রপ্তানিকারকদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিমা করার (ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ) নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকগুলো বর্তমানে বাকিতে পণ্য রপ্তানি বিল বৈদেশিক মুদ্রায় ডিসকাউন্ট করে রপ্তানিকারকদের অর্থায়ন করে থাকে। এই অর্থায়নের সুরক্ষার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে স্থানীয় বিমা কোম্পানির ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ রোববার এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে।
তাতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের নিজস্ব বিবেচনায় এবং রপ্তানিকারকদের সম্মতিতে এ ধরনের বিমা করতে হবে।
রপ্তানি বিল ডিসকাউন্টিং বা নির্দিষ্ট কমিশন নিয়ে রপ্তানি আদেশের বিপরীতে সৃষ্ট বিলের অর্থায়ন ছাড়াও রপ্তানির আগে ফান্ডেড কিংবা নন-ফান্ডেড সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রেও একইভাবে বিমা করতে সার্কুলারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ ধারণের নির্দেশ দিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ চিঠি দেয়ার পর আবারও দল বেঁধে কোম্পানির শেয়ারদরে উত্থান দেখা গেল।
দুই বছর আগে এমন একটি নির্দেশনা দেয়ার পর শেয়ারদর আকাশচুম্বী হয়ে গিয়ে বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। তবে গত কয়েক মাসে পড়তি দরেও শেয়ার কিনতে রাজি না থাকা বিনিয়োগকারীরা বুধবার বেশি টাকা দিয়েই শেয়ার কিনেছেন।
মঙ্গলবার আইডিআরএ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠি ৩০ নন-লাইফ বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়।
পরদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৪০টি সাধারণ বিমা কোম্পানির শেয়ারের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৯টির। একটির কেবল দর থাকে অপরিবর্তিত। অন্যদিকে ১৩টি জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১০টির, কমেছে দুটির আর একটির দর থাকে অপরিবর্তিত।
শেয়ারদর বাড়ার পরও ক্রেতার অভাব ছিল না, এটি প্রমাণ লেনদেনেই। সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোরই প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। জীবন বিমা কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে আরও প্রায় ৩০ কোটি টাকার মতো।
বিমার এই উত্থানের দিন পুঁজিবাজার পার করল হতাশার আরও একটি দিন। এক দিনে দর হারিয়েছে ২০০-এরও বেশি কোম্পানি। আর বিমা ছাড়া কেবল ৫০টির মতো কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। বিপুলসংখ্যক কোম্পানির শেয়ারদর আবার কমেছে নতুন বেঁধে দেয়া ২ শতাংশের কাছাকাছি। তবে এই দরেও বিপুলসংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না গত কয়েক দিনের মতোই।
বিমায় লেনদেন ব্যাপকভাবে বাড়লেও মোট লেনদেন কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আগের দিন হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হলেও সেটি কমে হয়েছে ৮০০ কোটি টাকার কিছু বেশি।
২০২০ সালের মে থেকে বিমা কোম্পানির শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থানের পেছনে এমন নির্দেশ কাজ করেছিল। এক দশকেও এই আইন বাস্তবায়ন না হলেও আইডিআরএ সংক্ষিপ্ত সময় বেঁধে দেয়। সে সময় এক বছরের মধ্যে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর দ্বিগুণ থেকে আট গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। কিন্তু পরে দেখা যায়, শেয়ারদর বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা অর্থ কামিয়েছেন। এরপর গত বছরের জুন থেকে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে। এর মধ্যে কোনো কোনো কোম্পানি ৫০ শতাংশ, কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার ৬০ শতাংশ দর হারিয়েছে।
এই স্মৃতির পরও বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএর চিঠির পরদিন সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির ৯টি ছিল বিমা খাতের। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টি ছিল এই একটি খাতের। আর সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টি ছিল বিমা খাতের।
তবে উত্থান সত্ত্বেও কোনো একটি কোম্পানির দরও দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন হয়নি। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদরে যোগ হয়েছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এ ছাড়া দুটি কোম্পানির শেয়ারদর ৬ শতাংশ, তিনটির দর ৫ শতাংশ, ১১টির দর ৪ শতাংশ, আটটির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১১টির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।
প্রাণ নেই বাজারে
পুঁজিবাজারে গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধন শেষের কেনো আভাসই যেন নেই। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেন যুদ্ধ বাজারে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেয়। দরপতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এক দিনে শেয়ারের দরপতনে সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ নির্ধারণের পর বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ৯ ও ১০ মার্চ ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিএসইসিতে বৈঠক করে বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পরেও লেনদেন সেভাবে বাড়ছে না। ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও বিনিয়োগে না গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এই অবস্থায় বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বৈঠকের দিন লেনদেন পৌনে দুইশ কোটি টাকার মতো কমে যাওয়া এটাই নির্দেশ করে যে, ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে না গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জোর দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের রোববার দরপতনের পর দুই দিন সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ হয়েছিল। তবে আজ সূচকের পতন হয়েছে ১১ পয়েন্ট।
বিমা ছাড়া অন্য সব খাতেই কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। প্রকৌশল, ওষুধ, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিকের মতো প্রধান খাতগুলোতে বেড়েছে খুব কম সংখ্যক কোম্পানির দর।
অন্যদিকে ছোট খাতগুলোর মথ্যে তথ্য প্রযুক্তি, সিরামিক এবং সেবা ও আবাসন খাতে সবগুলো শেয়ারের দর কমেছে।
এমনকি সাড়ে ২২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার পর টানা দুই দিন দর হারাল প্রিমিয়ার ব্যাংক। আগের দিন শেয়ার প্রতি ৪০ পয়সার পর দিন কমেছে ৩০ পয়সা।
সাড়ে ২৭ শতাংশ লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের পর ২০ পয়সা দর হারানো ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার আবার দর হারাল ২০ পয়সা।
নতুন করে দুই বছরের জন্য বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হওয়ার পর টানা তিন কর্মদিবস কেপিসিএলের শেয়ারের ক্রেতা পাওয়া যায়নি দিনের সর্বনিম্ন দামে। গত বৃহস্পতিবার ৩৫ টাকায় বিক্রেতা না থাকা কোম্পানিটির শেয়ারদর পরের দিন উঠে যায় ৩৮ টাকা ৩০ পয়সায়। সেই কোম্পানির শেয়ার এখন ৩৩ টাকা ১০ পয়সায় বসিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না।
পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির চেষ্টা হিসেবে এবার তালিকাভুক্ত নয়, এমন বিমা কোম্পানির দিকে দৃষ্টি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
এমন ২৬ বিমা কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য ফাইল দাখিল ও তাদের ইক্যুইটির ২০ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে পদক্ষেপ নিতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএ বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র রেজাউল করিমের সই করা চিঠি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের শেয়ারবাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিয়ন্ত্রণ করে। যাদের এই বাজারে অংশগ্রহণ প্রায় ৮০ শতাংশ। কিন্তু শেয়ারবাজারের উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা বেশি হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে বিমা কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের কাঠামোগত দুর্বলতার একটি হিসেবে ধরা হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের ঘাটতি। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি বিএসইসি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ বাড়াতে চিঠি দিয়েছে। সংস্থাটি মনে করে, ব্যাংকগুলোর আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সক্ষমতা আছে।
এর আগে ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই বৈঠক শেষে দুই পক্ষই বিনিয়োগ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাজারে লেনদেন বেড়েছে- এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিএসইসি জানিয়েছে, ২৬ বিমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে কমিশন বিভিন্ন ইস্যুতে ছাড় দিয়েছে। তবে সেসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসার জন্য ইক্যুইটির ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। এ নিয়ে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি গেজেটও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে ফাইল জমা এবং ইক্যুইটির ২০ শতাংশ বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়নি।
ইন্স্যুরেন্সের ক্ষতিপূরণ আদায় ও ব্যাংকঋণের দায় থেকে অব্যাহতি পেতে ফরিদপুরের ২ হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় জব্দ হওয়া ১২টি বাসে আগুন দেয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় হওয়া একটি মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার বিকেলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই তিনজনকে শহরের গোয়ালচামটে হেলিপোর্ট বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন পশ্চিম গোয়ালচামটের ২ নম্বর সড়ক এলাকার বাসিন্দা ২৪ বছরের জহুরুল ইসলাম জনি, একই এলাকার ২১ বছর বয়সী পারভেজ মৃধা ও নগরকান্দার লস্করদিয়ার গোড়াইল গ্রামের ৪১ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলী।
জামাল পাশা বলেন, ‘বাস পোড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জনি ও মোহাম্মদ আলী ঘটনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। বিকেলে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য ১ নম্বর আমলি আদালতে পাঠানো হয়।’
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তার জহুরুল ইসলাম জনি পুড়ে যাওয়া বাসগুলো দেখাশোনা করতেন আর মোহাম্মদ আলী সেখানকার নৈশপ্রহরী ছিলেন।
গত ১২ মার্চ রাত ১টার দিকে বাসগুলোয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যেই ১২টি বাস পুড়ে যায়। ঢাকার কাফরুল থানায় সিআইডির করা ২ হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় জব্দ হওয়া বাসগুলো কোতোয়ালি থানা পুলিশের হেফাজতে ছিল।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন এসআই আব্দুল গাফফার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন এসআই ফরহাদ হোসেন।
এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমদাদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ইমদাদুল হক জানান, বাসগুলো বিভিন্ন কোম্পানির ইন্স্যুরেন্স করা এবং ব্যাংকে দায়বদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, ‘এখনই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটিকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে তদন্ত সম্পন্নের জন্য। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন কর ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের সাউথ লাইন নামে পুড়ে যাওয়া ওই বাসগুলো অর্থ পাচার মামলায় গ্রেপ্তার শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের মালিকানাধীন। ২০২০ সালের ৭ জুন পুলিশের অভিযানে বরকত-রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে দুদক এসব বাস জব্দ করে। এর পর থেকে সেগুলো এখানেই রাখা ছিল।
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আধুনিক বিমা ব্যবস্থা চালু করতে চান বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই সরকারি-বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমার অর্থ তুলতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কেউ যাতে প্রতারণা করে বিমার অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে সেদিকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ সরকারপ্রধানের।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বিমা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের মতো বিমা ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক, সেটাই আমরা চাই। আমাদের সরকার যে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর অনুমতি দিয়েছে-এগুলো আরও কার্যকর করতে হবে।’
বিমা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিমা সেবা প্রদান করতে হবে। মানুষকে বিমার বিষয়ে আগ্রহী করতে নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। জনগণকে উৎসাহী করতে হবে। আমার একটা অনুরোধ থাকবে, এই সেবাটি যদি মানুষ হাতের কাছে পায়, তাহলে অনেকে কিন্তু তার জীবনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
বিমাকে ‘আমানত’ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি একটা আমানত রাখছেন। সে আমানতটা যেন যথাযথভাবে সময়মত মানুষ পেতে পারে। আবার এটা পেতে গিয়ে যেন কোনো ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে না হয়।
‘আমি বলব, যেটা তার প্রাপ্য সে যেন সহজে পেতে পারে, সে ব্যবস্থাটাও নিতে হবে। অবশ্য আমি বলব, পাশাপাশি কেউ দুই নম্বরি করে নিতে চাচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে। কিন্তু তার টাকাটা যেন সে পায়, কোন হয়রানি যাতে না হয়, সে হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’
বীমা নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, অনেক পোশাক কারখানায় ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে বীমার টাকা দাবি করার ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেকেই ব্যবসা করতে গিয়ে বীমা করে। এরপরে ভুল বা অসত্য তথ্য দিয়ে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রিমিয়াম থেকে টাকা দাবি করে। আসলে হয়তো এই দাবি সঠিক নয়। এসব বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে।’
সততার সঙ্গে কাজ করলে সব পক্ষ লাভবান হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমাদের অনেক ব্যবসায়ীরা আছেন, যারা হয়তো এক্সপোর্ট করছেন বা ইমপোর্ট করছেন। তারা ইন্সুরেন্স করেন না, ওই সামান্য টাকা দিতে হয় সেজন্য।’
কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তার যে বিশাল লোকসান হয়ে যায়, সেটা সে ভুলে যায়। এই ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা আপনাদের নিতে হবে। প্রচার প্রচারনা নিতে হবে, এটা না করলে কী ক্ষতি হতে পারে আর করলে কী লাভ হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘যারা দুনম্বরি করে টাকা নিতে চায়, সেগুলো ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ বিষয়ে আমি মনে করি আপনারা আরও বেশি সতর্ক থাকবেন।’
বিমা চালু করে প্রিমিয়াম না দেয়ার বিষয়টির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকেরা বিমার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম দেয়ার বিষয়টা ভুলে যায়, বা দেয়া হয় না, মনে থাকে না- এমন একটা অবস্থা হয়। সেখানে তাদের কাছে স্মরণ করিয়ে দেয়া, সেটা ঠিকমতো পৌছালো কি-না সেই ব্যবস্থা নেয়া- এই বিষয়টির দিকেও একটু নজর দিতে হবে। যাতে বিমা সবসময় চালু থাকে।’
বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিমা ব্যবস্থাকেও ডিজিটাইজ ও অটোমেশনের মধ্যে আনতে হবে এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি বিমাখাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে ইউনিফাইড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিমাখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জনকে দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। তাদের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এ ছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন দুই শিশুর হাতেও বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা তুলে দেন তিনি।
ছয় দফার প্রণেতা বঙ্গবন্ধু
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তাই বিমার প্রতি নিজের অনুরাগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর তা টাইপ করে সহযোগিতা করেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. হানিফ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন, ছয় দফা কে লিখল, কীভাবে লিখল? কারা কারা ছিল? হয়তো অনেক বিশেষজ্ঞ ছিল। বিষয়টা তা নয়, এই আলফা ইনসুরেন্স কোম্পানির অফিসে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এটা রচনা করতেন। আর এটা টাইপ করেছিল মোহাম্মদ হানিফ। দিনের পর দিন তিনি বসে বসে ছয় দফা প্রণয়ন করেন এবং হানিফ এটা টাইপ করে। কারণ হানিফ অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিল, কোনোদিন তার কাছ থেকে একটি শব্দও বের করতে পারেনি। সেই ছয় দফা আসলে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ, আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশ ইনসুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বিমা কোম্পানিকে জাতীয়করণ করে সুরমা, রূপসা, তিস্তা এবং কর্ণফুলি নামে চারটি বিমা করপোরেশন গঠন করেছিলেন। একইসঙ্গে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে দেখভাল করতে জাতীয় বিমা করপোরেশন গঠন করেন।
শিক্ষা বিমা চালুর তাগিদ
পৃথিবীর সব দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বিমা আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অকাল মৃত্যুতে বা শারীরিক অক্ষমতায় তাদের শিক্ষাজীবন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা চালু করা হয়েছে।’
দেশেও এ বিমার চালুর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেমন একটা সন্তান জন্ম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি এ ধরনের একটা ব্যবস্থা করা যায়, একটা বিমা বাবা-মা করে রাখবেন, শিক্ষা বিমা।
‘সেই সন্তান যখন বড় হবে, হয়তো প্রাথমিক বা মাধ্যমিকে অতটা লাগবে না। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তার লাগবে। তাহলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার আর কোনো সমস্যা হবে না। ওই বিমার টাকা দিয়ে ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। এদিকে আরেকটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
সার্বজনীন পেনশন
দেশের মানুষের জীবনের নিশ্চয়তায় সার্বজনীন পেনশন প্রবর্তন করা হচ্ছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা একটি ঘোষণা দিয়েছি, আপনারা জানেন যে আমরা সার্বজনীন একটি পেনশনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে আমাদের ছোট দেশ, বিশাল জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার জন্য একটি সুরক্ষিত জীবন দেয়া। আমি চাই এদেশে কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না, হতদরিদ্র থাকবে না। প্রত্যেকের জীবন জীবিকা চালুর মতো একটা সুন্দর ব্যবস্থা আমাদের সমাজে হবে, অর্থনৈতিকভাবে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রতিটি পরিকল্পনা নিচ্ছি কাজ করে যাচ্ছি এবং তার সুফল মানুষ পাচ্ছে।’
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার পর সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সেটা আমরা করে দিচ্ছি।’
গ্রাহকরাই বিমা শিল্পের প্রাণ। গ্রাহকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই এ খাতের বিকাশ ঘটাতে হবে। বিমা সেবাকে একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও নিষ্ঠা এবং পেশাদারির সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে পরিশোধ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিগুলো প্রতিপালন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও গ্রাহকবান্ধব সেবা প্রদানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে; সুশাসন নিশ্চিত হবে। দেশের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান আরও বাড়বে।
১ মার্চ মঙ্গলবার জাতীয় বিমা দিবস উপলক্ষে নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন দেশের প্রথম বেসরকারি জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাজিম উদ্দিন।
নিউজবাংলা: একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিমা খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১ শতাংশেরও কম। দেশের বিমা খাতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে আপনার পরামর্শ কী?
কাজিম উদ্দিন: একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিমা অন্যতম অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এসকল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মতো জটিল কাজ আর্থিক খাতে একমাত্র বিমার মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। সমাজে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসন এবং পেনশন বিমার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও বিমা একটি কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। তাই ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য নন-লাইফ (সাধারণ) বিমা এবং জীবনের ঝুঁকির জন্য জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বিমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের জনগণই বিমা শিল্পের প্রাণ। একমাত্র গ্রাহকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই এ শিল্পের বিকাশ সম্ভব। তাই বিমা সেবাকে একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও নিষ্ঠা এবং পেশাদারির সঙ্গে কাজ করতে হবে। গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিগুলো অনুসরণ করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক সেবা মান বাড়াতে হবে।
এ কথা ঠিক যে, আমাদের বিমা খাতে অস্থিরতা চলছে। এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে বিমা আইন-২০১০ বাস্তবায়নে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে; নজরদারি বাড়াতে হবে। জাতীয় বিমানীতি-২০১৪ কে যুগোপযোগী করে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে বিমা দাবি পরিশোধের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকরী পদক্ষেপ বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমি মনে করি। বিমা কোম্পানিগুলোকেও সময়মত বিমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। গ্রাহক সেবার বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।
নিউজবাংলা: দেশের জীবন বিমা খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল লাইফ। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় কোন কোন বিষয়গুলোকে আপনারা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?
কাজিম উদ্দিন: হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন, ন্যাশনাল লাইফ ১৯৮৫ সালের ২৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানি। বেসরকারি খাতে প্রথম জীবন বিমা কোম্পানি হিসেবে আমরা আমাদের সফলতা ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় আমরা সময়মত বিমা দাবি পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।
২০২০ সালে আমরা ১ লাখ ৮৮ হাজার গ্রাহককে ৭৯৯ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করেছি, যার প্রেক্ষিতে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করেছি। ২০২১ সালে ২ লাখ গ্রাহককে ৮৭২ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করি। ফলশ্রুতিতে ১ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করতে সক্ষম হই। বর্তমানে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫৭ লাখ। প্রিমিয়াম আয় ১৩ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, লাইফ ফান্ড ৪ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা, বিনিয়োগ ৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা এবং মোট সম্পদ ৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।
নিউজবাংলা: বিমা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কোন কোন বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
কাজিম উদ্দিন: আমি মনে করি প্রতিষ্ঠানের উন্নতির প্রধান বাহক হচ্ছে দক্ষ কর্মী। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে কর্মী/কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী হিসেবে তৈরী করছি; যাতে তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয়ের মাধ্যমে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। বিমা শিল্পের প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে গ্রাহক। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী ছাড়া কখনও গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা সম্ভব না।
নিউজবাংলা: এবারের বিমা দিবসে আপনাদের পরিকল্পনা কী?
কাজিম উদ্দিন: সরকারিভাবে সারা দেশে ১ মার্চ বিমা দিবস পালিত হচ্ছে। আমরাও সরকারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে বিমা দিবস পালন করছি। এছাড়া কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক মার্চ মাসে সেবা পক্ষ পালনসহ বিমা গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান এবং বিমার প্রচার-প্রসারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার পরিককল্পনা নিয়েছি।
নিউজবাংলা: অন্য জীবন বিমা কোম্পানির চেয়ে আপনার প্রতিষ্ঠান কেন এগিয়ে? কিভাবে পরিচালনা করেন?
কাজিম উদ্দিন: আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে কোম্পানির পরিচালক, বিমা গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার এবং কর্মকর্তা/কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে কোম্পানিকে পরিচালনা করা। গ্রাহক সেবা এবং সময়মত বিমা দাবি পরিশোধে আমরা সবসময় তৎপর; সে কারণে জীবন বিমা খাতে ন্যাশানাল লাইফের প্রতি সবার আস্থা বিদ্যমান আছে। আমাদের কোম্পানি সবসময় সরকারের কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন করে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। একারণে ন্যাশনাল লাইফ ইন্সটিটিউট অফ চাটার্ড সেক্রেটারিজ অফ বাংলাদেশ কর্তৃক ‘করপোরেট গভর্ননেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ অর্জন করেছে।
নিউজবাংলা: নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে আইডিআরএ যে সব উদ্যোগ নিচ্ছে তা বিমা খাতের জন্য কতটা সহায়ক বলে আপনি মনে করেন?
কাজিম উদ্দিন: আইডিআরএ বিমা খাতের উন্নয়নে নানামূখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু আশার আলো বিমা দাবি পরিশোধের প্রয়াস’, বিভিন্ন বিধি-প্রবিধানমালা প্রণয়নসহ আরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সব উদ্যোগ বিমা খাতের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি। যে সকল কোম্পানি সময়মত বিমা দাবি পরিশোধ করছে না তাদের ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সময়মত বিমা দাবি পরিশোধই বিমা খাতের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে সহায়তা করবে।
নিউজবাংলা: আপনি কেন বিমা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হলেন? এই শিল্প নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
কাজিম উদ্দিন: বিমা একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান। একমাত্র বিমা শিল্পেই কেউ পরিশ্রম করে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে। আমি ন্যাশনাল লাইফের এন্ট্রি লেভেল থেকে কাজ শুরু করে আজ কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বিমা শিল্প নিয়ে আমার পরিকল্পনা হচ্ছে এ শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, জিডিপিতে বিমা শিল্পের অবদান বৃদ্ধি করা এবং সর্বোপরি দেশের জনগণকে বিমার আওতায় এনে আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
আমি মনে করি, টেকসই বিমা শিল্পের স্বার্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় বিমা সেবা পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি প্রচলিত বিপণন পদ্ধতিতে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। বাংলাদেশে বিমা খাতে যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো বেগবান হবে বলে আমি মনে করি।
ব্যাংক, বিমা, পুঁজিবাজার—আর্থিক খাতের এই তিনটির মধ্যে বিমাই সবচেয়ে পিছিয়ে। জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) এ খাতের অবদান ১ শতাংশেরও কম। বিমা প্রিমিয়ামে মাথাপিছু ব্যয় মাত্র ৯ ডলার, যা সারা বিশ্বের নিম্নতম। যথাযথ নীতি প্রণয়নের অভাবে খাতটি থেকে ভালো কিছু বের করে আনতে পারছে না বাংলাদেশ।
বিমা অধিদপ্তর দিয়ে কাজ চলছিল না। ফলে এটিকে বিলুপ্ত করে ২০১১ সালে গঠন করা হলো বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা- আইডিআরএ। কিন্তু এই আইডিআরএ দিয়ে এখন না হচ্ছে উন্নয়ন, না হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বিমা খাতকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিয়ে আসা হয়। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নামে নিয়ন্ত্রক এই আইডিআরএ ১১ বছর ধরেই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
দিন যত যাচ্ছে, বিমা খাতে অস্থিরতা বাড়ছে। বেশ কয়েকটি জীবনবিমার অবস্থা খুবই খারাপ। ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সে জটিলতা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে আবার আদালতে মামলা চলছে। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত বছর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেমায়েত উল্লাহকে অপসারণ করেছে আইডিআরএ। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়। অন্য বিমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। স্বচ্ছতা-জবাবদিহির অভাব, গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে পরিশোধে করা হয় না- এমন অভিযোগ হরহামেশাই করেন গ্রাহকরা।
এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ মঙ্গলবার পালিত হচ্ছে জাতীয় বিমা দিবস। ‘বিমায় সুরক্ষিত থাকলে, এগিয়ে যাব সবাই মিলে’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তৃতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে দিবসটি।
এ উপলক্ষে এবারও বিভিন্ন আয়োজন হাতে নিয়েছে সরকার এবং এ খাতের উদ্যোক্তারা।
দিবসটি উপলক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন, বিমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেনসহ অন্যরা বক্তব্য দেবেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে টেকসই বিমা শিল্পের স্বার্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে পরিশোধ করতে বলেছেন তারা।
বিমা শিল্পের উন্নয়ন ও বিমা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি সরকার জাতীয় বিমা দিবস প্রবর্তন করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেন। তার এ যোগদানের দিনটিকে জাতীয় পর্যায়ে স্মরণীয় করে রাখতে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সুপারিশক্রমে প্রতি বছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। ওই বছরের ১ মার্চ এটি প্রথম দিবস হিসেবে পালিত হয়।
রাষ্ট্রপতির বাণী
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, ‘তৃতীয়বারের মতো জাতীয় বিমা দিবস পালিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি বীমা প্রতিষ্ঠান, গ্রাহকসাধারণসহ বিমা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সব ধরনের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছে জেল-জুলুম সহ্য করে এবং কঠিন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। তিনি ১৯৬০ সালের ১ মার্চ আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে যোগদানের মাধ্যমে বিমাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এ দিনটি স্মরণে প্রতি বছর ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবস পালন বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি বিমা শিল্পের উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে।’
‘একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিমা অন্যতম অনুষঙ্গ। মানুষের জীবন ও সম্পত্তি বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এসব ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মতো জটিল কাজ আর্থিক খাতে একমাত্র বিমার মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। সমাজে বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসন এবং পেনশন বিমার মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যও বিমা একটি কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নন-লাইফ বীমা এবং জীবনের ঝুঁকির জন্য জীবন বিমা ও স্বাস্থ্য বীমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
‘৩৫টি লাইফ ও ৪৬টি নন-লাইফ ইনস্যুরেন্সে মিলে দেশে বর্তমানে ৮১টি বিমা প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাধারণ জনগণই বিমা শিল্পের প্রাণ। একমাত্র গ্রাহকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই এ শিল্পের বিকাশ সম্ভব। তাই বিমা সেবাকে একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো নিষ্ঠা এবং পেশাদারির সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। গ্রাহকের বিমা দাবি যথাসময়ে পরিশোধ, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিগুলো প্রতিপালন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও গ্রাহকবান্ধব সেবা প্রদানে এগিয়ে আসতে আমি বিমা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি বাংলাদেশের বিমা শিল্পের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।’
‘আমি জাতীয় বিমা দিবস ২০২২ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচি সফল হোক- এ কামনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিমা পেশায় যোগদানের স্মৃতিবিজড়িত ১ মার্চ “জাতীয় বিমা দিবস” পালন হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এবারের বিমা দিবসের প্রতিপাদ্য “বিমায় সুরক্ষিত থাকলে, এগিয়ে যাব সবাই মিলে” যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় অর্থনীতিতে বিমার গুরুত্ব এবং এর অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে স্বাধীনতার পর বিমা শিল্পকে অধিকতর অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বিমা কোম্পানিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে সুরমা, রূপসা, তিস্তা এবং কর্ণফুলী নামক ৪টি বিমা করপোরেশন গঠন করেছিলেন। একই সঙ্গে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে জাতীয় বিমা করপোরেশন গঠন করেন।
‘পরবর্তী সময়ে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বিমা শিল্পের উন্নয়নে “ইনস্যুরেন্স করপোরেশন আইন-১৯৭৩” প্রণয়ন করে এই ৪টি করপোরেশনকে ভেঙে জীবন বিমা করপোরেশন এবং সাধারণ বিমা করপোরেশন নামে দুটি পৃথক বিমা করপোরেশন গঠন করেন। এ দুটি করপোরেশন এখনও দেশে বিমা ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে দেশের জনগণকে বিমা সেবা দিয়ে আসছে। বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিমা অধিদপ্তর গঠন করেন।’
‘বিমা শিল্পের উন্নয়নের জাতির পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিমার গুরুত্ব ও সুফল জনগণের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। পুরাতন বিমা আইন-১৯৩৮ কে রহিত করে সময়োপযোগী বিমা আইন-২০১০ এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ প্রণয়ন পূর্বক তৎকালীন বীমা অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। জাতীয় বিমা নীতি-২০১৪ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমা খাতের বিকাশে আমাদের সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
‘বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য প্রবাসী কর্মী বিমা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি মোকাবিলায় হাওড় এলাকায় সীমিত পরিসরে আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক শস্য বিমা চালু করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে State-of-the-art technology সম্পন্ন Unified Messaging Platform (UMP) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বিমা ঝুঁকি আবরণ ও পুনর্বিমা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাধারণ বিমা কর্পোরেশন বিশেষ অবদান রাখার পাশাপাশি বিমা প্রসার এবং বিমা শিল্পে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে।’
‘টেকসই অর্থনীতিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য বিমা জরুরি। বর্তমানে উন্নত দেশসমূহে মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিমা ব্যবস্থাকেই বেছে নিয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বে বিমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ৬.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে এখাতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট প্রিমিয়াম আয় ছিল ১.৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রিমিয়াম আয় ১৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশে বিমা পেনিট্রেশন মাত্র ০.৫৬ শতাংশ। বিমার পেনিট্রেশন বৃদ্ধিতে গ্রাহকগণের প্রতি বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিশ্রুতির যথাযথ পরিপালন আবশ্যিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে বিমা পণ্য বাজারজাত করতে হবে। সরকারি ভাতা সহায়তা বা ভর্তুকির চেয়ে মানুষের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি বা আপদকালীন সময়ে বিমা অধিক কার্যকর বিকল্প হতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘টেকসই বিমা শিল্পের স্বার্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরো সচেতন হতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় বিমা সেবা পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি প্রচলিত বিপণন পদ্ধতিতে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। সর্বোপরি বীমার যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরো বেগবান হবে বলে আমি আশা করি।’
‘জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে তার স্মৃতি বিজড়িত আজকের এই দিনে বিমার শুভবার্তা দেশের সকল নাগরিকের নিকট পৌছে যাক, দেশের সকল মানুষ এবং সম্পদ বিমা সেবার আওতায় আসুক- এই প্রত্যাশায় আমি জাতীয় বিমা দিবস ২০২২-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।’
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শেখ কবির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিমা দেশের একটি সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপর্ণ আর্থিক খাত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার পর দেশীয় বিমা শিল্প সৃষ্টি হয় এবং বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২, দ্য ইনস্যুরেন্স কো-অপারেশন অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর মতো বিমা সংশ্লিষ্ট মৌলিক আইন প্রণীত হয়।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। তার সঙ্গে তালমিলিয়ে বিমা খাতও এগিয়ে চলেছে। তবে এটা ঠিক যে, এ খাতে কিছু অস্থিরতা আছে; সমস্যা আছে। আমরা সে সব থেকে কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। সামনের দিনগুলোতে বিমা খাতে সুশাসন ও শৃংখলা ফিরে আসবে বলে আমি আশা করছি।’
বীমা দিবসে শপথ করি, উন্নত দেশ গড়ি’-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০২০ সালের ১ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয় জাতীয় বীমা দিবস। ২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো উদযাপিত জাতীয় বীমা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, বীমা হোক সবার’।
দেশে বর্তমানে ৩৩টি জীবনবিমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে ৩০টি বেসরকারি, ২টি বিদেশি এবং ১টি রাষ্ট্রায়ত্ত-জীবন বিমা করপোরেশন। অন্যদিকে ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে বেসরকারি ৪৫টি এবং ১টি রাষ্ট্রায়ত্ত-সাধারণ বিমা করপোরেশন।
মন্তব্য