চকচকে কাচঘেরা দৃষ্টিনন্দন ১৬ তলা বিজিএমইএ ভবন এখন আর হাতিরঝিলের বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে নেই বটে, তবে মাটির তলায় এখনও সেটির শিকড় রয়ে গেছে। ভবন ভাঙ্গা হলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি পানি চলাচল। ঝিলের বুকে গেঁথে থাকা ভবনের পাইলিং এখনও হাতিরঝিলের পানিপ্রবাহে বাধা হয়ে আছে।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঝিলের ধারে ভবনের কোনো চিহ্ন নেই। কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব না দুই বছর আগেও এখানে ছিল বিশাল এক ভবন। তবে ভবনের ভিত্তির মাটি এখনও পুরো সরানো হয়নি ঝিল থেকে। পাইলিং গেঁথে আছে পানির নিচে, যার কিছু অংশ পানির ওপরে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
আগে ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েক ফুট জায়গা পানি চলাচলের জন্য থাকলেও এখন মাটি সরানোর জন্য সেটিও ভরাট করা হয়েছে। উত্তরে যেখানে ভবনে প্রবেশের গেট ছিল, সেখানে এখন নালা আকৃতির ১০ ফুটের মতো জায়গা, যা দিয়ে কোনো রকমে পানির ক্ষীণ একটি প্রবাহ।
ঝিলের পরিকল্পনায় আছে, পুরা জায়গা থেকে মাটি সরিয়ে নিয়ে ঝিলটির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে। তবে মাটি সরানোর কাজ বেশ কয়েক মাস বন্ধ রয়েছে। এতে মাঝখানের মাটি সরে জায়গাটি এখন একটি পুকুরের মতো মনে হয়, যার এক পাড় খোলা। অথচ দুই বছর আগেই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল হাতিরঝিলের পরিবেশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস নিজউবাংলাকে জানিয়েছেন, ‘ভবন ভাঙার কাজ শেষ করে এরই মধ্যে ভরাট করা মাটি সরানোর কাজ চলছে। যে পাইলিংগুলো এখনও আছে, সেগুলোও তুলে ফেলা হবে। এ কাজ তিন ভাগের দুই ভাগ শেষ হয়েছে। এখানে পানির মধ্যে কোনো কিছু থাকবে না। তবে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর আমরা আবারও কাজ শুরু করব। তখন আর কিছুই থাকবে না। শিগগিরই মুক্ত হবে এটি। এরপর হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করা হবে।’
প্রধান প্রকৌশলী মাটি সরানোর কাজ অব্যাহত থাকার কথা বললেও জাগায়টি ঘুরে এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরেই এখান থেকে মাটি সরানোর কাজ বন্ধ আছে। জায়গাজুড়ে একফুটের বেশি লম্বা ঘাস তা জানান দিচ্ছে।
আগে যেখানে বিজিএমইএর ভবনের প্রবেশপথ ছিল, তার পাশেই হোটেল সোনারগাঁওয়ের পেছন দিয়ে লেকের পাশ ঘেঁষে পায়ে হাঁটা পথ। সেখানে হোটেলের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তাকর্মী সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বছরখানেক হইব এখানে কোনো কাম হয় না। এ ভাবেই ফালায় রাখছে। আমি তো প্রতিদিন এখানে ডিউটি করি, কাউরে দেখলাম না কাম করতে। মাটি কাটার কোনো মিশিনও দেখি নাই।’
২০০৬ সালে হাতিরঝিল লেকের একাংশ ভরাট করে ১৬ তলা ভবনটি গড়ে তোলে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ২০১০ সালে এটিকে জলাধার আইন ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে নিজস্ব খরচে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল প্রকল্পে বিজিএমইএ ভবন ক্যানসারের মতো। যদি ভবনটি অবিলম্বে সরানো না হয়, তবে এটি হাতিরঝিল নয়, পুরো ঢাকা শহরের ক্ষতি করবে।’
এই রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আপিল করলেও রায়ে পরিবর্তন আসেনি। তবে দুই দফায় ভাঙার সময় বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে ওই বছরের ১৬ এপ্রিল রাজউক ভবনটি সিলগালা করে।
এরপর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ পায় চট্টগ্রামভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। ২০২০ বছরের ২১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ভবন ভাঙার কাজ। তবে এরপর করোনার কারণে ভাঙার কাজেও স্থবিরতা আসে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গত বছরের মাঝামাঝিতে মূল ভবন ভাঙার কাজ শেষ হয়।
২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুটের বিজিএমইএ ভবনটিতে ছিল তিনটি বেসরকারি ব্যাংক ও ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অফিস। বিলাসবহুল অ্যাপারেলস ক্লাবে সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, সভাকক্ষ এবং একটি বড় আকারের মিলনায়তন ছিল। তবে সেসব এখন অতীত। নতুন করে উত্তরায় ১১০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছে বিজিএমইএ’র নতুন ভবন।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে গান শেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য সারা দেশে আড়াই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রথমবারের মতো প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সমপরিমাণ।
প্রতি বিষয়ে ২ হাজার ৫৮৩টি সহকারী শিক্ষকের পদ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।
সংগীত ও শারীরিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাব এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। এই মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। জনবলের বিপরীতে বরাদ্দ নিশ্চিত করে সেখান থেকে অনুমোদিত হয়ে এলে তা যাবে সচিব কমিটিতে। সেখান থেকে প্রাথমিকে আবার যখন সিদ্ধান্তটি আসবে, তখন তা পাঠানো হবে অধিদপ্তরে। তারপর আসবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।
সরকার চাইছে, শিশুরা স্কুলে এসে আনন্দের সঙ্গে সময় কাটাবে। পড়াশোনাকে বিশেষ চাপ ভেবে ভীত থাকবে না।
সনাতন ধাঁচের শিক্ষা পদ্ধতির বদলে প্রাথমিক থেকেই শিশুরা যেন আনন্দ নিয়ে পড়াশোনা করে, সে জন্য পাঠক্রম থেকে শুরু করে স্কুলের অবকাঠামোও পরিবর্তন করে ফেলতে চাইছে সরকার। এর অংশ হিসেবে শিক্ষায় সংগীত ও শরীরচর্চা যোগ হচ্ছে।
এখন সীমিত পরিসরে কিছু স্কুলে ছবি আঁকার যে চর্চা রয়েছে, সেটি সব স্কুলে শুরু করা, পাশাপাশি আলাদা শিক্ষক নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে।
বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাথমিক থেকেই সংগীত শেখানোর ব্যবস্থা আছে। এই দায়িত্বে আছেন শুক্লা ধর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই বিষয়ে যখন আমরা ক্লাস নেই, তারা বেশ উপভোগ করে। যেসব পরিবার সংগীতচর্চায় আগ্রহী, সেসব পরিবার স্কুলের বাইরেও বিষয়টি এগিয়ে নেয়।’
শুক্লা পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে। তার মতো যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করেন, তাদের পক্ষে পেশা হিসেবে সংগীতকে বেছে নেয়াটা কঠিন হয়ে যায় এই কারণে যে খুব বেশি প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে নিয়োগ দেয়া হয় না।
প্রাথমিকে বিষয়টি চালু হলে সংগীতে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
শুক্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ইতিবাচক। ফলে শিক্ষা হবে আনন্দময়। যার ফল আমরা ভবিষ্যতে ভোগ করব। আর যারা এ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদের জন্যও কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের শিক্ষাকে আনন্দময় করার দাবি করে আসছি। সংগীত ও শারীরিক শিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের দাবি কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন হবে। বর্তমানে প্রাথমিকে অঙ্কন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়টি আরও জোরদার করা উচিত।’
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া উচিত প্রাথমিক শিক্ষায়। এই ধরনের উদ্যোগ এই শিক্ষার মান বাড়াবে।’
ব্যাপক চাকরির সুযোগ
প্রাথমিক ও জনশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ৫ হাজার ১৬৬টি পদ তৈরি করার প্রস্তাব দিলেও এই বিষয়টি যদি স্কুলে স্কুলে চালু হয়, তাহলে কর্মসংস্থানের নতুন দিক উন্মোচন হতে পারে।
সবশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। সব স্কুলে একজন করে সংগীত ও শরীরচর্চার শিক্ষক যদি নিয়োগ দেয়া যায়, তাহলেও নতুন চাকরির সুযোগ হবে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩২টি।
আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে শিক্ষক থাকলে বেসরকারি স্কুল-কলেজও একই চর্চায় যাবে। সে ক্ষেত্রে আরও নতুন চাকরি তৈরি হবে, দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়বে।
সারা দেশে কর্মরত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮০ জন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কম নিয়োগ দেয়া হলেও আশা করছি পরে প্রতিটি স্কুলেই এই নিয়োগ দেয়া হবে।’
তিনি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদও দেন। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর করা ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষায় বাজেটের ৬ থেকে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও আমরা এটি করতে পারলাম না। কেবল ২ শতাংশের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।’
কবে আসতে পারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদ সৃষ্টিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২০২০ সালে।
সেই প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই মন্ত্রণালয় সময় নিয়েছে দুই বছর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মণীষ চাকমা ধারণা দিতে পারেননি কবে প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করে তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপাতে পারবেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এখন এ পদগুলোর বিষয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতি নিয়ে সচিব কমিটি পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন মিললে এই দুই বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।’
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এই স্থরিবতা নিয়ে হতাশ। তিনি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে কেন দুই বছর লাগবে? এখন তা আবার অন্য মন্ত্রণালয় ও কমিটিতে যাবে। এত দীর্ঘসূত্রতা কেন?’
প্রাথমিক শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে যত সিদ্ধান্ত
প্রাথমিকে শতভাগ ভর্তির লক্ষ্য অর্জনের পর সরকার এখন শিক্ষার গুণগত মানে নজর দিয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে বড় পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিকে পরীক্ষার সংখ্যা কমবে। বাড়বে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির পরিকল্পনা হলো নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না। পুরো মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে।
চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিকবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ এবং সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। আর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে।
আরও পড়ুন:যান চলাচলে খুলে দেয়ার অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু পারাপারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ফেরি পারাপারের বিদ্যমান হারের দেড় গুণ হিসাবে।
পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার এক মাসেরও বেশি সময় আগে ঘোষণা করা এই টোল হার নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।
সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা আর বড় বাসের জন্য ২ হাজার ৪০০ টাকা দিতে হবে- সেতু বিভাগ এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর এই হার বেশি কি না, সেই আলোচনা এখন সামাজিক মাধ্যমে।
পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে আট বছর আগে জারি করা টোল নীতিমালা অনুযায়ী। এই নীতিমালায় থাকা ফেরির মাশুলের তুলনায় দেড় গুণ টোল ঠিক করা হয়েছে।
এই নীতিমালায় সেতুর দৈর্ঘ্যের বিবেচনার কথাও বলা হয়েছে। সেই বিবেচনাতে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে তুলনা করা যায়।
পদ্মা সেতুর সঙ্গে প্রায় দুই যুগে আগে খুলে দেয়া বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল হারের তুলনা করলে দেখা যায়, উত্তরের পথের সেতুটির তুলনায় দক্ষিণের পথের সেতুর টোল হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ।
তবে দুই সেতুর নির্মাণ ব্যয় আর দৈর্ঘ্যেও পার্থক্য আছে। ১৯৯৮ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া বঙ্গবন্ধু সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সঙ্গে মূল সেতুতে উঠতে দুই পাশে ভায়াডাক্ট আছে ১২৮ মিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটারের কম।
তবে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য আরও বেশি। এখানে মূল সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। আর দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার। সেই হিসাবে সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৯৮ কিলোমিটার।
দুই সেতুর নির্মাণ ব্যয়েও আছে পার্থক্য। কংক্রিটের বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। ডলারের সঙ্গে টাকার সে সময়ের বিনিময় হারে এই ব্যয় ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার আশপাশে। তবে বর্তমান বিনিময় হারের সঙ্গে তুলনা করলে এটি দাঁড়ায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অন্যদিকে, চার লেনের পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে স্টিলের ওপরে, যাতে সড়কসেতুর নিচ দিয়ে রেল চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর নির্মাণে সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
যে ১২ ধরনের গাড়ির জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হিসাব করে দেখা যায়, ছয় ধরনের গাড়িতে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটার হিসাবে টোল বেশি। বাকি ছয় ধরনের গাড়িতে কম।
বাইকে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি টোল বঙ্গবন্ধুর তুলনায় ৬০ পয়সা বেশি। পিকআপ ভ্যানে পদ্মায় কিলোমিটারে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় টোল বেশি ৭ টাকা ৩১ পয়সা।
মাঝারি বাসে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল বেশি ১২ টাকা ১৭ পয়সা আর বড় বাসে বেশি ৫৫ টাকা ১৯ পয়সা।
ট্রাকের ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের গাড়ির মধ্যে পদ্মায় খরচ কম তিন আকারের গাড়িতে। অন্যদিকে বেশি ধরা হয়েছে দুই আকারের গাড়িতে।
বড় আকারের থ্রি এক্সেলের ট্রাকে যমুনার তুলনায় পদ্মা পাড়ি দিতে কিলোমিটারে বেশি খরচ হবে ১৮৫ টাকা ৬৮ পয়সা। ফোর এক্সেল ট্রাকে বেশি ৩৬ টাকা ৫৩ পয়সা।
অন্যদিকে প্রাইভেট কারে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল কম ৩০ টাকা ৯৫ পয়সা।
মাইক্রোবাসে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল কম ১২ টাকা ৩৭ পয়সা। ছোট বাসে এই ব্যয় কম হবে কিলোমিটারে ১ টাকা ৬২ পয়সা।
পাঁচ টনের ট্রাকে পদ্মা পাড়ি দিতে কিলোমিটারে খরচ কম পড়বে ৩০ টাকা ৮৫ পয়সা। ৮ টনের ট্রাকে এই খরচ ২৭ টাকা ৭৯ পয়সা আর ১১ টনের ট্রাকে কম ২৩ টাকা ৫৪ পয়সা।
টোল নীতিমালায় কী বলা আছে
সড়ক ও সেতুর টোল নির্ধারণে ২০১৪ সালে জাতীয় টোল নীতিমালা করা হয়।
এই নীতিমালা অনুযায়ী সেতুর দৈর্ঘ্য হিসাবে টোল নির্ধারণ হবে। আর যে পথে সেতু হয়েছে, সেখানে যদি আগে থেকে ফেরি থাকে, তাহলে ফেরির মাশুলের দেড় গুণ হবে সেতুর টোল।
পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটাই হয়েছে। তবে খুচরা টাকার ঝামেলা এড়াতে কিছুটা কম-বেশি হয়েছে।
যেমন মোটরসাইকেলে ফেরি পারাপারে ৭০ টাকা লাগে। দেড় গুণ হিসাবে সেতুর টোল হয় ১০৫ টাকা। কিন্তু পাঁচ টাকা খুচরা নিয়ে ঝামেলা এড়াতে তা করা হয়েছে ১০০ টাকা।
বড় বাসের ক্ষেত্রে ফেরির মাশুলের দেড় গুণ হিসাবে হয় ২ হাজার ৩৭৫ টাকা। কিন্তু ২৫ টাকা খুচরার ঝামেলা এড়াতে তা করা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
দেশের দুই প্রধান সেতুর টোলের হিসাব-নিকাশ
সেতু বিভাগের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে একটি মোটরসাইকেলকে দিতে হবে ১০০ টাকা। মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ফেরি পার হতে এই খরচ ৭০ টাকা।
পদ্মার তুলনায় দৈর্ঘ্যে অর্ধেক বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে মোটরসাইকেলের খরচ ৫০ টাকা।
দৈর্ঘ্যের হিসাবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল দাঁড়াচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তার পরিমাণ ১০ টাকা ১৫ পয়সা।
সেই হিসাবে পদ্মা পাড়ি দিতে যমুনার তুলনায় মোটরসাইকেলকে প্রতি কিলোমিটারে বেশি দিতে হবে ৬০ পয়সা।
পদ্মা পাড়ি দিতে প্রাইভেট কার ও সাধারণ জিপে টোল ঠিক করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। ফেরিতে বর্তমানে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা।
যমুনা পাড়ি দিতে পদ্মার তুলনায় অর্ধেক দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে এই টোলের পরিমাণ ৫৫০ টাকা।
সে ক্ষেত্রে প্রাইভেট কারে যমুনা পাড়ি দিতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ ১১১ টাকা ৬১ পয়সা। আর পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ ৮০ টাকা ৬৬ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে টোল প্রতি কিলোমিটারে কম ৩০ টাকা ৯৫ পয়সা।
পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপ পারাপারে ফেরিতে দিতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। পদ্মা সেতু পার হতে সেই টোলের পরিমাণ ১ হাজার ২০০ টাকা।
পদ্মার তুলনায় অর্ধেক বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই টোল ৬০০ টাকা।
সেই হিসাবে এই ধরনের গাড়িতে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি টোল খরচ ১২৯ টাকা ৬ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তা ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা।
অর্থাৎ পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারে খরচ বাড়ছে ৭ টাকা ৩১ পয়সা।
মাওয়া প্রান্তে মাইক্রোবাস পারাপারে ফেরিতে লাগে ৮৬০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে পদ্মা সেতুতে করা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
অর্ধেক দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতুতে মাইক্রোবাসের খরচ লাগে ৭৫০ টাকা।
সেই হিসাবে পদ্মা সেতুতে মাইক্রোবাসে প্রতি কিলোমিটারে টোল ১৩৯ টাকা ৮২ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তার পরিমাণ ১৫২ টাকা ১৯ পয়সা।
অর্থাৎ মাইক্রোবাসে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটার হিসাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় খরচ কমে আসবে ১২ টাকা ৩৭ পয়সা।
৩১ আসন বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য পদ্মা সেতুতে দিতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ফেরিতে এসব গাড়িকে দিতে হচ্ছে ৯৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের বাসকে দিতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা।
তার মানে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩১ বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোল আসে ১৫২ টাকা ১৯ পয়সা। আর পদ্মা সেতুতে আসে ১৫০.৫৭ টাকা।
এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারে খরচ কম পড়বে ১ টাকা ৬২ পয়সা।
মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে মাঝারি বাসকে ফেরিতে দিতে হয় ১ হাজার ৩৫০ টাকা। সেতু দিয়ে পারাপারে তা লাগবে ২ হাজার টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের বাসকে দিতে হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে মাঝারি বাসের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২১৫ টাকা ১০ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই খরচ কিলোমিটারে ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মায় বাসমালিকদের খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকা ১৮ পয়সা।
মাওয়া প্রান্ত দিয়ে বড় বাসে ফেরিতে পদ্মা পারাপারে লাগছে ১ হাজার ৫৮০ টাকা। সেতুতে লাগবে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের বাসে খরচ পড়ে ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে বড় বাসের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২৫৮ টাকা ১২ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই খরচ ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মায় বড় বাসমালিকদের খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ৫৫ টাকা ১৯ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে ৫ টনের ট্রাক এ সেতু পাড়ি দিলে গুনতে হবে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ টন পর্যন্ত এই ট্রাক পারাপারে ফেরিতে দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের ট্রাক পারাপারে টোল দিতে হয় ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে পাঁচ টনের ট্রাকের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ১৭২ টাকা ৮ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই দূরত্বের খরচ ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মা সেতুতে ছোট ট্রাকে খরচ কমছে প্রতি কিলোমিটারে ৩০ টাকা ৮৫ পয়সা।
পাঁচ টন থেকে আট টনের মাঝারি ট্রাকের জন্য পদ্মা সেতুতে দিতে হবে ২ হাজার ১০০ টাকা, ফেরিতে লাগছে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
একই আকারের ট্রাকের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুতে দিতে হয় ১ হাজার ২৫০ টাকা।
এই হিসাবে পদ্মা সেতুতে পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাকে টোলের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২২৫ টাকা ৮৬ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই দূরত্বের খরচ ২৫৩ টাকা ৬৫ পয়সা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে এই ধরনের ট্রাতে কিলোমিটারপ্রতি কম নেয়া হচ্ছে ২৭ টাকা ৭৯ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে আট টন থেকে ১১ টনের মাঝারি ট্রাকের টোল ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই গাড়িগুলোকে টোল হিসেবে দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মাঝারি ট্রাকে প্রতি কিলোমিটারে পদ্মা সেতুর খরচ ৩০১ টাকা ১৪ পয়সা। বঙ্গবন্ধুর সেতুতে এই খরচ ৩২৪ টাকা ৬৮ পয়সা।
এই হিসাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ কমবে ২৩ টাকা ৫৪ পয়সা।
থ্রিএক্সেলের ট্রাক পারাপারে পদ্মা সেতুতে টোল ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগছে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের ট্রাক পারাপারে লাগছে ২ হাজার টাকা।
কিলোমিটারপ্রতি খরচের হিসাবে দেখা যায় পদ্মা সেতুতে ৫৯১ টাকা ৫৩ পয়সা। যা বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪০৫ টাকা ৮৫ পয়সা।
এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ১৮৫ টাকা ৬৭ পয়সা।
মালবাহী ট্রেইলারের (ফোর এক্সেল) টোল পদ্মা সেতুতে ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগে ৪ হাজার টাকা।
আর যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের ট্রাককে দিতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা।
দেখা যাচ্ছে মালবাহী ট্রেইলারে (ফোর এক্সেল) প্রতি কিলোমিটারে পদ্মা সেতুর খরচ ৬৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। বঙ্গবন্ধুর সেতুতে এই খরচ ৬০৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে খরচ বাড়ছে কিলোমিটারপ্রতি ৩৬ টাকা ৫৩ পয়সা।
চার এক্সেলের ওপরে মালবাহী ট্রেইলারের জন্য প্রতি এক্সেলে পদ্মা সেতুতে যোগ হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে যোগ হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতটি রাজনৈতিক দল মিলে হচ্ছে নতুন জোট। এতে রয়েছে জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলন।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও নেতারা এই জোটকে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বলছেন। আর এই জোট গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভাঙনের সুর বাজছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে।
বাম জোটের অন্যতম দুই শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন যোগ দিচ্ছে নতুন জোটে। সে ক্ষেত্রে দল দুটির একসঙ্গে দুই জোটে থাকার সুযোগ নেই- এমনটাই বলছেন বাম জোটের অন্য শরিক দলের নেতারা।
তারা বলছেন, আগামীতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনকে ছাড়াই চলবে বাম জোট।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা যেতে চাচ্ছে বা অন্য একটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে তাদের নিয়ে আমরা বসব। তাদের কথা শুনব। আমরা এটা বলছি, একসঙ্গে তো দুটো জোটে থাকা যায় না।
‘এ বিষয়টি আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা ফয়সালা করব। সামনে আমাদের (বাম জোটের) একটা বৈঠক আছে তখন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’
বাম জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘বাম জোট তাদের মতো এগিয়ে যাবে, এখানে একসঙ্গে দুই জোটে কেউ থাকতে পারবে না।’
তবে নতুন জোটে যাওয়ার পরিকল্পনা জানালেও বাম জোট ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারছেন না বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বর্তমান বাস্তবতায় আমরা বিশেষ করে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচনকালীন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা নিশ্চিত করতে আমরা একটা জাতীয় মঞ্চ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।
‘সেটা নিয়ে একটা আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো ঘোষণা দিইনি। কিছু প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে, কিছুটা বোঝাপড়া তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি বা বিএনপিকেন্দ্রিক যে মেরুকরণ, বলতে পারেন ইসলামি দলগুলোর বাইরে বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গের যৌথ জাতীয় একটা প্ল্যাটফর্ম- এটারই অংশ হচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ।’
এই জোট গঠনের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগটা আকস্মিক নয়, অনেক দিন ধরেই চলছে। লেখক মুস্তাক মারা যাওয়ার পরে আমরা একটা নাগরিক পদযাত্রা করেছিলাম, তার পর থেকেই অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা চলছে। ২৩ তারিখে আমাদের সাতটা দলের (গণতন্ত্র মঞ্চের অন্তর্ভুক্ত) পরবর্তী সভা আছে, সেখানেই হয়তো এটার নামকরণ বা আমরা কীভাবে আত্মপ্রকাশ করব সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।’
সে ক্ষেত্রে বাম জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন কি না জানতে সাইফুল হক বলেন, ‘বাম জোটের শুরু থেকেই তো আমরা, আমাদেরকে কেন্দ্র করেই… বাম জোটকে আমরা বলেছি ওদের সঙ্গে (গণতন্ত্র মঞ্চ) জোট বা জোটের শরিক দলগুলো অংশ নিতে পারে। আমরা তাদেরকে জানিয়েছি এটি বাম জোটের বা অন্য কোনো জোটের প্যারালাল কোনো জোট না।
‘যেহেতু এটা একটা ন্যাশনাল মঞ্চ ফলে এখানে লেফট, প্রগেসিভ, ডেমোক্রেটিক দল ও সংগঠন আসতে পারে। আর এটা (গণতন্ত্র মঞ্চ) ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জোট হিসেবে কখনও ডেভেলপ করলে আমরা নিশ্চয় একসঙ্গে দুটো জোট প্র্যাকটিস করব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জোটের অন্যান্য শরিক দলগুলোর ভূমিকা, অ্যাটিটিউড সেটা দেখে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব। সামনে বাম জোটের একটা বৈঠক ডাকা হয়েছে, অনুমান করছি সেখানে এটা নিয়েও আলোচনা হবে।’
অন্যদিকে বাম জোটকে টিকিয়ে রেখেই আরেকটি বৃহত্তর রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার পক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাম জোটভুক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে আমরা বহুদিন ধরেই প্রস্তাব রেখে যাচ্ছি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে আমাদের যথাসম্ভব বৃহত্তর ঐক্য করা দরকার।
‘সেই বৃহত্তর ঐক্যের ক্ষেত্রে আমাদের ভিত্তিটা হচ্ছে, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা অর্থাৎ স্থায়ীভাবে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের এবং সংবিধানের সংস্কারসহ একটা স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি বিষয়ে একমত হবে, তাদের সঙ্গে আরেকটু বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে তোলা দরকার। বিএনপিসহ যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য লড়াই করছে, তাদের সঙ্গেও আমাদের যুগপৎ ধারায় কাজ করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, বাম জোটকে টিকিয়ে রেখেই ভোটাধিকার এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কর্মসূচির বিষয়ে যারা একমত হবেন, তাদের সঙ্গে আমাদের আরেকটি বৃহত্তর রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা বাম জোটের সব সংগঠনকেই একসঙ্গে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার জন্য কথা বলছি। এ আলোচনা এখনও চলছে বাম জোটের মধ্যে।’
বাম জোটের বাকি সংগঠনগুলো কেবল বাম ঐক্যের মধ্যেই থাকতে চায় উল্লেখ করে সাকি বলেন, ‘আমরা বলেছি কেবল বাম ঐক্যই ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট কৌশল নয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে রণকৌশল হচ্ছে যথাসম্ভব বৃহত্তর ঐক্য করা। সে ক্ষেত্রে আমরা একটা ভিত্তি হিসেবে বলেছি, যারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কর্মসূচিতে একমত তাদের নিয়ে একটা মঞ্চ করা যেতে পারে।
‘সাতটি দলের সঙ্গে বৈঠক আমাদের প্রাথমিক আলোচনার সূত্রপাত। এ ধরনের বৃহত্তর একটা মঞ্চ গড়ে তোলা যায় কি না সেই লক্ষ্যে এই আলোচনা। আমরা তাদের (বাম জোট) প্রস্তাব দিয়েছি বিবেচনা করার জন্য। আবার তাদের দিক থেকেও আমাদের দিকে প্রস্তাব এসেছে। পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
বৈঠকে ফলপ্রসূ না হলে গণসংহতি আন্দোলন বাম জোটে থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি, ‘এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা আগে আলোচনায় বসি, তারপর দেখা যাক কী দাঁড়াচ্ছে। আর আমাদের দলেও আলোচনার বিষয় আছে। সামনে আমাদের জাতীয় পরিষদের বৈঠক আছে, সেখানে চূড়ান্ত আলোচনা করে আমাদের দল সিদ্ধান্ত নেবে।’
৯টি দল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বাম জোট। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন বাদেও এই জোটে আছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাসদ- মার্কসবাদী, ওয়ার্কার্স পার্টি- মার্কসবাদী ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।
আরও পড়ুন:উহ্! তোমার চেহারার সঙ্গে কী অদ্ভুত মিল লোকটার, ঠিক যেন মায়ের পেটের আপন ভাই বা বোন। জীবনে এমন কথা অনেকেই অনেকবার শুনে থাকেন। তবে বেশির ভাগ সময়েই এসব শুধু কথার কথা। একজনের চেহারার সঙ্গে আরেকজনের পুরোপুরি মিল খুঁজে পাওয়া সহজ কোনো ঘটনা নয়।
তবে তাই বলে এমন ঘটনা একেবারেই যে ঘটে না, তা কিন্তু বলা যাবে না। নিজের মতো দেখতে কাউকে খুঁজে পেলে আপনি হয়তো ভিরমি খাবেন, কিন্তু মেনে নিতে শিখুন ওই মিল থাকা ব্যক্তিটি আসলে আপনার ‘ডপলগ্যাঙার’।
সোজা কথায় ডপলগ্যাঙার হলো দুজন একই রকম দেখতে মানুষ, যাদের মধ্যে জন্মসূত্রে কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি খুব বিরল হওয়ায় অনেকে এটি অতিপ্রাকৃত ঘটনাও মনে করেন।
২৩ বছর ধরে বিশ্বের নানা প্রান্তে এই ডপলগ্যাঙার জুটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন কানাডিয়ান ফটোগ্রাফার ফ্র্যাঙ্কোস ব্রুনেল। তার প্রধান শখ বা লক্ষ্য হলো, যত বেশি সম্ভব ডপলগ্যাঙারদের ছবি তোলা।
আই অ্যাম নট অ্যা লুক অ্যালাইক নামের একটি প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রুনেল। এর আওতায় ডপলগ্যাঙারদের পরিচয়, সম্পর্ক এবং অনুভূতিগুলো চমৎকারভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে।
ব্রুনেলের সাদাকালো ছবিগুলো সবই বলতে গেলে খুব সাধারণ। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড, সাদাকালো নেগেটিভ ফিল্মে তিনি তুলে এনেছেন গোটা দুনিয়া চষে খুঁজে পাওয়া ডপলগ্যাঙারদের ছবি। ছবির জুটিগুলো আশ্চর্যরকমভাবে দেখতে এক।
দুই দশকের বেশি সময়ের চেষ্টায় ব্রুনেল বিশ্বের ৩০টি শহরে আড়াই শ ডপলগ্যাঙারকে পেয়েছেন।
এবার এসব ছবি দিয়ে একটি বই প্রকাশের কাজ করছেন ব্রুনেল। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে তার।
ফ্র্যাঙ্কোস ব্রুনেলের বাড়ি কানাডার মন্ট্রিলে। আই অ্যাম নট অ্যা লুক অ্যালাইক প্রকল্পের পাশাপাশি দ্য সেভেন এসেনশিয়াল টুলস ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ফটোগ্রাফি শিরোনামে তার একটি বইও আছে।
আরও পড়ুন:তীব্র দাবদাহের প্রভাবে উৎপাদন হ্রাস ও স্থানীয় বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। তবে এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কি না তা নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
ভারত সরকার শুক্রবার হঠাৎ করেই গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশেও এটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ী পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণের মধ্যেও এই আলোচনায় ডালপালা গজিয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এই অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। রোববার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দাবি করেন, গম রপ্তানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। আর সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশকে গম দেবে।
প্রকৃত ঘটনা হলো, গম রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার খবর যেমন সত্য, তেমনি বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর দাবিও অসত্য নয়।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) শুক্রবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে বিশ্বব্যাপী গম রপ্তানির ওপর সরকারি-বেসরকারি আমদানিকারকদের জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তবে প্রজ্ঞাপনে দুটি ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগও রাখা হয়েছে। একটি হলো ১২ মের আগে খোলা যেসব ঋণপত্র (এলসি) বাতিলযোগ্য নয়, তার বিপরীতে গম রপ্তানি করা যাবে।
অর্থাৎ এখানে সরকারি-বেসরকারি দুভাবেই ১২ মের আগে চুক্তির বিপরীতে সম্পন্ন হওয়া এলসির বিপরীতে চাহিদাকৃত গম রপ্তানি করা যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা তৈরি হলে বেসরকারি খাতের আমদানিকারকরা ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা নিতে পারবেন।
তবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে খোলা এলসির বিপরীতে গম রপ্তানির সুযোগ কোনো দেশের ক্ষেত্রেই বিবেচিত হবে না।
প্রজ্ঞাপনে রাখা অপর সুযোগটি হলো খাদ্য ঘাটতিতে থাকা দেশের সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ভারত সরকার অনুমতি দিলে সে দেশে গম রপ্তানি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আবার প্রতিবেশী দেশকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে গম রপ্তানির অনুরোধ করা হলে বাংলাদেশের ডাকে ভারত সরকার সাড়া দেবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার বনাম সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে ভারত থেকে গম আমদানির সুযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যে দাবি করেছেন সেটি মূলত ভারত সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনের দ্বিতীয় সুযোগটিকে ভিত্তি করে। একইভাবে ভারত বাংলাদেশকে গম দেবে- বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন দাবির সারকথাও সেটিই।
ভারতের বাণিজ্য দপ্তরের সচিব বি ভি আর সুব্রহ্মণ্যমের বক্তব্যে বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর এ বক্তব্যের সত্যতা মেলে। রোববার তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও খাদ্যসংকটে থাকা দেশগুলোতে সরকারি পর্যায়ে গম রপ্তানির সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া আগের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার বেসরকারি সংস্থাগুলোকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৪৩ লাখ টন গম রপ্তানির অনুমতি দেবে।
এদিকে গমের বৈশ্বিক দাম বৃদ্ধি এবং রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাকে কিছুটা হুমকির মুখে ফেলছে।
যদিও ভারতের বাণিজ্য দপ্তর দাবি করেছে, গম রপ্তানির ওপর এ নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী নয় এবং যেকোনো সময় সিদ্ধান্তে বদল আসতে পারে।
ভারতের বর্তমান অবস্থান পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে জিটুজি পর্যায়ে অনুরোধ সাপেক্ষে আমদানির সুযোগ থাকলেও ভারত থেকে বেসরকারি পর্যায়ে দেশে গম আমদানি আপাতত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দেশে বার্ষিক গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাদ দিলে বছরে ৬২ থেকে ৬৫ লাখ টন গম আমদানি করতে হয়। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি হয়ে থাকে বেসরকারিভাবে। আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর গত তিন মাসে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির ৬৩ শতাংশই এসেছে ভারত থেকে। এর পরিমাণ ২৭ লাখ ১৫ হাজার টন। এ অবস্থায় ভারতের গম রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বে শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ হলো রাশিয়া, ইউক্রেন, চীন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ভারত। চীনে এ বছর গমের উৎপাদন ভালো হয়নি। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ইউরোপে যুদ্ধের প্রভাব পড়ায় আমদানি অনিশ্চয়তা আছে কানাডার বাজার থেকেও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গম রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা।
এত সব ঘটনায় ইতোমধ্যে দেশে গম নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গমের অভ্যন্তরীণ মজুতও শক্তিশালী অবস্থানে নেই।
বাণিজ্য বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, গম রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা সাময়িক হলে দাম বৃদ্ধি ছাড়া বড় কোনো সমস্যা হবে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে একক কোনো দেশের ওপর নির্ভর করা কখনোই সুখকর হয় না। অতীতে বারবার তা প্রমাণ হয়েছে। সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব অল্টারনেটিভ সোর্স কান্ট্রি নির্ধারণ করা এবং সেসব বাজার থেকে গম আমদানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
‘একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে অতিসত্বর আরও গম আমদানির চুক্তি করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ দুইয়ের ব্যত্যয় হলে এবং সেটি দীর্ঘ মেয়াদে চলতে থাকলে তা বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তবে স্বল্প মেয়াদে কোনো ঝুঁকি না থাকলেও দাম বৃদ্ধির প্রবণতা ভোক্তাকে বেশ ভোগাবে।’
অনুরূপ মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারত বেসরকারি খাতের জন্য রপ্তানি বন্ধ করলেও সেখানে সরকারিভাবে আমদানির সুযোগ এখনও রয়েছে। সরকারকে দ্রুত ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে এই জিটুজি পর্যায়ের সুযোগটি নিতে হবে। এর মাধ্যমে বড় চালানের প্রয়োজনীয় গম আনতে পারে সরকার। পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও যাতে গম আমদানি করা যায় তার অনুরোধ করতে হবে। আর ভারতের বাইরে অন্য দেশগুলো থেকেও দ্রুত গম আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মনুশি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর সরকার আরও পাঁচটি দেশ থেকে গম আমদানির পথ খুঁজছে। ইতোমধ্যে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে গম আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। বুলগেরিয়ার সঙ্গেও চুক্তি পর্যায়ে পৌঁছানো গেছে। আর ভারত রপ্তানি বন্ধ করলেও প্রতিবেশী হিসেবে তারা আমাদের গম দেবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন, জিটুজিতে গম আনার বিষয়ে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমরা প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া বেসরকারি খাত যদি গম আমদানির ব্যাপারে সহায়তা চায়, আমরা অবশ্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব।’
আরও পড়ুন:আগামী এক বছরে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আড়াই লাখ কোটি টাকা ব্যয় করবে। আর এর বেশির ভাগই ব্যয় করা হবে পরিবহন, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে।
এই লক্ষ্য ঠিক করা হচ্ছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে। দেশে প্রথমবারের মতো আড়াই লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়াচ্ছে উন্নয়ন ব্যয়।
নতুন এই এডিপি চলতি বছরের সংশোধিত এডিপি থেকে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা বেশি।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) খসড়া এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এই দিন অনুষ্ঠেয় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, এডিপির তিনটি অংশের মধ্যে সরকারি অর্থায়নের অংশ রয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তার অংশ রয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এ দুই অংশ মিলে মূল এডিপি দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এর সঙ্গে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ৯ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। সব মিলয়ে এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি টাকা।
এরই মধ্যে এডিপির খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে ১১ মে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত বর্ধিত সভায় এডিপির বিভিন্ন অংশের অর্থ জোগানের পাশাপাশি খাতওয়ারি বরাদ্দও চূড়ান্ত করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকারের মেগা প্রকল্পের কয়েকটি এরই মধ্যে শেষের দিকে রয়েছে। তাই সেগুলোতে বরাদ্দের চাপ কমছে, তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাবে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এনইসি সভায় সব খাতের ব্যয় চূড়ান্ত হবে।’
চলতি বছরের সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) মোট বরাদ্দের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ৭০ হাজার ২৫০ কোটি এবং দেশীয় অর্থায়ন ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ৯ হাজার ৬১৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা রয়েছে। এতে এডিপির সর্বমোট আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তবে বছরের শুরুতে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
সে হিসাবে চলতি বছরের এডিপি থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত এডিপি থেকে ৩৯ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে নতুন এডিপির আকার।
প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল এডিপির প্রায় অর্ধেক টাকা যাচ্ছে পরিবহন-যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে। দুই খাত মিলে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। এ দুই খাতের স্বায়ত্তশাসিত অংশ মিলে যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির প্রায় ৪৫ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, মূলত সরকারের উন্নয়ন কাজের চলমান বড় বড় প্রকল্পগুলো যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ খাতের আওতায় রয়েছে। এ জন্য এ দুই খাতে বরাদ্দও বেশি দিতে হচ্ছে।
এর মধ্যে যোগাযোগ খাতের পদ্মা সেতু, চট্টগ্রামের কর্ণফুলি টানেল, ঢাকার মেট্রোরেল (এমআরটি-৬), যমুনা রেল সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরসহ বড় বড় প্রকল্পেই যাচ্ছে সিংহভাগ বরাদ্দ। অপরদিকে বিদ্যুৎ খাতে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ।
বর্তমানে আরএডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে এ খাতে যাচ্ছে ৭০ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা করা হচ্ছে।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ
অন্যান্য খাতের মধ্যে শিক্ষায় ২৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ ব্যয় করবে সরকার। এছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্তে ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বা প্রায় ৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার খাতে ১৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ, কৃষিতে ১০ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা বা ৪ শতাংশ, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদে ৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা বা ৪ শতাংশ, শিল্প খাতে ৫ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বা সোয়া ২ শতাংশ এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা বা পৌনে ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে যাচ্ছে।
তবে মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ভিত্তিক বরাদ্দে স্থানীয় সরকার বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৩১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ১১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:করোনা মহামারির মধ্যে দেশে উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেড়েই চলেছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের অর্ধেকের বেশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিলেন।
উদ্বেগের আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে একটি জরিপে যে, এই রোগে আক্রান্তদের আজীবন ওষুধ সেবন করতে হলেও আক্রান্তের ৩১ শতাংশ রোগীই মাঝপথে এসে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিচ্ছেন।
সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট এই জরিপ চালিয়েছে। মাঝপথে ওষুধ সেবন বন্ধ রাখছেন- এমন সাড়ে ৬ হাজার রোগীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের ৫ শতাংশ মানুষ অসংক্রামক এ রোগে ভুগছেন। এই রোগে আক্রান্তে ঝুঁকিতে রয়েছেন ২১ শতাংশ।
যারা আক্রান্ত তাদের একটি বড় অংশ নিয়মিত ওষুধ সেবন করে না। রোগীর সেবা ও ওষুধ নিশ্চিতে সরকারের উদ্যোগে ৮০টি উপজেলায় এই রোগের ওষুধ বিনা মূল্যে দেয়া হচ্ছে। তবে ৩১ শতাংশ রোগী নিয়মিত ওষুধ নিতে আসেন না।
কারণ জানতে সাড়ে ৬ হাজার রোগীকে ফোন করা হয়। ৮০ শতাংশের উত্তর ছিল টাকার অভাব ও দূরত্বের কারণে জেলা শহরে এসে এই রোগের বিনা মূল্যে দেয়া ওষুধও গ্রহণ করছেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঝপথে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
আরও উদ্বেগের বিষয় আক্রান্তের ৫০ শতাংশ মানুষ জানেনই না তিনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। আবার অসচেতনতার কারণে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে রোগটি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো আজ বাংলাদেশে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মেজার ইয়োর ব্লাড প্রেশার অ্যাকিউরেটলি, কন্ট্রোল ইট, লিভ লঙ্গার। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ: সঠিকভাবে পরিমাপ করুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এই রোগ অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ক্রমে বাড়িয়ে তুলছে। এটি নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ৮০টি উপজেলায় বিনা মূল্যে এই ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে ২০০ উপজেলায় এবং ২০২৪ সালে ৪০০ উপজেলায় এর আওতা বাড়ানো হবে। প্রথম পর্যায়ে উপজেলায় দেয়া হলেও ভবিষ্যতে প্রান্তিক পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ করা হবে।
করোনায় আক্রান্তের ৪০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের রোগী
সারা দেশে সাড়ে ১৯ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে বেশির ভাগেরই শরীরে আগে থেকে অন্য রোগ ছিল। এর ৪০ শতাংশই উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কভিড-১৯ সম্পর্কিত টেলিহেলথ সেন্টার মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।
টেলিহেলথ সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, বাকি ডায়াবেটিসে, অ্যাজমা, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অন্য রোগ বা কো-মরবিডিটি ছিলেন তারাই বেশি মারা গেছেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বিনামূল্য দিলেও নিয়মিত এই ওষুধ নিতে যাচ্ছেন না রোগীরা। এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত হলে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই কারণে নিজ উদ্যোগে ১৮ বছর বয়স হলে বছর দুই-একবার পরীক্ষা করতে হবে। শনাক্ত হলে নিয়ম মেনে জীবনযাপন করতে হবে। মোবাইলে আসক্ত না হলে কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।’
শিশুরাও উচ্চ রক্তচাপের রোগী
বেসরকারি সংস্থা প্রজ্ঞার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার শামীম জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আগে শুধু এই রোগটি বয়স্ক মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হলেও সম্প্রতি শিশুদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি ১৫ বছরের একটি শিশু ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা নেয়ার জন্য এসেছে। তাই এখন থেকে এটি প্রতিরোধে জোর দিতে হবে। তাই ১৮ বছর বয়স হলে প্রতিনিয়ত ব্লাড পেশার মাপবেন। ছয় মাস এক বছরের মধ্যে একবার মাপলে হবে না।’
মন্তব্য