মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নীতি সুদ হার বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার জন্য নির্ধারিত ‘রেপো’র সুদ হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব শুরুর পর বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ২০২০ সালের মার্চে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়। পরের মাস এপ্রিলে আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে নামানো হয় ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে। এরপর বৈশ্বিক পরিস্থিতি খারাপ হলে তখন সুদ হার আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। সবশেষ এখন সেখান থেকে বেসিস পয়েন্ট দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হলো।
রেপো বা পুনঃক্রয় চুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে থাকে। ব্যাংকের কেনা ট্রেজারি বিল ও বন্ড জমা রেখে স্বল্প সময়ের জন্য এই ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইভাবে বাজার থেকে টাকা তোলার প্রয়োজন হলে রিভার্স রেপো বা বিপরীত পুনঃক্রয় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা তুলে নেয়।
রিভার্স রেপোতে বর্তমানে সুদ হার নির্ধারিত আছে ৪ শতাংশ। রেপোর পাশাপাশি স্পেশাল রেপোর মাধ্যমেও ব্যাংকগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখানে সুদ হার নির্ধারিত আছে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে রোববার এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে তা সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।
রেপো সুদ হার পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত সার্কুলারে বলা হয়, ‘সার্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের মূল্যস্ফীতি সীমিত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো সুদ হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দশমিক ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দেশনাটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
সার্কুলারে আরও বলা হয়, ‘করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান কার্যকর হওয়ার পর সংক্রমণের তীব্রতা কমে গেছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করায় বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
‘একই সঙ্গে বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যমূল্যে (খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত) ঊর্ধ্বগতির পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির মুখ্য সূচকগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
দেশের মুদ্রানীতি সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) ৫৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন:প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মৌসুম শেষে নরসিংদীর শিবপুরের কামারটেক গ্রামে ঢাকঢোল পিটিয়ে জাতীয় ফল কাঁঠালকে বিদায় জানানো হয়।
এ উপলক্ষে স্থানীয় ব্যাপারী ও কৃষকরা বুধবার সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাঁঠাল বিক্রির মহড়া দেন। মহাসড়কের পাশে সারা দিনব্যাপী চলে কাঁঠাল বিক্রির এই মহোৎসব।
কামারটেক বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁঠালকে বিদায় জানানোর এ প্রথা দীর্ঘদিন ধরেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় পালন করা হয়। এ বছর কামারটেক বাজারে ব্যাপারী সোহেল আহমেদ মৌসুমের শেষ কাঁঠাল বিক্রি করেন ঢাকঢোল বাজিয়ে, বাজার মাতিয়ে।
এ বিষয়ে সোহেল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ লটের কাঁঠাল বিক্রি আমাদের ঐতিহ্য। মৌসুমের শুরু থেকে শেষে জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকদের কাছ থেকে কাঁঠাল কিনে মজুত রেখে বিক্রি করি। আগামী মৌসুমে আরও ভালো কাঁঠাল প্রাপ্তির আশায় শেষটা জমজমাটভাবে করা হয়।’
তিনি জানান, এই দিনে সকাল থেকে শহরের ব্যান্ডদল এনে ভ্যান গাড়িতে কাঁঠাল রেখে মহাসড়কে মহড়া দেয়া হয়। এ সময় আনন্দে মেতে ওঠেন স্থানীয়রা। পরে কামারটেক বাজারে শেষবারের মতো কাঁঠাল বিক্রি করা হয়। এ বছর শেষ হাটে ১৩৫০ টাকা দিয়ে সবচেয়ে বড় কাঁঠালটি বিক্রি করা হয়েছে। ছোট কাঁঠালের সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৫০০ টাকা।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রতি বছর কাঁঠালকে বিদায় জানানোর এই অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নেই। কৃষক ও কাঁঠালের ব্যাপারীরা সময় ও স্থান নির্ধারণের পর এ আয়োজন করে থাকে।
যোশর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শৈশব থেকে আমরা কাঁঠাল বিক্রির এ উৎসব দেখে আসছি। এ বছর কামারটেক বাজারে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে ব্যাপারীরা কাঁঠাল বিক্রি করেছেন।’
তিনি আরও জানান, মৌসুমে ব্যাপারীরা অনেক কাঁঠাল কেনেন স্থানীয় কৃষক ও বাগান মালিকদের কাছে থেকে। ১০ লাখ টাকার কাঁঠাল কিনলে তাদের লাভ হয় অনেক। লাভের পর মৌসুম শেষে যে কাঁঠাল থাকে সেগুলো নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন তারা। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মৌসুমের কাঁঠাল বিক্রি বন্ধ করেন তারা।
আরও পড়ুন:সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি, তা সরকার ও দুদককে জানাতে বলেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয়।
সকালে বিচারকাজের শুরুতেই আদালত দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিকের বক্তব্য শোনে। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেয়।
সুইস ব্যাংকে জমা করা অর্থের বেশিরভাগই অবৈধ পথে—এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, তা রোববারের মধ্যে জানাতে বলেছে আদালত।
হাইকোর্টের দুই বিচারকের একজন বলেন, ‘সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পড়েছি।’
ওই সময় তিনি বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে প্রকাশিত সংবাদের কপি জমা দিতে বলেন।
ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা অর্থের বেশিরভাগই অবৈধপথে আয় করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুইস ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ঢাকার বাংলামোটরে এসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সজিব খান। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বাসভাড়া দিতেন ৪০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পর ২০ টাকা বেড়ে সেই ভাড়া হয়েছে ৬০ টাকা।
অর্থাৎ আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ৪০ টাকা। তবে ব্যয় বৃদ্ধির এই হিসাবই শেষ নয়।
গুলিস্তান থেকে বাংলামোটরে আসা-যাওয়া করেন তিনি। আগে এই পথে ভাড়া নিত ১০ টাকা করে। চার কিলোমিটার পথের ভাড়া এখনও ১০ টাকাই হয়। কিন্তু বাসগুলো আদায় করছে ১৫ টাকা করে ৩০ টাকা।
অর্থাৎ এই পথেও ১০ টাকা মিলিয়ে প্রতি দিন সজিবের বাসভাড়া বেড়েছে ৫০ টাকা। মাসে ২৬ দিন অফিস করলে বাড়তি ব্যয় করতে হবে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সবজি, মাছসহ অন্যান্য খাদ্যপণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে সজিবকে।
তিনি বলেন, ‘মাসে বেতন ২৫ হাজার টাকা। এই বেতন নিয়ে এমনিতেই সংসারে টানাটানি অবস্থা। তার মধ্যে হঠাৎ করেই যদি বাসভাড়াই ১ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় বাড়ে, তাহলে জীবন ধারণ করাই কঠিন হবে।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। স্কুল, বাজার, কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, নৌযান অর্থাৎ জ্বালানি তেলনির্ভর সব যানবাহনে বেড়েছে ভাড়া। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে অন্যান্য নিত্যপণ্যে।
করোনা-পরবর্তী বিশ্বে যখন নিত্যপণ্য ও জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি, এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা পৃথিবীকেই ফেলে দিয়েছে বিরাট অনিশ্চয়তার মধ্যে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা, দেশে দেশে মুদ্রার দরপতনে মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়া, তার সঙ্গে বেড়ে যাওয়া খরচের সঙ্গে যখন নাভিশ্বাস, সে সময় জ্বালানি তেলের দামে দিল লাফ।
ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা আর অকটেন-পেট্রলের দাম ৪৪ ও ৪৬ টাকা করে বাড়ানোর পর দেশে বাসভাড়া বেড়েছে নগর পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা, দূরপাল্লায় ৪০ পয়সা।
কিন্তু ভাড়া আসলে যতটা হওয়ার কথা, আদায় চলছে তার চেয়ে বেশি। আবার ট্রাকভাড়া বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি দর। আবার কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় এক টাকা বাড়লে ছোট নোটের অভাবে আদায় হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
কেউ শক আহ্লাদের পেছনে ব্যয় কমাচ্ছে, কেউ সন্তানদের পেছনে ব্যয় কমাচ্ছে, কেউ ঘুরাঘুরি বাদ দিচ্ছে, কেউ আড্ডায় কম যাচ্ছে, কেউ বা কম খাচ্ছে।
পরিবহন ব্যয়ে লাফ
মিরপুর-১ নম্বর থেকে নিজের মোটরসাইকেলে করে ফার্মগেটে বেসরকারি ব্যাংকে অফিস করেন বিল্লাল হোসেন। বাইকে ৫০০ টাকার তেল নিলে আগে ৬ থেকে ৮ দিন চলাচল করা যেত। এখন সেই পরিমাণ তেল কিনতেই ব্যয় হবে ৬৫০ টাকার বেশি। অর্থাৎ মাসে ব্যয় বাড়বে অন্তত ৬০০ টাকার বেশি।
বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘মাসের এই ব্যয় সমন্বয় করতে হবে অন্য কোনো চাহিদা বাদ দিয়ে। বেতন যেহেতু এক টাকাও বাড়েনি, তাই এই ব্যয় সমন্বয় করতে ইচ্ছার মৃত্যু ঘটাতে হবে।’
নিজের বাইক আছে বলে বিল্লালের খরচ তাও কিছুটা কম বেড়েছে। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ধানমন্ডির সায়েন্সল্যাব মোড়ের অফিসে যাওয়া আলিম উদ্দিনের বেড়েছে আরও বেশি।
মাঝবয়সী এই ব্যক্তি জানান, বাসেই যাতায়াতের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু যেখান থেকে তিনি বাসে চাপেন, সেখান থেকে উঠাই কঠিন। মাসের অন্তত ২০ দিনই ব্যর্থ হন। এরপর উপায়ান্ত না দেখে বাইকে করে যান।
তিনি বলেন, ‘আগে বাইকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় যাওয়া যেত। কিন্তু এখন আড়াই শ থেকে তিন শ টাকা চায়।’
আক্ষেপ করে আলিম উদ্দিন বলেন, ‘সর্বসাকুল্যে বেতন পাই ৪২ হাজার টাকা। পথেই চলে যায় বড় অঙ্কের অর্থ। এর সঙ্গে দুই বাচ্চার স্কুলের ব্যয়, সংসারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে চোখেমুখে অন্ধকার অবস্থা। বলেন, মাসের ২০ দিন রাইড শেয়ারে যেতে যদি ৫০ টাকা করে বেশি দিতে হয় তাহলে মাস শেষে বাড়তি ব্যয় দাঁড়াবে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এই টাকার সংস্থান কোথা থেকে আসবে?’
ফার্মগেট থেকে মিরপুর ৬০ ফিট রোডের একটি স্কুলে এসে শিক্ষকতা করেন তৌহিদা আহমেদ। ফার্মগেট থেকে টেম্পোতে এত দিন ভাড়া ছিল ২০ টাকা। সেই ভাড়া ৬ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৬ টাকা।
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই করোনার কারণে স্কুলের বেতন কমিয়ে দিয়েছে, তার পরও আসা-যাওয়ায় এভাবে ব্যয় বাড়লে চাকরি করে লাভ কী?’
মিরপুর-৬০ ফিট রোডের পাকা মসজিদ থেকে মিরপুর-২ নম্বরের মণিপুর স্কুলের মূল শাখায় ছেলেকে টেম্পোতে নিয়ে এবং ফিরতে এত দিন শায়লা ইসলামের ব্যয় হতো ৪০ টাকা। জনপ্রতি ভাড়া ছিল ১০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পর ভাড়া বেড়ে এখন হয়েছে ৬০ টাকা। জনপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে এখন ভাড়া হয়েছে ১৫ টাকা। অর্থাৎ সামান্য এই পথ যাতায়াতেই দিনে ব্যয় বেড়েছে ২০ টাকা। তাহলে মাসের ২৫ দিন স্কুলে যাওয়া আসায় ব্যয় বাড়ছে ৫০০ টাকা।
ব্যয় সামাল দিতে চাহিদায় কাটছাঁট
রাজধানীর নিকুঞ্জ নিবাসী পার্থ রায় বলেন, ‘মাসে দুই দিন মাংস খাবার রেওয়াজ ছিল পরিবারে। কিন্তু এখন এক দিন খাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।’
তিনি বলেন, ‘নিকুঞ্জ থেকে মৌচাক পর্যন্ত যেতে বাসভাড়া বেড়েছে। বাসে যাওয়া কঠিন হওয়ায় রাইড শেয়ারে যেতে হয়। সেখানেও বাড়তি ব্যয় করতে হবে।’
সংসারে ব্যয়ের খতিয়ান তুলে ধরে বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি খাবারের ব্যয় কমিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না।
তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাসে বাসাভাড়া ৫০০ টাকা বেড়েছে। মে মাসে পানির বিল ৫০০ থেকে এক হাজার করেছে বাসার মালিক। সন্তানের স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য দিনে আগে ভাড়া লাগত ৩০ টাকা করে ৪০ টাকা। এখন লাগে ৬০-৭০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বাড়তি। অফিসে যাওয়া-আসা করতেও বাসভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। কিন্তু আয় দুই বছর আগে যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। সংসার চালাতে এখন প্রতি মাসেই ধারকর্জ করে চলতে হচ্ছে।’
পরিত্রাণ কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা নেই। সংসারে ৫ জন মানুষ। এখন খাওয়া কমিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় কী? আগে সপ্তাহে তিন দিন মাছ খেতাম এখন সেটা এক দিন করতে হবে। ন্যূনতম পোশাক দিয়ে চলতে হবে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই।’
‘অনেক ব্যয় কাটছাঁট করে টিকে থাকতে হবে’
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই মানুষ ব্যয়ে চাপে আছে, তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে সামনে এসেছে। আয় না বাড়লেও ব্যয় বৃদ্ধিতে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘সীমিত আয়ের মানুষ, যাদের আয় নির্দিষ্ট তাদের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। করোনা-পরবর্তী সময়ে এত কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি কেউ হয়নি। এ থেকে উত্তরণ কীভাবে, সেটাও জানা নেই।
‘করোনার সময়ে অনেকের আয় কমে যায়। ধারদেনা করে চলার চেষ্টা করেছে সবাই। অনেকে গ্রামে গিয়ে বিকল্পভাবে চলার চেষ্টা করছে। মানুষ যখন একটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়া নতুন করে বড় ধাক্কা দিচ্ছে। মানুষ তো কোনো না কোনোভাবে বেঁচে থাকবে। পারিপার্শ্বিক অনেক ব্যয় কাটছাঁট করে জীবনযাত্রায় টিকে থাকতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশে বর্তমানে ৩০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। আর ১৮ দিনের পেট্রল ও ৩২ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে। এছাড়া দেশে যে অকটেন মজুত রয়েছে, তা দিয়ে ১৮ থেকে ১৯ দিনে চাহিদা মেটানো সম্ভব।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর পর বিপিসির ২০১৪ সালের পর থেকে মুনাফায় থাকা, বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের বিপুল পরিমাণ স্থায়ী আমানতের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিজ কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিপিসির চেয়ারম্যান।
গত ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দর লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা নির্ধারণ করে। অকটেন প্রতি লিটার ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ ও পেট্রল ৮৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এই দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে বিপিসির বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছিল। গত কয়েক মাসে লোকসান ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: সাত বছরের মুনাফা ও স্থায়ী আমানতের ব্যাখ্যা দিল বিপিসি
দেশে উৎপাদন হলেও পেট্রল ও অকটেনের নাম বাড়ানোর বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্রুডের কারণে পেট্রল ও অকটেনের দাম বাড়ে। সুতরাং পেট্রল ও অকটেনের দাম কৌশলগত কারণে বাড়াতে হয়েছে।’
বর্তমানে দেশে ৩০ দিনের ডিজেল এবং ১৮ দিনের পেট্রল ও অকটেন মজুত আছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:শুধু ডলার নয়, টাকার বিপরীতে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দরও ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মতো। খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেট থেকে বুধবার ১ পাউন্ড কিনতে হাতে গুনে ১৫০ টাকা দিতে হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা।
তবে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-পাউন্ডের বিনিময় হার ছিল ১১৪ টাকা ৩৯ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে দরে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন করে তাকে আন্তব্যাংক রেট বা ব্যাংক রেট বলে। ব্যাংকগুলো এই দরের চেয়ে এক-দেড় টাকা বেশি দরে নিজেদের মধ্যে লেনদেন করে এবং গ্রাহকদের কাছে নগদ বিক্রি করে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কার্ব মার্কেটে ব্যাংক রেটের চেয়ে ৩৫ টাকা বেশি দামে পাউন্ড বিক্রি হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলো ২৫ টাকা বেশি দরে নগদ পাউন্ড বিক্রি করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে বুধবার ডলার-পাউন্ডের বিনিময় হার ছিল ১ ডলার ২২ সেন্ট। অর্থাৎ ১ পাউন্ডের জন্য লেগেছে ১ ডলার ২২ সেন্ট।
রুবায়েত ইসলাম সৌরভ উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য যাবেন, বেশ কিছু পাউন্ডের প্রয়োজন। বুধবার এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ঘুরে প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছিলেন না। দুপুর ২টার দিকে প্রতি পাউন্ডের জন্য ১৪৫ টাকা চাওয়া হয়। ৪টার দিকে সেই পাউন্ড ১৫০ টাকায় কিনেছেন সৌরভ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব প্রয়োজন ছিল। এতো টাকা দিয়ে পাউন্ড কিনতে হবে কখনই ভাবিনি। ভেবেছিলাম ডলারের দাম বেশি; এখন দেখছি পাউন্ডও পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ১৫০ টাকা দিয়েই কিনেছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোলাবাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুধু ডলার নয়, পাউন্ডও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন বাজার আগে কখনও দেখিনি।’
মানি এক্সচেঞ্জে নজরদারি, পুলিশের অভিযান, দামে কারসাজির অভিযোগে ছয়টি ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে সরিয়ে দেয়া- কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর; কমছে টাকার মান।
পাগলা ঘোড়ার মতোই ছুটছে আন্তর্জাতিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম। সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে ২৫ টাকা বেশিতে এখন ১২০ টাকায় খোলাবাজারে কিনতে হচ্ছে মুদ্রাটি। দেশের ইতিহাসে এর আগে এই ঘটনা কখনও ঘটেনি।
গত ২৭ জুলাই খোলাবাজারে ডলারের দর উঠেছিল ১১২ টাকা। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির পর কয়েক দিন সেখান থেকে কিছুটা কমে ১০৮ টাকায় থিতু হয়।
কিন্তু চলতি সপ্তাহ থেকে আবার শুরু হয় ঊর্ধ্বগতি। সোমবার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১১৫ টাকা ৬০ পয়সায়।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দর সেদিনও ছিল ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। পরদিন তা আরও ৩০ পয়সা বাড়িয়ে করা হয় ৯৫ পয়সা। এরপর দিন খোলাবাজারে আবার লাফ দেয় ডলার। এক দিনে বাড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা।
ব্যাংকগুলো নগদ ডলারও বেশি দামে বিক্রি করেছে। সিটি ব্যাংক বুধবার ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে। ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা দরে। এসআইবিএল থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক ১০৪ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৪ টাকায়। জনতা ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে লেগেছে ১০৩ টাকা।
খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লে মুদ্রা বিনিময়ের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ব্যাংক থেকে ডলার কিনে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে থাকে। এখন ব্যাংকেও ডলারের সংকট। এ জন্য অনেক ব্যাংক এখন উল্টো খোলাবাজারে ডলার খুঁজছে।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশে ডলারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে। তারপরও সংকট কাটছে না।
ডলারের দৌড় থামাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও কমছে না মুদ্রাটির তেজিভাব, কাটছে না সংকট।
ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে কয়েক মাস ধরে। বেড়েই চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দর। কমছে টাকার মান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দুই মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৭ শতাংশের মতো; আর এক বছরে কমেছে ১২ শতাংশের বেশি।
বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’আনতে গত ২০২১-২২ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ মাস ৮ দিনে (১ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট) বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ১৫০ কোটি (দেড় বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ হিসাবে এই ১ মাস ৮ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৪ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে কখনোই এত কম সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে এত বেশি ডলার বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
অথচ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন ও আমদানি ব্যয় কমায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন:ডিজিটাল কানেক্টিভিটি পার্টনার গ্রামীণফোন তার গ্রাহকদের জন্য প্রথমবারের মতো ‘আওয়ারলি আনলিমিটেড ডেটা ক্যাম্পেইন’ চালু করেছে।
প্রতি ঘণ্টার জন্য আনলিমিটেড এ ডেটা ক্যাম্পেইনে থাকছে দুটি ডেটা প্যাক। এর একটি হচ্ছে- ২৩ টাকায় দুই ঘণ্টার জন্য আনলিমিটেড (সর্বোচ্চ ৮ জিবি) ইন্টারনেট এবং ৩৪ টাকায় ৩ ঘণ্টার জন্য আনলিমিটেড (সর্বোচ্চ ১২ জিবি) ইন্টারনেট।
এই প্যাক দুটি পেতে গ্রাহকদের ডায়াল করতে হবে *১২১*৩৩০৯# অথবা *১২১*৩৩১২# কিংবা ভিজিট করতে হবে মাইজিপি অ্যাপ।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের সিএমও মোহাম্মদ সাজ্জাদ হাসিব বলেন, ‘ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে আমাদের গ্রাহকরা যেন পছন্দমতো ইন্টারনেট প্যাক বেছে নিতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গ্রাহকরা যেন সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের বৈচিত্র্যময় ডিজিটাল চাহিদা পূরণ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে আমরা সব সময় চেষ্টা করি।’
এই ইন্টারনেট প্যাক গ্রাহকদের বিভিন্ন ডিজিটাল চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সবকিছু সম্ভব করে তুলতে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিটিআরসির সবশেষ নিলামে গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ ৬০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম কিনেছে। এছাড়া ডিজিটাল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে গ্রাহকদের উন্নত সেবাদানে প্রতিষ্ঠানটির দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফোরজি বিটিএস রয়েছে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইউজ কেসসহ ফাইভজি ট্রায়াল পরিচালনা করে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণফোন বাংলাদেশে অত্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয়ে গেছে পণ্যবাহী ট্রাক।
ভারতীয় পণ্য নিয়ে ট্রাকটি বুধবার দুপুরে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয় প্রবেশ করে। এটি গত ১ আগস্ট কলকাতা থেকে জাহাজে করে মোংলা বন্দরে আসে।
প্রথমবারের মতো ভারতীয় পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের স্থলবন্দর ব্যবহার করা হলো। এই চালানে ছিল ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৭০ প্যাকেজের ১৬ দশমিক ৩৮০ টন লোহার পাইপবাহী কন্টেইনার।
এই ট্রানজিট পর্যবেক্ষণে তামাবিল স্থলবন্দরে দুপুরে এসেছিলেন সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নীরজ কুমার জয়সওয়াল ও গৌহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনার এবং মিশন প্রধান শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর এবং বন্দর কর্মকর্তারা।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হয়ে যাওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউজ অফ চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অফ গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি)’ চুক্তির আওতায় বুধবার পরীক্ষামূলকভাবে এদেশের বন্দর ও সড়ক ব্যবহার করা হয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি জাহাজ ছেড়ে আসার পর রোববার সকালে মোংলা বন্দরে নোঙর করে। সোমবার দুপুরে খালাসের পর দুটি কন্টেইনারের একটি ভারতের মেঘালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে বুধবার সকালে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে আসে। আরেকটি কন্টেইনার কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসামে যাওয়ার কথা রয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তিটি হয়। প্রথম পরীক্ষামূলক চলাচল হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।
সেখান থেকে স্থলপথে পণ্য আগরতলা নেয়া হয়েছিল। তখনকার পণ্য ছিল ডাল ও রড। কিন্তু করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় গত চার বছরে এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পরে ভারতের পক্ষ থেকে চারটি রুটে ট্রায়াল রানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল।
আপাতত দুটি স্থলবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট দিতে রাজি হয় বাংলাদেশ। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মোংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে কলকাতা বন্দর। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ট্রায়ালে ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশি নৌযান (কার্গো) ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ পণ্যবোঝাই দুটি কন্টেইনার নিয়ে মোংলা বন্দরে আসে।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এসিএমপি ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নীরজ কুমার জয়সওয়াল জানান, ‘ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
‘২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অফ কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তারই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাসের পর তামাবিল দিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য