প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের জন্য আবেদন করতে হলে এখন থেকে সেকেন্ডারি মার্কেটে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। এতদিন সেকেন্ডারি মার্কেটে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকলেও একজন আইপিওতে শেয়ারের জন্য আবেদন করতে পারতেন।
বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়।
কমিশন এও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, প্রবাসী কেউ আইপিওতে আবেদন করতে হলে তার বিনিয়োগ থাকতে হবে এর দ্বিগুণ। অর্থাৎ ১ লাখ টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ থাকলেই কেবল প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে আবেদন করতে পারবেন।
আইপিও আবেদনে লটারি তুলে দিয়ে গত বছরের এপ্রিলে যখন সব আবেদনকারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টনের নীতিমালা চালু হয়, তখন সেকেন্ডারি মার্কেটে ন্যূনতম বিনিয়োগের শর্ত বেঁধে দেয়া হয়।
বিএসইসি বলছে, পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধি, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনে সুযোগ করে দিতে এই বিনিয়োগ সীমা বাড়ানো হয়েছে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, বিএসইসির এই সিদ্ধান্তে বাজারে বিনিয়োগ বাড়বে, ক্যাশ ফ্লো থাকবে।
তবে এই বিনিয়োগটা যেন দীর্ঘমেয়াদে থাকে সেটা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আইপিও আবেদনের জন্য কেউ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করল, আবার আইপিও পাওয়ার পরে শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিয়ে গেল, এমনটা যেন না হয়।’
বিএসইসর নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র রেজাউল করিম জানিয়েছেন, পরবর্তী আইপিও আবেদন থেকেই এটা কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, ‘এটা কার্যকর হলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরর সংখ্যা বাড়বে এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবে। অনিয়মিত বিও সংখ্যা কমে যাবে। অতীতে অনেকেই আইপিও পাওয়ার জন্য অনেক ভুয়া বিও খুলতে সেগুলোর পরিমাণ কমবে। প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ও আইপিও পেতে সুবিধা হবে।’
তবে ব্রোকারেজ হাউজ এক্সপো ট্রেডার্সের সিইও শহিদুল হোসেন অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বসিত নন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মানুষ শুধু শুধু ৫০ হাজার টাকা ফেলে রাখবে কেন? এমন তো না যে শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দেবে। শেয়ার তো পাবে ২০টা। তাহলে ২০০ টাকার শেয়ারের জন্য কে ৫০ হাজার টাকা ফেলে রাখবে?’
আরও পড়ুন:ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে বিনিয়োগকারীদের হাসিটা স্ফীত হতে পারত, এমনকি লেনদেন ঘণ্টা দুয়েক অতিবাহিত হওয়ার পরও এমনটা ভাবা হচ্ছিল, তবে শেষ মুহূর্তের দরপতনে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার।
ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বিপুলসংখ্যক শেয়ারের দরপতনে সূচকের মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সামান্য ইতিবাচক ছিল, কিন্তু সূচকে যোগ হয়েছে এক পয়েন্টেরও কম। শূন্য দশমিক ৯০ পয়েন্ট বেড়ে সূচক অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে।
অন্যদিকে পতন হয়েছে শরিয়াহ্ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসইএস, কমেছে ১ পয়েন্ট। বড় মূলধনি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত ব্লু-চিপ বা ডিএস৩০ সূচক থেকে হারিয়ে গেছে ৬ পয়েন্ট।
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটির পাশাপাশি ঈদের দুই দিনের ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে আবার লেনদেন চলবে মঙ্গলবার।
লেনদেনের ২৪ মিনিটেই সূচক আগের দিনের ১৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর দরপতনে কিছুটা কমে গেলেও বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে আবারও ২০ পয়েন্ট যোগ হয়ে লেনদেন হয়। এরপর দরপতন সূচক টেনে নিয়ে যায় ৬ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে, যা আগের দিনের চেয়ে ৬ পয়েন্ট কম। শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে সামান্য সবুজ থেকে লেনদেন শেষ হয়।
প্রায় সমানসংখ্যক শেয়ার দর বৃদ্ধি ও পতন হয়েছে। ১৬৬টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৪৯টির। অপরিবর্তিত দামে লেনদেন হয়েছে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ার।
লেনদেন আগের দিনের চেয়ে একটু বেশি হয়েছে। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৭৮৮ কোটি ৬৬ লাখ ১২ হাজার টাকার শেয়ার, যা গতকালের চেয়ে ৪১ কোটি ৭০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বেশি।
এ নিয়ে সপ্তাহের তিন দিনে সূচক পড়েছে ৩৫ পয়েন্ট, বিপরীতে দুই দিনে যোগ হয়েছে ২৬ পয়েন্টের কাছাকাছি।
তবে ঈদের আগে পুঁজিবাজারের মন্দা পরিস্থিতি এবারই প্রথম নয়। গত ৩ মে ঈদ উল আজহার আগের শেষ কর্মদিবস ছিল ২৮ এপ্রিল। সেদিন ২১ পয়েন্ট সূচকের সঙ্গে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ৬২ কোটি কমতে দেখা যায়। এ ছাড়া ঈদের পরেও বেশ কিছু দিন মন্দার মধ্যেই ছিল পুঁজিবাজার।
চলতি বছরের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- ইত্যাদি কারণে মন্দা যেন কাটছিল না। এমতাবস্থায় নতুন অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশার বাণী শোনান পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
তবে অর্থবছরের শুরুতেই ঈদের কারণে আবারও কিছু ঝিমিয়ে পড়েছে পুঁজিবাজার। ঈদের আগে বাজারকে কোনোভাবে মূল্যায়ন করতে চান না সংশ্লিষ্টরা।
মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘ঈদের আগে বাজার নেতিবাচক হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। বাজার কোন দিকে যাবে তা নিয়ে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। জুলাইয়ে কিছু ফান্ড ইনজেক্ট হয়, ঈদের পরে হয়তো সেটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যারা বিনিয়োগ করবেন, তাদেরকে তো ফান্ড কালেক্ট করতে হবে। এখন তারা কতটুকু সমর্থ হবেন, সেটাই দেখার বিষয়। এই মুহূর্তে পুঁজিবাজার নিয়ে মন্তব্য করার মতো কিছু নেই।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে লোকসানি কোম্পানি জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ দাম ৯ টাকা ১০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে শেয়ারপ্রতি ৬০ পয়সায় আয় হয়েছিল কোম্পানির। এরপর টানা তিন বছর লোকসান গুনছে। ফলে এই তিন বছর কোনো লভ্যাংশ পাননি বিনিয়োগকারীরা। তবে তার আগে ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ দর বেড়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইলসের। ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছর সময়ে এক বছর ছাড়া প্রতিবারই লোকসান দিয়েছে কোম্পানি। ২০১৯ সালে মাত্র ৯৩ পয়সা আয় দেখিয়েছিল সোনারগাঁও। গত অর্থবছরের শেয়ারপ্রতি ১৩ টাকা ৩৫ পয়সা লোকসান হয়েছে কোম্পানি।
তবে অজানা কারণে ২৩ নভেম্বর থেকে ধারাবাহিক দর বৃদ্ধি পাচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ারের। ওই দিন শেয়ার দর ১৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি দর বেড়ে আজ সর্বশেষ ৫১ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
দর বৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের। ধারাবাহিক তিন কর্মদিবস দর বাড়ল কোম্পানিটি। ২০২১ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি প্রথম বছরেই ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
তালিকার দশে স্থান পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এর পরের স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নূরানী ডায়িং, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, প্রাইম টেক্সটাইল, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সাফকো স্পিনিংস মিলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও লোকসানি কোম্পানি তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড।
দর পতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত মেঘনা ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির দর দিনের সর্বোচ্চ অর্থাৎ ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে হাতবদল হয়েছে ৫৪ টাকায়। এ নিয়ে তিন কর্মদিবস কোম্পানিটির দর কমল। এর আগে ৮ জুন লেনদেন শুরুর পর ঘোড়ার বেগে দর বেড়েছে শেয়ারটির।
একই সমান দর কমেছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ৮০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৮ টাকা ৮০ পয়সায়।
২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ নগদ ছাড়া সবই বোনাস।
পতনের তালিকায় এর পরেই রয়েছে লোকসানি জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেডের। সর্বোচ্চ সীমা অর্থাৎ ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ দর পতনের মাধ্যমে শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ১৭৭ টাকা ৯০ পয়সা।
১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানিটি কোনো দিন লাভের মুখ দেখেনি। লভ্যাংশ জোটেনি বিনিয়োগকারীদেরও। তবে কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপক ওঠানামা করে। ২৬ জুন ১৬৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেনের পরে কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪ জুন পর্যন্ত। এরপর তিন কর্মদিবস কমল।
দর দর পতনের শীর্ষ দশে রয়েছে যথাক্রমে নর্দার্ন ইসলামি ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ক্যাবলস, জুট স্পিনার্স লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশর, রবি, শ্যামপুর সুগার মিলস এবং সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স।
সূচক বাড়াল যারা
সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৩২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স। এদিন কোম্পানিটির দর ৬ দশমিক শূন্য ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
সূচকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। দর শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৮ পয়েন্ট।
তিতাস গ্যাস সূচকে যোগ করেছে শূন্য দশমিক ১৬ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এ ছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ার, ওয়ালটন হাইটেক, বেক্সিমকো সুকুক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, খুলনা পাওয়ার ও বিকন ফার্মা সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৬১ পয়েন্ট সূচক কমেছে গ্রামীণফোনের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৮৭ পয়েন্ট কমিয়েছে রবি। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এর পরই বেক্সিমকো লিমিটেডের দর শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ২৩ পয়েন্ট।
এ ছাড়া আইসিবি, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, আল আরাফাহ ব্যাংক ও ফরচুন সুজের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৩ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা তুলবে জীবন বিমা কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড।
কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
বুধবার কমিশনের ৮৩০তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম। তিনি জানান, কমিশন রুলস ২০১৫ এর রুলস ৩(২) (পি) থেকে অব্যাহতিপূর্বক অনুমোদন করা হয়েছে।
কোম্পানিটি মোট এক কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ছাড়বে বাজারে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১৫ কোটি টাকা তুলবে। ইস্যু ব্যবস্থাপনা খাতের ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি এই অর্থ পুঁজিবাজার ও সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে কোম্পানি।
কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্র্যাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং এবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না।
২০২১ সালের ভ্যালুয়েশন রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম্পানটির লাইফ ফান্ড ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৬৮ হাজার ৭২০ টাকা। মোট উদ্বৃত্ত ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানের জন্য উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:প্রবাদ রয়েছে, কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। এমনটাই ঘটেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ খাতের দুটি কোম্পানির ক্ষেত্রে। কোম্পানি দুটি হলো গ্রামীণফোন ও রবি।
গত সপ্তাহে বুধবার গ্রামীণফোন নতুন কোনো সিম বিক্রি করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি। এর কারণ হিসেবে গ্রাহকদের মানসম্মত সেবা দিতে না পারার কথা বলা হয়।
এই নিষেধাজ্ঞার খবরে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। বিপরীতে কপাল খুলেছে রবির বিনিয়োগকারীদের।
বুধবার কিছুটা কমলেও আগের চার কর্মদিবসে শেয়ারদর ৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ২৭ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে গ্রামীণের শেয়ারদর টানা তিন দিন দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত। চতুর্থ দিনও আবার সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত নামার পরেও ঘুরে দাঁড়ায়। দিন শেষে বাড়ে। পরদিন আরও কিছুটা বাড়ে।
নিষেধাজ্ঞার পর শেয়ারদর ৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ২.২৬ শতাংশ কমেছে।
সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞার পরের দিন বৃহস্পতিবার গ্রামীণফোনের শেয়ারদর ৬ টাকা বা ২ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৯৪ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
এরপর আরও দুই দিন দর কমে লেনদেন হয়। তবে মঙ্গলবার তিন শতাংশ বেড়ে শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ২৯১ টাকা ১০ পয়সায়। পরদিন আরও ০.৭৬ শতাংশ বেড়ে হারানো দরের কিছুটা পুনরুদ্ধার করে কোম্পানিটি।
এই নিষেধাজ্ঞার পর চার কর্মদিবস টানা বাড়ার পর বুধবার ১.৮৯ শতাংশ বা ৭০ পয়সা কমেছে রবির শেয়ারের।
গত ২৯ জুন শেয়ারের দর ছিল ২৮ টাকা ৬০ পয়সা। পরদিন বেড়ে হয় ৩০ টাকা ১০ পয়সায়।
পরের কর্মদিবস ৩ জুলাই ৩ টাকা বা ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে ৩৩ টাকা ১০ পয়সায় শেয়ার বেচাকেনা হয়। এর পরদিন আরও ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ৩৬ টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয়।
৫ জুলাই লেনদেনের শুরুতে শেয়ারদর আবার লাফ দিয়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি বেড়ে গেলেও দিন শেষে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ দর দাঁড়ায় ৩৭ টাকা ১০ পয়সা।
এরপর বুধবার নিম্নগতি দেখা যায়। এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ হার ২ শতাংশ হওয়ায় ৭০ পয়সার বেশি কমার সুযোগ ছিল না। কমেছেও ততটা।
আর্থিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় রবির চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে গ্রামীণফোন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২৫ টাকার ওপরে। বিপরীতে এক টাকারও কম আয় রবির।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গ্রামীণফোনের ইপিএস হয়েছে যথাক্রমে ২০ টাকা ৩১ পয়সা, ২৬ টাকা শূন্য ৪ পয়সা, ২৫ টাকা ৫৬ পয়সা, ২৭ টাকা ৫৪ পয়সা এবং ২৫ টাকা ২৮ পয়সা।
অন্যদিকে ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রবির আয় যথাক্রমে ৪৬ পয়সা, ৪ পয়সা, ৩৩ পয়সা ও ৩৪ পয়সা।
আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেশ ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে গ্রামীণফোন। ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত হলেও ২০১৫ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানি।
ওই সময় থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ১৪০, ১৭৫, ২০৫, ২৮০, ১৩০, ২৭৫ ও ২৫০ শতাংশ। এর সবই নগদ।
অন্যদিকে রবি ২০২০ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে ২০২১ সালে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের গ্রামীণফোনের শেয়ার সংখ্যা ১৩৫ কোটি ৩ লাখ ২২টি।
আর ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন হওয়ায় রবির শেয়ার সংখ্যা ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৫টি।
আরও পড়ুন:বাজেট পাসের পর দুই দিন পতনের পর ঘুরে দাঁড়ানো পুঁজিবাজারে এক দিন পরেই আবার দরপতন হলো। বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতনের পাশাপাশি কমে গেছে লেনদেনও।
বুধবার লেনদেনের শুরুতেই সূচক বেড়ে গেলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে তা কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে।
অন্যদিকে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ২১৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪৬ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকায়।
আগের দিন লেনদেন হয় ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা, যা ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ইত্যাদি ইস্যুতে টালমাটাল পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশ্বাস দেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নতুন বছরে বাজারে নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হয়। বাজারে তারল্য বাড়ে।
তবে অর্থবছরের প্রথম সপ্তাহে তেমনটা দেখা যায়নি। পতনমুখি বাজারে গতকাল ইউটার্ন এলেও একদিন পরে আবারও আগের ধারায়।
বুধবার যতগুলো শেয়ারের দাম বেড়েছে কমেছে তার প্রায় দ্বিগুণ। ১১৮টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২১০টির। অপরিবর্তিত দামে লেনদেন হয়েছে ৫৪টি কোম্পানির শেয়ার।
লেনদেনের বিষয়ে এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী শহিদুল হোসেন বলেন, ‘ঈদের আগে বাজার খুব বেশি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গতকাল দর বেড়েছিল, আজকে হয়তো অনেকেই লাভ দেখেছেন সেটা বিক্রি করেছেন। তাই সূচক কিছুটা কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের আগে মানুষের টাকার প্রয়োজন পড়ে, সেটা বিগত কয়েক দিনে তুলে ফেলেছে। বাকি যে টাকা অ্যাকাউন্টে ছিল তা দিয়ে কেনাবেচা করছে।গতকাল কিনেছিল, আজকে লাভ পেয়ে বিক্রি করেছে।’
শহিদুল হোসেন বলেন, ‘ঈদের পরে আশা করা যেুতে পারে যে, নতুন বিনিয়োগে বাজার আবার চাঙা হবে।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সর্বোচ্চ দর বেড়েছে গতকাল তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। আগের দিন ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। আজকে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে ১৫০ টাকা ১০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।
৮ মাস আগেও বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে শেয়ার লেনদেন হতে দেখা গেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর শেয়ারটির দর উঠেছিল ২৩২ টাকা ৯০ পয়সা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন-সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ২০১৮ সালের পরে আর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি। দেশজুড়ে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারদর।
৮ দশমিক ১৮ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩০ টাকা ৪০ পয়সায়। ২০১৬ সাল থেকে বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিকভাবে নগদ লভ্যাংশ দিয়ে আসছে কোম্পানিটি।
২০২১ সালে শেয়ার প্রতি ৮৭ পয়সা আয়ের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানি।
দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেড। ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৮৭০ টাকা ৩০ পয়সায়। গতকাল সর্বশেষ দর ছিল ৮০৯ টাকা ৬০ পয়সা।
মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি প্রতি বছরই আয় করেছে। ২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ছাড়া সবগুলোই নগদ।
দর বৃদ্ধির তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন। আয় কম হলেও প্রতি বছরই মুনাফা করেছে কোম্পানিটি।
২০২১ সালে ৮১ পয়সা আয়ের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে ২ শতাংশ। তার আগের বছর ৫ এবং ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ করেই লভ্যাংশ দিয়েছে।
কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ছে ২৬ জুন থেকে। ওই দিন ২০ টাকা ৩০ পয়সা দরে লেনদেন হওয়া শেয়ারটির দর আজকেই বেড়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ৩১ টাকা ১০ পয়সা।
এর পরেই ওইমেক্স ইলেক্ট্রোড লিমিটেডের। ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ দর বেড়ে সর্বশেষ ২০ টাকাক ৮০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
কোম্পানির আর্থিক তথ্য বলছে, প্রত বছরই সামান্য পরিমাণে মুনাফায় থাকলেও কোনোদিন নগদ লভ্যাংশের মুখ দেখেননি এর বিনিয়োগকারীরা। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে ওইমেক্স।
তালিকার দশে স্থান পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এর পরের স্থানে রয়েছে যথাক্রমে জেনেক্স ইনফোসিস, লোকসানি জাহিদ স্পিনিং লিমিটেড, এএফসি অ্যাগ্রো, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড এবং প্রাইম টেক্সটাইল।
দরপতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি দর পতন হয়েছে লোকসানি জিলবাংলা সুগার মিলস লিমিটেডের। সর্বোচ্চ সীমা অর্থাৎ ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর পতনের মাধ্যমে শেয়ারটির ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ১৮১ টাকা ৫০ পয়সা।
১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানিটি কোনো দিন লাভের মুখ দেখেনি। লভ্যাংশ জোটেনি বিনিয়োগকারীদেরও। তবে কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপক ওঠানামা করে। ২৬ জুন ১৬৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেনের পরে কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪ জুন পর্যন্ত। এরপর দুই কর্মদিবস কমল।
দর পতনের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস। একই সমান দর কমে সর্বশেষ ৫২০ টাকা লেনদেন হয়েছে কোম্পানির শেয়ার।
ধারাবাহিকভাবে মুনাফা থাকা কোম্পানিটি ২০২১ সালে শেয়ার প্রতি ৫ টাকা ৪২ পয়সা লোকসান গুনেছে। ফলে লভ্যাংশ পাননি বিনিয়োগকারীরা। তবে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।
সমান দর কমে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার ৪০ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
ক্রাউন সিমেন্টের দর ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে ৭৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে।
দর পতনের পঞ্চম অবস্থানে থাকা লোকসানি মেঘনা পেটের দর কমেছে ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৩৪ টাকা ৭০ পয়সা।
সপ্তম স্থানে রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ। ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর কমে শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ২৩৮ টাকা ৬০ পয়সায়।
লোকসানে ডুবে থাকা এক কোটি ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি কোনো দিনই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
দরপতনের শীর্ষ দশে রয়েছে যথাক্রমে আমান কটন, শ্যামপুর সুগার মিলস, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ ও নিউ লাইন ক্লোথিং লিমিটেড।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ৬ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট সূচক কমেছে রবির দরপতনের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৮৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট কমিয়েছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংকের দর ২ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ২ দশমিক ২২ পয়েন্ট।
এ ছাড়া তিতাস গ্যাস, পাওয়ার গ্রিড, বিএসআরএম, বিকন ফার্মা, বার্জার পেইন্টস, রেনাটা ও র্যাক সিরামিকসের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ১৭ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট।
বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৫০ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। এদিন কোম্পানিটির দর শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।
সূচকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করেছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। দর ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট।
খুলনা পাওয়ার সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এ ছাড়া ওয়ালটন হাইটেক, জেনেক্স ইনফোসিস, বেক্সিমকো ফার্মা, সোনালী পেপার, শাহজীবাজার পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মা, রেকটি বেনকিজার সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রোকারেজ হাউজ ক্রেস্ট, বাংকো ও তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ৪৩১ জন পাওনাদার ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে অর্থ ফেরত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাদেরকে এই টাকা ফেরত দেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই।
সংস্থাটির উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশেনা অনুযায়ী অর্থ ফেরত কার্যক্রম শুরু করেছে ডিএসই।
ওই তিন হাউজের যে সব বিনিয়োগকারী ১৫ মের মধ্যে ডিএসইতে অভিযোগ দাখিল করেছেন তাদের নিজ নিজ বিও হিসাবে উল্লেখিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে আনুপাতিক হারে অর্থ ফেরত শুরু করা হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিইএফটিএনের মাধ্যমে ৪৩১ বিনিয়োগকারীকে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেয়া হয় বলে জানান ডিএসই কর্মকর্তা।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ডিএসই আশা করছে পর্যায়ক্রমে সকল বিনিয়োগকারীদের পাওনা পরিশোধ করা হবে৷ সকল পাওনা পরিশোধের জন্য ডিএসই সংশ্লিষ্ট ব্রোকারদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে৷ এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে৷’
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ওই তামহা সিকিউরিটিজের বিওধারী বিনিয়োগকারীরা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তোলেন, অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর ৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এই সিকিউরিটিজের মালিক ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ করেন তারা। বিএসইসি ওই সিকিউরিটিজের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেয়ার পর সিডিবিএলে যোগাযোগ করে বিনিয়োগকারীরা জানতে পারেন তাদের হিসাবে কোনো শেয়ার নেই।
তামহা কর্তৃপক্ষ দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য বিনিয়োগকারীদের ফোনে এসএমএস ও মেইল পাঠাতো। এ কারণে তারা জালিয়াতি বুঝতে পারেনি।
হাউজটি ১৩৯ কোটি টাকা ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে বিএসইসির এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে ওঠে আসে। অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে গত ২৮ নভেম্বর ব্রোকারেজ হাউসটির শেয়ার কেনাবেচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ডিএসই।
গত বছরের জুনে বাংকো সিকিউরিটিজের কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয় অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে। বিএসইসির তদন্ত অনুযায়ী, এ ব্রোকারেজ হাউসের মালিকপক্ষ গ্রাহকদের ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ঘটনায় ডিএসই মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডিও করে। পরে দুদক প্রতিষ্ঠানটির ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছে। আসামিরা হলেন বাংকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান আবদুল মুহিত এবং পরিচালক শফিউল আজম, ওয়ালিউল হাসান চৌধুরী, নুরুল ঈশান সাদাত, এ মুনিম চৌধুরী ও জামিল আহমেদ চৌধুরী।
২০২০ সালের জুনে ডিএসইর এক তদন্তে উঠে আসে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষ গ্রাহকের ৮০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছে। ৫৭ পুরানা পল্টনে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ। আর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির এমডি শহিদ উল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী নিপা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২১ হাজার বিনিয়োগকারীর হিসাব ছিল এই হাউসে। আর গ্রাহকদের টাকা ছিল ১০০ কোটি। শেয়ার কেনাবেচার বাইরে বেআইনিভাবে লভ্যাংশের বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকাও নিতেন তাঁরা। মালিকপক্ষ ১৮ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের ব্যাংক হিসাবে।
আরও পড়ুন:দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির দর বৃদ্ধি প্রবণতার সঙ্গে টানা দুই দিন পতনের পরে ঘুরে দাঁড়াল পুঁজিবাজার। গতি এলো লেনদেনেও।
আগের সপ্তাহে টানা চার দিন সূচকে অল্প অল্প করে মোট ৭৫ পয়েন্ট যোগ হয়। সর্বশেষ কর্মদিবসে লেনদেন ৯০০ কোটির ঘর অতিক্রম করেছিল। তবে চলতি সপ্তাহের শুরুতে বড় ব্যবধানে লেনদেন হ্রাস পায়, কমে সূচকও। দ্বিতীয় দিনেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল।
প্রথম দিনে ১৭ ও দ্বিতীয় দিনে ১২ অর্থাৎ দুই কর্মদিবসে ২৯ পয়েন্ট সূচক হ্রাস পায়। তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার কিছুটা পুষিয়ে দিল ২৫ পয়েন্ট বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।
নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- ইত্যাদি কারণে মন্দা যেন কাটছিল না। এমতাবস্থায় নতুন অর্থবছরে নতুন বিনিয়োগে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশার বাণী শোনান পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
তাদের ভাষ্যমতে, অর্থবছরের শেষে বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা দেখে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ছক আঁকেন। বাজারে নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হয়। যার কারণে ইতিবাচক চাঞ্চল্য দেখা যায়।
কিন্তু অর্থবছরের শুরু দুই দিনে লেনদেন হাজার কোটির কাছাকাছি থেকে ৬০০ কোটির ঘরে নেমে আসে। এতে শঙ্কা তৈরি হয় কোনদিকে যাচ্ছে পুঁজিবাজার।
তবে ভাটা পড়া লেনদেনে কিছুটা জোয়ার এলো। দিনভর হাতবদল হয়েছে ৯৬০ কোটি ৭৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা, যা ১৩ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে এর চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল ১৬ জুন। ওই দিন ডিএসইতে হাতবদল হয় ১ হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকার।
সমানসংখ্যক শেয়ারদর বৃদ্ধি ও পতন হয়েছে। ১৬০টি শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৫৯টির। অপরিবর্তিত দামে লেনদেন হয়েছে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ার।
লেনদেনের বিষয়ে এক্সপো ট্রেডার্সের প্রধান নির্বাহী শহিদুল হোসেন বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনার ফলে লেনদেন ও সূচক উভয়ই বেড়েছে। ঈদের আগে মানুষের টাকার প্রয়োজন পড়ে, সেটা বিগত কয়েক দিনে তুলে ফেলেছে। এখন আর টাকার প্রয়োজন নেই। ফলে যে টাকা ছিল তাতে কিছু কেনাবেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। গতকাল দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে ছিল কোম্পানিটি। আজ ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ১৬১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বশেষ দাম ১৭৭ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। গতকালও প্রায় সমান পরিমাণ দর বেড়েছিল কোম্পানিটির।
গতকাল ডিএসইর মাধ্যমে কোম্পানি জানায়, তারা অ্যালুমিনিয়াম তার সরবরাহের লক্ষ্যে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করে। এ খবরে টানা দুই দিন সর্বোচ্চ সীমায় দর বাড়ল।
২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১৯ পয়সায় আয় হয়েছিল। এরপর টানা চার বছর লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। বিগত দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ ছাড়া সবই নগদ ছিল।
প্রায় একই সমান দর বেড়েছে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ১২৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৩৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার।
৮ মাস আগেও বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে শেয়ার লেনদেন হতে দেখা গেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর শেয়ারটির দর উঠেছিল ২৩২ টাকা ৯০ পয়সা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন-সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ২০১৮ সালের পরে আর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমান কটন লিমিটেড। ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা ৫০ পয়সায়। গতকাল সর্বশেষ দর ছিল ২৭ টাকা ৮০ পয়সা।
গত দুই বছরে তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক বছরেরও কম সময়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর কোম্পানির দর উঠেছিল ৫২ টাকা ৬০ পয়সায়। এর পরে শুধুই কমেছে দর।
দর বৃদ্ধির তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ৩৮ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সমাপনী দর দাঁড়িয়েছে ৪১ টাকা ৮০ পয়সায়।
গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর সেই বছরই বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানি। এ ছাড়া তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, শেয়ার প্রতি প্রায় ৩ টাকার মতো আয় রয়েছে।
চলতি বছরের ২২ মে থেকে দর বাড়ছে শেয়ারের। ওই দিন শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়।
তালিকার পরের স্থানে থাকা আমান ফিডের দর ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে হাতবদল হয়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা।
২০১৫ সালে তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটি প্রতি বছরই নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সঙ্গে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ছাড়া বোনাসও পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের ৩১ আগস্ট ৭৮ টাকা ১০ পয়সায় শেয়ার লেনদেনের পর দর শুধু কমেছেই।
তালিকার দশে স্থান পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে এর পরের স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সোনালী পেপার, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, মীর আখতার হোসেন লিমিটেড, ফু-ওয়াং ফুড ও তিতাস গ্যাস লিমিটেড।
দরপতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। শেয়ারটির দর ৫০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।
১৩৩ বারে কোম্পানিটির মোট ২ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৫৯ লাখ টাকা।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লুজার তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শেয়ারটির দর ৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমেছে। শেয়ারটির সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ২৬১ টাকা ৯০ পয়সা।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ। ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ দর বেড়ে শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ২৪৩ টাকা ১০ পয়সায়। লোকসানে ডুবে থাকা এক কোটি ৩৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি কোনো দিনই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
এর পরেই মনস্পুল পেপারের দর ৩ টাকা ২০ পয়সা বা ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে ১৫৯ টাকা ৫০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে।
দরপতনের শীর্ষ দশে রয়েছে যথাক্রমে পেপার প্রসেসিং, ইমাম বাটন, নিউ লাইন ক্লোথিং, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, শ্যামপুর সুগার মিলস ও কেডিএস অ্যাক্সেসরিজ।
সূচক বাড়াল যারা
সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৬১ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। এদিন কোম্পানিটির দর ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়েছে।
সূচকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করেছে রবি। দর ১ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট।
বেক্সিমকো লিমিটেড সূচকে যোগ করেছে ২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
এ ছাড়া তিতাস গ্যাস, ওয়ালটন হাইটেক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মা, পাওয়ার গ্রিড, সোনালী পেপার ও বার্জার পেইন্টস সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯১ পয়েন্ট।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট সূচক কমেছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবির কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৭ পয়েন্ট কমিয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ।
এর পরই স্কয়ার ফার্মার দর শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্ট।
এ ছাড়া আল-আরাফাহ ব্যাংক, বেক্সিমকো সুকুক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ট্রাস্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং কোম্পানি, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:টানা দর হারাতে থাকা পুঁজিবাজারে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিগুলো আবার তেজ দেখাতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি উৎপাদনে নেই, লভ্যাংশ দিতে পারছে না বছরের পর বছর ধরে।
দেশের পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের সময় এ বিষয়টি প্রায়ই দেখা যায়। লোকসানি, উৎপাদন বন্ধ- এমন সিংহভাগ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন বেশ কম। শেয়ারসংখ্যা কম হওয়ার কারণে শেয়ারদর কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর সুযোগ থাকে। প্রায়ই দেখা যায়, শেয়ারদর বাড়লে বিনিয়োগকারীরা সেই কোম্পানির শেয়ারেই বেশি আকৃষ্ট হন।
এমনিতেই দর সংশোধনে থাকা পুঁজিবাজারে ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য হ্রাসসহ নানা ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রবল। তার ওপর বাজেটে প্রত্যাশিত কোনো ঘোষণা আসেনি। আশা ছিল, বাজেট পাসের সময় অন্তত কিছু পাওয়া যাবে, কিন্তু অর্থমন্ত্রী এখানেও কোনো সুখবর রাখেননি।
গত অর্থবছরের শুরুটা ঝলমলে থাকলেও সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিন থেকে পুঁজিবাজারে টানা যে দর সংশোধন শুরু হয়, এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মতভেদ, পরে বছর শেষের সমন্বয়, এরপর নতুন বছর শুরু হতে না হতেই আন্তর্জাতিক নানা ঘটনাপ্রবাহ, ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন- পুঁজিবাজারে আস্থা তৈরি হওয়ার মতো যেন কোনো একটি ঘটনাও নেই।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছিলেন, অর্থবছরের শেষে বিভিন্ন কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা দেখে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের ছক আঁকেন। বাজারে নতুন ফান্ড ইনজেক্ট হয়। যার কারণে ইতিবাচক চাঞ্চল্য দেখা যায়। এতে সময় লাগবে।
গত বৃহস্পতিবার অর্থবছরের শেষ দিন শেষ বেলায় হঠাৎ করেই ক্রয়চাপ ও সূচক বাড়তে দেখা দিলেও নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই কর্মদিবসেই পড়ল সূচক, শেয়ারদর। সেই সঙ্গে কমল লেনদেন।
বৃহস্পতিবার যেখানে ৯৩৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে লেনদেন হয়েছিল, রোববার তা দাঁড়ায় ৬৫৪ কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার টাকায়। সেখান থেকে কিছুটা বেড়ে সোমবার হাতবদল হয়েছে ৬৩২ কোটি ৫০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।
১৬২ কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে হারিয়েছে ১৬৫টি, অপরিবর্তিত ছিল ৫৪টির দর।
লেনদেনের বিষয়ে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন বলেন, ‘ঈদের আগে নতুন করে শেয়ার কেনা থেকে বিরত রাখবেন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া মার্জিন লোন নিয়ে যারা ট্রেড করেন, তাদের ট্রেডিংও বন্ধ থাকবে। লেনদেন কমার এটি একটি কারণ।’
‘এ ছাড়া নতুন অর্থবছরের ফান্ড ইনজেক্ট হয়। অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ইনভেস্ট করেন। কিন্তু ফান্ড জোগাড় করতে তাদের সময় লাগে। জুলাইয়ের অর্ধেক যাওয়ার পরে তারা হয়তো ফান্ড কালেক্ট করে নতুন বিনিয়োগ করবেন। এতে আশা করা যায় বাজার চাঙা হবে।’
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে লোকসানি জাহিদ স্পিনিং লিমিটেড। কোম্পানির দর দিনের সর্বোচ্চ অর্থাৎ ১০ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সায়।
পাঁচ বছরের মধ্যে বিগত দুই বছর শেয়ারপ্রতি মোটা অঙ্কের লোকসান দিয়েছে জাহিদ স্পিনিং। তবে তার আগের তিন বছর কিছুটা মুনাফায় ছিল কোম্পানি। তবে কোনোদিনই নগদ লভ্যাংশ পাননি এর বিনিয়োগকারীরা।
বুধবার গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের দরপতনের বিপরীতে শেয়ারদর বাড়তে শুরু করে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের।
পরপর তিন কর্মদিবস দর বাড়ল। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে ৩৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৩৬ টাকা ৪০ পয়সায় শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে আরেক লোকসানি কোম্পানি ইস্টার্ন ক্যাবলস। ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ১৬১ টাকা ৫০ পয়সায়।
লেনদেন শুরুর পর ডিএসই জানায়, কোম্পানিটি অ্যালুমিনিয়াম তার সরবরাহের লক্ষ্যে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। এর পরেই দর বেড়ে যায়।
২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১৯ পয়সায় আয় হয়েছিল। এরপর টানা চার বছর লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। বিগত দুই বছর লভ্যাংশ না দিলে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ ছাড়া সবই নগদ ছিল।
একই সমান দর বেড়েছে ব্যাপক লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের। প্রতি বছরই লোকসান গুনলেও অজানা কারণে দাম চড়া রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির শেয়ারের।
লভ্যাংশ দিতে না পারায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে শেয়ারটি। ২১ জুন থেকে ধারাবাহিক দর বাড়ছে। ওইদিন ৭৭ টাকা ১০ পয়সায় শেয়ার বেচাকেনা হয়েছিল। আজকে সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায়। এই সময়ে দর বেড়েছে ৪২ টাকা ৪০ পয়সা।
ডিএসই থেকে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কোম্পানি।
এর পরই দর বেড়েছে প্রাইম টেক্সটাইল, ইন্ট্রাকো রি-ফুয়েলিং স্টেশন, জুট স্পিনার্স, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, খান ব্রাদার্স বিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ও এমএল ডায়িং।
এর মধ্যে জুট স্পিনার্স ও সাভার রিফ্রাকটরিজ লোকসানের কারণে কখনও লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
দর পতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর কমেছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। ২০১৫ সাল বাদে আর কোনো বছর নগদ লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি।
গতকাল ৮০ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ার আজ হাতবদল হয়েছে ৭৮ টাকা ৫০ পয়সায়।
প্রায় একই সমান দর কমেছে মনস্পুল পেপারের। ২০ ফেব্রুয়ারি ২৭২ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হওয়ার পর ক্রমাগত দরপতন দেখা গেছে। আজ সর্বশেষ দর দাঁড়িয়েছে ১৬২ টাকা ৭০ পয়সায়।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের দর ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে ২৬৭ টাকা ২০ পয়সায় শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এ ছাড়া দরপতনের তালিকার দশে রয়েছে যথাক্রমে পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, নাভানা সিএনজি, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্রামীণফোন, পেপার প্রসেসিং, ফার্স্ট ফিন্যান্স ও অ্যাপেক্স ট্যানারি।
সূচক কমাল যারা
সবচেয়ে বেশি ১২৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট সূচক কমেছে গ্রামীণফোনের কারণে। কোম্পানিটির দর কমেছে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭ পয়েন্ট কমিয়েছে ওয়ালটন হাইটেক। কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এর পরই বেক্সিমকোর দর ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ২৯ দশমিক ৫ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বার্জার পেইন্টস, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড পাওয়ার, বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০ কোম্পানি কমিয়েছে ২৮৩ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট।
বিপরীতে রবি একাই পেয়ে ২৭৭ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। এদিন কোম্পানিটির দর ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে। আগের দুই কর্মদিবসেও সর্বোচ্চ সূচক বাড়িয়েছিল কোম্পানিটি।
সূচকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট যোগ করেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ। দর ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ২৬ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট।
আইসিবি সূচকে যোগ করেছে ১১ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।
এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা, রেনাটা, ইস্টার্ন ক্যাবলস, এমএল ডায়িং, ইউসিবি, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড ও শাইনপুকুর সিরামিকস সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৩৫৩ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য