আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর পর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসা ভোজ্যতেলের বাজার আবার অস্থির হয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়ার পাম তেল রপ্তানি নিষিদ্ধের খবরে। দোকান থেকে উধাও হয়ে গেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। খোলা মিললেও এক লিটার বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দরের চেয়ে ৫০ টাকার বেশিতে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সপ্তাহখানেক ধরে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার পর দুই দিন থেকে খুচরা বাজারে তেল সরবরাহই বন্ধ রয়েছে। এতে বাজার থেকে অনেকটাই উধাও এ নিত্যপণ্য।
আরেক দফা দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের পূর্বপাশে বেশ কয়েকটি মুদি দোকান রয়েছে। অন্য সময় সবগুলো দোকানের সমনে এক থেকে ৫ লিটারের বোতল সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়। কিন্তু শুক্রবার দোকানগুলোর সামনে কোনো বোতলের দেখা মিলল না। তার জায়গা দখল করে রেখেছে সেমাই, চিনি ও অন্যান্য ঈদসামগ্রী।
তেলের লিটার কত জানতে চাইলে বাশার এন্টারপ্রাইজের মালিক আবুল বাশার বলেন, ‘পাঁচ-সাত দিন ধইরা কোনো কোম্পানি ঠিকমতো তেল দিতাছে না। তিন দিন ধইরা একেবারেই বন্ধ। তেল না থাকায় অন্য মালও বেচতে পারতেছি না।
‘বড় দোকানদাররা হয়তো কিছু স্টক রাখছিল, সেগুলো এখন বেচতাছে। আমরা ছোট দোকানদার। মাল আনি আর বেচি। স্টকও নাই, বেচাও নাই। কাস্টমার এক দোকান থেইকা সব কিনতে চায়। এক মাল না পাইলে অন্যগুলোও নেয় না।’
তেল আছে কিনা জানতে চাইলে বিসমিল্লাহ ট্রেডিংয়ের বিক্রয়কর্মী আবদুর রহমান বলেন, ‘তেল নিয়ে যে কী হইতাছে, কিছুই বুঝতেছি না। দু-তিন দিন ধইরা তেল পাইতেছি না। কাস্টমার আইসা ফিরা যায়। আমরা তেল মজুত করতে পারতেছি না।
‘পাশেই মার্কেটের দোতলায় তেল হোলসেল করা হয়। কাস্টমারের যেমন চাহিদা থাকে তেমন আনি আর বিক্রি করি। দুই দিন ধইরা খোলা তেল আনার জন্য লোক পাঠাইয়াও পুরো বাজারে পাই নাই। এমনকি এক লিটার বোতলের তেলও পাই নাই।’
নিজের বাসার জন্য আট-দশ দোকান খুঁজে এক লিটার তেল কিনেছেন বলে জানালেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অথচ আমরা শুনছি দোতলার গোডাউনগুলা ভরা। কিন্তু তেল বাজারে ছাড়তাছে না। স্টক কম দেখায়া দাম আবার বাড়ানোর চিন্তা। তেল ব্যবসায়ীরা গত এক বছরে যে টাকা কামাই করতাছে গত ১০ বছরেও এত কামাই করছে কি না আমার সন্দেহ।’
এ দোকানি বলেন, ‘তেল কোম্পানিগুলো একেকবার একেক ফন্দি করে। এর আগে তীর কোম্পানি শর্ত দিছিল তিন কার্টন সয়াবিন তেল নিলে এক কার্টন সরিষার তেল নিতে হবে। এক কার্টনে ১৮ লিটার তেল। আবার প্রতি লিটার সরিষার তেল ৩১০ টাকা। এত দাম দিয়া কে কিনবে? তাই পাইলে তেল বেচি না পাইলে বেচি না।’
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরেই অস্থির তেলের বাজার। দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে তিন পর্যায়ে ৩০ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের সুবিধা দিয়েছে সরকার। যা ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।
কর ছাড়ের পর লিটারপ্রতি দাম কিছুটা কমানো হয়েছিল। আর রোজার আগে আগে এই পদক্ষেপে কিছুদিন সরবরাহ ছিল স্থিতিশীল। তবে হঠাৎ করেই বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেল নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা। পাম অয়েলের বড় সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে তেল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এরপর থেকেই দেশের বাজারে নতুন অস্থিরতার শুরু।
কারওয়ান বাজারে ভিড়ে হঠাৎ দেখা গেল একজন ৫ লিটারের তেলের বোতল নিয়ে যাচ্ছেন। নাম সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘১০-১২ দোকান ঘুরে এক দোকানে তেল পাইছি। তবে দাম বেশি রাখে নাই ৮০০ টাকাই নিচে। তাও যে তেল পাইছি এটাই অনেক। কিন্তু তেল নাই কেন বুঝলাম না। সরকার তো ট্যাক্স কমাইছে। কইছে, অনেক তেল আসতাছে। তাহলে তেল থাকবে না কেন? নিশ্চয়ই দাম বাড়ানোর ফন্দি।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই তেলের বাজারে কারসাজি চলছে। এ জন্য আমরা বাজার তদারকি চালিয়ে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। তবে সমস্যা তো সব পণ্যেই রয়েছে। তাই আমরা যেই অন্য পণ্যের দিকে নজর দিয়েছি, সেই সুযোগে ভোজ্যতেলের বাজারে আবারও অস্থিরতার পাঁয়তারা চলছে। আমরা আবারও তেলের বাজার তদারকি শুরু করব।’
রাজধানীর অন্যান্য বাজারে তেলের সংকট চলছে। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের আল আমিন স্টোরের মালিক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে তেল আনা বন্ধ। এক লিটার, দুই লিটার, পাঁচ লিটার কোনো মালই পাইতেছি না। কয়দিন ধরে দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ।’
পাশের দোকানের বিক্রেতা তারেক বলেন, ‘১০ দিন আগে বসুন্ধরা ও তীর কোম্পানি কিছু মাল দিয়েছিল। তাও শর্ত ছিল তাদের ব্যান্ডের হালিম মিক্স, চা পাতা, মসলা কিনতে হবে। যেগুলো খুব একটা চলে না। এখন দোকানে ২ লিটারের দুইটা বোতল আর এক লিটারের একটা বোতল আছে।’
এদিকে খুচরা বাজারে শুক্রবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অনেকে বোতলজাত সয়াবিন কিনে তা ভেঙে খোলা হিসাবে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক বছরের ব্যবধানে তেলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
সংস্থাটির হিসাবে এক বছর আগে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলে ছিল ১২০ টাকার মতো, এক মাস আগে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮৪ থেকে ১৮৬ টাকায়। বছরের ব্যবধানে ৫০ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে দাম ২৫.৪২ শতাংশ বেড়েছে।
এক বছর আগের ১০৬-১১০ টাকার খোলা পাম অয়েল এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৩১ থেকে ১৩৬ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। বছরের ৫৫ শতাংশ এবং মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৫.৪৭ শতাংশ।
পাম অয়েল সুপার এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ থেকে ১৭২ টাকায়, যা এক বছর আগেও ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। এক মাস আগে যা ছিল ১৪০ থেকে ১৪৪ টাকা। বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ আর মাসের ব্যবধানে ১৯.৩৭ শতাংশ।
আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম এক বছর আগে ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এক মাস আগে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।
আরও পড়ুন:ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিগত তিন অর্থবছর ধরে রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিন্ন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় মোট ৬৮ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ মঙ্গলবার ৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ৪৭.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকেই ডলার কিনছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ডলার কেনা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ (এফএক্স) নিলাম কমিটির মাধ্যমে, মাল্টিপল প্রাইস অকশন পদ্ধতিতে। এক ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ দফায় ডলার কেনে। ১৩ জুলাই ১৮ ব্যাংক থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনা হয়। এরপর ১৫ জুলাই একই দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২৩ জুলাই ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে এক কোটি ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ১০ আগস্ট ১১ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে মোট ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের দাম হঠাৎ করে অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া- দুটোই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে দেশে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং বিদেশি দায় পরিশোধও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ডলারের তীব্র চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ডলার ক্রয় রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করবে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে ডলারের চাহিদাও বাড়তে পারে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অভিজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপন করা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতায় বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ববিষয়ক বিরোধ ক্রমাগত বাড়ার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থার আলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গতি আনতে একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন এবং আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার একান্ত অপরিহার্য।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) ও ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবদুর রহিম খান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এদেশে আদালতে মামলার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টিকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। যার ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন করা হলেও, বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা যায়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ যদি প্রথাগত আদলতের বাইরে গিয়ে মেটানো যায়, তাহলে একদিকে যেমন আদলতের উপর চাপ কমবে, সেই সঙ্গে বাণিজ্যের পরিবেশেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি আরও বলেন, কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যবিষয়ক আদালতসমূহে বিশেষজ্ঞ বিচারকদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় সংষ্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বাংলাদেশ নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এ ধরনের সংস্কার দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহিম খান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শুধু যে এফডিআই আকর্ষন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়। বরং বিষয়টি আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার। তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।
অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর উপ আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের স্পেশাল অফিসার বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড এসোসিয়েটস-এর পার্টনার ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলোনায় ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সরকারের আন্ত:মন্ত্রণালয় সমন্বয়ের বেশ অভাব রয়েছে এবং এ অবস্থার উন্নয়ন না হলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বাণিজ্যিক বিরোধগুলো সমাধানে আদালতে না গিয়ে, আরবিট্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজির এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে ৩ টাকা। নতুন মূল্য অনুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১ হাজার ২৭৩ টাকা।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন। নতুন দাম গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়েছে ।
এছাড়া, গাড়িতে ব্যবহৃত অটোগ্যাসের দামও লিটারে ১৩ পয়সা কমিয়ে ৫৮ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসির ঘোষণায় বলা হয়, বেসরকারি খাতে ভ্যাটসহ প্রতি কেজি এলপিজির নতুন দাম ১০৫ টাকা ৮৭ পয়সা। সেখান থেকে বিভিন্ন ওজনের সিলিন্ডারের মূল্য নির্ধারিত হবে।
তবে সরকারি কোম্পানির সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৮২৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সৌদি আরামকোর প্রপেন ও বিউটেনের আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতি মাসে এ দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এই মূল্য নির্ধারণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে টমেটো আমদানি শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামের বড় বাজারের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ভারত থেকে টমেটো বোঝাই একটি ট্রাক হিলি বন্দরে প্রবেশের মধ্য দিয়ে টমেটো আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন ২৮ টন টমেটো আমদানি করা হয়েছে। প্রতিকেজি টমেটো আমদানি করতে শুল্কসহ খরচ গুণতে হচ্ছে ৬১ টাকা।
আমদানিকারক এনামুল হক বলেন, দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় ভারতের নাসিক রাজ্য থেকে এসব টমেটো আমদানি করা হচ্ছে। বন্দরে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা থাকলে আরও বেশি পরিমাণ টমেটো আমদানি করা হবে।
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, গতকাল মঙ্গলবার হিলি বন্দর দিয়ে এক ট্রাকে ২৮ টন টমেটো আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব টমেটো ৫০০ ডলারে শুল্কায়ণ করা হচ্ছে। যেহেতু টমেটো কাঁচাপণ্য তাই দ্রুত ছাড় করণে আমদানিকারককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধের তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ৬ আগস্ট সবশেষ এই বন্দর দিয়ে টমেটো আমদানি করা হয়েছিল।
বিশ্ব অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়স্থল খুঁজতে থাকায় মঙ্গলবার প্রতি আউন্স সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারের উপরে পৌঁছেছে।
এশিয়ায় প্রাথমিক লেনদেনের সময় মূল্যবান ধাতুটি প্রতি আউন্স ৩,৫০১ দশমিক ৫৯ ডলারে পৌঁছেছে, যা এপ্রিলে এর আগের রেকর্ড ৩,৫০০ দশমিক ১০ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
হংকং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিনিয়োগকারীরা দুর্বল মার্কিন ডলার ও ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদের হার কমানোর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নেওয়ায় সোনার দামের এই দরপতন ঘটেছে।
মার্কিন মুদ্রাস্ফীতির একটি মূল্য সূচক দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট রেকর্ড সর্বোচ্চ থেকে পিছিয়ে এসেছে। একই সময়ে, ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শ্রম দিবসের জন্য সোমবার ওয়াল স্ট্রিট বন্ধ ছিল, তখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ডলার মিশ্র লেনদেন করেছে।
বন্ধকী জালিয়াতির অভিযোগে ফেডের গভর্নরকে তিরস্কার করার পর ট্রাম্প গত মাসে বলেছিলেন, ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর লিসা কুক পদত্যাগ না করলে, তিনি তাকে বরখাস্ত করবেন।
মার্কিন আপিল আদালত ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক শুল্ক, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সেগুলো অবৈধ বলে রায় দেওয়ার পরও এই রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
তবে আদালত আপাতত এই ব্যবস্থাগুলো বহাল রাখার অনুমতি দেওয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য সময় পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কমিউনিটি ব্যাংকের স্টার্টআপ রিফাইন্যান্স স্কিমের অধীনে অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বুধবার (২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখার উপস্থিতিতে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এসএমইএসপিডি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) কিমিয়া সাআদত পারস্পরিক অংশীদারত্বমূলক এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। এ সময় অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক হাফিয়া তাজরিয়ান, যুগ্ম পরিচালক মো. নুরুল কাওসার সাঈফ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব কর্পোরেট ব্যাংকিং ও হেড অব বিজনেস (ব্রাঞ্চ) ড. মোঃ আরিফুল ইসলাম, হেড অব এসএমই অ্যান্ড এগ্রিকালচার শরিফ হাসান মামুনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে দেশের রপ্তানি আয় ১০.৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) আজ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয় ছিল ৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার।
তবে, সামগ্রিক এই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরও ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের আগস্টে অর্জিত ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।
স্বাভাবিকভাবেই তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৭ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মন্তব্য