রংপুর বিভাগসহ পুরো উত্তরবঙ্গ বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সংকট সমাধানে জ্বালানি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা তেমন কাজে আসবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন সাড়ে তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক মাসিক সমন্বয় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ২৪ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহাবুব হাসান।
সচিব সভায় কয়লা ও পাথর উত্তোলন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। মজুত কয়লা দিয়ে আপদকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার দিকে নজর রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।
বৈঠকে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বর্তমানে খনির ১৩১০ ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে, যা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে। নতুন ফেস ১৩০৬ এ শিফট করতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় প্রয়োজন হবে। এলসি খোলার জটিলতার কারণে মালামাল আমদানি কিছুটা পিছিয়ে যাওয়ায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস কয়লা উৎপাদনে গ্যাপ তৈরি হবে।’
সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘পিডিবিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও পরিচালক (অপারেশন) সাইট ভিজিট করে চাইনিজদের সঙ্গে গ্যাপ কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাইনিজরা আরো ৫০ হাজার টন কয়লা অতিরিক্ত উত্তোলন করেছে। সে সুবাদে ১৫ দিনের গ্যাপ কমানো সম্ভব হয়েছে।’
পিডিবির কাছে আগে থেকে দুই লাখ বিশ হাজার টন কয়লা মজুত রয়েছে। এই মজুত দিয়ে কয়লা উৎপাদন বন্ধের সময়টাতে যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সভায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত ১ মে পুরনো ফেজের কয়লা শেষ হয়ে গেছে। এরপর নতুন ফেজ থেকে কয়লা তুলতে সম্ভাব্য সময় হিসেবে আমরা ১৫ আগস্ট নির্ধারণ করেছি।
‘আমাদের এখানে দুটি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। একটি খনির কাছে, অন্যটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে। দুই ইয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টন কয়লা মজুত আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন দুই হাজার টন কয়লার ব্যবহার করা হলে এই মজুত দিয়ে ১০০ দিন যাওয়ার কথা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিকল্পিতভাবে কয়লা ব্যবহার করা হলে সংকট হওয়ার কথা নয়।’
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে হিসাব কষে কয়লা খরচের অনুরোধ করেছে খনি কর্তৃপক্ষ। খনি কর্তৃপক্ষের অনুরোধ না মানলে উত্তরের জনপদে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিতে পারে।’
এদিকে পিডিবি সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অর্ধেক উৎপাদন করলেও প্রতিদিন তিন হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন দুই হাজার টনের বেশি কয়লা কেন্দ্রটি ব্যবহার করলেই কয়লা উৎপাদন শুরুর গ্যাপের শেষের দিকে গিয়ে বিপাকে পড়তে হবে। কোনো কারণে ফেজ পরিবর্তনে ধারণার বেশি সময় লেগে গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হবে। আর তাহলে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
পিডিবি সূত্র বলছে, দেশের অন্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও উত্তরাঞ্চলে তা নেই। ওই অঞ্চলে চাহিদার তুলনায় এখনও বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। ফলে অন্য এলাকা থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গেলেও লো-ভোল্টেজ সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন:উজানের ঢলের পানির প্রভাব পড়েছে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলেও। ঢলে বেড়েছে পদ্মা নদীর পানি। ফলে চরাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙন দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
কয়েকদিনের হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে কৃষকের বিভিন্ন ফসল ডুবে গিয়েছে। অন্য বছর সাধারণত নদীতে এই সময় স্বাভাবিক পানি থাকে। তাই কৃষকরা চরাঞ্চলে করেছিলেন বিভিন্ন ফসলের চাষ।
আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের বাদাম, তিল ও ধান ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা অপরিপক্ব অনেক ফসল ঘরে তুলছেন।
পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের শতাধিক একর বিভিন্ন জমির ফসল। এর মধ্যে বেশিরভাগই বাদাম ও তিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যে যে ধান কেটে তোলার কথা ছিল কৃষকের, সেগুলোও ডুবেছে উজানের ঢলের পানিতে।
বুধবার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ লিডার সালমা খাতুন জানান, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বুধবার ৩ সেন্টিমিটার কমে ৬ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার সীমায় প্রবাহিত হচ্ছে। যা মঙ্গলবার ছিল ৬ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার।
গত ১৯ মে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীতে পানি বৃদ্ধি পায় ৮০ সেন্টিমিটার, ২০ মে বৃদ্ধি পায় ৪৬ সেন্টিমিটার, ২১ মে ২৪ সেন্টিমিটার, ২২ মে ১১ সেন্টিমিটার, ২৩ মে ৮ সেন্টিমিটার ও ২৪ মে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়।
সরেজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলার পদ্মার নিম্নাঞ্চল ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষক অপরিপক্ক বাদাম তুলছেন।
এ ছাড়া ধান ও তিলও তুলতে দেখা যায়। নদীর অন্য প্রান্তেও তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত।
পালডাঙ্গি এলাকার কৃষক রমজান আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি আট বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। ৪-৫ দিন পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে সব জমির বাদাম তলিয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিন থাকলে বাদাম পরিপক্ব হয়ে যেতো। কিন্তু এখন বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম এখনও পরিপক্ব হয়নি। তুলে নিয়ে গরু, ছাগলকে খাওয়াব। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
সুফিয়া বেগম নামের একজন বলেন, ‘এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এই বাদাম বিক্রি করেই আমাদের সারা বছরের সংসার খরচ চলে, কিন্তু এ বছর সব শেষ হয়ে গেল। গত কয়েকদিন পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরিপক্ক বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এই বাদাম গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কিছুই করা যাবে না।’
নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন আরেক কৃষক শেখ জুলমত হোসেন। তিনি বলেন, ‘১০ বিঘা জমিতে বাদাম ও তিল আবাদ করেছিলাম। আর দশটা দিন থাকলে ভালোভাবে ফসল ঘরে উঠাতে পারতাম। পানি বৃদ্ধির ফলে এখনই তুলে ফেলতে হচ্ছে। শুধু আমাদের এলাকা নয়, চরাঞ্চলে যারা আবাদ করেছিল সবারই একই অস্থা হয়েছে।
মুরাদ হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম বাদাম চাষ। আর এই বাদাম চাষ করেই যা রোজগার হয় তা দিয়েই সারা বছরের সংসার চলে। কিন্তু হঠাৎ করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেলো। অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পেলে এই কৃষকেরা বেঁচে থাকতে পারবে।’
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, ‘হঠাৎ করেই উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই চরাঞ্চলবেষ্টিত। এখানে বসবাসরত বেশিরভাগ বাসিন্দারাই বাদাম চাষ করে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাদাম অপরিপক্ব অবস্থায় তুলে ফেলতে হচ্ছে। কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওদের অন্যতম আয়ের উৎস এই বাদাম।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর পাঁচ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে তিল ও ২২ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে বাদাম ও তিল আবাদ হয়েছে বেশি।
মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ১০৯ হেক্টর জমি সম্পূর্ণভাবে এবং ১৯৪ হেক্টর জমির ফসল আংশিকভাবে পানিতে ডুবে গেছে।
অধিদপ্তর জানায়, পানি বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ফসলি জমি ডুবেছে চরভদ্রাসন উপজেলায়। এই উপজেলার চার ইউনিয়নে ৫১ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৭ হেক্টর জমির চীনা বাদাম, ৭ হেক্টর বোরো ধান ও ১১ হেক্টর বোনা আউশ, ৮ হেক্টর ভুট্টা এবং ৮ হেক্টর জমির তিল ডুবে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হযরত আলী বলেন, ‘হঠাৎ করে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে বাদাম, তিল ও ধানের কিছু ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাদাম পরিপক্ব না হলেও খেতে পানি ঢোকার কারণে তুলে ফেলতে হচ্ছে; এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করার আশ্বাস দেন তিনি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘পদ্মার পানি আজ থেকে কমতে শুরু করেছে। এর আগে ১০ দিনে দুই মিটারের বেশি পানি বেড়েছে।’
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁওয়ে অধিকাংশ বাড়ির উঠানে ও আশপাশের এলাকাজুড়ে দেখা মেলে অসংখ্য কাঁঠালগাছ। প্রতি বছরই গাছভর্তি কাঁঠাল হলেও এর ন্যায্য দাম পান না মালিকরা। তাই সস্তায় বিক্রি না করে বাধ্য হয়ে কাঁঠাল গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন।
অনেক সময় অযত্নে বেড়ে ওঠা কাঁঠাল পচে যায় গাছে। অনেকগুলো আবার পেকে গাছ থেকে খসে পড়ে নষ্ট হয়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক ফলন হয়েছে কাঁঠালের। দফায় দফায় শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী আম, লিচুসহ অন্যান্য ফলের ওপর আঘাত হানলেও কাঁঠালের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাই প্রায় সব গাছের ডালে ডালে ঝুলতে দেখা গেছে কাঁঠাল।
এ সময় কথা হয় হরিপুর উপজেলায় কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে কাঁঠালের ১০টি বড় গাছ। এ বছরও অনেক ফলন হয়েছে। ২০ দিনের মধ্যে পাকতে শুরু করবে। কিন্তু প্রতি বছরই দু-একটি খাওয়া হলেও অধিকাংশ পেকে, পড়ে নষ্ট হয়। সেগুলো পরে গবাদিপশুকে খাওয়াই।
‘পাইকাররা প্রতি কাঁঠালের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বলে। এবার ফলন আরও বেশি হওয়ায় দাম আরও কম বলবে। তাই কাঁঠাল বেচার চেয়ে গবাদিপশুকে খাওয়ানো ভালো।’
সদর উপজেলা মথুরাপুর এলাকার গৃহবধূ আনসুরা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশে কাঁঠালগাছের পাতা সারা বছর ছাগলকে খাওয়ায়। পচা-ভালো সব কাঁঠালই ছাগল ও গরুকে খাওয়াই, তবে এর বিঁচি সংগ্রহ করি। এগুলো কয়েক মাস তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়।’
একই গ্রামের নারী মমিনা খাতুন মনে করেন ঠাকুরগাঁওয়ে যে পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয় তা অন্য কোনো জেলায় হয় না।
তিনি বলেন, ‘কাঁঠাল দেশের জাতীয় ফল। অথচ এর কোনো কদর নেই। সারা বছর ফলটি কীভাবে সংগ্রহ করা যায় বা আমের মতো গুরুত্ব পায়, সে উদ্যোগ নেয় না কৃষি বিভাগ।’
কৃষক আতাউর রহমান বলেন, ‘জেলার কাঁঠালের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কাঁঠালে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে বছরজুড়ে মানুষ এর ন্যায্য দাম পাবে।’
গতবারের তুলনায় এ বছর কাঁঠালের আরও বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার কাঁঠালের পাইকারি ব্যবসায়ী পয়গাম আলী। তিনি জানান, এ বছর এখনও কাঁঠাল কেনা শুরু হয়নি, তবে দু-একজন গাছ বা বাগান কিনে রাখছেন। ২০-২৫ দিনের মধ্যে কাঁঠাল কিনবেন ব্যবসায়ীরা।
গ্রাম ঘুরে ঘুরে বাড়ি ও বাগান থেকে সুলভ মূল্যে কাঁঠাল কেনেন ব্যবসায়ী পয়গাম। কিন্তু জেলায় চাহিদা না থাকায় সে কাঁঠাল পাঠান দক্ষিণাঞ্চলে। এতে গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি খরচ হয়। অনেক সময় পথেই পচে যায় কাঁঠাল। এতে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয় তাকে। অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, ‘এ বছর কাঁঠাল আরও বেশি পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘জেলার অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে কাঁঠালে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে কাঁঠাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও গাছ মালিকরা কাঁঠালের ন্যায্য দাম পাবেন। তখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হবে কাঁঠালের।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের গাছ রয়েছে। তবে এর বেশিও হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের কাঁঠাল সংরক্ষণবিষয়ক গবেষণা করছে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের ফল গবেষণা কেন্দ্র। কাঁঠাল দিয়ে কয়েকটি পণ্য উৎপাদন নিয়ে তারা গবেষণা করছেন, যেন কাঁঠালের পণ্যগুলো সারা বছর পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলে কাঁঠাল সংরক্ষণ কেন্দ্র হলে অনেক কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:দেশে যেসব ফল উৎপাদন হয় তার প্রায় ৬০ ভাগ উৎপাদিত হয় জুন-জুলাই ও আগস্ট মাসে। তরমুজের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই বাজারে গড়িয়েছে সুস্বাদু লিচু। আমও আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া কাঁঠাল, পেয়ারা, আমড়া, জামরুল, আমলকী, বরই, পেঁপে, কলা ও আনারসেরও দেখা মিলছে।
বাজারে দেশি ফলের ভরা মৌসুম থাকবে আরও তিন মাস।
ঠিক এ রকম সময়ে সরকার বিদেশি ফল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে দেশের রিজার্ভ সুরক্ষিত রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতি বছর দেশে ফল আমদানির পেছনে চলে যায় গড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো।
এই আকালের দিনে বিদেশি মুদ্রা দেশের বাইরে যাওয়া ঠেকাতে সরকার অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি সব ধরনের ফল আমদানিকেও নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এত দিন বিদেশি ফল আমদানিতে যে পরিমাণ শুল্ক ধার্য ছিল, তার চেয়ে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এই নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কহার ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাড়তি শুল্ক আরোপ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকেই তা কার্যকর হবে।
এনবিআর বলেছে, দেশে উৎপাদিত ফল খাওয়াকে উৎসাহিত করতে বিদেশি ফলের আমদানির ওপর এই বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়।
বর্তমানে ফল আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ এবং অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট ৪ শতাংশ ধার্য রয়েছে। এখন ফল আমদানিকারকদের এর সঙ্গে বাড়তি ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাই দেশের মানুষ দেশি ফল খাক। এতে করে দেশি ফলের উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষকরা এতে উপকৃত হবেন। অন্যদিকে এই নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশি ফল আমদানির পরিমাণ কমবে এবং এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।’
তিনি মনে করেন, ফল আমদানিতে এ শুল্ক সাময়িকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিদেশি ফল না খেলেও কোনো অসুবিধা হবে না।
ফল ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ফল একটি অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। এটি রোগী থেকে শুরু করে শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষ খায়। তাছাড়া বিদেশি ফল হচ্ছে আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আহরণের দিক থেকে শীর্ষ দশ খাতের একটি। এ অবস্থায় সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) মহাসচিব সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফল কোনো বিলাসী বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়। এটা রোগীর পথ্য এবং শিশুসহ সব বয়সের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভাত-মাছ ও সবজির মতো গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ফল খায় মানুষ। কেন যে সরকার অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে এই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যকেও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বসিয়ে আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নিলো, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি যদি সাময়িক সময়ের জন্য হয়ে থাকে তাহলে ঠিক আছে। আমরাও তার বিরোধিতা করছি না। দেশে প্রতিদিন ফলের চাহিদা ১০ থেকে ১২ হাজার টন। সারা বছর ধরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ফল আমদানি হয়।
‘এর থেকে সরকারকে আমরা ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দিতাম। এখন সেটি হবে না। একদিকে আমদানি কমে যাবে। এতে সরকার বাড়তি শুল্ক আরোপ করেও কম রাজস্ব পাবে। অন্যদিকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত ভোক্তাকে বর্তমানের চেয়ে আরও বেশি দামে বিদেশি ফল খেতে হবে।’
জানা গেছে, দেশে ফলের যে চাহিদা, তার ৩৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে মেটানো যায়। বাকি ৬৫ শতাংশ ফলই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
শরীরের আবশ্যকীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস হলো ফল। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে পুষ্টি চাহিদা পূরণে ধনী-গরিব তথা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার চাহিদা বেড়েছে। ফলে দেশে ফলমূল কেনাকাটা বা ভোগের একটা বড় বাজার তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতি, মাল্টা, চেরি, আনার, বরই, আম ছাড়াও বেবি ম্যান্ডারিন, পাম, নেকটারিন, কিউইর, সুইট মিলান, এবাকাডোর মতো কিছু অপরিচিত ফলও আমদানি করা হয়।
দেশি ফলের উৎপাদন
চাহিদা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতি বছর বাড়ছে দেশি ফলে বাণিজ্যিক উৎপাদন। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এখানে এখন ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে।
পুষ্টিমান বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশি ফল রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও হজম ও পরিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান অ্যান্থোসায়ানিন, লাইকোপেন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপস্থিত থাকে।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) মতে, ১৮ বছর যাবত বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বেড়েছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম। পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে।
দেশে প্রতি বছর ফল চাষের জমি ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। গত ১০ বছরে আম ও পেয়ারার উৎপাদন দ্বিগুণ, পেঁপে আড়াই গুণ, লিচু ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া কমলার উৎপাদন প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। মাল্টার উৎপাদন বাড়ছে ১৫-২০ শতাংশ হারে।
গত কয়েক বছর ধরে নতুন ফল ড্রাগন, এভোকাডো এবং দেশি ফল বাতাবি লেবু, তরমুজ, লটকন, আমড়া ও আমলকীর উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়ছে। নতুন করে ড্রাগন ফলের ২৩টি, খেজুরের ১৬টি, নারকেলের দুটি এবং কাঁঠালের তিনটি জাত এখন বছরব্যাপী উৎপাদন ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সীমিত জমিতে অধিক ফল উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ফল আমদানি ৭২ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বেড়েছে ২১ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে স্থানীয় ও বিদেশি জাত মিলিয়ে মোট ১ কোটি ১০ লাখ টন ফল উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে ১ কোটি ২০ লাখ টন হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ২১ লাখ ১৫ হাজার টনে দাঁড়ায়। সবশেষ পূর্ণাঙ্গ অর্থবছরের (২০১৯-২০) উৎপাদন তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় ফলমূলের উৎপাদন ১ কোটি ২৩ লাখ টনে পৌঁছায়।
‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ জানান, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। তবে আমরা প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৭০-৮০ গ্রাম ফল খাই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইং ও উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টনের বেশি আপেল, দেড় থেকে ২ লাখ টন কমলা, ৫০ হাজার টনের বেশি আঙুর আমদানি হয়। তবে মাল্টার আমদানিতে কোনো ধারাবাহিকতা লক্ষ করা যায়নি। কোনো বছর কম, কোনো বছর বেশি। গত পাঁচ বছরে এই চার ধরনের ফল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। দেশে মোট আমদানীকৃত ফলের প্রায় ৮৫ শতাংশই আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙুরের দখলে। বাকি অংশ পূরণ হয় অন্যান্য ফল আমদানিতে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ফল আমদানির পরিমাণ ছিল মোট ৪ লাখ ৭৩ হাজার টন। করোনায় আমদানি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ফল আমদানি ৬ লাখ ২৬ হাজার টনে পৌঁছায়।
বিশ্বের ৪৬টি দেশ থেকে ফল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ভারত, চীন, ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভুটান, মিশর ও দক্ষিণ আফ্রিকা অন্যতম। তবে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি ফল আসে।
চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা বিমানবন্দর, ভোমরা, সোনামসজিদ, হিলি ছাড়াও বেশ কটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে এসব ফল আসে।
আরও পড়ুন:স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি মুদ্রার দাম ৪ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৭২ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণে এই দাম বাড়ানো হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এ দাম মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০০’, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ ১৯২০-২০২০’এবং ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ১৯৭১-২০২১’ শীর্ষক স্মারক স্বর্ণমুদ্রার মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি স্মারক মুদ্রা ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণে তৈরি ও প্রতিটির ওজন ১০ গ্রাম। স্মারক স্বর্ণমুদ্রাগুলো (বাক্সসহ) প্রতিটির ৭২ হাজার টাকায় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতদিন এ স্মারক স্বর্ণমুদ্রা ৬৮ হাজার টাকায় বিক্রি হতো।
গত ২১ মে দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪৬৪ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস। এই দর বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে কখনই এত বেশি দামে স্বর্ণ বিক্রি হয়নি দেশে। ২১ ক্যারেটের সোনার দাম ৪ হাজার ২৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৩২ টাকা।
১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা; বিক্রি হচ্ছে ৬৭ হাজার ৫৩৫ টাকায়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ২ হাজার ৮৫৭ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৬ হাজার ২২০ টাকা।
স্মারক স্বর্ণমুদ্রা তৈরিতে ২২ ক্যারেট অথবা ২১ ক্যারেট স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ভ্রমণ জরুরি হলে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিদেশে যেতে পারবেন বলে সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে।
সব তফসিলী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়, পবিত্র হজ পালন ও চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিদেশে যেতে পারবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত ব্যাংকে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা তার নিজ দেশে যেতে পারবেন। পাশাপাশি, বিদেশি ব্যাংকের বাংলাদেশের শাখায় কর্মরত কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ে যেতে পারবেন। এ ছাড়া বিদেশি আয়োজক সংস্থার সম্পূর্ণ অর্থায়নে পরিচালিত প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও স্টাডি ট্যুরেও ব্যাংক কর্মকর্তারা অংশ নিতে পারবেন।
এর আগে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলারে জানায়, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ভ্রমণসহ প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও স্টাডি ট্যুরে যাওয়া পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
ওই সার্কুলারে আরও বলা হয়, করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থার কারণে বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সুসংহত রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে পরিপত্র জারি করে সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ স্থগিত করা হয়।
বিশ্বে করোনা মহামারিকালে গত বছর নব্য ধনকুবেরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সেই সঙ্গে প্রকট হয়েছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। নতুন করে ২৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে।
উন্নয়ন সংস্থা অক্সফামের জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাকালে ২০২০ সালে অস্থির পরিস্থিতিকে কাছে লাগিয়ে নব্য বিলিয়নেয়ার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন কমপক্ষে ৫৭৩ জন। এদের নিয়ে বিশ্বে মোট বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৬৮ জনে।
মহামারির সুযোগে নিজেদের সম্পদ আরও বাড়িয়ে নিয়েছেন অল্প সময়ের মধ্যে বিলিয়নেয়ার ক্লাবে যোগ দেয়া এই ধনীরা। সে হিসাবে, মহামারির সময় প্রতি ৩০ ঘণ্টায় একজন হয়ে গেছেন বিলিয়নেয়ার।
সেই সঙ্গে ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে ৪২ শতাংশ, যা ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের সমান। এখন বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
অক্সফামের ইনইকুয়ালিটি পলিসির প্রধান ম্যাক্স লসোন বলেন, ‘বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের এই উল্লম্ফন হয়েছে করোনা মহামারির প্রথম বছরে। এর পরের বছর ২০২১ সালে ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে খুব কম।
‘সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত অল্প সময়ে সম্পদশালীদের এত বেশি সম্পদ বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে এত দ্রুত এত বেশিসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেনি।’
বৈষম্য কেন তীব্র
করোনাকালে বিশ্বব্যাপী কোটি মানুষ যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও খাবার চড়াদামে কিনতে হিমশিম খাচ্ছে ঠিক তখনই বড় বড় কোম্পানি ও তাদের মালিকরা মুনাফা করেছে কয়েক গুণ বেশি হারে।
গত দুই বছরে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ধনকুবেরদের সম্পদ বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। তাদের মোট সম্পদ বেড়েছে ৩৮২ বিলিয়ন ডলার।
সেই সঙ্গে জ্বালানি, গ্যাস ও কয়লার সঙ্গে জড়িত বিলিয়নিয়ারদের সম্পদে ২০২০ সালে উল্লম্ফন হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ শতাংশ।
ওষুধ শিল্পমালিকদের মধ্যে নব্য বিলিয়নেয়ার হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জন।
এ সময় প্রযুক্তি খাতেও নব্য ধনকুবের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। এ ছাড়া বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, বিল গেটসসহ সাত জনের সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত দুই বছরে তাদের সম্পদের পরিমাণ ৪৩৬ বিলিয়ন ডলার থেকে উল্লম্ফন হয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩৪ বিলিয়ন ডলার।
ধনী-দরিদ্রের এমন বৈষম্যরোধে করপোরেট ও বহুজাতিক কোম্পানির লভ্যাংশের ওপর আরও বেশী কর আরোপের জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম।
আরও পড়ুন:ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল নিষেধাজ্ঞার মাঝেও নাটকীয় উত্থান ঘটেছে রুশ মুদ্রা রুবলের। যুদ্ধ শুরু করার আগ মুহূর্তে এই মুদ্রার মান যে অবস্থায় ছিল সোমবার পর্যন্ত তার থেকে ৩০ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। দেশটির মূলধন প্রবাহে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলেই এমনটি হয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্লুমবার্গের বরাতে সোমবার এক প্রতিবেদনে আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ এর মিত্র দেশগুলো একের পর এক নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞাও কিছু ক্ষেত্রে রাশিয়ার জন্য শাপেবর হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে দেশটির আমদানিও কমে যায়, ফলে কমে যায় দেশটির আমদানি ব্যায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও।
এ ছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরোপের দেশগুলো যে গ্যাস ও তেল ক্রয় করে তার মূল্য চুক্তি অনুযায়ী আগে ইউরোতেই পরিশোধ করা হতো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ওই দেশগুলোকে রুবলে মূল্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা দেয়। ইউরোকে রুবলে কনভার্ট করে রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয় করতে হচ্ছে বলে রুবলের চাহিদাও বেড়েছে। এর ফলে রুবলের দামও বেড়েছে।
জ্বালানি বিক্রি করে এভাবে মাত্র চারটি লেনদেনের পরই ইউরো মুদ্রার বিপরীতে রুবল এক লাফে ১৩ শতাংশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর মধ্যে ৬.২ শতাংশই হয়েছে সোমবার।
সোমবার বিকেলে রুশ অর্থমন্ত্রী দেশটির মুদ্রার মান এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান। এ ছাড়া দেশটির মূলধন প্রবাহ ও আমদানি ব্যায়ের মধ্যে খুব বেশি বৈসাদৃশ্য না থাকায় অর্থনীতির ওপরও চাপ কম বলে জানান তিনি।
ভারত ও চীনের কাছে জ্বালানি বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে রাশিয়া। দেশটির রপ্তানি আয়ের আয়ের ৪০ শতাংশই আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি করে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের তাতিয়ানা অরলোভা বলেন, ‘মূলধন নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়ার পর ডলারের বিপরীতে রুবলকে ৭০ থেকে ৮০ রেঞ্জে ফিরিয়ে দেবে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য আরও আরামদায়ক হবে।’
এ আগে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর নিষেধাজ্ঞার মুখে রুবলের মান দ্রুত পড়ে যেতে শুরু করলে টানা দুই সপ্তাহ মস্কোর শেয়ার বাজার বন্ধ রেখেছিল দেশটি। কিন্তু মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে রুবল আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
তাতিয়ানা রোমানোভা বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ কমেছে এ কথা ঠিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়া তা পুষিয়ে নিচ্ছে।’
এদিকে, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার দ্বিগুণ করে। বিদেশি মুদ্রা না কিনে যারা রুবল সঞ্চয় করবেন, তাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। আর রুশ কোম্পানিগুলো বিদেশে ব্যবসা করে যে আয় করবে তার ৮০ শতাংশ রুবলে কনভার্ট করে নিতে হবে। এর ফলে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের একটি বড় চাহিদা তৈরি হয়েছে।
সোমবার মধ্যরাতে দেখা গেছে, আমেরিকান এক ডলার সমান ৫৯ রুবল। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রুশ মুদ্রা যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে তাতে কিছু দিনের মধ্যে এক ডলার সমান ৫০ রুবল হয়ে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য