নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের চড়া দামের তালিকা লম্বা হচ্ছে। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে অপেক্ষাকৃত স্বল্প মূল্যের প্রোটিনের উৎস ডিমও।
সংরক্ষণজনিত ঝামেলার কারণে গরমের সময়টাতে ডিমের দাম কিছুটা কম থাকে, কিন্তু এ বছর মুরগির খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে ডিমের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মগবাজার-কারওয়ান বাজারের চিত্র
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডজনে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। গত সপ্তাহে এক ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। একই ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে।
ডজন ১২০ টাকা ধরলে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১০ টাকা। যদিও পাড়ামহল্লায় দাম গিয়ে ঠেকেছে ১১ টাকায়।
মগবাজারের খুচরা কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি ডজনের দাম পড়ছে ১৩২ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সঙ্গে প্রতি হালিতে ৪ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে কেন জানতে চাইলে মগবাজারের দোকানদার ইসহাক মিয়া বলেন, ‘কারওয়ান বাজারের হিসাব এখানে কইরা লাভ নাই। আমরা খুচরা বেচি। আর ওরা পাইকারিতে প্রতিদিন হাজার হাজার ডিম বেচে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি হালি আমরা ৪৪ টাকা বিক্রি করি আর এক ডজন নিলে ১৩০ টাকা রাখি।’
ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বাড়লেও হাঁসের ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। আগের মতোই প্রতি ডজন হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
একই অবস্থা দেশি মুরগির ডিমের ক্ষেত্রেও। প্রতি ডজন দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।
কী বলছেন বিক্রেতা-ক্রেতারা
কারওয়ান বাজারে পাইকারি ডিম বিক্রেতা শাহাবুদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে খামারিরা দুষছেন পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়াকে।
তিনি বলেন, সাধারণত এ সময়ে ফার্মের মুরগির রোগবালাই কিছুটা বাড়ে। এটাও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ডিমের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা চলছে। কখনও সামান্য কমছে, আবার কখনও বাড়ছে।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় হাবিবুর রহমান নামের ক্রেতার সঙ্গে। ডিম কেনার সময় বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুই হাতের নাগালে নেই। ডিমের অবস্থাও একই।
‘সবকিছু শুধু হুহু করে বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ না খেয়ে মরবে।’
কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম
ডিমের দাম বাড়লেও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি সাদা ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। আর প্রতি কেজি লাল ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৯০ টাকা।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকায়। খাসি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এ দুই ধরনের মাংস একই দামে বিক্রি হয়েছে।
প্রায় অপরিবর্তিত সবজি-মাছের দাম
গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি ও মাছ। কোনো সবজির দাম কমেনি; বরং দুই-একটি সবজিতে দাম কিছুটা বেড়েছে।
গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। এ সপ্তাহেও তা ১০০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা রাজীব বলেন, গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে সবজির দাম। কমার কোনো লক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, সবজির মধ্যে শসা ৪০, ঢ্যাঁড়শ ৩০, উস্তে ৪০, পটল ৫০, কচুর লতি ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও কারওয়ান বাজারে দেশি জাতের চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে ট্যাংরা ৫০০, বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০, কাঁচকি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আইড়, চিতল, বেলে মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে।
আরও পড়ুন:সরাসরি কৃষকের খেত থেকে সবজি কিনে শহর এবং গ্রামের প্রতিটি মোড়ে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই তাদের এই কর্মসূচি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার থেকে দেশের প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি নগরে, প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি ইউনিয়নে, প্রতিটি ওয়ার্ডে, প্রতিটি শহর-বন্দর-গঞ্জে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা ন্যায্যমূল্যে সবজি বিতরণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-মাদ্রাসা-স্কুলে পড়া ছাত্রলীগের কর্মীরা ক্লাস-পরীক্ষা শেষে পাড়া-মহল্লায়, মেডিক্যাল কলেজ- ইঞ্জিনিয়ারিং-কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ কর্মীরা শহর-গ্রামের প্রতিটি মোড়ে সবজি বিতরণ করবে।
এতে বলা হয়, রাজনীতির নামে সন্ত্রাস করে, মানবতার নামে মানুষ হত্যা করে, ভোটের নামে ভাতের থালায় টান দিয়ে, বর্জনের নামে বিসর্জন দিয়ে, সমতার নামে সম্পদ ধ্বংস করে, গণতন্ত্রের নামে হরতাল-অবরোধ দিয়ে, দেশ বিক্রি করে হলেও ক্ষমতায় যাবার লোভে-ক্রোধে বিএনপি-জামায়াত চক্র দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাশাপাশি বিশ্ব মোড়লেরা যুদ্ধ বাধিয়ে, হামলা করে, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে, তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করে, মুদ্রামান কমিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে পৃথিবীব্যাপী যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে তা থেকে এ দেশের জনগণ বিচ্ছিন্ন নয়। এমতাবস্থায়, বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার একমাত্র ঠিকানা, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা সরাসরি কৃষকের ক্ষেত থেকে সবজি কিনে তা ন্যায্যমূল্যে বিতরণ করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা যেমন যুদ্ধে গেছে, হাসিমুখে সতের হাজার জীবন উৎসর্গ করেছে, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে যেমন কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে, করোনা মহামারিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে, বই-খাতা-কলম হাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সন্ত্রাস দূর করেছে, গণতন্ত্র ও মুক্তির সংগ্রামে ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিয়েছে তেমনি এবারও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করে মানুষের জীবনকে সহজ শান্তি এবং সুখের করতে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন:খোলা ট্রাকের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকায় ভর্তুকি মূল্যে আলু, পেঁয়াজ, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল বিক্রি করবে সরকার। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে রাজধানীর স্বল্প আয়ের মানুষরা এসব পণ্য কিনতে পারবেন।
মঙ্গলবার থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ৩০টি খোলা ট্রাকের মাধ্যমে এসব নিত্যপণ্য বিক্রি করা হবে। এতে ৯ হাজার পরিবার উপকৃত হবেন। সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। খবর বাসসের
তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে রাজধানীতে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রাকে মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, আলু ও পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। একেকজন ২ কেজি মসুর ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি আলু ও ২ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। প্রতিটি ট্রাক থেকে প্রায় ৩০০ জনকে এ পণ্য দেয়া হবে। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে এ পণ্য বিক্রি হবে। এর ফলে নতুন করে ৯ হাজার পরিবার এ সুবিধায় যুক্ত হবে।
তিনি জানান, খোলা ট্রাক থেকে ৬০ টাকা কেজিতে ডাল, ৭০ টাকায় চিনি, ৩০ টাকায় আলু, ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ এবং ১০০ টাকা লিটার দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হবে। আপাতত কয়েকদিন চিনি বিক্রি করা হবে না। চিনি আমদানি করা গেলে এই কর্মসূচিতে চিনিও যুক্ত হবে।
ঢাকায় দৈনিক ৯ হাজার পরিবারের কাছে খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হবে উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘টিসিবির ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর বাইরে যে কেউ এই পণ্য কিনতে পারবেন। আমরা এসব পণ্যের সংগ্রহ বাড়াতে পারলে বিক্রির আওতা আরও বাড়ানো হবে।’
তিনি বলেন, আপাতত সব কর্মদিবসে এই বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে। তবে পরবর্তীতে সপ্তাহের সব দিন কর্মসূচি চলবে।
তিনি জানান, একেক এলাকায় একেক দিন পণ্য বিক্রি করা হবে, যাতে রাজধানীর সব এলাকার মানুষ ন্যাষ্যামূল্যের এসব পণ্য পায়। বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ডলারের বিনিময় হারের দাম বেড়ে যাওয়ায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন বাণিজ্য সচিব।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ হাজার ৯৫ টন আলু আমদানি হয়েছে। ২ লাখ টন আলুর আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৬২ হাজার ডিম আমদানি হয়েছে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন,‘আমাদের উদ্দেশ্য ডিম আমদানি না, ডিমের দাম কমানো। দাম কমে গেলে আমদানি কম হলেও অসুবিধা নেই। তবে বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আলু ও ডিম আমদানি হবে।’
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘ডিম ও আলু আমদানি হওয়ায় উল্লেখযোগ্য ফল আমরা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা গেছে, কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৭ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হবে। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু বের হবে।’
টিসিবি কার্ডধারীদের এখন আলু দেয়া হবে না জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, জেলা প্রশাসকরা সোমবার থেকে সরকারি দাম অর্থাৎ ৩৬ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি নিশ্চিত করবেন। তেল, চিনি, ডাল, আলু এসব নিত্যপণ্য আমদানি করতে যেন ডলারের সমস্যা না হয়,সরকারের পক্ষ থেকে ব্যংকসহ সংশ্লিষ্টদের সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাজারে আগুন। দিন দিন বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এখনো কমেনি কোনো পণ্যের দাম। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
ক্রেতাদের বলছেন, দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে মাছ-মাংসের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তিতে নেই তারা।
শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁপে ছাড়া অন্য কোনো সবজি প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে মিলছে না। অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছে একশো টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে। এ ছাড়া মাছের দামও কেজিতে বেড়েছে অন্তত ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
শুধু তাই নয়, আমদানির পরেও ডিমের বাজারের অস্থিরতা কাটেনি। বেশি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে ডিম। শেষ এক সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়বাজার থেকে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
এদিকে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এখন দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বাজারে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, ক্ষেতে সবজি পচে নষ্ট হচ্ছে। সরবরাহ বিঘ্ন হওয়ায় দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গোল বেগুন কেজিতে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা এবং লম্বা বেগুন কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুরমুখি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আর ঢেঁড়স, পটল, ঝিঙা, চিচিঙা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে বাজারগুলোতে। কম দামের মধ্যে মুলার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
মাছ মাংসও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে বাজারগুলোতে। ১০ টাকার মতো বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছের কেজিও এখন ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা। রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। যা কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন মাছ বিক্রেতারা।
আরও পড়ুন:সারা দেশে শরৎকালের শেষের দিকের বৃষ্টিতে ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাজধানী ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে সবজির দাম আকাশছোঁয়া।
শুক্রবার প্রতি কেজি সবজির দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খবর ইউএনবির
ঢাকার সবজি সরবরাহের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, আগাম জাতের শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
এর ফলে ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, যশোর ও কুষ্টিয়ার আশপাশের সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্থান থেকে রাজধানীতে বেশিরভাগ সবজি সরবরাহ করা হয়।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী জানান, তার দোকানে সাধারণত ৬ থেকে ৭টি সবজি বোঝাই ট্রাক আসে। সেখান থেকেই প্রতিদিন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের পর সবজি বোঝাই ট্রাকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ থেকে ৪টিতে।
সরবরাহের এই ঘাটতির কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, মাছ, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখনও পর্যাপ্ত সবজি আসেনি, যার কারণে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে এই দাম কমে যাবে।
প্রতি কেজি বেগুন ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৯০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, শিম প্রতি কেজি ২০০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, উচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, শসা ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, ঝিঙ্গে ৮০ টাকা কেজি, কচু ৮০ থেকে ৯০ কেজি, মূলা ৮০ টাকা কেজি, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা কেজি, ফ্রেঞ্চ বিন ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি, কুমড়া (মাঝারি সাইজ) ১০০-১৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পিস, ধুন্দল ৭০ থেকে ১০০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ধনে পাতা ৫০০ টাকা কেজি, ক্যাপসিকাম (লাল) ৬০০ টাকা কেজি এবং ক্যাপসিকাম (সবুজ) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি।
দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। আমদানি করা রসুনের দামও বেড়েছে। আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা এবং দেশি রসুন ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আদা মানের ভিত্তিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
লাল মসুর ডালের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি লাল মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা এবং আমদানি করা মসুর ডাল (মোটা জাত) বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।
রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার টিনজাত সয়াবিন তেল ৮৬০ টাকা, আলগা সুপার পাম অয়েল ১৬০ টাকা, চিনি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, গুড় ১৭০ থেকে ২০০ টাকা এবং চিড়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, পাইজাম ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, নাজিরশাইল ব্র্যান্ডের চাল ৭২ থেকে ৮০ টাকা, মিনিকেট ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা, কাটারি ভোগ ৯০ টাকা, পোলাও চাল ১৪০ থেকে ১৫৫ টাকা এবং কালিজিরা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার ঢাকার কাঁচাবাজারে আটা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা এবং দুই কেজির প্যাকেট ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের খবরে মাছের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে- পুটি প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, জীবন্ত পুটি ৫০০ টাকা কেজি, খলিসা ৪০০ টাকা কেজি, চাপিলা ৫০০ টাকা কেজি, চাষের কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি, ফলি চান্দা (রূপচাদা) ১৪০০ টাকা কেজি, চান্দা ছোট ৪০০ টাকা কেজি, শোল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বাইম ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি, মেনি ৫০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি।
কাইট্টা মাছ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি, কোরাল মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, নদীর পাঙ্গাস ৭০০ টাকা কেজি, চাষ করা পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, রাজপুটি ৪৫০ টাকা কেজি।
তেলাপিয়া কেজি ২৪০ টাকা, রুহিত ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, মাঝারি সাইজের কার্প (কাতল) প্রতি কেজি ৩০০-৩২০ টাকা, বড় সাইজের কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, স্থানীয় জাতের শিং মাছ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, কোরাল ৬০০ টাকা কেজি, গলদা চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকা কেজি এবং চিংড়ি ৫০০-৬০০ টাকা কেজি।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, মাটন ১১৫০ থেকে ১১৮০ টাকায়। মাঝারি আকারের দেশি মোরগ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা এবং মুরগি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম (ফার্ম) প্রতি ডজন ১৬০ টাকা, ডিম (স্থানীয়) ৭০ টাকা এবং ডিম (হাঁস) ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি জোড়া কবুতর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
দেশে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ঢাকা মহানগরীতে টিসিবির কার্ডধারীদের মধ্যে ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর বাসসের
এতে জানানো হয়, গত কয়েক বছরের আলোকে ও পেঁয়াজের খারাপ মৌসুমের বিবেচনায় সোমবার থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগরীর কার্ডধারী ভোক্তাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশে স্বল্প আয়ের এক কোটি পরিবার টিসিবির কার্ডধারী। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে যেসব কার্ডধারী রয়েছেন, তাদেরকে মূলত ভর্তুকি মূল্যে প্রতি মাসে দুই কেজি করে পেঁয়াজ দেয়া হবে।
টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগরীর বাইরে দেশের অন্য জায়গায় সম্প্রসারণ করা হবে। তবে সেটি মূলত আমদানি করা পেঁয়াজের পর্যাপ্ততা সাপেক্ষে করা হবে।
টিসিবির কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে সাধারণত চিনি, সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল বিক্রি করা হয়। কোনো কোনো মাসে চালও বিক্রি করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় খোলাবাজারের তুলনায় কম দামে কার্ডধারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য কিনতে পারেন।
‘দেড় কেজি আলু ৮০ টাকা, এক কেজি বেগুন ৭০ টাকা, এক পোয়া কাঁচামরিচ ৬০ টাকা দিয়ে কিনেছি, কিন্তু বাসা থেকে ২০০ টাকা নিয়ে এসেছি। তিনটি কাঁচাবাজার কিনতেই ২১০ টাকা লাগল। মরিচ যে দোকান থেকে কিনেছি সেখানে ১০ টাকা বাকি রেখেছি। স্ত্রী বলেছে কোনো টাটকা শাক নিতে, কিন্তু সেটিও নিতে পারলাম না। এখন হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাব।
‘সবজির বাজারে ঢুকলে চোখ থেকে পানি চলে আসে। আয় হয় এক টাকা, আর খরচ হয় তিন টাকা। তাহলে সংসার কীভাবে চালাব? সবজির দাম যদি এত বেশি হয়, তাহলে তো মাসে এক দিনের জন্যও মাছ ও মাংসের দেখা পাব না।’
দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে শনিবার সকাল ১০টার দিকে এভাবে নিজের অসহায়ত্বের কথাগুলো বলছিলেন শহরের বালুয়াডাঙ্গা অন্ধ হাফেজ মোড়ের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম।
দেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী জেলা দিনাজপুরে বিভিন্ন সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি সবজি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
দিনাজপুর শহরের পাইকারি বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে আলু প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৪২ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি।
এর বাইরে পটল এক সপ্তাহ আগে ৫৫ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি, ঢেঁড়স এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ৭০ টাকা, পেঁপে এক সপ্তাহ আগে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ৩০ টাকা, করলা এক সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ টাকা এবং বরবটি এক সপ্তাহ আগে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লাউ প্রকারভেদে এক সপ্তাহ আগে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৬০ টাকায়, শসা এক সপ্তাহ আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। এক সপ্তাহ আগে ওই বাজারে কাঁচামরিচ ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও শনিবার সকালে বিক্রি হয় ২৪০ টাকা কেজিতে।
অপর দিকে আগাম শীতকালীন সবজির দামও অনেকের নাগালের বাইরে। টমেটো কেজিপ্রতি ১০০, গাজর কেজিপ্রতি ১০০, ফুলকপি ১০০, বাঁধাকপি ৬০, শিম ১২০ ও মুলা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পান দোকানি খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট একটি পানের ঘুন্টি (পানের দোকান) আছে আমার। সেখানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেচাবিক্রি হয়। এর মধ্যে দোকানের মাল (পণ্য) কিনতেই ২০০ থেকে ২৫০ টাকা চলে যায়। বাকি টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হয়।
‘এখন তো মানুষের পকেটে টাকা নাই। তাই দোকানের বেচাবিক্রি খুব কম হচ্ছে। চারজনের সংসারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার কাঁচাবাজার লেগে যাচ্ছে। সপ্তাহে এক দিন কোনোমতে মাছ বা মাংস খাই, কিন্তু বর্তমানে কাঁচাবাজারে যে আগুন লেগেছে। তাতে মাছ ও মাংস আর পাতে (প্লেটে) উঠবে না।’
বাজার করতে আসা ইজিবাইক চালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘সারা দিন ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় হয়, তাতে তো বাজার করতেই শেষ হয়ে যায়। কয়েক দিন ধরে কাঁচা শাকসবজির দাম খুবই বেড়েছে। মাছ ও মাংস খাওয়া আগেই ছেড়ে দিয়েছি; এখন শাকসবজি খাওয়াও ছেড়ে দিতে হবে।
‘দিনাজপুর শহরে যাত্রীর চেয়ে ইজিবাইকের সংখ্যা বেশি। ঠিকমতো ভাড়া পাওয়া যায় না। সামান্য আয় দিয়ে কোনোরকমে চলতে হচ্ছে।’
সরবরাহ কম ও বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সবজি ব্যবসায়ী। তাদের একজন কামরুল হাসান বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে দিনাজপুরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। ফলে সবজি বাজারে সরবরাহ কম হচ্ছে। তাই দাম এত বেড়েছে।
‘আমরা বেশি দামে সবজি কিনে কয়েক টাকা লাভ করেই বিক্রি করে দিই। কৃষক আমাদের ঠিকভাবে সরবরাহ করলে সবজির দাম অনেক কমে আসবে।’
আরও পড়ুন:আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
ঢাকা থেকে রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের বাসভবনে গিয়ে শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম শক্তভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকারের যথেষ্ট পরিমাণ লোকের অভাব রয়েছে। এরপরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেয়া দাম ঠিক করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের বিশাল বাজার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গোলের কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। সেটি কাভার করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তবে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছেন।
‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সবসময় ব্যবসায়ীদের যে চাপে রাখা যায়, তা কিন্তু নয়। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার দিচ্ছি।’
পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যখন যে পণ্যের মজুত কমে যায়, তখন সেই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে সরকার। সেটা দেশি বা বিদেশি পণ্য হতে পারে। তিন পণ্যের বেঁধে দেয়া দাম কার্যকর হবে।
‘এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও রয়েছে। এখন ন্যায্য দাম কার্যকর হবে।’
এদিকে দুর্গাপূজায় ভারতে ইলিশ রপ্তানির প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো সারা বছর ইলিশ রপ্তানি করি না। দুর্গাপূজার সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাঙালিদের জন্য শুভেচ্ছা হিসেবে সামান্য কিছু পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘সারা বছর আমাদের যে পরিমাণ ইলিশ হয়, তার থেকে মাত্র দুই শতাংশ ভারতে দেয়ার চেষ্টা করি। মাছ রপ্তানির কোনো চিন্তা নেই।
‘এটাকে রপ্তানি বলা যাবে না। শুভেচ্ছা টোকেন হিসেবে দেয়া হয়। বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরা হয়। সেখান থেকে ৪-৫ হাজার টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যা আমাদের দুই দিনের উৎপাদনও নয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য