ভারতের গম রপ্তানি বন্ধ ও চিনি রপ্তানি সীমিত করার খবরে দেশের বাজারে বেড়ে গেছে আটা-ময়দা ও চিনির দাম। আবার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কাঁচা চামড়ায় ব্যবহারের বাড়তি চাহিদা মাথায় নিয়ে আগাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে লবণের দামও।
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের মজুত চাহিদার চেয়ে বেশি থাকার পরও এসবের অতিরিক্ত মূল্যবদ্ধিকে অযৌক্তিক মনে করছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মিল মালিকদের কাছে ডিলারদের তালিকা চেয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনটি। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পর পর দুটি বৈঠকেও ডিলারদের তালিকা চাওয়া হয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে ডিলারদের তালিকা চাওয়া হয়।
এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন সংস্থার নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোনো কারসাজির ঘটনা দেখলেই পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। পণ্যগুলোর সরবরাহকারী কোম্পানির কারখানায়ও অভিযান চালিয়ে আমদানি, মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তবে মধ্যস্বত্বভোগী ডিলাররা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেল ইস্যুতেও ডিলারদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সামনে কোরবানির ঈদ। বাজারে চাহিদাযোগ্য সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা রাখতে এবার এফবিসিসিআই আটা, ময়দা, চিনি, লবণ ইত্যাদি পণ্যের ডিলারদের তালিকা চেয়েছে মিল মালিকদের কাছে।
মোহাম্মদপুর টাউন হলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। ভোগ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজার সংকট এবং কোরবানির ঈদকে পুঁজি করে দেশের বাজার অস্থির না করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদৈর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বাজার কমিটিকে বিশেষভাবে তদারকি করারও নির্দেশনা।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে বাবু বলেন, ‘কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে এফবিসিসিআই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে সুপারিশ করবে। কোনো ডিলার এ সংকটের জন্য দায়ী হলে তার ডিলারশিপ বাতিলে মিল মালিকদের প্রতি চাপ প্রয়োগ এবং সরকারের কাছেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর সুপারিশ করা হবে।’
কোন কোম্পানির ডিলার কোথায় কারা তার তথ্য নেই এফবিসিসিআইতে। তাই তিনি চিনি, লবণ, আটা, ময়দা ইত্যাদি পণ্যের ডিলারদের তালিকা এফবিসিসিআইতে পাঠানোর জন্য মিল মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে বাজার সমিতিগুলোকে দোকানিদের নিয়ে মসলা, লবণ, চিনি ইত্যাদি খাতভিত্তিক সভা করার পরামর্শ দেয়া হয়। দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা টানানোসহ সীমিত মুনাফায় ব্যবসা পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্ট মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বাধ্য করতেও সমিতিগুলোকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
এফবিসিসিআইর এই সিনিয়র সহ-সভাপতি আবারো ১৫ দিন পর পর সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়ের সুপারিশ করেন।
বৈঠকে বাজারে স্থিতিশীলতা রাখতে প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি পণ্য না কিনতে ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআইর পরিচালক আবু মোতালেব।
মোহাম্মদপুর টাউন হল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান (বাবুল) জানান, যেসব দোকানি পণ্য মজুত ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করেছে, সমিতি তাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে ভবিষ্যতেও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র পরিচালক বিজয় কুমার কেজরিওয়াল, হারুন অর রশীদ, মোহাম্মদপুর টাউন হল সিটি করপোরেশন বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুসলিম উদ্দিন শিকদার প্রমুখ।
আরও পড়ুন:ডলার সংকটের মধ্যে পরপর দুই মাসে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি কিছুটা হলেও আশা জাগিয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছিল দেশে। যদিও তার পরের মাস অক্টোবরেই ইতিবাচক ধারায় ফিরে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সে মাসে প্রবাসীরা দেশে মোট রেমিট্যান্স পাঠায় প্রায় ১৯৮ কোটি ডলার, যা তার আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি।
সে সময় নভেম্বর ঘিরে প্রত্যাশা ছিল যে, রেমিট্যান্স ছাড়িয়ে যাবে ২ বিলিয়ন তথা ২০০ কোটি ডলারের বেশি। শেষ পর্যন্ত তা না হলেও কাছাকাছি এসেছে প্রবাসীদের পাঠানো আয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১৯৩ কোটি ডলার বা ১.৯৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান ব্যাংক রেট হিসাবে যা প্রায় ২১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সের পরিমাণকে সন্তোষজনক বলছেন ব্যাংকাররা। যদিও তা অক্টোবরের চেয়ে প্রায় পাঁচ কোটি ডলার কম।
বছরের দিক থেকে দেখলে প্রবৃদ্ধির পরিমাণটা উল্লেখযোগ্য। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯.৫ কোটি ডলার। সেই হিসাবে বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে দফায় দফায় বাড়ছে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের দাম। গেল কয়েক মাসে ব্যাংকগুলোতেও বেড়েই চলেছে ডলারের চাহিদা। রিজার্ভ থেকে কয়েক দফায় ডলার বিক্রি করেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
ডলার সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে দেশের ব্যাংক খাতের অভিভাবকদের।
গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি মেটাতে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ডলার সংকট কিছুটা কমে আসবে বলে এরই মধ্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
ডলার সংকট কমানোর পাশাপাশি রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতেও বৈদেশিক মুদ্রা আসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ নেমে এসেছে ২৫ বিলিয়নে। অন্যদিকে বিপিএম-৬ মেথডের হিসাবে রিজার্ভ নেমে এসেছে ১৯ বিলিয়নের ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে ডলার সংকট কমানো ও রিজার্ভ শক্তিশালী করতে নীতি নির্ধারকরা তাকিয়ে রয়েছেন বাড়তি রেমিট্যান্স আর রপ্তানি আয়ের দিকে। পরপর দুই মাসে প্রায় ৪ বিলিয়নের কাছাকাছি রেমিট্যান্স আসাতে স্বস্তি পেতে পারেন তারা।
এদিকে নভেম্বরে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে।
হিসাবে দেখা যায়, মোট ১৯৩ কোটি ডলারের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার। অন্যদিকে বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার। এ ছাড়া ৫৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে।
একক ব্যাংক হিসেবে এ মাসেও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে এককভাবে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পূবালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে প্রায় ১৪ কোটি ডলার।
এদিকে ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ ছাড়া সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালীর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে তিন কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
আরও পড়ুন:ভোক্তা পর্যায়ে ডিসেম্বর মাসের জন্য তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) দাম সমন্বয় করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
চলতি মাসের প্রথম কর্মদিবস রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ মূল্য ঘোষণা করা হয়, যা কার্যকর হবে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে।
প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এলপিজির সমন্বয়কৃত দর ঘোষণা করে বিইআরসি।
সমন্বয়কৃত মূল্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হবে ১ হাজার ৪০৪ টাকা, যা নভেম্বরে ছিল ১ হাজার ৩৮১ টাকা। অর্থাৎ রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে চলতি মাসে ক্রেতাকে ২৩ টাকা বেশি গুনতে হবে।
বিইআরসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর তথা মূসকসহ সাড়ে পাঁচ কেজি এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে ৬৪৪ টাকা। এ ছাড়া ১৫ কেজি এলপিজির দাম ১ হাজার ৭৫৫ টাকা, ২০ কেজির দাম দুই হাজার ৩৪০ টাকা, ২৫ কেজির দাম ২ হাজার ৯২৬ টাকা ও ৩০ কেজির দাম ৩ হাজার ৫১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদেশে আয় করে সেদেশের মুদ্রা দেশের ব্যাংকগুলোতে আমানত হিসেবে রাখা যাবে। শুধু তাই নয়, ওই আমানত থেকে মিলবে মোটা অংকের সুদও। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সেচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট-এফইপিডি থেকে জারি করা এক সার্কুলারে এমনটি জানানো হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় রয়েছে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার বিষয়টি। হিসাবে দেখা যাচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ কর্মী বিদেশে গেলেও সে তুলনায় রেমিট্যান্স আসছে না। শোনা যায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে অবৈধ হুন্ডিতে পাঠাতে উৎসাহ বাড়ছে প্রবাসীদের। আবার অনেক প্রবাসীর অভিযোগ, তাদের আমানত বিনিয়োগের কোনো ভালো পরিবেশ নেই দেশে। তাই অনেকে বিদেশেই তাদের অর্জিত অর্থ জমা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেও রেমিট্যান্স বাড়াতে নানা উদ্যোগের কথা বলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রবাসীদের জন্য এমন সুযোগ দেয়া হলো। আশা করা হচ্ছে, এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়মে রেমিট্যান্স খরা কাটবে।
নতুন নিয়মে প্রবাসী, দেশি-বিদেশি এমনকি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানও ডলার কিংবা পাউন্ডসহ অন্য বিদেশি মুদ্রায় আমানত জমা করতে পারবেন দেশের ব্যাংকে। জমার বিপরীতে মেয়াদ অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদও পাওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের ফরেন কারেন্সি (এফসি) একাউন্টের মাধ্যমে এসব ডিপোজিট সংগ্রহ করতে পারবে দেশের ব্যাংকগুলো। সেক্ষেত্রে মুদ্রাভিত্তিক রেফারেন্স রেটের সঙ্গে মার্কআপ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই উদ্যোগের ফলে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে। গ্রাহকরা দেশের ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা রাখলে বিদেশের চেয়েও বেশি সুবিধা পাবেন। শুধু তাই নয়, তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী আমানত ও মুনাফা বিদেশেও পাঠাতে পারবেন। তবে এফসি হিসেবে আমানত করা অর্থ অবশ্যই বৈধভাবে বিদেশে অর্জিত অর্থ হতে হবে।
হিসাবে দেখা গেছে, কোনো গ্রাহক তিন বছর মেয়াদে ডিপোজিট করলে সুদ পাবেন প্রায় ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। গ্রাহকদের সংশ্লিষ্ট কারেন্সিতে সুদ পেমেন্ট করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন সুবিধা অনুযায়ী কোনো প্রবাসী চাইলে তার নিজের অথবা পরিবারের অন্য কারও নামে এফসি একাউন্ট খুলে ফরেন কারেন্সি জমা করতে পারবেন। মেয়াদ শেষে সুদসহ জমা থাকা ফরেন কারেন্সি দেশে ব্যবহার করা যাবে। চাইলে বিদেশেও নিয়ে যাওয়া যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩৩ কোটি ডলার; এটা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। অবশ্য পরের মাস অক্টোবরেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা দেখা গেছে। এই মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৯৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
সব মিলে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর এই চার মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৬৮৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম।
আরও পড়ুন:ডলারের দাম আরও ২৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনায় ডলারের দাম পড়বে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা। আর আমদানিতে পড়বে ১১০ টাকা ২৫ পয়সা।
বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) বুধবার অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কার্যকর হবে আগামী রোববার থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন দুটি।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা, যা আগে ছিল ১১০ টাকা। আর আমদানি দায় মেটাতে ডলারের দাম নেয়া যাবে ১১০ টাকা ২৫ পয়সা, আগে যা ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে সরকারের ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকও সমপরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। ফলে প্রবাসী আয় পাঠালে ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১৫ টাকার কিছু বেশি পাবেন উপকারভোগীরা।
ডলারের জোগান ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে সময় সময় বাফেদা ও এবিবি বিদেশি মুদ্রাটির বিনিময় হার নির্ধারণ করে আসছে। এ দুটি সংগঠন মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকসংশ্লিষ্ট। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে তারা সময় সময় ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করছে।
আরও পড়ুন:দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরেক দফা বাড়ল। টানা ষষ্ঠ দফা বৃদ্ধির তিন দিনের ব্যবধানে এবার সপ্তম দফায় ভরিতে বাড়ানো হয়েছে এক হাজার ৭৫০ টাকা। সে হিসাবে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৮৭৫ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এনামুল হক ভুইয়া লিটনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়।
দেশের বাজারে আর কখনোই স্বর্ণের দাম এমন উচ্চতায় ওঠেনি। এ নিয়ে টানা সপ্তমবারের মতো দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হলো।
দেশে এর আগে ২৭ অক্টোবর এবং ৬, ১৯ ও ২৬ নভেম্বর টানা চার দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। এর মধ্যে সবশেষ ২৬ নভেম্বর ২২ ক্যারেটের স্বর্ণে ভরিতে বাড়ানো হয় এক হাজার ৭৪৯ টাকা। সে হিসাবে ওই পর্যায়ে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় এক লাখ আট হাজার ১২৫ টাকা।
এছাড়া ১৯ নভেম্বর ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দামে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানো হয়। এতে এই মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৩৭৬ টাকা। সেটিও ছিল দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে সর্বোচ্চ।
ব্যক্তি করদাতাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এছাড়া কোম্পানি করদাতাদের রিটার্ন জমার মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি থেকে দেড় মাস বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে।
বুধবার এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেয় এনবিআর।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০ লাখ ব্যক্তির আয়কর রিটার্ন জমার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর। তবে এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক রিটার্নও জমা পড়েনি।
এনবিআরে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৯ লাখের মতো নাগরিকের রিটার্ন জমা পড়েছে। সারা বছরের যেকোনো সময় রিটার্ন জমা দেয়া যায়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পর সংশ্লিষ্ট আয় বছরের রিটার্ন দাখিল করতে গেলে ৪ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়।
এ বছর কোনো আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়নি। এর পরিবর্তে এনবিআর করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে সহায়তা করার জন্য দেশব্যাপী কর অঞ্চল অফিস চত্বরে বিশেষ সহায়তা পরিষেবার আয়োজন করেছে।
এক্ষেত্রে করদাতাদের যে বিনিয়োগ রেয়াত পাওয়ার কথা ছিল, সেটিও তারা পাবেন না। ফলে তাদের আরও বেশি কর দিতে হবে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকারের বিষয়ে সবশেষ যে নীতি প্রকাশ করেছে তা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস উল্লেখ করেছে। বলা হয়েছে, বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া উচিত।
বাংলাদেশ দূতাবাসের মন্ত্রী (বাণিজ্য) মো. সেলিম রেজা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘শ্রম অধিকার সংক্রান্ত যে স্মারকলিপি যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশকে টার্গেট করা হতে পারে।’
চিঠির অনুলিপি অনুযায়ী, শ্রম অধিকার বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি আরেকটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মেমোরেন্ডামটি সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি বৈশ্বিক নীতি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবু বাংলাদেশ যে তাদের করা টার্গেটগুলোর একটি হতে পারে- এটি মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
‘মেমোরেন্ডামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ক ইস্যুগুলো বিশেষভাবে উদ্ধৃত করেছেন সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং অ্যাক্টিং সেক্রেটারি অফ লেবার।’
বিশ্বব্যাপী কর্মীদের ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং হাই লেবার স্ট্যান্ডার্ড উন্নয়ন ইস্যুতে ১৬ নভেম্বর একটি প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডাম ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যারা ইউনিয়ন নেতা, শ্রমিক অধিকার রক্ষাকারী ও শ্রমিক সংগঠনকে আক্রমণ করে, হুমকি দেয়, ভয় দেখায়, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। যারা এ ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য বিষয়ক জরিমানা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের মেমোরেন্ডামটি এমন এক সময় ঘোষণা করা হয় যখন ন্যূনতম মজুরি ইস্যুতে বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভ চলছিল।
বাংলাদেশ দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়, ‘মেমোরেন্ডাম অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ফরেইন মিশন সরাসরি শ্রম বিষয়ক ইস্যু নিয়ে কাজ করবে। এ নীতিটি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহী কূটনীতিক বা মিশনকে অনেক অভ্যন্তরীণ/বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে উৎসাহিত করতে পারে।
‘ধারণা করা হচ্ছে, এ নীতি কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রয়োগ করার সুযোগ আছে; যদি তারা মনে করে যে সেখানে শ্রম অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মেমোরেন্ডাম নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। মেমোরেন্ডামে শ্রম অধিকার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার পেছনে রাজনীতি রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এটা ব্যবহারের চেষ্টা করবে।’
মেমোরেন্ডামটিকে বাংলাদেশের জন্য একটি সংকেত উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘শ্রম ইস্যুর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র এ নীতির অধীনে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
‘মেমোরেন্ডাম বাংলাদেশের পোশাক খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য