প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহায়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের জনগণ, ক্রেতা-ভোক্তা তথা ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই সময় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘যারা সরকারের দেয়া সুযোগটি গ্রহণ করবেন তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’
‘দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। আমাদের কোনো বাধা দেবেন না’- এমন কথাও বলেন তিনি।
প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার পরদিন প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয় যেসব সমালোচনা তৈরি হয়, তার জবাব দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
২ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে বেশি রভাগ সময়জুড়ে অর্থ পাচার ইস্যুতে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্য মন্ত্রীরাও এ বিষয়ে সরকারে অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই ভালো সময়
পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী। এ প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী, অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে ট্রুথ কমিশনে এ ধরনের সুযোগ দেয়ার পর সুবিধাভোগীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এবার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তাদেরও কী একই পরিণতি হবে?
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা টাকা দেশে আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের সুযোগ দেয়ার ফলে ৯৬০ কোটি ডলার দেশে ফেরত আসে এবং তারা সফল হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের কেউ এ সুযোগ গ্রহণ করলে তাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ঘুষ আর দুর্নীতি করলেই কালো টাকা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে টাকা অপ্রদর্শিত থেকে যায়। সেই টাকা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা হয় না। আমরা এমন সুযোগ দিয়েছি, যাতে সুযোগটি গ্রহণ করে সেই অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করার পর তার আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ট্রুথ কমিশন করা হয়েছিল, তখন দেশে কোনো বৈধ সরকার ছিল না। আমরা সাংবিধানিক সরকার। আইনের শাসন ও সংবিধান মেনে চলি। আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ট্রুথ কমিশনে যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, সেটা কোনো আইনসংগত ছিল না। সরকারের দেয়া সুযোগটি যারা গ্রহণ করবেন, তাদের আইন দিয়ে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজেই ট্রুথ কমিশনের সঙ্গে এটাকে মেলানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘করদাতা অজ্ঞতার কারণে তার রিটার্নে অনেক সময় সব আয় প্রদর্শন করে না। এবারের বাজেটে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়াকে কালো টাকা বলি না। আমরা বলি অপ্রদর্শিত আয়। বাজেটে এই অপ্রদর্শিত আয়ই বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোনো কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।’
পাচার করা টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টাকার ধর্ম আছে। টাকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেখানে সুখ-বিলাস আছে, সেখানে চলে যায়। এটা স্যুটকেসে করে পাচার হয় না। ইলেট্রনিকস টুলসের মাধ্যমে যায়।’
জার্মানি, ফ্রান্স, ইউকে, নরওয়ে, ভারতসহ বিশ্বের ১৭ দেশে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়ার ফলে দেশগুলোতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কাজেই আমরাও আশা করছি এবার বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ কথা বলছি না যে টাকা পাচার হয় না। কিন্তু পাচারকারীকে ধরতে হলে তথ্য-প্রমাণ লাগবে। তা না হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা বসে নেই। পাচারকারীদের ধরার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে কি না, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে চেষ্টা চলছে ফেরত আনার। আমাদের বাধা দেবেন না। বাধা দিয়ে আপনাদের (সংবাদমাধ্যমকে) লাভ কী?
‘বিশ্বের ১৭টি দেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন সে কাজটি করছি।’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অর্থ পাচারকারীদের সুযোগ দেয়ার ফলে যারা নিয়মিত ও সৎ করদাতা তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে কি না।
উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধকারীদের অসম্মান করা হবে না। আমরা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য কাজ করি না। এ সুযোগ আগেও দেয়া হয়েছিল। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এ সুযোগ দিয়েছিলেন। আমি মনে করি, অর্থনীতির মূলধারায় পাচার করা টাকা বৈধ করে ফিরিয়ে আনার জন্য এটিই ভালো সময়। আমার বিশ্বাস, যে সুযোগটি দেয়া হয়েছে সবাই তা গ্রহণ করবেন।’
অন্য এক প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, অর্থ পাচার কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদারকে ভারত সরকার ফেরত দেবে। একইভাবে পাচারকৃত টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে।
চ্যালেঞ্জ আছে, সুযোগও আছে
মূল্যস্ফীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, বাজেট ঘাটতি, রাজস্ব আদায়সহ অন্যান্য বিষয় সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় উঠে আসে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাদের সামনে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি অফুরন্ত সুযোগও আছে। কষ্ট আমাদের থাকবে না। এটা চ্যালেঞ্জিং টাইম হলেও আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, সামনে অনেক সুযোগ আসবে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘সময়টি অত্যন্ত কঠিন। এই কঠিন সময়ের মধ্যে বাজেটটি দিয়েছি। সামনে অনেক উত্থান-পতন আছে। এগুলোকে অতিক্রম করে সফলভাবে এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব।’
দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘গরিব হওয়া অনেক কষ্টের। কারণ আমি নিজেও একসময় গরিব ছিলাম। এ থেকে মুক্তি পাওয়াটা কঠিন। তবে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।’
এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটে করপোরেট ট্যাক্সের হার কমানো হয়েছে। এতে করে ব্যবসার খরচ কমবে। ব্যবসায়ীরা পুনরায় মুনাফার একটি অংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
‘আমি মনে করি, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া উচিত। কারণ তখন লাভের একটি অংশ তারা পুনরায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। যত বিনিয়োগ করা যাবে, তত বেশি কর্মসংস্থান হবে। এই নিয়ম মেনেই এবারের বাজেটটি তৈরি করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশের ভেতরে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলোই দেশের মানুষ ব্যবহার করুক। মূল লক্ষ্য ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তেমন পদক্ষেপ নেই কেন– এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
বাজেটে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ সরবরাহ ঠিক থাকলে উৎপাদন বাড়বে। এ জন্য কৃষিতে ফোকাস করা হয়েছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি দ্বিগুণ করা হয়েছে।
এবারের বাজেটের আকার আগের তুলনায় কিছুটা ছোট বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘অর্থাৎ বাজেটকে সংকোচনমুখী করা হয়েছে। জোর দেয়া হয়েছে কৃচ্ছ্রসাধনের ওপরে। বিলাসপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা। যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানান, ‘বর্ধিত চাহিদা যাতে না বাড়ে, সে জন্য নতুন বাজেটটি সংকোচনমুখী করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব উপকরণই রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্যসংকট নিয়ে যে রকম হাহাকার শোনা যাচ্ছে, তা আসলে নেই। তবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে শহরের মধ্যবিত্ত কষ্টে আছে। এটা সত্য। কিন্তু দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো হাহাকার নেই।’
আরও পড়ুন:বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই জাতীয় সংসদে পাস হতে যাচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট।
বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট নিয়ে সমাপনী অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের সর্বসম্মত কণ্ঠভোটে পাস হবে এই বাজেট।
এর আগে ৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আগামী অর্থবছরজুড়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেন।
এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে মূল লক্ষ্য হলো করোনার অভিঘাত পেরিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারায় প্রত্যাবর্তন। সেই লক্ষ্যে এবার বাজেটের মূল ফোকাস হলো অর্থনীতির সব খাতে সক্ষমতার উন্নয়ন। এ জন্য তিনি এই বাজেটে আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।
ফলে এ বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৬ শতাংশের সমান। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার কর-রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আয় আসবে মূলত আয়কর, ভ্যাট এবং আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে।
এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতির মধ্যে অনুদানসহ বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৮ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা; আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
অপরদিকে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভোক্তাকে মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে বাজেটে। এ জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে অর্থমন্ত্রী আগামী বছরজুড়ে দেশের মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার প্রস্তাব করেছেন।
আরও পড়ুন:
বাজেটে আরও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মেডিটেশন সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর–ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত এসেছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে আমদানিকরা লিফটের ভ্যাট। অন্যদিকে, আমদানিকরা বিটুমিনে (আলকাতরা) নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে বুধবার এই পরিবর্তনের প্রস্তাব আনেন অর্থমন্ত্রী, যা পাস হয় কন্ঠভোটে।
গত ৯ জুন বাজেট ঘোষণায় মেডিটেশন সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এতে প্রবল আপত্তি জানায় মেডিটেশন সেবাগ্রহণকারীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে এই সেবার ওপর ভ্যাট হার ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে যারা মেডিটেশন সেবা নেবেন, তাদের খরচ কমবে।
বাজেট ঘোষণার সময় আমদানি করা লিফটের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে মোট ৩১ শতাংশ করা হয়। মূলত দেশীয় লিফট শিল্পের সুরক্ষায় বাড়তি কর আরোপ হয়।
লিফট আমদানিকারকরা বলছে, এত বেশি কর দিয়ে লিফট আনলে খরচ অনেক বাড়বে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আবাসনখাতে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লিফট আমদানিতে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়।
বাজেট ঘোষণায় বিটুমিন আমদানিতে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। দেশে বিটুমিন শিল্প নতুন করে গড়ে উঠেছে। তাই এই শিল্পের সুরক্ষায় আমদানি করা বিটুমিনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। এতে করে আমদানি করা বি-টুমিন দাম পড়বে বেশি। পক্ষান্তরে, দেশীয় বি-টুমিন শিল্পের চাহিদা বাড়বে।
আরও পড়ুন:বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণকে মিতব্যয়ী হতে, সঞ্চয় বাড়াতে, দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে এবং দেশেই চিকিৎসা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া, বিলাসী পণ্য পরিহারের অনুরোধও করেছেন তিনি।
বুধবার রাতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে, ব্যক্তিগত সঞ্চয় করতে হবে। প্রত্যেকের নিজস্ব সঞ্চয় বাড়ানো এবং প্রত্যেককে মিতব্যয়ী হতে হবে।
‘দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কথায় কথায় দৌড়ায়ে বিদেশে যেয়ে চিকিৎসা নেয়া যাবে না। দেশেও ভালো চিকিৎসা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ঢালাও ব্যবহার করবেন না, অপচয় যেন না হয় সকলেই কিছু কৃচ্ছ্রসাধন করে কিছুটা সঞ্চয় করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। আমদানি করা বিলাসী পণ্য পরিহার করে সবাইকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে।’
করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর ইউক্রেনে রুশ হামলার পর দেশে দেশে দেখা দেয়া সংকটের বিষয়টিও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বর্ণনায়। এই সময়েও বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপ সামলে এগিয়ে চলছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একে তো করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব, তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে।
‘শত বাধা ও চাপের মুখে পড়লেও আমরা দৃঢ়ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অনেক প্রতিকূল অবস্থায় এগোতে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
‘এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা চাই। আমাদের দেশে, বিদেশে, বাইরে সব জায়গায় তো একটা বাধা পেতে হয়। সেটা অতিক্রম করে আমরা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করছি। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এ জন্য জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলে এই বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারব।’
গত ৯ জুন আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দুই সপ্তাহের বেশি আলোচনা পর্যালোচনার জন্য কিছু পরিবর্তন করে বুধবারের মধ্যে বাজেট পাস করে।
সরকারপ্রধান উল্লেখ করেন, ‘দেশের মানুষ তার প্রত্যেকের জায়গা থেকে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে। যেমন ব্যক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয় বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে যে কেউ। সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমিয়ে এবং আমদানিকৃত বিলাস পণ্য পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগী হলে দেশ উপকৃত হবে।’
স্থানীয় শিল্পের বিকাশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তার সরকারকে ব্যবসাবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করপোরেট কর হার আরও কমিয়ে কর হার ২ দশমিক ৫০ ভাগ হারে হ্রাস করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বাধা অতিক্রম করে আমরা অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করছি। তার কারণ, আমাদের দেশের মানুষের আলাদা শক্তি আছে। তারা বুঝতে পারে, অনুধাবন করতে পারে। তখনই তাদের শক্তি বোঝা যায়। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য।
‘জাতির পিতার ডাকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এ দেশের মানুষ। স্বাধীনতার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। আমাদের মানুষকে নিয়েই এগোতে হবে।’
আরও পড়ুন:পাচারের অর্থ-সম্পদ দেশে ফেরত আনতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেসব সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সে অনুযায়ী পাচারের সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেশে আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। শুধু নির্ধারিত হারে কর দিয়ে নগদ টাকা দেশে আনা যাবে।
সংশোধনীতে নতুন করে একটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো, দেশের বাইরে কারও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে সেই সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে ওই সম্পদের মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানা অথবা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
নতুন বাজেটে এটিসহ আর কিছু কর প্রস্তাবে পরিবর্তন এনে অর্থবিল-২০২২ পাস হয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এসব সংশোধনী আনেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিদেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত আনতে গত ৯ জুন ঘোষিত বাজেটে বিশেষ সুযোগ দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, স্থাবর সম্পদ দেশে আনার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কর দিয়ে ফেরত আনা যাবে। আর কেউ যদি নগদ টাকা দেশে আনতে চায় তাকে কর দিতে হবে ৭ শতাংশ।
এ নিয়ে দেশ জুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মূলত এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট প্রস্তাবে এই সংশোধন আনা হয়েছে।
সংশোধনীতে শুধু নগদ টাকা আনার সুযোগ রেখে বাকি দুটি অর্থাৎ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে।
কোম্পানির করপোরেট কর সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সংশোধন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানি বছরে ৩৬ লাখার টাকার বেশি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে তারা কম হারে করপোরেট কর পরিশোধের সুবিধা পাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা ছিল বছরে ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোম্পানিকে ছাড় দেয়া হয়েছে।
নতুন কোম্পানির বার্ষিক রিটার্ন জমার নিয়ম সহজ করা হয়েছে। যেসব কোম্পানির ব্যবসার বয়স এক কিংবা দুই বছর সেসব কোম্পানি শুধু টিআইএন সনদ দিলেই রিটার্ন গ্রহণ করা হবে। সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক দলিলপত্র জমা না দিলেও চলবে। তবে তৃতীয় বছর থেকে সব ডকুমেন্টসহ রিটার্ন জমা দিতে হবে।
শ্রমিকদের কল্যাণে সব প্রতিষ্ঠানে একটি তহবিল থাকার কথা। নিয়ম অনুযায়ী, মালিক পক্ষ ওই তহবিলে যে পরিমাণ টাকা দেয় তা কোম্পানির খরচ হিসেবে গণ্য করা হয়। এতে করে কোম্পানির ওপর করের চাপ কমে।
প্রস্তাবিত বাজেটে খরচের বিধান বাতিল করলেও সংশোধন করে তা ফের আগের অবস্থানে নেয়া হয়। তবে এই সুযোগ এক বছরের জন্য বহাল থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন:মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনায় বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের অবস্থান হবে এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই অবস্থান আগামী অর্থবছরও অটুট থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার উপর সমাপনী বক্তব্যে বুধবার তিনি এমন তথ্য দেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের গত ১৩ বছরের অনন্য অর্জনসমূহ রূপকথার গল্পগাঁথাকেও হার মানায়। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সময়ে জিডিপিতে ১৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল প্রথম। যেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চায়নার প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭৭ শতাংশ।’
এ সময় অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানান, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের হিসাবে বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছর এবং আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার হবে এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও দেশের অর্থনীতির এই ক্রমোন্নতিতে নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
বাজেটের সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গও টানেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল দাবি করেন, পদ্মা সেতুর হাত ধরে তিনি আমাদের বিশ্ব মানচিত্রে এক ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, পরিবেশ ও সক্ষমতা তৈরিসহ ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে সুপারিশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। ওয়াশ খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাজ ধীরগতিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজেট বরাদ্দ কম হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
বাজেটে হাওর এবং পার্বত্য এলাকায় বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে, তবে চর এবং উপকূলীয় এলাকায় বরাদ্দ বাড়েনি। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। ওয়াশ খাতের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
নিরাপদ পানি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ওয়াটার এইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ফানসা-বিডি, এফএসএন নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইনটিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, অ্যান্ড ওয়াটার পভার্টি, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওয়াটার এইডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর হোসেন ইশরাত আদিবসহ ওয়াশ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাজেট ২০২২-২৩ : শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি।
সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রবন্ধে কোভিড-পরবর্তী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বলা হয়, এ ক্ষেত্রে উদীয়মান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে বরাদ্দ অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার শিক্ষার মাধ্যমে একটি কল্যাণকর ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’
সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য তিনি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্ভাবনের প্রাণকেন্দ্র। উচ্চশিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও গবেষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য