পদ্মা সেতু ঘিরে সোনালি দিনের স্বপ্ন বুনছেন শরীয়তপুরের গবাদিপশু খামারিরা। উন্নত যোগাযোগ আর বিপণনব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ায় বাড়ছে এই খাতে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। এবারের কোরবানির ঈদ সামনে রেখে লাভের হিসাব কষতে বসেছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শরীয়তপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪ হাজার ২৪৮টি খামার আছে। সেখানে লালনপালন করা হচ্ছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭৫টি গরু, ২ হাজার ১৩০টি মহিষ, ১ লাখ ২০ হাজার ৭টি ছাগল ও ২ হাজার ৩৬টি ভেড়া।
এসব গবাদিপশু থেকে বছরে উৎপাদন হয় ৮১ হাজার টন মাংস ও ১ লাখ ৫ হাজার টন দুধ। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ৪২ হাজার টন মাংস ও ৩২ হাজার টন দুধ উদ্বৃত্ত থেকে যায়।
উদ্যোক্তা ও খামারিরা জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরের জেলা হলেও এতদিন ফেরিঘাটের ভোগান্তির কারণে উদ্বৃত্ত এসব মাংস ও দুধ ঢাকায় বিক্রি করা যায়নি। তুলনামূলক কম দামে এসব দুধ ও মাংস স্থানীয় বাজার ও আশপাশের জেলায় বিক্রি করতে হয়েছে।
এখন সেতু চালু হলে মাত্র ২ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাবে দুধ ও মাংস।
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে শরীয়তপুর জেলা শহরের আঙ্গারিয়া এলাকায় ২২টি গরু ও ৭৫টি ছাগল মোটাতাজা করেছেন লিয়েন তালুকদার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত বছর কোরবানির সময় ঢাকা নেয়ার পথে ফেরিঘাটে ট্রাকে মারা গেছে একটি গরু। দীর্ঘ সময় ট্রাকে আটকা থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ে বেশ কিছু গরু। এতে আমার প্রায় দেড় লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।
‘সারা বছরের পরিশ্রমের ফল ঘরে তুলতে পারিনি। পদ্মা সেতু চালু হলে এবার ফেরিঘাটের ভোগান্তির অবসান ঘটবে। অল্প সময়ে নিরাপদে আমরা আমাদের পশু ঢাকার বাজারে নিয়ে যেতে পারব।’
ধানুকা এলাকার গরু খামারি ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ফেরিঘাটের ভোগান্তির কারণে এখানে ঢাকা থেকে কোনো পাইকার আসত না। আমরাও আমাদের মোটাতাজা করা পশু ঢাকায় পাঠাতে ভোগান্তিতে পড়তাম।
‘অনেক সময় ঘাটে আটকা থেকে পশু মারা যেত। অনলাইনে পশু বিক্রি করেও ডেলিভারি সুবিধা অপ্রতুল থাকায় অর্ডার বাতিল হয়ে যেত। পদ্মা সেতুই আমাদের সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। এখন আমরা এই শিল্পকে ঘিরে স্বপ্ন দেখি।’
পালং এলাকার রহমান ডেইরি ফার্মের ব্যবস্থাপক মো. সোহেল রানা জানালেন, ঢাকার চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে স্থানীয় বাজারে দুধ বিক্রি করছেন তিনি। ঘাটে ভোগান্তির কারণে এতদিন ঢাকার বাজার ধরতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ফার্মে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। স্থানীয় বাজারে ৪০-৪৫ টাকা দরে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। অথচ ঢাকায় দুধের দাম প্রায় দ্বিগুণ।
‘ফেরিঘাটে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে এতদিন ঢাকায় দুধ পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখন ঢাকা থেকে দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানি সহজেই এখানে গাড়ি নিয়ে এসে দুধ সংগ্রহ করতে পারবে।’
পদ্মা সেতু চালুর পর এবারের কোরবানি ঈদে ঢাকার বাজার ধরতে স্থানীয় অনেক খামারি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন শরীয়তপুর শাখার সভাপতি ইমরান ব্যাপারী।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘একমাত্র ফেরিঘাটের ভোগান্তির কারণে শরীয়তপুরে অ্যাগ্রো ও ডেইরি ফার্মের তেমন একটা প্রসার ঘটেনি। যোগাযোগব্যবস্থার কারণে আমাদের উৎপাদিত পণ্য ঢাকা পাঠানো সম্ভব হতো না।
‘পদ্মা সেতু চালু হলে এবার কোরবানির ঈদে সহজেই ঢাকার বাজারে পশু বিক্রির সুযোগ পাব। সেতু উদ্বোধনের খবরে নতুন অনেক উদ্যোক্তা খামার করার দিকে আগ্রহী হচ্ছেন।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুবোধ কুমার দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শরীয়তপুরে চাহিদার চেয়ে মাংসের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া দুধ উৎপাদনও রয়েছে চাহিদার চেয়ে অনেক ওপরে। একমাত্র যোগাযোগব্যবস্থার জন্য খামারিরা এতদিন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
‘পদ্মা সেতু চালুর পর সব সমস্যা কেটে যাবে। সেতু চালুর ঘোষণার পর থেকেই এই অঞ্চলে ডেইরি, অ্যাগ্রো ও পোলট্রি সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। স্থানীয় ও অন্য জেলার উদ্যোক্তারা যোগাযোগ করছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:রংপুর শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ বাজার। বাজারের প্রবেশপথে চোখে পড়বে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ভাস্কর্য। তিনটি আম দিয়ে তৈরি এই ভাস্কর্যের জায়গাটিকে বলা হয় আম চত্বর। যে কেউ এখানে এলেই বুঝতে পারবেন এটি হাঁড়িভাঙ্গা আমের জগৎ।
সম্প্রতি এই চত্বরে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির রহমান মামুনের। বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। বন্ধুর সঙ্গে আম কিনতে এসে তাকে নতুন করে বলতে হয়নি জায়গাটি ‘পদাগঞ্জ’। ভাস্কর্য দেখেই চিনে নিয়েছেন।
পদাগঞ্জ থেকে মিঠাপুকুর বা বদরগঞ্জ উপজেলার যেকোনো পথে এগোলে চোখে পড়বে সারি সারি আমগাছ। গত তিন দশকে সুস্বাদু এই আম অর্থনৈতিকভাবে বদলে দিয়েছে মিঠাপুকুর, এমনকি পুরো রংপুরকে।
রংপুর কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুর জেলায় এখন ১২ হাজার হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান। সব থেকে বেশি আম হয় মিঠাপুকুরের খোঁড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জে। এ এলাকাটির মাটি লাল হওয়ায় আমের স্বাদও ভিন্ন। দ্বিতীয় অবস্থানে জেলার বদরগঞ্জ উপজেলা। আরও বেশ কয়েকটি উপজেলায় এ আমের চাষ হয়।
পদাগঞ্জের সীমানায় পৌঁছলে চোখে পড়বে এক অভাবনীয় দৃশ্য। পথের ধারে, প্রতিটি বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, বাড়ির উঠানে লাগানো আমগাছ। কোথাও কোথাও ধানিজমির আলের চতুর্দিকে সারি সারি করে আমগাছ লাগানো হয়েছে। সব গাছ প্রায় একই আকারের। আর তাতে ঝুলে আছে শত শত আম।
রংপুর কৃষি বিভাগ বলছে, জেলার আট উপজেলায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে এবার আমের আবাদ হয়েছে, যেখান থেকে ২৯ হাজার ৪৩৬ টন আম উৎপাদন হবে।
আমের নাম হাঁড়িভাঙ্গা যেভাবে
আমের নাম হাঁড়িভাঙ্গা। এলাকার এ জাত এখন সারা দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। কোথা থেকে এলো এই জাত? আর এর নামটাই বা এলো কোথা থেকে?
এলাকায় যে জনশ্রুতি চালু আছে, সেটি এলাকার আম ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন পাইকারের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত।
আমজাদ হোসেন পাইকার নিউজবাংলাকে জানান, তার বাবা নফল উদ্দিন পাইকারও আমের ব্যবসা করতেন। ১৯৭০ সালে শতাধিক বছর বয়সে তিনি মারা যান। তার মুখে এই আমের জন্ম-ইতিহাস শুনেছেন তিনি।
আমজাদ হোসেন পাইকার বলেন, ‘যতটুকু শুনেছি, রংপুরের মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে জমিদার রাজা তাজ বাহাদুর সিংয়ের বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধি ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল। বাগানটি যমুনেশ্বরী নদীর তীরে। জমিদার বাড়িতে আব্বার আসা-যাওয়া ছিল। জমিদারের বাগানসহ অন্য আমচাষিদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে তিনি পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন। জমিদারের বাগানের বিভিন্ন আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুমিষ্ট, সুস্বাদু ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় তিনি ওই গাছের একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ বাগানে লাগান।’
তিনি বলেন, ‘গাছটি রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার জন্য একটা হাঁড়ি বসিয়ে তাতে ফিল্টার দিয়ে গাছে পানি দিতেন তিনি। কিছু দিন পরপর কে বা কারা সেই হাঁড়ি ভেঙে দেয়। কিন্তু গাছের নিচে যে আব্বা হাঁড়ি বসিয়েছেন, সেটা সবাই জানত। এরপর গাছে খুব আম ধরে। খেতে সুস্বাদু। এলাকার লোকজন তাকে জিজ্ঞেস করেন, “নওফেল এটা কোন গাছের আম?” তখন আব্বা তাদের বলেন, “এটা হাঁড়ি দিয়ে যে গাছে পানি দেয়া হয়েছে, সেই গাছের আম।” তখন থেকে এই আমের নাম হয় “হাঁড়িভাঙ্গা”।’
আমজাদ হোসেন পাইকারের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে সেই মাতৃগাছটি মিঠাপুকুরের তেকানি মসজিদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
হাঁড়িভাঙ্গা আমের এই জন্মকথার সত্যতা যাচাই করার উপায় নেই। তবে এলাকার বয়স্করা অনেকে এটি সমর্থন করেন।
কীভাবে এলো এই আম
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুড়িরহাট, রংপুর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশিষ কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গার অরিজিন এখানেই (রংপুরের পদাগঞ্জ)। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী বা ভারতের মালদহ জেলা একসময় তো একই ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের যত আমের ভ্যারিয়েন্ট আছে, সব মালদহ ডিস্ট্রিকের। কিন্তু এখানে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বহু ভ্যারিয়েন্ট আছে। সুতরাং অনুমান করা যায়, হাঁড়িভাঙ্গার অরিজিন এখানেই।’
তিনি বলেন, ‘কথিত আছে বা প্রচার করা হয় হাঁড়িভাঙ্গা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তসংলগ্ন এলাকার মালদিয়া বা মালদই আম থেকে এসেছে। আসলে এটা সত্যি নয়। মালদিয়া আমের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই হাঁড়িভাঙ্গা আমের।’
যেভাবে সম্প্রসারণ
হাঁড়িভাঙ্গা আম এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছেন যে লোকটি, তিনি আবদুস সালাম সরকার। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘’আমি সমবায় অফিসার ছিলাম। চাকরির মেয়াদের ১০ বছর আগে স্বেচ্ছায় অবসর নিই। ১৯৯২ সালে একদিন বিকেলে আমার এক নাতি এসে বলে, “দাদু আমটা খেয়ে দেখো, অনেক সুস্বাদু।” আম খেয়ে অনুসন্ধান করি গাছের। পরে নওফেল উদ্দিন পাইকারের সেই গাছ থেকে অনেক কলম এনে আমার ১০ একর জমিতে রোপণ করি।’
তিনি বলেন, ‘এই আম সম্প্রসারণ করতে এমন কোনো কাজ নেই করিনি। গ্রামের মানুষের কাছে গেছি, ব্যবসায়ীদের বাড়িতে গেছি। ঢাকায় দুটি বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মিডিয়াকে ডেকে ডেকে নিউজ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাকে ডেকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। সরকারের কৃষিমন্ত্রীকে এনে আমের মেলা করেছি। পোস্টার করে পুরো জেলায় ছাপিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনো সেনানিবাস নেই যেখানে এই আমের চারা দেয়া হয়নি। সরকারের বড় কর্মকর্তাদের এই গাছের চারা উপহার দিয়েছি। এখন পুরো বাংলাদেশ, এমনকি বিশ্বের বহু দেশে যাচ্ছে এই আম।’
আব্দুস সালাম সরকার প্রায় ৩০ বছর ধরে হাড়িভাঙ্গা আমের চাষ করছেন। এখন রংপুরে কয়েক লাখ হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ রোপণ করেছেন আমচাষিরা। আব্দুস সালামের নিজেরই ২৫টির বেশি বাগান রয়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হয় বলে লোকে এখন জেলার উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
মৌসুমি ব্যবসায়ী
একসময় রংপুর অঞ্চলের মানুষ ধানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রতি মৌসুমে পাঁচ-দশ বিঘা জমি চাষাবাদ করে কোনো রকমে চলত। এখন সেই জমিতে আম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকরা। রংপুরের এই ‘আম অর্থনীতি’ মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে রংপুরের নতুন অর্থকরী ফসল ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম’। মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, বদরগঞ্জের বিস্তৃত এলাকার হাজার হাজার কৃষক এই আম চাষ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। পরিবারে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতা। কৃষক, দিনমজুর থেকে অনেকেই হয়েছেন আমচাষি। বছর বছর এটি চাষের পরিধি বাড়ছে।
রংপুরের মিঠাপুকুর সদরের গোলাম মোস্তফা জানান, ‘খোড়াগাছ এলাকায় মাত্র ৬০ হাজার টাকায় আমি একটি বাগান কিনি। এবার সেই বাগানের আম আমি ২ লাখ বিক্রি করেছি। আরও ১ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারব। যে খরচ হয়েছে, তাতে প্রায় ২ লাখ টাকা আয় হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগে একটু অভাব-অনটন ছিল। এখন ভালো আছি। সাত বছর থেকে আমি এই আমের ব্যবসা করতেছি।’
ছবিউল ইসলাম নামে এক আম বিক্রেতা বলেন, ‘আগে তো মানুষের বাড়িতে মজুর করছি, গাড়ি চালাইছি। এখন আমার দুইটা বাগান আছে। বছর চারেক থেকে আমের বাগান কিনে আম বিক্রি করি। সেজনে সেজনে (বছরে বছরে) যে টাকা লাভ হয়, তা দিয়ে পুরো বছর চলে সংসার চলে। ছৈলদের পড়ালেখা চলে। যে টাকা বাঁচে, সেটা দিয়ে পরের বছর বাগান কিনি।’
মতিয়ার রহমান নামে এক আম বিক্রেতা বলেন, ‘আমি বাগান কিনি না। বাজার থেকে আম কিনে ব্যবসা করি। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে বাড়ির আম প্রতিদিন দুই ভ্যান, তিন ভ্যান, চার ভ্যান, পাঁচ ভ্যান বিক্রি করি। আম বেচে জমিজমা টুকিটাকি করছি।’
আমের ঝুড়ি বা ক্রেট বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমি ঢাকায় চাকরি করতাম। এখন গ্রামে আসছি ব্যাবসা করার জন্যে। প্রতি সিজনের ক্রেট ব্যবসা করে ভালোই চলে। প্রতি ক্রেটে ১০-১৫ টাকা লাভ করি।’
হাঁড়িভাঙ্গা আম ঘিরে রংপুরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মিঠাপুকুর উপজেলার লালপুর, পদাগঞ্জ, তেয়ানিসহ আশপাশের গ্রামের বেকার যুবকরা এখন আম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।
কয়েক বছর ধরে এ আমের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমন দামও পাচ্ছেন চাষিরা। শুরুতে বাগানে ১ হাজার ২০০ থেকে ১৬ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি হলেও শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা মণ।
সুমন মিয়া নামে এক শিক্ষাথী বলেন, ‘আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমার বাবা মারা গেছেন ১০ বছর আগে। চার বছর ধরে প্রতি সিজনে আমের কাজ করে সংসার চালাই। সঙ্গে লেখাপড়া করি। প্রতিদিনে কখনও ৫০০, এক হাজার, আবার কোনো কোনো দিন বারো শ’ টাকা ইনকাম হয়।’
আশাদুর জামান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি বাসায় থাকি, বাসায় থেকে পড়া লেখা করি। আমের সিজেন এলে আমের গোডাউনে কাজ করি। ঢাকা বা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমের ব্যবসায়ীরা আসেন আম কিনতে। আমরা সেই আম প্যাকেট করে গাড়ি লোড দিয়ে দিই। এইখানে আমরা কাজ করলে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পাই।’
আজহারুল ইসলাম নামে এক আমচাষি কৃষি শ্রমিকের কাজ ছেড়ে এখন হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যবসা করছেন। গত বছর পাঁচ একর জমির আম আগাম কিনে তা ১৫ লাখ টাকা বিক্রি করেন তিনি। এবার ১০ একর জমির আম কেনা হয়েছে। এবারও ভালো লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তৈরি হয়েছে তরুণ উদ্যোক্তা
জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প সমিতির রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি মো. রাকিবুল হাসান রাকিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার জানাশোনার মধ্যে রংপুরের দুই শতাধিক তরুণ উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা এই আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনলাইনে অফলাইনে বিক্রি বিক্রি করেন। এরা মৌসুমি ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে কেউ শিক্ষার্থী, কেউ অন্য ব্যবসা করেন। এ বছর আমরা কমপক্ষে ১০০ মণ আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাব।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর নতুন নতুন উদ্যাক্তা তৈরি হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর বা আশার দিক।’
রংপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গার কারণে যে উদ্যাক্তা তৈরি হচ্ছে, তা আশাব্যঞ্জক। আমি শুনতেছি অনেকে এই ব্যবসা করেন।’
বিশ্বদুয়ারে হাঁড়িভাঙ্গা
রংপুরের বিখ্যাত এই আম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ৪ জুলাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য উপহার হিসেবে পাঠান।
এই আম খেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী প্রশংসা করেছিলেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছিল।
এ ছাড়া প্রতি বছর মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় এই আম।
রপ্তানির টার্গেট
রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, গত বছর ৫০০ টন হাঁড়িভাঙ্গা আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর ৭০০ টন বা তার বেশি রপ্তানির টার্গেট আছে। ইতোমধ্যে গত ১৭ জুন ভারতে ২০ টন হাঁড়িভাঙ্গা আম রপ্তানি করা হয়েছে। ধীরে ধীরে তা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অনেকে বেসরকারিভাবে আম বিদেশে রপ্তানি করে থাকেন। তাদেরও সহযোগিতা করি আমরা। সরকারিভাবেও রপ্তানি করা হবে।’
অর্থনীতিতে অবদান
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুরের অর্থনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। অনেক বছর ধরে শত শত কোটি টাকার আম বিক্রি করছেন চাষিরা। এই টাকা রংপুরের অর্থনীতিতে প্রভাব রাখছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সৈয়দপুর বিমানবন্দর রয়েছে, চিলমারী নৌবন্দর রয়েছে। আমরা যদি সেভেন সিস্টার বলে ভারতের যে রাজ্যগুলো আছে, সেগুলোতেও রপ্তানি করতে পারি, তাহলে অনেক আয় অর্জন সম্ভব। এই আম তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে সচ্ছল বানিয়েছে। রংপুর অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নে এই আম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
সম্প্রসারণে কী করা উচিত
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই আম এখন ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে। স্বাদ, গুণাগুণ, মিষ্টতা সব মিলিয়ে এটি অনন্য। এই আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, আরও বৃহৎ আকারে পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এই আম কীভাবে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়ে গবেষণা করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘এই আমকে ঘিরে ফুড প্রসেসিং জোন প্রতিষ্ঠা করা হলে আম দিয়ে যে বিভিন্ন প্রডাক্ট তৈরি হয়, সেটা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘শুধু রংপুর অঞ্চল নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করে যদি এই আম সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে এটি হতে পারে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি উপায়।’
আরও পড়ুন:স্বপ্নের পদ্মা সেতু রূপ নিয়েছে বাস্তবে। আগামী ২৬ জুন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে প্রতীক্ষিত এ সেতু।
এতে পিরোজপুরে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সুবিধা হবে ব্যাপক। তাই আশায় বুক বেঁধেছেন পিরোজপুর জেলার কৃষকরা।
তাদের আশা, সেতুর কারণে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সবজি, ফল, ফুল, পানসহ কৃষিপণ্যর ভালো দাম পাওয়া যাবে। পাশাপাশি লাভবান হবেন ব্যবসায়ীরাও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পদ্মা সেতু চালু হলে জেলার সাতটি উপজেলার প্রায় ছয় লাখ কৃষক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হবেন।
কৃষিভিত্তিক ও কৃষিনির্ভর দক্ষিণের জেলা পিরোজপুর। এ জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ কৃষি ও মৎস্য পেশার সঙ্গে জড়িত। পিরোজপুরে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভাসমান সবজি, পেয়ারা, মাল্টা, আমলকী, আম, ধান, পান, সুপারিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য।
এতদিন ভালো যোগাযোগব্যবস্থার সমস্যার কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে যা অর্থ পান তা দিয়ে পুরো বছর ঠিকমতো চলতে পারেন না। ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকায় গাড়িতেই নষ্ট বা পচে যেত তাদের পণ্য। যার সুযোগ নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা। বিশেষ করে পচনশীল পণ্য কম দামে ছেড়ে দিতে হয় কৃষকদের।
পদ্মা সেতু চালু হলে খুব কম সময়েই পণ্য বাজারজাত করা যাবে। এতে সরাসরি লাভবান হবেন কৃষকরা।
পিরোজপুর সদরের জুজখোলা গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমি সারা বছরই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত থাকি। আমার ক্ষেতে সিজনাল ফল হয়। আমার মাল্টা, আম, তরমুজ ও কলা ক্ষেত আছে। প্রতি বছর ক্ষেত থেকে ফসল তোলার সময় বাধে বিপত্তি।
‘কারণ বেপারিদের (মধ্যস্বত্বভোগী) সঙ্গে দাম নিয়ে তৈরি হয় সমস্যা। সঠিক দাম পেতাম না। তবে এখন পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। এখন আর বেপারিদের কাছে ছুটতে হবে না। নিজেই নিজের পণ্য ঢাকা পাঠাতে পারব। তাতে লাভও হবে বেশি।’
আরেক চাষি মিলু মোল্লা বলেন, ‘গত বছর শীতে পানের দাম নিয়ে অনেক ধরা খাইছি। আমার বরজ থেকে যেই দামে পান কিনে নিয়ে বিক্রি করা হয়েছে তার অনেক কম লাভ আমাকে পাঠিয়েছে বেপারিরা। তাই তখন যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকলে নিজেদের এলাকার ট্রাকে মাল পাঠাতে পারতাম।’
তরমুজ চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘প্রতি বছর আমার ক্ষেতের তরমুজ বেচাকেনা নিয়ে শঙ্কায় থাকি। মৌসুমের শুরুতে দাম চড়া হলেও কিছুদিন পর দাম পড়ে যায়। ফলে লাভবানের চেয়ে ক্ষতিটা বেশি হয়।
‘সঠিক সময়ে তরমুজ ঢাকায় পৌঁছাতে না পারলে দাম পাওয়া নিয়ে হয় বিভিন্ন সমস্যা। যা-ই হোক, এখন পদ্মা সেতু হয়েছে, এখন আর চিন্তা নাই। পণ্য আর নষ্ট হবে না। সকালেই ঢাকা চলে যাবে।’
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিকদার ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী নিউজবাংলাকে জানান, পদ্মা সেতুটি যেমন কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখছেন মৎস্যজীবীরাও। কৃষির পাশাপাশি ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে জেলার মৎস্য খাতেও।
পিরোজপুরের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মৎস্যজীবী পেশার সঙ্গে জড়িত। পদ্মা সেতুর কারণে কৃষি ও মৎস্য এই দুই খাতে বিপ্লব ঘটবে দাবি তাদের।
তারা আরও জানান, পদ্মা সেতু দেশের যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটাবে। তবে বেশি সুবিধা পাবেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি মানুষ।
আর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পিরোজপুর সদরে ইতোমধ্যে গড়ে উঠছে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক স্থাপনা। সেই সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে রাস্তার পাশের জমির দামও। আগামীতে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে এবং বিনিয়োগ করবে এই জনপদে, ঘুচবে বেকার সমস্যা।’
আরও পড়ুন:সিলেটে চলমান বন্যায় কৃষি খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভাগের চার জেলাতেই কৃষির ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি দেখেছে সিলেট জেলা।
গত ১৫ জুন থেকে বন্যা শুরু হয় সিলেটে। চলতি বছরের এটি তৃতীয় দফার বন্যা, যাকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
বানের পানিতে তলিয়েছে সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ ও সিলেটের ৭০ শতাংশ এলাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই বন্যায় বিভাগে আউশ ধানের ৬৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমি, বোনা আমনের ১৫ হাজার হেক্টর ও সবজির প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমি তলিয়েছে।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। বুধবার উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, তেলিখাল এলাকায় সড়কের পাশে ভেজা ধান শুকাচ্ছিলেন কৃষক সিতারা বেগম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠের সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরে থাকা ধানও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এইগুলা শুকালেও এ থেকে ধান পাওয়া যাবে না।’
মে মাসের বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার রাধানগর এলাকার কৃষক পরীন্দ্র দাসের বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। এবার তলিয়েছে তার আউশের ক্ষেত।
পরীন্দ্র বলেন, ‘বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার ক্ষতি পোষাতে ঋণ করে চার একর জায়গায় আউশের ক্ষেত করেছিলাম। এখন এটিও তলিয়ে গেল। না খেয়ে মরা ছাড়া এখন আর আমার সামনে কোনো পথ নেই।’
গেল মাসে পানিতে নেমে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলেছিলেন সদর উপজেলার কান্দিগাঁওয়ের মটু মিয়া। সে যাত্রায় কিছু ধান রক্ষা করতে পারলেও শেষ রক্ষা আর হয়নি। কারণ এবার বানের পানিতে ঘরে মজুত সেই ধান ভেসে গেছে।
আক্ষেপ করে মটু বলেন, ‘পানি আমার সব নিয়ে গেছে। এত কষ্ট করে, এত টাকা খরচ করে ধান তুলেছিলাম। চোখের পলকেই ঢল এসে তা ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন চাষাবাদ ফেলে আমার দিনমজুর হতে হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান জানান, সিলেট জেলায় আউশ ধান তলিয়েছে ২৬ হাজার ৬৭৯ হেক্টর এবং সবজি ডুবেছে ২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমির। হবিগঞ্জে ১৫ হাজার ৭১০ হেক্টর আউশ ধান, ১ হাজার ৫৯৭ হেক্টর সবজি এবং ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন ডুবে গেছে।
তিনি আরও জানান, মৌলভীবাজারে আউশ ধান ডুবেছে ১১ হাজার ৭৪১ হেক্টর, সবজি ডুবেছে ৮০৮ হেক্টর এবং বোনা আমনের জমি ডুবেছে ৩৬২ হেক্টর। আর সুনামগঞ্জে আউশের জমি ডুবেছে ১১ হাজার ৪০৩ হেক্টর ও সবজির জমি ডুবেছে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর।
অধিদপ্তর কর্মকর্তা মোশাররফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঠে আমাদের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের গোলায় থাকা অনেক ধানও তলিয়ে গেছে। এগুলোর প্রকৃত হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। পেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত।
‘এখনও অনেক এলাকায় পানি বাড়ছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।’
আরও পড়ুন:সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রাম ও নীলফামারিতে বন্যায় এক লাখ হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। অবশ্য সামগ্রিক বিবেচনায় এটি তেমন ক্ষতি নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা জানান।
অবশ্য কৃষিমন্ত্রী দাবি করেন সিলেট অঞ্চলের বন্যায় ধানের উৎপাদনে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। যদি বন্যা আবারও আসে তবে ধানের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েক দিন আগে চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় তিন-চার দিনে প্রায় ২২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটা ১২২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এলাকায় অস্বাভাবিক পানি ঢুকেছে। তবে একটা বিষয় ভালো ছিল, এই মুহূর্তে তেমন কোনো ফসল মাঠে ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে প্রচুর জমি পতিত থাকত; মানুষ চাষাবাদে তেমন একটা আগ্রহী ছিল না। আমরা সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছি এই জমিগুলোতে চাষাবাদ করার এবং এতে আউশ ধান করা যায় কি না, সে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমরা দেখছি বন্যায় সিলেটের ২২ হাজার হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমির আউশের ক্ষতি হয়েছে। আজ আমরা খবর পাচ্ছি কুড়িগ্রাম, নীলফামারী এই এলাকায় যে পানি আসছে তাতে ৫৬ হাজার একর জমির ক্ষতি হয়েছে। মানে আউশ ধান আক্রান্ত হয়েছে। যদিও আউশ উঁচু জমিতে হয়। বন্যা যদি আর না বাড়ে, এখন যে অবস্থায় আছে তাতে আর ক্ষতি হবে না।’
ধান উৎপাদনে প্রভাব না পড়লেও শাকসবজি উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫-৬ হাজার হেক্টরে। এ সময় গ্রীষ্মকালীন সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। তিল ও বাদাম চর এলাকায় ছিল, সেটারও ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে আউশ ও শাকসবজির।’
দেশের সবচেয়ে বড় ফসল রোপা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানান কৃষিমন্ত্রী। বলেন, ‘এখন রোপার বীজতলা তৈরির সময়। এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফসল। এটা কিন্তু বন্যার ওপর নির্ভর করে। এখনও বীজতলা সেভাবে করে নাই, কেবল শুরু করেছে। আর যদি বৃষ্টি না হয়, আর বন্যা যদি না বাড়ে তাহলে ভালো। তবে অনেক সময় দেখা যায় আবার বন্যা আসে, এতে বীজতলা নষ্ট হয়। তখন আমরা আবার করি, পুনর্বাসন কর্মসূচিতে যাই।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কত ক্ষতি হচ্ছে বা হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল নির্দেশ দিয়েছেন, আমনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি রাখতে। বীজতলা যদি নষ্ট হয় তাহলে আমরা যে এক্সট্রা কিছু বীজ রাখি ঘরে, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আবার বীজতলা তৈরি করে মানুষকে দেয়া। সে প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আরেকটি হলো একেবারেই যদি ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে লেট ভ্যারাইটি…।
‘আমন হলো ফটোসেনসিটিভ। দিন ছোট হলেই এতে ফুল চলে আসে। যে ধানগুলো সাধারণত আমনে করা হয় সেটা করলে ফুল আসবে, আর উৎপাদন কম হবে। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীরা জাত উদ্ভাবন করেছেন যেগুলো লেস ফটোসেনসিটিভ। এগুলো বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যে পরিস্থিতিই আসুক, যদি আমন নষ্ট হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে রবি ফসল আমাদের বাড়াতে হবে। শাকসবজি, আলু, তেলের বীজ ও সার আমরা বিনা মূল্যে চাষিদের দেব। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এখন পর্যন্ত যা ক্ষতি হয়েছে সেটা কিছু না। যেহেতু ফসলই নেই। এখন আমনটা কেমন হয় দেখা যাক। তবে শাকসবজির ওপরে প্রভাব পড়বে।’
আরও পড়ুন:খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় বছরে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্য কৃষকরা তরমুজের ন্যায্য দাম পান না।
কৃষকরা তাদের নায্য দাবি ও অধিকার আদায়ের জন্য মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার এই দুই উপজেলাকে তরমুজ চাষের জন্য কৃষি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
ওই অঞ্চলের কৃষকদের দাবি নিয়ে কাজ করে ‘লোকজ মৈত্রী কৃষক ফেডারেশন’ নামের একটি সংগঠন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিভাষ মণ্ডল বলেন, ‘এ বছর খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছিল। কৃষকের পাশাপাশি করোনাকালীন অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এ বছর নতুন করে তরমুজ চাষে যুক্ত হন। এলাকার ৮০ শতাংশ চাষির ভালো ফলন হওয়ার পরও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বিক্রীত মালের দাম না পাওয়ায় তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।’
‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরিতে বীজ রোপণ, বীজের দাম বেশি, অনেক ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকেও বেশি দামে সার কেনা, ছত্রাকনাশক-কীটনাশক ও হরমোন জাতীয় ওষুধের লাগামহীন মূল্য, মাটির গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সেচের পানির অপ্রতুলতা, পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থা মধ্যস্বত্বভোগীদের অবৈধ নিয়ন্ত্রণে থাকায় কৃষকরা এই ক্ষতিতে পড়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর আমরা তরমুজ চাষ থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছি। জমির মালিক জমির হারি কয়েক গুণ বৃদ্ধি করেছেন। গত বছর যে জমির হারি ১ থেকে ৩ হাজার টাকার ভেতরে ছিল, তা এবার বৃদ্ধি পেয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিশেষত শিক্ষক, ব্যাংকার, এনজিওকর্মী, ব্যবসায়ী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য শ্রেণির মানুষের এই চাষে অনুপ্রবেশ ঘটায় সমস্যা আরও বেড়েছে।’
বিভাষ মণ্ডল বলেন, ‘গত বছর ৩৩ শতকের জমি চাষ করতে খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ১৫ টাকা বৃদ্ধির কারণে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সার, বীজ, কীটনাশকের দাম গায়ে উল্লেখিত খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সার, বীজ, কীটনাশকের দাম বাড়িয়ে কৃষককে ফাঁদে ফেলে বেশি মূল্য আদায় করা হয়েছে।
‘দালাল চক্রের জন্য পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারেনি। পাইকার যে ক্ষেতের দাম ৫ লাখ বলেছে, দালাল পাইকারকে বলেছে কি দেখে ৫ লাখ বললেন; এর আগে ২ লাখও কেউ বলেনি। আমি আপনাকে কম টাকায় কিনে দেব, আমাকে একটু খুশি করবেন।’
‘এ ছাড়া পরিবহন সিন্ডিকেট বেশি ভাড়ায় গাড়ি সরবরাহ করেছে। পক্ষান্তরে অন্য কাউকে কম টাকায় গাড়ি সরবরাহ করতে দেয়নি। যে গাড়ি ভাড়া ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা ছিল তা বাড়িয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।’
বিভাষ মণ্ডল বলেন, ‘অনেক কৃষক লেখাপড়া না জানায় স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতারা ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির একই গ্রুপের কীটনাশক বিক্রি করে কৃষকদের ঠকিয়েছে। তরমুজ বহন শ্রমিকরাও সুযোগ বুঝে পিস প্রতি ১/১.৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩/৫ টাকা করেছে।
‘তরমুজের আড়তদারের কোনো লোকসান নেই। কেনাবেচা উভয় দিকের কমিশন। তারপর ব্যাপারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ৮ হাজার টাকার পণ্য ৪ হাজার টাকায় বিক্রিতে বাধ্য করে কৃষককে ঠকানো হয়েছে। বিনিময়ে ব্যাপারীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়া ছাড়াও আড়তঘরের নিযুক্ত কমিশন এজেন্ট রয়েছে। এদের কাজ কৃষককে বুঝিয়ে তরমুজের গাড়ি নির্দিষ্ট আড়তে নেয়া ও শতকরা ২ থেকে ৪ ভাগ কমিশন খাওয়া।’
লোকজ মৈত্রী কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম কমিয়েছেন। কৃষক কোনো উপায় না পেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।’
সংগঠনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘কৃষকদের এসব সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করতে হলে খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলাকে তরমুজ চাষের জন্য কৃষি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করতে হবে। তাহলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান এখানে কাজ করবে। পক্ষান্তরে কৃষকরাও লাভবান হবেন। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার বেশ উন্নয়ন হবে।’
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী ইউনিয়নের আড়ুয়াখালী গ্রামের ‘রাসেল বস’। কোরবানিতে হাটে তুলতে তাকে খাইয়ে দাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে।
রাসেলকে লালন পালন করছেন আব্দুর রহিম সরদার।
প্রতি বছর ঈদের আগে আগে বড় আকারের কিছু ষাঁড় নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। এবার কথা হচ্ছে রাসেল বস নিয়ে।
ভারতীয় লাল সিন্ধি জাতের ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ৫ ফুট, ওজন ২৩ মণ।
খামারি আব্দুর রহিম সরদার জানান, গত বছর ভালো দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি রাসেলকে। গত বছরের চেয়ে এ বছর তার ষাঁড় দেখতে আরও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়েছে।
রহিম বলেন, ‘রাসেল বস খুব শান্ত স্বভাবের গরু। ওর কোনো রাগ নেই। কারও দিকে তেড়েও আসে না। তিন বছর সাত মাস ধরে আমি লালন পালন করছি। ইতোমধ্যে সাত-আট লাখ টাকা দাম উঠেছে। তবে ১১ লাখ টাকা পেলে গরুটি ছেড়ে দেব।’
রহিম আরও জানান, বিশাল আকারের এই গরুটির পরিচর্যা করা খুবই কঠিন। দিনে দুই বার গোসল করাতে হয়, প্রতিদিন খাবার খায় চার বার। খাবারের মধ্যে রয়েছে গমের ভুসি, ধানের গুঁড়া, ভুট্টা, শুকনো খড় ও কাঁচা ঘাস। মাঝে মধ্যে ভাতও খায়।
রাসেল বসের বিশালতার কারণে রহিমের খামারে ঢুঁ দেয়ার মানুষের অভাব পড়ে না। গরু দেখতে আসা মো. সৌরভ হোসেন বলেন, ‘বড় গরুর কথা শুনে দেখার আগ্রহ হয়েছিল। তাই দেখতে আসছি। আমি অনেক খামারির কাছে খবর নিয়েছি, এত বড় গরু জেলার মধ্যে মনে হয় আর নেই।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সিংহ নিউজবাংলাকে জানান, জেলা সদরে ৮ হাজার ৪৩৪ টি গরুর খামার রয়েছে। খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:দেশে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে ফল খাচ্ছে মানুষ। মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ৩০ গ্রাম বেড়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ৮৫ গ্রাম বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
জাতীয় ফল মেলা-২০২২ উপলক্ষে সচিবালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ছিল ৫৫ গ্রাম, যা বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ গ্রাম।
‘২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি টন, আর বর্তমানে ফলের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন। বিগত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু দানাজাতীয় শস্য গ্রহণের পরিমাণ কমেছে এবং মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে।’
সার্বিকভাবে দেশের মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার হার বৃদ্ধি পেলেও এখনও তা দৈনন্দিন যে পরিমাণ খাওয়া উচিত তার থেকে কম। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রাম।
এ চাহিদা পূরণ করতে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনেও গুরুত্বারোপ করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশে চাষ উপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন।
‘দেশীয় ফলের সঙ্গে স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন ফল, অ্যাভোকাডো প্রভৃতি বিদেশি ফলের চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় কাজুবাদাম ও কফি চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের, বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ।
‘আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। নিত্যনতুন ফল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে, যা আগে হতো ৫৬ প্রজাতির।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার এখন সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে ফল ও ফলদ বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফলের উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি নিরাপদ ফল চাষে গুরুত্ব দিতে হবে।
‘একই সঙ্গে ফলমূলকে পচনের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সংগ্রহত্তোর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাত সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। এসব বিষয়ে ফলের উৎপাদনকারী বা চাষি, পরিবহনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, ভোক্তাসহ সবার সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয় জাতীয় ফল মেলার আয়োজন করে।’
কৃষিমন্ত্রী জানান, আগামী ১৬ জুন রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শুরু হচ্ছে জাতীয় ফল মেলা। মেলা চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। মেলার এ বছরের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- বছরব্যাপী ফল চাষে অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য