জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর এক বছর। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচনের আগের বছরের জাতীয় বাজেটে থাকে ভোটের হাওয়া। বাজেট সাজানো হয় ভোটের বিষয়টি মাথায় রেখে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার উঠছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এই বাজেট প্রস্তাবনায় এবার সেই ভোটের হাওয়ার আভাস নেই। প্রকল্প অনুমোদনে সাংসদদের তদবিরও তেমন একটা নেই। কাবিখা, টিআর কর্মসূচির জন্য বেশি বেশি বরাদ্দের দাবিও কম। রাস্তা-ঘাট, সেতু, কালভার্ট নিমার্ণের প্রস্তাব নিয়ে নেই দৌড়ঝাঁপ।
করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতি তৃতীয় বছরে পা দিয়েছে। হাল অনেকটাই ফিরেছে। কিন্তু গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
সংকট আগেও ছিল। কিন্তু গত প্রায় দেড় দশকে সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে এত বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে আর কখনো পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। রপ্তানি ছাড়া আপাতত স্বস্তির সূচক খুব একটা নেই। ফলে সংকট মোকাবিলায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থমন্ত্রী।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি ঠেকাও, ভতুর্কির চাপ সামলাও।’
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তফা কামালের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ পাঁচটি।
এক. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে রাখা।
দুই. বেকারত্ব সমাধানে কর্মসংস্থান বা চাকরির সুযোগ তৈরি করা।
তিন. আয় বা রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। কারণ রাজস্ব আদায় বাড়লে সামাজিক সুরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করা যাবে।
চার. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়া।
পাঁচ. ভতুর্কির চাপ সামলানো। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার ভতুর্কিতে বেশি বরাদ্দ থাকছে। এটি না কমালে বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।
অর্থনীতি নিয়ে এমন কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত আগামীর জন্য বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এটি বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে চতুর্থ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট।
বিকেল সাড়ে ৩টায় সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুরু করবেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় সংসদ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারি ও বিরোদী দলের সংসদ সদস্য, কূটনীতিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে সংসদ কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় সরকার প্রধান থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করে নেবেন অর্থমন্ত্রী।
প্রশ্ন হলো, কী দাওয়াই নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী, যার প্রভাবে স্থিতিশীল হবে দেশের অর্থনীতি। সহনীয় হবে মূল্যস্ফীতি। স্বস্তি ফিরবে জনসাধারণে। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে দেশবাসীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত।
জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের এটি পূর্ণাঙ্গ শেষ বাজেট। এই সরকারের মেয়াদে আরেকটি বাজেট দেয়ার সুযোগ থাকলেও তা বাস্তবায়নে সময় মিলবে ছয় মাস। ফলে এই বাজেটটি সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নতুন বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে বাজার স্থিতিশীল করা এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো। আর মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখা। কারণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে নিম্ন আয়ের মানুষের বেশি ক্ষতি হবে। এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।’
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘নিম্ন আয়ের পরিবারকে আরও বেশি নগদ সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে।’
এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম হচ্ছে- কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক ঝুঁকি থেকে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা। একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপ থেকে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো।
বাজেটের সম্ভাব্য আকার
বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, সক্ষমতা উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি পাস হয়েছে।
বাজেটের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত সামাজিক সুরক্ষা, ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা খাতে এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। এতে করে উৎপাদন, কর্মসংস্থান, আয় ও দক্ষতা বাড়বে এবং মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছবে।
জানা যায়, নতুন বাজেটে মোট রাজস্বপ্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে সিংহভাগ অর্থের জোগান দেয়া হবে।
এনবিআরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে যোগান মিলবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে কর ব্যতীত রাজস্ব থেকে আসবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে প্রাক্কলন করা হবে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবারও সম্প্রসারণমূলক (বেশি ব্যয়) বাজেট দিচ্ছে সরকার। এ জন্য বাজেটে বেশি ঘাটতি রাখা হচ্ছে।
৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই পরিকল্পনায় মোট আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে (অনুদানসহ) ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ।
অম্ভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ- এ দুটি উৎস থেকে এই ঘাটতি মেটানো হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও সংস্থার কাছ থেকে এবার ৯৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়া হবে বাজেটে অর্থায়নের জন্য।
বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে জিডিপি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে আশা করছে সরকার। অর্থনেতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হচ্ছে এবং বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামীতে এটি আরও সচল হবে। এ জন্য অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রাক্কলন করা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশ।
ব্যয়ের প্রধান খাত
বাজেট বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকা প্রধানত তিনটি খাতে খরচ করা হবে। এগুলো হলো- সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ এবং ভর্তুকি। এই তিনটি খাতে মোট বাজেটের প্রায় ৩৫ শতাংশ চলে যাবে।
সব মিলে এই তিনটি খাতে মোট ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বেতন-ভাতায় ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি, সুদ পরিশোধে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি এবং ভর্তুকি বাবদ ৮৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
যা থাকছে বাজেটে
ভাতার অংক না বাড়লেও এবার সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ছে। এখন সারাদেশে নিয়মিত মাসিক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪ লাখ। নতুন বাজেটে এই সংখ্যা আরও ১১ লাখ বাড়ানো হচ্ছে। শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বর্তমানে ১২২টি কর্মসূচি চালু আছে। এসব কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ শতাংশ। গত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা।
উৎপাদনশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার সার, রপ্তানি, জ্বালানি, খাদ্যসহ অন্যান্য খাতে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
ব্যক্তি আয়করে ছাড় মিলছে না। বিদ্যমান ৩ লাখ টাকাই অপরিবর্তিত থাকছে।
তবে বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করে ছাড় মিলছে। পোশাকসহ রপ্তানিমুখী সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট কর হার ‘অভিন্ন রেট’ ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে, যা এখন বিভিন্ন হারে আছে। এছাড়া রপ্তানির বাইরে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার কমছে। একইসঙ্গে কমছে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার। তবে ব্যাংক, বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার একই থাকছে। পোশাক খাতের উৎসে কর হার দ্বিগুণ হচ্ছে।
বহুল আলোচিত অর্থপাচার রোধে পদক্ষেপ থাকছে। যারা পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনবে তাদের ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা বৈধ করার বিশেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
শেয়ার বাজার, নগদ টাকা, জমিসহ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ আছে তা আর থাকছে না। তবে বিদেশে কারও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকলে তা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন বা দেশে নিয়ে আসার সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট কমছে।
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সাশ্রয়ী হতে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৫৬টি বিলাসপণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসছে। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ১৩৫টি পণ্যের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে।
বিভিন্ন খাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তায় বরাদ্দ কমতে পারে। বর্তমানে ৩ থেকে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয় সরকার। আবার ব্যাংক হিসাবে জমার বিপরীতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। ১ কোটি টাকার বেশি যাদের আমানত বা ঋণ আছে, তাদের বেশি পরিমাণে আবগারি শুল্ক দিতে হবে।
সব করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে বিশেষ ছাড় দেবে এনবিআর। যেসব টিআইএনধারী গত কর বছরে বা তার আগেও আয়কর রিটার্ন জমা দেননি, তারা কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়াই আগামী কর বছরে রিটার্ন দিতে পারবেন। একইসঙ্গে বেশকিছু ক্ষেত্রে সেবা নিতে রিটার্নের সঙ্গে প্রমাণপত্র জমা দেয়ার বিধান আসছে।
ব্যক্তি খাতে উপহার পাওয়া সম্পদ করমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। বর্তমানে বাবা-মা যদি সন্তানকে উপহার দেন, তাহলে সে সম্পদ আয়করমুক্ত। কিন্তু সন্তান বাবা-মাকে উপহার দিলে তার বিপরীতে আয়কর দিতে হয়। এ বিধান তুলে নেয়া হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগাম করের অর্থ রিফান্ড বা ফেরত দেয়া হচ্ছে না। সেজন্য আমদানিনির্ভর কাঁচামাল ব্যবহারকারী ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানের আগাম করের বিধান প্রত্যাহার করা হতে পারে। বিশেষ করে সিমেন্ট, সিরামিক, বেভারেজ, ভোজ্যতেল, গ্যাস, পেট্রোলিয়ামসহ বিভিন্ন খাতের জন্য এ সুবিধা দেয়া হতে পারে।
যেসব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে ভ্যাট নিবন্ধনের উপযুক্ত, তাদের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে। ভ্যাটের জরিমানা নেয়া হবে সর্বোচ্চ ২৪ মাসের। অনলাইনে ভ্যাটের রিটার্ন দাখিল, ইএফডি মেশিন ব্যবহার উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ থাকছে বাজেটে।
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হলেন ফারুক আহমেদ।
ট্রাস্টি বোর্ডের ৬৬তম সভায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফারুক আহমেদ ২৭ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিপ্রাপ্ত ফারুক আহমেদের উন্নয়ন খাতে রয়েছে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা।
তিনি এক সময় ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন এবং ঢাকায় বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেনেভাভিত্তিক গ্যাভি, দ্যা ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (এঅঠও)-এর বোর্ড সদস্য ছিলেন, এছাড়া তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ফারুক আহমেদ সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি) এন্টারপ্রাইজের পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য। তিনি বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ওয়ার্কিং গ্রুপেরও একজন সদস্য।
ফারুক আহমেদ ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে আরডিআরএস-এর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
আরডিআরএস বিশ্বাস করে, ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে সংস্থাটি দেশজুড়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখতে এবং এ সম্পর্কিত কার্যক্রমকে বেগবান করতে সক্ষম হবে। প্রেস রিলিজ
উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্বর্ণের দাম। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে ৬৩০ টাকা। সে হিসাবে স্বর্ণের ভরি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। আগের দিন বুধবার তা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৯১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকে স্বর্ণের নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগে চলতি এপ্রিল মাসের ৬, ৮ ও ১৮ তারিখ তিন দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ভালো মানের স্বর্ণের ভরিতে ৬ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, ৮ এপ্রিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা ও ১৮ এপ্রিল দুই হাজার ৬৫ টাকা বাড়ানো হয়। মাঝে ২০ এপ্রিল ভরিতে ৮৪০ টাকা দাম কমানোর পরদিন ২১ এপ্রিল আবার ৬৩০ টাকা বাড়ায় বাজুস।
এবার শুরু হয় দাম কমানোর পালা। সবশেষ দাম বাড়ানোর দু’দিন পর ২৩ এপ্রিল ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে তিন হাজার ১৩৮ টাকা ও ২৪ এপ্রিল দু’হাজার ৯৯ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। আর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ভরিতে ৬৩০ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ টানা তিন দিনে স্বর্ণের দাম ভরিতে কমেছে পাঁচ হাজার ৮৬৮ টাকা।
সোনার দামে এমন উত্থান-পতনের কারণ জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন নতুন পদ্ধতি বা পলিসি অনুসরণ করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করি। সেটি হচ্ছে বিশ্ব স্বীকৃত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল পলিসি।
‘এতদিন আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গোল্ডের দাম নির্ধারণ করতাম। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে যখন স্বর্ণের দাম কমত তখন আমরা কমাতাম। আর যখন বাড়ত তখন বাড়াতাম।’
তিরি আরও বলেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্বর্ণের সবচেয়ে বড় বাজার তাঁতীবাজারের বুলিয়ান মার্কেট ফলো করে দর নির্ধারণ করি। এই বাজারে স্বর্ণের দাম ঘণ্টায় ঘণ্টায় উঠা-নামা করে। সেটা অনুসরণ করে আমরা নতুন দর নির্ধারণ করে থাকি। সেক্ষেত্রে দিনে দু’বারও গোল্ডের দাম বাড়ানো-কমানো হতে পারে।’
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম একদিনের ব্যবধানে আরেক দফা কমেছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে দু’হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বলা হয়েছে,
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।
বাজুস এর আগের দিন মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে ওই দিন থেকে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করে। সে হিসাবে দুদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ৫ হাজার ২৭৭ টাকা।
নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ১৩৯ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯৯৫ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ হাজার ৭১৪ টাকা কমিয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৭৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা।
অবশ্য স্বর্ণালঙ্কার কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের এর চেয়ে বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সে সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ টাকা।
স্বর্ণের দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রূপার ভরি ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে গত বছর প্রথমবারের মতো ল্যাপটপ নিয়ে আসে ট্রেন্ডি প্রযুক্তি ব্র্যান্ড ইনফিনিক্স। ইনবুক ওয়াইটু প্লাস নামের ল্যাপটপটি দিচ্ছে চমৎকার ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স ও সাশ্রয়ী দামের প্রতিশ্রুতি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষার্থী ও এক্সিকিউটিভদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে এ ল্যাপটপ।
দেখে নেওয়া যাক কী আছে ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস ল্যাপটপটিতে। এর ফিচার, পারফরম্যান্স ও ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাই বা কেমন।
ডিজাইন ও গঠন
স্লিক ও হালকা ডিজাইনের ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাস সহজেই সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। শিক্ষার্থী ও ব্যস্ত এক্সিকিউটিভদের জন্য এ ল্যাপটপ যথার্থ। এর পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক মেটালিক ডিজাইন স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে দেয় প্রিমিয়াম অনুভূতি। স্লিক প্রোফাইল ও প্রাণবন্ত ডিসপ্লের সঙ্গে যুক্ত সরু বেজেল ল্যাপটপটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। ফলে বাজারের একই ধরনের দামি ল্যাপটপের সমকক্ষ হয়ে ওঠে ওয়াইটু প্লাস।
তা ছাড়া এর মসৃণ এজি গ্লাস টাচ প্যানেলের কারণে সিল্কি-স্মুথ ও স্থায়ী টাচের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। ১.৫ মিলিমিটার কি ট্র্যাভেল এবং ব্যাকলাইটিংযুক্ত রেসপনসিভ কি-বোর্ড টাইপিংকে করে তোলে সহজ ও আরামদায়ক। তাই কম আলোতেও টাইপ করতে কোনো সমস্যা হয় না।
পারফরম্যান্স ও প্রোডাক্টিভিটি
১১তম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর ও ৮ জিবি র্যাম রয়েছে ইনফিনিক্স ওয়াইটু প্লাসে। স্টোরেজের প্রয়োজন মেটাতে এতে আছে ৫১২ জিবি এনভিএমই পিসিআইই এসএসডি। প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার, ওয়েব ব্রাউজ করা কিংবা কনটেন্ট স্ট্রিম করাসহ সব ধরনের উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালানো যায় খুব সহজেই। এর ইন্টিগ্রেটেড ইন্টেল ইউএইচডি গ্রাফিকস সাধারণ গেমিং ও মাল্টিমিডিয়া এডিটিংয়ের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় গ্রাফিকস পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। উইন্ডোজ ১১ পরিচালিত ইনফিনিক্স ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের অপারেটিং সিস্টেম সবার পরিচিত ও ব্যবহার করা সহজ।
ডিসপ্লে ও মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতা
উজ্জ্বল রং ও ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে স্পষ্ট ও পরিষ্কার ভিজ্যুয়াল দেয় ১৫.৬ ইঞ্চি ফুল এইচডি আইপিএস ডিসপ্লেযুক্ত ইনবুক ওয়াইটু প্লাস। ৮৫ শতাংশ স্ক্রিন-টু-বডি রেশিওর সঙ্গে চমৎকার মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতার জন্য ডিসপ্লেটি দারুণ। কাজেই আপনার প্রিয় নেটফ্লিক্স সিরিজ দেখা কিংবা ফটো এডিট করা— সবই হবে স্বাচ্ছন্দ্যে।
ল্যাপটপটিতে আছে ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ ও এআই নয়েজ ক্যান্সেলেশন প্রযুক্তিযুক্ত ১ হাজার ৮০ পিক্সেলের ফুল এইচডি+ ক্যামেরা। এর ফলে ভিডিও কলের অভিজ্ঞতা হবে আরও উন্নত।
ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং
ইনবুক ওয়াইটু প্লাসের ৫০ ওয়াট-আওয়ার ব্যাটারি ক্যাপাসিটি কোনো চার্জ ছাড়াই প্রতিদিনের কাজে আট ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এর ৪৫ ওয়াট টাইপ-সি পোর্টযুক্ত চার্জারে ডিভাইসটি দ্রুত ও সহজেই চার্জ করা যায়। ফলে ভারী চার্জার বহনের প্রয়োজন হয় না।
দাম
ল্যাপটপটির বর্তমান বাজারমূল্য ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকা। অনুমোদিত ইনফিনিক্স রিটেইলার থেকে ল্যাপটপটি কেনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য