বিশ্বজুড়ে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি, কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে আমদানি নানা পণ্যে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। তবে দেশের স্বার্থে বিপরীত পদক্ষেপ নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে কিছু দেশ।
মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ঘাটতি পূরণে তারা মুরগি রপ্তানি বন্ধ করতে যাচ্ছে। তা কার্যকর হবে জুনেই।
এশিয়ার অন্য দেশের মধ্যে ভারত এরইমধ্যে গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। পাম-ওয়েল রপ্তানি তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ রেখেছিল ইন্দোনেশিয়া।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্য সরবরাহে বড় বিপর্যয় নেমে আসে। সামনের দিনগুলোতে বিশ্ব বড় ধরনের খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে বারবার সতর্ক করছে জাতিসংঘ। এরই মধ্যে মুরগি রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিল মালয়েশিয়া।
অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’ –এর সম্ভাব্য উত্থান দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মুরগির দাম বাড়তে দেখা গেছে। সংকট বিবেচনায় খুচরা ব্যবসায়ীরা কেবল চাহিদা অনুযায়ী মাংস সংগ্রহ করছেন।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব বলেন, ‘মাসে ৩৬ লাখ মুরগির রপ্তানি বন্ধ করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দাম এবং উৎপাদন স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। নিজেদের নাগরিক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।’
মালয়েশিয়ার মুরগির প্রায় এক তৃতীয়াংশ কিনে থাকে প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর। এ পদক্ষেপে দেশটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি এক বিবৃতিতে জানায়, হিমায়িত মুরগির সরবরাহে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে ঘাটতি কমাতে বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকু কিনতে ভোক্তাদের পরামর্শ দিচ্ছি।
যুদ্ধের প্রভাব
মালয়েশিয়ার মুরগির রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের সবশেষ পদক্ষেপ। এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছিল, খাদ্যের দামের এই রেকর্ড বৃদ্ধি, কয়েক মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্য এবং নিম্ন পুষ্টির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।
গম রপ্তানির অন্যতম শীর্ষ দেশ ইউক্রেন। যুদ্ধের কারণে দেশটিতে উৎপাদন কমে গেছে। সরবরাহেও দেখা দিয়েছে নানা বিপত্তি। ফলে বিশ্বজুড়ে বেড়ে গেছে গমের দাম। যা রপ্তানিনির্ভর দেশগুলোকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে।
ইউক্রেনের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিডেনকো বলেন, “ইউক্রেনে আটকে থাকা লাখ লাখ টন শস্যের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে সোচ্চার হতে হবে। সরবরাহের জন্য একটি ‘নিরাপদ পথ’ তৈরি করা উচিত।”
ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সাইডলাইন বৈঠক শেষে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি বলেন, “ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানিতে রাশিয়ার বাধা ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’ ঘোষণার সামিল। আমরা ইতোমধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি।”
কর্মক্ষেত্রে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’?
ভারত প্রধান খাদ্যশস্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর এই মাসের শুরুতে গমের দাম আবার বেড়েছে। দেশে তাপপ্রবাহের কারণে অভ্যন্তরীণ দাম রেকর্ড পর্যায়ে চলে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। এবার চিনি রপ্তানিতে লাগাম টানার বিষয়টিও ভাবছে মোদি সরকার।
এ ছাড়া খরা এবং বন্যার কারণে অন্যান্য প্রধান ফসল হুমকিতে আছে। যদিও ইউক্রেনের বদলে ভারত থেকে গম সরবরাহের প্রত্যাশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পাম-ওয়েলের দামও বেড়েছে। রান্নার তেলের দাম স্থানীয় পর্যায়ে কমাতে তিন সপ্তাহের জন্য রপ্তানি রেখেছিল পাম-ওয়েল উৎপাদনের অন্যতম দেশ ইন্দোনেশিয়া। সোমবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অফ পাবলিক পলিসির সহকারী অধ্যাপক সোনিয়া আক্তারের মতে “এগুলো ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’-এর উদাহরণ।
“সরকাররা এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে। কারণ তারা মনে করে যে তাদের নাগরিকদের সবার আগে রক্ষা করতে হবে।”
সোনিয়া আরও বলেন, ‘২০০৭-২০০৮ সালের খাদ্য সংকটের অভিজ্ঞতা থেকে এটি আশা করা যায় যে আরও দেশ এই ধারা অনুসরণ করবে। এতে সংকটের পাশাপাশি খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।’
তবে সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক উইলিয়াম চেন মনে করেন, ‘রপ্তানি বিধিনিষেধ সম্পূর্ণরূপে একটি অস্থায়ী পদক্ষেপ। খাদ্য জাতীয়তাবাদের সঙ্গে এর তুলনা চলে না। অন্যান্য দেশগুলো খাদ্যদ্রব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং পরে তা তুলে নিয়েছে।’
সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি হয়েছে সাউথ আফ্রিকা। দিনে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন, দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
তীব্র শীতের মধ্যে অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহে নাকাল দেশটির মানুষ। রুম হিটার চালু, রাতের খাবার রান্না এমনকি ফোন চার্জ করতেও সমস্যা হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি ‘এসকম’ একে বলছে স্টেজ সিক্স লোডশেডিং। বিদ্যুৎ না থাকায় অচল ট্রাফিক সিগনাল লাইট। এতে রাস্তায় তৈরি হচ্ছে যানজট। কর্মক্ষেত্র এবং বাড়িতেও তৈরি হয়েছে দুর্বিষহ অবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো বিরক্ত সাউথ আফ্রিকার প্রধান শহর জোহানেসবার্গের বাসিন্দা জর্জ ল্যান্ডন। দেশ ছাড়ার ইচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে আমার একটি চাকরির ইন্টারভিউ রয়েছে। আমি আগামীকাল ফ্লাইট বুক করছি। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, তবে দেশকেও তো আমাদের ভালোবাসতে হবে।’
এসকম-এর দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির জন্য সাউথ আফ্রিকায় দিন দিন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
গত বছরে দেশটির জাতীয় গ্রিডে চাহিদার চেয়ে ২৫২১ গিগাওয়াট ঘণ্টা কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আর এ বছরের কেবল জুলাই মাসেই এসকম জাতীয় গ্রিডে ২২৭৬ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ কম বিদ্যুৎ দিয়েছে।
দিনে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন রাখার ব্যপারে এসকম বলছে, কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে কোনো এলাকা বাছাই করা হচ্ছে না। যে কোনো এলাকায় যে কোনো সময়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হতে পারে।
আরও পড়ুন:ভারতের উত্তরপ্রদেশে হিন্দু দেবদেবীর ছবি ছাপা ছিল এমন খবরের কাগজে মুড়ে মুরগির মাংসের খাবার বিক্রির অভিযোগে এক রেস্তোরাঁ মালিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেস্তোরাঁ মালিক মহম্মদ তালেবের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দেবদেবীর ছবিযুক্ত কাগজে খাবার বিক্রি করে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ তুলে তালেবের দোকানের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজ্যটির উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ এই বিক্ষোভ করে।
পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
যেভাবে ঘটনার শুরু
উত্তরপ্রদেশের সম্ভল শহরে তালেবের রেস্তোঁরাটির নাম ‘মেহেক’। বেশ পুরনো এই রেস্তোরাঁ থেকে অনেকেই মাটন কাবাব, চিকেন তান্দুরির মতো খাবার পার্সেল করে নিয়ে যায়।
গত ১ জুলাই থেকে ভারতে পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে দোকানিরা বাধ্য হয়ে কাগজের ব্যাগ বা খবরের কাগজের ঠোঙাতেই ক্রেতাদের হাতে জিনিসপত্র তুলে দিতে শুরু করেছেন। তালেব দোকানে ব্যবহার করছিলেন পুরনো খবরের কাগজ। আর হিন্দুদের নবরাত্রি উৎসবের সময় প্রকাশিত সেই কাগজগুলোতে ছিল নানা হিন্দু দেবদেবীর ছবি।
সেই কাগজে মুড়ে মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি খাবার বিক্রি করা হচ্ছে বলে রোববার খেয়াল করেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। তারা রেস্তোরাঁটির সামনে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
হিন্দু জাগরণ মঞ্চের জেলা সভাপতি কৈলাস গুপ্তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তালেব ও তার দোকানের কর্মীরা।
রাজ্য পুলিশ যা বলছে
সম্ভলের পুলিশ সুপার চক্রেশ মিশ্রা মঙ্গলবার টুইটারে জানান, রেস্তোরাঁয় হিন্দু দেবদেবীদের ছবি সংবলিত কাগজে মুড়ে মাংস বিক্রি করার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ দোকানের মালিক তালেব ও কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তাদের ওপর ছুরি-চাকু নিয়ে হামলার চেষ্টা চালানো হয়।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ এরপর তালেবকে গ্রেপ্তার করে। আদালতের নির্দেশে তাকে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
‘এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’
তালেবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত’
এদিকে রেস্তোরাঁটির একজন কর্মী জানিয়েছেন, তাদের মালিক কাবাডি বা পুরনো জিনিসপত্রের দোকান থেকেই ওই খবরের কাগজগুলো ঠোঙা বানাতে কিনে এনেছিলেন। তারা কেউ খেয়াল করেননি যে তাতে হিন্দু দেবদেবীর ছবি আছে।
এই ঘটনা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত বলে তিনি দাবি করেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
ভারতে সোশ্যাল মিডিয়াতে এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। একদল বলছেন, হিন্দু দেবদেবীদের যারা এভাবে অপমান করার সাহস পায় তাদের এ ধরনের শাস্তিই প্রাপ্য।
আরেক দল বলছে, তালেব যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে গ্রেপ্তার হন তাহলে বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মা এখনও জেলের বাইরে কেন?
অর্থনীতিতে আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে এবং বিলাস পণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব ধরনের মোটরকার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, প্রসাধনী, স্বর্ণালংকার, তৈরি পোশাক, গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক সামগ্রী বা হোম অ্যাপ্লায়েন্স, পানীয়সহ বেশকিছু পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না আমদানিকারকরা।
এসব পণ্যের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এর আগে যা ছিল ৭৫ শতাংশ।
অর্থাৎ এসব বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের পুরো আমদানিমূল্য ব্যাংকে জমা দিতে হবে আমদানিকারকদের। এসব পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংক কোনো ধরনের ঋণ দিতে পারবে না।
সব ধরনের মোটরকারসহ বেশকিছু বিলাস পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না আমদানিকারকেরা। ফাইল ছবি
দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। বাণিজ্য ঘাটতি ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ফলে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এখন এক ডলারের জন্য ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে সাড়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে।
এ নাজুক পরিস্থিতিতে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে বিলাস পণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনার দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার পুনর্নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোটরকার (সেডানকার,এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার, মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাব ও সাজসজ্জার সামগ্রী, ফল ও ফুল, নন–সিরিয়াল ফুড (যেমন অশস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়, যেমন টিনজাত খাদ্য, চকলেট, বিস্কুট, জুস, সফট ড্রিংকস ইতাদি), অ্যালকোহল–জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।
অর্থাৎ কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি ১ কোটি টাকার একটি গাড়ি আমদানি করতে চাইলে তাকে পুরো টাকা নগদ দিতে হবে। ব্যাংক কোনো ঋণ দেবে না।
গত ১১ এপ্রিল জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সকল পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরপর ১০ মে সে নির্দেশনায় পরিবর্তন এনে সব ধরনের গাড়ি, ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস সামগ্রী আমদানির এলসি খুলতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। জরুরি পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মার্জিন রাখতে বলা হয়।
আরও পড়ুন:ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে ফিল্ডস নামে একটি শপিং মলে এক বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
রোববার মাঝরাতে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় আরও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন।
কোপেনহেগেন পুলিশ অপারেশন ইউনিটের প্রধান পুলিশ ইন্সপেক্টর সোরেন থমাসেন বলেছেন, সন্দেহভাজন হামলাকারীকে ইতোমধ্যেই আটক করা হয়েছে। ২২ বছর বয়সী জাতিগত ডেনিশ ওই যুবককে রাজধানীর দক্ষিণ প্রান্তে ফিল্ডস শপিং সেন্টারের কাছ থেকে আটক করা হয়।
সাংবাদিকদের সোরেন বলেন, ‘আমরা জানি সেখানে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। অনেকে আহতও হয়েছেন।’
এ ঘটনায় সন্ত্রাসবাদকে উড়িয়ে দেয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এতে আরও মানুষের সম্পৃক্ততা আছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই মুহূর্তে শহরের কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। তবে ‘জাতিগত ডেন’ ছাড়া আটক যুবক সম্পর্কে খুব বেশি বিবরণ দেননি সোরেন।
ফিল্ডস শপিং সেন্টারটি কোপেনহেগেনের উপকণ্ঠে অবস্থিত। সাবওয়ে লাইনের বিপরীতে, যা শহরের কেন্দ্রকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত করেছে।
পাশ্চাত্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ঘটনাস্থল থেকে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার তৎপরতা ছাড়াও প্রাণভয়ে নারী-পুরুষদের ছোটাছুটি করতেও দেখা গেছে।
কোপেনহেগেনের মেয়র সোফি এইচ অ্যান্ডারসেন এক টুইটে লিখেছেন, ‘ফিল্ডসে গুলি চালানোর ভয়ংকর খবর! আমরা এখনও নিশ্চিত নই কতজন আহত বা মারা গেছেন। তবে এটি খুবই গুরুতর।’
আরও পড়ুন:ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পাঁচিল টপকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে পড়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
কলকাতার কালীঘাটের মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীরা রোববার সকালে ওই ব্যক্তিকে বাড়ির ভেতরে দেখতে পান। একইসঙ্গে তারা জানতে পারেন, ওই লোক সেখানে পুরো রাত নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১টার পর হরিশ চ্যাটার্জী রোডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়েন ওই ব্যক্তি। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি রাখার জায়গা পর্যন্ত পৌঁছে যান। এবং সারারাত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেই কাটান। পরে কালীঘাট থানার পুলিশ তাকে আটক করে।
ওই ব্যক্তি কী উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকেছিলেন তা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে কিভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়লেন ওই ব্যক্তি তা তদন্ত করে দেখছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
এ ঘটনার পর রাজ্যের পুলিশ কমিশনার, ডিজি, ডিসি সাউথসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা জরুরি বৈঠকে বসেন।
জয়েন্ট সিপি ক্রাইম মুরলিধর শর্মা বলেন, ‘সন্দেহজনক উদ্দেশ্য নিয়েই ওই ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি বিশেষ জোর দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে।’
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান। সেই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে কীভাবে ওই ব্যক্তি কী উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকেছিলেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:মহানবী (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কে ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেত্রী নূপুর শর্মাকে দু-দুবার হাজিরা দেয়ার নোটিশ পাঠালেও তিনি পুলিশের মুখোমুখি হননি। এবার তার বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করেছে কলকাতা পুলিশ।
কলকাতার নারকেলডাঙ্গা থানায় নূপুরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এই লুকআউট নোটিশ জারি করেছে পুলিশ।
বিজেপি থেকে বরখাস্ত হওয়া নূপুর শর্মা মহানবী (স.)কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার জের ধরে ভারতে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশেও এ নিয়ে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। বাদ যায়নি পশ্চিমবঙ্গও। এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শক্রমে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন থানায় এফআইআর দায়ের হয় নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে। কলকাতার নারকেলডাঙ্গা থানায় নূপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে সমন পাঠায় কলকাতা পুলিশ। কিন্তু নূপুর কলকাতা পুলিশকে ই-মেইল করে জানান, নিজের প্রাণের ঝুঁকির কারণে তিনি এখনই হাজিরা দিতে পারছেন না। সে জন্য তিনি চার সপ্তাহ সময় চেয়ে নেন।
চার সপ্তাহ পর আবারও জুনে সমন পাঠালে বিজেপি নেত্রী সেই হাজিরাও এড়িয়ে যান। এরপর নারকেলডাঙ্গা থানার অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে রাজ্যের অন্তত ১০টি থানায় এফআইআর হয়েছে। নূপুরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের তদন্ত প্রয়োজন। সে কারণে লুকআউট নোটিশ জারি হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্যপদ ছেড়ে দিচ্ছে সাত দেশ- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন কিছু পোস্ট এখন আলোচনায়। এসব পোস্টে বলা হচ্ছে, চীন, ভারত এবং রাশিয়াসহ সাত দেশ ঘোষণা দিয়েছে, তারা সংস্থাটি ছেড়ে দেবে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে বাস্তবে এমন কিছুই ঘটছে না। সংস্থাটির কোনো সদস্যই এমন ঘোষণা দেয়নি।
মিথ্যা দাবিটি ৪ জুন প্রথম টুইটারে শেয়ার হয়। যে অ্যাকাউন্ট থেকে এটি শেয়ার হয়, সেটির প্রায় ১৪ হাজার ফলোয়ার রয়েছে।
চীনা অক্ষরে ওই পোস্টে লেখা হয়, ‘রাশিয়া, ভারত, চীন, সাউথ আফ্রিকা, ইরান এবং মালয়েশিয়ার পাশাপাশি ব্রাজিল ঘোষণা দিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও)-এর সদস্যপদ ছেড়ে দিচ্ছে তারা।
লেখার সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিবেশনের একটি ছবি প্রকাশ হয়, যেটি ২০১৭ সালের।
আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট থেকে একই দাবি করে টুইট করা হয়। বাদ যায়নি ফেসবুক। কেবল তা-ই নয়, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় একই ধরনের দাবি করা আরও কিছু টুইট ছড়িয়ে পড়েছে।
সেখানে বলা হয়, ভবিষ্যতে রোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে এজেন্সির প্রতিক্রিয়াকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ডব্লিওএইচও নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে। যুক্তরাষ্ট্র সংশোধনীর প্রস্তাবটি তুলেছে।
এই প্রস্তাব পাস হলে ডব্লিওএইচও সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবে।
এসব পোস্টে করা মন্তব্যগুলোও জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালকে উল্লেখ করে একজন লেখেন, ‘ডব্লিউএইচও কি চীন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়? টেড্রোসের এখন কী হবে?’
আরেকজন লেখেন, ‘আপনি চলে যাওয়ার সময় দয়া করে টেড্রোসকে নিয়ে যান।’
বিষয়টি নিশ্চিত হতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, সংস্থাটির এক মুখপাত্র জানান, এমন কিছুই ঘটছে না।
তিনি বলেন, ‘ডব্লিউএইচও-এর ১৯৪ সদস্য রাষ্ট্রের কেউই সংস্থা থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়নি।’
একাধিক গুগল কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও এ ইস্যুতে বিশ্বাসযোগ্য কোনো প্রতিবেদন বা ঘোষণা পাওয়া যায়নি। ডব্লিওএইচও-র ওয়েবসাইটে এসব দেশের নাম এখনও রয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য