক্ষে গিয়ে নিজের ভোট প্রদানও করলেন। ভোট দেয়া শেষে কক্ষের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই ভোটারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ‘ভোটার কীভাবে হলাম নিজেও বলতে পারি না।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচনে ভোট দিয়ে এক তরুণ ভোটার নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির ভোটার কীভাবে হওয়া যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও জানি না কীভাবে ভোটার হলাম। আমাকে ফোনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে আমি চেম্বারের একজন ভোটার, তাই ভোট দিতে এসেছি।’
তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, তার নিজস্ব কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কি না? জবাবে তিনি জানান, তিনি একজন বাইক (মোটরসাইকেল) মেকানিক। তার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এখনও নামকরণও করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা না হলে ট্রেড লাইসেন্স কীভাবে হলো বা আদৌ ট্রেড লাইসেন্স হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি আর কোনো জবাব না দিয়ে সরে পড়েন।
ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন লিমন নামের আরেক ভোটার। তিনি জানান, সদর উপজেলার নারগুণ থেকে তিনি এসেছেন ভোট দিতে। তার ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না এবং কী প্রক্রিয়ায় ভোটার হলেন- জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি৷ এ সময় তাকে ক্যামরার সামনে কথা বলতে না করেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলের এক প্রার্থী।
ভোট দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দুলালি ইসলাম। তিনি জানান, তার মামা একটি হিমাগারের ম্যানেজার। তিনিই তাকে ভোটার হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ‘দুলালি ফার্মেসী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।
চেম্বারের ভোটার হতে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন মনে নেই।’
এদিকে ভোটের একদিন আগে সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে ৭ কারণ উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুটি প্যানেলের মধ্যে আলমগীর-মুরাদ ও সুদাম প্যানেল ভোট বর্জন করে। এ সময় প্রার্থীরা নির্বাচনের অনিয়ম, ভোটার তালিকা নিয়ে অসঙ্গতিসহ নানা কারণ উল্লেখ করেন।
এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচনের তারিখ পেছানোর জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল প্যানেলটি। সে সময় ভোটের মাঠে থাকার কথা জানালেও অবশেষে ভোটের আগের রাতে তারা ভোট বর্জন করেন। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই অংশ নিয়েছে দুলাল-বাবলু ও আরমান প্যানেল।
চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচন নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিত্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
জাতীয় তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ঠাকুরগাঁও সদস্য সচিব মো. মাহবুব আলম রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বারের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, আমরা দেখছি এখানে সাধারণ শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোটার হয়েছেন। অনেকেই আছেন যারা কোনো ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত না।
‘তাহলে অন্য যে প্যানেলটি অভিযোগ করেছে- নিরপেক্ষ ভোটার তালিকা হয়নি। সেটার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। এই নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন।’
ভোটারদের প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনি বোর্ডের আহ্বায়ক ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রার্থী অভিযোগ করছেন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট জানানোর সুযোগ ছিল। নির্ধারিত সময়র মধ্যে করা আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর অভিযোগ করায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির কমিটি ছিল না, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে চেম্বারের প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন:ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য