কিনতে গেছেন সয়াবিন তেল, ১০ দোকান ঘুরেও পাবেন না, আবার কোথাও যদি কপালগুণে পেয়েও যান, কিনতে পারবেন না।
সেখানে দেয়া হবে নানা ধরনের শর্ত। যেমন তেল নিতে হলে আপনাকে নিতে হবে পোলাওয়ের চাল অথবা অন্য কিছু। একটি দোকানে গিয়ে দেখা গেল, ৩৬০ টাকা লিটারের সরিষার তেল কিনলেই ক্রেতাকে সয়াবিন তেল দিতে রাজি হচ্ছেন বিক্রেতা।
আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতিতে এক বছরের বেশি সময় ধরেই দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে মার্চ থেকে দাম বাড়ানোর আবেদন সরকার ফিরিয়ে দেয়ার পর বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দেয় কোম্পানিগুলো। তখন থেকেই তেল কিনতে গিয়ে তেলেসমাতির শিকার হতে হয়।
অন্য পণ্য কিনলেও তেল কিনতে পারছে না মানুষ- এমন পরিস্থিতিতে রোজার আগে আগে সরকার ভোজ্যতেলের আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স অনেকটাই কমিয়ে আনে। তখন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা করে কমানো হয়। বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
এর মধ্যে আবার অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ববাজার। তেলের দাম তেতে ওঠার পাশাপাশি পাম তেলের বড় সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বসে। এতে আবার দেশের বাজারে তেলের হাহাকার তৈরি হয়েছে।
আমদানিকারকদের দাবি, তাদের আনা নতুন তেলের যে দাম পড়েছে, বর্তমান বাজার দরে সেটি ছাড়লে লিটারপ্রতি লোকসান হচ্ছে ৫০ টাকার মতো। কিন্তু সরকার এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মূল্য সমন্বয়ের কোনো উদ্যোগ এখনও নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে মিলগুলো তেলের সরবরাহ একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে।
আগের সরবরাহ করা তেলের সবগুলোও যে স্বাভাবিকভাবে বিক্রি হচ্ছে- এমন নয়। সুযোগ বুঝে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করছেন- এটিও স্পষ্ট।
ঈদের দুদিন আগে থেকে রাজধানীর দোকানে দোকানে উধাও হয়ে যায় সয়াবিন তেল। কোথাও কোথাও ধানের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্রান অয়েল, সূর্যমুখীর তেল বা সরিষার তেল দেখতে পাওয়া যায়।
এর মধ্যে রাইস ব্রান ও সূর্যমুখীর তেলের দাম না বাড়লেও সরিষা তেলের দাম বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। সরকার সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করে দিলেও সরিষার তেলে চোখ বুঁজে আছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের দোতলায় মেসার্স শাহানা স্টোরে পাঁচ লিটারের এক বোতল সরিষার তেল ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেল। এর গায়ের দাম দেয়া ১ হাজার ৬১০ টাকা। অর্থাৎ সুপারশপ বা এলাকার দোকানে কিনতে হবে এই দামেই।
কারওয়ান বাজারে গায়ের দামের তুলনায় বেশ কমে বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা বললেন, ‘আমাগো কোম্পানি ছাড় দিছে।’
এই দাম চাওয়ার পর কর্মচারীকে ধমকাতে দেখা গেল দোকান মালিক বা তার তত্ত্বাবধায়ককে। তিনি বলেন, ‘তোরে এত কমে বেচতে কইছে কেডা?’
রাজধানীর নাখালপাড়া, ফার্মগেট এলাকা ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেল। তীর কোম্পানির পাঁচ লিটার তেল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন নুরুন্নবী ইমন নামে একজন।
কত নিল- জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গায়ের দামে তেল পাওয়া যায় না। আমি খুঁজছি অনেক পাই নাই। তারপর পাঁচ লিটার সয়াবিনের সঙ্গে এক লিটার সরিষার তেল কিনতে হয়েছে।
‘সয়াবিন ৭৬০, সরিষা ১ লিটার ৩৬০ টাকা সব মিলিয়ে তেলের পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে ১ হাজার ১২০ টাকা। এই সরিষার তেলের প্রয়োজন ছিল না। তাও বাধ্য হয়েই কিনতে হয়েছে।’
রামপুরা দাশপাড়ার বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র দাস জানান, এক লিটার তেল ১৬০ টাকা গায়ের মূল্য হলেও ১৭০ টাকা নিয়েছে কারওয়ান বাজারে। পাশাপাশি সেই দোকান থেকে তেল ও অন্য পণ্য কিনতে হয়েছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, 'হেরা (দোকানদার) তেল দিতে চায় না। কত রিকোয়েস্ট কইরা লইয়া আইছি।'
সুভাষ চন্দ্রের কথার সত্যতা মিলল কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান দোকানের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুকের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা গায়ের দামেই বিক্রি করছি। তবে শর্ত হইল বাজার নিতে হবে। কিন্তু মানুষ তেল নিয়া বাসায় জমায়। তাই শর্ত দিয়া দিই। এক লিটার তেল ১৬০, দুই লিটার ৩১৮ টাকা।’
নাখালপাড়ার গৃহিণী লিজা চৌধুরী সয়াবিন তেল কিনতে পাঁচ দোকান ঘুরেছেন। অন্য বাজার রেখে আসতে যাচ্ছিলেন বাসায়। জানালেন এরপর তেল খোঁজার জন্য আবার বের হবেন।
পশ্চিম নাখালপাড়ার হাফিজ স্টোরে গিয়ে শুধু এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া গেছে। সেই তেল আগের কেনা জানিয়ে দোকানি গায়ের দাম ১৬৮ টাকা লিটারেই বিক্রি করছিলেন।
বিক্রেতা বোরহান উদ্দীন বলেন, 'কাস্টমাররা এসে ফিরে যাচ্ছে। ডিলাররা দেয় না এটা হলো মূল কারণ।‘
সপ্তাহখানেক ধরে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি। বলেন, ঈদ উপলক্ষে তেমন কিছু বাড়ে নাই। পোলাওয়ের চাল প্যাকেটেরটা ১৩০ টাকা কেজি, খোলাটা ১১০ টাকা। পিঁয়াজ ২৫ টাকা, চিনি খোলাটা ৮০ টাকা, প্যাকেটেরটা ৮৫ টাকা।
মেসার্স আমান এন্টারপ্রাইজে গিয়ে সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। বিক্রেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তেলই তো নাই। যা ছিল, আগের দামে গতকাল বিক্রি করে ফেলেছি।’
পশ্চিম নাখালপাড়ার কুমিল্লা স্টোরে গিয়েও সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। সেখানে সানফ্লাওয়ার তেল আছে। পাঁচ লিটারের বোতলের গায়ের দাম ১ হাজার ৬৭০ টাকা লেখা। দোকানি বিক্রি করছিলেন ১ হাজার ৬০০ টাকায়। তবে কারওয়ান বাজারে এই তেল পাওয়া যায় ১ হাজার ২০০ টাকায়।
নাখালপাড়ার খুচরা ও পাইকারি বিক্রির দোকান খায়ের স্টোর। বিক্রেতা জানান, তেল এক লিটার ১৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল আছে যার কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১৯৫ টাকা।
নাখালপাড়ার চেইন সুপারশপ স্বপ্নের বিক্রয়কর্মী কাজী নাবিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে আউটলেটে সয়াবিন তেল নেই। অর্ডার দিয়েছি, আসেনি। রাইস ব্রান আছে শুধু।’
তেজগাঁওয়ের ফার্মগেটে রোজ ট্রেডার্সে অন্যান্য পণ্যের পসরা থাকলেও সয়াবিন তেল চোখে পড়েনি।
মজুত কেমন, সরবরাহ কত
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, এ মুহূর্তে দেশে ভোজ্যতেলের কোনো ঘাটতি নেই; বরং সয়াবিন ও পাম তেল চাহিদার চেয়ে বেশি মজুত রয়েছে। মজুত তেল আছে আমদানিকারক ও পরিশোধন কোম্পানিগুলোর গুদাম, কারখানায় এবং তাদের পরিবেশকদের হাতে।
দেশে সয়াবিন, পাম তেলসহ সব ধরনের ভোজ্যতেলের দৈনিক সরবরাহ দরকার প্রায় সাত হাজার টন, কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি কারখানা পর্যায় থেকে সরবরাহ দিচ্ছে দৈনিক তিন-চার হাজার টনের মতো।
বন্দরেও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে সয়াবিন ও পাম তেল। এর বাইরে বন্দরে ভেড়ার অপেক্ষায় সমুদ্রপথে রয়েছে আরও কয়েকটি তেলবাহী জাহাজ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়েছে, তা দিয়ে কমপক্ষে আরও দুই মাস চলার কথা। অন্যদিকে বিশ্ববাজার থেকে বর্তমানে যে তেল আমদানি হবে, তা দেশে আসতে আরও দুই মাস লাগার কথা। আবার তা দেশে আসার পর কারখানায় পরিশোধিত হয়ে বাজার পর্যায়ে সরবরাহ হতে আরও দেড়-দুই মাস লেগে যাবে।
পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও কেন সরবরাহে ঘাটতি জানতে চাইলে ভোজ্যতেলের অন্যতম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা এক কথায় বলেন, ‘আপনি ব্যবসা করলে কি লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবেন? কোম্পানিগুলোর কী দায় পড়েছে লিটারে ৫০ টাকা লোকসান দিয়ে তেল সরবরাহের।’
বাজারে তেলের সরবরাহে ঘাটতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ঈদের পর দাম সমন্বয় হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।’
টিকে গ্রুপের পরিচালক (ফাইন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) সফিউল আতাহার তাসলিম বলেন, ‘বাজারে তেলের সরবরাহ হচ্ছে না বিষয়টি এমন নয়, তবে সরবরাহ কমেছে। তার পরিমাণ ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।’
এ ঘাটতিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়ে মিলাররা যে এখনও তেল সরবরাহ করে যাচ্ছেন, সেটিই বিস্ময়ের বিষয়।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে গরু ও মুরগিসহ অন্যান্য মাংসের দাম চড়া থাকলেও স্থিতিশীল রয়েছে সবজির দাম।
শুক্রবার মহাখালী, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় গরুর মাংস ও মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে। সূত্র: ইউএনবি
পবিত্র রমজানা মাসে সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে গরুর মাংস মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে।
মানভেদে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হয়ে আসছিল ১০৫০ থেকে ১১৫০ টাকায়। তা কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে।
ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে তা ছিল ২২০ টাকা কেজি।
দাম বেড়েছে সোনালি মুরগিরও। তা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে।
একইভাবে প্রতি কেজি মোরগের দাম ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুরগির খাদ্য ও ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায় মাংসের দাম বেড়েছে।
বাজারে প্রায় সব সবজির দামই স্থিতিশীল রয়েছে। তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঢেঁড়স, সজনে, লম্বা শিম ও করলার মতো নতুন সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।
সজনে ছাড়া বাকি সবজি ৬০ থেকে ১০০ টাকায কেজি বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার মান ভেদে প্রতি কেজি সজনে বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়।
বেগুনসহ অন্যান্য সবজি প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ ও ফুলকপি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মান ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং আদা ২০০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৪৫ টাকা, হাঁসের ডিমের হালি ৭০ টাকা এবং ঘরে পালন করা মুরগির ডিম হালিপ্রতি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চলতি সপ্তাহে অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর তা আমদানি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)।
বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। সূত্র: ইউএনবি
তবে বৈঠকে পেঁয়াজের দাম প্রকাশ করা হয়নি। কারণ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য আবারও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ভারতের ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেডের কাছ থেকে জিটুজি (সরকার বনাম সরকার) ভিত্তিতে এসব পেঁয়াজ আমদানি করবে টিসিবি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের জানান, ক্রয় প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসার পর পেঁয়াজের দাম প্রকাশ করা হতে পারে।
রমজানে চাহিদা বাড়ায় ভারত থেকে আমদানি করা আলুর আরেকটি চালান বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ১৩ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৩২টি ট্রাকে এক হাজার টন আলু নিয়ে আসা হয়েছে বেনাপোলে।
আলুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো ইন্টিগ্রেটেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস। আলুর চালান বন্দর থেকে খালাস নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করেছে ট্রান্সমেরিন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ১৩ ও ১৪ মার্চ ২০০ টন করে এবং ১৯ মার্চ ৩০০ ও ২৪ মার্চ রাতে ৩০০ টন আলু আমদানি করা হয়।’
ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক লিমিটেড সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘চারটি চালানে ভারতীয় ৩২টি ট্রাকে এক হাজার টন আলু আমদানি করা হয়। প্রতি টন আলুর আমদানি খরচ পড়েছে ১৯৪ ডলার।’
এ বিষয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমদানি করা আলুর তিনটি চালানের ৭০০ টন ইতোমধ্যে বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছে। শেষ চালানের ৩০০ টন বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে।
‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খালাসের অনুমতি চাইলে দ্রুত ছাড়করণে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’
এর আগে গত বছরের ২ ডিসেম্বর ভারত থেকে তিনটি ট্রাকে ৭৪ টন আলু আমদানি করা হয়। এরপর চলতি মাসে চারটি চালানে আরও এক হাজার টন আলু আমদানি করা হয়েছে।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেছে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক)। বাজারের তুলনায় গরুর মাংস কেজিতে ২০০ টাকা কমে ৫৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
নগরীর টাউনহল মাঠে সোমবার বেলা ১১টার দিকে গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয়।
নগরীর স্টেশনরোড থেকে মাংস নিতে এসেছেন ভ্যানচালক ফাইজুল মিয়া।
তিনি বলেন, ‘বাজারে এক কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানে ২০০ টাকা কম হওয়ায় কিনতে এসেছি। রমজান মাসে নিশ্চই সিটি করপোরেশনের এটি মহৎ উদ্যোগ।’
শহরের গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকা থেকে আসা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘স্বামী না থাকায় প্রতিদিন গাঙ্গিনাড়পাড়ে তরিতরকারি বিক্রি করি। সময় যত যাচ্ছে, সব পণ্যসহ মাংসের দামও বাড়ছে। দাম বেশির কারণে মাংস কিনে খেতে পারি না। এখানে দাম কম হওয়ায় এক কেজি কিনে নিয়েছি।’
অটোরিকশা চালক লিটন মিয়া বলেন, ‘যাত্রী নিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে টাউনহল মোড়ে যাচ্ছিলাম। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে কম দামে মাংস কিনছে দেখতে পেয়ে যাত্রী নামিয়ে এসে আমিও মাংস কিনেছি।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, ভর্তুকি মূল্যে প্রত্যেকের কাছে এক কেজি করে গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথম দিন লোকজন সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস কিনে নিয়েছে।
পবিত্র রমজান মাসজুড়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার মাংস বিক্রির এ কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:সড়ক-মহাসড়কে ট্রাকে চাঁদাবাজির চেয়েও ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
শনিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ পুলিশ স্টাফ কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন সাইবার সিকিউরিটি কোর্স উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ-র্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যে জিনিস ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেটাই অল্প কিছু দূরে নিয়ে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির চেয়ে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার চিন্তা-ভাবনা পণ্যের দামে বেশি প্রভাব ফেলে।
‘যশোর থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় আসতে একটি ট্রাকের কত টাকা চাঁদা দিতে হয় হয় সেই হিসাব ধরে আমরা পরিসংখ্যান করেছি। চাঁদাবাজির চেয়ে অধিকতর মুনাফার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঢাকায় বাড়ে। চাঁদাবাজি রোধে পুলিশের স্পেশাল ড্রাইভ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজি বন্ধে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ইতোমধ্যে ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে সব মহাসড়ককে ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও ভোক্তা অধিকারসহ বিভিন্ন ফোর্স এখানে কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে যখনই আসে তখনই তারা অর্পিত দায়িত্ব পালন করে। যারা অধিক মুনাফা করছে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পাড়া-মহল্লায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু হলে অধিক মুনাফা রোধ করা সম্ভব হবে।’
রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিলিন্ডার কিংবা গ্যাস সংযোগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা দরকার। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী অগ্নিকাণ্ড রোধে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করলে ঘন ঘন অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারব।
‘রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে দেয়ার জন্য জায়গা দিয়েছি। তারপরও তারা গোপনে আবারও চলে আসে। আইন ভঙ্গ করে, রাজউকের অনুমোদন না নিয়ে যত্রতত্র সিলিন্ডার ব্যবহার না করার জন্য সবার প্রতি নির্দেশনা দেয়া আছে। নাশকতার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
সভাপতিত্ব করেন পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) ড. মল্লিক ফখরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:পেঁয়াজ রপ্তানিতে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িয়েছে ভারত। শনিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত থেকে মার্চের শেষে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ তৈরি হবে- এমন ভাবনায় দেশের বাজারে কিছুটা স্বস্তি এসেছিল। দামও অনেকটা কমে আসে। তবে প্রতিবেশী দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করার খবরে দেশের বাজারে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের ডিসেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল ৩১ মার্চ পর্যন্ত। শনিবারের বিবৃতিতে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত রপ্তানিতে এই স্থগিতাদেশ অব্যাহত থাকবে।
ভারতে লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ রপ্তানিকারী দেশ। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হয় ভারতীয় পেঁয়াজ।
ডিসেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দামে ধস নামে। আর দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানিকারী দেশগুলোর বাজারে দাম বাড়তে থাকে হু হু করে।
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। রাজ্যটিতে গত ডিসেম্বরে প্রতি ১০০ কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল চার হাজার পাঁচশ রুপি, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার দুশ রুপি।
বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। কয়েক দিন আগে এই দর ১২০ টাকা ছুঁয়েছিল।
ভারতের কৃষিপণ্য রপ্তানি সংক্রান্ত সরকারি সংস্থা হর্টিকালচার এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (হেপা) প্রেসিডেন্ট অজিত শাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। প্রতি বছরই মার্চ-এপ্রিল মাসে (আন্তর্জাতিক) বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়। এতদিন ভারতীয় পেঁয়াজ এই ঘাটতি সামাল দিতো। সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে এ বছরের তিন মাসে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ পৌঁছায়নি, সেজন্যই এ ঘাটতি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর কাঁচাবাজারে গরুর মাংস, মুরগি ও ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও সবজি, আলু ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার, মহাখালী, রামপুরা, মালিবাগসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। খবর ইউএনবির
রাজধানীতে গরুর মাংস ও মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। শুক্রবার প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। গত সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় ৫০ টাকা বেড়েছে। খাসির মাংস প্রতি কেজি ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা কেজি। যা আগে বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে প্রতি কেজি কক মুরগি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, মুরগির খাবার ও ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায় মাংসের দামও বেড়েছে।
প্রায় সবজির দাম কমলেও নতুন আসা মৌসুমি সবজির দাম যেমন সজনে ডাটা, শিম, করলার দাম বেশি। যা মান ভেদে ১০০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেগুনসহ অন্যান্য সবজি প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং লাউ, চালকুমড়া ও ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মান ভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং আদা ২০০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম প্রতি ডজন ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে এক ডজন বাদামি ডিম ১৪৫ টাকা, হাঁসের ডিম প্রতি হালি (৪টি) ৭০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকা (চারটি) দরে বিক্রি হচ্ছে। এ সপ্তাহে রান্নার অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মন্তব্য