শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা হতে পারে না বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বলেছেন, বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতিতে পড়ার কোনো কারণ তিনি দেখেন না।
বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তবে আগামী তিন থেকে চার বছর পর স্বস্তির জায়গা আর থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে সাবধান হওয়ার জায়গা আছে।
সোমবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক অনলাইন আলাপচারিতায় এ কথা বলেন সরকারের অর্থনৈতিক নীতির কট্টর সমালোচক এই অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশের পরিণতিও শ্রীলঙ্কার মতো হবে কি না, তা নিয়ে নানা লেখা ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিরোধী দলের নেতারাও বক্তৃতায় তুলে ধরছেন প্রসঙ্গটি।
পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কান সরকারের রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনে ধস নেমেছে করোনার দুই বছরে। পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কার্যত এ খাত থেকে দেশটির আয় হয়নি। কিন্তু পর্যটক আকৃষ্ট করতে গ্রহণ করা নানা প্রকল্পে আগে নেয়া বিপুল বিদেশি ঋণের কিস্তি ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে।
শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও পৌঁছেছে তলানিতে। পাশাপাশি কর ও ভ্যাট কমানো, কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার শূন্যতে নামিয়ে আনার কারণে উৎপাদনের ঘাটতি, সব মিলিয়ে কিছু ভুল পরিকল্পনা আর পদক্ষেপের কারণে এমন দশায় পৌঁছেছে দেশটি।
জনগণের নাগরিক সুযোগ সুবিধা কমে যাওয়ার পর দেশটিতে ক্ষোভ চরমে। টানা বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তার এই সিদ্ধান্তের পর বিরোধীদের হামলায় একজন এমপির মৃত্যু হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে হতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক। আমি বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করতে চাই না। আমি এমন পরিস্থিতি হওয়ার কারণ দেখি না।’
তবে শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন সিপিডির ফেলো। বলেন, ‘একেকটি দেশ একেক রকমভাবে বিকশিত হয়। বাংলাদেশকে তার দায়দেনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে এবং সরকারের ইতোমধ্যে যে সমস্ত নীতি বা আইন রয়েছে, সে অনুযায়ী সঠিক বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
সতর্ক থাকতে হবে
সাম্প্রতিক সময়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বিনিময়হার বেড়ে যাওয়ার চাপ এবং দেশ শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপালের আর্থিক সংকট বিবেচনায় দায়দেনা নিয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলেও মনে করেন দেবপ্রিয়। বলেন, ‘দায়দেনা নিয়ে শ্রীলঙ্কা বড় সংকটে পড়েছে। এর পরিণতিতে সেখানে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান ও নেপালেও প্রায় একই অবস্থা চলছে। বাংলাদেশকে বিষয়টি সতর্ক পর্যালোচনার মধ্যে রাখতে হবে।’
ঋণ পরিশোধের বর্তমান স্বস্তিদায়ক অবস্থাকে 'সবুজ' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে তা 'হলুদ' হতে পারে এবং অস্বস্তি তৈরি হতে পারে। কিছু প্রকল্পে উচ্চ মূল্যের ঋণ পরিশোধের সময়সূচি এগিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংক, জাপানসহ প্রথাগতভাবে যারা কম সুদে ঋণ দিত, তারাও এখন তুলনামূলক বেশি সুদ নিচ্ছে। সুতরাং স্বস্তির জায়গাটা কমে আসছে।
সরকারের দায়দেনা কত
মূল প্রবন্ধে সরকারের দায়দেনা বৃদ্ধির হারও তুলে ধরেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দায়দেনা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চেয়ে বাড়ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে মাথাপিছু দায়দেনা অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ ৪৩২ ডলার । ঋণ হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় কম হলেও ২০১৮ সালের পর থেকে দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
আইএমএফ’র সূত্র অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের সার্বিকভাবে জিডিপি অনুপাতে সরকারি দায়দেনা ৪৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
এর মধ্যে গত এক দশকে অভ্যন্তরীণ দেনা বৃদ্ধি হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ দায়দেনা ৬৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের পরে এই বৃদ্ধি হার ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ হারে বাড়ছে।
অন্যদিকে বৈদেশিক দায়দেনার পরিমাণ ৬০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক দায়দেনা ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৭ থেকে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঋণ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে পাঁচটি ঝুঁকির কথা বলেন তিনি। এর একটি হলো বিনিময় হারের ঝুঁকি। বাংলাদেশে এ ঝুঁকি বাড়ছে।
অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হারের ঝুঁকি বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হারের ঝুঁকিও কিছুটা বাড়ছে। অন্যদিকে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। আর প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক লাভ কতটুকু হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঋণের সুদ পরিশোধের বিষয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০০৬ সালে বৈদেশিক সুদ পরিশোধে ব্যয় হতো ৩৮ দশমিক ৯১ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ। ২০২১ সালে এসে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ৬৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ।
তিন বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান
ঋণের চাপ চাপলাতে সরকারকে তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান দেবপ্রিয় । এগুলো হলো: কর আহরণ বাড়ানোর মাধ্যমে আর্থিক সংহতিকরণ, বহিস্থ খাতের বর্তমান চাপ মোকাবিলায় সুরক্ষা দেয়া এবং দায়দেনা পরিস্থিতির সামগ্রিক, স্বচ্ছ এবং নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থা।
সরকারি দায়দেনার সঙ্গে নির্বাচনের একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাত বিদেশ থেকে টাকা নিয়েছে ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন। এটা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা জিডিপির ৫ শতাংশ। তারা যদি ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে দেশের জন্য অশনিসংকেত হতে পারে।’
গ্লোবাল ইন্ট্রিগ্রিটির রেফারেন্স দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ও পরের বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ বেড়ে যায়। গণতান্ত্রিক অস্থিতিশীলতা ও আস্থার সংকট দেখা দিলে এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:
ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সয়াবিন ও পাল তেল আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব করা হয়।
সবশেষ চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল সয়াবিন তেল ও পাম তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছিল। বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্য ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আরবিডি পাম তেলের মূল্য ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি না করে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
শুল্ক অব্যাহতি দিলে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি না করে বিদ্যমান মূল্য বহাল থাকবে বলে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এসোসিয়েশন জানিয়েছে। এর আগে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মূল্য সমন্বয়ের আবেদন করে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে প্রস্তাব/সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে এনবিআর করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মইনুল খানসহ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আগামীকাল বুধবার থেকে তা কার্যকর হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলীম আখতার খান এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দামেই ডিম বিক্রি করতে হবে।
ডিজি আলীম আখতার খান মঙ্গলবার ডিম উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
মহাপরিচালক বলেন, ‘বুধবার থেকে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় প্রতিটি ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।’
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে ডিমের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিমের বাজারে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। এখন থেকে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে হবে।’
এই বৈঠকের আগে গত দুদিন ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের ভয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ঢাকার বাজারে ডিমের সংকট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সোমবার আড়তে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ডিম বিক্রি করেননি। এতে ডজন প্রতি ডিমের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা করে বেড়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে হলে তার চেয়ে কম দামে ডিম কিনতে হবে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে আড়তদারদের। সে কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার মনিটরিংয়ে এসে ব্যবসায়ীদের বাড়তি দাম নেয়ার জন্য জরিমানা করছে।
ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। আমরা আবার ডিম বিক্রি শুরু করছি।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্ব সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে ওয়াশিংটন থেকে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ধ্রুব শর্মা, ইকনোমিস্ট নাজমুস খান ও সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা এখনও ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এটি অত্যন্ত উচ্চ সংখ্যা। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে।
আর্থিক খাত নিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদ হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্বব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
চলমান অর্থবছরের বাজেটে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সে হিসাবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কর্মের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান থাকাটা একটি বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার মিস ম্যাচ আছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতিও খারাপ।
কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বৃদ্ধি পাওয়াটা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ নিয়েও এটি কমানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি, যা সাধারণ মানুষের জীবনমানকে নিচে নামাচ্ছে। পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ দরকার। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার দ্রুত করতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প কোনো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর প্রাপ্ত মুনাফা চলতি মাসেই উপকারভোগীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের উপস্থিতিতে সোমবার অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বৈঠকে কর্মকর্তারা জানান, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায়ইতন লাখ ৭২ হাজারের বেশি ব্যক্তি নিবন্ধন করেছেন, যাতে জমার পরিমাণ সব মিলিয়ে ১৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা চলতি মাসে উপকারভোগীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। পেনশনের সুবিধাভোগীরা অ্যাকাউন্টে আমানত ও অর্জিত মুনাফা দেখতে পাবেন।
গত বছরের ১৭ আগস্ট চালু হওয়া ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের লক্ষ্য একটি সুসংগঠিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা দেয়া। এটি প্রাথমিকভাবে জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশকে লক্ষ্য করে চারটি মূল প্রকল্প- প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নিয়ে শুরু হয়।
চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম ১২ দিনে ৯৮৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রমাণ মিলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত একদিনে আট কোটি ২২ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪৫ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমেই এসেছে ৪৪ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬৯৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলার এবং পাঁচটি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ২ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, আগস্টে ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। এতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে বন্দর এলাকায়।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় গত বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত পাঁচদিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রাখেন বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা।
সোমবার সকালে বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান আমদানি-রপ্তানি শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা পাঁচ দিন বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আজ সকাল থেকে আবারও এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
‘ভারতের বিভিন্ন পণ্য বোঝাই ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার কারণে পণ্য বোঝাই হাজার হাজার ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ওপারে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে। এতে করে বেনাপোল বন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।’
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ ভূইয়া জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক রাশেদুল সজিব নাজির জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঁচ দিন বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। আজ সকাল থেকে পুনরায় এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করে ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন অর্থনীতিবিদ।
নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, এবার অর্থশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে ড্যারন আচেমোগলু, সাইমন জনসন ও জেমস রবিনসনকে। তারা প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে গড়ে ওঠে এবং সমৃদ্ধিতে কীভাবে প্রভাব রাখে, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন।
সাইটে উল্লেখ করা হয়, নোবেলজয়ী তিনজন উদ্ভাবনী গবেষণা করেছেন, যাতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলা বিষয় উঠে এসেছে।
তিনজনের গবেষণার বিষয়ে সাইটে আরও বলা হয়, সমৃদ্ধিতে প্রতিষ্ঠানের প্রভাব নিয়ে তাদের অন্তর্দৃষ্টি অনুযায়ী, গণতন্ত্র সহায়ক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মন্তব্য