কাঁঠালবাগানের দাওয়াত-ই ঢাকা রেস্টুরেন্ট। এতদিন এই দোকানে পরোটার দাম ছিল ৫ টাকা। আশপাশের দোকান থেকে দাম কিছুটা কম বলে এ রেস্টুরেন্টে সব সময়ই লেগে থাকত ভিড়। কিন্তু ময়দার দাম বাড়ায় এক লাফে আরও ৫ টাকা বেড়ে এখন নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা।
দোকানি সোহেল মিয়া বলেন, ‘৫ টাকায় বিক্রি করে পোষাচ্ছিল না। এ জন্য পরোটার সাইজ একটু বড় করে ১০ টাকা করা হয়েছে।’
আটা ও ময়দা দিয়ে তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। রুটি, বেকারি পণ্য, নুডলস থেকে শুরু করে ফাস্টফুডের সব আইটেমের দাম ধীরে ধীরে সবাই বাড়িয়ে দিচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ চা দোকানে এসব পণ্যের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে। অনেক হোটেল তাদের খাবারের তালিকায় পণ্যের আগের দাম কেটে নতুন দাম টানিয়েছে।
আগে যে পরোটা বিক্রি হতো ৫ টাকায়, তা এখন ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকার পাতলা নানরুটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। স্পেশাল নানরুটি আগে দাম ছিল ২০ টাকা। এখন ৫ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে।
কোনো কোনো জায়গায় স্পেশাল নানরুটি আগে ১৫ টাকা ছিল, এখন ২৫ টাকা করা হয়েছে।
বেকারির যে বিস্কুট ২০০-২৫০ টাকা কেজি ছিল, সেটা এখন ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের বনরুটি বা পাউরুটি আগে চায়ের দোকানে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেটা ১২-১৫ টাকা করা হয়েছে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ছোট পাউরুটি ১৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। মাঝারি আকারের পাউরুটি ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। ৫০ টাকার পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
টোস্টের ৫০ টাকার প্যাকেট হয়েছে ৭০ টাকা। প্রতি প্যাকেট বিস্কুটের দাম আকারভেদে ৫-১০ টাকা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি বন্ধ থাকায় আটা-ময়দার দাম বাড়ছে।
সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বাজারে গমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাময়িকভাবে পণ্যটি রপ্তানি বন্ধের কথা জানিয়েছিল ভারত। এরপর হু হু করে বাড়তে থাকে গমজাতীয় পণ্যের দাম।
কিন্তু ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গমের যেসব চালান পরীক্ষার জন্য কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ১৩ মে বা এর আগে তাদের কাছে নিবন্ধিত হয়েছে, এ ধরনের চালানগুলো রপ্তানির অনুমতি দেয়া হবে। কিন্তু বাজারে সেটার প্রভাব দেখা যায়নি।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া, কাঁঠালবাগানের বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা সাদা আটা ৪৬-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, আর প্যাকেট আটা ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট আটা দুই কেজি আগে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেটা ৯৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খোলা ময়দা ৫৮-৬০ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৬৫-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট ময়দা দুই কেজির দর ছিল ৯৮ টাকা। সেটা কিনতে এখন ১৩৬ টাকা গুনতে হচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ, প্যাকেট আটার দাম ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি খোলা ময়দার দাম ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও প্যাকেট ময়দার দাম ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, এক বছর আগে দেশের বাজারে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩০-৩২ টাকা, প্যাকেট আটা ৩২-৩৫ টাকা, খোলা ময়দা ৩৫-৩৬ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটা-ময়দায় ১৬ থেকে ২৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
২০২১ সালের নভেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বরে প্রতি টনের দাম ছিল ২৬৪ ডলার। নভেম্বরে তা বেড়ে হয় ৩৩৫ ডলার।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা আরও বেড়ে যায়। দাম হয় ৫৩৩ ডলার। এপ্রিলে তা আরও বেড়ে হয় ৬৭৩ ডলার। বর্তমানে সেটা আরও বেড়ে ১ হাজার ১৭৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করা হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এ দুটি দেশ থেকে গম আমদানি করা হয় ৬৩ শতাংশ। কানাডা থেকে ১৮ শতাংশ ও বাকিটা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানির পরিমাণ ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া কানাডা থেকে ২৩ ও ভারত থেকে ১৭ শতাংশ আমদানি করা হয়।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমে আসায় দেশেও ভোজ্যতেলের দাম দু-এক দিনের মধ্যে কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বাদশ মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে আলোচনার নানা দিক তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।
ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে, সেই হিসেবে দেশেও দাম কমানো হবে।’
দাম কমলে কত কমানো হতে পারে- এমন প্রশ্নে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কিংবা চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করা হবে।
‘সেখানে আন্তর্জাতিক দাম অনুযায়ী দেশে গত এক মাসের মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেই দাম নির্ধারণ করা হবে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুব বেশি কমানো সম্ভব নাও হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউ সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুত বাড়ছে; তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাল-আটার দাম। বন্যার কারণে দেশে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বন্যায় খাদ্যঘাটতি হবে না। প্রয়োজনে চাল আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার দেশে মোট খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুত হচ্ছে ১৩ লাখ ২৪ হাজার টন। গম ১ লাখ ৬৫ হাজার; আর ধান ৯২ হাজার টন।
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই মজুত ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা ছিল রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সরকারিভাবে এত খাদ্যশস্য মজুত ছিল না। কিন্তু এর পর থেকে কমতে কমতে সেই মজুত মে মাস শেষে ১২ লাখ ৫২ হাজার টনে নেমে আসে।
এরই মধ্যে ২৮ এপ্রিল থেকে দেশে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে সরকার। এর ফলে আবার বাড়ছে খাদ্যের মজুত।
বিস্ময়কর হলো, তারপরও চালের দাম কমছে না; উল্টো বেড়েই চলেছে। এবারই প্রথম ভরা বোরো মৌসুমেও মোটা চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। সরু চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি; ১০ থেকে ১২ টাকা।
চালের দামের লাগাম টেনে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চালকল, আড়ত, বড় বড় পাইকারি বাজারে অভিযান চালানোর পরও দাম কমেনি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর সরু চাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। এক মাসে এই চালের দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৭ দশমিক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
আটার দাম বেড়েছে আরও বেশি। প্রতি কেজি খোলা আটাই এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
আটার দাম বাড়ার জন্য অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমান মজুত ‘সন্তোষজনক’ উল্লেখ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫১ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ৬১০ টন ধান, ৪ লাখ ৫১ হাজার ১০৫ টন সেদ্ধ চাল এবং ৭ হাজার ৭৮০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। ধান, চালের আকারে মোট মজুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ হিসাবে মোট চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৩১ টন। আর গম ২০ লাখ টন।
গত ২৮ এপ্রিল থেকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে; চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এবার প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪০ টাকা এবং আতপ চাল ৩৯ টাকা।
এই মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান, ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।
নতুন চালেও কমছে না দাম
বুধবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে চালের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। নতুন চালও প্রচুর এসেছে। কিন্তু দাম কমছে না।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের একটি মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভালো মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৪ থেকে ৮২ টাকা; যা এক মাস আগেও ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা।
এই বাজারের এক মুদি দোকানের মালিক রিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে চালের দাম বাড়েনি। ১৫/২০ দিন আগে যে দাম বেড়েছিল, সেই দামেই বিক্রি করছি।’
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধানের দাম বেশি। সে কারণে চালের দাম কমছে না। ১৪০০/১৫০০ টাকা মণ দরে ধান কিনে আমরা কীভাবে কম দামে চাল বিক্রি করব।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে হাওর অঞ্চলে বন্যার কারণে বোরো ধানের ফলনের ক্ষতি হয়েছে। এখন সিলেট-সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফলনের পাশাপাশি যারা ধান তুলে বাড়িতে বা গুদামে রেখেছিলেন সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা বুঝতে পারছি না।’
ধানের দাম না কমলে চালের দাম কমবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন লায়েক আলী।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়াটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর চাল মজুত আছে। এ অবস্থায় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
‘এটা সরকারকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অভিযান শুরুর নির্দেশ নিয়েছেন তা সারা দেশে পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বন্যার কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতির কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো শঙ্কা নেই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। দেশে এখনও ১৬ লাখ টন ধান-চাল মজুত আছে। তারপরও আমাদের সংগ্রহ অভিযান চলছে। এ ছাড়া সে রকম কোনো অবস্থা দেখলে আমরা চাল আমদানি করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে জিরো ট্যাক্সে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছেন।’
প্রয়োজনে চাল আমদানি করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ধান কাটার আগেও কিছুটা বন্যা হয়েছিল, তা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। ওই সময় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। তবে চলমান বন্যার কারণে প্রধান খাদ্যশস্য ধানসহ অন্যান্য ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। মাঠে এখন তেমন ফসল নেই। কিছু হয়তো আউশ ধান ছিল। সরকারি খাদ্যগুদামে যে মজুত রয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি হবে না। প্রয়োজনে চাল আমদানি করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশে রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত কিছুটা শিথিল হয়েছে, ৮টার পরিবর্তে দোকান বন্ধ হবে রাত ১০টায়।
আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে বলে বুধবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় ২০ জুন থেকে।
রাত ৮টার পরিবর্তে ১০টায় দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১১৪ এর ৪ উপধারার ক্ষমতাবলে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জুন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে শ্রম মন্ত্রণালয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন মালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান রাত ৮টায় বন্ধের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন সারা দেশে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
তবে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার অনুমতি চান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবারের এ সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন:কেবল পচনশীল পণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া আগামীকাল সোমবার থেকে সারা দেশে সব ধরনের দোকানপাট রাত ৮টার পর বন্ধ থাকবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার।
রোববার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬’ এর ১৪৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে প্রতিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ইস্যুতে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
এর আগে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর-দক্ষিণ, এফবিসিসিআই, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, এমসিসিআই, ডিসিসিআই, বিজিএমইএ বিকেএমইএ ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য রাত ৮টার পর সারা দেশের দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধের যে নির্দেশ দিয়েছে সরকার, সেই সিদ্ধান্ত সোমবার থেকে কার্যকর করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে রাত ৮টার পরে সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হবে।’
মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ইতোমধ্যে এ নির্দেশনা সারা দেশের উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে এবং এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার।
গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকের সই করা এক চিঠিতে রাত ৮টার পর সারা দেশে দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত ১০ জুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসও রাত ৮টার পর থেকে ঢাকা শহর বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে মূল্যস্ফীতির সর্বোচ্চ হার পাওয়া গেল গত মে মাসে।
সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের ঘর ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে উঠেছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। ৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) রোববার মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর মূল্যস্ফীতি কখনই এতটা বেশি হয়নি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই হার ১০ শতাংশের আশপাশে হয়ে গিয়েছিল। তবে সেটি কমে আসে পরে।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক মাসে বাড়লেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মে মাসে এই হার হয়েছে ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। এপ্রিলে যা ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
গত কয়েক মাসের মতো গ্রামে শহরের চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। মে মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে আসে। ওই বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয় ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এর পর থেকে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক নিম্নমুখীই ছিল।
৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার চড়ছে।
সরকারি সংস্থা বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের মে মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের মে মাসে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৭ টাকা ৪২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
এই মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্য বা খাবারের জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, চলতি বছরের মে মাসে সেই খাবারের জন্য ১০৮ টাকা ৩০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসের মতো মে মাসে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে; এই মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য ও অন্যান্য সেবার দাম বেড়েছে বেশি।
বেশ কিছুদিন ধরেই সরকার বা বিবিএসের দেয়া হিসাবের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবে অনেক বেশি বলে বলে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার বিবিএসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।
গত ৩ মার্চ ‘মূল্যস্ফীতি: সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সানেম। তাতে মার্চ মাসের বিবিএসের ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর গ্রামে এই হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে, তা বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে যদি সঠিক তথ্য তুলে আনা না হয়, তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে না।’
নানা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিবিএস পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না।’
সেলিম রায়হান বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ খুবই চাপে আছে। ভাত না খেয়ে অন্য কিছু খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে অনেক মানুষ।’
একই কথা বলেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গত ১৬ মে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। বাজারের যে অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। বিবিএস ২০০৫–২০০৬ সালের ভোক্তাদের মাথায় রেখে মূল্যস্ফীতি ঠিক করে। ১৭ বছর পরে সেই মানুষদের পরিবর্তনকে তারা ধরছে না। গ্রামে মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে বেশি।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা, বাজারের পণ্যমূল্যের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।’
‘তারপরও বিবিএসের তথ্যকে মেনে নিয়ে যদি বলি, তাহলেও বলতে হয় একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি আমরা। কয়েক মাস ধরেই কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এতে অবশ্য বৈশ্বিক বাজারেরও একটা প্রভাব আছে। বিশ্ববাজারে সব জিনিসের দামই বেশ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে।
‘তাই আমার বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।’
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, দেড় বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে ওঠে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে।
২০২০ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এর পর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছিল।
চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
১২ মাসের গড় হিসাবে মে মাস শেষে (২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের মে) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশ খানিকটা ওপরে।
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন তাতে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছেন।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছুঁইছুঁই
শহরের চেয়ে গ্রামে খাবারের দাম বেশি। মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছুঁইছুঁই করছে; ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশে উঠেছে।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে বাংলাদেশে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
আগের মাস এপ্রিলে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মে মাসে মার্চের চেয়ে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।
মে মাসে গত কয়েক মাসের মতো শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে; এই মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে প্রায় ৮ শতাংশ, ৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এপ্রিলে ছিল ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
মে মাসে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এপ্রিলে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, মে মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
আগের মাস এপ্রিলে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
মে মাসে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক শুন্য ৮ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি কেন–এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছেও অবাক লাগে, এটা কেন হচ্ছে। তবে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন অনেক পণ্যই দ্রুত গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। সে ক্ষেত্রে গ্রামে পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে কারণে দাম বেড়ে যেতে পারে।’
‘তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গ্রাম হোক আর শহরই হোক, বাজারের বাস্তব প্রতিফলন বিবিএসের তথ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে না। সে কারণেই বিবিএসের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এ ক্ষেত্রে বিবিএসের তথ্য সংগ্রহে যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেটা দূর করা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস মহামারিতে গত দুই বছরে ঈদ-নববর্ষসহ অন্য উৎসবে পুরোমাত্রায় বেচাকেনা না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় রাত ৮টার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার খোলা না রাখার সরকারি নির্দেশনা আগামী ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে সংগঠনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত লোকাল গার্মেন্টস (অভ্যন্তরীণ পোশাক) বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক থেকে এ দাবি তোলা হয়।
বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সরকারের ঘোষিত সময়োপযোগী প্রণোদনা প্যাকেজের সহায়তা নিয়ে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় রাত ৮টার পর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা ব্যাহত হবে।
ব্যবসায়ীদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহা পর্যন্ত রাত ৮টার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
তিনি বলেন, ‘উৎসবকেন্দ্রিক কেনাবেচায় মূলত সন্ধ্যার পরই অফিসফেরত ক্রেতাদের সমাগম শুরু হয়। এমন প্রেক্ষাপটে রাত ৮টা পর্যন্ত কেনাবেচা সীমিত করা হলে দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী বিপাকে পড়বেন, একই সঙ্গে ক্রেতাসাধারণকেও ভোগান্তি পোহাতে হবে।’
এ ছাড়া বৈঠকে অভ্যন্তরীণ বাজারের পোশাক উৎপাদকদের জন্য গার্মেন্টসপল্লি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান কমিটির সদস্যরা।
তারা জানান, অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য পোশাক উৎপাদকদের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে আবার প্যাকেজ করে সেগুলো পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হয়। নির্ধারিত পল্লি থাকলে এ খরচ অনেকটাই কমবে, যা ক্রেতাদের আরও সুলভ মূল্যে পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য সহায়ক হবে।
কমিটির সদস্যদের দাবির প্রতি একমত পোষণ করেন এফবিসিসিআই সহসভাপতি এম এ মোমেন। তিনি জানান, গার্মেন্টসপল্লির ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পোশাক প্রস্তুতকারক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মালিক।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পোশাকের কল্যাণে বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। ব্যাংকঋণ পেলে এ খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।’
কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ আবু মোতালেব অভিযোগ করেন, ‘রাজস্ব কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। অবিলম্বে এসব হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভরসা ও হাফেজ হারুন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধপরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা এবং করোনাভাইরাসের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পর দেশে দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকির সই করা চিঠিতে এ নির্দেশনা জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিবকে লেখা এই চিঠি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে জানানো হয়।
আরও পড়ুন:রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা এবং করোনাভাইরাসের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে রাত ৮টার পরে দেশে দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপনি বিতান, কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকির সই করা চিঠিতে এ নির্দেশনা জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিবকে লেখা এই চিঠি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১১৪ ধারার বিধান প্রতিপালনে দেশে রাত ৮টার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপনী বিতান, কাঁচাবাজার খোলা না রাখার বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
চিঠিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তরসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য