প্রযুক্তিপণ্য ও অ্যাকসেসরিজ বিপণন প্রতিষ্ঠান মোশন ভিউ দেশে তাদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে পার্টনার মিটের আয়োজন করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে তথ্য ও জ্ঞানের আদান-প্রদান করতে গত শুক্রবার গাজীপুরে পার্টনার মিট অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে সারা দেশে থেকে মোশন ভিউয়ের ৭০ জন পার্টনার উপস্থিত ছিলেন। দুই দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই পার্টনার মিট শেষ হয়।
পার্টনার মিট অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মোশন ভিউয়ের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ইমরুল হাসান, ম্যানেজার মো. খালিদ হাসান, ওয়ান প্লাস ব্র্যান্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার শাওনসহ অন্য কর্মকর্তারা।
তারা জানান, দেশের সব স্থানে মোশন ভিউয়ের মাধ্যমে প্রযুক্তিপণ্য ও অ্যাকসেসরিজ পৌঁছে দিতে পার্টনারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করতেই এমন আয়োজন। এর মাধ্যমে নতুন নতুন সব ডিভাইস মোশন ভিউয়ের মাধ্যমে ক্রেতাদের আরও কাছে যাবে।
পার্টনার মিট আয়োজনে শাওমি, অ্যামাইজ ফিট, ওয়ানপ্লাস, হেলিউ, লেনোভো, রিয়েলমি, ইমিল্যাব, মিলব্রো, টিকওয়াচ, কিয়েসলিক্টের মতো ব্র্যান্ডের আপকামিং পণ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া এই ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে অফিশিয়ালভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সেরা দামে স্মার্ট গ্যাজেট, স্মার্টফোন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দেশব্যাপী। এ ছাড়া গ্রাহকের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে সেরা বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
মোশন ভিউয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের এই পার্টনার মিটের মাধ্যমে নিত্যনতুন সব প্রযুক্তি গ্যাজেট আরও সহজে প্রযুক্তিপ্রেমীদের হাতে তুলে দিতে পারব। আমরা সেই লক্ষ্যে নতুন আউটলেট ও পার্টনারদের মাধ্যমে সারা দেশে মোশন ভিউয়ের স্টোর চালু করছি। এখন আমাদের ১৬টি ব্র্যান্ড আউটলেট চালু হয়েছে এবং আরও ৩০টি নতুন স্টোর দেশব্যাপী চালুর অপেক্ষায় রয়েছে।’
দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় মোশন ভিউয়ের বিপণন চালু আছে এবং দুই হাজারের অধিক রিটেইলে তাদের পণ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের ব্র্যান্ডের অরিজিনাল স্মার্ট গ্যাজেট, যেমন স্মার্ট ওয়াচ, ইয়ারফোন, স্মার্ট টিভি, পাওয়ার ব্যাংক, স্মার্ট হোম অ্যাপ্লায়েন্স ইত্যাদি গ্রাহকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং সেগুলোর ক্ষেত্রে পূর্ণ বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।
জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে ‘স্মার্টলি লুটপাটের’ বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য একইসঙ্গে বলেছেন, এই বাজেট সরকার দিচ্ছে, না আইএমএফ দিচ্ছে তা-ও দেখার বিষয়। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী সরকারকে বাজেট দিতে হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালা বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর বিকেলে রাজধানীর বনানীর নিজ বাড়িতে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় তার বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান করছেন উল্লেখ করে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আমির খসরু। বলেন, ‘এ ধরনের একটা সরকার দেশের জন্য কী ধরনের বাজেট দেবে তা বোঝাই যাচ্ছে। বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া শুনতেও রাজি নয় তারা।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘সরকার লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে প্রচার করছে। অথচ দেশে রিজার্ভে টাকা নেই।
‘বাজেটের আকার বাড়ছে ঋণের ওপর দাঁড়িয়ে এবং তা করা হচ্ছে সরকারের লুটপাটের সুবিধার জন্য। গত ৭ বছরে ৫২ শতাংশ ঋণ বেড়েছে। সরকার ঋণ নিয়ে ঘি খাচ্ছে। এই ঘি খাওয়ার টাকা বাংলাদেশের জনগণকে শোধ করতে হবে।
‘দেশের ভেতরে ব্যাংকগুলো থেকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, দেশের বাইরে থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়া হচ্ছে, এই ঋণের ভার আগামী প্রজন্মকে নিতে হবে।’
করের খাত বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এই সরকার তাদের অর্থনীতির যে মডেল তৈরি করছে, সেখানে ট্যাক্সের পুরো চাপ সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষ এখন ঋণ করে চলছে, তাদের জমা শেষ হয়ে গেছে, তারা নিয়মিত খাদ্যতালিকা সীমিত করছে।
‘অথচ জনগণের ট্যাক্সের এই টাকায় তারা যে পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চালু করেছে, তারা লাভবান হচ্ছে। এই টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, পুরো চাপটা পড়ছে জনগণের ওপর। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়াবে।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট সরকার দিচ্ছে না আইএমএফ দিচ্ছে সেটাও তো দেখার বিষয়। আইএমএফ যে গাইডলাইন দিচ্ছে তাতে তো সুনিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে যে কী কী করতে হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি কী কারণে আজ নিম্ন পর্যায়ে এসে নেমেছে।
‘এসব কারেক্ট করার জন্য আইএমএফের যে শর্ত, সেই শর্ত মেনে চলছে সরকার। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে বাজেট দিতে হবে। আবার তার বাইরে যদি অব্যাহতভাবে লুটপাটের অর্থনীতি, পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চলতে থাকে, সেটা অন্য কথা।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বিপদে আছে। আইএমএফের শর্ত না মানলে বাজেট সাপোর্ট থাকে না। আবার আইএমএফের শর্ত মানলে তাদের লুটপাটের পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় সরকার অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, সেখান থেকে বের হতে হলে এটার রাজনৈতিক সমাধান হতে হবে। রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদ, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে ও জবাবদিহিতা থাকবে।
সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘বাজেট হচ্ছে জনগণের চিন্তার প্রতিফলন, রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন। আজ যেখানে অবৈধ দখলদার সরকার বসে আছে, তাদের বাজেটে তো রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না; সাধারণ মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না। তাদের নিজেদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গত ৩০ বছরে যে স্থিতিশীলতা আমরা সৃষ্টি করেছিলাম সেটা এই সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এটা করা হয়েছে একটা দলীয় চিন্তার ভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতার লুটপাটের অর্থনীতির মডেল তৈরি করে।’
কেউ কেউ বলছেন, সরকার নির্বাচনী ব্যয়ের বাজেট দিচ্ছে। নতুন কোনো সরকার এলে তাদের জন্য এই বাজেট বাস্তবায়ন কতটা চ্যালেঞ্জ হবে।- এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘বাজেটে বড় বড় অঙ্ক দিচ্ছে, আর বাংলাদেশের মানুষকে অবকাঠামোর কথা বলছে। কিন্তু ৯ মাসে বাজেটের ৩৬ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। আর বড় বড় অবকাঠামোতে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে, সে জন্যই তো আজকে ডলার সংকট, ব্যাংকে টাকা নেই, শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, যে জন্য তারা (সরকার) আইএমএফের কাছে ধার করছে, বিশ্বব্যাংকের কাছে ধার করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছাপাতে হচ্ছে। টাকা ছাপিয়েও কুলাতে পারছে না। সুতরাং এখান থেকে বের হতে হলে একটা অবৈধ দখলদার সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার হতে হবে, জবাবদিহির সরকার হতে হবে।
আরও পড়ুন:চলমান অর্থনীতির সংকটগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাজেটে ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বাস্তববর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেছেন, সংকট মোকাবিলায় ঘোষিত বাজেটে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটোই অপ্রতুল।
বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি হচ্ছে চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো ঘোষণা করা হলো সেই সূচকগুলো যেভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে আমাদের কাছে মনে হয়েছে তা বাস্তববর্জিত এবং অর্জন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতির চাপ বা এর লাগাম টানার জন্য যে সমাধান দেয়া হয়েছে এগুলোও সম্ভব নয়।
‘মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এটি কমানোর জন্য যে আর্থিক পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার, বাজেটে তা নেই।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আর্থিক পদক্ষেপগুলো- যেমন: আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু কিছু পণ্যের ওপর কর থাকে, সেখানে যদি কর রেয়াত দেয়া যায় তাহলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু সেখানে আমরা তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।’
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘২০২৩-২৪ সালের বাজেট এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন অর্থনীতির মূল সূচকগুলো ভেঙে গিয়েছে। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এখন আর নেই। এখানে নানামূখী চাপ রয়েছে। বহির্খাতের চাপ রয়েছে; রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স যেভাবে আসার কথা ছিল সেভাবে আসছে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন কিংবা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল মূল্যস্ফীতির চাপ, সেটিও রয়ে গেছে। পুরো অর্থবছর জুড়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমূখী ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। সেটি বাড়ানো হয়েছে। এটি খুবই ভালো।
‘তবে আমরা দেখছি সরকারি ৩৮টি সেবা পেতে রিটার্ন সাবমিট করতে হবে এবং আয় যেটাই হোক, রিটার্ন সার্টিফিকেট পেতে ২ হাজার টাকা দিতে হবে। সেটি আমাদের কাছে অবিবেচনাপ্রসুত মনে হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে যে ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি তুলে দেয়া উচিত।’
সংস্কারের কথা তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছিলাম, সেগুলোর কোনো প্রতিফলন নেই। এই বাজেটটি এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করা হয়েছে যখন আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার বিভিন্ন শর্ত রয়েছে, যেহেতু তারা ঋণ দেবে।
‘বাজেট ডকুমেন্টে তিনবার আইএমএফ-এর কথা বলা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে আইএমএফ-এর শর্তের কথা বলা না হলেও সেই শর্ত পালনের ইঙ্গিত রয়েছে বাজেটে। সবমিলিয়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে ঘোষিত বাজেটে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটিই অপ্রতুল।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে নির্বাচনমুখী বাজেট বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলটি মনে করে, এই বাজেট বাস্তবসম্মত নয়। সরকার-সংশ্লিষ্টরা এই বাজেটকে পুঁজি করে নির্বাচনী সুবিধা নিতে পারে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এক লাখ কোটি টাকা বেশি বাজেট করা হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি যে নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনমুখী বাজেট করা হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করলেও রাজস্ব আদায়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এটাকে আমরা বাস্তবসম্মত বাজেট বলে মনে করছি না। বাজেটে পরিচালন ব্যয় বাড়ানোর কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সরকার এর অ্যাডভান্টেজ (বাড়তি সুবিধা) পাবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার খুব অল্পই অর্জিত হয়েছে। তারপরও নতুন বাজেটে চলতি অর্থবছরের চেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটা অর্জিত হবে না।
‘বাকি থাকে অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বিদেশি ঋণ। এখন যে পরিস্থিতি ইচ্ছা করলেই যে বিদেশি ঋণ পাবে বা অভ্যন্তরীণ ঋণ নিতে পারবে তা তো নয়। কাজেই আলটিমেটলি বাজেটটা ওয়ার্কঅ্যাবল হবে না, এটা আমাদের ধারণা।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় সব কিছুর ওপর পরোক্ষ করা আরোপ করা হয়েছে। যেগুলো অনেক মানুষ, সাধারণ মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এটা আরও বেশি ওপরের দিকে যাবে।
‘মানুষের আয় কমে গেছে, জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। বাজেটে কল্যাণমুখী কিছু দেখছি না। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিব- এ তিন শ্রেণির বেঁচে থাকার জন্য বাজেটে প্রভিশন থাকার দরকার ছিল। কিন্তু তা রাখা হয়নি। এ কারণে এটাকে জনবান্ধব বাজেট বলা যাচ্ছে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় অনেক বাড়ানো হয়েছে। অথচ উন্নয়ন ব্যয় অনেক কম। পরিচালন ব্যয় আগে যা ছিল সেটাই অনেক বেশি ছিল। পরিচালন ব্যয় খুব খোলামেলা জিনিস। যেখানে-সেখানে অর্থ ব্যয় করা যায়। হয়তো নির্বাচন সামনে রেখে সরকারে জড়িতরা এটার অ্যাডভান্টেজ নেবেন। এটা অর্থ দিয়ে ইলেকশন পার করার একটা পলিসি হতে পারে।’
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে ডলার সংগ্রহ ও সঞ্চয়ে জোর দেয়া হলেও প্রবাসীদের জন্য বিশেষ কোনো আকর্ষণ রাখা হয়নি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে।
বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট অধিবেশনে বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানালেও তাদের জন্য নতুন কোনো আর্থিক সুবিধা ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দক্ষতার ঘাটতির কারণে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের সংখ্যার অনুপাতে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি সন্তোষজনক নয় বলে সংসদে জানান অর্থমন্ত্রী। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিদেশ গমনের আগে প্রবাসে যেতে ইচ্ছুকদের অবহিতকরণ, কারিগরি ও বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা কোর্স এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণের গুণগতমান নিশ্চিতকরণ, দক্ষতার স্বীকৃতি, দক্ষ পেশায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, স্থানীয় প্রশিক্ষণ সনদের আন্তর্জাতিক সনদায়ন নিশ্চিত ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষায় দক্ষতা অর্জনসহ নানা কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি। বিদেশগামী প্রত্যেক কর্মীকে মাইক্রোচিপ সম্বলিত স্মার্ট কার্ড/বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের ১৪ বছরের শাসনামলে ১০ লাখ নারীসহ ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২ শ্রমিকের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে অদক্ষ ও আধা-দক্ষ ক্যাটাগরিতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের পেশায় প্রবেশের জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূল গন্তব্যের বাইরেও পোল্যান্ড, সিসিলি, আলবেনিয়া, রোমনিয়া, স্লোভেনিয়া, উজবেকিস্তান, বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়া ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাঠানো সম্ভব হয়েছে।’
হুন্ডি ঠেকিয়ে বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স আনতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয় সরকার। গত বছর তা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়। এর ফলে কোনো প্রবাসী দেশে ১০০ টাকা পাঠালে, তার পরিবার ১০২ টাকা পায়। বাড়তি ২ টাকা সরকার উপহার বাবদ ভর্তুকি দেয়।
দেশে চলমান ডলার সংকটের অন্যতম কারণ রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়া। বৈধপথের তুলনায় হুন্ডি মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে বেশি টাকা পায় প্রবাসীদের পরিবার।
ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণে ফের বাড়ছে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো। রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা করে দিচ্ছে সরকার। কিন্তু হুন্ডিতে আরও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
রেমিট্যান্সে তাই প্রণোদনা বৃদ্ধির দাবি থাকলেও, বাজেটে এ বিষয়ে কিছুই নেই।
বৃহস্পতিবার সংসদে উপস্থাপিত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য এক হাজার ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরের চেয়ে যা ২৮ কোটি টাকা বেশি।
তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৯৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমে হয় ৫৯৯ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বাড়তি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে ইসির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪০৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় তা প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। বিদায়ী অর্থবছরে ইসির জন্য বরাদ্দ (সংশোধিত বাজেট) রয়েছে ১ হাজার ৪২৩ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
নির্বাচন কমিশনের জন্য নতুন অর্থবছরে প্রস্তাবিত বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশই ব্যয় হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বেশ কিছু স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে। আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচন হবে।
নির্বাচন কমিশনের এজন্য এটি একটি মহাযজ্ঞ বলা যায়। আর এই ভোট আয়োজনে ব্যয়ের অংকটাও থাকবে বিশাল। এছাড়াও রয়েছে- ৬টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ৯টি পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন, ৪৫৪টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন, ১০০টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন এবং সংসদ ও স্থানীয় সরকারের উপনির্বাচন।
কমিশনের ব্যয়ের আরও বেশকিছু খাত রয়েছে। সেসবের মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত, মুদ্রণ ও বিতরণ, উন্নত মানের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সের নিচে নাগরিক নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, প্রবাসে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রবাসেই নিবন্ধন ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র অন্যতম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ হাজার ৬৯৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে যা ছিল ২২ হাজার ৫৭৭ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট বক্তব্য থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এর মধ্যে জননিরাপত্তা সচিবালয়ের জন্য ৪৯৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, পুলিশের জন্য ১৭ হাজার ৭৬৫ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে জন্য ৪ হাজার ২৭০ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, কোস্ট গার্ডের জন্য ১ হাজার ২৬ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং আনসারের জন্য ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৯২ লাখ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করবে জননিরাপত্তা বিভাগ।
সেগুলো হল হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো, ঢাকা মহানগর পুলিশের এলাকায় ৯টি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিভাগের জন্য ৯টি আবাসিক ভবন নির্মাণ, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, পুলিশের সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ, পাঁচটি র্যাব কমপ্লেক্স এবং একটি র্যাব ট্রেনিং স্কুল নির্মাণ, র্যাবের জন্য সদর দফতর নির্মাণ, র্যাবের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো, সীমান্ত এলাকায় ৭৩টি আধুনিক বা কম্পোজিট বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট বা বিওপি নির্মাণ, বিজিবির নতুন গঠিত ৬২ ব্যাটালিয়নের অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণ এবং কোস্ট গার্ডের জন্য লজিস্টিক্স ও ফ্লিট মেনটেইন্যান্স ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সে সঙ্গে আগামী অর্থবছরেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা তার।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পেশকালে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে এসেছে। এ ছাড়া দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।’
এসব কারণে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে আশা করি।’
তবে অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশা কতটা বাস্তবায়ন হবে, তা অনেকটাই অনিশ্চিত। কেননা এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান কবে হবে তা কেউ বলতে পারছে না। ফলে আগামী বছরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশে ওঠে। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমেছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বেড়েছে। মে মাসের তথ্য পাওয়া গেলে সেটা দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) গিয়ে পৌঁছতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্ববাজারের অস্থিরতাকে সঙ্গী করে সরকার যখন আইএমএফের ঋণের শর্ত মেনে ভর্তুকি তুলে নিয়ে ধাপে ধাপে জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে, সেই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী।
বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ১০ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসারে তেল-নুনের হিসাব মেলাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
এমন বাস্তবতায় গড় মূল্যস্ফীতি কী করে ৬ শতাংশে রাখা যাবে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় দেননি।
প্রবৃদ্ধি অর্জনে আরও কঠিন লক্ষ্য দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিনিয়ত পড়ছে অর্থনীতিতে। এমন অস্থির বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে আগামী ডিসেম্বর অথবা পরবর্তী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের এই মহাযজ্ঞ আয়োজনে রয়েছে বিশাল ব্যয়ের চাপ। পাশাপাশি এই ভোট ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
এসব সংকটের মধ্যেও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ অর্জন করতে চান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। আর সেই লক্ষ্য অনুযায়ী এবার জিডিপির মোট আকার নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে লক্ষ্য ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
কিন্তু ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাব কষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, এবার ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবি বলছে আরও কম; ৫ শতাংশের কিছু বেশি।
অর্থনীতি চাপে থাকার পরও কেন এবার বেশি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন- সে ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে হলেও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে, বিশেষ করে আমাদের বাণিজ্য ও প্রবাস আয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ বছরের এপ্রিলে প্রক্ষেপণ করেছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানির মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসার সুবাদে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবে বলেও আইএমএফ-এর প্রক্ষেপণে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির অনুকূল পরিবর্তন আমাদের জন্য আশার সঞ্চার করছে। একইসঙ্গে কোভিড পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পূর্ণ গতি সঞ্চার হয়েছে। এছাড়াও, অর্থবছরের শেষাংশে কৃষি খাতে ভাল ফলন আসছে। সার্বিকভাবে, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং সুসংহত অভ্যন্তরীণ চাহিদার কল্যাণে অতীতের ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরে আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসব এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।’
করোনা ভাইরাস মহামারির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ধারাবাহিক অগ্রগতির পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ (ভিত্তি বছর পরিবর্তনের পর যা ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ) প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর চার বছরে এই হার ছিল ৭ শতাংশের ওপরে। কিন্তু করোনার ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য