করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে ওলোটপালট করে দিচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শঙ্কা-উৎকণ্ঠা। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে বিশ্ব।
চলমান যুদ্ধের কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। আইএমএফও একই সুরে কথা বলছে। তীব্র খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশেও নানা ক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেল, খাদ্য পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং জাহাজ ভাড়া বাড়ার কারণে আমদানি খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। যার ফলে বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে; অস্থির হয়ে উঠেছে মুদ্রাবাজার। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। চড়ছে মূল্যস্ফীতির পারদ।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক রয়েছে। বাজারে গিয়ে পণ্য কিনতে বেশি খরচ হওয়ায় সরকারের প্রতি ক্ষোভও ঝাড়ছেন অনেকে।
তবে বাংলাদেশকে নিয়ে খুব একটা আশঙ্কায় নেই সরকারের মন্ত্রী, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় সংকট বাড়ছে ঠিকই, তবে সরকারও ব্যয় সংকোচনের জন্য তড়িৎগতিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ জন্য আমদানি ব্যয় কমে আসবে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভের উপর আর চাপ পড়বে।
সবচেয়ে বড় স্বস্তির জায়গা হচ্ছে, সরকারি গুদামগুলোতে এখনও ১২ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুত আছে। বেসরকারি পর্যায়েও প্রচুর খাদ্য মজুত আছে। বোরো ধানের ভরা মৌসুম চলছে। দেশের কিছু এলাকায় বন্যার পরও বাম্পার ফলনের আভাস দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গতিও এখন বেশ ভালো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে খুব একটা বিচলিত হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না তারা।
তবে সরকারকে সব সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি সব সময় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে নতুন বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রয়োজন হলে সেটা করতে হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বিরুপাক্ষ পাল ও মঞ্জুর হোসেন এবং ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের সঙ্গে।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি দিয়ে মহামারি করোনাসহ অতীতে বড় বড় সংকট সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়েছে। এবারও তেমনটাই ঘটবে। কয়েক দিন পর স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবে। এর মধ্য দিয়ে নতুন সাহস-উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেবে সবার মধ্যে। অর্থনীতিতে যোগ হবে গতি।
দেশের অর্থনীতির বর্তমান হালচাল
অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও শক্ত ভিক্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রধান সূচকগুলো এখনও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
আমদানির বাড়ার পরও অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করছে। এই রিজার্ভ দিয়ে ৬ মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে ধস নামার প্রধান কারণ ছিল রিজার্ভ; দেশটির রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। পাকিস্তানের রিজার্ভও কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। গত বছরের আগস্টে দেশটির রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ম ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির আরেকটি সূচক রপ্তানি আয়েও সুবাতাস বইছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তথ্য প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তাতে দেখা যায়, এই ১০ মাসে ৪৩ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অংক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ।
জুলাই-এপ্রিল সময়ে প্রবাসীরা ১৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। তবে গত তিন মাস ধরে রেমিট্যান্সপ্রবাহে উল্লম্ফন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত মার্চ মাসে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল; এপ্রিল মাসে এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। চলতি মে মাসে ২৭ দিনে এসেছে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। মাস শেষে মে মাসেও রেমিট্যান্স ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
তবে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এই অর্থবছরের ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই ৯ মাসে ৬৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা নতুন উদ্যোমে উৎপাদন কর্মকাণ্ডে ঝাপিয়ে পড়েন। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন। দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলসহ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে বিনিয়োগের একটি আবহ তৈরি হয়েছে দেশে। এর ফলে শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) শিল্প খাতের জন্য প্রয়োজনীয় অন্য সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
একইসঙ্গে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়েছে। বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। এ সব কারণেই আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে।
তবে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যংক ইতিামধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকারদের বিদেশ সফর বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আমদানিনির্ভর সব প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিলাসবহুল প্রায় ২০০ পণ্যের আমদানির উপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে; কমছে টাকার মান। এটা এখন দেশের অর্থনীতির জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২৬ মে পর্যন্ত) ৫৬০ কোটি (৫.৬০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা) তুলে নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর। দুর্বল হচ্ছে টাকা।
গত এক সপ্তাহ ধরে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি হলেও ব্যাংকগুলো এর চেয়ে ৬ থেকে ৮ টাকা বেশি দরে নগদ ডলার বিক্রি করছে। খোলাবাজারে বাড়তে বাড়তে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়ে ১০৪ টাকায় উঠেছিল। গত কয়েক দিন অবশ্য ৯৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৪০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
ডলারের সংকট কাটাতে এবার প্রবাসী আয় সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক দর বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকে কত দামে রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে ও আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। ব্যাংকগুলো প্রতিদিন বাজার বিবেচনা করে এই দাম নির্ধারণ করবে। এই এক দাম সব ব্যাংক মেনে চলবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা পর্যালোচনা করবে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই প্রতি ডলারের দাম ৯০ টাকার বেশি হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সঙ্গে সভায় বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকগুলো এই সিদ্ধান্ত নেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ফজলে কবির।
অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক মূল্যস্ফীতি বাড়ছেই। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, এপ্রিল মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। যা গত দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। এই অর্থবছরের ১০ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশের মতো।
তবে আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ক্যারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স) বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। অর্থবছরের ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শুন্য সাত বিলিয়ন ডলার।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে যাই বলুক না কেন বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থায় যুদ্ধের প্রভাব যতোই পড়ুক না কেনো, আমাদের খুব একটা সমস্যা হবে না।’
তিনি বলেন, এই যে আমাদের অর্থনীতি আভো অবস্থায় আছে, এতে অবদান রেখেছে তিনটি খাত- কৃষি, শিল্প ও রেমিট্যান্স। করোনা অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি আয়ে ৩৬ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রেমিট্যান্স কমলেও কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। রোজার ঈদের আগে এপ্রিল মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সামনে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেও রেমিট্যান্স বাড়বে।
‘আমদানি বাড়ার পরও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে। এই রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এরপরও যারা বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেন, তারা বিজ্ঞানসম্মত কথা বলছেন না।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
‘বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এখন মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখাটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। নতুন বাজেটে এই বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় গরিব মানুষকে সহায়তার পাশাপাশি কৃষির উৎপাদন বাড়াতে সার, সেচ, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে।’
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
দেশের অর্থনীতির সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির উপর আছে এখনও। মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ আছে। ডলারের বাজারে অস্থিরতা আছে ঠিক। কিন্তু অন্য সূচকগুলোর দিকে তাকালে স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলতে হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ব্যাপক আমদানির পরও রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে। রপ্তানি আয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশকিছু দিন ধরে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’
‘রেমিট্যান্সে কিছুটা ধীরগতি দেখা দিলেও কয়েক মাস ধরে আবার বাড়ছে। সামনে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখেও বেশি বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন প্রবাসীরা। সরকার যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আমদানি ব্যয় কমে আসবে। এরফলে রিজার্ভ আর কমবে না বলে মনে হচ্ছে।’
‘তাই যারা শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করছেন তারা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কথা না বলে মনগড়া কথা বলছেন। অযথা ভয়-আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বলছেন।’
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়ছে ঠিক। কিন্তু সেটা মন্দা ডেকে আনতে কিনা-সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। আর যদি মন্দা দেখাও দেয়, তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে ঠিক। কিন্তু খুব বেশি সংকটের মধ্যে আমরা পড়ব না।’
‘কেননা, মন্দার জন্য প্রধানত খাদ্য সংকটকে দায়ি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যে খাদ্য মজুত আছে, চলতি বোরো মৌসুমে যে ধান উৎপাদন হচ্ছে-তা দিয়ে দুই-তিন বছর অনায়াসে চলে যাবে। এরমধ্যে যুদ্ধও স্থিমিত হয়ে আসবে আশা করি। তাই খুব বেশি ভয় পাওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না।’
বিরূপাক্ষ পাল
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট কোর্টল্যান্ডের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার যে আশঙ্কা করছেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রে বসে তেমনটি কিন্তু দেখছি না। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেশ বেশি ঠিক। কিন্তু এখানে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের কাজ বেড়েছে, বেতন বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন চাকরি বা কাজের জন্য যে লোক প্রয়োজন, সেই লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে এখানে মন্দা আসবে কি করে। আর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর বা বড় অর্থনীতির দেশে যদি মন্দার ছোঁয়া না লাগে, তাহলে বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা করা অমূলক মনে হয় আমার কাছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, মন্দার বিষয়টি সামনে আনার রাজনৈতিক একটি কারণ আছে। সব দেশ বা রাষ্ট্র প্রধানদের সতর্ক করার জন্য এটা প্রচার করা হচ্ছে।’
‘তবে যুদ্ধের কারণে, বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্য থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন হওয়ায় রাশিয়া বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেইসঙ্গে ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে গ্যাস ও তেল না পাওয়ায় তারাও সংকটে পড়বে। ইতোমধ্যে সে সংকট দেখা দিয়েছে। এখন সব কিছুই নির্ভর করছে, যুদ্ধ কতোদিন চলবে সেটা উপর।’
যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশে কেমন পড়বে- এ প্রশ্নের উত্তরে বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘আমার বিবেচনায় বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রভাবতো কিছুটা পড়বেই। ইউরোপ বাংলাদেশের পোশাকের একটি বড় বাজার। সেখানে সংকট দেখা দিলে, ওই বাজারে হয়তো পোশাক রপ্তানি কম হবে। কিন্তু আমি আগেই বলেছি, যুত্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে, সে কারণে এখানকার বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমবে না; উল্টো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।’
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ।
‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি। সেই শক্তি দিয়ে যে কোনো সমস্যা-সংকট মোকাবিলা করতে পারে। অতীতে বহুবার সেটা প্রমাণ করেছেন তারা। আর সেটা করেই পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেলে এই জায়গায় এসেছেন তারা। অন্য কিছু যদি নাও পায়, শুধু ভাত খেয়েই তারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখবেন।’
মঞ্জুর হোসেন
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমিও ভয়ের তেমন কিছু দেখছি না। রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে উপরে থাকা অবস্থায় আমি উদ্বেগের কোনো কারণ দেখি না। খাদ্য আমদানি করে চলতে হবে-এমন অবস্থা তো আমাদের নয়। বেশি সমস্যা হলে গম হয়তো আমরা পাবো না, সেক্ষেত্রে তিন বেলাই ভাত খাবে মানুষ। দাম হয়তো একটু বাড়বে, কিন্তু খাদ্য পাওয়ার তো নিশ্চয়তা আছে। প্রচুর খাদ্য আছে আমাদের।’
‘আমি মনে করি, সরকারকে এখন মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখার বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ভর্তুর্কির পরিমাণ যদি বেড়ে যায় সেটাও করতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠণী খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। উপকারভোগীর সংখ্যা ও বিভন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে। নতুন বাজেটে এ সব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।’
‘আর আমরা তো এখন ফুরফুরে মেজাজে আছি। নিজস্ব অর্থে বহুল প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে ২৫ জুন। এই সেতু চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে সাহস-শক্তি-প্রাণসঞ্চার হবে, তা দিয়ে যে কোনো সংকট মোকাবিলঅ করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ
বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ পদক্ষেপ ও দিকনির্দেশনায় করোনা মহামারি সাহসের সঙ্গে আমরা মোকাবিলা করেছি। আশা করছি, যুদ্ধের প্রভাবও তেমন একটা পড়তে দেবেন না তিনি। আমদানি ব্যয় কমাতে ইতোমধ্যে যে সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি।’
‘আমাদের একটাই অনুরোধ থাকবে, এই মুহূর্তে যেনো গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো না হয়। তাহলে সরকারের সঙ্গে হাতমিলিয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে আমরা যে কোনো পরিস্তিতি মোকাবিলা করতে পারব।’
আরও পড়ুন:ইরানের ইস্পাহানে বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের হামলার খবরে শুক্রবার পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে উল্লেখ করে রয়টার্স জানিয়েছে, এশিয়ার শেয়ার ও বন্ডে ধস নামে, যেখানে উল্লম্ফন দেখা যায় স্বর্ণ ও অশোধিত জ্বালানি তেলের দামে।
বার্তা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি জানার পর পুঁজিবাজার ও তেলের বাজারে শুরুতে যে প্রভাব পড়ে, সেটি কমে এসেছে। হামলার পরিসর ছোট এবং কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়নি বলে ইরানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমন বাস্তবতা সৃষ্টি হয়।
শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিভিত্তিক এমএসসিআইয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সূচকের পতন হয় দুই দশমিক ছয় শতাংশ, যেটি পরবর্তী সময়ে কমে দাঁড়ায় দুই শতাংশে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কায় ব্রেন্টের অশোধিত জ্বালানি তেলের দাম শুরুতে চার দশমিক দুই শতাংশ বাড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কমে বৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়ায় দুই দশমিক চার শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধি কমার পর ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্টের অশোধিত তেলের দাম দাঁড়ায় ৮৯ দশমিক ২২ ডলারে।
সিরিয়ার দামেস্কে গত ১ এপ্রিল ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় নগর ইস্পাহানে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজ জানায়, ইস্পাহানের একটি বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, তবে কী কারণে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা জানা যায়নি।
‘নির্ভরযোগ্য সূত্রের’ বরাত দিয়ে ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিমের খবরে বলা হয়, ‘ইস্পাহান প্রদেশের পরমাণু ক্ষেত্রগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ।’
দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ইস্পাহানের কাছে বিস্ফোরণের পর কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। সেখানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়নি।
ইস্পাহান শহরের কাছে ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে রেকর্ড ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের সাড়ে তিন মাসে অষ্টমবারের মতো স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৃহস্পতিবার বৈঠক করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন নির্ধারিত এই দাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী- ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৬৫ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৯৯৪ টাকা বেড়ে ১ লাখ ১৪ হাজার ২০২ টাকা, ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৬৫৬ টাকা বেড়ে ৯৭ হাজার ৮৮৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ হাজার ৩৮৮ টাকা কমে ৭৮ হাজার ৮০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সবশেষ দশ দিন আগে ৮ এপ্রিল বাজুস ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা নির্ধারণ করে। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে আবারও দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশের স্বর্ণের বাজারে উচ্চ দামের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলো।
অবশ্য স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের আরও বেশি অর্থ গুনতে হবে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের গহনা বিক্রি করা হয়। সেসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে ১ লাখ ২৯ হাজার ১১৯ টাকা।
এদিকে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আরও পড়ুন:ভারতে লোকসভা নির্বাচনের কারণে ১৭, ১৮ ও ১৯ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পাথরসহ সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ভারত। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারও বন্ধ থাকবে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামা পারভীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয় ।
এদিকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বুধবার দুপুরে ৩ দিন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ভারতের লোকসভা নির্বাচন কারনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আজ (বুধবার) থেকে শুক্রবার বন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অফিস যথারীতি খোলা থাকবে।’
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা অমৃত অধিকারী জানান, দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধের সঙ্গে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাওয়া-আসাও বন্ধ থাকবে।
হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই বন্দর দিয়ে পার হতে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে, জরুরি চিকিৎসার জন্য যাতায়াতকারী মানুষের দূর্ভোগ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:বিষয়বস্তু অবহিত না করে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে ‘রূপান্তর’ শিরোনামের একটি নাটক প্রচার করায় বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে ওয়ালটন।
পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সব ধরনের বিজ্ঞাপনী চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ওয়ালটনের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’ এর স্বত্বাধিকারী মোহন আহমেদকে মঙ্গলবার ওই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
ওয়ালটনের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রাইসুল ইসলাম রিয়াদ স্বাক্ষরিত আইনি নোটিশে উল্লেখ করে যা বলা হয়, ‘আপনি লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান এর স্বত্বাধিকারী। আপনার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার নির্মিত ছয়টি নাটকে ওয়ালটন ফ্রিজ ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়। শর্ত থাকে যে, উক্ত নাটকসমূহে দেশের আইন, নীতি, নৈতিকতা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় এরকম কোনো বিষয় অর্ন্তভুক্ত হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উক্ত নাটকসমূহের মধ্যে ‘রূপান্তর’ নাটকটিতে এমন কিছু বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ও মানুষের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে নাটকটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পূর্বে অবহিত না করে রূপান্তর নাটক প্রচার করায় আপনার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হলো এবং সেই সঙ্গে কেন আপনার বিরুদ্ধে ওয়ালটনের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থিভাবে নাটক প্রচারের জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে জানানোর জন্য বলা হলো।’
এর আগে ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে ‘রূপান্তর’ নাটকটি প্রত্যাহারের জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ওয়ালটন। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক-ইউটিউবসহ সব মাধ্যম থেকে নাটকটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ওয়ালটন গ্রুপের আদর্শ ও নীতিমালার পরিপন্থি নাটকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘লোকাল বাস এন্টারটেইনমেন্ট’কে লিগাল নোটিশ দেয় ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ওয়ালটনের ভাষ্য, দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড কখনও তারা সমর্থন করে না এবং এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকে না। অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টির জন্য ওয়ালটন গ্রুপ মর্মাহত এবং সম্মানিত ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিকট আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন রূপালী ব্যাংক পিএলসির মহাব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ আলম। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিসহ রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের আট জন মহাব্যবস্থাপককে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।
ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি হওয়ার আগে তিনি রূপালী ব্যাংক পিএলসিতে মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. ফয়েজ আলম ১৯৯৮ সালে বিআরসির মাধ্যমে সিনিয়র অফিসার পদে রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। কর্মজীবনে ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখার শাখা ব্যবস্থাপক, জোনাল অফিস এবং প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণসহ দেশ-বিদেশে ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার যোগীরনগুয়া গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ অনার্সসহ এমএ পাশ করার পর এমফিল ডিগ্রিও অর্জন করেন খ্যাতিমান এই ব্যাংকার।
পেশাগত জীবনের বাইরে ফয়েজ আলম একজন সফল লেখকও। বাংলাদেশে তিনি অগ্রণী উত্তর উপনিবেশী তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক ও কবি হিসেবে বিশেষ খ্যাতিমান। এডওয়ার্ড সাঈদের বিখ্যাত গ্রন্থ অরিয়েন্টালিজম-এর অনুবাদক হিসেবেও তার আলাদা খ্যাতি আছে। তার পনেরটির বেশি গ্রন্থ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।
হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার ক্রমিক নম্বর নিয়ে বুথ-৪ এ প্রবেশ করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যালট সংগ্রহ করলেন ভোটার। গোপন কক্ষে গিয়ে নিজের ভোট প্রদানও করলেন। ভোট দেয়া শেষে কক্ষের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীরা ওই ভোটারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ‘ভোটার কীভাবে হলাম নিজেও বলতে পারি না।’
মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচনে ভোট দিয়ে এক তরুণ ভোটার নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির ভোটার কীভাবে হওয়া যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও জানি না কীভাবে ভোটার হলাম। আমাকে ফোনে নিশ্চিত করা হয়েছে যে আমি চেম্বারের একজন ভোটার, তাই ভোট দিতে এসেছি।’
তার কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়, তার নিজস্ব কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে কি না? জবাবে তিনি জানান, তিনি একজন বাইক (মোটরসাইকেল) মেকানিক। তার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের এখনও নামকরণও করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা না হলে ট্রেড লাইসেন্স কীভাবে হলো বা আদৌ ট্রেড লাইসেন্স হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি আর কোনো জবাব না দিয়ে সরে পড়েন।
ভোট দিয়ে বের হচ্ছিলেন লিমন নামের আরেক ভোটার। তিনি জানান, সদর উপজেলার নারগুণ থেকে তিনি এসেছেন ভোট দিতে। তার ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ট্রেড লাইসেন্স আছে কি না এবং কী প্রক্রিয়ায় ভোটার হলেন- জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি৷ এ সময় তাকে ক্যামরার সামনে কথা বলতে না করেন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্যানেলের এক প্রার্থী।
ভোট দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন দুলালি ইসলাম। তিনি জানান, তার মামা একটি হিমাগারের ম্যানেজার। তিনিই তাকে ভোটার হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ‘দুলালি ফার্মেসী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে তার।
চেম্বারের ভোটার হতে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন মনে নেই।’
এদিকে ভোটের একদিন আগে সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে ৭ কারণ উল্লেখ করে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুটি প্যানেলের মধ্যে আলমগীর-মুরাদ ও সুদাম প্যানেল ভোট বর্জন করে। এ সময় প্রার্থীরা নির্বাচনের অনিয়ম, ভোটার তালিকা নিয়ে অসঙ্গতিসহ নানা কারণ উল্লেখ করেন।
এর আগে, গত ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচনের তারিখ পেছানোর জন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল প্যানেলটি। সে সময় ভোটের মাঠে থাকার কথা জানালেও অবশেষে ভোটের আগের রাতে তারা ভোট বর্জন করেন। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই অংশ নিয়েছে দুলাল-বাবলু ও আরমান প্যানেল।
চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাচন নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিত্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
জাতীয় তেল গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ঠাকুরগাঁও সদস্য সচিব মো. মাহবুব আলম রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বারের ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, আমরা দেখছি এখানে সাধারণ শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোটার হয়েছেন। অনেকেই আছেন যারা কোনো ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত না।
‘তাহলে অন্য যে প্যানেলটি অভিযোগ করেছে- নিরপেক্ষ ভোটার তালিকা হয়নি। সেটার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। এই নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা তাদের সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছেন।’
ভোটারদের প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি নির্বাচনি বোর্ডের আহ্বায়ক ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ভোটার তালিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রার্থী অভিযোগ করছেন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ আপিল কর্তৃপক্ষের নিকট জানানোর সুযোগ ছিল। নির্ধারিত সময়র মধ্যে করা আপিলগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আপিল নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর অভিযোগ করায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু দীর্ঘ বছর যাবৎ ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির কমিটি ছিল না, তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে চেম্বারের প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।’
আরও পড়ুন:ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক অব্যাহতির সময়সীমা শেষ হয়েছে সোমবার (১৫ এপ্রিল)। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরভিএমএফএ) সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিওআরভিএমএফএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কাঁচামাল আমদানি ও ভোজ্যপণ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতির মেয়াদ ১৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বিধায় পরদিন ১৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাট অব্যাহতির আগের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ১৭৩ টাকা, পাঁচ লিটারের বোতল ৮৪৫ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৩২ টাকায় বিক্রি করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ফেব্রুয়ারিতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত (অপরিশোধিত) সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে, তবে সময় লাগবে।
‘ভোজ্যতেলের নতুন চালান আমদানির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য