কারিগরি সংস্কারের জন্য বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট কার্ড, এটিএম সেবা ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে।
আগামী ১৩ মে শুক্রবার ও ১৪ মে শনিবার এই দুই দিন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা করে এসব সেবা বন্ধ রাখা হবে।
বুধবার ইউসিবির পক্ষ থেকে এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত নোটিশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, কারিগরি সংস্কারের জন্য ইউসিবির ইন্টারনেট ব্যাংকিং ইউনেট, ডেবিট কার্ড, এটিএম পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস), ই-কমার্স ও ইউপে সেবা শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট এবং ১৪ মে শনিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৫টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ইউসিবি ইউনেট ও ডেবিট কার্ড সেবা বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন:রপ্তানির পর এবার আমদানি পণ্য পরিবহনেও কনটেইনার ট্রাকিং বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে ব্যাংকগুলোর কোনো আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাসেল ও কনটেইনার ট্র্যাক করতে হবে।
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট’ আমদানি মূল্য পরিশোধে ঝুঁকি কমাতে এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে পাঠিয়েছে।
এমন এক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নির্দেশনা দিল, যখন আমদানিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেকে সন্দেহ করছেন। তাই আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কনটেইনার ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে আমদানি পণ্য পরিবহনের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারবে ব্যাংকগুলো। এতে আমদানি মূল্যও পরিশোধে ঝুঁকি থাকে না। ট্রাকিংয়ে কোনো সন্দেহ হলে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ পাবে ব্যাংক। এ কারণে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ধারাবাহিক আমদানি ব্যয় পরিশোধের চাপে ডলারের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। ফলে অস্থির হয়ে গেছে ডলারের বাজার। বিক্রি করেও ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার এক দিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৮০ পয়সা। আর গত ২০ দিনে ব্যবধানে তিন দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয় ১ টাকা ৩০ পয়সা।
বর্তমানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে।
ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচা আরও চড়া দরে। মঙ্গলবার এই বাজার থেকে ১ ডলার কিনতে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০১ টাকা দিতে হয়েছে। সোমবার ৯৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছিল।
এর আগে গত ২০ এপ্রিলের এক নির্দেশনায় রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাকিং পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাজার প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে যাচ্ছে। কিছু ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকিং শুরু করেছে। কেউ কেউ আলাদা শাখা ও উইন্ডো খুলে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।
এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বেসরকারি ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (এনসিসি)। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনও মিলেছে। খুব শিগগিরই ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো খুলে গ্রাহকদের সেবা দিতে পারবে ব্যাংকটি।
এনসিসি ব্যাংকের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ।
তিনি বলেন, ‘এ বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করব। এ জন্য আমাদের একটি নির্ধারিত শাখা থাকবে। তবে গ্রাহক সব শাখায় এ সেবা নিতে পারবেন।’
বর্ষপূ্র্তি উপলক্ষে ব্যাংকটি নতুন তিনটি সেবা চালু করেছে জানিয়ে এমডি বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা বেগবান করছেন, তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা ‘এনসিসি ব্যাংক এনআরবি গৃহ ঋণ এবং এনসিসি বৈদেশিক কর্মসংস্থান ঋণ’ নামে দুটি সেবা চালু করেছি। এ ছাড়া ‘মাইক্রো এটিএম’ নামে আমাদের গ্রাহকরা বিভিন্ন আউটলেটে পস মেশিন থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।“
২০২১ সালে এনসিসি ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে জানিয়ে এমডি মামদুদুর রশীদ বলেন, ‘দেশব্যাপী ১২৫টি পূর্ণাঙ্গ শাখা এবং ছয়টি উপশাখার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহকসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আগামী দিনে দেশের শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে এনসিসি ব্যাংককে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
শেয়ারবাজারে এনসিসি ব্যাংকের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনসিসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড দেশের পুঁজিবাজারে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে ভূমিকা রাখছে।
‘আমরা শুধু মুনাফায় বিশ্বাসী না। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিগত বছরগুলোতে আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সিএসআর কার্যক্রম আরও বেশি সম্প্রসারিত করেছি। সারা দেশে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু ও করোনা মোকাবিলায় বিনা মূল্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম বিতরণ করেছি।’
ব্যাংকের খেলাপি ও মন্দ ঋণের আকার কমিয়ে আনার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে দাবি করে মামদুদুর রশীদ বলেন, ‘আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমেও ব্যাংকের পাওনা পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’
রেমিট্যান্স সম্পর্কে ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা নিরাপদ, দ্রুততম ও সহজতম উপায়ে দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এনসিসি ব্যাংক নিজস্ব ১২৫টি শাখা এবং ছয়টি উপশাখার পাশাপাশি টিএমএসএসের ৯০০টি শাখা, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ২৫৬ শাখা, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ২৫০টি শাখা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ৮৯টি শাখা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩৮৩টি শাখা তথা মোট ১ হাজার ৮৭৮টি শাখার মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ প্রদান করছি।’
ব্যাংকের এমডি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ মোতাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতনকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বেতনের চারটি গ্রেড কমিয়ে একটি করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার উন্নতির জন্য অফিসার পর্যায়ে তিনটি পদ কমিয়ে দুটি করেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি বছরের মার্চ শেষে এনসিসি ব্যাংকের আমানত ১৯ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। ঋণ দিয়েছে ১৯ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। বিনিয়োগ ৪ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মন্দ ঋণের হার ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার নাইমুল কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আশেক রহমান, মাহবুব আলম, রাহাত উল্লা খান, জাকির আনাম ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:শতভাগ ডিজিটালাইজেশনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড। সম্পূর্ণ নিজ ব্যবস্থাপনায় চালু করল হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এইচআরএমএস) সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে কর্মীদের সব তথ্য ও কাজের অগ্রগতি সহজে রিয়েলটাইমে পর্যবেক্ষণের সুবিধা পাওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার পদ্মা ব্যাংকের মিরপুর ট্রেনিং ইনিস্টিটিউটে সফটওয়্যারটির উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রিয়াজ খান।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা ব্যাংক সবসময় কর্মীদের উন্নত সেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কর্মীদের কীভাবে আরও গ্রাহকবান্ধব ও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা যায় সে চেষ্টা করে আসছে একটি দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ। আগে কর্মীদের বেতন-ভাতার তালিকা তৈরি করতে যথেষ্ট সময় ব্যয় হতো। এখন সেটা সম্ভব মাত্র এক ক্লিকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সফটওয়্যারটির মাধ্যমে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট এক ক্লিকেই জানতে পারবেন যেকোনো কর্মীর সর্বশেষ আপডেট। যার ফলে নিশ্চিত হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।’
এইচআরএম সফটওয়্যারে পাঁচটি মডিউল রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো, বেতন-ভাতার তথ্য, পিএমএস মডিউল, এইচআরআইএস মডিউল, ই-লার্নিং ও অনলাইন এক্সামিনেশন মডিউল এবং অরগানাইজেশন ও ইআর মডিউল।
ব্যাংকের এসইভিপি ও মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান এম আহসান উল্ল্যাহ খান বলেন, ‘এই সফটওয়্যার সম্পূর্ণ আধুনিকভাবে অফিস পরিচালনা করার সুযোগ করে দিল। এর মাধ্যমে কর্মীদের মেধা ব্যবস্থাপনা, উৎপাদনশীলতার উন্নতি এবং কর্মীদের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে আরো টেকসই সুবিধা দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ই-লার্নিং এবং অনলাইনে পরীক্ষা দেয়ার সুবিধাও থাকবে।’
সফটওয়্যার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের দুই উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আহসান চৌধুরী ও জাবেদ আমিন।
এ ছাড়া ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি লোপাটের জন্য আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেপ্তারের পর রোববার তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
কবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে-সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে যাদের টাকা লোপাট করে লাপাত্তা হয়েছিলেন পি কে হালদার, সেই গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার আলোচনা সামনে চলে এসেছে। পি কে হালদারের প্রেপ্তারে একটু আশার আলো দেখছেন গ্রাহকরা।
পি কে হালদার চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দখল করে বিশাল অঙ্কের এই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
এরমধ্যে একেবারেই খারাপ অবস্থা হয়েছিল পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের। এই প্রতিষ্ঠানে এক কোটি টাকা রেখেছিলেন সামিয়া বিনতে মাহবুব। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন করা হলে টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য অনেক গ্রাহকের সঙ্গে আন্দোলতে নেমেছিলেন সামিয়া বিনতে।
আন্দোলন পরিচালনার জন্য ক্ষুদ্র আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়েছিল। সেই সংগঠনের সমন্বয়কারী ছিলেন সামিয়া বিনতে মাহবুব।
পি কে হালদার গ্রেপ্তারের খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে রোববার সন্ধ্যায় তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্ধকার গুহায় একটু আলো দেখতে পাচ্ছি। আমরা এখন তাকিয়ে আছি সরকারের দিকে; আদালতের দিকে। তাকে যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আমরা যেন আমাদের টাকাটা ফেরত পাই।’
সার্বিক বিষয় নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে খুব শিগগিরই একটা সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানান সামিয়া বিনতে মাহবুব।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, থাকলে সেটা কীভাবে পাবেন-এ প্রশ্নের উত্তরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলাগুলো যদি আমরা সফলভাবে করতে পারি, তাহলে আমাদের দেশের আদালতের মাধ্যমে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পি কে হালদারের সম্পদ জব্দ করতে পারব। তারপর বিচারপ্রক্রিয়ায় যখন রায় হবে, তখন ভুক্তভোগীরা টাকা পাবেন। তবে সেটা দীর্ঘ ও জটিল আইনিপ্রক্রিয়া।’
তিনি বলেন, ‘পি কে হালদার গ্রেপ্তারের পর গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আদালতের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে আসামির (পি কে হালদার) যেসব সম্পদ রয়েছে, সেগুলো প্রথমে জব্দ করে, পরে বিক্রি করে সেই টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা হতে পারে। এসব কিছুই হবে আদালতের মাধ্যমে। কেননা, এখন অবধি পি কে হালদারের বিষয়ে যা কিছু হয়েছে, তার সব কিছুই কিন্তু আদালতের আদেশে হয়েছে।’
খুরশীদ আলম বলেন, ‘মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) ২০১২-এর আওতায় ভারতকে পি কে হালদারের বিষয়ে তথ্য দেয় দুদক। এর ভিত্তিতে ইডি অনুসন্ধান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বাংলাদেশের অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে একই দিনে ৯টি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে ইডি। ৯টি বাড়ির মধ্যে তিনটি বাড়ি তারা এক সপ্তাহ ধরে রেকি করেছিল, যার একটা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
এখন দুদকের কাজ কী হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেলন, ‘দুদকের কাজ চলছে। তিনটা মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। দুদকের এখন মুখ্য কাজ হবে, বহিঃসমর্পণ চুক্তি অনুসারে পি কে হালদারকে যদি দ্রুত বাংলাদেশে আনা যায়, তাহলে দেশে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা খুবই প্রয়োজন। কারণ, মামলায় ইতিমধ্যে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তাদের দেয়া তথ্য–উপাত্ত মিলিয়ে দেখতে হবে।
‘এ ছাড়া তার নিজেরও তো বক্তব্য আছে। এত বড় একটা আর্থিক কেলেঙ্কারি, সে কীভাবে করল, তা জানা দরকার। একা তো তার পক্ষে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নেয়া সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই তার সঙ্গে আরও অনেক রাঘববোয়াল ছিল। তারা কারা, সব বের করতে হবে। পি কে হালদারকে যদি বহিঃসমর্পণ চুক্তির মাধ্যমে দেশে আনা হয়, তখন দুদক আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পাবে।
‘এখন সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা। দুদক তো আগেই আবেদন জানিয়েছে। এখন সরকার বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। গ্রাহকদের টাকা ফেরতসহ বিচার প্রক্রিয়া সব কিছুই নির্ভর করছে এখন পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার উপর।’
ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ, বসবাস, বেনামে সম্পত্তি কেনা, আইনবহির্ভূতভাবে অর্থ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা—এসব অভিযোগে পি কে হালদার ও তার পাঁচ সহযোগীকে শনিবার গ্রেপ্তার করে ইডি।
খুরশীদ আলম জানান, দেশে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা আছে। তার মধ্যে ৩৬টি মামলা অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের।
সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম পি কে। তিনি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। আবার দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের একজন। এমন চরিত্রের আর একজনকেও এ দেশে পাওয়া যায়নি।
শিক্ষাজীবন শেষে পি কে হালদার যোগ দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৯ সালে তিনি অদৃশ্য আশীর্বাদে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে কমপক্ষে চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) মালিকানায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে। সেই চার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এখন চরম খারাপ। একটি বিলুপ্তের পথে, বাকি তিনটিও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। নানা কৌশল করে এসব প্রতিষ্ঠান দখল করেন পি কে হালদার। প্রতিষ্ঠান দখল করার জন্য নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলেছেন, শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন, দখল করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে টাকাও সরিয়েছেন। এমনকি দেশের বাইরেও কোম্পানি খোলেন।
প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের সময় পি কে হালদার প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। আর এসব কাজে তাকে সব ধরনের সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) —এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনেই সবকিছু ঘটেছে।
২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে যখন তার দখল করা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হতে শুরু করে, তখন পি কে হালদার ভারতে পালিয়ে যান। পরে বসবাস শুরু করেন কানাডা ও সিঙ্গাপুরে। এরপর আবার চলে আসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।
পি কের দখল করা প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারেনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এর প্রভাব পড়ে পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে, যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
চার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়েছিল পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। এর প্রভাব পড়ে পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে, যা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
সে কারণে পরে আদালতের নির্দেশে পিপলস লিজিংকে নতুন করে পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ চিহ্নিত করতে কাজ শুরু হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অবসায়নের প্রক্রিয়া। আর আমানতকারীরা এখনও ঘুরছেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দ্বারে দ্বারে।
তবে, পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আদালতের নির্দেশে বয়স্ক, অসুস্থ আমানতকারীরা তাদের মোট আমানতের ১০ শতাংশ অথবা পাঁচ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন।
২০২০ সালের শেষের দিকে আন্দোলনেও নেমেছিলে আমানতকারীরা। মিছিল-সমাবেশ, মানববন্দন, বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বারকলিপিও দিয়েছিলেন তারা। হাইকোর্টের নির্দেশে কয়েকজন আমানতকারী আদালেতে উপস্থিত হয়ে টাকা ফেরত না পেয়ে তাদের কষ্ট ও মানবেতর জীবনযাপনের কথাও বলেছিলেন।
পিপলস লিজিংয়ের ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সংগঠনের সমন্বয়কারী সামিয়া বিনতে মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ও আমার স্বামী বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করতাম। সেখান থেকে পাওয়া টাকা ও গয়না বিক্রি করে এক কোটি টাকা পিপলস লিজিংয়ে রেখেছিলাম। ছয় মাস পর একটা জমি কেনার জন্য টাকাটা জমিয়েছিলাম। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অর্থাভাবে আমার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার ছেলেকে স্কুলে দিতে পারছি না। মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এখন একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
‘অন্য গ্রাহকরা একটু আশান্বিত হয়েছেন। সবাই যোগাযোগ করছেন। আমরা খুব শিগগিরই বসবো; বসে ঠিক করব কী করা যায় এখন। তবে সরকার প্রতি আমাদের অনুরোধ, যেহেতু আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, এখন যেনো আমাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়।’
আরও পড়ুন:পাচার হয়ে যে টাকা দেশের বাইরে গেছে তা ফেরত আসবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিদেশে টাকা রেখে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি।’
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-২০’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এমন সুবিধা দেব, যাতে সবাই টাকা নিয়ে ফিরে আসেন।’
সভায় বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা কমাতে ব্যাংকগুলোকে একক দাম বেঁধে দেয়ার দাবি জানান ব্যাংকাররা। যদিও তা উড়িয়ে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্যের অস্থিরতায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তাই এখন সর্বোচ্চ প্রাধান্য বৈধপথে প্রবাসী আয় আহরণ।
অনুষ্ঠানে ২০১৯ ও ২০২০-এর জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৬৭টি পুরস্কার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যক্তিপর্যায়ে তিন ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেয়া হয়। এগুলো হলো সাধারণ পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী।
এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী ব্যাংক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রবাসীদের মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউস এই দুই ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হয়।
২০১৯ এবং ২০২০ সালে ব্যক্তিপর্যায়ে সাধারণ পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে ৫৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
সপ্তমবারের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ আয়োজন করেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ থেকে যে অর্থ পাচার হচ্ছে তা জানা থাকলেও উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।’
এর আগেও পাচার হওয়া অর্থ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে পাচার অর্থ ফেরত আনা বা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কোনো কর্তৃপক্ষকে। আদালত কয়েকজনকে শাস্তি দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ। আমাদের কোনো হার্ড লোন নেই, সব সফট লোন। আমাদের শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মেলানো যাবে না।’
অবৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠালে কোনো না কোনো সময় প্রশ্নবিদ্ধ হবে, তাই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা, ইউরোপের অনেক দেশে এখন টাকা রাখলে কমিশন দিতে হয়। এখন আর সুদ পায় না। তাই যেকোনো উপায়েই হোক বাংলাদেশে টাকা চলে আসবে। কারণ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোয় টাকা রাখলে বেনিফিট পাওয়া যায়।’
অনুষ্ঠানের প্রবাসীরা ওয়েজ আর্নার বন্ডের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানোর দাবি জানালে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। আশা করছি প্রবাসীদের স্বার্থে ইতিবাচক সাড়া পাব। আপনারা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাবেন। আমরা আপনাদের সাপোর্ট দেব, আপনারা দেশকে সাপোর্ট দেবেন।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘হুন্ডি বাড়ছে, এই কথা ঠিক নয়। বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্যের অস্থিরতায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তাই এখন সর্বোচ্চ প্রাধান্য বৈধপথে প্রবাসী আয় আহরণ। এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা কমাতে ব্যাংকগুলোকে একক দাম বেঁধে দেয়ার দাবি জানান ব্যাংকাররা। যদিও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেননি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকাররা বলেন, করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় হুন্ডির প্রবণতা বেড়েছে। খোলাবাজারে ডলারের বিপরীতে বাড়তি অর্থ পাওয়ায় অনেকেই বেছে নিচ্ছেন অবৈধ পথ। পরিস্থিতির লাগাম দিতে তাই এক দেশ একক ডলারের রেট বেঁধে দেয়ার দাবি তাদের।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বলেন, ‘রেমিট্যান্স ব্যবস্থায় এক্সচেঞ্জ রেট গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশের সব ব্যাংক এক রেট করা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংককে বললে তারা বলে বাফেদাকে বলেন, কিন্তু বাফেদার কথা কে শুনবে, এরা তো সংগঠন৷ সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংককেই এ বিষয়ে নিদের্শনা দিতে হবে।
‘ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডি রেট বেশি দিলে ব্যাংকে টাকা পাঠায় না। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রেট দিলে আমরা পরিপালন করি, অন্য যারা করছে না তারা রেমিট্যান্স বেশি পায়। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই যেকোনো নিয়ম করলে যাতে সবাই পরিপালন করে সেই ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মানতে গিয়ে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আমদানি চাহিদা বাড়ছে, রেমিট্যান্স কমেছে। রেমিট্যান্সের সুবিধা কীভাবে বাড়ানো যায়, তা ভেবে দেখতে হবে। কিছু ব্যাংক আগ্রাসী রেট ধরে দিচ্ছে। এটায় মিডল ম্যান লাভবান হচ্ছে, প্রবাসীরা হয় না। সব ব্যাংকে এক রেট হওয়া উচিত।
‘করোনার দুই বছরে বিশ্ব যখন টালমাটাল, তখনও বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখছে প্রবাসী আয়। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি। তবে তা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশের বেশি কম।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাছের।
বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তি ও সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হচ্ছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী হিসেবে মোট ১৯৯ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:আইনি সীমার অতিরিক্ত ঋণ দেয়ায় বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংককে (ইবিএল) করা জরিমানা মওকুফের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় ব্যাংকটির জরিমানা মওকুফের এ আবেদন করা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে সায় দেয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে সভায় পরিচালক, ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
সীমার অতিরিক্ত ঋণ দেয়ায় ইস্টার্ন ব্যাংককে গত ৩ এপ্রিল পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। জরিমানার ওই অর্থ ১৪ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। তা না হলে ব্যাংকটির হিসাব থেকে কেটে নেয়া হবে বলে জানিয়ে তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয়া হয়।
ব্যাংকটি জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করে তা মওকুফের আবেদন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় তা বাতিল করা হয়।
জানা গেছে, ইবিএল তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইবিএল ফাইন্যান্স (এইচকে) লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজকে সীমা অতিক্রম করে ঋণ দিয়েছে। একক গ্রাহকের ঋণসীমা অতিক্রম করে ঋণ দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছিল, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(খ) ধারা লঙ্ঘন ও এই ঋণ অনুমোদনে একক গ্রাহক ঋণসীমা অতিক্রমের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নেয়া হয়নি। এ নিয়ে ব্যাংকটি গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ও গত ৩ ফেব্রুয়ারি ব্যাখ্যা দিলেও তা গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬(খ) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে দেয়া সব ঋণসুবিধার পরিমাণ ওই ব্যাংকের রক্ষিত মূলধনের শতকরা ২৫ শতাংশের বেশি হবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ইবিএল দুটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সীমার অতিরিক্ত ঋণ দেয়, তার মধ্যে ইবিএল ফাইন্যান্স (এইচকে) লিমিটেড ঋণপত্রে উপদেশ, রপ্তানি নথিপত্র ব্যবস্থাপনা ও রপ্তানি খাতে অর্থায়ন করে থাকে। আর ইবিএল সিকিউরিটিজ শেয়ারবাজারে লেনদেনের পাশাপাশি গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য