জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর এক বছর। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচনের আগের বছরের জাতীয় বাজেটে থাকে ভোটের হাওয়া। বাজেট সাজানো হয় ভোটের বিষয়টি মাথায় রেখে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার উঠছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এই বাজেট প্রস্তাবনায় এবার সেই ভোটের হাওয়ার আভাস নেই। প্রকল্প অনুমোদনে সাংসদদের তদবিরও তেমন একটা নেই। কাবিখা, টিআর কর্মসূচির জন্য বেশি বেশি বরাদ্দের দাবিও কম। রাস্তা-ঘাট, সেতু, কালভার্ট নিমার্ণের প্রস্তাব নিয়ে নেই দৌড়ঝাঁপ।
করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতি তৃতীয় বছরে পা দিয়েছে। হাল অনেকটাই ফিরেছে। কিন্তু গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে ফের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
সংকট আগেও ছিল। কিন্তু গত প্রায় দেড় দশকে সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে এত বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে আর কখনো পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। রপ্তানি ছাড়া আপাতত স্বস্তির সূচক খুব একটা নেই। ফলে সংকট মোকাবিলায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থমন্ত্রী।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- মূল্যস্ফীতি ঠেকাও, ভতুর্কির চাপ সামলাও।’
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তফা কামালের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ পাঁচটি।
এক. মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে রাখা।
দুই. বেকারত্ব সমাধানে কর্মসংস্থান বা চাকরির সুযোগ তৈরি করা।
তিন. আয় বা রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। কারণ রাজস্ব আদায় বাড়লে সামাজিক সুরক্ষায় আরও বেশি ব্যয় করা যাবে।
চার. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়া।
পাঁচ. ভতুর্কির চাপ সামলানো। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার ভতুর্কিতে বেশি বরাদ্দ থাকছে। এটি না কমালে বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।
অর্থনীতি নিয়ে এমন কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত আগামীর জন্য বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এটি বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে চতুর্থ বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট।
বিকেল সাড়ে ৩টায় সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুরু করবেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় সংসদ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকারি ও বিরোদী দলের সংসদ সদস্য, কূটনীতিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে সংসদ কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় সরকার প্রধান থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করে নেবেন অর্থমন্ত্রী।
প্রশ্ন হলো, কী দাওয়াই নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী, যার প্রভাবে স্থিতিশীল হবে দেশের অর্থনীতি। সহনীয় হবে মূল্যস্ফীতি। স্বস্তি ফিরবে জনসাধারণে। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে দেশবাসীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত।
জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের এটি পূর্ণাঙ্গ শেষ বাজেট। এই সরকারের মেয়াদে আরেকটি বাজেট দেয়ার সুযোগ থাকলেও তা বাস্তবায়নে সময় মিলবে ছয় মাস। ফলে এই বাজেটটি সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নতুন বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রবৃদ্ধির পেছনে না ছুটে বাজার স্থিতিশীল করা এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো। আর মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখা। কারণ অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে নিম্ন আয়ের মানুষের বেশি ক্ষতি হবে। এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।’
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘নিম্ন আয়ের পরিবারকে আরও বেশি নগদ সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে।’
এবারের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম হচ্ছে- কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক ঝুঁকি থেকে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা। একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপ থেকে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো।
বাজেটের সম্ভাব্য আকার
বাজেট প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, সক্ষমতা উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি পাস হয়েছে।
বাজেটের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত সামাজিক সুরক্ষা, ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা খাতে এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। এতে করে উৎপাদন, কর্মসংস্থান, আয় ও দক্ষতা বাড়বে এবং মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছবে।
জানা যায়, নতুন বাজেটে মোট রাজস্বপ্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে সিংহভাগ অর্থের জোগান দেয়া হবে।
এনবিআরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে যোগান মিলবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে কর ব্যতীত রাজস্ব থেকে আসবে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে প্রাক্কলন করা হবে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।
জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবারও সম্প্রসারণমূলক (বেশি ব্যয়) বাজেট দিচ্ছে সরকার। এ জন্য বাজেটে বেশি ঘাটতি রাখা হচ্ছে।
৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই পরিকল্পনায় মোট আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে (অনুদানসহ) ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ।
অম্ভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ- এ দুটি উৎস থেকে এই ঘাটতি মেটানো হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও সংস্থার কাছ থেকে এবার ৯৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়া হবে বাজেটে অর্থায়নের জন্য।
বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে জিডিপি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে আশা করছে সরকার। অর্থনেতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হচ্ছে এবং বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামীতে এটি আরও সচল হবে। এ জন্য অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রাক্কলন করা হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশ।
ব্যয়ের প্রধান খাত
বাজেট বরাদ্দের বেশির ভাগ টাকা প্রধানত তিনটি খাতে খরচ করা হবে। এগুলো হলো- সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ পরিশোধ এবং ভর্তুকি। এই তিনটি খাতে মোট বাজেটের প্রায় ৩৫ শতাংশ চলে যাবে।
সব মিলে এই তিনটি খাতে মোট ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বেতন-ভাতায় ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি, সুদ পরিশোধে ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি এবং ভর্তুকি বাবদ ৮৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
যা থাকছে বাজেটে
ভাতার অংক না বাড়লেও এবার সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ছে। এখন সারাদেশে নিয়মিত মাসিক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪ লাখ। নতুন বাজেটে এই সংখ্যা আরও ১১ লাখ বাড়ানো হচ্ছে। শুধু প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়ছে ১০০ টাকা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বর্তমানে ১২২টি কর্মসূচি চালু আছে। এসব কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ শতাংশ। গত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা।
উৎপাদনশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবার সার, রপ্তানি, জ্বালানি, খাদ্যসহ অন্যান্য খাতে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
ব্যক্তি আয়করে ছাড় মিলছে না। বিদ্যমান ৩ লাখ টাকাই অপরিবর্তিত থাকছে।
তবে বিনিয়োগ বাড়াতে করপোরেট করে ছাড় মিলছে। পোশাকসহ রপ্তানিমুখী সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট কর হার ‘অভিন্ন রেট’ ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে, যা এখন বিভিন্ন হারে আছে। এছাড়া রপ্তানির বাইরে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার কমছে। একইসঙ্গে কমছে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার। তবে ব্যাংক, বীমাসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার একই থাকছে। পোশাক খাতের উৎসে কর হার দ্বিগুণ হচ্ছে।
বহুল আলোচিত অর্থপাচার রোধে পদক্ষেপ থাকছে। যারা পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনবে তাদের ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা বৈধ করার বিশেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
শেয়ার বাজার, নগদ টাকা, জমিসহ জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ আছে তা আর থাকছে না। তবে বিদেশে কারও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকলে তা আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন বা দেশে নিয়ে আসার সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট কমছে।
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সাশ্রয়ী হতে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ৫৬টি বিলাসপণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বসছে। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ১৩৫টি পণ্যের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হচ্ছে।
বিভিন্ন খাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তায় বরাদ্দ কমতে পারে। বর্তমানে ৩ থেকে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয় সরকার। আবার ব্যাংক হিসাবে জমার বিপরীতে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। ১ কোটি টাকার বেশি যাদের আমানত বা ঋণ আছে, তাদের বেশি পরিমাণে আবগারি শুল্ক দিতে হবে।
সব করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে বিশেষ ছাড় দেবে এনবিআর। যেসব টিআইএনধারী গত কর বছরে বা তার আগেও আয়কর রিটার্ন জমা দেননি, তারা কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়াই আগামী কর বছরে রিটার্ন দিতে পারবেন। একইসঙ্গে বেশকিছু ক্ষেত্রে সেবা নিতে রিটার্নের সঙ্গে প্রমাণপত্র জমা দেয়ার বিধান আসছে।
ব্যক্তি খাতে উপহার পাওয়া সম্পদ করমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে। বর্তমানে বাবা-মা যদি সন্তানকে উপহার দেন, তাহলে সে সম্পদ আয়করমুক্ত। কিন্তু সন্তান বাবা-মাকে উপহার দিলে তার বিপরীতে আয়কর দিতে হয়। এ বিধান তুলে নেয়া হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগাম করের অর্থ রিফান্ড বা ফেরত দেয়া হচ্ছে না। সেজন্য আমদানিনির্ভর কাঁচামাল ব্যবহারকারী ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানের আগাম করের বিধান প্রত্যাহার করা হতে পারে। বিশেষ করে সিমেন্ট, সিরামিক, বেভারেজ, ভোজ্যতেল, গ্যাস, পেট্রোলিয়ামসহ বিভিন্ন খাতের জন্য এ সুবিধা দেয়া হতে পারে।
যেসব প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে ভ্যাট নিবন্ধনের উপযুক্ত, তাদের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে। ভ্যাটের জরিমানা নেয়া হবে সর্বোচ্চ ২৪ মাসের। অনলাইনে ভ্যাটের রিটার্ন দাখিল, ইএফডি মেশিন ব্যবহার উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ থাকছে বাজেটে।
আরও পড়ুন:সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সবজির অনেক দাম বেড়েছে। প্রায় সব সবজির দামই ৮০ টাতা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এদিকে কাঁচামরিচের দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন আড়াইশ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বেগুন ও শসার দাম উঠেছে ৮০ থেকে ১২০ টাকার ঘরে। মাছ ও মুরগিও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, গত সপ্তাহে যেসব সবজির দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, সেগুলোর দাম এখন ৬০ থেকে ১০০ টাকা। যেমন—৬০ টাকার গোল ও লম্বা বেগুন এখন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল এখন ৬০ টাকা, কাঁকরোল, লতি, বরবটি, করলা ৮০ টাকা, ৪০ টাকার পটোল, ঢেঁড়শ, লাউ, মুলা এখন ৬০ টাকা কেজি।
কচুরমুখীর কেজি ৫০ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, কাঁচা কলা (হালি) ৪০ টাকা, কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। সবজির মধ্যে কেফসি প্রজাতির সবুজ কাঁচামরিচ ২৮০ টাকা কেজি, হলুদ মরিচ ৮০০ টাকা কেজি, চাইনিজ ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি, গাজর ১৪০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, দেশি শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর ২০০ টাকার কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি।
এদিকে বাজারে ব্রয়লার, পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দামও আগের মতোই চড়া। বাজারে আজ ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা।
বিক্রেতা শিপন জানান, ‘বড় সাইজের ব্রয়লার এখন কম আসছে, তাই দাম কিছুটা বেশি। পাকিস্তানি ও দেশি মুরগির দাম এক মাস ধরে প্রায় একই আছে, তবে আগে কিছুটা কমে পাওয়া যেত।’
মাছের বাজারেও তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। গতকাল শুক্রবার হওয়ায় অনেক ধরনের মাছের দাম কিছুটা বেশি দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো আজও দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের রুই মাছের দাম প্রতিকেজি ৪৫০ টাকা, দেড় থেকে ২ কেজির দাম প্রতিকেজি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা, এক থেকে দেড় কেজির ওজনের রুই মাছের দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, আর এক কেজির কম ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে, মৃগেল মাছ প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি আড়াইশ টাকা, এক কেজি থেকে কিছুটা বেশি পাঙাশের দাম ১৮০ টাকা কেজি, দেড় কেজি বেশি ওজনের পাঙাশের দাম ২৫০ টাকা কেজি। শিং মাছ প্রতি কেজি সাড়ে পাঁচশত থেকে ৬০০ টাকা। চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা প্রতি কেজি, আর ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল গার্মেন্টস ক্রেতা, বিপনন ও সরবরাহকারী এবং সোর্সিং এক্সিবিশন খ্যাত ইনটেক্স বাংলাদেশের ১৬তম আসর আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হয়েছে। এই তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং শোতে ১০টিরও বেশি দেশের ১২৫টির অধিক কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গতিশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-এর নিত্য উদ্ভাবনী কৌশল ও উন্নতমানের দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদায় প্রাধান্য পাচ্ছে।
২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ইনটেক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, সাপ্লাই চেইনে বৈচিত্র্য আনা এবং টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে উদ্ভাবন প্রদর্শনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।
এছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং এলএবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআই-এর মতো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সংস্থার নেতৃবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন পোশাক খাতে বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দ্রুত টেকসই ও মূল্য-সংযোজিত পোশাক উৎপাদনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। উদ্ভাবন, কমপ্লায়েন্স এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশটি দায়িত্বশীল ফ্যাশন ও টেক্সটাইল সোর্সিংয়ের পরবর্তী অধ্যায় নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, ইনটেক্স বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, পাশাপাশি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করবে”
এই বছরের এক্সপোতে বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য প্যাভিলিয়নের মধ্যে ভারতের (টেক্সপ্রোসিল ও পেডেক্সিলের মাধ্যমে) তুলা, মিশ্র সুতা ও টেকসই টেক্সটাইল প্রদর্শন করছে। চীন নিয়ে এসেছে টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্টস ট্রিম। দক্ষিণ কোরিয়া পরিবেশবান্ধব পারফরম্যান্স উপকরণ প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও জাপান নিয়ে এসেছে প্রিমিয়াম শার্টিং ও বোনা পণ্য। বাংলাদেশি প্রদর্শনকারীরা নিটওয়্যার, ডেনিম এবং ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সমাধানের অগ্রগতি তুলে ধরছে।
এক্সপোর মূল্যবোধ আরও বাড়াতে ইন্টারেক্টিভ বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) দুটি সেশনের আয়োজন করেছে। প্রথম সেশনে টেক্সটাইল উৎপাদন ও ফ্যাশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে, অন্যদিকে দ্বিতীয় সেশনে বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য পরিবর্তনের বাংলাদেশি রপ্তানির প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। এই সেশনগুলোতে এ শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশ নিচ্ছেন, যা ব্যবসায়িক স্থিতিস্থাপকতা ও বৃদ্ধির কৌশল প্রদান করবে।
প্রদর্শনীর পাশাপাশি, ইনটেক্স বাংলাদেশ ২০২৫-এ ব্যবসায়িক সভা (বি২বি), ভিআইপি নেটওয়ার্কিং এবং ক্রেতা-সরবরাহকারীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং সুবিধা রয়েছে— যা সোর্সিং ও ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা প্রদান করছে।
ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়ার আয়োজিত এই ইভেন্টটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ, ইপিবি এবং আইবিসিসিআই, এলেবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআইয়ের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার সমর্থন পেয়েছে।
বাংলাদেশ যখন আরও উদ্ভাবনী ও টেকসই টেক্সটাইল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে, ইনটেক্স বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেইনের সাথে দেশটিকে সংযুক্ত করার একটি প্রধান সমর্থক হিসেবে কাজ করছে।
দেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ—এফডিআই আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ।
ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে।
ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব যখন আরো গভীর সহযোগিতা ও বিস্তৃত সুযোগ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখন ঘটছে তার বিপরীত। ২০২৪ সালে বৈশ্বিকভাবে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ধাক্কা। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে মন্দা, শিল্প খাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি কম মনোযোগ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজন বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।
তবে অন্ধকারে কিছুটা আশার আলোও রয়েছে। ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এর প্রবৃদ্ধি এখনো অসম। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে ডিজিটাল পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। কারণ, ডিজিটাল সংযুক্তি হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি, যদি তা সবার কাছে পৌঁছানো যায়। প্রতিবেদনটি সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজিএস) অর্জনে সহায়তা করার বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশনা দিয়েছে। এ সময়টাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একসঙ্গে কাজ করার, যাতে আরো সহনশীল ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলা যায়। সে লক্ষ্যে প্রতিবেদনটি বিভিন্ন নীতিগত ধারণা ও পরামর্শ তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং এর আগ থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। যার প্রভাব কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হলেও সেটি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ এ প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবাহ ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে প্রবাহ হয়েছে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে হয়েছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাকিস্তানে এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২০২৩ সালে ৪৫টি স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) এফডিআই ১৭ শতাংশ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলারে দাড়িয়েছে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবাহ কেন্দ্রীভূত ছিল কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা এবং সেনেগাল—এ পাঁচ দেশে। গত এক দশকে স্বল্পোন্নত দেশের বহিঃখাতগুলোয় অর্থায়নের অন্যান্য উৎসের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধিই পিছিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা এবং রেমিট্যান্স হার স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় বেশি। ওই বছর বৈশ্বিকভাবে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ১০ শতাংশের বেশি কমে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে স্থবির ছিল।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ধানের আরও তিনটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে একটি লবণাক্ততা সহনশীল, একটি উচ্চফলনশীল বোরো এবং অন্যটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এ নিয়ে ব্রি আটটি উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতসহ মোট ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।
নতুন উদ্ভাবিত তিনটি জাত হলো; লবণাক্ততা সহনশীল ব্রি-১১২, উচ্চফলনশীল বোরো ব্রি-১১৩ ও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রি-১১৪। গত বুধবার জাতীয় বীজ বোর্ডের (এনএসবি) ১১৪তম সভায় নতুন এ তিনটি জাত অনুমোদন করা হয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের সভাপতিত্বে বোর্ড সভায় ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততা সহনশীল ও মাঝারি জীবনকালীন রোপা আমনের জাত। এ জাতের ডিগপাতা প্রচলিত ব্রি ধান-৭৩-এর চেয়ে খাড়া। ব্রি ধান-১১২ লবণাক্ততার মাত্রাভেদে হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ১৪ থেকে ৬ দশমিক ১২ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের জীবনকাল ১২০ থেকে ১২৫ দিন এবং গাছের উচ্চতা ১০৩ থেকে ১০৫ সেন্টিমিটার। গাছের কাণ্ড মজবুত। এ কারণে ঢলে পড়ে না। এ জাতের ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। এটি লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। দানা মাঝারি চিকন ও শিষ থেকে ধান সহজে ঝরে পড়ে না। জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল কর্তনের পর মধ্যম উঁচু থেকে উঁচু জমিতে সূর্যমুখী ও লবণ সহনশীল সরিষা আবাদের সুযোগ তৈরি হবে।
ব্রি ধান-১১৩ জাতটি বোরো মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৯-এর বিকল্প হিসেবে ছাড়করণ করা হয়েছে। এটি মাঝারি চিকন দানার উচ্চফলনশীল জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং ধান পাকলেও সবুজ থাকে। গাছ শক্ত ও মজবুত বিধায় সহজে হেলে পড়ে না। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৩ দিন। চালের আকার-আকৃতি মাঝারি চিকন ও রং সাদা। দেখতে অনেকটা নাজিরশাইলের মতো। এ ধানের চালে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় দেখা গেছে, জাতটি ব্রি ধান-৮৮-এর চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের গড় ফলন হেক্টরে ৮ দশমিক ১৫ টন। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে জাতটি হেক্টরে ১০ দশমিক ১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, নতুন ব্রি ধান-১১৪ বোরো মৌসুমের দীর্ঘ জীবনকালীন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। গাছ মজবুত এবং হেলে পড়ে না। পাতার রং গাঢ় সবুজ। এর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ দশমিক ৭৬ টন। দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। ভাত ঝরঝরে হয়। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন। ফলে এ জাতের ধান চাষে কৃষককে ব্লাস্ট রোগ নিয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে না, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হবে।
ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, জাতগুলো অনুমোদন লাভ করায় এখন আমরা এসব ধানের বীজ বাজারজাত করতে পারব। কৃষকেরা এ জাতের ধান চাষ করে লাভবান হবেন। তাদের উৎপাদনও বাড়বে। উপকূলীয় অঞ্চলে পানিতে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় অনেক সময় ধান চাষ করা যেত না। এখন আমাদের ব্রি ধান-১১২ সেসব এলাকায় সহজে চাষ করা যাবে। এ ছাড়া অন্য জাতগুলো আমাদের ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
সূত্র: বাসস
আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
মন্তব্য