কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের সেঞ্চুরির পর ব্যাংকগুলোতেও দর ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।
বেসরকারি ইস্টার্ন ও প্রাইম ব্যাংক বুধবার ৯৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৪ টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সায়। সোনালী ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে লেগেছে ৯২ টাকা ৪৫ পয়সা।
ইস্টার্ন ও প্রাইম ব্যাংক মঙ্গলবার ৯৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছিল। সোনালী ও জনতা ব্যাংক বিক্রি করেছিল ৯২ টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছিল ৯২ টাকা ৫০ পয়সায়।
তবে খোলা বাজারে ডলারের তেজিভাব খানিকটা কমেছে। এই বাজারে মঙ্গলবার ১০৪ টাকা পর্যন্ত দামে ডলার বিক্রি হলেও বুধবার বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কেউ আর ডলার বিক্রি করতে আসছে না। আগের ডলারই বিক্রি করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডলার পাচ্ছি না। আজ আমি ১ ডলারও কিনতে পারিনি। তাই কোনো ডলার বিক্রিও করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে কী হয়েছে জানি না! ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সবাই ডলার চাচ্ছে। গত সপ্তাহেও ৯৩-৯৪ টাকায় ডলার বিক্রি করেছি। মঙ্গলবার সেটা ১০৪ টাকায় উঠে যায়। আজ (বুধবার) অবশ্য ১০০ টাকায় নেমে এসেছে।
‘আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে ডলার কিনে ১০-১৫ পয়সা লাভে বিক্রি করি। কিন্তু গত দুই দিনে কোনো ডলার কিনতেও পারিনি, বিক্রিও করিনি। কেউ আর ডলার বিক্রি করতে আসছে না; সবাই কিনতে আসছে। এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি।’
বেশ কিছুদিন ধরেই আমেরিকান মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। সোমবার বড় দরপতন হয়। এক দিনেই আমেরিকান ডলারের বিপরীতে ৮০ পয়সা দর হারায় টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক দিনে টাকার এত বড় দরপতন হয়নি।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত তিন দিন (সোম, মঙ্গল ও বুধবার) ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছিল।
ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার সরকারি ছুটির কারণে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বন্ধ ছিল। সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক লাফে আরও ৮০ পয়সা কমিয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়।
টাকার মূল্য পতনে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো ছাড়া অন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশই তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এখন আমরা যদি না করি, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা ঠিক, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিটা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। রিজার্ভ বাড়বে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বুধবার পর্যন্ত (সাড়ে ১০ মাসে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৮ মে পর্যন্ত) ৫৩০ কোটি (৫.৩০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
প্রায় সব ব্যাংকই আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ৪ থেকে ৬ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।
খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা ১ থেকে ২ টাকার মধ্যে থাকত।
কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সে কারণেই দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ঠিক কাজটিই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপকে সময়োপযোগী একটা পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন এই অর্থনীতিবিদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে দর। কিন্তু এখন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমি মনে করি, এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা আবার ওলটপালট করে দিচ্ছে। যুদ্ধের কারণে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ডলারের অস্থিরতায় বেসামাল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি।’
উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক রেট ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকগুলো বিক্রি করছে প্রায় ১০০ টাকায়। কার্ব মার্কেটে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এটা কীভাবে সম্ভব। কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করছে?
‘আমার পরিচিত অনেকেই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ডলার কিনে এই কয় দিনে লালে লাল হয়ে গেছেন। ডলারের দাম নাকি আরও বাড়বে। তাই যাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে এখন ডলার কিনতে ছুটছে।’
ইটিবিএল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান ডলারের বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘আর দেরি না করে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দাম বন্ধ করতে হবে। বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। তাহলে বাজার এমনিতেই ঠিক হয়ে আসবে।’
রিজার্ভের স্বস্তি আর নেই
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর গত সপ্তাহে রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
বুধবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ- প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। এ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্সের ১০ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময়কালে (জুলাই-এপ্রিল) ১৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এটা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।
তবে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই ১০ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে দেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:চালের দামে লাগাম পরাতে আমদানি শুল্ক তুলে নেয়ার পর প্রথম দফায় বেসরকারিভাবে ৪ লাখ ৯ হাজার টন আমদানি করতে ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে যাচ্ছে সরকার।
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাল আনার আমদানির অনুমতি দিতে অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ক চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
শর্ত হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে এলসি খুলতে হবে এবং এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ই-মেইলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।
আমদানিকারকদের আগামী ১১ আগস্টের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশের বাজারে আনতে হবে। আমদানি করা চালের পরিমাণ গুদামজাত ও বাজারজাত করার তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককেও জানাতে হবে।
সরকারি হিসাবে দেশে চালের সরবরাহ ও মজুতের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও চালের দাম বেড়ে চলেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে সরু চালের দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরু চালের দাম এক মাসেই বেড়েছে ৯ শতাংশ।
টিসিবির হিসাবে এক বছর আগে এই সময়ে দেশে সরু চাল বিক্রি হতো কেজিপ্রতি ৫৬ থেকে ৬৫ টাকায়। এখন তা ৬৪ থেকে ৮০ টাকা।
এক বছর আগে মাঝারি চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজি, যেটি এখন হয়েছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা। এক বছর আগে মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৪৮ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা।
চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সরকারও অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখছে। সম্প্রতি বিভিন্ন চালকল ও বাজারে সরকার অভিযানও চালাচ্ছে। বৈধ মাত্রার চেয়ে বেশি মজুত করায় মামলাও হয়েছে স্কয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযানের সুফল বাজারে কমই মিলছে।
চাল উৎপাদনের প্রধান বোরো মৌসুমে চালের দামে এই লাফ বছরের বাকি সময়ের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। তার ওপর দেশের উত্তর পূর্বে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, উত্তরে কুড়িগ্রাম অঞ্চলেও চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। এতে আমনের ফলনেও ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বোরো ধান ওঠার পরও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আমদানি বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার। এর অংশ হিসেবে আমদানিতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে শুল্ক।
তবে নিয়ন্ত্রণমূক শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, অ্যাডভান্সড ট্রেড ভ্যাট বা এটিভি এখনও কিছু বহাল আছে, যদিও এর হার কমানো হয়েছে অনেকটাই।
এতদিন চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো সরকারকে। অর্থাৎ আমদানিতে ১০০ টাকা খরচ হলে সরকারকে দিতে হতো ২৫ টাকা। এই খাতে এখন কোনো টাকা দিতে হবে না।
যদিও নিয়ন্ত্রণমূলক যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ছিল, সেটি পুরোপুরি প্রত্যাহার হয়নি, তবে কমানো হয়েছে অনেকটাই।
এতদিন এই শুল্ক ছিল ২৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। এর বাইরে অগ্রিম আয়কর, এটিভি মিলিয়ে শুল্ক দিতে হবে ২৫ শতাংশ।
এতদিন আমদানি শুল্কের সঙ্গে এগুলো মিলিয়ে শুল্ক ছিল ৬২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্য আনতে সরকারকে দিতে হতো ৬২ টাকা। এখন কম দিতে হবে ৩৭ টাকা।
আমদানি করা চালের মূল্য আগের চেয়ে কম পড়লে দেশি উৎপাদকরা প্রতিযোগিতার স্বার্থে দাম কমাতে বাধ্য হবে বলে আশা করছে এনবিআর। আর এর ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল হবে এবং ভোক্তারা কম দামে চাল কিনে খেতে পারবে।
চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্কহার কমানোর এই আদেশ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছে এনবিআর।
চাল আমদানির ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে, আমদানি করা চাল স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামে পুনরায় প্যাকেটজাত করতে পারবে না। চাল বিক্রি করতে হবে প্লাস্টিক বস্তায়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় অতি দরিদ্রদের জন্য চালের দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এখন থেকে প্রতি কেজি চাল কিনতে হবে ১৫ টাকায়।
গত ২২ জুন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চালের দাম পুনর্নির্ধারণ করার কথা বলা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার চালের নতুন দাম কার্যকর করতে খাদ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
১ জুলাই থেকে চালের নতুন এই দাম কার্যকর হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে হতদরিদ্রদের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ নীতিমালা, ২০১৬’ অনুযায়ী খাদ্যবান্ধব কার্যক্রমের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত সর্বোচ্চ ৫০ লাখ পরিবারকে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, মার্চ ও এপ্রিল মাসে ৩০ কেজি চাল বিক্রির ক্ষেত্রে দাম পুনর্নির্ধারণ করা হলো।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ভোক্তা পর্যায়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্বাচিত প্রতিটি পরিবারের কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে এবং সমতলের ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা ও দুর্গম এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হবে।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের খেলাপি ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ নিয়মিত করতে পারবেন তারা। পাশাপাশি নতুন ঋণের জন্য আবেদনও করা যাবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিশেষ এই সুবিধা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বহাল থাকবে।
সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এই সার্কুলার পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য আগে বিতরণ করা কোনো ঋণের অংশবিশেষ খেলাপি হয়ে থাকলে ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফসিল করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার গোডাউনে স্টক বা সহায়ক জামানত থাকতে হবে।
পরে ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা যাচাই সাপেক্ষে ২০২২ সালে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য ঋণ বিতরণ করতে পারবে তফসিলি ব্যাংকগুলো। নতুন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট আদায় করা যাবে না।
কোরবানীকৃত পশুর কাঁচা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে বরাদ্দকৃত ঋণের সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিতকরণসহ তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িতদের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
শরিয়াহ্ভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক এসব নীতিমালা অনুসরণ করে এই খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক জোগান আসে প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানীকৃত পশুর চামড়া থেকে। এ সময় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে চামড়াশিল্পের মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণের পাশাপাশি চামড়া ক্রয়-বিক্রয় কাজে সরাসরি জড়িত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা আবশ্যক।
চামড়াশিল্পে বিরাজমান সমস্যাসহ কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে আগের কোরবানির ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে বিতরণকৃত বেশ কিছু ঋণ অনাদায়ী রয়ে গেছে।
নতুনভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি, বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি এলাকায় সংঘটিত আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে আগামী কোরবানির মৌসুমে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন:রান্না মজাদার ও সুস্বাদু করার প্রধান অনুষঙ্গ মসলা। তবে, চাহিদার সিংহভাগ মসলাই আমদানিনির্ভর। তাই এবার মসলার উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। এ জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে দেশের ১১০টি উপজেলা ও ২৫টি হর্টিকালচার সেন্টার। গুরুত্ব পাবে ২৩ ধরনের মসলার ৪৮টি জাত।
এ-সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিফ্রিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, ‘‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা।’’
প্রকল্পটির কাজ আগামী মাসেই শুরু হবে। ২০২৭ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা বলে জানান তিনি।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, দেশে প্রায় ৫০ ধরনের মসলার চাহিদা থাকলেও, চাষ হয় ৭ ধরনের। ফলে বাকি পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিশ্ববাজারে দর বাড়লে বিপাকে পড়েন গ্রাহকরা।
পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া, মরিচ, গোলমরিচ, দারুচিনি, জিরার মতো মসলা দেশেই আবাদ সম্ভব। এর সুবাদে মিটবে ভোক্তার চাহিদার পুরোটাই।
সভায় অনুমোদন পায় যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প। এ ছাড়া কুষ্টিয়া (ত্রিমোহনী)-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ (আর-৭৪৫) আঞ্চলিক মহাসড়কের ৮১তম কিমি-এ রেলবাজার রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প।
চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়ীয়া-পাথরঘাটা মহাসড়কের পিরোজপুর অংশের জরাজীর্ণ সড়ক সংস্কার, অপ্রশস্ত বেইলি সেতুর স্থলে পিসি গার্ডার সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
এ ছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ (১.৬০ কিমি থেকে ৩২.০০ কিমি পর্যন্ত) সড়ক প্রশস্তকরণ; জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ (১ম সংশোধিত); বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (১ম পর্যায়) (৩য় সংশোধিত) কাজের অনুমোদন দেয়া হয়।
ঢাকা সেনানিবাসে এমইএস (মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসেস)-এর ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সম্প্রসারণ; কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পও অনুমোদন পায়।
একনেক সভায় ২ হাজার ২১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৮৭৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও বৈদেশিক অর্থায়ন ৩৪১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমে আসায় দেশেও ভোজ্যতেলের দাম দু-এক দিনের মধ্যে কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বাদশ মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে আলোচনার নানা দিক তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।
ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে গেছে, সেই হিসেবে দেশেও দাম কমানো হবে।’
দাম কমলে কত কমানো হতে পারে- এমন প্রশ্নে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কিংবা চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করা হবে।
‘সেখানে আন্তর্জাতিক দাম অনুযায়ী দেশে গত এক মাসের মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেই দাম নির্ধারণ করা হবে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুব বেশি কমানো সম্ভব নাও হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউ সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুত বাড়ছে; তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাল-আটার দাম। বন্যার কারণে দেশে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা। তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বন্যায় খাদ্যঘাটতি হবে না। প্রয়োজনে চাল আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার দেশে মোট খাদ্যশস্য মজুতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টন। এর মধ্যে চালের মজুত হচ্ছে ১৩ লাখ ২৪ হাজার টন। গম ১ লাখ ৬৫ হাজার; আর ধান ৯২ হাজার টন।
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই মজুত ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা ছিল রেকর্ড। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই সরকারিভাবে এত খাদ্যশস্য মজুত ছিল না। কিন্তু এর পর থেকে কমতে কমতে সেই মজুত মে মাস শেষে ১২ লাখ ৫২ হাজার টনে নেমে আসে।
এরই মধ্যে ২৮ এপ্রিল থেকে দেশে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে সরকার। এর ফলে আবার বাড়ছে খাদ্যের মজুত।
বিস্ময়কর হলো, তারপরও চালের দাম কমছে না; উল্টো বেড়েই চলেছে। এবারই প্রথম ভরা বোরো মৌসুমেও মোটা চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। সরু চালের দাম বেড়েছে আরও বেশি; ১০ থেকে ১২ টাকা।
চালের দামের লাগাম টেনে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চালকল, আড়ত, বড় বড় পাইকারি বাজারে অভিযান চালানোর পরও দাম কমেনি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাজারগুলোতে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর সরু চাল (মিনিকেট-নাজিরশাইল) বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। এক মাসে এই চালের দাম ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৭ দশমিক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
আটার দাম বেড়েছে আরও বেশি। প্রতি কেজি খোলা আটাই এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
আটার দাম বাড়ার জন্য অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমান মজুত ‘সন্তোষজনক’ উল্লেখ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৫১ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ৬১০ টন ধান, ৪ লাখ ৫১ হাজার ১০৫ টন সেদ্ধ চাল এবং ৭ হাজার ৭৮০ টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। ধান, চালের আকারে মোট মজুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ হিসাবে মোট চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৩১ টন। আর গম ২০ লাখ টন।
গত ২৮ এপ্রিল থেকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে; চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এবার প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪০ টাকা এবং আতপ চাল ৩৯ টাকা।
এই মৌসুমে ৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান, ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল এবং ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।
নতুন চালেও কমছে না দাম
বুধবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে চালের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। নতুন চালও প্রচুর এসেছে। কিন্তু দাম কমছে না।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাজারের একটি মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভালো মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৪ থেকে ৮২ টাকা; যা এক মাস আগেও ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা।
এই বাজারের এক মুদি দোকানের মালিক রিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে চালের দাম বাড়েনি। ১৫/২০ দিন আগে যে দাম বেড়েছিল, সেই দামেই বিক্রি করছি।’
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধানের দাম বেশি। সে কারণে চালের দাম কমছে না। ১৪০০/১৫০০ টাকা মণ দরে ধান কিনে আমরা কীভাবে কম দামে চাল বিক্রি করব।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে হাওর অঞ্চলে বন্যার কারণে বোরো ধানের ফলনের ক্ষতি হয়েছে। এখন সিলেট-সুনামগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফলনের পাশাপাশি যারা ধান তুলে বাড়িতে বা গুদামে রেখেছিলেন সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা বুঝতে পারছি না।’
ধানের দাম না কমলে চালের দাম কমবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন লায়েক আলী।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়াটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর চাল মজুত আছে। এ অবস্থায় দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
‘এটা সরকারকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে অভিযান শুরুর নির্দেশ নিয়েছেন তা সারা দেশে পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বন্যার কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতির কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো শঙ্কা নেই। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। দেশে এখনও ১৬ লাখ টন ধান-চাল মজুত আছে। তারপরও আমাদের সংগ্রহ অভিযান চলছে। এ ছাড়া সে রকম কোনো অবস্থা দেখলে আমরা চাল আমদানি করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে জিরো ট্যাক্সে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছেন।’
প্রয়োজনে চাল আমদানি করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ধান কাটার আগেও কিছুটা বন্যা হয়েছিল, তা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। ওই সময় ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। তবে চলমান বন্যার কারণে প্রধান খাদ্যশস্য ধানসহ অন্যান্য ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। মাঠে এখন তেমন ফসল নেই। কিছু হয়তো আউশ ধান ছিল। সরকারি খাদ্যগুদামে যে মজুত রয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি হবে না। প্রয়োজনে চাল আমদানি করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশে রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত কিছুটা শিথিল হয়েছে, ৮টার পরিবর্তে দোকান বন্ধ হবে রাত ১০টায়।
আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে বলে বুধবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় ২০ জুন থেকে।
রাত ৮টার পরিবর্তে ১০টায় দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১১৪ এর ৪ উপধারার ক্ষমতাবলে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ জুন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে শ্রম মন্ত্রণালয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণ, এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন মালিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান রাত ৮টায় বন্ধের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন সারা দেশে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
তবে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি আগামী ১ জুলাই থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত রাত ১০টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখার অনুমতি চান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবারের এ সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য