চালের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এবং সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিকে গত সোমবার চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে সারা দেশে অভিযানে নামেন কর্মকর্তারা।
নিউজবাংলার জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তধ্য অনুযায়ী বুধবার দিনভর ১২ জেলার বিভিন্ন আড়ত, মিল ও দোকানে অভিযান চালায় প্রশাসন। এ সময় অবৈধভাবে চালের মজুত করাসহ নানা অনিয়মের দায়ে নানা অংকের জরিমানা করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান।
চালের অবৈধ মজুতের তথ্য জানতে বুধবার কন্ট্রোল রুম চালুর ঘোষণা দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তিনটি ফোন নম্বরের মাধ্যমে যে কেউ চালের অবাধ মজুত সম্পর্কে জানাতে পারবেন। তথ্য জানাতে +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩০০৩৫০৬ নম্বরে ফোন করে তথ্য দিতে অনুরোধ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
বগুড়া
অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে লেবেল লাগিয়ে চাল মজুত ও বিক্রির দায়ে বগুড়ার শেরপুরের শিনু এগ্রো লিমিটেড নামে এক প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, এদিন বগুড়ার সব উপজেলায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ চাল মজুত করা ও লাইসেন্স না থাকার দায়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শেরপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবরিনা শারমিন জানান, উপজেলার জোয়ানপুর এলাকায় শিনু এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে অভিযান চালিয়ে ১ হাজার ২৪৬ টন চাল ও ২ হাজার ১৪৬ টন ধানের মজুত পাওয়া যায়। তবে চালগুলো এসিআই ফুডস লিমিটেডের লেবেলযুক্ত এবং নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের বস্তায় পাওয়া যায়। এসিআই ফুডস লিমিটেডের শেরপুরে মিলের ও ধান-চাল মজুতের কোনো লাইসেন্স নেই।
সাবরিনা আরও জানান, এসব চাল গত মার্চ মাস থেকে মজুত অবস্থায় আছে বলে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার এনামুল হক স্বীকার করেছেন। এই অপরাধে শিনু এগ্রো লিমিটেডকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে গৌর গৌরাঙ্গ ভাণ্ডার নামে উপজেলার আরও এক প্রতিষ্ঠানে ২০০ টন চালের অবৈধ মজুত পাওয়া যায় বলে জানান সাবরিনা। তাদের ১০০ টন পর্যন্ত চাল মজুতের অনুমোদন আছে।
চট্টগ্রাম
চাল মজুত করে দাম বাড়ানোর দায়ে নগরীর ৪ আড়তদারকে ৩৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে একটি আড়তকে।
নগরীর পাহাড়তলি বাজারে বুধবার সন্ধ্যায় এই অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে ও অতিরিক্ত চাল মজুত করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে চাল মজুদ করার লাইসেন্সে উল্লেখিত পরিমাণের বাইরে চাল মজুত করছিল। তাদের অর্থদণ্ড করে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানকে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সিলগালা করা হয়েছে।’
রংপুর
অবৈধভাবে ১ হাজার টন ধান মজুত ও অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করার দায়ে নর্দান এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেড নামে একটি অটো রাইস মিল বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মিল মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
রংপুর সদর উপজেলার উত্তম বানিপাড়া এলাকায় বুধবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে এই পদক্ষেপ নেন সহকারী কমিশনার আমিনুল ইসলাম।
রংপুর সদর খাদ্য কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানান, মিল মালিক ইসতিয়াক আহমেদ জানিয়েছে যে তারা আর মিলটি চালাবেন না।
এদিন দুপুরে মাহিগঞ্জ এলাকায় চালের আড়তে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় রসিদ না দেয়া এবং স্পষ্ট মূল্য তালিকা না রাখার দায়ে ৩টি প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা ভোক্তা অধিদপ্তর।
বরিশাল
মূল্য তালিকা না থাকায় এবং বেশি দামে চাল বিক্রি করার দায়ে নগরীর ৪ ব্যবসায়ীকে ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
নগরীর ফরিয়াপট্টির চালের আড়তে বুধবার দুপুরে এই অভিযান চালিয়েছেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক শাহ শোয়াইব মিয়া।
তিনি জানান, মূল্য তালিকা না ঝুলিয়ে অতিরিক্ত দামে চাল বিক্রি করে আসছিল ফরিয়াপট্টির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো- এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মহাদেব ভাণ্ডারকে ৩৫ হাজার টাকা, গৌর নিতাই ভাণ্ডারকে ২০ হাজার এবং দুই খুচরা চালের দোকানিকে ৩ হাজার ও ১ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
একই দিন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমাপ্তি রায় ও কামরুন্নাহার তামন্নার নেতৃত্বে দুইটি দল নগরীর বাজার রোড, ফরিয়া পট্টি, সাগরদী বাজারসহ নগরীর কিছু চালের আড়তে অভিযান চালায়। অবৈধভাবে চাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি, অধিক মুনাফায় চাল বিক্রি এবং মূল্য তালিকা সংরক্ষণ না করায় ৩টি চালের আড়তকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
সিলেট
জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালিঘাটে বুধবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে ৫ প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
নিউজবাংলাকে অধিদপ্তরের সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘অভিযানকালে অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকায় প্রদর্শিত মূল্য ও প্রকৃত বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকা এবং পাকা রশিদ সংরক্ষণ না করার দায়ে কালিঘাটের ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।’
কুষ্টিয়া
দেশের অন্যতম বড় চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালকলে বুধবার দুপুরে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার বিশ্বাস ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে এই অভিযানে যায়।
এ সময় অতিরিক্ত মজুত বা মুনাফা করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি- বলে জানান খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী। তবে ভূয়া নামে চাল ব্র্যান্ডিং করায় নিউ বনফুল ও নিউ ফোরস্টার মিলকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ফরিদপুর
নিম্নমানের চাল বিক্রি করে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা এবং বেশি দামে চাল বিক্রির দায়ে ফরিদপুর শহরের দুই ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা হয় নিম্নমানের ৪০ বস্তা (২৫ কেজি করে) চাল।
শহরের চক বাজার এলাকায় বুধবার দুপুরে এই অভিযান চালায় জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, খাদ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণনের কর্মকর্তারা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হঠাৎ করে জেলায় চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে বলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় মেসার্স সোহেল খাদ্য ভাণ্ডারের একটি গুদাম বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি ৪০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। গুদামমালিক আয়নাল হককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সমপরিমাণ জরিমানা করা হয় বাজারের মেসার্স জয় গোবিন্দ সাহা খাদ্য ভাণ্ডারকেও।
হবিগঞ্জ
কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে মজুত করা ও অনুমোদনহীনভাবে ব্যবসা পরিচালনার দায়ে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে একটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ও অন্যটিকে লাইসেন্স করতে এক দিন সময় দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জেলায় প্রশাসন ও জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের দিনভর অভিযানে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত শহরের আনন্দ বাজারের চালের দোকানগুলোতে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই অভিযান চালায়।
এ সময় প্লাস্টিকের বস্তায় চাল রাখার দায়ে আবুল খায়ের এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার টাকা এবং এক মাসের বেশি চাল মজুত করে রাখায় শামীম এন্টারপ্রাইজকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর
সিংড়া উপজেলার শ্রী নিরেন্দ্রনাথ মানীর তিনটি গুদামে প্রায় ১ হাজার টন ধানের অবৈধ মজুত পেয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গুদামমালিককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
উপজেলার কলম বাজারে দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল ইমরান এই জরিমানা করেন।
শেরপুর
জেলা খাদ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন বুধবার বিকেলে শহরের নয়ানীবাজার এলাকায় চালের পাইকারি গুদামে অভিযান চালায়। খাদ্য বিভাগের লাইসেন্স না থাকায় এ সময় বৃষ্টি চাল ভান্ডারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানাউল মোর্শেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও
জেলা শহরে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত দামে চাল বিক্রি ও নিয়ম না মানার দায়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
কালিবাড়ি বাজারের বুধবার দুপুরে অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন এবং জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তা শেখ সাদী জানান, চালের মূল্য তালিকা দেখাতে না পারা, রশিদ সংরক্ষণ না করা ও অধিক মূল্যে চাল বিক্রির দায়ে কালিবাড়ি বাজারের তানভীর চাউল ঘর ও সাইফুল ট্রেডার্সকে ৫ হাজার করে জরিমানা করা হয়েছে। সদরের শীবগঞ্জে কাশেম হাসকিং মিলকে গুনতে হয়েছে ২০ হাজার টাকা জরিমানা।
দিনাজপুর
অভিযানে চালের সবচেয়ে অবৈধ মজুত পাওয়া যায় দিনাজপুরে। সদরের স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের গুদাম থেকে ৫ হাজার ১২৪ টন আতপ চাল জব্দ করে প্রশাসন। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে মিলের ইনচার্জকে।
উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ বাজারে কোম্পানিটির ছয়টি গুদামে মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়। তবে বুধবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মর্তুজা আল মঈদ।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় আমরা স্কায়ারের মিলে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় মিলের ছয়টি গুদামে ৫ হাজার ১২৪ টন আতপ চাল পাওয়া যায়। তবে মিলের অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৩১২ টন। সে হিসাবে মিলে বেশি মজুত ছিল চার হাজার টনের বেশি চাল।’
আরও পড়ুন:কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।
‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’
জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।
তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।
আরও পড়ুন:চলমান তাপপ্রবাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের গুটি ঝরে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই এ বছর মুকুল এসেছিল কম, গাছে যে কয়টা আমের গুটি টিকে আছে, তাপদাহের প্রভাবে সেগুলোর বৃদ্ধিও ঠিকমত হচ্ছে না বলে দাবি বাগান মালিকদের। এরই মধ্যে রোদের তাপে শুকিয়ে সেগুলো ঝরে পড়তে শুরু করেছে।
আমের গুটি যাতে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে; প্রয়োজনে গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শও তাদের।
‘আমের রাজধানী’ খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার কিছুটা দেরিতেই এসেছিল মুকুল। পরিমাণেও ছিল অন্য বছরের তুলনায় বেশ কম। তারপরও শুরু থেকেই বাড়তি যত্নে বাগানগুলোতে মুকুল থেকে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আম। তবে কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহ ভীষণ শঙ্কায় ফেলেছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। গাছে থাকা আমের গুটির বৃদ্ধি ও টিকে থাকা নিয়ে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
জেলার মহারাজপুর এলাকার আম বাগান মালিক রাজন ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে আমের গুটির বড় হচ্ছে না, বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। আকাশের পানি না হলে হয়? সেচ দিয়াও খুব বেশি কাজ হচ্ছে না, শ্যালো (সেচ পাম্প) যতক্ষণ চলছে ততক্ষন পানি থাকছে। বন্ধ করলেই সব তিলিকে (দ্রুত) শুষে লিছে (নিচ্ছে)।’
আম সংগঠনের নেতারাও বলছেন একই কথা। এ বছরের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চলমান তাপপ্রবাহ তাদের সেই দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আম ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর শীতের কারণে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে, তার ওপর মার্চ মাসে অসময়ের বৃষ্টিতে একবার মুকুল ঝরে যায়।
‘তখন বৃষ্টির দরকার ছিলো না, তাই বৃষ্টির কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়েছিল, আর এখন বৃষ্টির অভাবে গাছে যে কয়টা আমের গুটি ছিল, তাও ঝরে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন চললে ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর আম উৎপাদনের খরচ সব ক্ষেত্রেই বেড়ে গেছে। আবার এখন সেচ দেয়ার জন্য অনেকের খরচ আরও বাড়ছে। সবমিলিয়ে এ বছর খুব বেশি স্বস্তিতে নেই আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’
তবে এখনই আশাহত না হয়ে বাগানের সঠিক পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়া ও তাপপ্রবাহ যতদিন চলবে ততদিন পর্যন্ত বাগানে সেচ দেয়া, তাপমাত্রা আরও বাড়লে সকালে বা বিকেলে গাছে সরাসারি পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান।
বাগান মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে জেলায় শুরু হয়েছে আনারসের ফিলিপাইনের একটি জাত।
এ উদ্যোগে যুক্ত একজন কৃষি কর্মকর্তা জাতটির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এ বছর আনারস চাষ সফল হলে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এ জাতের চাষ করা হবে।
রোপণ করা চারা থেকে আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য, বিদেশি আনারসের এ জাতটির নাম এমডি-২। এটির আদি নিবাস ফিলিপাইন। এর আগে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় এ জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এ আনারসের চামড়া পাতলা ও প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘এমডি-২ জাতের আনারসের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক সুনাম আছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। এ জাতের আনারস দেশীয় আনারসের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি।
‘এ আনারস দ্রুত পচে না। প্রথমবারের মতো এ বছর আমরা পুরো কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার চারা বিতরণ করেছি। জেলায় আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বেশ কিছু টিলা ও পাহাড় রয়েছে। ছাড়াও লালমাই পাহাড়কে টার্গেট করে আমরা চারা বিতরণ করেছি। আশা করছি কুমিল্লার মাটি ও আবহাওয়া এমডি ২ জাতের আনারস চাষে বেশ উপযোগী হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফলন ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর আমরা সফল হলে আমাদের আগামী বছরে আরও ব্যাপকভাবে এমডি-২ জাতের আনারস চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক অতিবৃষ্টি আর আকষ্মিক বন্যা। প্রতিবছর বৈশাখ আসার আগেই পাহাড়ি ঢল আর বন্যার আতঙ্কে থাকেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। ফসল রক্ষায় অনেক সময়ই অপরিপক্ব ধান গাছে কাস্তে চালাতে হয় তাদের।
চলতি মৌসুমে হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে সবুজ ধানের গালিচায় সোনালী রং ধরে গেছে। আর সে সুবাদে বৈশাখের শুরুতেই কৃষকরা ধান কাটতে নেমে পড়েছেন হাওরে। প্রকৃতি প্রতিকূল হয়ে ওঠার আগেই পুরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে এক ফসলি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন দেখে বেজায় খুশি কৃষকরা। তারা আশা করছেন, অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে এবার তারা শতভাগ ধান গোলায় তুলতে পারবেন।
কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরে ১০ লাখ কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার সুনামগঞ্জে ২৬২ হেক্টর বেশি জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে। ধানগুলো বর্তমানে হাওরে কাচা-পাকা অবস্থায় রয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার বরদল গ্রামের কৃষক মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘আমি বিআর-৯২ ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা পানির সংকট ছিল। তবে এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলন ভালো হয়েছে। আর চার থেকে পাঁচ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে আমার জমির ধান কাটা শেষ করতে পারব।’
সুনামগঞ্জ সদরের গৌরারং ইউনিয়নের কৃষক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে ধান এখন পাকা ও আধপাকা অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে শিলাবৃষ্টি হলে আমরা মারা পড়বো। আশা করছি আনন্দের সঙ্গেই আমরা সব ধান ঘরে তুলতে পারব।’
শাল্লা উপজেলার আঙ্গারুয়া গ্রামের কৃষক আজমান গণি বলেন, ‘সঠিক সময়ে হারভেস্টার মেশিন ও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলে ফসল কাটা ও মাড়াই সহজ হবে। শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা না হলে খুশি মনে ধান কাটা যাবে। কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া সঠিক সময়ে ঘরে ধান উঠাতে পারাটা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ৫ মে’র মধ্যে হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরামর্শের জন্য কৃষকদের পাশে রয়েছেন। হারভেস্টার মেশিনগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
‘সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ছিলো ২ লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার ৯ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।’
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে কৃষি খাতে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তিন বছরে কৃষি উন্নয়নে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)’ অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়। সূত্র: ইউএনবি
জিডিপিতে হ্রাস প্রবণতা সত্ত্বেও এটি বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিনির্ভর সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উৎপাদন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে- উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, যান্ত্রিকীকরণ-সেচ সম্প্রসারণ এবং বীজ ও সারের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের উপকরণের প্রাপ্যতা বাড়ানো।
নীতি নথিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সেচের জন্য ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানো, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি সমাধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং ফসল পরিচর্যার জন্য রিমোট সেন্সিং নিয়োগ করা।
সরকার একটি টেকসই ও স্বনির্ভর কৃষি কাঠামো গড়ে তুলতে ভর্তুকি, আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উপখাত থেকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এটি কেবল জিডিপি যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৯১ শতাংশই বৃদ্ধি করে না, বরং জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং জীবিকার সংস্থান করে। এই ক্ষেত্রগুলোর অর্জনের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য এসব খাত অত্যাবশ্যক।
ভবিষ্যতে এসব খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য বিশেষ করে ছোট ইলিশের (জাটকা) জন্য উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে প্রস্তুত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
টেকসই কৃষির গুরুত্ব বিবেচনায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরেকটি মৌলিক ক্ষেত্র। আন্তঃসীমান্ত নদী থেকে ন্যায়সঙ্গত পানির হিস্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জলাশয় খনন ও উপকূলীয় বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা উন্নয়নের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকির মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সরকার এই প্রভাবগুলো হ্রাস করার বিস্তৃত কৌশলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাটি জলবায়ু সম্পর্কিত বাধাগুলোর বিরুদ্ধে সহনশীলতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও সম্প্রদায়গুলোকে সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই বহুমুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষি ঐতিহ্যকে কেবল সুরক্ষাই নয়, বরং এগিয়ে নিতেও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মাগুরা জেলায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাবার তালিকায় চিয়া সিড এখন বেশ জনপ্রিয়।
চিয়া সিড মূলত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। মধ্য আমেরিকায় অনেক বেশি পাওয়া যায় এ শস্য। এটি সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরনের ভেষজও বলা হয়।
চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মতো। পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডম কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ফসল হিসেবেও লাভজনক।
মাগুরা সদর উপজেলার নালিয়ারডাঙ্গি গ্রামের প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলী শুরু করেন চিয়া সিডের চাষ। গত বছর কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে চিয়া সিডের চাষ করেছিলেন তিনি। এ বছর তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে আরও ১৪ জন কৃষক চাষ করেছেন। আগামীতে চিয়া সিড চাষের জন্য তার নিজ এলাকাসহ আশপাশের জেলার চাষিরাও তার কাছে বীজ চেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আমাদের এলাকার প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলীর মাধ্যমেই নতুন নতুন পদ্ধতিতে চাষ শিখছি। পাশাপাশি নতুন ধরনের ফসলেরও চাষ হচ্ছে। তেমনি চিয়া সিড আমাদের কাছে নতুন একটি চাষ। চিয়া সিড খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপকার হয়। পাশাপাশি এর চাহিদা ও বাজার দর বেশি হওয়ায় কৃষকরা এটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কৃষক আক্কাস আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর অল্প পরিসরে চিয়া সিড চাষ করি। মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র আমাকে এ বীজ দেয়। এ বছর আমি ছাড়াও আমার এলাকার ১৪ জন চাষি চিয়া সিড করেছে।’
পুষ্টিকর ও দাম ভাল হওয়ায় আগামী বছর একশ’র উপরে চাষি চিয়া সিড চাষ করবেন বলে আশা তার।
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চিয়া সিড সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত। এটির গুণাগুণ ও বাজারমূল্য প্রচুর। যে কারণে আমরা কৃষকদের এটি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
৪০ কেজিতে এক মণ হলেও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের হাট-বাজারগুলোতে এক মণ শসা বিক্রি করতে কৃষককে দিতে হচ্ছে ৪২ কেজি ৩০০ গ্রাম।
এতে কৃষকরা প্রতি কেজি হিসেবে পাঁচ টাকারও কম পাচ্ছে, তবে এ শসা বাজারে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে পাইকাররা।
অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে পড়ে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানান ক্ষুদ্র কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, তারা এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে শসা আবাদ করেন। এ সুযোগে পাইকারি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কম দামে শসা কিনে বেশি দামে বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারী করেন। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর ২৬৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হলেও এ বছর ২২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। শসার দাম কম পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শসা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে প্রতি বছর শসার আবাদ কমার সম্ভবনা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, উপজেলার প্রত্যেকটি বাজারে শসার পাইকাররা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যা বলে, সে দামেই বিক্রি করতে হয়। তাদের নির্ধারিত দামে শসা বিক্রি না করলে শসা খেতে পচে নষ্ট হয়। গত বছরও অসাধু পাইকারদের জন্য অনেক কৃষক লাভের মুখ দেখতে না পেরে শসা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় শসা উৎপাদন একেবারেই কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেক কৃষকরা।
ধুরাইল ইউনিয়নের নাগলা বাজার এলাকার কৃষক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘২৫ শতাংশ জমিতে শসার আবাদ করেছি। এতে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। রমজানের শুরুতে ভালো দাম পেলেও দিন যত যাচ্ছে, পাইকাররা দামও কমিয়ে দিচ্ছেন। এখন ২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।’
জুগলী ইউনিয়নের জুগলী এলাকার কৃষক আহম্মদ মিয়া বলেন, ‘৩০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছি। এক মণ ৪২ কেজি হিসেবে শসা কিনেন পাইকাররা। আমাদের কাছ থেকে একেবারেই কম দামে কিনে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমরাও লাভবান হতে পারছি না, ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন।’
পৌর বাজারে শসার পাইকার মনোয়ার হোসেন লিটন বলেন, ‘এ উপজেলার শসা দূরদূরান্তের পাইকাররা ঢাকাসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে ট্রাক কিংবা পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে আড়তে বিক্রি করেন৷ এরপর ছোট পাইকারসহ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সড়কে গাড়ির খরচসহ কয়েকটি হাত ঘুরে ক্রেতা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। আমাদের উপজেলার বাজারগুলোতে ক্রেতার চাহিদার উপর নির্ভর করে দাম উঠানামা করে।’
শসা ৪২ কেজিতে এক মণ নেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর যাবৎ কৃষকদের কাছ থেকে সব পাইকাররা এভাবেই কিনছে। তাই আমিও এভাবেই কিনি।’
শসার দাম সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরতলীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় খুচরা শসা বিক্রেতা মোরশেদ মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও খুচরা ব্যবসায়ীরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা হিসেবে শসা বিক্রি করলেও এখন ২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নসহ জেলার তারাকান্দা, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট থেকেও শসা আসে।
‘পিকআপ ভর্তি করে পাইকাররা নিয়ে এসে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। তারা আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিক্রি করায়, আমরাও কয়েক টাকা লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি।’
হাকিমুল নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘কৃষক আর ক্রেতা সবসময় ঠকে। মূলত সিন্ডিকেট কারণেই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়মিত অভিযান চালালে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে শসা কিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ করে বিক্রি করতে হবে। অতিরিক্ত দামে কখনোই বিক্রি করা যাবে না। বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হবে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য