রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা, ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিসহ নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনীতিতে একটি সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সুখবরটি হচ্ছে, ৪১ মাস বা প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৩ শতাংশে উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছে। টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে উঠেছিল।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে উঠে। এপ্রিল মাসে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে উঠেছে।
সবশেষ মে মাসে তা আরও বেড়ে ১৩ শতাংশ ছুঁইছুঁই করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে মে মাসে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে।
এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের মে মাসের চেয়ে এই বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।
আগের মাস এপ্রিলে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর থেকেই কমতে থাকে এই সূচক। ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশের নিচে অবস্থান করেছে এতদিন।
তবে এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে এই সূচক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছরের জুলাই মাসে ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মে মাস শেষে উদ্যোক্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যের চেয়ে এখনও কম ঋণ নিয়েছেন বা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে এখন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা হোঁচট খেয়েছিল। মার্চে থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ শিল্প খাতের অন্য সব সরঞ্জাম আমদানি বাড়ছে। আর মাত্র এক দিন পরই পদ্মা সেতু চালু হবে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফূলী টানেলের কাজও শেষের দিকে, এই বছরেই চালু হবে। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব প্রকল্প ঘিরে দেশে বিনিয়োগের একটি আবহ তৈরি হয়েছে।’
আগামী দিনগুলোতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন এই অর্থনীতিবিদ।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছে। এর অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে তা আরও কমতে থাকে।
প্রতি মাসেই কমতে কমতে গত বছরের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
অতীত ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে ব্যাংকের ঋণ বাড়তেই থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বছরওয়ারি হিসেবে এর পর তা সব সময়ই ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি এক পর্যায়ে তা ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা দুই অঙ্কের নিচে (ডাবল ডিজিট), ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে। এরপর দুই বছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) অবস্থান করে।
গত বছরের নভেম্বরে তা দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে, ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠে।
মহামারির ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরও বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে।
কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরও কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়।
২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরও কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে।
তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। তারপর থেকে ঋণপ্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন:
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আপাতত আর কোনো তহবিল গঠন করা হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি একথা জানান। বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে দেয়া অর্থ ‘সমন্বয়’ করে এর আকার ধীরে ধীরে কমানো হবে। ইতোমধ্যে ইডিএফের ১০০ কোটি ডলার সমন্বয় হয়েছে।
রপ্তানি খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছিল এবং এর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে অর্থ নেয়া হয়েছিল। এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে এই তহবিল থেকে বিতরণ করা অর্থ সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ তহবিলের অর্থ ফেরত আসার পর নতুন করে আর সেই অর্থ বিতরণ করা হবে না।
রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ নিতে চুক্তি করেছে ৪৯টি ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যাংকগুলো মাত্র দেড় শতাংশ সুদে এ ঋণ পাবে। গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে কাঁচামাল কেনা বা আমদানির বিপরীতে রপ্তানিকারকদের দেশি মুদ্রায় ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এই চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মাকসুদা বেগম এবং স্ব-স্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা সই করেন।
এ সময় গভর্নর বলেন, নতুনভাবে গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার প্রাক-অর্থায়ন তহবিলটিও দেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল থেকে অর্থায়ন কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে কাঁচামাল কেনা বা আমদানির বিপরীতে প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের দেশি মুদ্রায় ঋণ নেয়ার সুযোগ থাকবে। এর মেয়াদ হবে ১৮০ দিন। এই ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক পর্যায়ে সুদ হার হবে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি এ খাতের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পূর্ণ অর্থায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি রপ্তানি সহায়ক ‘প্রাক-অর্থায়ন তহবিল’ গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, সমাজের দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। কৃষক, নারী উদ্যোক্তা, কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তা এবং রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংকগুলোকে নীতি সহায়তা প্রদান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় অধিকতর মানুষকে জাতীয় উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের নতুন এই তহবিলের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাগুলো তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি নির্বাহী পরিচালক নূরুন নাহার তহবিল সম্পর্কে ধারণা সংবলিত একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন।
এ সময় সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম, অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর. এফ. হোসেন তাদের বক্তব্যে তহবিলটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের ৮৮তম শাখা উদ্বোধন করা হয়েছে।
কক্সবাজার মেইন রোডের বাজারঘাটা এলাকায় কোরাল রিফ প্লাজায় রোববার শাখাটির উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হাবিবুর রহমান।
ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কক্সবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হসপিটাল ও মেডিকেল কলেজের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. মো. মোমিনুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কক্সবাজার সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান, আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক ও এক্সিকিউটিভ ভাইস-প্রেসিডেন্ট কিশোলয় সেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল সার্ভিস ডিভিশনের হেড মোহাম্মদ শফিউল আজমসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের (এসএমটি) ১৭তম সভা রোববার ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে সভায় সভাপতিত্ব করেন এসএমটি চেয়ারম্যান ও ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিম।
এ সময় ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টররা, প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় কার্যালয়, ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের সব জেনারেল ম্যানেজারসহ সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর তার বক্তব্যে ব্যাংকের সার্বিক ব্যবসায়িক পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
বেসরকারি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে পদত্যাগ করা মো. মেহমুদ হোসেন আবার এই ব্যাংকেই ফিরছেন।
রোববার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার তাকে ডেকে এই ব্যাংকে যোগ দিতে বললে মেহমুদ হোসেন তাতে সম্মতি দেন। ব্যাংকটির ভাবমূর্তি ফেরাতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির রোববার সাক্ষাৎ হয়েছে। মো. মেহমুদ হোসেন এখনো ব্যাংকটির এমডি পদে বহাল আছে। বোর্ড পরিষদ তার পদত্যাগ গ্রহণ করেনি।
অভিযোগ রয়েছে সিকদার পরিবারের চাপের মুখে গত ১৮ জানুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে মেহমুদ হোসেন পদত্যাগ করেন। গত বৃহস্পতিবার গভর্নরসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ব্যাংকটির অন্যতম পরিচালক রন হক সিকদার। এমডির পদত্যাগ নিয়ে আলোচনার মধ্যে ওই বৈঠক হয়।
মেহমুদ হোসেন পদত্যাগের পর ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, চাপের মুখে নয়, ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে দুই বছর মেয়াদে ব্যাংকটিতে এমডি পদে যোগদান করা মেহমুদের চাকরির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:উদ্ভাবনী সেবা ও দ্রুত সময়ে সর্বোত্তম সেবার প্রসারে দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে এনআরবিসি ব্যাংক। ‘মোস্ট ইনোভেটিভ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ (এনআরবিসি প্ল্যানেট)’ ও ‘ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং মাইক্রো-ফাইনান্স ব্যাংক’ শীর্ষক অ্যাওয়ার্ড দুটি দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ম্যাগাজিন দি গ্লোবাল ইকোনমিক্স।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক অনুষ্ঠানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এ সময় ব্যাংকের পরিচালক একেএম মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ নাজিম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম আউলিয়া এবং আইসিটি বিভাগের প্রধান ও সিটিও দিদারুল হক মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ দিতে ২০২১ সালের মার্চে বিশেষ ক্ষুদ্র ঋণ চালু করে এনআরবিসি ব্যাংক। খুব অল্প সময়ে সারা বাংলাদেশে এই সেবা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষুদ্র ঋণ পেয়েছেন। এই সেবার দ্রুত প্রসারের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং মাইক্রো ফাইন্যান্স ব্যাংক-২০২২’ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া হাতের মুঠোয় সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা সহজে প্রদানের লক্ষ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০১৯ সালে ‘এনআরবিসি প্লানেট অ্যাপ’ চালু করে এনআরবিসি ব্যাংক। উদ্ভাবনী এই অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কিউআর কোড ব্যবহার করে কার্ড ও চেক ছাড়া টাকা উত্তোলনের সুবিধা চালু করা হয়।
এছাড়া এই অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা স্থানান্তর, মোবাইল ব্যাংকিং, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সরকারি সেবার বিল প্রদান, মোবাইল রিচার্জ, ব্যালান্স অনুসন্ধানসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা রাত-দিন যেকোনো স্থানে বসে গ্রহণ করা যায়।
সারাবিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালের কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করে ‘বার্ষিক গ্লোবাল ইকোনমিক্স অ্যাওয়ার্ডস-২০২২’ শীর্ষক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এনআরবিসি ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে দি গ্লোবাল ইকোনমিক্স লিমিটেড।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল বলেন, ‘প্রবাসীদের স্বপ্নের এই ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খুব সহজে সব মানুষের দুয়ারে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া। এজন্য তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছি।
‘প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ যারা ব্যাংকিং সেবা থেকে বঞ্চিত থেকেছে তাদের জন্য চালু করেছি ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প। এতে বিনা জামানতে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ঘরে বসেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। এসব ভালো কাজের আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতি আমাদের দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীতে সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন ও ব্যবসায়িক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজারস অফিস, নোয়াখালীর আওতাধীন প্রিন্সিপাল অফিস, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর এবং নোয়াখালী ও ফেনী করপোরেট শাখার প্রধান এবং এসব প্রিন্সিপাল অফিসের আওতাধীন শাখা ব্যবস্থাপকরা অংশ নেন।
শনিবার নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সোনালী ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ ও জেনারেল ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান।
সভাপতিত্ব করেন জেনারেল ম্যানেজারস অফিস, নোয়াখালীর জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজাহান।
সভার শুরুতে নোয়াখালীর জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজাহান গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্জিত ব্যবসায়িক চিত্র উপস্থাপন করেন। এরপর জেনারেল ম্যানেজারস অফিসের আওতাধীন অঞ্চল প্রধানরা ও করপোরেট শাখার প্রধানরা পর্যায়ক্রমে তাদের ব্যবসায়িক চিত্র তুলে ধরেন।
রেমিট্যান্স ডলার প্রতি ১০৭ টাকা। নির্ধারিত এ দরের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ না করতে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
বাফেদা চেয়ারম্যান আফজাল করিম ও এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
ব্যাংক সূত্র বলছে, চলতি জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে এবিবি ও বাফেদার সদস্যরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযোগ করেন যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত ডলার প্রতি ১০৭ টাকার বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে ডলারের বাজার। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এ রকম অভিযোগের পর সভায় ব্যাংকগুলোকে এমনটা না করার জন্য সতর্ক করেছে বাফেদা ও এবিবি।
সভায় উপস্থিত ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিউজবাংলাকে বলেন, কিছু ব্যাংক নির্ধারিত ১০৭ টাকার চেয়ে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। সভায় বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। সভার পর এ বিষয়ে একটি চিঠি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওদেরকে দেয়া হয়েছে।
১৯ তারিখে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, বাফেদা ও এবিবির বৈঠকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ ডলার প্রতি ১০৭ টাকা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে অনুযায়ী সব ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। তবে লক্ষ্য করা গেছে দেশের কয়েকটি ব্যাংক বাফেদা-এবিবির নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত দরে রেমিট্যাস সংগ্রহ করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরবর্তীতে কোনোভাবেই অনুমোদন দেয়া হবে না।
মন্তব্য