ঈদের চার দিন ছুটির পর দেশের সব ব্যাংক খুলেছে বৃহস্পতিবার, তবে শাখাগুলোতে গ্রাহকদের চাপ নেই বললেই চলে।
অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে চলছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে যারা অফিস করেছেন তারা ব্যস্ত ছিলেন সহকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে। ব্যাংকের শাখাগুলোতে অলস সময় পার করছেন অনেকে।
রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন ব্যাংক ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের মতো গ্রাহকের লম্বা লাইন নেই। শাখার ভেতরে এক বা দুজন গ্রাহক। নগদ টাকা তোলারও চাপ নেই।
আর মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গ্রাহক থাকলেও তা খুবই কম।
ঈদের আগে ৩০ এপ্রিল শনিবার সীমিত পরিসরে সারা দেশে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ ছাড়া ২৯ এপ্রিল পোশাক শিল্প এলাকায় ব্যাংক খোলা ছিল।
স্বাভাবিক ব্যাংকিং আজ থেকে শুরু হলেও ব্যাংকে গ্রাহকের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
সব সময় ভিড় লেগে থাকে সোনালী ব্যাংকের এমন শাখার মধ্যে রোকেয়া সরণি শাখা অন্যতম। কিন্তু সেখানেও দেখা গেছে ভিড় নেই।
ওই শাখার কর্মকর্তারা বলেন, অন্যদিন দম ফেলার ফুরসত মেলে না। ঈদের আগে শেষ সপ্তাহে গ্রাহকের চাপে হিমশিম অবস্থা ছিল। কিন্তু আজ তেমন গ্রাহক চাপ নেই।
শেওড়াপাড়ার রূপালী, অগ্রণী ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখা ঘুরে দেখা গেছে, নগদ জমা ও উত্তোলনের কাউন্টারগুলোতে গ্রাহক নেই। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ট্রাভেল ট্যাক্স দেয়ার জন্য দুই-একজন কাউন্টারে উপস্থিত হয়েছেন।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা এফ এম মাসুম বলেন, ঈদের পরে প্রথম কার্যদিবসে গ্রাহকের উপস্থিতি কমই থাকে। যারা ঢাকায় আছেন, তেমন কিছু গ্রাহক আসছেন। তবে আমাদের লেনদেন শুরু হয়েছে সকালেই।
জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখার কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বলেন, করোনার দুই বছরে অনেকে ঈদ তেমন উৎযাপন করতে পারেনি। এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে অনেকেই গ্রামে চলে গেছেন। ছুটি শেষে তারা ফিরে আসার পরে জমজমাট হবে ব্যাংকপাড়া। আগামী সপ্তাহ থেকে আবার জমে উঠবে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম।
রমজানে ব্যাংকে লেনদেন সময় কমলেও এখন স্বাভাবিক কার্যক্রমে চলবে ব্যাংক।
অর্থাৎ ব্যাংক লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। আর অন্যান্য কাজের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে ৬টা পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলায় কৃষকের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ তহবিল থেকে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭০ জন গ্রাহককে ৪ হাজার ২৯৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। বিতরণ করা এ অর্থ স্কিমের তহবিলের ৮৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে ‘কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’ নামে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়। পুনঃঅর্থায়ন স্কিম থেকে জামানতবিহীন সহজ শর্তে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন কৃষক।
যেসব ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের এ অর্থ সাধারণ কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করেছে, তাদের মধ্যে সফল বাস্তবায়নকারী ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীকে প্রশংসাপত্র দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এ এন হামিদুল্লাহ্ কনফারেন্স রুমে একটি সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশংসাপত্র তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
প্রশংসাপত্র পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট, কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, ইসলামী, এক্সিম, ব্র্যাক, প্রিমিয়ার, ওয়ান , ব্যাংক এশিয়া, শাহজালাল ইসলামী, উত্তরা, এবি, এনআরবি কমার্শিয়াল এবং মধুমতি ব্যাংক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, নির্বাহী পরিচালক আওলাদ হোসেন চৌধুরী ও কৃষি ঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হাকিমসহ অন্যরা।
আরও পড়ুন:
ইসলামী ব্যাংক হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উপহারসামগ্রী প্রদান করেছে।
ব্যাংকের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ওমর ফারুক খান সোমবার আশকোনাস্থ হজ অফিসে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সাইফুল ইসলামের কাছে এসব সামগ্রী হস্তান্তর করেন বলে ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মাকসুদুর রহমান, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান ভুঁইয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম এবং হাজি ক্যাম্প শাখার প্রধান সাইফুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসী আয় পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শর্ত রইল না আর।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে রিজার্ভে টান পড়ার মধ্যে রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ সহজ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এখন থেকে পাঁচ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই পাওয়া যাবে প্রণোদনা।
সোমবার সিদ্ধান্তটি জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়েছে।
বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনার প্রক্রিয়া সহজ করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে গেলে রেমিটারকে (অর্থপ্রেরক) বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কাছে বিস্তারিত কাগজপত্র জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
সেটি তুলে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘পাঁচ হাজার অথবা পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য প্রবাসীর কাগজপত্র বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখন থেকে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রদানে রেমিটারের কোনো কাগজপত্র ব্যতীত বিদ্যমান হারে (২.৫০ শতাংশ) রেমিট্যান্স প্রণোদনা/নগদ সহায়তা প্রযোজ্য হবে।’
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিপরীতে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই নগদ সহায়তা পাওয়া যাবে।
প্রতি ডলারের বিপরীতে নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত পাওয়া যাবে আরও আড়াই টাকা। ডলারের সবশেষ বিনিময় হার ঠিক হয়েছে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা। এর সঙ্গে আড়াই টাকা যোগ হয়ে পাওয়া যাবে ৯০ টাকা ৪০ পয়সা।
পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
জ্বালানি ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ডলারের মজুত এখন দেশের প্রধান দুশ্চিন্তার একটি হয়ে গেছে।
গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।
তবে আমদানি ব্যয় বাড়ায় গত ৯ মে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর সপ্তাহ খানেক রিজার্ভ ৪২ বিলিয়নন ডলারের নিচে অবস্থান করে।
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় গত বুধবার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। গত কদিন তা আরও বেড়ে রোববার দিন শেষে ৪২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ- প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। এ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশংসাপত্র পেয়েছে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অফ বাংলাদেশ লিমিটেড বা এক্সিম ব্যাংক।
কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহে গঠিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ঋণ বিতরণে শতভাগ সাফল্য অর্জন করায় এ প্রশংসাপত্র দেয়া হয় ব্যাংকটিকে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়ার হাতে প্রশংসাপত্র তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
রোববার ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা এবং খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে পাঁচ কোটি টাকার প্রণোদনামূলক বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। এক্সিম ব্যাংক এ তহবিলের আওতায় ১০১ দশমিক ১৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খান, নির্বাহী পরিচালক আওলাদ হোসেন চৌধুরী, কৃষি ঋণ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল হাকিম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদ্মা ব্যাংকের ‘মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ’বিষয়ক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালা শনিবার হয়েছে।
ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ তথ্য জানানো হয়।
মিরপুর ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পরিচালনায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রিয়াজ খান।
তিনি কর্মশালায় অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে তার প্রয়োগের জন্য নির্দেশ দেন।
প্রশিক্ষণে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৭২ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার জাবেদ আমিন, এসইভিপি ও রেমিডিয়াল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের প্রধান ফিরোজ আলম, পদ্মা ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ও এসইভিপি সাবিরুল ইসলাম চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান ও এসভিপি এ এস এম আসাদুল ইসলাম এবং ব্যাংকের ডেপুটি চিফ অ্যান্টি-মানিলন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসার ও ভিপি রাশেদুল করিম।
আরও পড়ুন:প্রতিবারের মতো এবারও অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দেদার ঋণ নিচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ব্যাংক থেকে মোট ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এরমধ্যে বাণিজ্যক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ২৫ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছিল মাত্র ৬ হাজার ৪০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে এই দশ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি।
২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হতে আর ১ মাস ১ সপ্তাহ বাকি। আগামী ৩০ জুন শেষ হবে এই আর্থিক বছর। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছর।
প্রতিবারের মতো এবারও অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণত বছরের শেষ দিকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি বেড়ে যায়। তড়িঘড়ি করে কাজ করার কারণে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের মন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদরা বার বার এই প্রশ্ন তুলে অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি’র কাজে গতি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি; সেই পুরনো ধাচেই চলছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের গতি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা সেই পুরনো সমস্যা। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে তাড়াতাড়ি প্রকল্প শেষ করার তাগাদা থাকে। সে কারণে এ সব প্রকল্পে দ্রুত অর্থ ছাড় করতে হয়। অন্যদিকে আগে শেষ হওয়া প্রকল্পের কাজের পুরো বিল বছরের মধ্যেই ঠিকাদারদের শোধ করতে হয়। সে কারণে সরকারের খচর হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সেই ব্যয় মেটাতেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় সরকারকে।’
তিনি বলেন, ‘অন্যান্যবারের চেয়ে এবার অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ব্যাংক থেকে একটু বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে; কারণ সুদের হার কমানোয় ও নানা কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সেখান থেকে আর আগের মতো ঋণ পাচ্ছে না সরকার; পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থার উপর।’
তবে করোনা অতিমারি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বিপুল অংকের ঋণ সহায়তা সরকারকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়নি বলে জানান মির্জ্জা আজিজুল ইসলঅম।
অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ার কথা স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, পুরো বছরজুড়েই প্রকল্পের কাজের গতি একইভাবে চালানোর। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা পুরোপুরি সম্ভব হয়ে উঠছে না। আশা করছি, আগামীতে এ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো।’
‘তবে এবার বোধ হয় সমস্যা একটু কম হবে। কেননা, সরকারের ব্যয় সংকোচনের ধারাবাহিকতায় অতি প্রয়োজন ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর কাজ আমরা আপতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর প্রকল্পগুলোর কাজ একেবারেই বন্ধ রাখা হচ্ছে। তাই ব্যয়টা একটু কমবে; ব্যাংক থেকে ঋণও বোধ হয় কম দিতে হবে।’
ঘাটতি মেটাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা আছে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং ধারণার চেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ সহায়তা পাওয়ায় খরচ মেটাতে এতদিন ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ করার প্রয়োজন হয়নি; লক্ষ্যের অনেক নিচে ছিল।
অর্থবছরের দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঋণের অংক ছিল অনেক কম, ৬ হাজার ৪০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোয় সফল সরকার
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোর কৌশলে সফল হয়েছে সরকার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এই খাত থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। এরমধ্যে নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে নিয়েছে ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এই অংক ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। গত অর্থবছরে এই নয় মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৩ হাজার ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছিল সরকার।
২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। মূল বাজেটে এ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজটে সেই লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।
তবে বছর শেষে দেখা যায়, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি নিয়েছে ৩২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি নিয়েছে প্রায় তিন গুণ।
ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। সে কারণে বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও বাড়তে থাকে বিক্রি।
সবশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তারপর থেকেই বিক্রিতে ভাটা পড়ে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে দেয় সরকার।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেত, এখনও সেই হারে পাওয়া যাবে।
এর আগে ২০১৫ সালে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’বা ‘ধার’হিসেবে গণ্য করা হয়।
আরও পড়ুন:সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নতুন ১৫টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী জাফর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. মাহবুব উল আলম।
ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া। ওই সময় ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামছুল হক ও মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে আউটলেটগুলোর এজেন্টরা অংশ নেন।
নতুন এজেন্ট আউটলেটগুলো হলো
নোয়াখালীর মগুয়া, নবগ্রাম ও সমিতির বাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মনকাশাইর, কিশোরগঞ্জের পাড়াতলী ও নারায়ণপুর বাজার, রংপুরের খলিলগঞ্জ, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন, ফেনীর আফতাব বিবিরহাট ও হাজারী পুকুর, খুলনার গড়ইখালী ও খর্ণিয়া বাজার, কুমিল্লার দক্ষিণ বালুয়া চৌমুহনী, চাঁদপুরের আফাজউদ্দিন মোল্লার বাজার ও পালের বাজার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য