প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার সংসদে এ বাজেট উত্থাপনের পর থেকে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বাজেটের বিভিন্ন অংশের যেমন সাধুবাদ জানানো হয়েছে, তেমন কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনের প্রস্তাবও করেছে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
খুলনা থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রপ্তানি খাতে উৎসে কর কমানো, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো, পাটকল শ্রমিকদের বরাদ্দ, তামাক ও প্লাস্টিকজাতীয় পণ্যে কর বাড়ানোর দাবি।
রপ্তানি খাতে উৎসে কর কমানোর দাবি বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ)
সংগঠনের সভাপতি আমিন উল্লাহ বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাসহ সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, মানবসম্পদ ও কর্মসংস্থানকে বাজেটে বেশি গুরুত্ব প্রদান করায় এটি বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী বাজেট হয়েছে। এ বাজেটে পোশাক খাতের মতো সব রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানের করপোরেট করহার ১২ শতাংশ করায় অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই।’
‘তবে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি খাতটি এক দশক ধরে বিভিন্ন আওতাবহির্ভূত কারণে লোকসান দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ খাতের রপ্তানির ওপর আরোপিত উৎসে কর ১ শতাংশ যুক্তিসংগত নয় বলে মনে করি। সুতরাং এ খাতের রপ্তানির ওপর উৎসে কর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপসহ বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ববাজারে চিংড়ির দাম প্রতি কেজিতে প্রায় ২ ডলার কমেছে। এ ছাড়া কম মূল্যের ভেনামির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ি রপ্তানি কার্যক্রম ভালোভাবে চালিয়ে যেতে কষ্টকর হচ্ছে। তাই অন্যান্য কৃষিপণ্যের মতো সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা চিংড়িতে ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য মাছে ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। তদুপরি বর্তমানে এ খাতের রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ আয়কর কর্তন সম্পূর্ণরূপে রহিত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা চায় খুলনা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
খুলনা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কর্তৃক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটকে জনহিতকর, বাস্তবসম্মত, উন্নয়নমুখী, কৃষি ও ব্যবসাবান্ধব এবং যুগোপযোগী বলে মনে করে খুলনা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পরিষদ।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে উন্নয়নের ধারায় ফিরে আসতে ব্যবসায়ী সমাজসহ সব শ্রেণির মানুষের স্বার্থে সরকারের প্রস্তাবিত এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর। পাশাপাশি ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ করা, ব্যক্তিগত আয়করের স্লাব কমানো, উৎপাদন পর্যায়ে ওষুধশিল্পে ভ্যাট কমানোসহ খানজাহান আলী বিমানবন্দর শিগগিরই চালুর লক্ষ্যে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের জোর দাবি জানাচ্ছি। এ বাজেট দেশে চলমান মেগা প্রকল্প ও জাতিসংঘের ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বাজেটে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অপরিবর্তিত রাখাসহ ২৫ জন প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ নিয়োগ দিলে কর ছাড়ের সুযোগ রাখাকে সাধুবাদ জানায়। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটসহ ভবিষ্যৎ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং কোভিড-১৯ জনিত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করা ও এ বাজেট সাপোর্ট শিল্প, কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্রদান ও সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুলনা চেম্বারের পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানায়।’
গাড়ির দাম বাড়ায় ভোগান্তি নেই মধ্যবিত্তের
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের মোংলা বন্দরের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আহসানুর রহমান আরজু বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু গাড়ির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে যেসব গাড়ির ক্ষমতা ২ হাজার সিসির ওপর, সেই সব গাড়ির দাম ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সচরাচর যেসব গাড়ি বেশি বিক্রি হয়, তার ক্ষমতা ১৫০০ থেকে ২ হাজার সিসির মধ্যে। এর ওপরের ক্ষমতার গাড়ি শতকরা দুই থেকে চারজন ব্যক্তি কিনে থাকেন, যা বিলাসবহুল গাড়ি।’
‘মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ সাধারণত বিলাসবহুল গাড়ি কেনেন না, তাই বাজেটে গাড়ির দাম নিয়ে তাদের উদ্বেগের কিছু নেই। আগে যে দাম ছিল তা অপরিবর্তিত থাকবে।’
আহসানুর রহমান আরজু বলেন, ‘বিলাসবহুল গাড়ির দাম যে খুব বেশি বাড়ানো হয়েছে, তা নয়। আগে ২০০১ হাজার সিসি থেকে ৩ হাজার সিসির গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ছিল শতকরা ২০০ ভাগ, এখন ২৫০ ভাগ করা হয়েছে। এতে দাম যে অনেক বেড়ে যাবে তা নয়। ২৫০০ সিসির একটি হাইব্রিড আমাদের দেশে বেশ বিক্রি হয়। ওই গাড়ির দাম একটু বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘৩০০১ সিসি থেকে ৪ হাজার সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ৩৫০ শতাংশ থেকে ৫০০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে ৪০০০ সিসির ঊর্ধ্বের গাড়ির সম্পূরক শুল্ক আগের মতোই অর্থাৎ ৫০০ শতাংশই রাখা হয়েছে।
‘এসব গাড়ি শতকরা দুই থেকে চারজনের বেশি কেনেন না। তাই দাম বাড়া নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনে (বিএফএএ) সভাপতি ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়ি বিদেশ থেকে আনতে জাহাজের ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে না। এ ছাড়া বন্দরের ভাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে, যা জাতীয় বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ২ হাজার সিসির নিচে যেসব গাড়ি দেশে আসবে, তার পরিবহন খরচ আগের মতোই আছে। তাই দাম বাড়ছে না।’
পাটশিল্প নিয়ে চিন্তিত নন ব্যবসায়ীরা, শঙ্কিত শ্রমিকরা
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএ) চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সদস্যরা প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পাট বিদেশে রপ্তানি করেন। আগামী অর্থবছরের জন্য যে বাজেট করা হয়েছে, তাতে পাটশিল্পের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আসবে।’
‘পাট খাত নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তাই পাট ব্যবসায়ী প্রস্তাবিত বাজেটের সাধুবাদ জানাই।’
শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলাম, বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালুর জন্য। এ লক্ষ্যে আমরা ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করেছিলাম।
‘তবে প্রস্তাবিত বাজেটে তার কিছুই নেই। আমরা চাই অনতিবিলম্বে বাজেটে পাটকল শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ রাখা হোক, একই সঙ্গে পাটকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেয়া হোক।’
তামাক কোম্পানির লাভ বাড়বে
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক কোম্পানিকে নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টি এবং পুরোনো ধূমপায়ীকে উৎসাহী করতে সহযোগিতা করবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সদস্য সংগঠন সিয়াম।
সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ নিম্নস্তরের সিগারেট সেবন করে। অথচ এই স্তরের করহার না বাড়িয়ে নামমাত্র মূল্যবৃদ্ধিতে দেশে ধূমপানের পরিমাণ বাড়বে এবং মানুষের ক্রয় সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির তুলনায় সিগারেট সহজলভ্য হওয়ায় কিশোর-তরুণরা ধূমপান শুরু করতে উৎসাহিত হবে।
‘একই সঙ্গে জর্দা, গুল ও বিড়ির মূল্য পূর্বাবস্থায় বহাল থাকায় এগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বয়ে আনবে। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রবর্তন না করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে। বিপরীতে তামাক কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তাদের মুনাফা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।’
মাসুম বলেন, ‘দেশে সিগারেটের অধিকাংশই বিক্রি হয় খুচরা শলাকা হিসেবে। সিগারেটের ১০ শলাকার মূল্য প্রিমিয়াম স্তরে ৭ টাকা, উচ্চস্তরে ৯ টাকা, মধ্যম স্তরে মাত্র ২ টাকা এবং নিম্নস্তরে মাত্র ১ টাকা বৃদ্ধিতে খুচরা শলাকার দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না। এতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া নিম্নস্তরের প্রতি শলাকার দাম বাড়বে মাত্র ১০ পয়সা বা ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং মধ্যমস্তরে ২০ পয়সা বা মাত্র ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরের ভোক্তারা অবস্থাপন্ন শ্রেণির হওয়ায় এই স্তরে সামান্য মূল্যবৃদ্ধি ব্যবহার কমাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না।’
প্লাস্টিক শিল্পের ৫ শতাংশ শুল্ক বহালের দাবি
প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের নির্বাহী কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে সব ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর ওই ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
‘পরিবেশ বিনষ্টকারী অন্যতম উপাদান হলো প্লাস্টিক ও পলিথিন। অনতিবিলম্বে এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করা উচিত ছিল এবং সেই লক্ষ্যে আইন হওয়া উচিত ছিল। তবে সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে এ শিল্পকে আরও উৎসাহিত করা হয়েছে, যা পরিবেশের জন্য একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর পদক্ষেপ। আমরা চাই পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল থাকুক।’
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘দেশ ও জাতির মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আর্থসামাজিক গণমুখী বাজেট পেশ করেছেন। ২০৪১ ও ২০৩১-এর ভিশনকে টার্গেট করে বাজেটে মানুষের জীবনমান বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
‘মানুষের মর্যাদা যত বৃদ্ধি হবে, ততই অর্থনৈতিক সফলতা বৃদ্ধি হবে। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে শিক্ষাকে সর্বাধিক মূল্যায়ন করা হয়েছে। শিক্ষিত জাতি গঠিত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক মুক্তি চলে আসবে। এই শিক্ষিত জাতিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে শিল্প ও কৃষি খাতে।’
খুলনার মেয়র বলেন, ‘দেশ শিল্পায়িত হলে শিক্ষিত, দক্ষ বেকার যুবক-যুবতীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। দেশ হবে আত্মমর্যাদাশীল। দূর হবে দারিদ্র্য। সে জন্যই দারিদ্র্য দূরীকরণে বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রস্তাব রাখা হয়েছে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা।
‘১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকরা পাবেন এ পেনশন সুবিধা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যও থাকছে একই সুযোগ। ২০০৮ সালের দলীয় নির্বাচনি ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু করতে এ বাজেট পেশ করা হয়েছে। গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় বয়স্ক বৃদ্ধদের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে বাজেটে ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে এই পেনশনের আওতায় রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া বেকারদের জন্য চালু করা হচ্ছে চার ধরনের বিমা ব্যবস্থা। দেশ ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থার প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এই ডিজিটাল মুদ্রাব্যবস্থা চালু হলে মানুষের অনেক সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষা হবে বলে নেতারা মনে করেন। সব মিলিয়ে এ বাজেট গণমুখী একটি সুষম বাজেট। এই বাজেট বাস্তবায়িত হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘এত বড় বাজেট সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না সন্দেহ। দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, ব্যাংকে টাকা নেই। এ সময় এত বড় বাজেট কল্পনার ফানুস ছাড়া কিছু না। প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের স্বার্থে নয়।’
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পাঞ্চলের একটি গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে ৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। রোববার সকালের এ ঘটনায় দগ্ধদের রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধরা হলেন- কারখানাটির শ্রমিক আলআমিন (৩০), আজিজুল্লা (৩২), সেলিম (৩৫), জালাল মোল্লা (৪০), নাজমুল হুদা (৩৫) এবং সিকিউরিটি গার্ড সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ (৩৫)।
জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারখানাটির নিচ তলায় কাজ করছিলেন ওই শ্রমিকেরা। এক পর্যায়ে গ্যাস লাইন থেকে বিকট একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ছয় শ্রমিক দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সবার অবস্থাই গুরুতর। দগ্ধদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের পর নিরাপত্তাহীনতায় পুনরায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় গারো পাহাড় সীমান্তে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যসহ ৭ জনকে আটক করেছে বিজিবি।
সোমবার (২৫ আগস্ট) সকাল পৌণে সাতটার দিকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার নকশি সীমান্ত পথে নকশি ক্যাম্পের টহলরত বজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে বিকেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
বিষয়টি ২৬ আগষ্ট সকালে বিজিবি পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
আটককৃতরা হলো মানব পাচারকারী চক্রের সদস্য নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রমজান আলী (২৪) ও আসমত আলীর ছেলে রাসেল (১৬)। আটক অনুপ্রবেশকারীরা হলো, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বোমবাঘ গ্রামের শামীম শেখ (২৩), আফসানা খানম (২২), রুমা বেগম (৩২), মিলিনা বিশ্বাস (২৮) ও তিন বছর বয়সী শিশু কাশেম বিশ্বাস।
বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে গত ২৩ আগস্ট রাতের আধারে নালিতাবাড়ীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে নারী এবং শিশুসহ ৫ বাংলাদেশীকে ভারতে পাঠায় মানব পাচারকারী রমজান আলী ও রাসেল। কিন্তু ভারতীয় পুলিশের তৎপরতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে এ পাঁচ বাংলাদেশী। এ কারণে ২৫ আগষ্ট সোমবার সকাল পৌণে সাতটার দিকে ঝিনাইগাতির নকশি সীমান্তের কালিমন্দির এলাকা দিয়ে পুনরায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা টের পেয়ে সবাইকে আটক করে। পরে মানব পাচারে জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং অন্য ৫ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অপরাধে নালিতাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করা হয় এবং সবাইকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ময়মনসিংহ বিজিবি’র ৩৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মেহেদী হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
ঝালকাঠিতে গ্রাহকদের চাহিদা বিবেচনায় এনে ব্রান্ডশপ লোটো ও লি কুপার প্রতিষ্ঠানটি তাদের ১৩২তম ফ্লাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে।
এক্সপ্রেস লেদার প্রোডাক্ট লিঃ এর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কাজী জাভেদ ইসলাম সহ কোম্পানির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে আউটলেটটি উদ্বোধন করেন ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।
পৌর শহরের সাধনার মোড়ে মঙ্গলবার ২৬ আগষ্ট সকাল ১০টায় লোটো ও লি কুপারের ফ্ল্যাগশিপ আউটলেটদ্বয়ের শুভ উদ্বোধন আনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রাহক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঝালকাঠিতে কোম্পানীর এ যাত্রার প্রথম দিনে স্থানীয় ফ্যাশন সচেতন তরুণ তরুণীরা তাদের পছন্দের পন্য কালেকশন বেছে নিতে ভীর জমায়।
কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রথম তিনদিনের প্রতিদিন প্রথম ৩০ জন পাবেন ৫০% ছাড়, ২য় ৩০ জন পাবেন ৪০% ছাড়, ৩য় ৩০ জন পাবেন ৩০% ছাড়, ৪র্থ ৩০ জন পাবেন ২০% ছাড় এবং তৎপরবর্তী সকল কাস্টমার পাবেন ১০% ছাড়। এই বিশেষ ছাড় ২৬শে আগষ্ট থেকে শুরু হয়ে ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে
নওগাঁয় সপ্তম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে আটক রেখে ধর্ষণ মামলায় আ: সালাম (৩৮) নামে এক আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় দেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আ: সালাম সদর উপজেলার বর্ষাইল মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ওই শিক্ষার্থীর পরিবার পত্নীতলা উপজেলায় ভাড়া থাকতেন। ভাঙ্গারী ব্যবসার সুবাদে আসামী আ: সালামও পাশাপাশি একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ভিকটিম মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে আ: সালাম বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতো এবং রাস্তাঘাটে বিরক্ত করতো। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামী আ: সালাম ওই ভিকটিমের পরিবারকে গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখাতো। এরই একপর্যায়ে ২০২২ সালের ১১ জুলাই বিকেল তিনটার দিকে আসামী আ: সালাম একটি বাজার এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নওগাঁ সদর উপজেলার ভবানীপুর দক্ষিন পাড়া গ্রামের মোজাফ্ফর রহমানের ভাড়া বাড়িতে আটক রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা পত্নীতলা থানায় অভিযোগ করলে র্যাব ওই বাড়ি থেকে আসামিকে গ্রেফতার ও মেয়েকে উদ্ধার করে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতা থাকায় আসামী আ: সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে আজ আ: সালামকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একই সঙ্গে এক লাখ টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। বাকি আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা কুলসুম উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের বালুকাপাড়া গ্রামে রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় তাকে বিয়ে করায় এক দম্পতিকে দেড় বছর ধরে 'সমাজচ্যুত' করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে নালিশ দেওয়ার জের ধরে পেটানো হয় দিনমজুর আব্দুল জলিল প্রামানিককে। প্রতিপক্ষের লোকজনের মারধরে এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে গেছে।
এঘটনায় তিনি একটি থানায় অভিযোগ করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে সেটি মামলাটি হিসেবে রের্কড করা হয়। তবে মামলার এজাহারে সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
সরেজমিনে বালুকাপাড়া গ্রামে গিয়ে আব্দুল জলিলকে ১৮ মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার তথ্য জানা গেছে। আব্দুল জলিলের সমাজচ্যুত করার ঘটনাটি স্থানীয় রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশীদ মন্ডলও অবগত আছেন। তিনি দুই পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকেও সমাজচ্যুত করে রাখার বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কলহের কারণে আব্দুল জলিল প্রামানিক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দেন। এঘটনার ২৯ দিন পর তিনি আবারও স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় গ্রাম্য মাতব্বরেরা ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুল জলিল প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখেন। সেই সময় জলিল প্রামানিক বিষয়টি আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে জানান। ইউএনও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মণ্ডলকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেন। ইউপি চেয়ারম্যান উভয়পক্ষকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। তবে কার্যত কোন কোনো সমাধান করতে পারেননি। এতে গ্রাম্য মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলের ওপর আরও ক্ষুব্ধ হন। সমাজচ্যুত করে রাখা আব্দুল জলিল গত ১৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে গ্রামের মসজিদের দিকে রওনা হন। এসময় মাতব্বরেরা তাকে দুই দফায় প্রচন্ড মারধর করেন। এতে তার বাম হাতের হাঁড় ভেঙে যায়। তিনি চিকিৎসা নিয়ে থানায় আট জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বালুকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর আগে আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। কয়েক দিন পর আবার সংসার শুরু করেন। এনিয়ে গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিল প্রামানিককে সমাজচ্যুত করেন। এনিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় বৃদ্ধা লুৎফন নেছা বলেন, আমি কাজ করতে পারিনি। আব্দুল জলিলের বউ আমার বাড়িতে এসে জবাই করা মুরগির তরকারি রান্না করে দিয়েছিল। আমি জলিলের বাড়িতে গিয়ে এক বাটি মুরগির মাংসের তরকারি দিয়ে এসেছি। এতে আমাকেও সমাজচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
বালুকাপাড়া গ্রামের মোড়ের দোকানি হাফিজার রহমান বলেন, বউকে তালাক দেওয়ার ঘটনায় আব্দুল জলিল প্রামানিককে গ্রামের মাতব্বরেরা সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল গ্রামের সামাজিক কোন কর্মকান্ডে অংশ নিতে দেয় না।
আব্দুল জলিল প্রামানিক বলেন, আমি রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক দিয়েছিলাম। ২৯ দিন পর আবার বিয়ে পড়ে নিয়েছি। একারণে গ্রামের মাতব্বর রকি খান, মিল্টন খাঁ, আবু সুফিয়ানসহ আরও ১০-১২ জন আমাকে সমাজচ্যুত করেছেন। রাগের মাথায় স্ত্রীক। তালাক দিলে পুনরায় বিয়ে করা যাবে ঢাকার একজন মুফতির মতামত নিয়ে আসার পরও তারা মানেনি। তারা বলছে হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমার বিয়ে বৈধ হবে না। তারা আমাকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে গ্রামের মসজিদে নামাজ আদায়ে করতে ও জানাজায় শরিক হতে বা দেননি। মিলাদ মাহফিল দাওয়াত দেওয়ার মাতব্বরদের চাপে পর ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রামের কারও জমিতে দিনমজুরি কাজও করতে পারব না বলে লোকজন জানিয়ে দেন। একারণে কেউ আমাকে কাজে নেয় না। সমাজচ্যুত করার জের ধরে মসজিদে যাওয়ার সময় মাতব্বরদের একাংশের লোকজন আমাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছেন।
গ্রামের মাতব্বদের একজন মো. মিল্টন খাঁ। তিনি আব্দুল জলিলের দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি। তাকে তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কাজ করেছেন। একারণে গ্রামের লোকজন তাকে সমাজচ্যুত করেছেন। আব্দুল জলিল সমাজ বিরোধী কি কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আব্দুল জলিল তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়েছেন। এটা সমাজ বিরোধী কাজ।
আক্কেলপুর রায়কালী ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মন্ডল বলেন, আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তিনি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলেন। এঘটনায় গ্রামের মাতব্বরেরা আব্দুল জলিলকে সমাজচ্যুত করেন। আব্দুল জলিল ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ইউএনও স্যার আমাকে ঘটনাটি সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছি। আব্দুল জলিল যেন সামাজিকভাবে মিশতে পারে সেটি বলেছি। সমাজচ্যুতের ঘটনার জের ধরে আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাত ভেঙেছে বলে জেনেছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল জলিল প্রামানিক থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সেটি মামলা হিসেবে রের্কড করা হয়েছে। আসামি আট জনের মধ্যে ইতিমধ্যে আদালত থেকে পাঁচজন আসামি জামিন নিয়েছেন, অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য