প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহায়ক হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন হলে দেশের জনগণ, ক্রেতা-ভোক্তা তথা ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে। অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই সময় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘যারা সরকারের দেয়া সুযোগটি গ্রহণ করবেন তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’
‘দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। আমাদের কোনো বাধা দেবেন না’- এমন কথাও বলেন তিনি।
প্রতি বছর বাজেট ঘোষণার পরদিন প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয় যেসব সমালোচনা তৈরি হয়, তার জবাব দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
২ ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে বেশি রভাগ সময়জুড়ে অর্থ পাচার ইস্যুতে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্য মন্ত্রীরাও এ বিষয়ে সরকারে অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার এখনই ভালো সময়
পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী। এ প্রশ্নের জবাব দেন অর্থমন্ত্রী ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী, অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে ট্রুথ কমিশনে এ ধরনের সুযোগ দেয়ার পর সুবিধাভোগীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এবার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তাদেরও কী একই পরিণতি হবে?
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা টাকা দেশে আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের সুযোগ দেয়ার ফলে ৯৬০ কোটি ডলার দেশে ফেরত আসে এবং তারা সফল হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের কেউ এ সুযোগ গ্রহণ করলে তাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ঘুষ আর দুর্নীতি করলেই কালো টাকা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে টাকা অপ্রদর্শিত থেকে যায়। সেই টাকা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা হয় না। আমরা এমন সুযোগ দিয়েছি, যাতে সুযোগটি গ্রহণ করে সেই অপ্রদর্শিত টাকা বৈধ করার পর তার আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন ট্রুথ কমিশন করা হয়েছিল, তখন দেশে কোনো বৈধ সরকার ছিল না। আমরা সাংবিধানিক সরকার। আইনের শাসন ও সংবিধান মেনে চলি। আমরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করি।’
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ট্রুথ কমিশনে যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, সেটা কোনো আইনসংগত ছিল না। সরকারের দেয়া সুযোগটি যারা গ্রহণ করবেন, তাদের আইন দিয়ে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজেই ট্রুথ কমিশনের সঙ্গে এটাকে মেলানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘করদাতা অজ্ঞতার কারণে তার রিটার্নে অনেক সময় সব আয় প্রদর্শন করে না। এবারের বাজেটে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়াকে কালো টাকা বলি না। আমরা বলি অপ্রদর্শিত আয়। বাজেটে এই অপ্রদর্শিত আয়ই বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোনো কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।’
পাচার করা টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক হয়েছে কি না- এই প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘টাকার ধর্ম আছে। টাকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যেখানে সুখ-বিলাস আছে, সেখানে চলে যায়। এটা স্যুটকেসে করে পাচার হয় না। ইলেট্রনিকস টুলসের মাধ্যমে যায়।’
জার্মানি, ফ্রান্স, ইউকে, নরওয়ে, ভারতসহ বিশ্বের ১৭ দেশে এ সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘এ সুযোগ দেয়ার ফলে দেশগুলোতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। কাজেই আমরাও আশা করছি এবার বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ কথা বলছি না যে টাকা পাচার হয় না। কিন্তু পাচারকারীকে ধরতে হলে তথ্য-প্রমাণ লাগবে। তা না হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা বসে নেই। পাচারকারীদের ধরার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘টাকা দেশ থেকে পাচার হয়েছে কি না, সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে চেষ্টা চলছে ফেরত আনার। আমাদের বাধা দেবেন না। বাধা দিয়ে আপনাদের (সংবাদমাধ্যমকে) লাভ কী?
‘বিশ্বের ১৭টি দেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দণ্ড মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন সে কাজটি করছি।’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অর্থ পাচারকারীদের সুযোগ দেয়ার ফলে যারা নিয়মিত ও সৎ করদাতা তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে কি না।
উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধকারীদের অসম্মান করা হবে না। আমরা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য কাজ করি না। এ সুযোগ আগেও দেয়া হয়েছিল। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান এ সুযোগ দিয়েছিলেন। আমি মনে করি, অর্থনীতির মূলধারায় পাচার করা টাকা বৈধ করে ফিরিয়ে আনার জন্য এটিই ভালো সময়। আমার বিশ্বাস, যে সুযোগটি দেয়া হয়েছে সবাই তা গ্রহণ করবেন।’
অন্য এক প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, অর্থ পাচার কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত পি কে হালদারকে ভারত সরকার ফেরত দেবে। একইভাবে পাচারকৃত টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে।
চ্যালেঞ্জ আছে, সুযোগও আছে
মূল্যস্ফীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, বাজেট ঘাটতি, রাজস্ব আদায়সহ অন্যান্য বিষয় সংবাদ সম্মেলনে আলোচনায় উঠে আসে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমাদের সামনে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি অফুরন্ত সুযোগও আছে। কষ্ট আমাদের থাকবে না। এটা চ্যালেঞ্জিং টাইম হলেও আমরা তা মোকাবিলা করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, সামনে অনেক সুযোগ আসবে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘সময়টি অত্যন্ত কঠিন। এই কঠিন সময়ের মধ্যে বাজেটটি দিয়েছি। সামনে অনেক উত্থান-পতন আছে। এগুলোকে অতিক্রম করে সফলভাবে এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব।’
দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে নিজের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘গরিব হওয়া অনেক কষ্টের। কারণ আমি নিজেও একসময় গরিব ছিলাম। এ থেকে মুক্তি পাওয়াটা কঠিন। তবে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।’
এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটে করপোরেট ট্যাক্সের হার কমানো হয়েছে। এতে করে ব্যবসার খরচ কমবে। ব্যবসায়ীরা পুনরায় মুনাফার একটি অংশ বিনিয়োগ করতে পারবেন। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
‘আমি মনে করি, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়া উচিত। কারণ তখন লাভের একটি অংশ তারা পুনরায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। যত বিনিয়োগ করা যাবে, তত বেশি কর্মসংস্থান হবে। এই নিয়ম মেনেই এবারের বাজেটটি তৈরি করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বাজেটে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমরা চাই দেশের ভেতরে যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলোই দেশের মানুষ ব্যবহার করুক। মূল লক্ষ্য ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তেমন পদক্ষেপ নেই কেন– এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
বাজেটে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ সরবরাহ ঠিক থাকলে উৎপাদন বাড়বে। এ জন্য কৃষিতে ফোকাস করা হয়েছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি দ্বিগুণ করা হয়েছে।
এবারের বাজেটের আকার আগের তুলনায় কিছুটা ছোট বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘অর্থাৎ বাজেটকে সংকোচনমুখী করা হয়েছে। জোর দেয়া হয়েছে কৃচ্ছ্রসাধনের ওপরে। বিলাসপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা। যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম জানান, ‘বর্ধিত চাহিদা যাতে না বাড়ে, সে জন্য নতুন বাজেটটি সংকোচনমুখী করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব উপকরণই রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্যসংকট নিয়ে যে রকম হাহাকার শোনা যাচ্ছে, তা আসলে নেই। তবে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এ কারণে শহরের মধ্যবিত্ত কষ্টে আছে। এটা সত্য। কিন্তু দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো হাহাকার নেই।’
আরও পড়ুন:২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রিতে প্রস্তাবিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস। এছাড়া ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণালঙ্কার আনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা ৫০ গ্রাম করাসহ ১১টি প্রস্তাব বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বাজুস কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাজুসের সহ-সভাপতি ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, সহ-সম্পাদক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু, সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়ালসহ অন্যরা।
লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ রুলস-এ সংশোধনী এনেছে সরকার। সংশোধিত ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী, একজন যাত্রী ১১৭ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণের বার বাংলাদেশে আনতে পারবেন। আগে ২৩৪ গ্রাম ওজনের দুটি বার আনার সুযোগ ছিল।
সংশোধিত ব্যাগেজ রুলকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ জানিয়ে বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়, এর মাধ্যমে দেশে স্বর্ণ চোরাচালান ও মুদ্রা পাচার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে এর আগে অবাধে সোনার বার বা পিণ্ড দেশে প্রবেশ করছে। আবার চোরাচালানের মাধ্যমে তা বিদেশে পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে এই পদক্ষেপ বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানিকে উৎসাহিত করবে।
স্বর্ণের বারের মতো ব্যাগেজ রুলের আওতায় অলংকার-গহনা আনার সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাব করেছে বাজুস। স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় জুয়েলারি শিল্পের দিকে ক্রেতাসাধারণকে আকৃষ্ট করতে এমন পদক্ষেপ দরকার বলে মনে করছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৈধভাবে স্বর্ণের চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চ মূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়, শিল্প-সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উচ্চ আমদানি শুল্ক। বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ। এটা স্থানীয় অন্যান্য শিল্পে আরোপিত শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে উচ্চ ভ্যাট হার ও অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দামের পার্থক্য হচ্ছে। এতে ক্রেতা হারাচ্ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জুয়েলারি খাতের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা।
বলা হয়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে জুয়েলারি খাতে আরোপিত শুল্ক কর ও ভ্যাট হার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনা দেয়া দরকার। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি করছে বাজুস।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্বর্ণালঙ্কার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা; ইডিএফ মেশিন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বসিয়ে কাউকে হয়রানি না করা; অপরিশোধিত আকরিক স্বর্ণে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা; আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী ও ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা।
দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- হীরা কাটিং ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের নতুন শুল্ক হার নির্ধারণ; স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ।
স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক কর অব্যাহতি দেয়াসহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস।
এছাড়া অস্বাভাবিক শুল্ক হার কমিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে শুল্ক হার সমন্বয়সহ এসআরও সুবিধা দেয়া ও চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমসসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্ধার করা মোট স্বর্ণের ২৫ শতাংশ সংস্থা সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।
আরও পড়ুন:‘সরকার কবে বাজেট দেয় হেইডা জানি না। তয় সিগারেটের দাম বাড়লেই বুঝি বাজেট আইতাছে। গত ১ মাস আগে থাইকাই সিগারেটের দাম বাড়ছে। তহনই বুঝছি সরকার সামনে বাজেট দিবো। শুধু সিগারেটই না, বাজেট অইলেই সব জিনিসের দাম বাড়ে। এহন তো সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে।’
জাতীয় বাজেট নিয়ে এভাবেই নিজের ভাবনা নিউজবাংলার কাছে তুলে ধরেছেন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চা-সিগারেট বিক্রেতা সুমন মিয়া।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রস্তাবিত এই বাজেট নিয়ে নিউজবাংলার কাছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মারিয়া রহমান বলেন, ‘বাজেট হলো ঘোষণা দিয়ে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়ানোর প্রক্রিয়া। আমার কাছে অন্তত তা-ই মনে হয়। সারা বছরই বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়ে। কিন্তু বাজেট ঘোষণা হলে সব জিনিসের দাম একসঙ্গে বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরাও একটা অজুহাত পেয়ে যান। আবার যেসব পণ্যের দাম কমার কথা সেগুলোর দামও কমে না।
‘তবে নিউজে দেখলাম এবার সরকার বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়িয়েছে। যেমন প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি। এটা একটা ভালো পদক্ষেপ।’
আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গণমাধ্যমে নিউজ দেখে যতটুকু বুঝলাম তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে এই বাজেটের একটা ইতিবাচক দিক হলো, দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কমছে। আর বিদেশ থেকে আমাদানি করা পণ্যের দাম বাড়ছে। এটা ভালো দিক। কারণ বিদেশি পণ্যের দাম বাড়লে, দেশি পণ্যের ব্যবহার বাড়বে। তাতে দেশে কলকারখানা প্রতিষ্ঠা হবে। কর্মসংস্থানও বাড়বে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আতাউর রহমান বলেন, ‘এবারের বাজেট হলো সরকারের ইনকামের বাজেট। সবকিছু থেকেই সরকার আয় করতে চাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় হলো, ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বাজেটের যেটুকু সুফল জনগণ পাওয়ার কথা সেটুকুও পাবে না। কারণ একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে বাজেটে যেগুলোর দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলোর দাম রাতারাতি বেড়ে গেছে। আবার যেসব পণ্যের দাম কমানোর কথা প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলোর দাম কবে কমবে বা আদৌ কমবে কিনা আমরা জানি না। এসবই ব্যাবসায়ীদের কারসাজি।’
মোবাইল ফোন সেটের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সোহানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নিউজে দেখলাম মোবাইল ফোন সেটের দাম বাড়ছে। অথচ সরকার ঘোষণা দিচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার, স্মার্ট বাংলাদেশ করার। এই দুটোর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মোবাইল ফোন। সেখানে মোবাইল সেটের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি অন্তত আমি খুঁজে পাই না। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের বক্তব্যের সঙ্গে যায় না।’
রিটার্ন জমার প্রস্তাব নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই বেশি
বিশেষত নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো এই রিটার্ন জমা দিলেই বাধ্যতামূলকভাবে ২ হাজার টাকা আয়কর দেয়ার বিষয়টি। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই বেশি।
চাকুরিজীবী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবরে দেখলাম রিটার্ন জমা দিলেই দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও কর দিতে হবে- এটা কোনো কথা হতে পারে না। আমি চাকরি করি, আমার একটা টিআইএন আছে।
‘বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন জমা দেই তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ধরুন কাল আমার চাকরি চলে গেল। পরবর্তী এক বছর আমাকে বেকার থাকতে হলো। এ অবস্থায় উপার্জন না থাকলেও টিআইএন থাকার কারণে আমাকে ২ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এটা সম্পূর্ণ বাস্তবতাবর্জিত প্রস্তাব।’
জাহাঙ্গীর আলম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসা করার জন্য টিআইএন সার্টিফিকেট খুলেছিলাম। কিন্তু তার কিছুদিন পরই করোনা সংক্রমণ চলে আসায় আমার আর ব্যবসা করা হলো না। এখনও আমি বেকার। অথচ যেহেতু টিআইএন আছে তাই আমাকে বাধ্যতামূলক ২ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। সরকার এটা কী করলো বুঝলাম না। আমার কোনো আয় নেই অথচ আয়কর দিতে হবে!’
তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন বেসরকারি চাকুরে ওবায়দুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি সক্ষম ব্যক্তিরই উচিত আয়কর দেয়া। যে ব্যক্তির টিআইএন আছে তার কাছে বছরে ২ হাজার টাকা আয়কর দেয়া বড় কোনো বিষয় নয়।
‘বিষয়টি নিয়ে শুধু শুধুই বিতর্ক করা হচ্ছে। টিআইএন তো রিকশাওয়ালারা করে না, যাদের সামর্থ্য আছে তারাই করে। বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বছরে ২ হাজার টাকা তো আমাদের রিকশাওয়ালারাও দিতে পারে। সেখানে টিআইএনধারীরা দিতে পারবে না কেন?’
আরও পড়ুন:রিটার্ন জমা দিলেই দুই হাজার টাকা দিতে হবে- এটাকে সাংঘর্ষিক মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
শনিবার ‘পোস্ট বাজেট ডায়ালগ ফিসক্যাল ইয়ার ২০২৩-২৪’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস ফোরাম।
সাবেক গভর্নর ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘ব্যক্তি করমুক্ত আয়ের সীমা যেটা সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু দুই হাজার টাকা যা মিনিমাম কর ধরা হয়েছে এটা কেন? রিটার্ন দিলেই দুই হাজার টাকা দিতে হবে- এটাকে আমার কাছে সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে।’
অগ্রাধিকারভিত্তিতে খেলাপি ঋণ আদায়, বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি হ্রাস এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়কে সরকারের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অনেক রূপকল্পের কথা বলা হয়েছে। আছে নানা অর্জন আর প্রত্যাশার কথা। কিন্তু কোনো বিষয়েই সুর্নিদিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে বাজেটের আকার মোটেই বড় নয়। জিডিপির আনুপাতিক হারে বাজেট ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। আকার ছোট হলেও বাজেটের বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জের বিষয়।’
জনগণের ওপর করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) রয়েছে, কর দেয় এর চেয়ে অনেক কম। এক্ষেত্রে টিআইএনধারীদের কর প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়াতে হবে।’
অনেক চ্যালেঞ্জকে ভারসাম্য করেই সরকারকে এবারের বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে বলে মনে করছেন আইপিডিসি ফিন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা রাস্তা-ঘাটসহ দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চাই। সে সঙ্গে একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য দেশে সুশাসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, বিচার ব্যবস্থার উন্নতিসহ একটি ব্যবসা সহায়ক পরিবেশও চাই।’
‘এছাড়া প্রাইভেট সেক্টর সবসময়ই রাজস্ব আহরণে সরকারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পায় সেটা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
বাজেট-পরবর্তী এই আলোচনা অনুষ্ঠানে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের গুরুত্ব, কার্যকরভাবে রাজস্ব আদায়ের কৌশল এবং ইনকাম ট্যাক্স আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার স্নেহাশিষ বড়ুয়া।
আরও পড়ুন:গত এক বছরে একজনও কালো টাকা সাদা করেননি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চান, গত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিলেও এবারের বাজেটে এ ধরনের কোনো সুযোগ কেন রাখা হয়নি।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, গত বছরের বাজেটে বলেছিলাম, কেউ যদি অপ্রত্যাশিত টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে সেই টাকার কোনো কর দিতে হবে না। গত বাজেটে এ সুযোগটি দেয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তাই এবারের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকে অর্থনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে বাজেটে ঘোষণা করা লক্ষ্যগুলোকে অবাস্তব বলা হচ্ছিল। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট ফেল করবে না।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে আমরা যে বাজেটগুলো দিয়েছি, প্রতিবছরই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, তা সব সময় প্রচার করেছি। ফেল করিনি, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও ফেল করব না। এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’
মানুষের কর্মদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার ওপর ভর করেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সবকিছুর মূলে হচ্ছে এ দেশের মানুষ, জনগোষ্ঠী- তাদের কর্মদক্ষতা, দেশের প্রতি তাদের মায়ামমতা, মানুষের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা, এটা অসাধারণ এক উদাহরণ আমি মনে করি।
‘এবং সে জন্য আমার বড় বিশ্বাস, আপনার মতো করে আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের পরাজয় নেই। ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবই হব।’
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকার যখন প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন এনবিআরের রাজস্ব ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যদি ৫৯ হাজার কোটি টাকা থেকে এখন যদি তিন লাখ কোটি টাকাতে যায়, যেটুকুন বাড়তি বলছেন, এটা আমরা অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রজেকশন যেগুলো আছে, আমরা ফুলফিল করতে পারব।’
আরও পড়ুন:নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, কোনো নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করা যাবে না। দেশের গণতন্ত্রকে বাধা দেয়া যাবে না। যত ধরনের নিষেধাজ্ঞাই আসুক, তা মোকাবিলা করার যোগ্যতা বাংলাদেশের আছে।
শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রাণী ভবানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেট নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা গত ১৪ বছর ধরে বলে আসছেন, এটা উচ্চাভিলাষী বাজেট, অবাস্তব বাজেট, কল্পনাভিত্তিক বাজেট। কল্পনাভিত্তিক বাজেট হলে পাঁচ লাখেরও কম, চার লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা জাতীয় আয় হতো না। এ থেকেই প্রমাণ হয়, প্রতি বছরই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে বাজেট দিয়েছি।
‘বিদেশি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বলে অদম্য বাংলাদেশ। সেই অদম্য বাংলাদেশে অপ্রতিরোধ্য গতি। আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে। এই গতিকে আমরা আরও বেগবান করব। বাজেটের মাধ্যমে উন্নয়নকে আরও গতিময় করব।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা বলছি, এই বাজেট বাস্তবসম্মত। অতীতে যেমন সফল হয়েছি, আগামী দিনেও বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সফল হব। আগে বাংলাদেশ চার লাখ ৮৪ কোটি টাকা ছিলো মোট আয়। সেটা বেড়ে হয়েছে ৪৪ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশের আয় আমরা ৯ গুণ বৃদ্ধি করেছি। এই বাজেট প্রণয়ন হলে এটি আরও বাড়বে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বিনামূল্যে না হলেও কৃষির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কৃষকদের দিতে আমরা সহযোগিতা করছি। এছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে মধুপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র সিদ্দিক খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি, সাবেক পৌর মেয়র মাসুদ পারভেজ প্রমুখ।
ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে ১০০ জন ডাক্তার দিনব্যাপী প্রায় ১০ হাজারের মতো রোগীকে সেবা প্রদান করবেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে ‘স্মার্টলি লুটপাটের’ বাজেট বলে উল্লেখ করেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য একইসঙ্গে বলেছেন, এই বাজেট সরকার দিচ্ছে, না আইএমএফ দিচ্ছে তা-ও দেখার বিষয়। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী সরকারকে বাজেট দিতে হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালা বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর বিকেলে রাজধানীর বনানীর নিজ বাড়িতে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় তার বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান করছেন উল্লেখ করে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আমির খসরু। বলেন, ‘এ ধরনের একটা সরকার দেশের জন্য কী ধরনের বাজেট দেবে তা বোঝাই যাচ্ছে। বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া শুনতেও রাজি নয় তারা।’
বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা বলেন, ‘সরকার লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে প্রচার করছে। অথচ দেশে রিজার্ভে টাকা নেই।
‘বাজেটের আকার বাড়ছে ঋণের ওপর দাঁড়িয়ে এবং তা করা হচ্ছে সরকারের লুটপাটের সুবিধার জন্য। গত ৭ বছরে ৫২ শতাংশ ঋণ বেড়েছে। সরকার ঋণ নিয়ে ঘি খাচ্ছে। এই ঘি খাওয়ার টাকা বাংলাদেশের জনগণকে শোধ করতে হবে।
‘দেশের ভেতরে ব্যাংকগুলো থেকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, দেশের বাইরে থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়া হচ্ছে, এই ঋণের ভার আগামী প্রজন্মকে নিতে হবে।’
করের খাত বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এই সরকার তাদের অর্থনীতির যে মডেল তৈরি করছে, সেখানে ট্যাক্সের পুরো চাপ সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষ এখন ঋণ করে চলছে, তাদের জমা শেষ হয়ে গেছে, তারা নিয়মিত খাদ্যতালিকা সীমিত করছে।
‘অথচ জনগণের ট্যাক্সের এই টাকায় তারা যে পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চালু করেছে, তারা লাভবান হচ্ছে। এই টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে, পুরো চাপটা পড়ছে জনগণের ওপর। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়াবে।’
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেট সরকার দিচ্ছে না আইএমএফ দিচ্ছে সেটাও তো দেখার বিষয়। আইএমএফ যে গাইডলাইন দিচ্ছে তাতে তো সুনিশ্চিতভাবে বলা হয়েছে যে কী কী করতে হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি কী কারণে আজ নিম্ন পর্যায়ে এসে নেমেছে।
‘এসব কারেক্ট করার জন্য আইএমএফের যে শর্ত, সেই শর্ত মেনে চলছে সরকার। মূলত আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে বাজেট দিতে হবে। আবার তার বাইরে যদি অব্যাহতভাবে লুটপাটের অর্থনীতি, পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি চলতে থাকে, সেটা অন্য কথা।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বিপদে আছে। আইএমএফের শর্ত না মানলে বাজেট সাপোর্ট থাকে না। আবার আইএমএফের শর্ত মানলে তাদের লুটপাটের পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় সরকার অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে, সেখান থেকে বের হতে হলে এটার রাজনৈতিক সমাধান হতে হবে। রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদ, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে ও জবাবদিহিতা থাকবে।
সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘বাজেট হচ্ছে জনগণের চিন্তার প্রতিফলন, রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন। আজ যেখানে অবৈধ দখলদার সরকার বসে আছে, তাদের বাজেটে তো রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না; সাধারণ মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না। তাদের নিজেদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে।’
আমির খসরু বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গত ৩০ বছরে যে স্থিতিশীলতা আমরা সৃষ্টি করেছিলাম সেটা এই সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর এটা করা হয়েছে একটা দলীয় চিন্তার ভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতার লুটপাটের অর্থনীতির মডেল তৈরি করে।’
কেউ কেউ বলছেন, সরকার নির্বাচনী ব্যয়ের বাজেট দিচ্ছে। নতুন কোনো সরকার এলে তাদের জন্য এই বাজেট বাস্তবায়ন কতটা চ্যালেঞ্জ হবে।- এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘বাজেটে বড় বড় অঙ্ক দিচ্ছে, আর বাংলাদেশের মানুষকে অবকাঠামোর কথা বলছে। কিন্তু ৯ মাসে বাজেটের ৩৬ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। আর বড় বড় অবকাঠামোতে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে, সে জন্যই তো আজকে ডলার সংকট, ব্যাংকে টাকা নেই, শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, যে জন্য তারা (সরকার) আইএমএফের কাছে ধার করছে, বিশ্বব্যাংকের কাছে ধার করছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে টাকা ছাপাতে হচ্ছে। টাকা ছাপিয়েও কুলাতে পারছে না। সুতরাং এখান থেকে বের হতে হলে একটা অবৈধ দখলদার সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার হতে হবে, জবাবদিহির সরকার হতে হবে।
আরও পড়ুন:চলমান অর্থনীতির সংকটগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাজেটে ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বাস্তববর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেছেন, সংকট মোকাবিলায় ঘোষিত বাজেটে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটোই অপ্রতুল।
বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি হচ্ছে চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো ঘোষণা করা হলো সেই সূচকগুলো যেভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে আমাদের কাছে মনে হয়েছে তা বাস্তববর্জিত এবং অর্জন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতির চাপ বা এর লাগাম টানার জন্য যে সমাধান দেয়া হয়েছে এগুলোও সম্ভব নয়।
‘মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এটি কমানোর জন্য যে আর্থিক পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার, বাজেটে তা নেই।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আর্থিক পদক্ষেপগুলো- যেমন: আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু কিছু পণ্যের ওপর কর থাকে, সেখানে যদি কর রেয়াত দেয়া যায় তাহলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু সেখানে আমরা তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখিনি।’
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘২০২৩-২৪ সালের বাজেট এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন অর্থনীতির মূল সূচকগুলো ভেঙে গিয়েছে। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এখন আর নেই। এখানে নানামূখী চাপ রয়েছে। বহির্খাতের চাপ রয়েছে; রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স যেভাবে আসার কথা ছিল সেভাবে আসছে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন কিংবা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল মূল্যস্ফীতির চাপ, সেটিও রয়ে গেছে। পুরো অর্থবছর জুড়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমূখী ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। সেটি বাড়ানো হয়েছে। এটি খুবই ভালো।
‘তবে আমরা দেখছি সরকারি ৩৮টি সেবা পেতে রিটার্ন সাবমিট করতে হবে এবং আয় যেটাই হোক, রিটার্ন সার্টিফিকেট পেতে ২ হাজার টাকা দিতে হবে। সেটি আমাদের কাছে অবিবেচনাপ্রসুত মনে হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে যে ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি তুলে দেয়া উচিত।’
সংস্কারের কথা তুলে ধরে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছিলাম, সেগুলোর কোনো প্রতিফলন নেই। এই বাজেটটি এমন একটি সময়ে প্রণয়ন করা হয়েছে যখন আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার বিভিন্ন শর্ত রয়েছে, যেহেতু তারা ঋণ দেবে।
‘বাজেট ডকুমেন্টে তিনবার আইএমএফ-এর কথা বলা হয়েছে। পরিষ্কারভাবে আইএমএফ-এর শর্তের কথা বলা না হলেও সেই শর্ত পালনের ইঙ্গিত রয়েছে বাজেটে। সবমিলিয়ে চলমান অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবিলার ক্ষেত্রে ঘোষিত বাজেটে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটিই অপ্রতুল।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য