প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহায়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের জনগণ, ক্রেতা-ভোক্তা তথা ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই সময় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘যারা সরকারের দেয়া সুযোগটি গ্রহণ করবেন তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’
‘দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। আমাদের কোনো বাধা দেবেন না’- এমন কথাও বলেন তিনি।
প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার পরদিন প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয় যেসব সমালোচনা তৈরি হয়, তার জবাব দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
২ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে বেশি রভাগ সময়জুড়ে অর্থ পাচার ইস্যুতে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্য মন্ত্রীরাও এ বিষয়ে সরকারে অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই ভালো সময়
পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী। এ প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী, অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে ট্রুথ কমিশনে এ ধরনের সুযোগ দেয়ার পর সুবিধাভোগীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এবার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তাদেরও কী একই পরিণতি হবে?
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা টাকা দেশে আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের সুযোগ দেয়ার ফলে ৯৬০ কোটি ডলার দেশে ফেরত আসে এবং তারা সফল হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের কেউ এ সুযোগ গ্রহণ করলে তাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ঘুষ আর দুর্নীতি করলেই কালো টাকা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে টাকা অপ্রদর্শিত থেকে যায়। সেই টাকা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা হয় না। আমরা এমন সুযোগ দিয়েছি, যাতে সুযোগটি গ্রহণ করে সেই অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করার পর তার আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ট্রুথ কমিশন করা হয়েছিল, তখন দেশে কোনো বৈধ সরকার ছিল না। আমরা সাংবিধানিক সরকার। আইনের শাসন ও সংবিধান মেনে চলি। আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ট্রুথ কমিশনে যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, সেটা কোনো আইনসংগত ছিল না। সরকারের দেয়া সুযোগটি যারা গ্রহণ করবেন, তাদের আইন দিয়ে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজেই ট্রুথ কমিশনের সঙ্গে এটাকে মেলানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘করদাতা অজ্ঞতার কারণে তার রিটার্নে অনেক সময় সব আয় প্রদর্শন করে না। এবারের বাজেটে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়াকে কালো টাকা বলি না। আমরা বলি অপ্রদর্শিত আয়। বাজেটে এই অপ্রদর্শিত আয়ই বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোনো কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।’
পাচার করা টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টাকার ধর্ম আছে। টাকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেখানে সুখ-বিলাস আছে, সেখানে চলে যায়। এটা স্যুটকেসে করে পাচার হয় না। ইলেট্রনিকস টুলসের মাধ্যমে যায়।’
জার্মানি, ফ্রান্স, ইউকে, নরওয়ে, ভারতসহ বিশ্বের ১৭ দেশে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়ার ফলে দেশগুলোতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কাজেই আমরাও আশা করছি এবার বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ কথা বলছি না যে টাকা পাচার হয় না। কিন্তু পাচারকারীকে ধরতে হলে তথ্য-প্রমাণ লাগবে। তা না হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা বসে নেই। পাচারকারীদের ধরার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে কি না, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে চেষ্টা চলছে ফেরত আনার। আমাদের বাধা দেবেন না। বাধা দিয়ে আপনাদের (সংবাদমাধ্যমকে) লাভ কী?
‘বিশ্বের ১৭টি দেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন সে কাজটি করছি।’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অর্থ পাচারকারীদের সুযোগ দেয়ার ফলে যারা নিয়মিত ও সৎ করদাতা তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে কি না।
উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধকারীদের অসম্মান করা হবে না। আমরা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য কাজ করি না। এ সুযোগ আগেও দেয়া হয়েছিল। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এ সুযোগ দিয়েছিলেন। আমি মনে করি, অর্থনীতির মূলধারায় পাচার করা টাকা বৈধ করে ফিরিয়ে আনার জন্য এটিই ভালো সময়। আমার বিশ্বাস, যে সুযোগটি দেয়া হয়েছে সবাই তা গ্রহণ করবেন।’
অন্য এক প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, অর্থ পাচার কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদারকে ভারত সরকার ফেরত দেবে। একইভাবে পাচারকৃত টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে।
চ্যালেঞ্জ আছে, সুযোগও আছে
মূল্যস্ফীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, বাজেট ঘাটতি, রাজস্ব আদায়সহ অন্যান্য বিষয় সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় উঠে আসে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাদের সামনে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি অফুরন্ত সুযোগও আছে। কষ্ট আমাদের থাকবে না। এটা চ্যালেঞ্জিং টাইম হলেও আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, সামনে অনেক সুযোগ আসবে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘সময়টি অত্যন্ত কঠিন। এই কঠিন সময়ের মধ্যে বাজেটটি দিয়েছি। সামনে অনেক উত্থান-পতন আছে। এগুলোকে অতিক্রম করে সফলভাবে এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব।’
দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘গরিব হওয়া অনেক কষ্টের। কারণ আমি নিজেও একসময় গরিব ছিলাম। এ থেকে মুক্তি পাওয়াটা কঠিন। তবে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।’
এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটে করপোরেট ট্যাক্সের হার কমানো হয়েছে। এতে করে ব্যবসার খরচ কমবে। ব্যবসায়ীরা পুনরায় মুনাফার একটি অংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
‘আমি মনে করি, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া উচিত। কারণ তখন লাভের একটি অংশ তারা পুনরায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। যত বিনিয়োগ করা যাবে, তত বেশি কর্মসংস্থান হবে। এই নিয়ম মেনেই এবারের বাজেটটি তৈরি করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশের ভেতরে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলোই দেশের মানুষ ব্যবহার করুক। মূল লক্ষ্য ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তেমন পদক্ষেপ নেই কেন– এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
বাজেটে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ সরবরাহ ঠিক থাকলে উৎপাদন বাড়বে। এ জন্য কৃষিতে ফোকাস করা হয়েছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি দ্বিগুণ করা হয়েছে।
এবারের বাজেটের আকার আগের তুলনায় কিছুটা ছোট বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘অর্থাৎ বাজেটকে সংকোচনমুখী করা হয়েছে। জোর দেয়া হয়েছে কৃচ্ছ্রসাধনের ওপরে। বিলাসপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা। যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানান, ‘বর্ধিত চাহিদা যাতে না বাড়ে, সে জন্য নতুন বাজেটটি সংকোচনমুখী করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব উপকরণই রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্যসংকট নিয়ে যে রকম হাহাকার শোনা যাচ্ছে, তা আসলে নেই। তবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে শহরের মধ্যবিত্ত কষ্টে আছে। এটা সত্য। কিন্তু দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো হাহাকার নেই।’
আরও পড়ুন:ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৫ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে। রোববার রাজধানীর গুলশান-২ নগর ভবনের হলরুমে অনুষ্ঠিত বাজেট সভায় সর্বসম্মতভাবে এ বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন দেয়া হয়। সভা থেকে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা রেকর্ড রাজস্ব আদায় হয়েছে ডিএনসিসির। গত চার বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৭৬ শতাংশ।
সভার শুরুতে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম সূচনা বক্তব্য দেন। পরে ডিএনসিসির প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. বরকত হায়াত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থাপিত সংশোধিত বাজেট এবং নতুন বাজেট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন লাভ করে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল সিটি করপোরেশনকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডিএনসিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি।
‘নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি।
‘২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিএনসিসির মোট বাজেটের ৫৩% ব্যয় নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। মোট ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি বহন করা হবে ডিএনসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে।’
মেয়র বলেন, ‘কর হার বৃদ্ধি না করেও রাজস্ব আদায়ে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে ডিএনসিসি। অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহের ফলে রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। নগরবাসী ঘরে বসেই অনলাইনে ডিএনসিসির হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছেন। ফলে নাগরিক ভোগান্তি কমেছে। অনলাইন পদ্ধতির ফলে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হয়েছে। নিশ্চিত হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।’
এদিকে জানা গেছে, বিগত ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএনসিসির রাজস্ব আদায় হয়েছিল যথাক্রমে ৬১২ কোটি, ৬৯২ কোটি, ৭৯৪ কোটি ও ১০৫৮ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য খাত হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৫১৭ কোটি ৮৫ লাখ, ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ ৭৪ কোটি ৯৬ লাখ, সম্পত্তি হস্তান্তর কর বাবদ ২৮০ কোটি, সড়ক খনন ফি বাবদ ১০৪ কোটি ৭৯ লাখ, গরুর হাটের ইজারা বাবদ ৩২ কোটি ৭৭ লাখ, বিজ্ঞাপন ফি বাবদ ১০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ডিএনসিসি রাজস্ব আয় করেছে বলে জানা গেছে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সুস্থ, সচল, আধুনিক স্মার্ট ডিএনসিসি গড়তে বাজেটে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে; এক-জনস্বাস্থ্য রক্ষা, দুই-জলাবদ্ধতা নিরসন, তিন-জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে ডিএনসিসির বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
‘জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং খাল উদ্ধারপূর্বক খালের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’
ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় বাজেট সভায় অন্যান্যের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান, ডিএনসিসির সব বিভাগীয় প্রধান ও ডিএনসিসির কাউন্সিলর এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে গতকাল (রোববার) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। উনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন, সবাই যাতে যত্নের সঙ্গে নজরদারির মধ্য দিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করেন।
‘জবাবদিহিতা, দ্রুততা, নিপুণতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে যাতে বাজেট বাস্তবায়ন হয়- সে বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকার প্রধান মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব সবাইকে বলেছেন, এদিকে সবাই যেন আমরা মনোযোগী হই। বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়নে যাতে আমরা সবাই মনোনিবেশ করি।’
আরও পড়ুন:অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আয়োজিত বাজেট-উত্তর নৈশভোজে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান অর্থমন্ত্রী। সূত্র: ইউএনবি
শেখ হাসিনা পরে অর্থমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন টেবিল ঘুরে অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন- সংসদ উপনেতা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ ও সংসদ সদস্যবৃন্দ।
এছাড়াও নৈশভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সৌদি কোম্পানিগুলোকে অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করতে আকৃষ্ট করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে আর্থিক খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ।
রোববার বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রিয়াদে সোমবার সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সভায় অংশ নেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদিরা যদি আর্থিক খাতে বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে আলোচনা করা হবে। তারা আমেরিকা ও ইউরোপে টাকা জমা রাখে। বাংলাদেশও টাকা জমা রাখার একটি সুযোগ করে দিয়েছে। যেকোনো বিদেশি কোম্পানি ও ব্যক্তি বাংলাদেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে তাদের অর্থ রাখতে পারবেন। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এটিও আলোচনা হবে।’
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একটি নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি। এটিকে জনপ্রিয় করতে চাই আমরা। এমন দেশ রয়েছে যেখানে বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তিরা এ জাতীয় ডিপোজিট তৈরি করে।’
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসে সংসদে অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪ পাস করা হয়।
বাংলাদেশি ও বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই সেবার নিয়ম-নীতি শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রায় ডিপোজিট করার এই সুযোগ দেশে বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজতর করা এবং ডলারের একটি প্রধান উৎস তৈরি করছে।
‘বাজেটে বিদেশনির্ভরতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন বাজেটে বিদেশনির্ভরতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন আমাদের দেশের উপযোগী বা পছন্দমতো না হলে অনেক বিদেশি ঋণপ্রস্তাব আমরা ফিরিয়ে দেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির আমলে বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রীকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে প্যারিস কনসোর্টিয়ামে যেতে হতো। তাদের সময় বিশেষ করে উন্নয়ন বাজেটে বিদেশনির্ভরতা ছিল ৫০ শতাংশের বেশি।
‘আজকে এটি ১৫-২০ শতাংশে নেমে এসেছে। আমরা বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে অনেকের ঋণপ্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি, ফিরিয়ে দেই।
‘সামগ্রিক ও বৈশ্বিক অর্থনীতির স্বার্থে কিছু বৈদেশিক ঋণ নিতে হয়। যেমন আমরা বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পার্টনার। সেখানে আমাদের জন্য বরাদ্দ থাকে। সেটি না নিলে ল্যাপস হয়ে যায়। এজন্য ক্ষেত্রবিশেষে নিতেও হয়।’
বাজেটের সমালোচনাকে গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবারই বাজেট প্রস্তাব ও পাসের পর একটি মহল বলে যে বাজেট উচ্চাভিলাষী, বাস্তবায়নযোগ্য নয়। অথচ গত ১৫ বছরে আমাদের প্রণীত বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯২ থেকে ৯৬ শতাংশ।
‘দেশ এগিয়ে গেছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দারিদ্র্য ৪১ থেকে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ৫ থেকে মাত্র ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। গড় জিডিপি ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে এবং অনেক আগেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। কেউ বাঁচতে পারবে না। দুর্নীতির সঙ্গে যিনিই জড়িত থাকুক না কেন, আমরা ছাড় দেব না।’
শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে যেসব অর্থ প্রকাশ করা হয়নি সেই অর্থ মূলধারায় আনার লক্ষ্যে বাজেটে সেই অর্থকে বৈধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই অর্থগুলোকে অর্থনীতির মূলধারায় আনতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘অতীতে এ ধরনের সুযোগ প্রায়ই দেয়া হতো। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনও অতীতে এই সুযোগ নিয়েছেন।
সংসদ নেতা বলেন, ‘সুষ্ঠু নীতি এবং গণমানুষের শক্তির ভিত্তিতে সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
‘এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সবাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং এর মাধ্যমে দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটকে কেউ উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। কিছুক্ষণ আগে বিরোধী দলের নেতাও বলেছেন যে এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
‘আমি এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। চ্যালেঞ্জ নেয়াই আমাদের কাজ। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই এবং সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করি তা কখনোই শতভাগ পূরণ হয় না। সেটা করা সম্ভব নয়। তারপরও আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, আমরা সেখানে পৌঁছাতে যাচ্ছি। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকার দলের নির্বাচনি ইশতেহার ভুলে যায়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগে ইশতেহার তৈরি করি। কিন্তু এই ইশতেহারের কথা আমরা ভুলে যাই না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতির কাছে দেয়া ওয়াদা আমরা পূরণ করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এই বাজেট প্রণয়ন করেছি এবং উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। এখানে কমানোর কিছু নেই।
‘এই বাজেটের মাধ্যমে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে বাজেট দেয়। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট দিয়েছি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ। কাজেই এই বাজেটকে মোটেই উচ্চাভিলাষী মনে করি না।’
শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটকে আমি মোটেই উচ্চাভিলাষী মনে করি না। একটা লক্ষ্য আমরা স্থির করি। শতভাগ কখনও পূরণ হয় না। তারপরও আমাদের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে যে এখানে আমরা যাব। সেটা আমরা যেতে পেরেছি।
‘কোথায় ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট, আর কোথায় সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট! এটাও তো সন্তুষ্টির জায়গা হওয়া উচিত যে আমরা এই জায়গায় আসতে পেরেছি। চ্যালেঞ্জ নিয়েছি বলেই (বড় বাজেট বাস্তবায়ন) সম্ভব হয়েছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছেটা কী? দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সেজন্যই তো উন্নয়নটা হয়। উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যেই আমরা এই বাজেট প্রণয়ন করেছি এবং উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। এখানে কমানোর কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই বাজেটের মধ্যে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল, সেটি বাস্তবায়নে সক্ষম হব। সেই ধারাবাহিকতা আমাদের আছে।
‘আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের নিজেদের ঘোষণাপত্র আছে, আমরা নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা করি। এই ইশতেহার আমরা কখনো ভুলে যাই না।
‘জাতির কাছে যে ওয়াদা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, তা পালন করি। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারতে অগ্রাধিকার এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে দিকনির্দেশনা তা বাজেটে উঠে এসেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাজেটের ওপর এ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতাসহ ২৩৪ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বাজেটের ওপর আলোকপাত করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যে যাই করুন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। কিছুক্ষণ আগে বিরোধীদলীয় নেতা বললেন এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমাতে হবে ইত্যাদি। এই চ্যালেঞ্জ নেয়ার মতো সক্ষমতা আছে কি না। চ্যালেঞ্জ নেয়াটাই তো আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো আমরা চলতে চাই, চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২০১ কোটি টাকার মূল রাজস্ব বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জবি উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬তম সিন্ডিকেট সভায় এই বাজেট পাস হয়।
সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বাজেট আলোচনা শুরু করেন।
অর্থ কমিটির ৮০তম সভায় সুপারিশকৃত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধনী বাজেট ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটটি উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটটি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রশাসনের প্রথম বাজেট।
সিন্ডিকেট সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের জন্য ২০১ কোটি টাকার মূল রাজস্ব (পরিচালন ও উন্নয়ন) বাজেট পাস হয়। এর মধ্যে ১৬৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ইউজিসির অনুদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আসবে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফলে ঘাটতি থাকবে ৩৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
বাজেটে গবেষণায় মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে পিএইচডি গবেষণার জন্য এই প্রথমবারের মতো দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত বাজেটে ইউজিসি থেকে চার কোটি টাকা পারিতোষিক বাবদ বরাদ্দ পায়। এছাড়াও বাজেটে সেবা সহায়তা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মেধাবৃত্তির জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা আগে ছিল ৬৫ লাখ টাকা। পরিবহনে তিন কোটি ৮০ লাখ, লাইব্রেরির জন্য ২৭ লাখ (আগে ছিল সাত লাখ) এবং চিকিৎসার জন্য ২৫ লাখ (আগে ছিল ১০ লাখ) টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
শিক্ষা সফর, অনুদান, অনুষ্ঠানাদিতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সেবা সহায়তায় বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ (৫ কোটি এক লাখ ৭০ হাজার টাকা)। সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের বরাদ্দের ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য