ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটার মচ্ছবে সিন্ডিকেটের কেউই পিছিয়ে নেই। আমদানিকারক, মিল মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতার সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে তৎপর। এজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী গোপনে ভোজ্যতেলের মজুত গড়ে তুলেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। স্থানে স্থানে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। মঙ্গলবার দেশের ৭ জেলায় অভিযান চালিয়ে মজুত করে রাখা ১ লাখ ৬৫ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজশাহীতে ৯২ হাজার লিটার, কুষ্টিয়ায় ৪০ হাজার লিটার, পাবনায় ১৮ হাজার লিটার, সিলেট ৫ হাজার লিটার, গাজীপুরে ২ হাজার ৫৮ লিটার, সিরাজগঞ্জে ৬ হাজার লিটার এবং রংপুরে ৩শ’ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। একইসঙ্গে মজুতদারির দায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে।
রাজশাহী
রাজশাহীতে অবৈধ মজুতের ২০ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দের এক দিন পর আরও ৯২ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। পরে তা খোলাবাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।
পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে মঙ্গলবার বিকেলে যৌথ অভিযানে ৪টি গুদাম থেকে এসব তেল জব্দ করে জেলা ও পুঠিয়া থানা পুলিশ।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাজারে বেলা ৩টার পর অভিযান শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত আমরা ৯২ হাজার লিটারের তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। এসব তেলের মধ্যে বেশির ভাগই সয়াবিন। কিছু পাম অয়েলও রয়েছে।’
এর আগে সোমবার রাত ৮টার দিকে তাহেরপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাজারপাড়া গোডাউন মোড়ে অভিযান চালিয়ে একটি গুদাম থেকে ২০ হাজার লিটারের বেশি ভোজ্যতেল জব্দ করে পুলিশ। এ সময় গুদামের মালিক শহিদুল ইসলাম স্বপনকে আটক করা হয়।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার এলাকায় একটি গুদাম থেকে ১৯৯টি ব্যারেলে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। এতে গুদাম মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মেসার্স মা ফুড প্রোডাক্টস নামের ওই প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে অবৈধ মজুতের এসব তেল জব্দ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়।
কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল অভিযান পরিচালনা করেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের মজুত ও দাম পর্যবেক্ষণ করতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বড় বাজার এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মেসার্স মা ফুড প্রোডাক্টস নামের ওই প্রতিষ্ঠানের গুদামে ১৯৯টি ব্যারেলে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। তেল বিক্রি না করে মজুত রাখায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
এদিকে অভিযানে শহরের পৌর বাজারে বোতলের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করায় দুই দোকানিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পাবনা
ঈশ্বরদী বাজারের একটি স্টোরে অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার লিটারের বেশি ভোজ্যতেল জব্দ করার কথা জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শহরের নূরমহল্লা মাতৃমন্দিরের সামনে শ্যামল স্টোরের গোডাউনে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে অভিযান চালানো হয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহুরুল ইসলাম।
তিনি জানান, অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার লিটার খোলা (লুজ) সয়াবিন তেল, ১ হাজার ২৪৪ লিটার বোতলজাত তেল ও ৭ হাজার লিটার সরিষার তেল জব্দ করা হয়েছে। ঈদের আগে এসব তেল সংগ্রহ করে নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেছিলেন শ্যামল স্টোরের মালিক শ্যামল দত্ত পাল। এ জন্য তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে কেনা দামে এসব তেল বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর
গাজীপুরে একটি দোকানের গুদাম থেকে অবৈধভাবে মজুতের দুই হাজার ৫৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। এতে গুদাম মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মহানগরীর বোর্ডবাজার এলাকার মনির ট্রেডার্স নামে একটি দোকানের গুদামে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এসব তেল জব্দ করা হয়।
সিলেট
সিলেট নগরের বৃহৎ পাইকারি বাজার কালিঘাটের একটি গুদামে মজুত করা প্রায় ৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এসব তেল জব্দ করেন ভোক্তা অধিপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে এই তেল বাজার মূল্যে সাধারণের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফখরুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন সহকারী পরিচালক (মেট্রো) শ্যামল পুরকায়স্থ।
শ্যামল পুরকায়স্থ বলেন, গোপন খবরের ভিত্তিতে কালিঘাটে মাহের ব্রাদার্স নামক দোকানের গুদামে মজুদ করে রাখা ৫ টন সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
সিরাজগঞ্জ
উল্লাপাড়ায় মজুত করে রাখা ৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তেল জব্দ করার পাশাপাশি তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে জব্দ তেল খোলাবাজারে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি জানান, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সয়াবিন তেল মজুদ রাখা হয়েছে এমন অভিযোগে মঙ্গলবার উল্লাপাড়া উপজেলার পাচলিয়া বাজারের সততা স্টোরে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় মজুদকৃত অবস্থায় প্রায় ৫ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন তেল ও প্রায় ১ হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। মজুতদারির দায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও খোলা বাজারে বোতলকৃত সয়াবিন তেল বিক্রি করা হয়।
একই বাজারের সাহা স্টোর ও সিয়াম স্টোরে সয়াবিন তেল মজুদ এবং তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কিনতে ক্রেতাকে বাধ্য করার অভিযোগে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রংপুর
রংপুরের মাহিগঞ্জের মোমেনা স্টোরে অভিযান চালিয়ে ৩০০ লিটার সয়াবিন জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার। পরে সেগুলো স্থানীয়দেন মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়।
তবে এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিক্রেতা। তার দাবি, তিনি পাইকারি ব্যবসায়ী। ৩০০ লিটার তেল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওই অভিযান চালানো হয়।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘এই সয়াবিন মজুত করে বেশি দামে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল।’
স্থানীয় প্রতিনিধি আহসান হাবীব অপু (রাজশাহী), জাহিদুজ্জামান (কুষ্টিয়া), দেবাশীষ দেবু (সিলেট), ইমরোজ খন্দকার বাপ্পি (পাবনা), ইফতেখার রায়হান (গাজীপুর), গোলাম মোস্তফা রুবেল (সিরাজগঞ্জ) ও রফিকুল ইসলামের (রংপুর) পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজারে আগুন। চলছে চরম নৈরাজ্য। বেপরোয়া সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় কেজিতে বেড়েছে ১৩০ টাকা। দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পেঁয়াজের দামই বেড়েছে।
শনিবার পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা। আগের দিন ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তারপরও বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে পেঁয়াজ।
জানা গেছে, আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত। এ ঘটনার জেরে দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। তারা বলছেন, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু করেছে। তারা এক কেজি পেঁয়াজে ১৩০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন।
অপরদিকে ব্যবসায়ীরা অজুহাত দিচ্ছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার কারণে বাজারে ব্যবসায়ীদের হাতে তেমন পেঁয়াজ নেই। যেহেতু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম, তাই বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এজন্য পাইকাররা দেশি পেঁয়াজ ছাড়ছে না। রিয়াজুদ্দিন বাজারেও ভোরে যে দাম ছিল, সকাল ৯টায় তা কেজিতে ৭০/৮০ টাকা বেড়ে গেছে।
কাজির দেউরি বাজারের ব্যবসায়ী হাবিব মিয়া বলেন, ‘ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে এমন খবরের কারণে পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় কিনছি।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ তেমন একটা নেই। ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তাই তাদের দেশেও পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রন দেশটি রপ্তানিও বন্ধ করে দিয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়ছে।
ভোক্তারা বলছেন, ভারত মাত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে এখনই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আড়ত বন্ধ। তারা বলছে যে আড়তে পেঁয়াজ নেই। অথচ প্রতিটি আড়তে পেঁয়াজ আছে। তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
যে গুটিকয় আড়ত বিক্রি করছে তা-ও চড়া দামে।
বর্তমানে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। অথচ দুদিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। অপরদিকে খুচরা বাজারে একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। অর্থাৎ একদিনেই কেজিতে দাম বেড়েছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের এক আড়তদার বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে যেসব পেঁয়াজ রয়েছে সেগুলো বাজার পর্যন্ত আসতে খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পরপরই প্রতি কেজিতে ৮০-৯০ টাকা মুনাফা করছেন আমদানিকারকরা।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউরি বাজার, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই পেঁয়াজ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শনিবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। কোনো দোকানেই এর কমে পেঁয়াজ বিক্রি হয়নি। অনেক দোকানে পেঁয়াজই নেই।
বহদ্দারহাটে বাজার করতে আসা মামুন মিয়া বলেন, ‘বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা কেজির নিচে নেই। আর ভারতের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি। দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কিনলাম ১২০ টাকা করে। রাতের মধ্যেই বেড়ে গেল ১২০ টাকা। এটা কেমন কথা! দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলবো?’
চাক্তাই আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। সেখানেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ায় এখানে দাম বাড়ছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ানো বা কমানোর ব্যাপারে আড়তদারদের কোনো হাত নেই। আমদানিকারকরা যে দামে বিক্রি করতে বলেন সেই দামেই আড়তদাররা বিক্রি করেন।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা একেক সময় একেক অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করেন। এখন বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে বলে দাম বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আছে, সেগুলো তো দুই সপ্তাহ আগে আমদানি করা। প্রশাসনের উচিত অভিযান পরিচালনা করে পেঁয়াজের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য যাচাই করা এবং সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেয়া।’
গত কিছুদিন ধরেই দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের খুচরা দর সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এ দরে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়নি। পরে সরকার পেঁয়াজ আমদানি উন্মুক্ত করে দিলেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর আকস্মিকভাবে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
উত্তরের জেলা দিনাজপুরে এক দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে এক দিনের ব্যবধানে দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।
এ দিকে বাজারে সাংবাদিকদের দেখে দোকান বন্ধ করে চলে যাচ্ছেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা।
শনিবার সকাল ১১টায় দিনাজপুর শহরের সবচেয়ে বড় বাজার বাহাদুর বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। কয়েকজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর কাছে পেঁয়াজের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা একে একে দোকান বন্ধ করে চলে যান।
এমনকি কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি। দোকান বন্ধ করার সময় কয়েকজন বলেন, ‘দোকান বন্ধ করে রাখব, তারপরও পেঁয়াজ বিক্রি করব না।’
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার সকালে ওই বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি এবং দেশি জাতের পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছি, কিন্তু ভারত থেকে আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর পরই এই বাজারে ভারতীয় ও দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে।
এই বাজারে শনিবার সকালে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশি জাতের পেঁয়াজ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে। আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর পরই স্থলবন্দরের পাইকারি বাজারে আকস্মিকভাবে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
স্থলবন্দরে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০ টাকা কেজি দরে, কিন্তু আমদানি বন্ধের ঘোষণার পর শনিবার সকালে এই বাজারে পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাট-বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের পর পরই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছে। আমরা সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে অভিযান চালাচ্ছি। যে সকল অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জলবায়ুকেন্দ্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অর্জনের জন্য প্যারিসে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, ২০২৩-২০৫০ এবং জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) ২০২১ হালনাগাদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ৪০০ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি ডলার নীতিভিত্তিক ঋণ (পিবিএল) অনুমোদন করেছে।
শুক্রবার এই অনুমোদন দেয়া হয় বলে ইউএনবির এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
ম্যানিলাভিত্তিক আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংকটি বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে বার্ষিক গড় ক্ষতি প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণ হলো ৭০০ মিলিয়ন ডলার জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম সাবপ্রোগ্রাম।
এডিবি জানায়, এই ঋণ বাংলাদেশকে তার জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা শক্তিশালী করতে, কম কার্বন অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে, এর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে এবং সরকারের জলবায়ু কর্মে মূলধারার লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করবে।
এডিবির প্রিন্সিপাল পাবলিক ম্যানেজমেন্ট ইকোনমিস্ট আমিনুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুর প্রভাব বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। জলবায়ু কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে অর্থায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এডিবি এই অঞ্চলের জলবায়ু ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশকে তার প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্মসূচি জলবায়ু অর্থায়নকে একীভূত করার জন্য একটি সক্ষম প্রাতিষ্ঠানিক ও নীতিগত পরিবেশ তৈরি করবে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এজেন্ডায় জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে অগ্রাধিকার দেবে এবং কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন ও অবকাঠামো, নগর উন্নয়ন এবং জ্বালানিসহ জলবায়ু-সমালোচনামূলক খাতে সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করবে।’
এ ছাড়া সম্প্রতি কপ২৮-এ উদ্বোধন হওয়া ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন অংশীদারত্ব’ কার্যকর করতে এই কর্মসূচি সরকারকে নিবিড়ভাবে সহায়তা করবে।
এটি সরকারি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সম্পদ বরাদ্দকরণের ক্ষেত্রে জলবায়ু অগ্রাধিকারকে মূলধারায় আনা এবং সবুজ বন্ড ও টেকসই আর্থিক নীতির মাধ্যমে জলবায়ু অর্থায়নের গতিশীলতা সমর্থন করে।
সেক্টরাল পর্যায়ে প্রোগ্রামটি স্মার্ট জলবায়ু এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক কৃষি চর্চাকে উৎসাহিত করে। বিশেষ করে যেগুলো নারী কৃষকদের পক্ষে সৌর সেচ পাম্পগুলোর অভিযোজন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক অবকাঠামো নকশা ও পরিকল্পনা প্রবর্তন এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের অভিযোজনের জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো ও গণপরিবহন বহরে বৈদ্যুতিক বাসের প্রবর্তন করে।
এ ছাড়াও, বন্যা কমাতে নগর পৌরসভার জন্য জলবায়ু সহনশীল শহরের কর্ম পরিকল্পনা এবং উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রচারে সহায়তা করে এডিবি।
২০২১ সালের অক্টোবরে এডিবি ঘোষণা করেছে, এটি ২০১৯ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত তার উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়ন ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দেয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়িয়েছে। এটি নতুন জলবায়ুভিত্তিক প্রযুক্তির অভিগম্যতাকে প্রসারিত করবে এবং জলবায়ু অর্থায়নের দিকে ব্যক্তিগত পুঁজিকে সঞ্চয় করবে।
আরও পড়ুন:‘প্লে গলফ লিভ লং’ স্লোগানকে সামনে রেখে বর্ণিল আয়োজনে চলছে বসুন্ধরা কাপ গলফ টুর্নামেন্ট।
আয়োজনের দ্বিতীয় দিনেও গলফারদের সমাগমে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে গলফ ক্লাবে।
চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবে বৃহস্পতিবার শুরু হয় দুই দিনব্যাপী এ টুর্নামেন্ট।
এ উপলক্ষে নয়নাভিরাম গলফ ক্লাব এলাকাটি দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয়েছে।
বেলুন উড়িয়ে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবিজি বসুন্ধরার পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহিউদ্দিন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন ৭ এডিএ ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ভূঁইয়া, কর্নেল ইমরুল, অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম, নির্বাহী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. মোকাদ্দেস হোসেন, রুবাইয়াত তানভীরসহ অনেকে।
এবিজি বসুন্ধরার পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘গলফের সঙ্গে অনেক দিন ধরে আছে বসুন্ধরা। আমাদের টি স্পোর্টস আছে। যদি আমরা গলফের কনটেন্ট টেলিকাস্ট করতে পারি, তাহলে বেশি মানুষ উৎসাহিত হবে। আমরা এশিয়ান গলফ টুর্নামেন্ট করেছি কুর্মিটোলায়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের সঙ্গে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হচ্ছে। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়েছি। চট্টগ্রামে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আজকের পরিবেশ গলফের জন্য ভালো। বেশি রোদ নেই।’
এবারের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে সিনিয়র, লেডি ও জুনিয়র গ্রুপে ২৩১ জন গলফার নিবন্ধন করেছেন।
সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার এবং ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের সভাপতি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবিজি বসুন্ধরার পরিচালক মোস্তফা আজাদ মহিউদ্দিন।
এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবিজি বসুন্ধরা ও পকেটের পৃষ্ঠপোষকতায়।
আরও পড়ুন:আগামী বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অনুষ্ঠেয় লোকসভা নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৪ সালের মার্চ নাগাদ এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফরেইন ট্রেডের (ডিজিএফটি) বৃহস্পতিবার জারি করা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পেঁয়াজ রপ্তানি নীতি ‘অবাধ’ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার কার্যকর হলেও তিনটি শর্তে পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে।
এতে বলা হয়, প্রজ্ঞাপন জারির আগে জাহাজে বোঝাইকৃত পেঁয়াজ; পরিবহন মূল্য পরিশোধ, পেঁয়াজ বোঝাইয়ের জন্য জাহাজের ভারতের বন্দরে আগমন ও প্রজ্ঞাপনের আগে জাহাজগুলোর রোটেশন নম্বর বরাদ্দ এবং প্রজ্ঞাপনের আগে পেঁয়াজের চালান কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর ও নিবন্ধিত হলে পণ্যটি রপ্তানি করা যাবে।
ভারতজুড়ে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজের গড়মূল্য ছিল ৫৭ দশমিক ১১ রুপি। এ দর এক বছর আগের এ সময়ের তুলনায় ৯৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুন:অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ ধরে বিশ্বব্যাপী তৈরি হয় ডলার সংকট। বিশ্ব বাণিজ্যের বড় অংশই যেহেতু নিয়ন্ত্রণ হয় ডলারে, সেহেতু যুদ্ধ ও করোনা মহামারিকে পুঁজি করে বাড়তে থাকে মুদ্রাটির চাহিদা।
করোনা মহামারি-পরবর্তী বাংলাদেশেও বেড়ে যায় আমদানি চাহিদা। তাতে করে প্রয়োজন বাড়ে ডলারের। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে দফায় দফায় বিক্রি করতে হয়েছে ডলার। ফলে দুই বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ নেমে আসে প্রায় অর্ধেকে।
তবে ডলার সংকট কিংবা রিজার্ভ কমে যাওয়ার দুশ্চিন্তা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে গভর্নর হিসেবে আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পরই অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে নেয়া হয় বেশ কিছু পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিলাসি পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করে নির্দেশনা দেয় ব্যাংকগুলোকে। সেসব পদক্ষেপের সুফল মিলতে শুরু করেছে। আমদানি ও রপ্তানির ঘাটতি পূরণে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে তাদের নেয়া পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বলছে, গেল চার মাসে বাণিজ্য ঘাটতি কমে হয়েছে ৩৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ৯৬২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের চার মাসের হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
তবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি, ১৮২ কোটি ডলার। অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও সার আমদানির প্রভাবে এটা বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য ঘাটতি কমার ক্ষেত্রে বড় অবদান রেখেছে আমদানি নিয়ন্ত্রণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশে মোট আমদানি হয়েছে ২ হাজার ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে তা ছিলো ২ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চার মাসে আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অন্যদিকে একই সময়ে রপ্তানি থেকে মোট আয় এসেছে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ছিলো ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ রপ্তানিতে বড় কোনো প্রবৃদ্ধি না হলেও বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি বাড়ানো গেলে বাণিজ্য ঘাটতি আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কোনো আমদানিকারক যেন পণ্যের বাড়তি দাম দেখিয়ে আমদানি করতে না পারে সেদিকেও রয়েছে কঠোর নজরদারি।
‘প্রতিটি ব্যাংককে আমরা সতর্কতার সঙ্গে আমদানির ঋণপত্র খুলতে বলেছি। আমদানিতে যেন কোনোভাবেই কোনো মিথ্যা তথ্য না আসে সেদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর নজরদারি করছে। শুধু তাই নয়, আমদানির আড়ালে যেন কোনোভাবেই অর্থ পাচার না হয় সেদিকেও আমাদের নজরদারি রয়েছে।’
তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এছাড়া দাম বাড়তি মনে হলে তা সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এজন্য আমদানি কিছুটা কমে এসেছে।
আমদানি কমানোর প্রবণতা অব্যাহত থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা কোনো ভুল দামে পণ্য আমদানি করতে দেবে না। আমার মনে হয় এতে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ঘাটতি কমে আসবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি কমে ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এটা ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ছিলো ১ হাজার ৭১৫ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যায় ২০২০-২১ অর্থবছরে। করোনা মহামারি শুরুর প্রথম বছরে বাণিজ্য ঘাটতি সব রেকর্ড ভেঙে ছাড়িয়ে যায় ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলারের ঘর। সে হিসাবে গত অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক হয় বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি অর্থবছর শেষে তা আরও কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তবে এর প্রভাবে যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কমে না আসে সেদিকে নজর দেয়ার পরামর্শ তাদের।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও দ্য ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অফ বাংলাদেশের (আইসিএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন এফসিএ বলেন, ‘রিজার্ভের কথা চিন্তা করে আমদানি কমিয়ে আনতে হবে; সেটা ধীরে ধীরে হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল আমদানি করতে না পারলে রপ্তানিও কমে আসবে।’
তার পরামর্শ, আমদানির আড়ালে যেন অর্থ পাচার না হয় সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ল্যান্ড ডেভেলপার, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা হাউজিং জিতল মর্যাদাপূর্ণ ‘ওয়ার্ল্ড বিজনেস আউটলুক অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’। এই পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে বসুন্ধরা হাউজিং বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্ভাবনী ল্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃতি পেল যা রিয়েল এস্টেট সেক্টরের জন্য নতুন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
গত ২৫ নভেম্বর থাইল্যান্ডের ব্যাংককের কুইন্স পার্কের ম্যারিয়ট মারকুইস-এ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এই পুরস্কারটি ডিপার্টমেন্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড প্রমোশন (ডিআইটিপি) থেকে তুলে দেন নাটিয়া সুচিন্দা এবং পুরস্কারটি গ্রহণ করেন জনাব বিদ্যুৎ কুমার ভৌমিক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান (বিক্রয় ও বিপণন), বসুন্ধরা গ্রুপ।
এই পুরস্কারটি একটি আধুনিক এবং গতিশীল জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরির জন্য বসুন্ধরা হাউজিং-এর অবদানকে তুলে ধরে, যা ঢাকায় প্রথম পরিকল্পিত এবং একমাত্র রাজউক-অনুমোদিত আধুনিক স্মার্ট সিটি।
মন্তব্য