বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গমের পর চিনি রপ্তানিও সীমিত করার কথা ভাবছে ভারত। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে ভারত সরকার এ পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদনকারী দেশ ভারত রপ্তানিতেও দ্বিতীয়। রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা ব্রাজিলেও এবার উৎপাদন কম হয়েছে।
পাশাপাশি তেলের উচ্চ মূল্যের কারণে মিলগুলো আখভিত্তিক জ্বালানি ইথানল উৎপাদনে ঝুঁকছে, যার দাম ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে চড়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে এবং দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে ভারত ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে।
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, শুরুতে ৮০ লাখ টন চিনি রপ্তানির পর তাতে লাগাম টানার চিন্তা ছিল ভারত সরকারের। কিন্তু প্রাক্কলনের চাইতে উৎপাদন বেশি হওয়ায় আরও কিছু চিনি রপ্তানিতে সায় দেয় সরকার। এখন ১ কোটি টন রপ্তানি হয়ে গেলেই নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
বাংলাদেশে চিনির চাহিদার সিংহভাগই পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোতে উৎপাদন কম থাকায় ব্রাজিল, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে বাংলাদেশ। সরকারি হিসাবে দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন।
ভারত বিশ্বের অন্তত ১২১টি দেশে চিনি রপ্তানি করলেও তাদের প্রধান ক্রেতা ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, সুদান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। যদিও চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন এ চাহিদা আরও অনেক বেশি। দেশে সবশেষ কয়েক বছর গড়ে ২২ লাখ টনের বেশি চিনি আমদানি হয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ভারতীয় চিনি উৎপাদকদের সংগঠন দ্য ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন চলতি মৌসুমে ৩ কোটি ১০ লাখ টন চিনি উৎপাদনের প্রাক্কলন ধরেছিল। তবে সংশোধিত হিসাবে তা ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারি ভর্তুকি ছাড়াই ৮৫ লাখ টন চিনি রপ্তানিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারতের চিনিকলগুলো। ইতোমধ্যে প্রায় ৭১ লাখ টন চিনি পাঠানোও হয়েছে।
এই খবরের মধ্যে মঙ্গলবার বলরামপুর, ডালমিয়া ভারত, ধামপুর, দ্বারিকেশ ও শ্রী রেনুকা সুগার মিলের শেয়ারের দাম ৮ শতাংশ পড়ে গেছে।
তবে ১ কোটি টন চিনি রপ্তানির সম্ভাব্য সীমাকে যৌক্তিক বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। মুম্বাইভিত্তিক এক রপ্তানিকারক বলেন, ‘রপ্তানিসীমা ১ কোটি টন আসলেই বড় অংক, এতে চিনিকল ও সরকার উভয়ই লাভবান হবে।’
তিনি বলেন, ‘১ কোটি টন চিনি রপ্তানির পরও ১ অক্টোবর থেকে চিনি সংগ্রহ অভিযানে সরকারের গোলায় ৬০ লাখ টন চিনি আসবে, যা দিয়ে ডিসেম্বর প্রান্তিকের উৎসব মৌসুম অনায়াসেই সামাল দেওয়া যাবে।’
মহামারির ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী খাদ্য মূল্য গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউক্রেন থেকে সূর্যমুখী তেল না পাওয়ায় এবং ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধ রাখায় রান্নার তেলের দাম চড়ে গেছে অনেক দেশেই।
যুদ্ধ শুরুর আগে বিশ্ব বাজারের ৩০ শতাংশ গম আসত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ওই সময় ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে প্রতি মাসে ৪৫ লাখ টন কৃষি পণ্য রপ্তানি হতো, যে কারণে ইউক্রেনকে বিশ্বের ‘রুটির ঝুঁড়ি’ বলা হত।
২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করলে এসব রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়; তাতে দাম উর্ধ্বমুখি হতে শুরু করে। ভারত গমের সেই ঘাটতি অনেকটা পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু তীব্র গরমে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভারতের বাজারেই গমের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ প্রেক্ষাপটে এ পণ্যটির রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দিল্লি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, যুদ্ধের কারণে মূল্য বাড়তে থাকায় দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে; ইউক্রেনের রপ্তানি যুদ্ধপূর্ব স্তরে ফেরানো না গেলে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে আর তা কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে।
আরও পড়ুন:ইরান দ্বিতীয়বারের মতো মহাকাশে স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম রকেটের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ হুসেনি জানিয়েছেন, তিন পর্যায়ে স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম রকেট জুলজানাহর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কঠিন প্রপালশন পর্যায় ও তরল প্রপালশন পর্যায়। রকেটের তৃতীয় পর্যায়ের উন্নয়ন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতেই হোসেইনি বলেছিলেন যে প্রতিটি গবেষণার জন্য উৎক্ষেপণের সময় জুলজানাহর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং মূল্যায়ন করা হয়।
আরও দুটি জুলজানাহর পরীক্ষামূলক রকেট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
আশা করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির সংযোজন ও সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জুলজানাহ স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম রকেট ৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পেলোড বহনে সক্ষম হবে।
এর আগে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে জুলজানাহ স্যাটেলাইট ক্যারিয়ার রকেটকে উৎক্ষেপণ করেছিল।
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতি ইমাম হুসাইন (র.)-এর ঘোড়ার নামানুসারে এই স্যাটেলাইট ক্যারিয়ার রকেটের নামকরণ করা হয়েছে জুলজানাহ। রকেটটি ২৫.৫ মিটার লম্বা এবং এর ওজন প্রায় ৫২ টন।
ইরান বরাবরই বলে আসছে, পরমাণু কর্মসূচির মতোই দেশটির স্যাটেলাইট কর্মসূচির উদ্দেশ্যও শান্তিপূর্ণ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে আসছে। তারা মনে করছে, ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের অংশ হিসেবে সামরিক প্রয়োগের লক্ষ্য থাকতে পারে ইরানের স্যাটেলাইট কর্মসূচির।
আরও পড়ুন:দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দোতলা সেতু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পদ্মা সেতু। এত দিন ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে লম্বা দ্বিতল সেতুর তকমা ছিল আসামের বগিবিল সেতুর।
৪ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বগিবিল সেতুটিতে একসঙ্গে রেল ও গাড়ি চলাচল করে।
আসামের ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর তৈরি করা হয় সেতুটি। এটি ভারতের দীর্ঘতম দোতলা সেতু। ২০১৮ সালে সেতুটি উদ্বোধন করে কয়েক মিনিট সেখানে হেঁটে বেড়ান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
অন্যদিকে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতু মিলিয়ে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।
শনিবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুপুর ১২টার একটু আগে মাওয়া প্রান্তে ফলক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী গাড়িতে চড়ে যান সেতুর জাজিরা প্রান্তে। এই সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয় ৩ হাজার ১৯৩ হাজার কোটি টাকা। উদ্বোধনের পরের দিন দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে চার লেনে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।
আসামের ডিব্রুগড় থেকে অরুণাচলের ধেমরাজীকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি তৈরি করতে খরচ হয় ৫ হাজার ৯০০ কোটি রুপি। ১২০ বছর মেয়াদি এই সেতুটির প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ৩ হাজার কোটি রুপি। পরে এর খরচ ৮৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের দীর্ঘতম সেতু মালির রিভার ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হওয়া এই সেতুটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১২ কোটি রুপি। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য কোনো রোড-কাম-রেল সড়ক নেই। শাহ ফয়সাল শহরের সঙ্গে করোঙ্গি, লানধিকে সংযুক্তকারী এই সেতুটি বর্তমান অবস্থা নাজুক। ২০১৬ সালে এই সেতুটি মেরামতের অংশ হিসেবে কয়েক সপ্তাহ বন্ধ থাকে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেশ শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটানে উল্লেখযোগ্য কোনো দোতলা সেতু নেই। এই দেশগুলোর সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতুর দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটারের নিচে।
১৯৯৮ সালে বগিবিল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ২০০২ সালে রেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। সেতুটি তৈরি করতে ২১ বছর সময় লাগে।
আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির মিশেলে ব্রহ্মপুত্রের ওপর তৈরি করা হয় বগিবিল সেতু। দোতলা এই সেতুর ওপরের তলা দিয়ে চলে বাস, লরি, ট্রাকসহ বিভিন্ন যান; আর নিচ দিয়ে চলাচল করে ট্রেন।
দোতলা পদ্মা সেতু ও বগিবিল সেতুর নকশায় কিছুটা মিল থাকলেও এদের নির্মাণ ব্যয় ও অর্থনৈতিক গুরুত্বে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের প্রমাণ: ভারত
মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সফলভাবে শেষ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারত সরকার ও জনগণের পক্ষে অভিনন্দন বার্তা দিয়েছে ভারতের দূতাবাস।
অভিনন্দন বার্তায় পদ্মা সেতুকে যুগান্তকারী অবকাঠামো উল্লেখ করে ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত এই মেগা প্রকল্পের সফল উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়।
‘এই সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তের প্রমাণ দেয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ যখন এই প্রকল্পটিকে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আমরা একে অবিচলভাবে সমর্থন জানিয়েছি,’ বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে।
বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু শুধু আন্ত বাংলাদেশ যোগাযোগকেই উন্নত করবে না, এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার অভিন্ন অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করা ও বাণিজ্য বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা দেবে। সেতুটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে জোরালো ভূমিকা রাখবে।’
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অসাধারণ অনন্য এক স্থাপনা
পদ্মা সেতু শুধু একটি যোগাযোগের বড় মাধ্যম নয়, এটা এক আবেগ ও ভালোবাসারও নাম। এটা টেকনিক্যালই চ্যালেঞ্জিং ছিল বাংলাদেশের জন্য। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও বটে।
এ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থাও একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে দেশে রূপান্তরকামী একটা চেতনা। বলতে পারি, পদ্মা সেতু দেশ রূপান্তরকারী একটি প্রকল্প, এটা এখন সক্ষমতার প্রতীক, এমনটি বলেন বুয়েটের অধ্যাপক ও যোগযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. সামছুল হক।
তিনি বলেন আমাদের একটা প্রবণতা ছিল- কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দাতাদের দিকে তাকিয়ে থাকা। এ প্রকল্পে কিন্তু সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে মনে হয়। প্রযুক্তিগতভাবে আমরা কতটা এগিয়েছি সেটার পরিচয়ও সেতুটি বহন করে।
অবকাঠামোগতভাবে এটা বাংলাদেশের জন্য এক অসাধারণ অনন্য স্থাপনা।
যেসব স্থাপনায় রড ব্যবহৃত হয় সেখানে পানি পেলে রড ফুলে যায় এবং ক্ষয় হতে থাকে, সঙ্গে থাকা অন্য উপাদানেরও ক্ষতি করে থাকে। সে জন্য সেগুলোর স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে মোটামুটি ১০০ বছর ধরা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে সেখান থেকে জানা জানা যায়, এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এ ব্রিজের মধ্যে যে উন্নত ইলোকট্রনিক প্রযুক্তির মনিটরিং সেল ও সেল্ফ সেন্সর রয়েছে সেটি জানান দেবে এ স্থাপনাটির স্বাস্থ্যগত কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না। কোন জায়গায় কতটুকু চাপে আছে? ভূমিকম্প বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোনো নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে কি না তা জানান দেবে। সংগত কারণেই এটার নির্মাণকৌশল ও প্রযুক্তিগত কারণে একে টেকসই করার ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখেবে। সব মিলিয়ে বলতে পারি এবং আমার বিশ্বাস, যে প্রযুক্তি ও কৌশল পদ্মা সেতুতে প্রয়োগ করা হলো- তাতে এর স্থায়িত্ব ১০০ বছরের বেশি হবে।
আরও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বাতিল হলো গর্ভপাত অধিকার আইন। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত শুক্রবার ঐতিহাসিক এ রায় দেয়। এতে দেশজুড়ে গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়া ১৯৭৩ সালের আইনি সিদ্ধান্ত ‘রো বনাম ওয়েড’ আর থাকছে না। ফলে প্রতিটি রাজ্যই এখন নিজস্বভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে পারবে।
রায়ে বিচারকরা জানান, সংবিধান গর্ভপাতের অধিকার দেয় না। সিদ্ধান্তের পক্ষে সমর্থন দেন ছয়জন বিচারক, বিপক্ষে তিনজন।
এ রায়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ ও নিন্দার জন্ম দিয়েছে। প্রজনন অধিকারের সমর্থকরা বলছেন, লাখ লাখ নারী গর্ভপাত পরিষেবাগুলো নিতে পারবেন না।
প্রজনন অধিকার সংগঠন গুটমাচার ইনস্টিটিউট বলছে, ১৯৭৩ সালের আইনি নজির উল্টে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৪টির বেশি রাজ্যে এখন গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নিম্ন আয়ের নারীর ওপর প্রভাব ফেলবে।
BREAKING: The Supreme Court just overturned Roe v. Wade, ending our constitutional right to abortion. We know you may be feeling a lot of things right now — hurt, anger, confusion. Whatever you feel is OK. We’re here with you — and we’ll never stop fighting for you.
— Planned Parenthood (@PPFA) June 24, 2022
বিচারকরা জানান, আগের আইনে ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত বৈধ ছিল। এটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ সংবিধানে গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেই।
রো বনাম ওয়েডের রায়ে যুক্তি দেয়া হয়েছিল, সংবিধানের অধীনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার একজন নারীর গর্ভাবস্থা বন্ধ করার ক্ষমতাকে রক্ষা করে।
সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯২ সালের সাউথইস্টার্ন পেনসিলভানিয়া বনাম ক্যাসি প্ল্যানড প্যারেন্টহুড নামে একটি রায়ে গর্ভপাতের অধিকারকে পুনরায় নিশ্চিত করেছিল। রায়ে বলা হয়েছিল, গর্ভপাতের বিষয়ে ‘অযথা বোঝা’ চাপিয়ে দেয়া আইনগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রক্ষণশীল বিচারপতি স্যামুয়েল আলিটো বলেন, ‘রো এবং প্ল্যানড প্যারেন্টহুড বনাম কেসি ভুল ছিল। এটি অবশ্যই বাতিল করা উচিত।
‘আমরা মনে করি যে রো এবং কেসিকে অবশ্যই বাতিল করা উচিত। সংবিধানে গর্ভপাত উল্লেখ নেই। এ ধরনের অধিকার সাংবিধানিক বিধান দ্বারা সুরক্ষিত নয়।’
বিচারপতি ক্লারেন্স থমাস, নিল গর্সুচ, ব্রেট কাভানাফ এবং অ্যামি রায়ের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিপক্ষে দেয়া তিন বিচারপতি ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত।
উদারপন্থি বিচারপতি স্টিফেন ব্রেয়ার, সোনিয়া সোটোমায়র এবং এলেনা কাগান ভিন্নমত পোষণ করেন।
তারা জানান, ‘এটা আদালতের জন্য দুঃখের খবর। তবে লাখ লাখ আমেরিকান নারী আজ একটি মৌলিক সাংবিধানিক সুরক্ষা হারিয়েছেন। আমরা ভিন্নমত পোষণ করছি।’
জনমত জরিপ দেখা গেছে, বেশির ভাগ আমেরিকান গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করেন।
গত মাসের শুরুর দিকে সুপ্রিম কোর্টের ফাঁস হওয়া একটি গোপন খসড়া নথিতে ঐতিহাসিক গর্ভপাত অধিকার আইন বাতিল হতে পারে বলে আভাস মিলেছিল। রাজনীতিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম পলিটিকো সেই নথি প্রকাশ করেছিল।
আরও পড়ুন:দ্য ভিঞ্চির লাস্ট সাপারের আদলে একটি ভোজ। বিটিএস-এর সাত সদস্য একটি ব্যান্ড হিসেবে তাদের নবম বার্ষিকী উদযাপন করেছেন। এটি জুনের মাঝামাঝি ডিনারের একটি ভিডিও চলাকালীন দৃশ্য।
বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ব্যান্ড দলটি এদিন বোমা ফাটিয়েছিল। তারা জানায়, নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে। তারা এখন থেকে একক ক্যারিয়ারকে অগ্রাধিকার দেবে।
র্যাপার এবং গ্রুপ লিডার আরএম বলেন, ‘আমাদের মেনে নিতে হবে যে আমরা বদলে গেছি। কে-পপ এবং পুরো আইডল সিস্টেমের সমস্যা হলো, তারা আপনাকে পরিপক্ক হওয়ার সময় দেয় না।’
ব্যান্ডের সদস্য সুগা তাদের ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা ঘন্টাব্যাপী ‘ডিনার পার্টি’ ভিডিওতে স্পষ্ট করে দেন যে, গ্রুপটি ‘বিচ্ছিন্ন’ নয়।
দলের আরেক সদস্য জাং কুক একটি ফলো-আপ ভিডিওতে জানান, তারা কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে না।
বিটিএস হল হালের সবচেয়ে বড় মিউজিক্যাল ব্যান্ড। দলটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে হাইবও। তারাই বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বিটিএসকে।
প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যান্ডটি একের পর এক রেকর্ড গড়েছে। গত এক বছরে ছয় বার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন বিলবোর্ডের শীর্ষে ছিল বিটিএস।
বিলবোর্ডের আন্তর্জাতিক সম্পাদক আলেক্সি ব্যারিওনুয়েভো বলেন, ‘মূল কথা হলো বিটিএস হলো চার্টের একটি দানব। তারা কেবল প্রভাবশালী কে-পপ অ্যাক্ট নয়। তাদের অনুপস্থিতির বড় প্রভাব পড়বে। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা হাইবও বিপদে পড়বে। তারা ব্যান্ডটিকে নিয়ে অনেক পরিকল্পনা সাজিয়েছিল।’
নতুন অধ্যায় মানে কি?
জাং কুক পরবর্তী ভিডিওতে স্পষ্ট করেছেন, এটা একটা বিরতি কেবল। আরএম, সুগা, জে হোপ, জাং কুক, জিমিন, ভি এবং জিন একক প্রকল্পে কাজ করবে। তারা আরও স্বাধীনতার খোঁজে আছে। তবে দলগতভাবে কাজ বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে ব্যবস্থাপনা দায়িত্বে থাকা হাইবও। তারা জানিয়েছে, বিটিএস এখন নতুন একক প্রকল্পের পাশাপাশি গ্রুপ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।
‘সদস্যরা বিভিন্ন নতুন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিচিতি বাড়াতে এই সময় নেবে। আশা করি, একটি দল হিসেবে তারা ব্যান্ডের দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে।’
একসঙ্গে ফিরবে বিটিএস?
যেহেতু তারা ভেঙে যাচ্ছে না, তার মানে তারা এখনও একসঙ্গে আছে। তবে দল হিসেবে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। তারপরও তারা কখন একটি গ্রুপ হয়ে লাইভ পারফরম্যান্সে ফিরবে তা অস্পষ্ট।
ব্যারিওনুয়েভো বলেন, ‘এই দিক পরিবর্তনের লক্ষণ কিছু সময়ের জন্য স্পষ্ট। গত কয়েক বছরে আউটপুট কমে যাওয়ার পাশপাশি তারা যে ‘ফিশবোল’ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। তারা এমন একটি পরিস্থিতিতে ছিল, যেখানে টানা তিন বছরে তিন জন সদস্য হারিয়েছে।’
ব্যান্ডের উপার্জন
বিটিএস কোথাও যাচ্ছে না। তারা এখনও তাদের বিদ্যমান কাজ থেকে আয় করবে। তবে তাদের পেছনের প্রতিষ্ঠান হাইবও বড় ধাক্কা খাবে। যেদিন খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেদিন শেয়ারের দাম প্রায় ৩০ কমে গিয়েছিল। ব্লুমবার্গ বলছে, বাজার মূল্যে তাদের প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার এবং বছর শেষে প্রায় ৬০ শতাংশ আয় কমবে।
হাইবও মূলত শিল্পীদের পোর্টফোলিও পরিচালনা করে। টুমোরো এক্স টুগেদার এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম উইভার্স চালায় প্রতিষ্ঠানটি। অন্যান্য এজেন্সিগুলোতেও কাজ করে হাইবও। সেখানে সংখ্যালঘু অংশীদারিত্বের পাশাপাশি কোরিয়ান ভাষার প্রোগ্রাম এবং গেমিংয়ের প্রজেক্ট নিয়েও কাজ করে তারা। একটি বড় মিউজিক চুক্তিতে ২০২১ সালে তারা ইথাকা হোল্ডিংসকেও অধিগ্রহণ করে। আমেরিকাভিত্তিক এই সঙ্গীত সংস্থা জাস্টিন বিবার এবং ডেমি লোভাটোসহ বিশ্ব তারকাদের পরিচালনা করে।
টেলিভিশন শোতে বিটিএস
জাং কুক জানান, রান বিটিএস-এর শুটিংসহ একটি দল হিসেবে সক্রিয় থাকবে বিটিএস। তাই দলে কোনো বিচ্ছেদ হচ্ছে না।
বিটিএসের অন্যান্য প্রকল্পগুলো দূর্দান্ত গতিতে চলছে। দলটির অ্যানিমেটেড মিউজিক ভিডিও ‘ইয়েট টু কাম’ (সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত) ২১ জুন প্রকাশিত হয়। ভিডিওটি মোবাইল গেম ‘বিটিএস আইল্যান্ড: ইন দ্য এসইওএম’-এর চরিত্রগুলোকে উপস্থাপন করে৷
কেমন হবে একক ক্যারিয়ার?
বিটিএস সদস্যরা সবসময় পার্শ্ব প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দেয়। অগাস্ট ডি নামে সুগা একাধিক মিক্সটেপ প্রকাশ করেছে। হলসে শেষ অ্যালবামে গায়ক-গীতিকার ম্যাক্সের সঙ্গে একটি দ্বৈত প্রযোজনায় কাজ করেছেন।
আরএম স্বতন্ত্র ট্র্যাকগুলোতে একজন র্যাপার হিসেবে অভিনয় করেছেন। ২০১৮ সালে তার নিজস্ব একক মিক্সটেপ মনো প্রকাশ করেন।
জে হোপ ২০১৮ সালে একটি মিক্সটেপ প্রকাশ করেন। ভি-এর একক সঙ্গীত, যা ব্যালাডিকে ঝুঁকছে, কয়েক মিলিয়ন স্ট্রিম উপার্জন করেছে।
জিমিন, জাং কুক এবং জিনও একক রিলিজে কাজ করেছেন। যদিও ডিনার পার্টির ভিডিওতে জিমিন জানিয়েছিলেন, তিনি নিজেকে একক শিল্পী হিসেবে দেখেন না।
এই শিল্পীদের ফটোগ্রাফি, অভিনয়, নাচ, ফ্যাশন এবং সিনেমাসহ অন্যান্য বিষয়ে দারুণ ঝোঁক রয়েছে। তাই সম্ভবত আমরা তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং শখগুলোকে এখন বেশি গুরুত্ব দেবে; তা ব্যক্তিগত বা পেশাদারই হোক না কেন।
জিন ভিডিওতে রসিকতা করে জানিয়েছিলেন, তিনি গত কয়েক সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় ভিডিও গেম খেলে কাটিয়েছেন, যখন সুগা ইংরেজি, পাইলেটস এবং নাচের ক্লাসে সময় দিয়েছেন।
জে-হোপের একক অ্যালবামের কাজ চলছে। জুলাইয়ের শেষে শিকাগোর লোলাপালুজা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে তিনি পারফর্ম করবেন।
আরও পড়ুন:কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ত্রিপুরার চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় ভোট দেয়া নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিরোধীরা।
তারা নির্বাচন কমিশনে এ পর্যন্ত ১৬টি অভিযোগ দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ভাষ্য, ভোটে বিজেপির সন্ত্রাসে পুলিশ নীরব রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভারতের সময় সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হল। চার কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে ভোটারদের যেতে বাধা দেয়া, বুথ জ্যাম করা, অন্য দলের কর্মীদের মারধরসহ নানা অভিযোগ লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে বিরোধী দলগুলো।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৫ কোম্পানি প্যারামিলিটারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ২২১টি পোলিং বুথের মধ্যে চারটি গুরুতর এবং ৫৯টি স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ত্রিপুরার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুবল ভৌমিক বলেন, ‘এখানে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, তা আগেই আমরা বলেছিলাম। আবারও তা প্রমাণ হলো। এখানে শাসক দল ভয় পেয়েছে। তারা জানে, অবাধ-শান্তিপূর্ণ ভোট হলে তারা জিততে পারবে না। তাই ভোটের আগে থেকেই এখানে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিজেপির এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পুলিশ নীরব দর্শক।’
বুধবার রাতে ত্রিপুরার সুরমা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্জুন নমশূদ্রের ওপর লাঠি, রড, বাঁশ দিয়ে বিজেপির দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, ভোটের দিন সমর্থকদের নিয়ে জমায়েত করলে প্রাণে মারার হুমকি দেয়া হয় বলে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।
উপনির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার মুখ্যমন্ত্রিত্ব বাঁচানোর লড়াই। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব হঠাৎ পদত্যাগ করায় মানিক সাহাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
নির্বাচিত না হয়েও কোনো সাংবিধানিক পদে বসলে ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী তাকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। অন্যথায় নির্ধারিত সময়ের পর তিনি আর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন না।
ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করেনি বলে বিরোধীদের অভিযোগ রয়েছে। ত্রিপুরায় বিপ্লবের নেতৃত্বও প্রশ্নের মুখে। সেখানে বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছিল। বিজেপি ছেড়ে অনেকেই অন্য দলে যোগ দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসায়।
আরও পড়ুন:এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ভাইরাসবাহিত রোগটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দুই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একজন ব্রিটিশ নাগরিকের শরীরে মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
বিদেশি নাগরিকের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি চলতি বছর সিঙ্গাপুরের প্রথম রোগী।
ওই ব্যক্তির মাঙ্কিপক্স পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে গত ২০ জুন। ৪২ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। জুনের মাঝামাঝি সময়ে সিঙ্গাপুরে তিনি একাধিকবার যাওয়া-আসা করেছেন, মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
তিনি সিঙ্গাপুরের জাতীয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের একটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ১৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে ২১ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে, বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ফ্লাইটে আর কারা তার সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে শনাক্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে এর আগে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছিল ২০১৯ সালে।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ থাকায় দুই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সন্দেহভাজন ওই দুজন ভাইরাল রোগটিতে আক্রান্ত।
নমুনা পরীক্ষার ফল হাতে এলে নিশ্চিত হওয়া যাবে তারা মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন কি না। এর পরই মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করবে।
সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের একজন বিদেশি নাগরিক। রোববার থেকে তার মধ্যে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সোমবার তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করেন। তিনি রাজধানী সিউল থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব শহর বুসানের একটি হাসপাতালে আইসোলেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নমুনা পরীক্ষা করা দ্বিতীয় ব্যক্তি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছেন জার্মানি থেকে। তাকে ইঞ্চেয়ন মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।
কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রক ও প্রতিরোধ সংস্থা-কিডিসিএ বুধবার জানিয়েছে, পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলেই মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে জানিয়ে দেয়া হবে।
বিশ্বের অন্তত ৩৫টি দেশে এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। মহামারির রূপ না নিলেও এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:চীনে একটি রেস্তোরাঁয় একদল নারীর ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় একজন উপপুলিশ পরিচালককে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাংশান শহরের ওই হামলায় একদল পুরুষ চারজন নারীকে মারধর করেন। ভাইরাল ভিডিওটি চীনে জেন্ডারকেন্দ্রিক সহিংসতা ইস্যুতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা পুলিশের উপপরিচালক এবং অন্য কর্মকর্তারা ঘটনার দিন অকারণে সময়ক্ষেপণ করেছেন।
প্রাদেশিক জননিরাপত্তা বিভাগের ওই প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট করা হয়নি যে পুলিশের উপপরিচালক লি-কে চাকরিচ্যুত নাকি বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঘটনাটি ১০ জুন রাতে উত্তর হুবেই প্রদেশের লুবেই জেলার তাংশান শহরের একটি রেস্তোরাঁয় ঘটে।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বারবিকিউ রেস্তোরাঁয় একজন এগিয়ে যাচ্ছেন এক নারীর দিকে। একসময় ওই নারীর পিঠে হাত রাখেন ওই ব্যক্তি। নারীটি তাকে তখন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। পুরুষটি উঠেই ওই নারীকে মারধর শুরু করেন। তার আগে আরেকজন ওই নারীকে টেনে বাইরে নিয়ে যান। সেখানে মেঝেতে ফেলে তাকে মারধর করতে থাকেন।
ভিডিওতে দলটিকে তাদের সঙ্গে খাবারে অংশ নেয়াদের ওপরও হামলা চালাতে দেখা যায়। এ সময় অন্য এক নারী তাদের থামাতে গেলে তাকে ধাক্কা মারা হয়।
আহত দুই নারীকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সামান্য আঘাত। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, তাদের কথা সত্যি না। আঘাত বেশ গুরুতর। ভিডিওতে আরও দুই নারীর রক্তাক্ত চেহারা দেখা গেছে।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় ৩টা ৯ মিনিটে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তাদের ডাকা হয়েছিল ২টা ৪১ মিনিটে। অর্থাৎ খবর পাওয়ার আধঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এই সময়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
পরে পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের একজন অবৈধ জুয়া, অপহরণসহ নানা অপরাধে যুক্ত থাকতে পারেন। তারা কোনো অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশকে ধুয়ে দিচ্ছেন অনেকে। ঘটনাটি তীব্র ক্ষোভ আর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে নেট দুনিয়ায়।
চীনের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি এখন এটি। সেখানে বলা হচ্ছে, নারীর প্রতি সহিংসতা এখনও সাধারণ বিষয়!
অনেকেই হামলাকারীদের কঠিন বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। অনেকে আবার বলছেন, এই দলের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের সম্পর্ক ভালো ছিল।
পুলিশ অবশ্য এসব মানতে নারাজ। হুবেই প্রাদেশিক জননিরাপত্তা বিভাগ বলছে, দেরিতে পুলিশ পাঠানো এবং শৃঙ্খলার গুরুতর লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় মোট পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য