এবারের বাজেটে প্রথমবারের মতো দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই টাকা দেশে ফেরত আনা হবে কীভাবে, সেটি এখনও পরিষ্কার নয় অনেকের কাছে। তাই বিভ্রান্তি দূর করতে শিগগিরই একটি নির্দেশনা দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কেউ সরকারের দেয়া সুযোগটি নিতে পারবেন। প্রবাসীরা যে প্রক্রিয়ায় দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, একইভাবে কেউ পাচার করা টাকা দেশে আনতে পারবেন।
প্রথমে টাকার অঙ্ক বৈধ করার ঘোষণা দিতে হবে। তারপর ঘোষিত অর্থ বৈধ উপায়ে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে হবে। ওই টাকা দেশে আসার পর নিজ নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে জমা করতে হবে।
এনবিআর বলছে, ব্যাংকে টাকা জমা হওয়ার পর প্রযোজ্য হারে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে আগে কর পরিশোধ করতে হবে। ১০০ টাকা নগদ আনলে ৭ টাকা কর দিতে হবে সরকারকে।
নগদ টাকার বাইরে বিদেশে যদি বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ থাকে, সেটিও বৈধ করা যাবে প্রযোজ্য হারে কর দিয়ে। এ জন্য সম্পদের মূল্য ঘোষণা করতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই সম্পদের মূল্য ক্রয় করা দামের চেয় কম দেখানো যাবে না।
এনবিআর সূত্র বলেছে, সুবিধাভোগী তার ঘোষিত অর্থ বার্ষিক আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবেন। তবে অবশ্যই কর পরিশোধের প্রমাণপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, কেউ বাড়ি, গাড়ি অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ঘোষণা করতে চাইলে অবশ্যই ‘বাজারমূল্য’ দেখাতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দাখিল করতে হবে। কেউ যদি মিথ্যা সম্পদের হিসাব দেন, সন্দেহ হলে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে এনবিআর।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, বিদেশে থাকা যেকোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে এনবিআরসহ অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না।
স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং নগদ টাকা আনতে চাইলে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করা যাবে।
চলতি বছরের জুলাই থেকে আগামী ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যারা টাকা ফেরত আনবেন তাদের শতভাগ গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।
এনবিআরের একটি সূত্র বলেছে, এবার যে সুযোগটি দেয়া হয়েছে, তা অনেকেই গ্রহণ করবেন বলে তাদের প্রত্যাশা। এই সুবিধার আওতায় কমপক্ষে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার দেশে আসবে, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই টাকা দেশের অর্থনীতির ‘মূল স্রোতে’ যোগ হলে চাঙা হবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি।
নতুন বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার ফলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। সমালোচনাকারীদের মতে, এই সুযোগ দিয়ে অর্থ পাচারকারীদের পুরস্কৃত করল সরকার।
তবে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
পাশ্ববর্তীসহ অন্যান্য দেশেও অর্থ পাচারকারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের ১৭টি দেশ পাচার করা টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এই সুযোগ দেয়ার ফলে দেশটিতে প্রায় ৯৬০ কোটি ডলার দেশে ফেরত এসেছে। কেন এত সাড়া পাওয়া গেল– এ প্রশ্নের জবাবে রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় ট্যাক্স রেট ছিল মাত্র ৩, ৪, ও ৫ শতাংশ। এ জন্য ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:ট্রেনের যাত্রীরা বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিশিয়াল সাইট কিংবা নতুন মোবাইল অ্যাপ ‘রেল সেবা’ থেকে টিকিট কাটার সময় ‘নগদ’-এ পেমেন্ট করতে পারছেন।
ঈদের সময় সাধারণ যাত্রীদের বাড়ি যাতায়াতের ভোগান্তি দূর করতে ঘরে বসেই ট্রেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে পেমেন্টে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক চালু করেছে ‘নগদ’।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি ও ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মধ্যে এই সম্পর্কিত একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
ফলে দেশের সাধারণ যাত্রীরা যেকোনো সময় ট্রেনের টিকিট কিনতে পারবেন, যা তাদের জীবনকে করবে ঝামেলাহীন।
যাত্রীরা বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিশিয়াল অনলাইন ই-টিকেটিং ওয়েবসাইট eticket.railway.gov.bd কিংবা ‘রেল সেবা’ অ্যাপ থেকে ‘নগদ’-এর গেটওয়ে ব্যবহার করে ট্রেনের টিকিট কিনতে পারবেন।
ওয়েবসাইট কিংবা ‘রেল সেবা’ অ্যাপ থেকে টিকিট কিনে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট দিয়ে পেমেন্ট করলে যাত্রীরা পাবেন ১০ শতাংশ বা সর্বমোট ৫০ টাকা পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক।
তাৎক্ষণিক ক্যাশব্যাকের অফারটি চলবে আগামী ১৪ জুলাই পর্যন্ত। যেখানে ট্রেনের যাত্রীরা বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট কিংবা ‘রেল সেবা’ অ্যাপ থেকে টিকিট কিনে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
ক্যাশব্যাক অফারের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যাত্রীরা অফারটি উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া এই অফারটি নিশ্চিত করতে যাত্রীদের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট অবশ্যই সচল থাকতে হবে।
‘নগদ’-এর মাধ্যমে পেমেন্ট সুবিধার ফলে ট্রেনের টিকিটের জন্য এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। ফলে এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের টিকিট কেনার জন্য যাত্রীরা বাঁচাতে পারবেন তাদের মূল্যবান সময় ও অর্থ। পাশাপাশি বর্তমানে করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় যাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেও মিলবে মুক্তি।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাহেল আহমেদ বলেন, ‘‘মানুষের জীবন ঝামেলাহীন করতে ট্রেনের টিকিট কেনার সেবা নিয়ে এসেছে ‘নগদ’। এখন থেকে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে কেনা যাবে ট্রেনের টিকিট। ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য ‘নগদ’-এর এই অফার ট্রেনের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে অনেকটা স্বস্তি দেবে। এভাবে ‘নগদ’ হয়ে উঠছে সবার ওয়ালেট, জাতীয় ওয়ালেট।’
আরও পড়ুন:মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক ব্যাংক মাস্কাট থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলারের সিন্ডিকেট ঋণ নিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক সিটি ব্যাংক লিমিটেড।
শনিবার সিটি ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘সিটি ব্যাংক ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ব্যাংক মাস্কাট থেকে ২০ মিলিয়ন ইউরো সিন্ডিকেট ঋণ নিয়েছিল। যা ছিল কোনো ওমানি ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো বাংলাদেশি ব্যাংকের নেয়া এ ধরনের প্রথম ঋণ। ২০২০ সালে সিটি ব্যাংক ৩০ মিলিয়ন ডলার সিন্ডিকেটেড ঋণ গ্রহণ করে। এবার নিয়েছে ৪৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ব্যাংক মাস্কাট প্রাথমিকভাবে ২৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে লেনদেন শুরু করে। পরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ব্যাংকের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এসব দেশের স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ৪৫ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড সংগ্রহ করে ব্যাংক মাস্কাট।
‘এই অংক প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ২৫ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি। এটি সিটি ব্যাংকের জন্য ব্যাংক মাস্কাটের নেতৃত্বে তৃতীয় সফল সিন্ডিকেটেড ঋণ সুবিধা।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিশ্ব করোনা মহামারি থেকে এখনও পুরোপুরি মুক্ত হয়নি, আবার বর্তমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। এই ঋণ সুবিধা সিটি ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দেবে। সিটি ব্যাংক তাদের বাণিজ্যিক লেনদেনের অর্থায়নে এই ঋণ ব্যবহার করতে পারবে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্য কার্যক্রম এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এটি সহায়তা করবে।’
সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান ব্যবসায়িক কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলেন, ‘সিটি ব্যাংকের সিন্ডিকেশন ঋণে বৈশ্বিক ব্যাংকগুলোর অভূতপূর্ব সাড়া দেখে আমরা আনন্দিত। এ সিকিন্ডিকেটেড ঋণ প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৮০ শতাংশ ওভারসাবস্ক্রাইবড হওয়ায় তা সিটি ব্যাংকের শক্তি এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারে তার গ্রহণযোগ্যতার চিত্র তুলে ধরে।
‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, ব্যাংকটির জন্য শক্তিশালী তারল্য নিশ্চিত করতে এবং আমাদের ক্লায়েন্টদের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রয়োজন মেটাতে আমরা এই ঋণসহ একাধিক উদ্যোগ নিয়েছি।’
৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি সম্পদের ব্যাংক মাস্কাট হলো ওমানের সালতানাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক। ৩৫ শতাংশ মার্কেট শেয়ারসহ এটি দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক।
ব্যাংকটির বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং সম্পর্কের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত, যা ব্যবসা বাণিজ্যকে গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকটি উপসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে ঋণদাতাদের কাছ থেকে অনুকূল অর্থায়নের শর্তে তহবিল সংগ্রহে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন:চালের দামে লাগাম পরাতে আমদানি শুল্ক তুলে নেয়ার পর প্রথম দফায় বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার টন আমদানি করতে ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার।
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আনার আমদানির অনুমতি দিতে অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ক চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
শর্ত হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এলসি খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।
আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশের বাজারে আনতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককেও জানাতে হবে।
সরকারি হিসাবে দেশে চালের সরবরাহ ও মজুতের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও চালের দাম বেড়ে চলেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরু চালের দাম এক মাসেই বেড়েছে ৯ শতাংশ।
টিসিবির হিসাবে এক বছর আগে এই সময়ে দেশে সরু চাল বিক্রি হতো কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৬৫ টাকায়। এখন তা ৬৪ থেকে ৮০ টাকা।
এক বছর আগে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, যেটি এখন হয়েছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা। এক বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৪৮ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।
চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারও অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছে। সম্প্রতি বিভিন্ন চালকল ও বাজারে সরকার অভিযানও চালাচ্ছে। বৈধ মাত্রার চেয়ে বেশি মজুত করায় মামলাও হয়েছে স্কয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযানের সুফল বাজারে কমই মিলছে।
চাল উৎপাদনের প্রধান বোরো মৌসুমে চালের দামে এই লাফ বছরের বাকি সময়ের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। তার ওপর দেশের উত্তর পূর্বে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, উত্তরে কুড়িগ্রাম অঞ্চলেও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। এতে আমনের ফলনেও ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বোরো ধান ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানিতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে শুল্ক।
তবে নিয়ন্ত্রণমূক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, অ্যাডভান্সড ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি এখনও কিছু বহাল আছে, যদিও এর হার কমানো হয়েছে অনেকটাই।
এতদিন চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো সরকারকে। অর্থাৎ আমদানিতে ১০০ টাকা খরচ হলে সরকারকে দিতে হতো ২৫ টাকা। এই খাতে এখন কোনো টাকা দিতে হবে না।
যদিও নিয়ন্ত্রণমূলক যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেটি পুরোপুরি প্রত্যাহার হয়নি, তবে কমানো হয়েছে অনেকটাই।
এতদিন এই শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এর বাইরে অগ্রিম আয়কর, এটিভি মিলিয়ে শুল্ক দিতে হবে ২৫ শতাংশ।
এতদিন আমদানি শুল্কের সঙ্গে এগুলো মিলিয়ে শুল্ক ছিল ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য আনতে সরকারকে দিতে হতো ৬২ টাকা। এখন কম দিতে হবে ৩৭ টাকা।
আমদানি করা চালের মূল্য আগের চেয়ে কম পড়লে দেশি উৎপাদকরা প্রতিযোগিতার স্বার্থে দাম কমাতে বাধ্য হবে বলে আশা করছে এনবিআর। আর এর ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে এবং ভোক্তারা কম দামে চাল কিনে খেতে পারবে।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্কহার কমানোর এই আদেশ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
চাল আমদানির ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে, আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামে পুনরায় প্যাকেটজাত করতে পারবে না। চাল বিক্রি করতে হবে প্লাস্টিক বস্তায়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ঈদের কেনাকাটা আরও সাশ্রয়ী করতে দেশজুড়ে ১০ হাজার আউটলেট ও রিটেইল দোকানে বিকাশ পেমেন্টে মিলছে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিকাশ জানিয়েছে, সারাদেশে ৩ হাজার ব্র্যান্ড ও মার্চেন্ট আউটলেটে লাইফস্টাইল সামগ্রী, পোশাক, জুতা, ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট কিনে বিকাশ দিয়ে পেমেন্টে করলে দিনে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ও অফার চলাকালীন সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক উপভোগ করতে পারবেন গ্রাহকরা।
অন্যদিকে দেশের ৭ হাজার রিটেইল দোকানে বিকাশ পেমেন্টে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ক্যাশব্যাক নিতে পারবেন। রিটেইল দোকানগুলোতে ক্যাশব্যাক পেতে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা পেমেন্ট করতে হবে গ্রাহককে।
১১ জুলাই পর্যন্ত বিকাশ অ্যাপ, ইউএসএসডি কোড *২৪৭# মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন গ্রাহকরা। এছাড়া প্রায় ৫০টি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে কেনাকাটায়ও ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক পাওয়া যাবে।
অফারের আওতাভুক্ত সব মার্চেন্টের তালিকা এবং বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এই লিংকে- https://www.bkash.com/payment/।
বিকাশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজেও অফারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন গ্রাহকরা।
আরও পড়ুন:
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রলি দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। স্টেশনে যাত্রীদের মালামাল বহনের সুবিধার্থে ট্রলি প্রদান করেছে ব্যাংকটি।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে শনিবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের কাছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রলি হস্তান্তর করেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলামসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন লন্ডনভিত্তিক ‘রোসপা হেলথ অ্যান্ড সেফটি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে। উন্নত কর্ম-পরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করায় লন্ডনের দি রয়েল সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অফ এক্সিডেন্ট বা রোসপা শীর্ষক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই স্বীকৃতি পেয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি।
বাংলাদেশী উৎপাদনমুখী শিল্পখাতে ওয়ালটনই প্রথম এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।
লন্ডনের চেশিয়ারে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ওয়ালটনকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। ওয়ালটনের পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানের এনভায়রনমেন্ট, হেলথ অ্যান্ড সেফটি (ইএইচএস) বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ লিটন মোল্ল্যা। গোল্ড, সিলভার ও ব্রোঞ্জ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কারটি প্রদান করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।
ওয়ালটন গোল্ড ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার পেয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
‘রোসপা হেলথ অ্যান্ড সেফটি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ হলো বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বীকৃত স্কিমগুলির মধ্যে একটি। এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৫০টি দেশ থেকে ২ হাজার কোম্পানি নাম এন্ট্রি করে।
ওয়ালটন এই পদক অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে শিল্পখাতে উন্নত কর্মপরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মনে করেন ওয়ালটন ইএইচএস বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী লিটন মোল্ল্যা।
তিনি বলেন, ‘ওয়ালটনের উন্নত কর্মপরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এক বিশাল অর্জন। এই পুরস্কার দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে নতুন এক মাত্রা যোগ করলো। এই সম্মাননা ওয়ালটনের ‘ভিশন-২০৩০’অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।’
ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তানভীর আঞ্জুম বলেন, ‘উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশ, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।’
তিনি বলেন, ‘এসডিজির ৩, ৮ ও ৯ নাম্বার লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত, পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং অভিঘাতসহনশীল অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ রোসপা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ওয়ালটন।’
‘মর্যাদাকর এই পুরস্কার “বেটার বাংলাদেশ টুমরো” শীর্ষক উদ্যেগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যামাত্রা অর্জনে ওয়ালটন পরিবারকে আরো অনুপ্রাণিত করবে।’
আরও পড়ুন:
বারবার ধরনা দিয়েও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের কাছ থেকে মূল সার্ভারের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করা যায়নি, এ কারণে আটকে আছে গ্রাহকদের টাকা।
ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রতিষ্ঠানের ধানমন্ডি কার্যালয়ে অডিটের সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘এক পাসওয়ার্ডেই আটকে আছে ইভ্যালির গ্রাহকদের অর্থ। বারবার ধরনা দিয়েও সিইও মোহাম্মদ রাসেলের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করতে পারেনি পরিচালনা পর্ষদ।’
তিনি বলেন, ‘ইভ্যালিরর কাছে এখন প্রায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। পাওনাদারদের তথ্য না পাওয়ায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য থাকলেও তা দেয়া যাচ্ছে না। এর ব্যাংকে যে টাকা আছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের পাওনা মেটানো সম্ভব নয়।’
এ মাসেই ইভ্যালির অডিট কার্যক্রম শেষ হবে এমন আশা প্রকাশ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চলতি মাসের শেষ নাগাদ ইভ্যালির অডিটের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সদস্য সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, মাহবুবুল করিম, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ের সামনে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও রাসেলের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন গ্রাহকরা।
তাদের দাবি, ইভ্যালির রাসেলকে মুক্তি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দিলে প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াবে। গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাবেন। মার্চেন্ডরাও পাবেন। মিলবে বিনিয়োগকারীও।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা এক মামলায় ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও সিইও রাসেলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়।
পণ্য অর্ডার দিয়ে টাকা জমার পর পণ্য ও অর্থ ফেরত না পেয়ে গত সেপ্টেম্বরে ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন এক গ্রাহক। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৮ অক্টোবর আদালত ইভ্যালির ব্যবস্থাপনায় পাঁচ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য