দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের জীবনে যখন নাভিশ্বাস ওঠার মতো, তখন ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে ছাড় দিলেন না অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করে কোনো ছাড় দেয়ার ঘোষণা নেই। করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই অর্থাৎ বার্ষিক ৩ লাখ টাকাই বহাল রাখার কথা উল্লেখ করলেন অর্থমন্ত্রী।
করোনা-পরবর্তী জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এতে করে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। এ ছাড়া গত দুই বছর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বিদ্যমান ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি ওঠে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। তবে সেই দাবি পূরণ করতে চাননি অর্থমন্ত্রী।
দেশে কর ও জিডিপি অনুপাত অন্যান্য উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের মতো আশাব্যঞ্জক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশের সোপানে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে এ অনুপাত অনেকাংশে বাড়ানো প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে দেশের করযোগ্য বিপুল জনগোষ্ঠীকে করের আওতায় আনতে পারলে কর আহরণের সক্ষমতা ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আওতা বৃদ্ধি পাবে।’
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে যেসব প্রস্তাব করেছেন সেগুলো হচ্ছে- কতিপয় ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন বাধ্যতামূলক। স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড, অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি ফান্ড, পেনশন ফান্ড, অনুমোদিত সুপারএন্যুয়েশন ফান্ড এবং শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ব্যতীত অন্যান্য ফান্ডের রিটার্ন দাখিল করতে হবে। যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভার্সন চালু রয়েছে, তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের বিধান প্রবর্তন।
অন স্পট কর নির্ধারণের বিদ্যমান বিধানকে কেবলমাত্র গ্রোথ সেন্টারসমূহে সীমাবদ্ধ না রেখে সকল পর্যায়ে এর প্রয়োগ বিস্তৃত করা হবে। ধারাবাহিক তিন বছর বা ততোধিক সময়ব্যাপী কোনো কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকলে পরিচালকদের নিকট থেকে বকেয়া অবিতর্কিত কর আদায়ের বিধান করা হবে।
রাজস্ব দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান প্রবর্তন করার কথাও বলা হয় বাজেট বক্তৃতায়।
করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ হলেও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত এ আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতার ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ হবে ৫ হাজার টাকা।
অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম ৪ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এসব সিটি ছাড়া অন্যান্য এলাকার করদাতাতের ক্ষেত্রে ন্যূনতম করের পরিমাণ হবে ৩ হাজার টাকা।
করের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমেও অর্থমন্ত্রী সরকারের আয় বাড়াতে চান। এ জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়াতে তিনি ছয়টি ‘আইনি বিধান’ আরোপের প্রস্তাব করেন।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পর অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিরূপ প্রভাব পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এতে করে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
তখনকার প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের অবস্থা বিবেচনা করে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার আয়ে ব্যাপক ছাড় দেয়া হয়।
ওই অর্থবছর বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকার বদলে বার্ষিক ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে করহার কমানো হয়। এর পর থেকে তা অপিরবর্তিত রাখা হয়।
গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আরও বাড়ানো উচিত ছিল। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশে অনেকেরই কর দেয়ার সামর্থ্য আছে । তাদের বেশির ভাগই এখনও করের নেটে নেই। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।’
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবারের বাজেটে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতো অর্থাৎ ৩ লাখ রুপি বহাল রাখা হয়েছে। ভারতে মোট জনসংখ্যার ৪ শতাংশ মানুষ আয়কর দেন। আর বাংলাদেশে মাত্র ১ শতাংশ।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা কয়েক বছরের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, যাতে করদাতা আগাম তার হিসাব সহজেই করতে পারেন।
বাংলাদেশে জোট সরকারের আমলে একবার তিন বছরের জন্য করমুক্ত সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা বাতিল করা হয়।
এখন নিবন্ধিত বা টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ হলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২৫ লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩ লাখ রিটার্ন আছে যাদের আয় শূন্য। তাদের কাছ থেকে কোনো কর পায় না সরকার। ফলে নিয়মিত রিটার্ন দিচ্ছেন মাত্র ২২ থেকে ২৩ লাখ।
আয় অনুযায়ী বাংলাদেশে কতজনের কর দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এনবিআর এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো জরিপ করেনি।
তবে অর্থনীতিবিদসহ আয়কর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন-চার কোটি লোকের কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও তাই মনে করেন।
আয়কর আইনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার করদাতার রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয় থাকুক আর না থাকুক, বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেই হবে। না দিলে প্রচলিত আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন:মানসম্মত সেবা দিতে না পারার কথা জানিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
যদিও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি দাবি করেছে, তাদের সেবা বিশ্বমানের চেয়ে এগিয়ে। নিষেধাজ্ঞাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে পরিস্থিতি মূল্যায়নের কথাও জানিয়েছে তারা।
বুধবার দুপুরে বিষয়টির অনুমোদনের পরে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা গ্রামীণফোনে পাঠায় বিটিআরসি।
সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘গ্রামীণফোন কোয়ালিটি সার্ভিস দিতে পারছে না। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অপারেটরটি (গ্রামীণফোন) সিম বিক্রি করতে পারবে না।’
মানসম্মত সেবা দিতে পারছে না বলতে কী বুঝাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত অভিযোগ পাচ্ছি। কল করলে কেটে যায়, ইন্টারনেট সেবাও ধীরগতির।’
এই বিষয়টি নিয়ে কোম্পানিটির সঙ্গে বারবার যোগাযোগ হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি বলেও জানান বিটিআরসি কর্মকর্তা। বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মিটিং করি, ড্রাইভ টেস্ট হয়। কিন্তু তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।’
মোবাইল ফোন সেবার মান নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ স্পষ্ট। কল ড্রপ, ইন্টারনেটের ধীরগতি নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ করে আসছেন ভোক্তারা। তবে এ নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটররা কিছু বলছেন না।
বিটিআরসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত মে পর্যন্ত গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার।
গ্রামীণের বক্তব্য
যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোন অপারেটরটি নিউজবাংলাকে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠায়
তারা বলেছে, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিকম ব্র্যান্ড গ্রামীণফোন বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আইটিইউর সেবার মানদণ্ড অনুসরণ করার পাশাপাশি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মানদণ্ড থেকেও এগিয়ে আছে।’
ধারাবাহিকভাবে নেটওয়ার্ক ও সেবার মানোন্নয়নে আমরা বিটিআরসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে জানিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরটি বলেম ‘নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া নিলামেও গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ অনুমোদিত তরঙ্গ অধিগ্রহণ করেছে জানিয়ে সংস্থাটি এও বলেছে, ‘এমতাবস্থায়, অপ্রত্যাশিত এ চিঠি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছি। আমরা মনে করি, আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে গঠনমূলক আলোচনাই হবে এ সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়।’
আরও পড়ুন:অল্প অল্প করে হলেও টানা তৃতীয় দিন সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে। তলানি থেকে দুই দিনে উঠে আসা লেনদেনও ধরে রেখেছে তার অবস্থান।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে ঝিমুতে থাকা পুঁজিবাজারে বাজেট পাসের আগে আগে কিছুটা হলেও প্রাণ ফেরার চিত্র দেখা যাচ্ছে।
প্রকৌশল ও বস্ত্র খাতের শেয়ারে এদিন আগ্রহ ছিল বেশি। লেনদেনের ৩০ দশমিক ৬২ শতাংশই হয়েছে এই দুই খাতে। আগের দিনও সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল বস্ত্র খাতে।
বেশ কিছুদিন পর ব্যাংক খাতে বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় বস্ত্র খাতও বেশ ভালো করেছে। প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতেও বেশির ভাগ কোম্পানির দর বেড়েছে।
দর বাড়ার শীর্ষে আবার স্বল্প মূলধনি বা দুর্বল কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে। অন্যদিকে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে লেনদেন দেখা গেছে কম।
আবারও বিপুলসংখ্যক কোম্পানির শেয়ার দিনের দরপতনের সর্বনিম্ন সীমা ছুঁয়ে ফেলার পর ক্রেতাশূন্য হয়ে যায়। এর মধ্যে পাঁচ বছর পর উৎপাদন শুরু করার ছয় মাস পর তেল বাজারজাত করার ঘোষণা দেয়া এমারেল্ড অয়েলও ছিল।
আগের দিন রাজধানীতে অনুষ্ঠান করে ধানের কুঁড়ার তেল স্পন্দন বাজারজাত করার পাশাপাশি ছয় মাসেই ব্রেক ইভেনে অর্থাৎ না লাভ, না লোকসানে চলে আসার ঘোষণা দেয় কোম্পানিটি। এতে দিনের শুরুতে শেয়ারদর কিছুটা বাড়লেও শেষ পর্যন্ত দর হারিয়ে শেষ করে লেনদেন।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ২৬ পয়েন্ট দরপতনের পাশাপাশি লেনদেন নেমে আসে ৬০০ কোটি টাকার নিচে। সেদিন পর্যন্ত টানা ছয় কর্মদিবস লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমে যায়। তবে সোমবার বিকেলে হঠাৎ করে যে ক্রয় চাপ দেখা দেয়, পর দিনও তা অব্যাহত থাকে। সেদিন লেনদেন ছাড়ায় ৮১৮ কোটি টাকা।
বুধবার পুঁজিবাজারে সূচকের টানাটানি লক্ষ্য করা গেছে। লেনদেনের শুরুতেই সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৯ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েছিল। আগের দুই দিনের চিত্রের কারণে সে সময় লেনদেন নিয়ে আশাবাদ তৈরি হয়। কিন্তু এর পরের এক ঘণ্টায় পড়ে সূচক আগের দিনের অবস্থানে নেমে আসে। এরপর আবার ওঠানামা করতে করতে বেলা শেষে আগের দিনের চেয়ে ৭ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন।
বেলা শেষে লেনদেন হয়েছে ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৮১৮ কেটি ৮২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
দিন শেষে বেড়েছে ১৫৭টির কোম্পানির দর, বেড়েছে ১৭২টির দর, ৫২টির দর ছিল অপরিবর্তিত।
মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘অনেক কোম্পানির অর্থবছর চলতি মাসেই শেষ হবে, নতুন বছর শুরু হবে দুদিন পর থেকে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পরে পছন্দের শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন বিনিয়োগকারীরা। এতে লেনদেন বাড়বে।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধি যেন থামছেই না পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। ৮ জুন লেনদেন শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা ও এর কাছাকাছি পর্যন্ত।
৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ দর বেড়ে ৪০ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে প্রতিটি শেয়ার। এক হাজার ৬৪২ বারে ৫৫ হাজার ৩১০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ওই দামে।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড। দর ২ টাকা বা ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে হাতবদল হয়েছে ২২ টাকা ৮০ পয়সায়। শেয়ারটির দর প্রায়ই ওঠানামা করতে দেখা যায়। তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দর ছিল ২২ মে, ১৯ টাকা ৬০ পয়সা। আগের বছরগুলোর তুলনায় গত দুই বছরের শেয়ার প্রতি আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যার কারণে কমেছে লভ্যাংশের পরিমাণ।
এর পরেই দর বেড়েছে এমবি ফার্মা লিমিটেডের। ৪২ টাকা ৯০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৫৩৩ টাকা ৯০ পয়সায়।
১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল মূলধনি কোম্পানিটি ২০২১ সালে শেয়ার প্রতি ৫ টাকার বেশি লোকসান দেয়ার পর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি বিনিয়োগকারীরা।
এ ছাড়াও দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে পেপার প্রসেসিং, লোকসানি ইমাম বাটন, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কস, আজিজ পাইপস, সোনালী পেপার ও বিডি মনোস্পুল।
দর পতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৮ টাকা ৮০ পয়সায়। ৫৪ বারে ১২ হাজার ১৬৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৯ লাখ টাকা।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন আপডেট করা নেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। তবে ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ ছাড়া আর কোনো বছর নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেনি কোম্পানিটি। চলতি বছরের শুরু থেকেই দর পতন হচ্ছে কোম্পানির শেয়ারের।
জনতা ইন্স্যুরেন্স তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শেয়ারটির দর ৭০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে ৩৪ টাকা ৬০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। ৭ জুন থেকে ১৪ কর্মদিবস দর কমল শেয়ারটির। যদিও গত পাঁচ বছর ধারাবাহিতভাবে শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে।
দেশ গার্মেন্টস দর পতনের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। ৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে শেয়ারটি সর্বশেষ ১৬৩ টাকা ৩০ পয়সা লেনদেন হয়।
দর পতনের শীর্ষ দশের বাকিগুলো হলো: সাভার রিফ্যাক্টরিজ, বঙ্গজ, ফরচুন সুজ, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, রুপালী ইন্স্যুরেন্স, জেনেক্স ইনফোসিস ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স।
সূচক বাড়াল যারা
সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। দর কোম্পানিটির ২ দশমিক ৭২ শতাংশ দর বেড়েছে।
ট্রাস্ট ব্যাংকের দর ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট।
সোনালী পেপার সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা, ইবিএল, এনআরবিসি ব্যাংক, রেনাটা, ম্যারিকো, যমুনা অয়েল ও পূবালী ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট সূচক কমেছে গ্রামীণফোনের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমিয়েছে বিকন ফার্মা। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
বেক্সিমকোর দর শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বার্জার পেইন্টস, বেক্সিমকো ফার্মা, আইসিবি, বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, র্যাক সিরামিকস, আইপিডিসি ও পাওয়ার গ্রিডের দরপতনে সূচক কিছুটা কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৩১ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:বন্ধ হওয়ার পাঁচ বছর পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে আবার বাজারে ফিরছে এমারেল্ড অয়েলের ধানের কুঁড়ার তেল ‘স্পন্দন’।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্পন্দন রাইস ব্র্যান অয়েলের নতুন করে মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জাপানি বিনিয়োগে পরিচালিত মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শেরপুরের কারখানাটিতে উৎপাদন শুরু হয়। গত ছয় মাসে ৪৫ কোটি টাকার তেল বাজারজাত করা হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানিটি না লাভ-না লোকসানে চলে এসেছে।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এমারেল্ড অয়েলের দুটি প্রোডাকশন ইউনিট আছে। এর একটির ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করার ক্ষমতা ১৮০ টন, অপরটির ক্ষমতা ১৫০ টন।
‘ইউনিট দুটির দৈনিক মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩০ টন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে শুধু ১৮০ টনের ইউনিটটি সচল আছে। এই ইউনিটে ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করে ৩৫ টনের মতো অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। এখান থেকে দৈনিক পরিশোধিত তেল পাওয়া যায় প্রায় ২৬ টন। এ সক্ষমতা নিয়ে আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৬ টন তেল বাজারজাত করতে পারব।’
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৬ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিনোরি বাংলাদেশ কোম্পানিটির ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসে।
উৎপাদন শুরুর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ব্রেক ইভেনে (আয় ও ব্যয় সমান) পর্যায়ে চলে এসেছেন তারা। তবে গ্যাসসংকটে পুরো উৎপাদনক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছেন না। সেটি করা গেলে শিগগিরই শেয়ারধারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব বন্ধ কোম্পানিতে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছে তার মধ্যে এমারেল্ড তৃতীয়, যেগুলো উৎপাদনে চলে এসেছে। এর আগে আলহাজ টেক্সটাইল ও রিংসাইন টেক্সটাইল উৎপাদন শুরু করে।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলও উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ফ্যামিলে টেক্স বন্ধ-এমন খবরে বোর্ড পুনর্গঠন করা হলেও নতুন বোর্ড গিয়ে দেখেছে উৎপাদন আসলে চলছে। আর যার তত্ত্বাবধায়কে উৎপাদন চলছে, তাকে দিয়েই কোম্পানিতে প্রাণ ফেরানোর পক্ষে তারা।
এমারেল্ডের আয়োজনে বিনিয়োগকারীদের মুনাফার আশ্বাস দেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো এটিকে একটি লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করা এবং বছরের এবং বছরের শেষে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করা।’
দেশের ভোজ্যতেলের সংকট নিরসনে স্পন্দন ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এমারেল্ড এমডি। সেই সঙ্গে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের দুটি বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রথমটি হলো গ্যাসের সংকট। দ্বিতীয়টি ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল। কোম্পানিটি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিতাস গ্যাসের বকেয়া ছিল ৩২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২১ সালে তিতাস গ্যাস লাইন চার্জসহ এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা বকেয়া বিলের একটি স্টেটমেন্ট দেয়। এ টাকার পুরোটাই শোধ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএসইসি কমিশনার রুমানা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটি বন্ধ কোম্পানি পুনরায় চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি ভালো করছে, এবং কোম্পানির যে লক্ষ্য সেটি অর্জনের মধ্যে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কমিশন থেকে আমাদের বলা হলো, কিছু করার জন্য। মিনোরির মামুন মিয়া এলেন। তখন আমরা বললাম, লেটস স্টার্ট।
‘এমডি বলে গেছেন, লভ্যাংশ দেবেন। আমরা আশা করি হবে। এই কোম্পানির কিছুই ছিল না। ২০২২ জানুয়ারি প্রডাকশন শুরু করে ৪৫ কোটি টাকার মতো তেল বাজারজাত করেছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর নিয়ে আসবে। স্পন্দন পুঁজিবাজারের স্পন্দন ফিরিয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করি।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এমারেল্ড দেশের বাজারের পাশাপাশি দেশের বাইরেও তেল পাঠাবে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বিএসইসি কর্মকর্তা বলেন, ‘রপ্তানি করলে আনকনভেনশনাল খাত থেকে কারেন্সি আসবে। যোগ্য ডিরেক্টর আছেন। শেয়ার হোল্ডার ডিরেক্টররাও পরিশ্রম করছেন। কোম্পানি সফল হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
ল্যাবএইড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল খাদ্য তত্ত্ববিদ নুসরাত জাহান দীপা, ল্যাবএইড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিয়াক বিভাগের লোকমান হোসেন, এমারেল্ড অয়েলের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ও মিনোরি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মিয়া মামুনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমারেল্ড অয়েল ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হয় এবং ২০১১ সালে স্পন্দন-ব্র্যান্ডেড রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন শুরু করে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।
২০১৬ সালে এমারেল্ড অয়েল ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা লাভ করে এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ওই বছরই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
লোকসান এবং কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করার কারণে কোম্পানিটির শেয়ার ২০১৮ সাল থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অধীনে লেনদেন হচ্ছে।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে নতুন দুটি মিউচুয়াল ফান্ডের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন- বিএসইসি। এর একটি মেয়াদি ও আরেকটি বেমেয়াদি।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৮২৯তম কমিশন বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
অনুমোদন করা ‘আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড’ নামের মেয়াদি এই ফান্ডের প্রাথমিক আকার ১০০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া বেমেয়াদি বা ওপেন এন্ড মিউচুয়াল ফান্ড আনছে এজ এএমসি লিমিটেড, যার আকার হবে ২৫ কোটি টাকা।
গোল্ডেন জুবিলি মিউচুয়াল ফান্ড
আলোচিত ফান্ডটির উদ্যোক্তা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) ও আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড (আইসিবি-এএমসিএল)।
ফান্ডটিতে সিএমএসএফ ৫০ কোটি এবং আইসিবি এএমসিএল ২০ কোটি টাকার জোগান দিয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (আইসিবি) প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ৫ কোটি টাকার ইউনিট কিনেছে। বাকি ২৫ কোটি টাকার ইউনিট সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা হয়েছে।
ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। এর ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। আর কাস্টোডিয়ানের দায়িত্বে থাকবে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।
এজ আল-আমিন শরিয়াহ কনজ্যুমার ফান্ড
বেমেয়াদি বা ওপেন এন্ড ‘এজ আল-আমিন শরিয়াহ কনজ্যুমার ফান্ড’ নামের ফান্ডটির প্রসপেক্টাস অনুমোদন করেছে বিএসইসি।
আলোচিত ফান্ডটির প্রাথমিক আকার হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা। এতে উদ্যোক্তা এজ এএমসি লিমিটেড ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে, যা ফান্ডের মোট আকারের (২৫ কোটি) ১০ শতাংশ। বাকি ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। এই ফান্ডের প্রতি ইউনিটের মূল্য হবে ১০ টাকা।
ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে এর উদ্যোক্তা এজ এএমসি লিমিটেড। ট্রাস্টি থাকছে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এই ফান্ডেরও কাস্টোডিয়ানের দায়িত্বে থাকবে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।
আরও পড়ুন:আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পাশের আগে আগে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়ছে। সেই সঙ্গে টানা দুই দিন বাড়ল সাধারণ সূচকও।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার ২৬ পয়েন্ট দরপতনের পাশাপাশি লেনদেন নেমে আসে ছয় শ কোটি টাকার নিচে। সেদিন পর্যন্ত টানা ছয় কর্মদিবস লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমে যায়। তবে সোমবার বিকেলে হঠাৎ করে যে ক্রয় চাপ দেখা দেয়, পর দিনও তা অব্যাহত থাকে।
মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে লেনদেন ছাড়ায় ৮১৮ কোটি ৮২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আগের দিন যা ছিল ৭০০ কোটি ৭৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুই দিনেই লেনদেন বেড়েছে দুই শ কোটি টাকার বেশি।
দিন শেষে ১৯৯টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির পর ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্সে যোগ হয়েছে ২২ পয়েন্ট, আগের দিন বেড়েছিল ১৯ পয়েন্ট।
গত তিন সপ্তাহ ধরেই দুর্বল কোম্পানির দর বৃদ্ধির যে প্রবণতা দেখা গেছে, সেখান থেকে অবশ্য বের হতে পারেনি পুঁজিবাজার। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিই লোকসানি, যেগুলোর লভ্যাংশের ইতিহাস কোনোভাবেই আশাপ্রদ নয়।
পুঁজিবাজারে গত সেপ্টেম্বর থেকে মন্দার মধ্যে গত ৯ জুন বাজেট প্রস্তাবের আগে আগে বাজারে শেয়ারদর ও সূচক এবং লেনদেন বাড়তে থাকে। গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া সংশোধন, এরপর ইউক্রেনে রুশ হামলা, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মনস্তাত্ত্বিক চাপ কাটিয়ে উঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ১৯ বছর পর বদলির খবর আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল নানা সিদ্ধান্তের পেছনে তার ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ না রাখার ঘটনায় ছড়ায় হতাশা। কমপক্ষে ১০ শতাংশ শেয়ার ছেড়েছে, এমন কোম্পানির করপোরেট কর ২ শতাংশ কমানো ছাড়া পুঁজিবাজার নিয়ে আর কোনো কথাই বলেননি অর্থমন্ত্রী। আবার এই সুবিধা ব্যাংক, বিমা, আর্থিক খাত, টেলিযোগাযোগ ও তামাক কোম্পানি পাবে না।
বাজেট পেশের পর টানা দরপতনের মধ্যেও ১৬ জুন পর্যন্ত লেনদেন বাড়ছিল। সেদিন একমাস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়।
কিন্তু দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির পর পরের কর্মদিবস ১৯ জুন থেকে লেনদেনে ক্রমাগত ভাটা পড়তে থাকে। এর মথ্যে গত রোববার তা নেমে আসে ৫৯৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজারে। গত ২৬ মের পর এত কম লেনদেন কখনও হয়নি।
পর দিনই লেনদেনের গতি ছিল কম। তবে বেলা দুইটা থেকে হঠাৎ দেখা দেয় ক্রয়চাপ। শেষ আধা ঘণ্টায় দুই শ কোটি টাকার মতো শেয়ার হাতবদল হয়।
পরদিন দিনভর বাজার ছিল ইতিবাচক। প্রথম ১৮ মিনিটেই সূচক বাড়ে ৩০ পয়েন্ট। এরপর উঠানামা করতে করতে লেনদেন এগিয়ে যায়। লেনদেন শেষ হওয়ার একেবারে আগ মুহূর্তেও তা আগের দিনের চেয় ৩১ পয়েন্ট বেশি ছিল। তবে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে সেখান থেকে কিছুটা কমে শেষ হয় লেনদেন।
মঙ্গলবারের লেনদেন নিয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিদের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, 'জুনের এই সময়টাতে আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি যে, অনেক ফান্ড ইনজেক্ট হয়। জুন ক্লোজিংকে টার্গেট করে বিনিয়োগকারীরা কিছু কোম্পানি বিনিয়োগের জন্য বেছে নেন। ফলে প্রতি বছরই কিছু ফান্ড ইনভেস্ট হয় পুঁজিবাজারে, যার কারণে লেনদেন বাড়ছে। তবে এই বছর তুলনামূলক ফান্ডের ইনজেকশন কম।'
দুর্বল কোম্পানিগুলোর ধারাবাহিক দর বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, 'বাজারে মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর মুভমেন্ট কম হচ্ছে, যার কারণে দুর্বল কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর বাড়ছে। মৌলভিত্তির শেয়ার যে সব বিনিয়োগকারী ধরে রেখেছেন, তাদের হয়তো প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, আরও অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন।'
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজেট ভাবনা খুব একটা আছে বলেও মনে করেন না মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু থাকে না। ফলে এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি ভাবছেন বলে মনে হয় না।’
দরপতনের শীর্ষে আবার লোকসানি কোম্পানি
গত তিন সপ্তাহ ধরে লোকসানি কোম্পানির দর বৃদ্ধির যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তার আরও একটি নমুনা দেখা গেল এদিন।
সবচেয়ে বেশি ৯.৯৪ শতাংশ দর বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। লেনেদেন শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই দর বেড়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯.৮৭ শতাংশ দর বেড়েছে ২০১০ সালের পর থেকে কখনও লভ্যাংশ দিতে না পারা ইমাম বাটন।
লোকসানি খান ব্রাদার্সের দর ৯.৭৫ শতাংশ, বন্ধ থাকা কোম্পানি অ্যাপোলো ইস্পাত ৭.৯৫ শতাংশ, ইস্টার্ন ক্যাবলের দর ৬.০৭ শতাংশ এবং অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজের দর বেড়েছে ৫.৩৫ শতাংশ।
এর বাইরে ইয়ানিক পলিমারের দর ৯.৭৬ শতাংশ, দেশবন্ধু পলিমারের ৬.০১ শতাংশ, অ্যামবি ফার্মার দর ৫.৯৫ শতাংশ এবং রূপালী লাইফের দর বেড়েছে ৪.৯৮ শতাংশ।
খাতওয়ারি হিসাব করলে সবচেয়ে ভালো দিন গেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে চারটির আর দুটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
ভালো দিন গেছে প্রকৌশল খাতেও। এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির। কমেছে ৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৩টির দর।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৩টির, কমেছে সাতটির আর অপরিবর্তিত থাকে একটির দর।
বস্ত্র খাতে দর বেড়েছে ৩২টি কোম্পানির, কমেছে ১৫টির, অপরিবর্তিত থাকে ১২টির।
ব্যাংক, আর্থিক ও খাদ্য খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। আগের দিন সাধারণ বিমা খাত চাঙা থাকলেও এদিন এই খাতে দেখা গেছে নিম্নমুখি প্রবণতা।
সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি থেকে দর পতনের সর্বোচ্চ সীমায়
এই তালিকার শীর্ষে ছিল আর্থিক খাতের আইপিডিসি, যার দর কমেছে সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ৫৫ টাকা। কমার সুযোগ ছিল ১ টাকা ১০ পয়সা। কমেছে ততটাই।
কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ, সাভার রিফ্রাকটরিজ, এস আলম কোল্ডরোল স্টিল, নিউলাইন ক্লথিং, প্রগ্রেসিভ লাইফ, জনতা ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ফরচুন সুজ, ডেফোডিল কম্পিউটারস এবং গ্লোবাল হেভি ক্যামিকেলসের দরও কমেছে এক দিন যতটা কমা সম্ভব ততটাই।
এই ১০টির মধ্যে দুটি কয়েকটি কোম্পানি আগের দিন সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধির তালিকায় ছিল। এর মধ্যে সিএপিএমআইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৬.৮৯ সাভার রিফ্রাকটরিজের দর আগের দিন ৬.১৯ শতাংশ বেড়েছিল।
অন্যদিকে লোকসানি গ্লোবাল হেভি ক্যামিকেলসের দর গত কয়েক দিন ধরেই বাড়ছিল। গত ২১ জুন শেয়ারদর ছিল ৩১ টাকা ১০ পয়সা। তিন কর্মদিবসে বেড়ে ৩৭ টাকা ৭০ পয়সা হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন:টানা পাঁচ কর্মদিবস লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমার পর একই প্রবণতা ছিল সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার। লেনদেন শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা বাকি থাকতে কোনো রকমে টেনেটুনে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়ায় লেনদেন। কিন্তু পরের আধা ঘণ্টায় পাল্টে যায় পুরো চিত্র।
শেষ আধা ঘণ্টায় ২০০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেনের পাশাপাশি দিনভর সূচকের টানাটানির মধ্যে ১ ঘণ্টা টানা বাড়ল সূচক।
বেলা দেড়টার সময়ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩ পয়েন্ট কম ছিল এবং তা ক্রমেই নিচে নামছিল। কিন্তু সেখান থেকে শেষ ১ ঘণ্টায় সূচক বাড়ে ২২ পয়েন্ট। আর আগের দিনের চেয়ে ১৯ পয়েন্ট যোগ করে শেষ হয় লেনদেন।
বস্ত্র, সাধারণ বিমা, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ারধারীরা হাসিমুখে শেষ করেছেন লেনদেন। শেষ পর্যন্ত যে ২৩১টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে, তার মধ্যে একটি বড় অংশই এই তিন খাতের।
বস্ত্র খাতে ৫৯টি কোম্পানির মধ্যে বাড়ে ৪৭টির দর, অপরিবর্তিত থাকে সাতটির দর, কমে পাঁচটির।
সাধারণ বিমা খাতের ৪১টি কোম্পানির মধ্যে বাড়ে ৩৮টির দর, কমে দুটির আর একটির দর থাকে অপরিবর্তিত।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে বাড়ে ১৯টির দর। অপরিবর্তিত থাকে চারটির দর আর দর হারায় আটটি কোম্পানি।
বেশ কয়েক দিন চাপে থাকার পর ব্যাংক খাতেও কিছুটা হাঁফ ছেড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এই খাতে তিনটি কোম্পানির দর হারানোর বিপরীতে বাড়ে ১৭টি। তবে দর বৃদ্ধির হার খুবই কম।
আর্থিক খাতে পাঁচটির দর হারানোর বিপরীতে বেড়েছে ১১টির দর। এ ছাড়া প্রধান বাকি সব খাতে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা।
এদিন প্রবণতা বলতে আবার দুর্বল ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে অনেকটাই। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টানা ছয় বছর লোকসান দেয়ার পর চলতি বছর সামান্য মুনাফা দেখানো অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির পাঁচটিই হয় লোকসানি, ৯ টানা লোকসানের মধ্যে সামান্য মুনাফার মুখ দেখা কোম্পানি, যেগুলোর লভ্যাংশের ইতিহাস বেশ হতাশাজনক।
দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ৭০০ কোটি ৭৬ লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার, যা আগের দিনের চেয়ে ১০৬ কোটি ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা বেশি।
গত ১৬ জুন লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর পুঁজিবাজারে আশার সঞ্চার হলেও এর পরদিন থেকে প্রতিদিনই লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমেছে।
দিনভর দেখা গেছে উত্থান-পতন। প্রথম ৪৮ মিনিটেই আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১০ পয়েন্ট সূচক হ্রাস পায়। পরবর্তী ২ ঘণ্টায় হারানো দর ফিরে পেতে থাকে শেয়ারগুলো। দুপুর ১২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত সময়ে সূচকে যোগ হয় ৩১ পয়েন্ট। তবে সেটা স্থায়ী হয়নি। আবারও দরপতনে সূচক থেকে বেলা দেড়টার মধ্যে ৩ পয়েন্ট হারিয়ে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত ক্রয় চাপে কিছুটা উত্থানে শেষ হয়েছে লেনদেন।
ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা-সিইও সুমন দাস বলেন, ‘ভলিউমটা অনেক কম হয়ে যাচ্ছে, লেনদেন ৮০০ কোটির নিচে ঘোরাফেরা করছে। প্রফিট গেইন, অ্যাডজাস্টমেন্ট এবং মানি মার্কেট অনেক কঠিন হয়ে যাওয়ার কারণে এমনটা ঘটছে।’
দুর্বল কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘চাহিদা বাড়লে অনেক সময় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে। তবে ধারাবাহিক এমন দর বৃদ্ধি অবশ্যই সন্দেহজনক। এগুলোর পেছনে অনৈতিক কিছু ঘটা অস্বাভাবিক নয়। আর এমন দাম বাড়ার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও এটার পেছনে দৌড়ান।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষে আবার দুর্বল কোম্পানি
সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের। ২০১৫ সালে ৪ শতাংশ নগদ ও ৬ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশের পর আর লভ্যাংশের মুখ দেখেননি বিনিয়োগকারীরা। টানা ছয় বছর লোকসান দেয়ার পর চলতি বছর সামান্য মুনাফা দেখিয়েছে কোম্পানিটি।
গত ২১ জুন থেকে ধারাবাহিক দর বাড়ছে শেয়ারের। ওই দিন ২২ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ার আজ সর্বশেষ হাতবদল হয়েছে ২৫ টাকা ৫০ পয়সায়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়েছে পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের। এ নিয়ে টানা ১৪ কর্মদিবস দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত বাড়ল মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর। গত ৮ জুন ১০ টাকায় লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি।
রোববার ৩৩ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হওয়ার পরদিন ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ২০ পয়সা।
এর পরেই ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ দর বেড়েছে লোকসানি সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের। গত পাঁচ বছরে লোকসানে থাকলেও ২০১৯ সালে ৩ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে কিছুটা আয় দেখিয়েছে কোম্পানি।
আর্থিক সঙ্গতি ভালো না হলেও সাত মাস ধরে দর বাড়ছে সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের। গত বছরের ২২ নভেম্বর ১৬ টাকা ৭০ পয়সায় শেয়ার লেনদেনের পর কিছুটা ওঠনামা করলেও ধারাবাহিক বেড়েছে দাম।
রোববার ৪১ টাকা বেচাকেনা হওয়া শেয়ার আজকে হাতবদল হয়েছে ৪৪ টাকা ২০ পয়সায়।
প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ নিয়ে টানা চার কর্মদিবস ফান্ডটির ইউনিট দর বাড়ল। ১৭ টাকা ১০ পয়াস থেকে হাতবদল হয়েছে ১৮ টাকা ৪০ পয়সায়। ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত হলেও ২০১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিয়ে আসছে কোম্পানিটি।
দর বৃদ্ধির তালিকায় পরের স্থানেই রয়েছে আরেক মিউচ্যুয়াল ফান্ড সিএমপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড। ২০১৯ ও ২০২১ সালে মুনাফা হওয়া বিনিয়োগকারীরা যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ লভ্যাংশ পেয়েছেন। তবে মাঝে ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ৪৮ পয়সা লোকসানের কারণে ওই বছর কোনো লভ্যাংশ দেয়া হয়নি।
আগের দিনের মতো আজকেও দর বৃদ্ধির তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ। রোববার ২৩৪ টাকায় হাতবদল হওয়া শেয়ারের দর ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয়েছে ২৪৭ টাকায়।
১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনোদিন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তারপরেও অজানা কারণে শেয়ারটির দাম অনেক বেশি।
দর বৃদ্ধির তালিকার সপ্তম স্থানে থাকা রহিমা ফুডের দর ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ২৭৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে।
গত ৫ বছরের মধ্যে তিন বছরই লোকসান দিয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তনের পাশাপাশি ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানি জানায়, ট্রায়াল প্রোডাকশন শেষে কোম্পানি ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নারকেল তেল উৎপাদন ও বিপণন করবে। সঙ্গে সয়াবিন ও মাস্টার্ড অয়েল বোতলজাত ও বিপণনের কথা বলা হয়।
এরপর ৩১ মে ডিএসইর নিউজে আবার বলা হয়, ৩১ মে ট্রায়াল প্রোডাকশনের পরে কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকিং এব দেশে-বিদেশে বিপণনের জন্য বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে কোম্পানি।
এ ছাড়া প্রাইম টেক্সটাইল, জুট স্পিনার্স ও মালেক স্পিনিং মিলসের দর ৫ শতাংশের বেশি বেড়ে যথাক্রমে ৩২ টাকা ৬০ পয়সা, ১৪৪ টাকা ৫০ পয়সা এবং ৩০ টাকা ২০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে।
দর পতনের শীর্ষ ১০
এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফরচুন সুজ লিমিটেড। শেয়ারটির দর ১ টাকা ৯০ পয়সা বা ২ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ ৯৩ টাকা ৩০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। এদিন ৪৩৯ বারে কোম্পানিটির ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬৯৪টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজার মূল্য ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এমারেল্ড অয়েল লুজার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ৯০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৪৪ টাকা ৬০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা পেপার প্রসেসিং লুজারের দর ৩ টাকা ৫০ পয়সা বা ১.৯৮ শতাংশ কমেছে। শেয়ারের ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ১৭৩ টাকা ৫০ পয়সা।
দর পতনের শীর্ষ দশের অন্য কোম্পানি হলো- বিডি মনোস্পুল পেপার, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, ফাইন ফুডস, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কস ও সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
সূচক বাড়াল যারা
সবচেয়ে বেশি ৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে ওয়ালটন হাইটেক। দর কোম্পানিটির শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ দর বেড়েছে।
বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের দর ৫ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৩১ পয়েন্ট।
ব্র্যাক ব্যাংক সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ০৫ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ২ দশমিক ০৬ শতাংশ।
এ ছাড়া রেনাটা, ইউনাইটেড পাওয়ার, পূবালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইউনিক হোটেল, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস ও লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৭ পয়েন্ট সূচক কমেছে গ্রামীণফোনের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমিয়েছে বার্জার পেইন্টস। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
বিকন ফার্মার দর ১ দশমিক ১৫ শতাংশ দর কমার কারণে সূচক কমেছে ১ দশমিক ১৮ পয়েন্ট।
এ ছাড়া রবি, আইসিবি, আইপিডিসি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ফরচুন সুজের দরপতনে সূচক কিছুটা কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ১৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:ইসলামী ফাইন্যান্স উইং খোলার অনুমোদন পেয়েছে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড-এসএফআইএল।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের পরিচালক জুলকার নায়েন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
এসএফআইএলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লেখা চিঠিতে বলা হয়, “এসএফআইএলর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে 'ইসলামী ফাইন্যান্স উইং' খোলার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হলো।”
স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্সের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতেজা আহমেদ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রাহকরা এখন ইসলামী ধারার লেনদেন বেশি পছন্দ করছে। মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ সুদের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না, ইসলামী লেনদেনে আস্থা পান তারা। এজন্য আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ইসলামী ফাইন্যান্স উইং খোলার আবেদন করি।’
তিনি জানান, তাদের ৯৮ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার প্রাতিষ্ঠানিক। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ কানাডা ও আমেরিকার সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) রয়েছে। আর বাকি ২ শতাংশ ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ফলে সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা পরিধি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়। এটা আমাদের শক্তি। আমানতকারীদের আস্থা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা একটা ভালো উদাহরণ।
দেশে আর্থিক খাতের বয়স বিবেচনায় এসএফআইএল নবীন। ‘স্বচ্ছতার বন্ধন’– এই স্লোগান সামনে রেখে করোনার মধ্যে যাত্রা শুরু করে এসএফআইএল। তবে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তার পরিচালন দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও মিলেছে কাঙিক্ষত সাফল্য।
অতি সতর্কভাবে ঋণ বিতরণ করায় প্রতিষ্ঠার দেড় বছর পরেও প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত ঋণের এক টাকাও খেলাপি হয়নি।
অনুমোদন পেতে যেসব কাজ করতে হবে
ইসলামী ফাইন্যান্স উইং খোলার জন্য এসএফআইএলকে কিছু কার্যক্রম নিতে হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।
এগুলো হলো:
>> এসএফআইএলকে নিবন্ধিত সংঘ-স্মারক সংশোধনপূর্বক ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনাকে কোম্পানির অন্যতম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য হিসেবে সংযুক্ত করতে হবে;
>>কোম্পানির সংঘ-বিধি সংশোধন করে একটি স্বতন্ত্র শরীয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন করতে হবে;
>> ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ে একটি পৃথক ইসলামী অর্থায়ন বিভাগ গঠন করতে হবে;
>>কী কী আমানত, ঋণ, লিজ, বিনিয়োগ, ফাইন্যান্সিং সুবিধা প্রদান করা হবে তা সংবলিত প্রোডাক্ট পলিসি গাইডলাইন প্রণয়ন;
>>বিদ্যমান তহবিল থেকে প্রস্তাবিত ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসার পৃথক তহবিল গঠন;
>> শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি অপারেশনাল ম্যানুয়াল প্রণয়ন;
>>আমানত ও বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার হার নির্ধারণ বা হিসাবায়নের নীতিমালা প্রণয়ন;
>>ইসলামী শরীয়ারভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসার জন্য পৃথক হিসাবরক্ষণ নীতি ও পদ্ধতি গ্রহণপূর্বক পৃথক আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত;
>> বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং নীতিমালার আলোকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে;
>> ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুতি করা হয়েছে মর্মে স্বতন্ত্র শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র দাখিল;
এবং
>>নীতিগত অনুমোদন পা্ওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা পরিপালনপূর্বক 'ইসলামী ফাইন্যান্স উইং’ এর মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য