খেলাপি ঋণ কমানো নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে গত তিন মাসে অনাদায়ী এই ঋণ বাড়ল আরও ১০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা।
২০২০ ও ২০২১ সাল জুড়ে কয়েক দফায় করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কোনো ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা সামান্য পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল। এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধার বেশিরভাগই শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এর পরপরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
মার্চে এসে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে যা ছিল ১৩ লাখ এক হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি ৮ লাখ টাকা।
এই তিন মাসে ঋণ স্থিতি বেড়েছে ২৭ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।
কেবল টাকার অঙ্কে নয়, খেলাপি বেড়েছে শতকরা হিসেবেও। সব মিলিয়ে মার্চ শেষে বিতরণ করা ঋণের ৮.৫৩ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। গত ডিসেম্বর শেষে বিতরণ করা ঋণের ৭.৯৩ ছিল খেলাপি। অর্থাৎ ০.৬০ শতাংশ খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন মাসে।
২০২০ সাল থেকে দফায়-দফায় খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা বাড়ানো হয়। এখন অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো গেলেও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ঋণ শোধ করছেন না। ব্যাংকগুলো নানা উপায়ে চেষ্টা করেও তাদের থেকে টাকা আদায় করতে পারছে না।
২০২১ সালে ঋণের ১৫ শতাংশ পরিশোধ হলেও তা নিয়মিত দেখানো হয়। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কেউ এ হারে টাকা দিলেও ব্যাক ডেটেও নিয়মিত থাকার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালে এক টাকা না দিলেও কেউ খেলাপি হয়নি। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রথমে এ সুবিধা দেয়া হয়। পরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে সময় বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর করা হয়।
২০২১ সালের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ঋণ পরিশোধ না করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা আর বাড়বে না।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ার কথা বলে এরই মধ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি না করার দাবি জানিয়েছে।
খেলাপির হার সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে
মার্চ শেষে রাষ্ট্রীয় সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ও বেসিকে এ ছয় ব্যাংকের মোট ঋণ ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ০১ শতাংশ।
ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় ছয় ব্যাংক মোট ঋণ দিয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ১৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
তিন মাসে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।
টাকার অঙ্কে খেলাপি বেশি বেসরকারি ব্যাংকে
বেসরকারি ব্যাংকগুলো মার্চ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ খেলাপি হয়ে আছে।
গত বছর ঋণ ছিল ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ৫১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত তিন ব্যাংক
বিশেষায়িত কৃষি, প্রবাসীকল্যাণ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন এ তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এ অঙ্ক তাদের বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০১ শতাংশ। তারা বিতরণ করেছে মোট ৩৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকার ঋণ।
তিন মাসে আগে ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ০২ শতাংশ। এ সময়ে তিন ব্যাংক মোট ৩৩ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
বিদেশি নয় ব্যাংক
বিদেশি মালিকানার নয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলো মোট ঋণ দিয়েছে ৬৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন:কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি জানিয়েছিল যে আর কোনো ব্যাংককে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হবে না। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের জন্য ব্যাংক এশিয়াকে অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন মাত্রার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এশিয়া বিদেশি ব্যাংক আলফালাহকে অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। সূত্র: ইউএনবি
করাচিভিত্তিক ব্যাংক আলফালাহ বুধবার (১৭ এপ্রিল) পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের বাংলাদেশ পরিচালনা, সম্পদ ও দায় অধিগ্রহণের জন্য প্রাপ্ত বাধ্যবাধকতামুক্ত ইঙ্গিতমূলক প্রস্তাবের ক্ষেত্রে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্যাংক আলফালাহ বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়ার জন্য যথাযথ কার্যক্রম শুরুর জন্য স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অনুমোদন চাইছে।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি একীভূতকরণ নিয়ে খুব বেশি আলোচনার অংশ নয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে দুই ব্যাংকের নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে।
মেহেরপুরের মুজিবনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার শিবপুরে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারী সাগর শেখকে অজ্ঞান করে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুইজন।
ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় সাগর শেখকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিবপুর গলাকাটা বাজারে বিপ্লব হোসেন এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন। সোমবার দুপুরে ব্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ কাজ করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞান করে। আশপাশের লোকজন টের পাওয়ার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার আগে তারা ব্যাংকে অজ্ঞাত দুজনকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন, তবে তারাই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তাদের প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে সাগরকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।
ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতরা এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে ডাকাতি করেছে বলে ধারণা তার।
বিপ্লব হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মচারীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। চোখ খুলে তাকাচ্ছে, কিন্তু তার চেতনা ফেরেনি। তাকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে না চোখে চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।’
মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে ভর্তি কর্মচারী সুস্থ হলে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রবাসীদের আয়ের একটি বড় অংশই আসে ঢাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে। অর্থাৎ প্রবাসীদের পরিবারের বেশিরভাগই ঢাকায় থাকেন বা তাদের অধিকাংশ অ্যাকাউন্ট ঢাকার ব্যাংক শাখায়।
ইউএনবি জানায়, রেমিট্যান্সের জেলাভিত্তিক চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। সিলেট তৃতীয় এবং কুমিল্লা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এরপরে রয়েছে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুর ও নরসিংদীর অবস্থান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয় প্রতিবেদনে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে প্রবাসীরা ১ হাজার ৫০৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। তার আগের মাস জানুয়ারিতে দেশে প্রবাসী আয় ছিল ২১০ কোটি ডলার।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়কালে ঢাকা জেলায় এসেছে ৫২৩ কোটি ডলার এবং চট্টগ্রাম জেলায় এসেছে ১৪২ কোটি ডলার।
এই সময়ে সিলেট জেলা ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, কুমিল্লা ৮১০ মিলিয়ন ডলার এবং নোয়াখালী ৪৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ কোটি, ফেনীতে ৩৭ কোটি, মৌলভীবাজারে ৩৬ কোটি, চাঁদপুরে ৩৫ কোটি ডলার এবং নরসিংদীতে ২৫০ মিলিয়ন ডলার এসেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলো থেকে বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এমনটা হচ্ছে না। কারণ অনেক প্রবাসী বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। বরং তারা (প্রবাসীরা) দেশে থাকা সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অর্থ পাচার বাড়ছে।
আরও পড়ুন:ঈদের আগের সপ্তাহে (১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত) প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। রেমিট্যান্সে এই বাড়তি গতির মূল কারণ প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, গত মার্চ মাসে প্রতি সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। সে হিসাবে, এপ্রিলের প্রথম ৫ দিনে রেমিট্যান্স ভালোই এসেছে। মূলত, প্রবাসীরা ঈদ উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠানোর কারণেই বেড়েছে রেমিট্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, টানা দু’মাস রেমিট্যান্স আয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকার পর ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর বাড়ার ঘটনায় মার্চে রেমিট্যান্স দুশ’ কোটি ডলারের নিচে নেমে আসে।
মার্চে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৯৯ কোটি ডলার দেশে পাঠান। ফেব্রুয়ারিতে তা ছিল ২১৬ কোটি ডলার এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগের বছরের একই মাসের ২০২ কোটি ডলারের তুলনায় গত মার্চে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ রেমিট্যান্স কম এসেছে।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্চ মাসের বেশিরভাগ দিনে ডলারের বিনিময় দর কমে দাঁড়ায় ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১১৩ টাকায়। সে তুলনায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দর ছিল ১২০ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত।
তারা বলছেন, ডলারের দাম কমার এই ঘটনা প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে। আর তার প্রভাব পড়ে রেমিট্যান্সের সার্বিক চিত্রে।
আরও পড়ুন:দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চলেছে বেসিক ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং সিটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিনের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এই কৌশলগত একীভূতকরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। সূত্র: ইউএনবি
বেসিক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের মধ্যে একীভূতকরণ স্বেচ্ছায়ই হতে যাচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়। ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একীভূতকরণের সুপারিশ করার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও উভয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
সংযুক্তিকরণ সত্ত্বেও আগামী তিন বছর দুই ব্যাংক আলাদাভাবে তাদের আর্থিক হিসাব দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশে ব্যাংক একীভূতকরণের বিস্তৃত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক সম্ভাব্য সংযুক্তিকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করছে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পর জনগণকে জানানো হবে।
এ নিয়ে মোট আটটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক পাঁচটি আর বেসরকারি ব্যাংক তিনটি। গত মার্চ মাসে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চুক্তি করেছে পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংক একীভূত করার ধারা শুরু হয়।
এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির (পিএলসির) উদ্যোগে ঢাকায় রোজাদারদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
রাজধানীর মহাখালীর আমতলী ঈদগাহ মাঠে বৃহস্পতিবার এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এবং ঢাকা-১৭ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সেন্ট্রাল জোনপ্রধান মাহমুদুর রহমান।
ওই সময় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গুলশান সার্কেল-১ শাখাপ্রধান এ এস এম নাসির উদ্দিনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার শর্ত হিসেবে ২০২৪ সালের মার্চে নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
ঋণের তৃতীয় কিস্তির ৪৭০ কোটি ডলার দেয়ার আগে আর্থিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ সফর করছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী ২০২৪ সালের মার্চে ১ হাজার ৯২৬ কোটি ডলার রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘শর্ত পূরণে আইএমএফ কিছুটা কঠোর হওয়ায় সংস্থাটির ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
‘রিজার্ভ ঘাটতির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বেশ কিছু ধারণা জানিয়েছেন। আইএমএফ শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে ইতিবাচক হবে বলে আমরা আশা করছি।’
ডলার সংকট নিরসনে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে সরকার। ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের একটি পর্যালোচনা মিশন বাংলাদেশ সফর করছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আইএমএফ নিট রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা সহজ করলেও বাংলাদেশের পক্ষে মার্চের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন।
‘বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বাংলাদেশের জন্য নিট রিজার্ভের নতুন মান নির্ধারণ করতে পারে বা ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় বিলম্বিত করতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য