চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের বিশ্লেষণ করে জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধির এ হিসাব তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত।
পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। করোনার এই পরিস্থিতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার অনেক ভালো। মার্চ পর্যন্ত ৭ দশমিক ২৫ হলে জুন শেষে এটা আরও বাড়তে পারে, ৭ দশমিক ৫ শতাংশও হতে পারে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে।’
বিবিএসের হিসাব বলছে, এই অর্থবছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বা ৪১৬ বিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। করোনার কারণে এর আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার নেমেছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে।
জিডিপির হার করোনার আগের অবস্থায় এসেছে, তাহলে কি দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হয়েছে? এমন প্রশ্নে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘করোনা থেকে অর্থনীতির পুরোটা পুনরুদ্ধার হয়নি। তবে বৃত্তের বাইরে বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে।
‘গত দুই বছরে আমাদের রেমিট্যান্স বেড়েই চলেছে। রপ্তানি আয় ও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তা ছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির বাড়ছে। আমরা আশা করছি, বছর শেষে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে।’
আরও পড়ুন:আগামী অর্থবছরের জন্য আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে বড় অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে রয়েছে বড় অংকের বরাদ্দ। এডিপি বরাদ্দে সব চেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প।
মঙ্গলবার এনইসি বৈঠকে নতুন এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে অংশ নেয়।
এবারের এডিপিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি -৪) পেয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৮ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রজেক্ট, প্রায় ৬ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্পের অন্যগুলো হচ্ছে,
হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়), প্রায় ৬ হাজার ১৯ কোটি টাকা; পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, প্রায় ৫ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা; কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ডব্লিউবি - জিওবি), প্রায় ৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ, প্রায় ৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা; ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, প্রায় ৩ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা; এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া, প্রায় ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা এবং ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬), প্রায় ২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা।
শীর্ষ বরাদ্দে না থাকলেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পদ্মা সেতু পাচ্ছে ২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। শেষ পর্যায়ে থাকা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প পাচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর সংশ্লিষ্ট দুই প্রকল্প পাচ্ছে ৮০০ কোটি টাকা। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার রেল প্রকল্প পাচ্ছে ১২০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনামন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো হয়েছে। আগে কারিগরি প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেকোনো অংকের প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষমতা ছিল পরিকল্পনামন্ত্রীর। এখন তা কমিয়ে ৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নতুন পরিপত্রে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে নতুন পরিপত্রে।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে নতুন পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হাসতে হাসতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমার ক্ষমতা কমানো হয়েছে, আমার ডানা কাটা হয়েছে।’
পরিপত্রে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আগে যেকোনো কারিগরি প্রকল্পের ক্ষেত্রে যেকোনো অংকের প্রকল্প অনুমোদন দিতে পারতেন পরিকল্পনামন্ত্রী, এখন সেটা ৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। ৫০ কোটির বেশি কোন কারিগরি প্রকল্প হলে তা অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করতে হবে।’
অর্থাৎ এখন থেকে কারিগরি প্রকল্প কিংবা বিনিয়োগ প্রকল্প সবক্ষেত্রেই ৫০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্পের ব্যয় হলেই তা একনেকে অনুমোদন নিতে হবে।
পরিপত্রের অন্যান্য পরিবর্তন বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বিষয়ে আগে উদ্যোগী মন্ত্রণালয় দুই দফায় দুই বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারত। এখন মন্ত্রণালয় এক বছর বাড়াতে পারবে। এর বেশি প্রয়োজন হলে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে আসতে হবে।
‘এডিপি রিভিউ সভা যেগুলো উদ্যোগী মন্ত্রণালয় করে থাকে, সেগুলোর বিষয়ে ক্লিয়ার কোনো ইন্সট্রাকশন ছিল না। এখন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রতি মাসে অন্তত একবার সভা করতে হবে সচিবের নেতৃত্বে। প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রতি ছয় মাসে একবার এসব মিটিং পরিবীক্ষণ করবেন।’
সচিব বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রকল্পের ক্ষেত্রে আগে একবার মেয়াদ বৃদ্ধির সুযোগ ছিল। এখন সেটা বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনবোধে একের অধিক বার মেয়াদ বাড়ানো যাবে।’
দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা ছিল, সেগুলো নতুন পরিপত্রে সংযোজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমালোচকদের ‘অর্বাচীন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মিথ্যে দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্তের চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।’
এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সমালোচকদের দরকার না থাকলেও দেশের মানুষের জন্য দরকার আছে।’
যারা বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনা করেন তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা উচিত বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তার ধারণা, ‘এর মধ্য দিয়ে সমালোচকরা বুঝতে পারবেন বিদ্যুৎ কতটা প্রয়োজনীয়।’
ঢাকার শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দিয়েছেন। গণভবনপ্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভার সভাপতিত্ব করেন সরকারপ্রধান।
পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে ছড়ানো নানা কথার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের সমালোচনা ৪০ হাজার কোটি টাকা নাকি আমরা ধার করেছি। যারা এই কথাগুলো বলছেন, তাদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই, পদ্মা সেতুর একটি টাকাও কারও কাছ থেকে আমরা ঋণ নিইনি, ধার করিনি। এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এটা তাদের জানা উচিত।
‘একেবারে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে আমরা তৈরি করছি। তারা অর্বাচীনের মতোই একেকটা কথা বলবে, আর মিথ্যে বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, এটা কিন্তু গ্রহণ করা যায় না।’
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কথা। তারপর আসল পদ্মা সেতুর রেললাইন ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে নির্মাণ করার কী দরকার ছিল? কারা চলবে এ রেললাইনে।
‘আমি অপেক্ষা করছি, রেললাইন যখন চালু হবে তখন তারা চলে কি না। এই মানুষগুলোকে আমার মনে হয় ধরে নিয়ে দেখানো দরকার যে রেলসেতুতে মানুষ চলে কি না।’
পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতি বেগবান হবে বলেও মনে করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই একটা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যে জেলাগুলো, অঞ্চলগুলো আছে, সেখানে অর্থনীতিতে যে গতিশীলতা আসবে, এই মানুষগুলোর চলাচল, পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে- সেটা তারা একবার ভেবে দেখছেন না।
‘মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। আর এখন রেলে করে তারা চলে আসবেন। আর এই রেলসেতু তো মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযুক্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পায়রা পোর্ট যখন আমরা করব, পায়রা পোর্ট পর্যন্ত যাতে সংযুক্ত হয় তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে খুব বেশি প্রয়োজন নেই বলে আমরা একটু ধীর গতিতে যাচ্ছি।’
রূপপুর নিয়ে সমালোচনা কেন
সবচেয়ে বেশি টাকার সরকারি প্রকল্প রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সমালোচনারও জবাব দেন শেখ হাসিনা।
বলেন, ‘এটা আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল যে আমাদের করতেই হবে। আজকে আমরা সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন যখন শুরু হবে, সেটা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতি আরও সচল হবে। এটা তো সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটা নিয়ে এত সমালোচনা কেন। এটা নিয়ে কারা কথা বলছেন?
‘যারা এখন বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কথা বলবে, আমার মনে হয় তাদের বাড়ির বিদ্যুৎগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। তারা জেনারেটর চালিয়ে চলুক। সেটি বোধহয় ভালো। তাহলে তারা বুঝবে, বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে কি না।
গরিব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ গেছে এটা সমালোচকদের পছন্দ নয় কি না- এই প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারাই খাবেন ভালো থাকবেন আর আমার গরিব মানুষগুলো ধুঁকে ধুঁকে মরবেন এটাই তারা চায়?’
স্যাটেলাইট দেশবাসীর প্রয়োজন আছে
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সময়ও নানা সমালোচনা করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তখনও তারা বলেছে এটার কী দরকার ছিল? যা করবেন তাতে বলবে, এটার কী দরকার ছিল? তাদের জন্য দরকার না থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের জন্য দরকার আছে।
‘তবে আমি মনে করি, আমাদের করা সব সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারও করবেন, আবার সমালোচনা করে মানুষকে বিভ্রান্তও করবেন, এটা বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু জানে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে কতগুলো নাম আর চরিত্র আছে, এদেরকে আমরা চিনি। নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।’
‘মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়েই ফিরেছি’
শেখ হাসিনা এই কথাগুলো বলেন তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪১ বছর পূর্তির দিন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি দেশে ফেরেন।
শেখ হাসিনার বক্তব্যে এই বিষয়টিও উঠে আসে। বলেন, ‘ফিরে আসি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে যে জাতির জন্য আমার বাবা সারাটা জীবন কষ্ট করে গেছেন, জেল খেটেছেন…আমরা তো পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যে বয়সে ছেলেমেয়ে বাবার হাত ধরেই স্কুলে যায়, সেই সুযোগ তো আমাদের হয়নি।’
বাবার স্মৃতিচারণা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে জানি আমার আব্বা জেলে। তারপর হয়তো এক বছর, দেড় বছর, তারপর আবার জেলে। জেলখানায় দেখা। এইভাবেই আমাদের জীবন কেটেছে। কিন্তু তিনি যা করেছিলেন এ দেশের মানুষের জন্য, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্য।’
যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো নিশ্চিত করতে চান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন বাংলার মাটিতে ফিরে আসি, আমি এসেছি একটা লক্ষ্যই সামনে নিয়ে, এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাব। কারণ এটিই ছিল আমার বাবার স্বপ্ন। আমি আসার পর সারা বাংলাদেশে ঘুরেছি। ঘুরতে চেয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নাই কিন্তু আমি পেয়েছি বাংলাদেশের সব মানুষের ভালোবাসা, আস্থা বিশ্বাস।’
আরও পড়ুন:কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দর ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
মঙ্গলবার এই বাজার থেকে এক ডলার কিনতে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০১ টাকা দিতে হয়েছে। সোমবার ৯৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, খোলা বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সে কারণেই প্রতি দিনই দর বাড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডলার পাচ্ছি না। আজ আমি এক ডলারও কিনতে পারিনি। তাই কোনো ডলার বিক্রিও করতে পারছি না।’
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। সোমবার বড় দরপতন হয়। এক দিনেই আমেরিকান ডলারের বিপরীতে ৮০ পয়সা দর হারায় টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক দিনে টাকার এত বড় দরপতন হয়নি।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়। মঙ্গলবারও এই একই দামে বাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে ৫ টাকা বেশি দরে।
ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার সরকারি ছুটির কারণে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বন্ধ ছিল। সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক লাফে আরও ৮০ পয়সা কমিয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
টাকার মূল্য পতনে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো ছাড়া অন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশই তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এখন আমরা যদি না করি, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা ঠিক, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিটা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। রিজার্ভ বাড়বে।’
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও জনতা মঙ্গলবার ৯২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংকও ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত (সাড়ে ১০ মাসে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৬ মে পর্যন্ত) ৫২০ কোটি (৫.২০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত।
কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
সে কারণেই দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
আমদানি কমাতেই হবে
অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ঠিক কাজটিই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপকে সময়োপযোগী একটা পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন এই অর্থনীতিবিদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে দর। কিন্তু এখন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমি মনে করি, এটি একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
অর্থনীতির আরেক বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। আমার মনে হয়, এভাবে হস্তক্ষেপ করে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে; বাজারকে তার গতিতেই যেতে দিতে হবে। কিন্তু সেটা না করে বাজারকে হস্তক্ষেপ করে ডলারের দাম ধরে রাখা হয়েছিল। অল্প অল্প করে দাম বাড়ানো হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপ ঠিক ছিল না বলে আমি মনে করি।
‘আমি বলেছিলাম, বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিলে ডলারের দাম যদি ৮৭/৮৮ টাকাতেও উঠে যায়, যাক। তারপর বাজার তার নিজের নিয়মেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই ৮৭/৮৮ টাকাতেই ডলারের দাম ওঠাচ্ছে। কিন্তু বাজারটাকে অস্থির করার পর।’
আহসান মনসুর বলেন, ‘ডলারের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ব্যাপক তফাত। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ৫০ শতাংশের মতো। কিন্তু রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো ২০ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম।
‘এখন কথা হচ্ছে, কতদিন এই অস্থিরতা চলবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, অনেক হয়েছে আর নয়। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আর যদি এটা করা না যায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। কয়েক মাস আগেও রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।’
ডলারের ব্যয় কমাতে সরকার এরই মধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিলাস দ্রব্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আমদানিনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেগুলো জরুরি নয়, সেগুলোর বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন হবে বেছে বেছে। যেসব প্রকল্প এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন না করলেই নয়, সেগুলোই কেবল বাস্তবায়ন হবে।
আরও পড়ুন:কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা ও আত্মসাৎ ঘটনার হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে আদালতে তোলা হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হেফাজতে থাকা পি কে হালদারসহ ৬ জনকে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সিবিআই আদালতে নেয়া হবে।
আদালতে তোলার আগে ইডির তদন্তকারীরা টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে পি কে হালদার চক্রের বেআইনি সম্পত্তি, পাচার করা অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্র জানার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে কোন কোন প্রভাবশালীর সঙ্গে তার উঠাবসা রয়েছে বা ছিল এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের বিস্তারিত জেনে নিতে চাইছেন তারা।
এসব বিষয়ের সদর্থক জবাব না পেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে আবারও হেফাজতে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে ইডি।
পাশাপাশি ভুয়া পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, এমনকি পাসপোর্ট জাল করে অবৈধভাবে এদেশে থাকার বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই বা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন তদন্ত করতে পারে। কারণ ইডি কেবল অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার এখতিয়ার রাখে।
মঙ্গলবার রুটিন মেডিক্যাল চেকআপের পর পি কে হালদারসহ ৬ জনকে সিবিআই আদালতে তোলা হবে।
‘আমি দেশে ফিরতে চাই’
পি কে হালদারকে সোমবার বিধাননগর মহাকুমা হাসপাতালে রুটিন মেডিক্যাল চেকআপের পর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির অফিসে ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় লিফটের মধ্যে তিনি বলেন, ‘আমি দেশে ফিরতে চাই। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
ইডি সূত্রে খবর, প্রথম দিকে তদন্তকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে অসহযোগিতা করলেও লাগাতার জেরার মুখে এক পর্যায়ে ভেঙে পড়েন পি কে হালদার। তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি হন তিনি। এদিন কখনও একা, আবার কখনও ইডির রিমান্ডে থাকা সহযোগীদের পাশে বসিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদার জালিয়াত চক্রের বেআইনি বিনিয়োগের বহু তথ্য ও নথি ইডির তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। প্রয়োজনে আরও জেরা করতে ইডি অভিযুক্তদের আবারও হেফাজতে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানাতে পারে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:কোম্পানি করদাতারা তাদের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত জমা দিতে পারবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সোমবার রাতে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে এই সুবিধা দিয়েছে।
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কর আইন-১) মহিদুল ইসলাম চৌধুরীর সই করা ‘কোম্পানি শ্রেণীর করদাতার ২০২১-২২ কর বছরের রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বর্ধিতকরণ’ শীর্ষক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারা 184G এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কোম্পানি শ্রেণীর করদাতার ২০২১-২২ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা (যা ট্যাক্স ডে নামে সজ্ঞায়িত) ১৫ জুন ২০২২ পর্যন্ত বার্ধিত করল।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের পাশাপাশি কোম্পানি শ্রেণীর করদাতাদেরও বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। ক্যালেন্ডার বছর শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই রিটার্ন জমা দেয়ার বিধান রয়েছে।
সে হিসাবে ২০২১ সালের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। কিন্তু মহামারি করোনার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা সময়মতো রিটার্ন জমা দিতে পারেননি।
তাদের সুবিধার্থে কোম্পানি করদাতারাদের রিটার্ন জমার সময় আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২ লাখের বেশি কোম্পানি নিবন্ধন আছে। তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোম্পানি আয়কর রিটার্ন জমা দেয়।
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে সারা দেশে শুরু হলো ওয়ালটন ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-১৫।
এই ক্যাম্পেইন আওতায় দেশের যে কোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম কিংবা অনলাইনের ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, গ্যাস স্টোভ, রাইস কুকার ও ফ্যান কিনে ক্রেতারা পেতে পারেন ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত ক্যাশব্যাক। এছাড়া রয়েছে কোটি কোটি টাকার ওয়ালটন পণ্য ফ্রি।
১৬মে সোমবার থেকে গ্রাহকরা এসব সুবিধা পাচ্ছেন।
রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে রোববার এই ক্যাম্পেইন চালু এবং এর আওতায় ঈদ উৎসেব এসব ক্রেতাসুবিধার ঘোষণা দেয়া হয় বলে প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনলাইন অটোমেশনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে সারা দেশে ডিজিটাল ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে ওয়ালটন। ইতোমধ্যে সফলভাবে ক্যাম্পেইনের ১৪ টি সিজন সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি সিজনেই গ্রাহকদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের সিজন-১৫ শুরু করা হয়েছে। এর আওতায় ঈদ উৎসবে প্রতিষ্ঠানটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত ক্যাশব্যাক এবং কোটি কোটি টাকার ফ্রি পণ্যসহ বিভিন্ন ক্রেতাসুবিধার ঘোষণা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, এমদাদুল হক সরকার, ইভা রিজওয়ানা নিলু ও হুমায়ূন কবীর, প্লাজা ট্রেডের সিইও মোহাম্মদ রায়হান, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ফিরোজ আলম, হেড অব বিজনেস ইন্টেলিজেন্স আরিফুল আম্বিয়া, এসির চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) তানভীর রহমান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সের সিবিও সোহেল রানা, কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সের সিবিও মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঈদ উৎসবে দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম কিংবা অনলাইনে ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, গ্যাস স্টোভ, রাইস কুকার এবং ফ্যান কেনার সময় পণ্যটির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা হবে। এরপর ক্রেতার দেয়া মোবাইল নাম্বারে এসএমএস-এর মাধ্যমে ক্যাশব্যাকের পরিমাণ কিংবা ফ্রি পণ্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ওয়ালটন প্লাজা কিংবা শোরুম ক্রেতাদেরকে প্রাপ্ত ক্যাশব্যাক কিংবা ফ্রি পণ্য বুঝিয়ে দেবে।
এক্ষেত্রে ওয়ালটনের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পণ্যের ক্রেতা ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিশ্চিত ক্যাশব্যাক পাবেন। আর কোটি কোটি টাকার ফ্রি পণ্যের মধ্যে থাকছে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল ফোন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, গ্যাস স্টোভ, রাইস কুকার, ফ্যান, আয়রন, এলইডি বাল্ব, এক্সটেনশন সকেট ইত্যাদি।
ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিতে ক্রেতার নাম, মোবাইল নম্বর এবং বিক্রি করা পণ্যের মডেল নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য ওয়ালটনের সার্ভারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ফলে ওয়ারেন্টি কার্ড হারিয়ে ফেললেও দেশের যেকোনো ওয়ালটন সার্ভিস সেন্টার থেকে দ্রুত সেবা পাচ্ছেন গ্রাহক। অন্যদিকে সার্ভিস সেন্টারের প্রতিনিধিরাও গ্রাহকের ফিডব্যাক জানতে পারছেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য