সরবরাহ ঘাটতি, মজুতদারি, মিলমালিকদের কারসাজি, বিক্রেতাদের অধিক মুনাফামুখিতার মতো নানা কারণে সয়াবিনের দাম নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সরকারও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মাঠ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে তৎপর।
বাস্তবতা হলো জনগণের নাভিশ্বাস ওঠার কারণ শুধু ভোজ্যতেল নয়; দাম ঊর্ধ্বমুখী সব পণ্যেরই। চাল, আটা, ডিম, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল থেকে শুরু করে ভোগ্য এবং নিত্যব্যবহার্য প্রায় সব পণ্যের গায়েই আগুন।
কনজ্যুমারস ফোরামের তথ্য
বেসরকারি সংস্থা কনজ্যুমারস ফোরাম (সিএফ) চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে পাইকারি বাজার বিশ্লেষণ করেছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারির তুলনায় মার্চে পাইকারি পর্যায়ে সব ধরনের পণ্যমূল্য বেড়েছে গড়ে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পণ্যভেদে বেড়েছে দুই থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সামনে এসেছে বিশ্ববাজারে দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, তবে স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়েছে লাগামহীন।
সিএফের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘পণ্যের বাজারে অস্থিরতার পেছনে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী।’
তিনি বলেন, ‘পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ মুক্তবাজার অর্থনীতির ওপর ছেড়ে দেয়া হলে নানা সময় নানা অসিলায় অযৌক্তিকভাবে গুটিকয়েক অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।’
কোন পণ্যের দাম কত বাড়ল
সিএফ জানিয়েছে, জানুয়ারির তুলনায় মার্চে দাম বাড়ার শীর্ষে রয়েছে সরিষার তেল। পণ্যটির দাম গড়ে বেড়েছে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ছোট দানার মসুর ডালের দর বেড়েছে ২০ দশমিক ১ শতাংশ।
লবণে ১৬ শতাংশ এবং প্যাকেটজাতকৃত গুঁড়া মসলার দর বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চালের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।
আটা, ময়দা ও সুজির দর বেড়েছে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। ডালে গড়ে বেড়েছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এ সময়ে বড় দানার মসুর ডাল ১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং মুগ ডালের দর বেড়েছে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। দেশি ছোট দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ। চিনির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ।
সয়াবিন তেলে গড়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। নারকেল তেলে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ দর বেড়েছে। গুঁড়া হলুদ-মরিচের দর বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্যাকেটজাত গুঁড়া মসলার দর ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেড়েছে। হ্যান্ড ওয়াশে বেড়েছে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
থালা-বাটি, হাঁড়ি-পাতিল পরিচ্ছন্ন করার দ্রব্য ২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে।
নিত্যব্যবহার্য টুথপেস্টের দাম ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। নুডলস ও স্যুপের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
পাইকারি পর্যায়ে প্যাকেটজাত লবণের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা। শতকরা হিসাবে বৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ। খুচরা পর্যায়ে ৩২ টাকার লবণ হয়েছে ৩৫ টাকা। ইতোমধ্যেই পাইকারি পর্যায়ে লবণে ৩ টাকা কেজিতে কমানো হয়েছে, কিন্তু খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকাই রাখা হয়েছে।
দাম বাড়েনি যেসব পণ্যের
সিএফের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চে পাইকারি পর্যায় দাম বাড়েনি নাইজাল, হারপিক, থালা-বাটি পরিষ্কার করার মাজনির।
সরিষা-সয়াবিন ও নারকেল তেলের দাম বাড়লেও ঘির দাম বাড়েনি। চা-পাতা, স্যালাইন, টিস্যু পেপার, ভিনিগার, সস ও স্যাম্পুর দাম ছিল স্থিতিশীল।
সিএফের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রমজানের শুরুতে সরকার ভোজ্যতেলের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ছিলেন, কিন্তু ঈদের আগে থেকেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি চাল, ডাল, তরকারি, মাছ-মাংসসহ সব পণ্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়াই এবার হঠাৎ করে গরু-ছাগল ও মুরগির মাংসের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। ৬২০ টাকা কেজি গরুর মাংস উঠে যায় ৭০০ টাকায়, ৭৫০ টাকা কেজি খাসির মাংস ৯০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
১৪০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগির মাংস ১৬০ টাকায় দাঁড়ায়। ২৮০ টাকা দামের কর্ক মুরগি কেজি বেড়ে হয় ৩২০ টাকা।
শসা, বেগুন, টম্যাটো, কাঁচামরিচ সবজির দাম কেজিতে ক্ষেত্রবিশেষে ২০, ৪০ বা ৫০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এবার ফলের দামও চড়া। ৮০ টাকা দামের একটি ডাব বিক্রি হয় ১২০ টাকা। কলার হালিও ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
রোজার মাস থেকে ভোজ্যতেলের আকাল শুরু হয়। ঈদের ছুটির পর ১ লিটারের তেল ৩৮ টাকা বাড়িয়ে বিক্রির অনুমতি দেয় সরকার।
লিটারপ্রতি সয়াবিন তেল ১৬০ টাকার জায়গায় করা হয় ১৯৮ টাকা। শতকরা হিসাবে দাম বাড়ে ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
লক্ষ্যমাত্রার বেশি মূল্যস্ফীতি
চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়, বাস্তবে সেটি তার চেয়েও বেশি। মূল্যস্ফীতি যে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, তা স্বীকার করছে সরকারও।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, মার্চে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
মার্চে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ০৪ শতাংশে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫ অঙ্কের ঘরে মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার আশ্বাস দেয় সরকার।
করণীয় কী
কনজ্যুমারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘অবস্থা উত্তরণে, বিশেষ করে শিল্প ও আমদানীকৃত পণ্যের উৎপাদক, ব্যবসায়ীর সংখ্যা সরকারি উদ্যোগে বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ রাখতে টিসিবিকে ঢেলে সাজিয়ে পণ্য উৎপাদন, আমদানি, তেল-চিনি ও লবণের রিফাইন মিল স্থাপন করার বিকল্প নাই।মাছ-মাংসসহ কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতে সমবায় ব্যবস্থা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা গেলে এসব পণ্যের বাজার ব্যবস্থা থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য প্রতিহত করা সম্ভব।
‘এতে করে কৃষিপণ্য উৎপাদকরা পণ্যের যৌক্তিক মূল্য পাবেন। একই সঙ্গে শহর-নগরের ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কেনারও সুযোগ পাবেন।’
সাধারণ মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে নিত্যপণ্যের মূল্য ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো পণ্যের মূল্য যেন অযাচিতভাবে না বাড়ে, সে বিষয়ে এখনই কার্যকর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:২০২১ সালের শেষ দিকে এসে দেশে মোবাইল ব্রডব্যান্ড কভারেজ ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল মাত্র চার কোটি।
সিঙ্গাপুরে বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক ডিজিটাল ইনোভেশন কংগ্রেস-২০২২। সম্মেলনের প্রথম দিনে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড প্র্যাকটিস’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য জানান।
হুয়াওয়ে থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা ঘোষিত হওয়ার পর বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করার চিত্রও তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট বাংলাদেশের জনসাধারণের জীবনকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী নেতৃত্ব এবং এই খাতের সব অংশীজনের সার্বিক সহযোগিতায় কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব সময়েও বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে।’
২০২১ সালে জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশন প্রকাশিত বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন অর্থাৎ সাশ্রয়ী মূল্যে দেশের মানুষকে ইন্টারনেট সেবা দেয়ার সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল সেবা কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে তার ওপর আলোকপাত করেন মোস্তাফা জব্বার।
হুয়াওয়ের আয়োজিত এই সম্মেলনে মালয়েশিয়ার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন মন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আদহাম বিন বাবা, হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু, আসিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইয়াং মি ইং, থাইল্যান্ডের ডিজিটাল অর্থনীতি ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব আজারিন পাত্তানাপাঞ্চাই, হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন বক্তব্য দেন।
হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে হুয়াওয়ে একটি পরিপূর্ণ আইসিটি সল্যুশন পোর্টফোলিও প্রতিষ্ঠা করেছে, যা গ্রাহকদের টেলিকম ও এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্ক, ডিভাইস এবং ক্লাউড কম্পিউটিং সুবিধা দিয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটি ১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে, যা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার সমান। এক লাখ ৯৭ হাজারের বেশি কর্মী নিয়ে বিশ্বব্যাপী টেলিকম অপারেটর, উদ্যোক্তা ও গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতের তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক সমাজ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে হুয়াওয়ে।
আরও পড়ুন:জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাজারে অভিযানসংক্রান্ত তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, ‘বাজারে তেল, ডাল, পেঁয়াজ, গম, চিনি, পোশাক, জুতা সবখানেই অনিয়মের রাজত্ব। যেখানেই হাত পড়ছে, সেখানেই অনিয়ম ধরা পড়ছে।’
বৃহস্পতিবার ভোক্তা অধিকার সম্পর্কিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফের) এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।
সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভারতের নাসিকে বৃষ্টি হচ্ছে, আর বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভারত গম রপ্তানি বন্ধের পরদিনই দেশে গমের দাম বেড়েছে। ডাল-চিনি তো একই অবস্থা। ভোজ্যতেলের কারসাজি তো সবারই জানা।’
তিনি বলেন, ‘মিলারদের কারসাজি আমরা দেখেছি। এরপর ডিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও কারসাজি দেখলাম। বেনারসি পল্লিতে ৫ হাজার টাকার শাড়িতে ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ট্যাগ দেয়া হয়। জুতার দোকানদারদেও একই অবস্থা।’
সফিকুজ্জামান ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থাকছে। তা থেকে ধারণা করা যায়, চিকিৎসকরা কোম্পানির সুপারিশে ওষুধ লিখছেন। আবার ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে নিচ্ছে। এতে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
‘ইংরেজি মাধ্যম কোনো কোনো স্কুলে ভর্তির সময়ই কয়েক মাসের বেতন আগাম নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বই, খাতা, কলম, পোশাক স্কুল থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কক্সবাজার পর্যটন কেন্দ্রে ছবি তোলা, বাইক চালানো, ঘোড়াসহ বিভিন্ন লোক পর্যটকদের চারপাশে সারক্ষণ ঘুরঘুর করছে। পর্যটকরা নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারছেন না।
‘কোনো সেবা নিলে উচ্চহারে মূল্য দিতে হচ্ছে। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস থেকেও মানুষ যথাযথ সেবা পাচ্ছে না। পানির মান ভালো না। গ্যাসের চাপ কম থাকে। বিদ্যুতে লোডশেডিং হচ্ছে। বিমান সময়মতো ছাড়ছে না। এক কথায় যেখানেই হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম পাচ্ছি।’
এ ধরনের অনিয়ম বন্ধে আইন অনুযায়ী ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়ে এটির মহাপরিচালক বলেন, ’ভোক্তা অধিদপ্তরের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সঠিক তথ্যের অভাব। এই সংস্থার তথ্যের বৈধ উৎস নেই। ভোক্তা বা ব্যক্তিগত উৎস থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করারও সুযোগ নেই। এ জন্য ভোক্তা অধিদপ্তর সব গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি জানান, পাশাপাশি বিদ্যমান আইনেও অনেক দুর্বলতা আছে। সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই এটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হবে। সংশোধিত আইনে ভোক্তা অধিকার আরও সুসংহত হবে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো, তিতাসের সেবা বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার ইঙ্গিত দেন।
মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তারা প্রতারিত হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, কখন অধিকার খর্ব হচ্ছে, সেটাই আর বুঝতে পারে না।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ইস্যু ভোজ্যতেলের সংকট নিয়ে কথা বলেন। সফিকুজ্জামান বলেন, ‘তথ্য অনুযায়ী তেলের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সংকট হয়েছে। কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরবরাহ আদেশ ধরে রাখছে। এক কথায়, এই বাজারে এক ধরনের মনোপলি বা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। এসব জেনে-বুঝেও কিছু করার থাকছে না। সরকার চায় পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে।’
অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মাদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে জনবলসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জায়গায় অনিয়ম রয়েছে। নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রচুর অনিয়ম রয়েছে। ভোক্তা অধিদপ্তর ঠিকমতো কাজ করতে পারলে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জরিমানা বা শাস্তি হবে না।’
তিনি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা আশা করেন।
এএফপির ব্যুরো চিফ ও ইআরএফের সহসভাপতি শফিকুল আলম বলেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে ব্যবসার ধরন পাল্টেছে। আবার ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। ফলে ভোক্তা অধিকার আইনটি সংশোধন করতে হবে। আইন ভঙ্গের শাস্তি আরও কঠোর করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের গবেষণা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।’
ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীও আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি কঠোর করার পরামর্শ দেন।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যাবের উপদেষ্টা কাজী আব্দুল হান্নান। এতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যক্রম ও আইন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রজবী নাহার রজনী।
আরও পড়ুন:ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। ২৩ মে থেকে আগের মতোই দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাম তেল রপ্তানি করবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো তার দেশ থেকে পাম তেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শীর্ষ পাম তেল উৎপাদক দেশ। অভ্যন্তরীণ বাজারে রান্নার তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে গত ২৮ এপ্রিল অপরিশোধিত পাম তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয় দেশটি।
সেসময় দেশটি জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, কম উৎপাদন এবং করোনা মহামারির কারণে সৃষ্ট শ্রমিক সংকটে ইন্দোনেশিয়াতেই তেল সংকট দেখা দিয়েছে।
এই সংকট মোকাবিলায় গত ২২ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর বিশ্বের শীর্ষ পাম তেল রপ্তানিকারক দেশটি ২৮ এপ্রিল থেকে অপরিশোধিত পাম তেলের চালান বন্ধ করে দেয়।
পাম তেলের চালান বন্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী উদ্ভিজ্জ তেলের বাজার বড় রকমের ধাক্কা খায়। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের তেলের বাজারেও।
চলতি মাসের শুরুতে সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে বাড়ানো হয় লিটারে ৩৮ টাকা। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৯৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা লিটার আর এক লিটার পাম তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৭২ টাকা।
এক বছর আগেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ১৩৪ টাকা করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা মার্চ থেকে লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার রাজি না হয়ে ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট পুরোপুরি আর আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে বাকি সব ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকা।
প্রতি লিটার রান্নার তেলের দাম ১৪ হাজার রুপিয়ায় (ইন্দোনেশিয়ান মুদ্রা) নামিয়ে আনার লক্ষ্যে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সরকার। তেলের দাম এখনও সেই লক্ষ্যমাত্রায় নেমে না আসলেও পাম তেল শিল্পের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
দেশটির প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘পাম তেল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত দেশের ১ কোটি ৭০ লাখ শ্রমিকের কথা ভেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
দেশটিতে রান্নার তেলের সরবরাহ এখন অভ্যন্তরীণ বাজারে যা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এপ্রিল মাসে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আগে দেশে রান্নার তেলের গড় দাম ছিল ১৯ হাজার ৮০০ রুপিয়া প্রতি লিটার। নিষেধাজ্ঞার পরে গড় দাম প্রায় ১৭ হাজার ২০০ থেকে ১৭ হাজার ৬০০ রুপিয়া প্রতি লিটারে নেমে এসেছে।’
আরও পড়ুন:কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের সেঞ্চুরির পর ব্যাংকগুলোতেও দর ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।
বেসরকারি ইস্টার্ন ও প্রাইম ব্যাংক বুধবার ৯৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৪ টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সায়। সোনালী ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে লেগেছে ৯২ টাকা ৪৫ পয়সা।
ইস্টার্ন ও প্রাইম ব্যাংক মঙ্গলবার ৯৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছিল। সোনালী ও জনতা ব্যাংক বিক্রি করেছিল ৯২ টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছিল ৯২ টাকা ৫০ পয়সায়।
তবে খোলা বাজারে ডলারের তেজিভাব খানিকটা কমেছে। এই বাজারে মঙ্গলবার ১০৪ টাকা পর্যন্ত দামে ডলার বিক্রি হলেও বুধবার বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কেউ আর ডলার বিক্রি করতে আসছে না। আগের ডলারই বিক্রি করছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডলার পাচ্ছি না। আজ আমি ১ ডলারও কিনতে পারিনি। তাই কোনো ডলার বিক্রিও করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে কী হয়েছে জানি না! ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সবাই ডলার চাচ্ছে। গত সপ্তাহেও ৯৩-৯৪ টাকায় ডলার বিক্রি করেছি। মঙ্গলবার সেটা ১০৪ টাকায় উঠে যায়। আজ (বুধবার) অবশ্য ১০০ টাকায় নেমে এসেছে।
‘আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে ডলার কিনে ১০-১৫ পয়সা লাভে বিক্রি করি। কিন্তু গত দুই দিনে কোনো ডলার কিনতেও পারিনি, বিক্রিও করিনি। কেউ আর ডলার বিক্রি করতে আসছে না; সবাই কিনতে আসছে। এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি।’
বেশ কিছুদিন ধরেই আমেরিকান মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। সোমবার বড় দরপতন হয়। এক দিনেই আমেরিকান ডলারের বিপরীতে ৮০ পয়সা দর হারায় টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক দিনে টাকার এত বড় দরপতন হয়নি।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত তিন দিন (সোম, মঙ্গল ও বুধবার) ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছিল।
ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার সরকারি ছুটির কারণে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বন্ধ ছিল। সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক লাফে আরও ৮০ পয়সা কমিয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়।
টাকার মূল্য পতনে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো ছাড়া অন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশই তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এখন আমরা যদি না করি, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা ঠিক, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিটা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। রিজার্ভ বাড়বে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বুধবার পর্যন্ত (সাড়ে ১০ মাসে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৮ মে পর্যন্ত) ৫৩০ কোটি (৫.৩০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
প্রায় সব ব্যাংকই আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারের রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ৪ থেকে ৬ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।
খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা ১ থেকে ২ টাকার মধ্যে থাকত।
কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সে কারণেই দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ঠিক কাজটিই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপকে সময়োপযোগী একটা পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন এই অর্থনীতিবিদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে দর। কিন্তু এখন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমি মনে করি, এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা আবার ওলটপালট করে দিচ্ছে। যুদ্ধের কারণে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ডলারের অস্থিরতায় বেসামাল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি।’
উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক রেট ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকগুলো বিক্রি করছে প্রায় ১০০ টাকায়। কার্ব মার্কেটে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এটা কীভাবে সম্ভব। কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করছে?
‘আমার পরিচিত অনেকেই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ডলার কিনে এই কয় দিনে লালে লাল হয়ে গেছেন। ডলারের দাম নাকি আরও বাড়বে। তাই যাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে এখন ডলার কিনতে ছুটছে।’
ইটিবিএল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান ডলারের বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘আর দেরি না করে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দাম বন্ধ করতে হবে। বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। তাহলে বাজার এমনিতেই ঠিক হয়ে আসবে।’
রিজার্ভের স্বস্তি আর নেই
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর গত সপ্তাহে রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
বুধবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ- প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। এ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্সের ১০ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময়কালে (জুলাই-এপ্রিল) ১৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এটা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।
তবে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই ১০ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে দেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:সেবা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভোক্তা হয়রানি ও অসম প্রতিযোগিতার অভিযোগে প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলায় নিজেদের ব্যাখ্যা দিতে একমাস সময় পেয়েছে চার ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।
নিজেদের ব্যাখ্যা দিতে দুটি প্রতিষ্ঠান আগামী ২২ জুন এবং দুটি প্রতিষ্ঠান ২৭ জুন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের কার্যালয়ে হাজির হবে।
এর আগে গত সপ্তাহে আট ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে কমিশন। তাদের মধ্যে চার কোম্পানিকে বুধবার শুনানিতে ডাকা হয়।
কমিশনের প্রথমিক অনুসন্ধানে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইনের ১৫ ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ জন্য ভোক্তাস্বার্থে প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করতে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে মামলার শুনানিতে অংশ নিতে নোটিশও পাঠানো হয়।
নোটিশ পেয়ে বুধবার চার প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা কমিশনের শুনানিতে অংশ নেয়। শুনানিতে বসুন্ধরা অয়েল রিফাইনারি মিল (বসুন্ধরা) ও মেঘনা ও ইউনাইটেড এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড (ফ্রেশ) ২২ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে।
এ ছাড়া ২৭ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড (তীর) ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (রূপচাঁদা)।
কমিশনের পক্ষে কোম্পানিগুলোর বক্তব্য শুনেন কমিশনের চেয়ারপার্সন মফিজুল ইসলামসহ অন্যান্য সদস্যরা। পৃথকভাবে চার কোম্পানির সঙ্গে শুনানিতে বসে কমিশন।
এ সময় কোম্পানির প্রতিনিধিরা সময় চাইলে কমিশন তা মঞ্জুর করেছে।
বৃহস্পতিবার আরও চার কোম্পানি শুনানিতে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এ চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পুষ্টি), এস আলম সুপার এডিবল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এস আলম), প্রাইম এডিবল অয়েল লিমিটেড (প্রাইম) ও গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেড (রয়্যাল শেফ)।
সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেডের (তীর) পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবী তফসিরুল ইসলাম বলেন, ‘কমিশনের নোটিশের প্রেক্ষিতে আমরা উপস্থিত হয়েছি। কমিশন যে তদন্ত প্রতিবেদনটা করেছে, সে প্রতিবেদনটা আমরা চেয়েছি। প্রতিবেদনটা পেলে আমরা একটা জবাব দেব। জবাব দিতে বাড়তি সময়ের জন্য একটা দরখাস্ত দিয়েছি। কোর্ট দরখাস্ত মঞ্জুর করেছে। কোর্ট যে অভিযোগ এনেছে সে বিষয়ে আগামী শুনানিতে জবাব দেব।’
আরও পড়ুন:কৃষক পর্যায়ে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ কেজিতে ২০ টাকা এমনকি স্থানভেদে এই খরচ আরও বেশি হয়। খুচরা পর্যায়ে তাই পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজির মধ্যে থাকা উচিত বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
কত দামে আমরা পেঁয়াজ খেতে চাই তেমন একটা সিদ্ধান্তেও আসা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনাসংক্রান্ত কমিটির দ্বিতীয় সভায় এমন মন্তব্য করেন টিপু মুনশি।
টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশে এখন আলোচনা হচ্ছে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। আমাদের তো একটা সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার যে কতটা বাড়তি দামে পেঁয়াজ খাওয়া উচিত, আর কতটা বাড়তি দাম কৃষকদের দেয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এখন যদি বলে যে ২০ টাকায় পেঁয়াজ দিতে হবে তাহলে কিন্তু কৃষকরা বাঁচবে না, তারা উৎপাদনও করবে না। তারা উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। আমাদেরকে এমন একটা দামে যেতে হবে যেখানে কৃষকরাও পেঁয়াজের দাম পায় এবং ভোক্তারাও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পেঁয়াজ পায়। কারণ আমাদেরকে কৃষক এবং ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় আমাদের একটা হিসাব দিয়েছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষক পর্যায়ে খরচ হয় ২০ থেকে ২১ টাকা, স্থানভেদে সেটি আরও বেশি। উৎপাদন খরচ যা-ই হোক, উৎপাদিত পেঁয়াজ পচে যাওয়ার একটা হিসাব রয়েছে। এটাও কিন্তু কৃষককে হিসাব করতে হয়। ফলন শেষেই কৃষকদের তো ৫-৬ টাকা করে লাভ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া আজকে যদি আমি ১০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করি, তার থেকে কিন্তু এক মাসের মধ্যে তার তিন থেকে চার পার্সেন্ট পচে যাবে। তাই দামের ক্ষেত্রে এটাও হিসাবে যুক্ত করতে হবে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা যদি কৃষক পর্যায়ে দাম হয়, তাহলে সেটি খুচরা পর্যায়ে ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হবে। এই দামে পেঁয়াজ খাওয়ার ক্ষমতা ভোক্তাদের আছে। তাই পেঁয়াজ নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বস্তির বিষয় হলো, পেঁয়াজের একটু ভালো দাম পাওয়ার কারণে কিন্তু কৃষকরা পেঁয়াজের ভালো উৎপাদনও করছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ লাখ ১২ হাজার টন পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয়েছে। আমাদের প্রতি বছর আমদানি করতে হয় গড়ে ৬-৭ লাখ টন। এ ক্ষেত্রে কৃষক ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা যদি গড়ে প্রতি বছর দুই-আড়াই লাখ টন উৎপাদন বাড়াতে পারি, দুই বছর আগেও বলেছিলাম একই কথা। আমরা সে পথেই হাঁটছি। আমরা খুব বেশি আশাবাদী ২০২৫ সাল নাগাদ বোধহয় আমাদের আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।’
তাই এখন পেঁয়াজ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে দাবি করেন টিপু মুনশি।
পেঁয়াজের বাজার এখনো ঠিক আছে, সরকারও সতর্ক রয়েছে। যদি দেখা যায় বাজার খুব বেশি বাড়ছে, তাহলে কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি (আইপি) অনুমোদন দেয়ামাত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। যেটা বন্ধ রয়েছে, তা চালু করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে গম আমদানিতে বাধা নেই বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ দাবি করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে সরব আলোচনা, ভারত বাংলাদেশে গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু কথাটি সত্যি নয়। আবার বিষয়টি শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও নয়; সারা বিশ্বের জন্য, কিন্তু আমাদের ৬৩ থেকে ৬৪ শতাংশ গম ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এ জন্য এ কথাটা শোনার পর থেকেই বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করে, কিন্তু সবার জানা উচিত গম রপ্তানিতে জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) প্রক্রিয়ায় আমদানি বন্ধ হয়নি।
‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সরকার টু সরকার আলোচনার মাধ্যমে যত খুশি গম আনা যাবে। একই সঙ্গে ভারত থেকে গম আমদানি করে এমন বড় বড় আমদানিকারক যারা রয়েছে কিংবা অন্য আমদানিকারকরাও গম আমদানি করতে পারবেন, তবে এ আমদানির পারমিশনটা সরকার টু সরকার থেকে নিতে হবে।
‘সে পারমিশনের আওতায় ১০০ ভাগ গম আমদানি করতে পারবেন বেসরকারি খাতের আমদানিকারকরা, যে কারণে ভারত থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কোনোভাবেই আমাদের ওপরে পড়বে না।’
রপ্তানি বন্ধের খবরে দেশে গমের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মেঘ দেখলেই বলে ঝড় এসে গেল। এখানেও সেটি হয়েছে। যদিও বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ গম মজুত রয়েছে কিংবা আমদানি পর্যায়ে রয়েছে, তাতে আমরা কোনো ভয়ের আশঙ্কা করি না। চাহিদার যত কম আমাদের দরকার, তা আছে।’
ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য