স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময়টা সাধারণত ‘ক্রিটিক্যাল’ (সংকটপূর্ণ) হলেও বাংলাদেশ ভালো করছে বলে মন্তব্য করেছেন এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই উত্তরণকাল মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
গণভবনে সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন ঢাকা সফরে আসা এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট। বৈঠকে নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এডিবির সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতা, কানেকটিভিটি, বাণিজ্য এবং জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়াতেও এডিবির সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক কানেকটিভিটি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানেকটিভিটির উন্নয়নে বাংলাদেশের দরজা উন্মুক্ত।
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় দুই বছর পর দেশের মানুষ মুক্তভাবে ঈদ উদযাপন করেছে।
ওই সময় করোনা মহামারিতে সহায়তা দেয়ায় এডিবির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আলোচনায় দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা এবং ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বিনা মূল্যে জমিসহ ঘর দেয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে।’
করোনা মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শিজিন চেন।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।’
অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শিজিন চেন।
তিনি বলেন, ‘এডিবি সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং গ্রাম ও নগর উন্নয়নে সহযোগিতা করবে।’
কৃষি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এ খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি করেছে।
বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ অঞ্চলগুলো অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা পূরণ করবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্যের অভাবের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার আরও বেশি খাদ্য উৎপাদনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ওই সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, এডিবির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (সাউথ এশিয়ান ডিপার্টমেন্ট) মনমোহন পরকাশ এবং বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিনটিং।
আরও পড়ুন:জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এবার যোগ দিলেন ভিসতা ইলেকট্রনিক্সে যোগ দিয়েছেন। উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছেন তিনি।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
‘গ্র্যান্ড রিসিপশন টু ইলিয়াস কাঞ্চন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভিসতা ইলেকট্রনিক্স এর চেয়ারম্যান সামছুল আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন আকাশ, পরিচালক প্রকৌশলী মইনুল হক, উদয় হাকিম, এইচভ্যাক এর পরিচালক প্রকৌশলী শহীদ উল্লাহ, ভিসতার হেড অব সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং তানভীর জিহাদ প্রমূখ।
ভিসতায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের নাম লেখালেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এর আগে তিনি ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এবার তিনি ভিসতায় এলেন উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে। তিনি নিরাপদ সড়ক চাই নামে একটি সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত।
চলচ্চিত্র, মানুষের জন্য সামাজিক আন্দোলন, পণ্যের প্রচার-প্রসার সব ক্ষেত্রেই তিনি সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। উদ্যোক্তা হিসেবেও তিনি সফল হবেন বলে ভিসতা পরিবারের প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানে ভিসতা ইলেকট্রনিক্সের চেয়ারম্যান সামছুল আলম বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চনের অন্তর্ভূক্তিতে ভিসতা টিম আরো শক্তিশালী হলো। ভিসতা পণ্যের প্রসারে ইলিয়াস কাঞ্চন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই সেক্টরের ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত।’
ভিসতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন আকাশ বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে আমাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন। এই সেক্টরের বিকাশে তিনি শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন। দেশী ইলেকট্রনিক্স পণ্যের প্রসারেও তার অবদান রয়েছে। এবার একসঙ্গে কাজ করে ভিসতাকে আমরা দেশের নাম্বার ওয়ান ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই।’
ভিসতার পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, ‘সারা বিশ্বে ইলেকট্রনিক্স শিল্প একটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং পরিবর্তনশীল খাত। ভিসতা মেধা ও পেশাদারিত্ব দিয়ে এই চ্যালেঞ্জের ফসল নিজেদের ঘরে তুলতে চায়। ভিসতার মূল শক্তি এর অভিজ্ঞ ম্যানেজমেন্ট টিম। ইলিয়াস কাঞ্চন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড জনপ্রিয় করার কাজ করেছেন। তিনি যোগ দেয়ায় ভিসতার শক্তি অনেকগুন বাড়লো।’
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি সব সময় লড়াকু মানুষ। সব ক্ষেত্রে সৎ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। সস্তা গ্রাহকপ্রিয়তা নয়, ভিসতার লক্ষ্য উচ্চমানের পণ্যসেবা দেয়া। সব শ্রেনীর গ্রাহকের কাছে ভিসতা তার সেরা ইমেজ তুলে ধরতে চায়। আমার বিশ্বাস পণ্যের মান যদি সেরা হয় গ্রাহক ভিসতাকেই বেছে নেবে।’
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ভিসতার যাত্রা শুরু। ভিসতা শব্দের অর্থ দূরদর্শী। এর ভাবার্থ সাফল্যের সিঁড়ি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ভিসতা ইলেকট্রনিক্স পণ্যের কারখানা স্থাপন করেছে। সেখানে অ্যান্ড্রয়েড এবং বিভিন্ন ধরনের টিভি উৎপাদন চলছে। চলতি বছরের মধ্যেই হোম অ্যাপ্লায়েন্স এবং এসি উৎপাদন কারখানা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর স্মার্ট রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে যাবে ভিসতা।
এছাড়া মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, বিভিন্ন ধরনের মনিটর, ভিডিও ওয়াল, ডিজিটাল সাইনেজ, ডিজিটাল হোয়াইট বোর্ড, রাউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট মিরর, মেডিকেল ডিসপ্লে, ভিআরএফ এসি, এসেক্সরিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বাজারজাত করবে ভিসতা।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
রেমিট্যান্স আহরণে বিশেষ অবদান রাখায় ২০১৯ ও ২০২০ সালের জন্য ব্যাংকটি এই পুরস্কার পেয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মোঃ নাছের ও নির্বাহী পরিচালক আবুল বশর, ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আ ন ম সিদ্দিকুর রহমান ও মিফতাহ উদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ডলারের উল্লম্ফনে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো; বাধ্য হয়ে ব্যাংক রেটের চেয়ে সাত-আট টাকা বেশি দিয়ে ডলার সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সব হিসাব-নিকাশ ওলটপালট হয়ে গেছে। ডলার বাজারের এই অস্থিরতা অর্থনীতিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বাধ্য হয়ে সরকার আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানতে ব্যয় সংকোচনের পথ বেছে নিয়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের কর্তাদেরও বিদেশ সফর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিলাস পণ্য আমদানিতে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন রাখতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাজারের অস্থিরতা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার ছাড়ছে । তারপরও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। বেড়েই চলেছে দাম। সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মানে বড় দরপতন হয়েছে। এক দিনেই ইউএস ডলারের বিপরীতে ৮০ পয়সা দর হারিয়েছে টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক দিনে টাকার এতটা দরপতন হয়নি।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে; গত সপ্তাহের শেষ দিনে যা ছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা।
ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার সরকারি ছুটির কারণে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বন্ধ ছিল। সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক লাফে আরও ৮০ পয়সা কমিয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
টাকার মূল্য পতনে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো ছাড়া অন্য বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশই তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এখন আমরা যদি না করি, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ব।
‘এ কথা ঠিক, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। সে সুবাদে রিজার্ভ বাড়বে।’
ব্যাংকেও ডলারের দর ৮ টাকা বেশি
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি হলেও ব্যাংকগুলো তার চেয়ে ৭/৮ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি করেছে। ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক মঙ্গলবার ৯২ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। জনতা ব্যাংক করেছে ৯৪ টাকায়। অগ্রণী ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আর বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯৬ টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মঙ্গলবার পর্যন্ত সাড়ে ১০ মাসে (২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৭ মে পর্যন্ত) ৫২৫ কোটি (৫.২৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সে কারণে দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছর জুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। তখন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবারও ৩০ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমদানি না কমলে অস্থিরতা কাটবে না
অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ঠিক কাজটিই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপকে সময়োপযোগী একটা পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন এই অর্থনীতিবিদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন ,‘আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে দর। কিন্তু এখন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ৭৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমি মনে করি, এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
অর্থনীতির আরেক বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। আমার মনে হয়, এভাবে হস্তক্ষেপ করে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।
‘আমি আগেই বলেছিলাম, বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে; বাজারকে তার গতিতেই যেতে দিতে হবে। কিন্তু সেটা না করে বাজারে হস্তক্ষেপ করে ডলারের দাম ধরে রাখা হয়েছিল। অল্প অল্প করে দাম বাড়ানো হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপ ঠিক ছিল না বলে আমি মনে করি।
‘আমি বলেছিলাম, বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিলে ডলারের দাম যদি ৮৭/৮৮ টাকাতেও উঠে যায়, যাক। তারপর বাজার তার নিজের নিয়মেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সেই ৮৭/৮৮ টাকাতেই ডলারের দাম উঠাচ্ছে। কিন্তু বাজারটাকে অস্থির করার পর।’
আহসান মনসুর বলেন, ‘ডলারের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ব্যাপক তফাৎ। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।। কিন্তু রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো কমেছে। রপ্তানি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম।
‘এখন কথা হচ্ছে, কতদিন এই অস্থিরতা চলবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, অনেক হয়েছে আর নয়। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আর যদি এটা করা না যায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। কয়েক মাস আগেও রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।’
রিজার্ভের স্বস্তি আর নেই
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর গত সপ্তাহে রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
মঙ্গলবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ- প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। এ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দু'মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
রেমিট্যান্সের ১০ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময়কালে (জুলাই-এপ্রিল) ১৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এটা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।
তবে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই ১০ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে দেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
সবাই ছুটছে ডলারের পেছনে
দেশে অদ্ভুত এক গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, ডলারের দর আরও বাড়বে। এই গুজবে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই এখন ডলারের পেছনে ছুটছেন। অনেকে ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে ডলার কিনছেন। অনেকে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে সেই অর্থ ডলারে বিনিয়োগ করছেন। কেউ কেউ আবার ব্যাংকের ডিপিএস বা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েও কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছেন। ব্যাপক চাহিদার কারণে মঙ্গলবার খোলাবাজারে ডলারের দর এক লাফে ১০৪ টাকায় উঠেছে। দু'দিনের ব্যবধানে এই বাজারে ডলারের দর বেড়েছে ১০ টাকার বেশি।
রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশা ডলারের কার্ব মার্কেট হিসেবে পরিচিত। এই এলাকায় হাঁটতে থাকলেই ‘ডলার লাগবে নাকি’ বলে আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায় অনেককে। এরাই কার্ব মার্কেটের ডলার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। অবৈধ হলেও যুগ যুগ ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন তারা ডলার কেনাবেচা।
মঙ্গলবার দিলকুশায় গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। অনেকে টাকা দিয়ে ডলার কিনতে চাইলেও মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বলছেন ডলার নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডলার ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ করে কী হয়েছে জানি না! ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। সবাই ডলার চাচ্ছে। গত সপ্তাহেও ৯৩-৯৪ টাকায় ডলার বিক্রি করেছি। আজ সেটা ১০৪ টাকায় উঠেছে। তাও পাওয়া যাচ্ছে না।
‘আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে ডলার কিনে ১০/১৫ পয়সা লাভে বিক্রি করি। কিন্তু আজ কোনো ডলার কিনতেও পারিনি, বিক্রিও করিনি। কেউ আর ডলার বিক্রি করতে আসছে না; সবাই কিনতে আসছে। এমন অবস্থা আগে কখনো দেখিনি।’
ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা আবার ওলটপালট করে দিচ্ছে। যুদ্ধের কারণে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে ডলারের অস্থিরতায় বেসামাল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি।’
উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক রেট ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। ব্যাংকগুলো বিক্রি করছে ৯৪/৯৬ টাকায়। কার্ব মার্কেটে ১০৪ টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব। কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করছে?
‘আমার পরিচিত অনেকেই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ডলার কিনে এই কয় দিনে ‘লালে লাল’ হয়ে গেছেন। ডলারের দাম নাকি আরও বাড়বে। তাই যাদের যা কিছু আছে তা দিয়ে এখন ডলার কিনতে ছুঁটছে।’
ইটিবিএল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিজওয়ান রাহমান ডলারের বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘আর দেরি না করে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দাম বন্ধ করতে হবে। বাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। তাহলে বাজার এমনিতেই ঠিক হয়ে আসবে।’
শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা ডলার কিনছে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গুজব আছে, অনেকেই নাকি ডলারের দিকে ছুটছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সবাই ডলার কিনতে গেলে এত ডলার পাবে কোথায়?
‘পুঁজিবাজারে পতন শুরু হলেই অনেক গুজব ছড়ানো হয়, এর-ওর সঙ্গে মেলানো হয়। এখন বাজারের অবস্থা খারাপ, তাই নানা গুজব ঘুরছে চারদিকে। তবে কিছু লোক বেশি লাভের আশায় ডলার কিনছে এটা ঠিক।’
আরও পড়ুন:যান চলাচলে খুলে দেয়ার অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু পারাপারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ফেরি পারাপারের বিদ্যমান হারের দেড় গুণ হিসাবে।
পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার এক মাসেরও বেশি সময় আগে ঘোষণা করা এই টোল হার নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।
সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা আর বড় বাসের জন্য ২ হাজার ৪০০ টাকা দিতে হবে- সেতু বিভাগ এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর এই হার বেশি কি না, সেই আলোচনা এখন সামাজিক মাধ্যমে।
পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে আট বছর আগে জারি করা টোল নীতিমালা অনুযায়ী। এই নীতিমালায় থাকা ফেরির মাশুলের তুলনায় দেড় গুণ টোল ঠিক করা হয়েছে।
এই নীতিমালায় সেতুর দৈর্ঘ্যের বিবেচনার কথাও বলা হয়েছে। সেই বিবেচনাতে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে তুলনা করা যায়।
পদ্মা সেতুর সঙ্গে প্রায় দুই যুগে আগে খুলে দেয়া বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল হারের তুলনা করলে দেখা যায়, উত্তরের পথের সেতুটির তুলনায় দক্ষিণের পথের সেতুর টোল হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ।
তবে দুই সেতুর নির্মাণ ব্যয় আর দৈর্ঘ্যেও পার্থক্য আছে। ১৯৯৮ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া বঙ্গবন্ধু সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সঙ্গে মূল সেতুতে উঠতে দুই পাশে ভায়াডাক্ট আছে ১২৮ মিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটারের কম।
তবে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য আরও বেশি। এখানে মূল সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। আর দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার। সেই হিসাবে সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৯৮ কিলোমিটার।
দুই সেতুর নির্মাণ ব্যয়েও আছে পার্থক্য। কংক্রিটের বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। ডলারের সঙ্গে টাকার সে সময়ের বিনিময় হারে এই ব্যয় ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার আশপাশে। তবে বর্তমান বিনিময় হারের সঙ্গে তুলনা করলে এটি দাঁড়ায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অন্যদিকে, চার লেনের পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে স্টিলের ওপরে, যাতে সড়কসেতুর নিচ দিয়ে রেল চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর নির্মাণে সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
যে ১২ ধরনের গাড়ির জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হিসাব করে দেখা যায়, ছয় ধরনের গাড়িতে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটার হিসাবে টোল বেশি। বাকি ছয় ধরনের গাড়িতে কম।
বাইকে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি টোল বঙ্গবন্ধুর তুলনায় ৬০ পয়সা বেশি। পিকআপ ভ্যানে পদ্মায় কিলোমিটারে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় টোল বেশি ৭ টাকা ৩১ পয়সা।
মাঝারি বাসে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল বেশি ১২ টাকা ১৭ পয়সা আর বড় বাসে বেশি ৫৫ টাকা ১৯ পয়সা।
ট্রাকের ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের গাড়ির মধ্যে পদ্মায় খরচ কম তিন আকারের গাড়িতে। অন্যদিকে বেশি ধরা হয়েছে দুই আকারের গাড়িতে।
বড় আকারের থ্রি এক্সেলের ট্রাকে যমুনার তুলনায় পদ্মা পাড়ি দিতে কিলোমিটারে বেশি খরচ হবে ১৮৫ টাকা ৬৮ পয়সা। ফোর এক্সেল ট্রাকে বেশি ৩৬ টাকা ৫৩ পয়সা।
অন্যদিকে প্রাইভেট কারে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল কম ৩০ টাকা ৯৫ পয়সা।
মাইক্রোবাসে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল কম ১২ টাকা ৩৭ পয়সা। ছোট বাসে এই ব্যয় কম হবে কিলোমিটারে ১ টাকা ৬২ পয়সা।
পাঁচ টনের ট্রাকে পদ্মা পাড়ি দিতে কিলোমিটারে খরচ কম পড়বে ৩০ টাকা ৮৫ পয়সা। ৮ টনের ট্রাকে এই খরচ ২৭ টাকা ৭৯ পয়সা আর ১১ টনের ট্রাকে কম ২৩ টাকা ৫৪ পয়সা।
টোল নীতিমালায় কী বলা আছে
সড়ক ও সেতুর টোল নির্ধারণে ২০১৪ সালে জাতীয় টোল নীতিমালা করা হয়।
এই নীতিমালা অনুযায়ী সেতুর দৈর্ঘ্য হিসাবে টোল নির্ধারণ হবে। আর যে পথে সেতু হয়েছে, সেখানে যদি আগে থেকে ফেরি থাকে, তাহলে ফেরির মাশুলের দেড় গুণ হবে সেতুর টোল।
পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটাই হয়েছে। তবে খুচরা টাকার ঝামেলা এড়াতে কিছুটা কম-বেশি হয়েছে।
যেমন মোটরসাইকেলে ফেরি পারাপারে ৭০ টাকা লাগে। দেড় গুণ হিসাবে সেতুর টোল হয় ১০৫ টাকা। কিন্তু পাঁচ টাকা খুচরা নিয়ে ঝামেলা এড়াতে তা করা হয়েছে ১০০ টাকা।
বড় বাসের ক্ষেত্রে ফেরির মাশুলের দেড় গুণ হিসাবে হয় ২ হাজার ৩৭৫ টাকা। কিন্তু ২৫ টাকা খুচরার ঝামেলা এড়াতে তা করা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
দেশের দুই প্রধান সেতুর টোলের হিসাব-নিকাশ
সেতু বিভাগের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে একটি মোটরসাইকেলকে দিতে হবে ১০০ টাকা। মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ফেরি পার হতে এই খরচ ৭০ টাকা।
পদ্মার তুলনায় দৈর্ঘ্যে অর্ধেক বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে মোটরসাইকেলের খরচ ৫০ টাকা।
দৈর্ঘ্যের হিসাবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল দাঁড়াচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তার পরিমাণ ১০ টাকা ১৫ পয়সা।
সেই হিসাবে পদ্মা পাড়ি দিতে যমুনার তুলনায় মোটরসাইকেলকে প্রতি কিলোমিটারে বেশি দিতে হবে ৬০ পয়সা।
পদ্মা পাড়ি দিতে প্রাইভেট কার ও সাধারণ জিপে টোল ঠিক করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। ফেরিতে বর্তমানে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা।
যমুনা পাড়ি দিতে পদ্মার তুলনায় অর্ধেক দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে এই টোলের পরিমাণ ৫৫০ টাকা।
সে ক্ষেত্রে প্রাইভেট কারে যমুনা পাড়ি দিতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ ১১১ টাকা ৬১ পয়সা। আর পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ ৮০ টাকা ৬৬ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে টোল প্রতি কিলোমিটারে কম ৩০ টাকা ৯৫ পয়সা।
পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপ পারাপারে ফেরিতে দিতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। পদ্মা সেতু পার হতে সেই টোলের পরিমাণ ১ হাজার ২০০ টাকা।
পদ্মার তুলনায় অর্ধেক বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই টোল ৬০০ টাকা।
সেই হিসাবে এই ধরনের গাড়িতে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি টোল খরচ ১২৯ টাকা ৬ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তা ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা।
অর্থাৎ পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারে খরচ বাড়ছে ৭ টাকা ৩১ পয়সা।
মাওয়া প্রান্তে মাইক্রোবাস পারাপারে ফেরিতে লাগে ৮৬০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে পদ্মা সেতুতে করা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
অর্ধেক দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতুতে মাইক্রোবাসের খরচ লাগে ৭৫০ টাকা।
সেই হিসাবে পদ্মা সেতুতে মাইক্রোবাসে প্রতি কিলোমিটারে টোল ১৩৯ টাকা ৮২ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তার পরিমাণ ১৫২ টাকা ১৯ পয়সা।
অর্থাৎ মাইক্রোবাসে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটার হিসাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় খরচ কমে আসবে ১২ টাকা ৩৭ পয়সা।
৩১ আসন বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য পদ্মা সেতুতে দিতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ফেরিতে এসব গাড়িকে দিতে হচ্ছে ৯৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের বাসকে দিতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা।
তার মানে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩১ বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোল আসে ১৫২ টাকা ১৯ পয়সা। আর পদ্মা সেতুতে আসে ১৫০.৫৭ টাকা।
এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারে খরচ কম পড়বে ১ টাকা ৬২ পয়সা।
মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে মাঝারি বাসকে ফেরিতে দিতে হয় ১ হাজার ৩৫০ টাকা। সেতু দিয়ে পারাপারে তা লাগবে ২ হাজার টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের বাসকে দিতে হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে মাঝারি বাসের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২১৫ টাকা ১০ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই খরচ কিলোমিটারে ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মায় বাসমালিকদের খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকা ১৮ পয়সা।
মাওয়া প্রান্ত দিয়ে বড় বাসে ফেরিতে পদ্মা পারাপারে লাগছে ১ হাজার ৫৮০ টাকা। সেতুতে লাগবে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের বাসে খরচ পড়ে ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে বড় বাসের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২৫৮ টাকা ১২ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই খরচ ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মায় বড় বাসমালিকদের খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ৫৫ টাকা ১৯ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে ৫ টনের ট্রাক এ সেতু পাড়ি দিলে গুনতে হবে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ টন পর্যন্ত এই ট্রাক পারাপারে ফেরিতে দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের ট্রাক পারাপারে টোল দিতে হয় ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে পাঁচ টনের ট্রাকের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ১৭২ টাকা ৮ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই দূরত্বের খরচ ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মা সেতুতে ছোট ট্রাকে খরচ কমছে প্রতি কিলোমিটারে ৩০ টাকা ৮৫ পয়সা।
পাঁচ টন থেকে আট টনের মাঝারি ট্রাকের জন্য পদ্মা সেতুতে দিতে হবে ২ হাজার ১০০ টাকা, ফেরিতে লাগছে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
একই আকারের ট্রাকের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুতে দিতে হয় ১ হাজার ২৫০ টাকা।
এই হিসাবে পদ্মা সেতুতে পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাকে টোলের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২২৫ টাকা ৮৬ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই দূরত্বের খরচ ২৫৩ টাকা ৬৫ পয়সা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে এই ধরনের ট্রাতে কিলোমিটারপ্রতি কম নেয়া হচ্ছে ২৭ টাকা ৭৯ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে আট টন থেকে ১১ টনের মাঝারি ট্রাকের টোল ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই গাড়িগুলোকে টোল হিসেবে দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মাঝারি ট্রাকে প্রতি কিলোমিটারে পদ্মা সেতুর খরচ ৩০১ টাকা ১৪ পয়সা। বঙ্গবন্ধুর সেতুতে এই খরচ ৩২৪ টাকা ৬৮ পয়সা।
এই হিসাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ কমবে ২৩ টাকা ৫৪ পয়সা।
থ্রিএক্সেলের ট্রাক পারাপারে পদ্মা সেতুতে টোল ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগছে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের ট্রাক পারাপারে লাগছে ২ হাজার টাকা।
কিলোমিটারপ্রতি খরচের হিসাবে দেখা যায় পদ্মা সেতুতে ৫৯১ টাকা ৫৩ পয়সা। যা বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪০৫ টাকা ৮৫ পয়সা।
এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ১৮৫ টাকা ৬৭ পয়সা।
মালবাহী ট্রেইলারের (ফোর এক্সেল) টোল পদ্মা সেতুতে ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগে ৪ হাজার টাকা।
আর যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের ট্রাককে দিতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা।
দেখা যাচ্ছে মালবাহী ট্রেইলারে (ফোর এক্সেল) প্রতি কিলোমিটারে পদ্মা সেতুর খরচ ৬৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। বঙ্গবন্ধুর সেতুতে এই খরচ ৬০৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে খরচ বাড়ছে কিলোমিটারপ্রতি ৩৬ টাকা ৫৩ পয়সা।
চার এক্সেলের ওপরে মালবাহী ট্রেইলারের জন্য প্রতি এক্সেলে পদ্মা সেতুতে যোগ হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে যোগ হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সব তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরে সংগঠন দুটি। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা দিয়েছে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস।
সংবাদ সম্মেলনে তামাক কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাবের সমর্থনে অর্থনীতিবিদ, জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আয় বাড়বে, স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমবে এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮ দশমিক ৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
পাশাপাশি মধ্যমেয়াদে (২০২২-২৩ থেকে ২০২৭-২৮) সিগারেটের মূল্য স্তর চার থেকে কমিয়ে দুই স্তরে আনার প্রস্তাব করা হয়।
সংগঠন দুটির দাবি, বর্তমানে চার স্তরের অ্যাডভ্যালুরেম কর কাঠামো চালু থাকায় সিগারেট সস্তা এবং সহজলভ্য। সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে ভোক্তা কমদামী ব্রান্ড বেছে নিতে পারছে।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১ টাকা ২৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মোস্তাফিজুর রহমান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
আরও পড়ুন:বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) মঙ্গলবার এমন মত ব্যক্ত করেছে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বুধবার গণশুনানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসি। কমিশনের আইন অনুযায়ী, শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি প্রস্তাবের বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গ্যাসের দাম আগে ঠিক করে তারপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে। তাই গ্যাসের দাম বাড়ালে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে। আবার গ্যাসের দাম না বাড়ালেও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে।
বিদ্যুতের দাম এই মুহূর্তে না বাড়ানোর পক্ষে বেশকিছু যুক্তি তুলে ধরেছে এফবিসিসিআই।
সংস্থাটির মতে, বিদ্যুতের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। কৃষি, শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতের খরচ বাড়বে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে।
এফবিসিসিআই বলেছে, বর্তমানে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। কিন্তু উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ বা সীমিত করা হয়েছে। ফার্নেস অয়েলের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। কয়লার ওপর ভ্যাট, গ্যাসের ওপর ডিমান্ড চার্জসহ বিদ্যুৎ বিক্রির ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছে।
একদিকে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে অন্যদিকে জ্বালানির ওপর আরোপিত করভার যুগপৎভাবে ভোক্তাসহ দেশের উৎপাদনশীল কার্যক্রমের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি বিধ্বংসী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ বলে মনে করে এফবিসিসিআই।
সংস্থাটি বলছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়েছে। এর প্রভাবে শিপিং খরচ বেড়েছে। একই কারণে উৎপাদন ব্যয়ও অত্যধিক বেড়ে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর।
একইভাবে রপ্তানি শিল্পে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এতে রপ্তানি কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠন।
মতামতে বলা হয়, সঞ্চয় কমে যাওয়ার ফলে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। এতে ব্যাংকিং খাতের অর্থপ্রবাহে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার আশঙ্কাকে বিবেচনায় নেয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষি, শিল্প ও সেবা উৎপাদন খাতে।
মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাবে জনজীবনে নেমে আসতে পারে হতাশা। সর্বোপরি এতে অর্থনীতির উন্নয়নে চলমান ধারাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ অবস্থায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবটি গ্রহণ করা ঠিক হবে না বলে মনে করে এফবিসিসিআই।
আরও পড়ুন:দেশের বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করছে সরকার। তৈরি করা হয়েছে বেসরকারি খাতের জন্য পলিসি গাইডের খসড়া। যার মাধ্যমে ন্যাশনাল গ্রিড বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ইকনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (ইএসসিএপি) ও সাসটেইনেবল এনার্জি ফর অল যৌথভাবে আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে মঙ্গলবার তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগে নিরাপত্তাসহ ১৫ বছরের শুল্ক ছাড়, আমদানি শুল্কে রেয়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) নবায়ণযোগ্য জ্বালানির প্রসারে লজিস্টিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে।
‘বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করায় গত দশকে বিদ্যুৎ খাতে ১২ বিলিয়ন বিনিয়োগ হয়েছে। আগামী ১২ বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাত হতে ৪৪ শতাংশ আসছে। চলমান আটটি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটিই বেসরকারি খাতের। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে বেসরকারি খাতের ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হয়েছে।’
সরকারের প্রস্তুতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সৌরবিদ্যুৎ রোডম্যাপ ২০২১-৪১ খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সমন্বিত বিদ্যুৎ জ্বালানি মাস্টারপ্ল্যানে ক্লিন এনার্জিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন উৎসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৯টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অফসোর উইন্ড, গ্রিন হাইড্রোজেন, ভাসমান সোলার, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, সোলার রূফটপ ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
সেমিনারে সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন ইএসসিএপির নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়াহ আসিজাবানা, ভারতের বিদ্যুৎ, নতুন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিমন্ত্রী রাজ কুমার সিং, ইন্দোনেশিয়ার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক মন্ত্রী আরিফিন তাসরিফ, নেপালের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. সুরেন্দ্র লাব কর্ণ ও ফিজির জ্বালানিবিষয়ক পরিচালক মিকেলি বেলেনা।
মন্তব্য