দেশের জনগণের কষ্ট লাঘবে স্বস্তিদায়ক বাজেট নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন বাজেটে চাপ সামলানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বুধবার অর্থনৈতিকবিষয়ক ও ক্রয় কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণের যাতে ভোগান্তি না বাড়ে, তাদের ওপর যাতে কোনো চাপ সৃষ্টি না হয়, সেভাবেই আগামী অর্থবছরের বাজেট সাজানো এবং সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।’
জনগণের জীবনযাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে, মানুষ কষ্টে আছে, এমন প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেটে করের বোঝা লাঘবে কোনো পদক্ষেপ থাকবে কি না -জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটের আকার কেমন হতে পারে, এর কাঠামো কী হবে, এসব বিষয়ে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা করেছি। কিন্তু শুল্ক ও কর ছাড় বিষয় নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এসব বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে আমাদের আরও বসতে হবে।’
‘তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমরা ট্যাক্সের বিষয়গুলো ঠিক করব। তবে নিশ্চয়ই এমন কিছু করা হবে না, যাতে সাধারণ জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। চাপ সামলানোর জন্য যা কিছু দরকার আমরা আগামী বাজেটে তাই করব।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। যা হবে জিডিপির ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনার পর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে আগামী বছর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বেগবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
নতুন বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভর্তুকি চাপ সামলানো। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে সার, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে তাতে করে দেশীয় বাজারে এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নতুন বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বেড়ে যেতে পারে। সে জন্য নতুন বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এটি এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ বলে জানা গেছে। চলতি বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ৫০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বাজেট কেমন হতে পারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বাজেটের বিষয়ে গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় সব তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে। এখন আমরা কোন খাতে কত বরাদ্দ হবে এবং কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সেসব বিষয় চূড়ান্ত করব সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে।’
‘এটাকে আরও কীভাবে স্বচ্ছ করা যায় সে জন্য কাজ চলছে। আশা করছি, নতুন বাজেটে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে।’
আরও পড়ুন:
সংবাদপত্র শিল্প অত্যন্ত খারাপ সময় পার করছে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে, এই শিল্পে একটা বেদনাদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদপত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে কর ছাড়ের সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে এ শিল্প বাচঁবে না।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বৃহস্প্রতিবার রাতে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আলোচনায় সংবাদপত্র শিল্পে বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল পরিশোধ, করপোরেট কর ও অগ্রিম কর কমানো, আমদানি করা নিউজপ্রিন্টের মূল্য সংযোজন কর–ভ্যাট কমানো, যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ ও বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন সাংবাদিকরা।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অর্থমন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।
চ্যানলে আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আসন্ন বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পরার্মশ দেন। পাশাপাশি সারের সঙ্গে খাদ্য পণ্যে ব্যাপক ভতুর্কি দেয়ার প্রস্তাব করেন।
যানজট নিরসন ও দুর্ঘটনা রোধে বাজেটে পৃথক বরাদ্দের প্রস্তাব করেন সমকাল ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংবাদ শিল্প অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠিন সময় পার করছে।’ সংবাদপত্র শিল্পে পঞ্জিভূত বকেয়া বিজ্ঞাপনের বিলের টাকা দ্রুত ছাড়ের দাবি জানান তিনি।
সংবাদপত্র শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কপোরেট কর হার ১০ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ ও আমদানি করা নিউজপ্রিন্টের মূল্য সংযোজন কর কমানোর দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘সংবাদ শিল্প গভীর সংকটের দিকে যাচ্ছে। কর ছাড় না দিলে এই শিল্প বাঁচবে না।’
বিদ্যুতের দাম সহনীয় মাত্রায় কমানোর প্রস্তাব করেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ।
আরও পড়ুন:বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ একটি সেরা দেশ। শ্রীলঙ্কা কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করা যাবে না। অন্য কোনো দেশের সঙ্গেও তুলনা করা ঠিক নয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন। আগামী জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাজেট করি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। আগামী বাজেট হবে স্বচ্ছ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘অনেকে আমাকে কাছে প্রশ্ন করে- বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে কিনা? তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, বাংলাদেশ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে শ্রীলঙ্কা তো নয়ই; অন্য কোনো দেশের সঙ্গেও তুলনা করা ঠিক নয়।
‘বাংলাদেশ বিদেশ থেকে যে ঋণ নেয় তার ৭২ শতাংশই নমনীয় ও সহজ শর্তের। আর শ্রীলঙ্কার নেয়া ঋণের সবই হার্ড লোন বা কঠোর শর্তের। আমাদের বিদেশি ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৫ শতাংশ, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন।
‘বাণিজ্যিকভাবে কোনো ঋণ নেয় না বাংলাদেশ। আমাদের নেয়া সব ঋণেই সুদ কম। তাছাড়া আমরা ঋণ নিয়েছি কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্পের জন্য। অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হওয়ার বিষয়টি মূল্যায়ন করে আমরা ঋণ নিয়ে থাকি। কাজেই বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। বরং অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি।’
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ শতাংশ আর বাংলাদেশে ৬ শতাংশের কিছু বেশি। সে হিসাবে ওইসব দেশের তুলনায় আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ ও অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদি।
ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। বৃহস্পতিবার ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ৭৭ রুপি ৭৩ পয়সা।
ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতনের কারণে বাংলাদেশের মতোই ভারতের পুঁজিবাজারেও চলছে অস্থিরতা। দেশটির পুঁজিবাজারে গত ১০টি ট্রেডিং সেশনে এ নিয়ে পাঁচ দফা দরপতন হয়েছে রুপির।
বুধবার মুদ্রা মান ১৮ পয়সা কমে ৭৭ রুপি ৬২ পয়সায় বন্ধ হয়েছিল। ভারতে মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক মন্দার জন্য এদিন রুপির দাম কমে যায়। রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর পর থেকে রুপির দাম পড়তে থাকে।
আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বৃহস্পতিবার শুরুতে ডলার পিছু রুপির দাম ছিল ৭৭ রুপি ৭২ পয়সা। এক পর্যায়ে দাম আরো কমে ডলার পিছু দাঁড়ায় ৭৭ রুপি ৭৬ পয়সা। পরে তা হয় ৭৭ রুপি ৭৩ পয়সা।
রুপির দরপতনের প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারেও।
বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে সেনসেক্স ১,৪১৬.৩০ পয়েন্ট বা ২.৬১ শতাংশ কমে ৫২,৭৯২.২৩ তে শেষ হয়েছে। যেখানে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে নিফটি ৪৩০.৯০ পয়েন্ট বা ২.৬৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫,৮০৯.৪০।
বুধবার পুঁজিবাজারে মূল বিক্রেতা ছিল বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এদিন তারা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুসারে তারা ১ হাজার ২৫৪.৬৪ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করে।
আরও পড়ুন:করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি করেছে তা মোকাবিলায় অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে একসঙ্গে বসে করণীয় ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রিসভা বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এর আগে, সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে বসে মন্ত্রিসভা। সভায় দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘একসঙ্গে বসে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করা যায় তা ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী দু-তিনদিনের মধ্যে বসে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’
বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে ডিটেইল আলোচনা হয়েছে। কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রিকে কতগুলো ইন্সট্র্যাকশন দেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত এবং কম্প্রিহেনসিভ ব্যবস্থা নিয়ে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য।
‘বিশেষ করে কীভাবে আমরা এই যে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বা সাপ্লাই কমে যাচ্ছে, এই জিনিসগুলো কিভাবে হ্যান্ডেল করতে পারব। কোন জায়গায় রেস্ট্রিকশন দিলে ভালো হবে বা ওপেন করলে ভালো হবে। এগুলো দু-তিন দিনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তুলে ধরতে হবে। প্লাস ডলারের যে ক্রাইসিস হচ্ছে এটা কিভাবে সলভ করা যায় এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসে দু-তিনদিনের মধ্যে প্রেসের সামনে বসার জন্য।’
আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে বলেও জানান তিনি।
আমদানিতে ব্যাপক কাট-ছাঁটের ইঙ্গিত
আমদানি করা পণ্যে ট্যাক্স আরোপের বিষয়ে ব্যাপক কাট-ছাঁটের ইঙ্গিত দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ‘তাদের বলা হয়েছে, এই সিনারিওতে আমাদের কী করণীয়, যেমন মনে করেন আপনি একটি সাজেশন দিলেন ফল আনার মধ্যে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেন যাতে ফল বেশি না আসে। এখন বৈশাখ মাস, এখন তো আমার আম-জাম-কাঁঠাল পর্যাপ্ত থাকবে। এরকম একটি সাজেশন আপনি দিলেন এটা বিবেচনা করে লজিক্যাল কিনা সেটা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া।
‘৮ বা ৯ হাজার কোটি টাকার ফল আসে বছরে। ৯ হাজার কোটি টাকা ইজ মোর দ্যান ওয়ান বিলিয়ন ডলার। এখন ট্যাক্স যদি সাময়িকভাবে বাড়ানো হয় বা অন্য যে ফ্যান্সি আইটেমগুলো আছে সেগুলোতে ট্যাক্স বাড়ান, এই বিষয়গুলো আলোচনা করে দুই-তিনদিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।’
উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে গঠনমূলক আলোচনা করতে গণমাধ্যমকে অনুরোধ জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছেও আমাদের একটি আবেদন যে, গঠনমূলক জিনিসগুলো আলোচনা করতে হবে। এই যে কোভিড রিকভার করা যাচ্ছিল কিন্তু ইউরোপের যে যুদ্ধটা এটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইকোনোমিক ক্রাইসিস শুধু না সাপ্লাইয়েরও একটি ক্রাইসিস হচ্ছে। কারণ রাশান দেশগুলো হলো ফুড এবং এনার্জি সাপ্লাইয়ে সারপ্লাস।
‘এখন এখান থেকে যদি না বের হতে পারে ফুড এবং এনার্জি তাহলে সারা পৃথিবীই কিন্তু ভুগছে। কালই দেখলাম নাইন পারসেন্ট ইনফ্লেশন হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে। আমেরিকাতে এইট পারসেন্টের বেশি। আমরা তো ওয়ার্ল্ডের বাইরে না। সেক্ষেত্রে আমাদেরও হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও রেশনাল বিহেভ করতে হবে সেজন্য আমরা মিডিয়াকে অনুরোধ করব এটাই একটু পজিটিভ ওয়েতে প্রচার করার জন্য। আমরা সবাই যেন একটু সাশ্রয়ী থাকি বা রেশনাল থাকি।’
আরও পড়ুন:অতি মুনাফার আশায় যারা কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে ১০০ টাকার বেশি দরে ডলার কিনেছিলেন তাদের মাথায় হাত। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা ডলার হোঁচট খেয়ে এখন উল্টো দিকে হাঁটছে।
বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে ডলারের দর ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। মঙ্গলবার হঠাৎ করেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই মুদ্রার দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে ১০৪ টাকায় উঠে যায়। বুধবার তা ১০০ টাকায় নেমে আসে। বৃহস্পতিবার তা আরও কমে ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে।
আরও কমবে বলে জানিয়েছেন এই বাজারের ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডলার ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা পাগলের মতো ডলার কিনেছিলেন তারা সবাই ধরা। সবাই এখন বিক্রি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। সরবরাহ বেড়েছে; তাই দাম কমছে। আরও কমবে বলে মনে হচ্ছে।’
তবে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার ও ব্যাংকগুলো বৃহস্পতিবার বুধবারের দরেই ডলার বিক্রি করেছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। সোমবার বড় দরপতন হয়। এক দিনেই আমেরিকান ডলারের বিপরীতে ৮০ পয়সা দর হারায় টাকা। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক দিনে টাকার এত বড় দরপতন হয়নি।
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার ১ ডলারের জন্য ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হয়। বৃহস্পতিবারও এই একই দামে বাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছিল। ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। এরপর ১০ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা কমিয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ সোমবার এক লাফে ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বেসরকারি ইস্টার্ন ও প্রাইম ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৯৮ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা। অগ্রণী ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সায়। সোনালী ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে লেগেছে ৯২ টাকা ৪৫ পয়সা।
টাকার মূল্য পতনে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। পাশের দেশ ভারতসহ পৃথিবীর সব দেশই তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এখন আমরা যদি না করি, তাহলে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘এ কথা ঠিক, আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। কিন্তু একই সঙ্গে ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিটা কিছুটা নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়বে। রিজার্ভ বাড়বে।’
‘ইতোমধ্যে আমদানি ব্যয় কমতে শুরু করেছে। বাজারের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ডলার ছাড়া হচ্ছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে; রেমিট্যান্স প্র্রবাহও ভালো। বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে। সে কারণেই কার্ব মার্কেটে দাম বেশ খানিকটা কমেছে। ব্যাংকগুলোও কমাতে বাধ্য হবে। আশা করছি খুব শিগগিরই বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ।
মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত (সাড়ে ১০ মাসে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৬ মে পর্যন্ত) ৫৫০ কোটি (৫.৫০ বিলিয়ন) ডলারের মতো বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
খোলাবাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।
এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত।
কিন্তু কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।
কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির পারদ আরও চড়েছে। এপ্রিল মাসে ৬ দশমিক ২৯ উঠেছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। যা দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আগের মাস মার্চে এই হার ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে টানা ছয় মাস বাড়ার পর জানুয়ারিতে কমেছিল এই সূচক। ফেব্রুয়ারি থেকে তা আবার চড়ছে।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বুধবার রাতে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) গত এপ্রিল মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এর অর্থ হলো, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২২ সালের এপ্রিলে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৬ টাকা ২৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
এই মাসে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাসের মতো এপ্রিলে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে; এই মাসে গ্রামে মূল্যম্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আর শহরে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
অর্থাৎ শহরের চেয়ে গ্রাম এলাকায় পণ্যমূল্য বেড়েছে বেশি।
তবে সরকার বা বিবিএসের দেয়া হিসাবের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবে অনেক বেশি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হার বিবিএসের চেয়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।
গত ৩ মার্চ ‘মূল্যস্ফীতি: সরকারি পরিসংখ্যান বনাম প্রান্তিক মানুষের বাস্তবতা’শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সানেম। এতে বলা হয়েছে, শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন ১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর গ্রামে এই হার ১২ দশমিক ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘পণ্যমূল্য নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএস যে তথ্য দিচ্ছে, তা বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ ক্ষেত্রে যদি সঠিক তথ্য তুলে আনা না হয়, তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে না।’
নানা তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিবিএস পুরোনো ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হিসাব করছে, যা বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না।’
সেলিম রায়হান বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ খুবই চাপে আছে। ভাত না খেয়ে অন্য কিছু খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে অনেক মানুষ।’
একই কথা বলেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গত ১৬ মে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিবিএসের মূল্যস্ফীতির হিসাব বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত নয়। বাজারের যে অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি এখন ১২ শতাংশ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ফারাক। বিবিএস ২০০৫–২০০৬ সালের ভোক্তাদের মাথায় রেখে মূল্যস্ফীতি ঠিক করে। ১৭ বছর পরে সেই মানুষদের পরিবর্তনকে তারা ধরছে না। গ্রামে মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে বেশি।’
নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বুধবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। আর প্রশ্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা, বাজারের পণ্যমূল্যের সঙ্গে বিবিএসের তথ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।’
‘তারপরও বিবিএসের তথ্যকে মেনে নিয়ে যদি বলি, তাহলেও বলতে হয় একটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছি আমরা। গত কয়েক মাস ধরেই কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এতে অবশ্য বৈশ্বিক বাজারেরও একটা প্রভাব আছে। বিশ্ববাজারে সব জিনিসের দামই বেশ বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে।
‘তাই আমার বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি। নতুন বাজেটে সে বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।’
বিবিএসের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দেড় বছর পর গত বছরের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে ওঠে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা কমে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে।
২০২০ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এর পর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচেই অবস্থান করছিল।
চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, শাকসবজি থেকে শুরু করে মাছ-মুরগিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি ১৮মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
১২ মাসের গড় হিসাবে এপ্রিল শেষে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে বেশ খানিকটা ওপরে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই লক্ষ্য ধরা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছর শেষ হয় ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে।
অর্থাৎ বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে খানিকটা বেশি ছিল গড় মূল্যস্ফীতি।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব দেশে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা পূর্বাভাস দিচ্ছে, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমেছে
এপ্রিল মাসের পুরোটা সময় ছিল রমজান মাস। রোজার মাসে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম ছিল চড়া। কিন্তু এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমার তথ্য দিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, তার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
আগের মাস মার্চে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য চার শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল মাসে মার্চের চেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দশমিক ১০ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।
এপ্রিলে শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয়েছে; এই মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৯শতাংশ। মার্চে ছিল ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এপ্রিল মাসে শহরাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মার্চে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
আগের মাস মার্চে গ্রামে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমি ৭১ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এপ্রিল মাসে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের মাস মার্চে শহর এলাকায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।
শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি কেন –এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছেও অবাক লাগে, এটা কেন হচ্ছে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন অনেক পণ্যই দ্রুত গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। সে ক্ষেত্রে গ্রামে পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে কারণে দাম বেড়ে যেতে পারে।’
‘তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গ্রাম হোক আর শহরই হোক বাজারের বাস্তব প্রতিফলন বিবিএসের তথ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে না। সে কারণেই বিবিএসের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এক্ষত্রে বিবিএসের তথ্য সংগ্রহে যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেটা দূর করা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন:
জাতিসংঘের দেয়া লক্ষ্য পূরণই শুধু নয়, দেশের স্বার্থেই আমাদেরকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বুধবার ‘সেকেন্ড ন্যাশনাল কনফারেন্স এসডিজিস ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ ২০২২’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে এসডিজি অর্জনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের বিষয় উঠে এসেছে।
এম এ মান্নান বলেন, ‘এসডিজি অর্জনে আমাদের আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। জাতিসংঘ স্বীকার করেছে যে আমাদের অর্জন ভালো। এ জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারও পেয়েছেন। এই পুরস্কার আমাদের সবার। তবে আমাদের আরেকটি লক্ষ্য আছে- পৃথিবীর অন্যান্য জাতির সঙ্গে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এমডিজি অর্জন সফলভাবে শেষ হওয়ার পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গৃহীত হয়েছে। এক সময় আমাদের নানা যন্ত্রণা ছিল- নিম্ন আয়ের যন্ত্রণা, খেতে না পাওয়ার যন্ত্রণা, সুপেয় পানি না পাওয়ার যন্ত্রণা। সব যন্ত্রণা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে শেখ হাসিনা কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘সব সূচকে বাংলাদেশ ভালো করেছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমরা লক্ষ্য অর্জন করেছি। খাদ্য নিরাপত্তা, শিশু মৃত্যু রোধ, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ নানা কাজে ভালো করেছি। সরকার ২০৩০ সালের আগেই এসডিজির সব লক্ষ্য অর্জন করবে।’
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জোয়েনা আজিজ, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. নূরুল আমীন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। গত ছয় বছরে বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণ, ধরিত্রী রক্ষা ও শান্তি এবং সমৃদ্ধিতে বড় অর্জন করেছে।
সম্মেলনে তিন দিনে এসডিজি নিয়ে নয়টি সমান্তরাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সেশনে ৪৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার অফিস, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও/আইএনজিও, সিএসও, একাডেমিয়া এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দুই হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) অংশগ্রহণকারীদের মতামত থেকে সারসংক্ষেপ তুলে ধরে। জিইডি জানায়, তিন দিনে এসডিজি অর্জনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় স্তরে যথাসময়ে মানসম্পন্ন ডাটা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসজিডির ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর লক্ষ্য বিষয়ক ডাটার অপর্যাপ্ততাই সবচেয়ে বেশি।
এসডিজিতে অর্থায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে অতিরিক্ত সম্পদ আহরণও একটি বিশাল কাজ। কারণ বাংলাদেশের কর/জিডিপি অনুপাত এখনও বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশের মধ্যে একটি।
বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য উদ্ভাবনী এবং টেকসই অর্থায়নের মডেল অন্বেষণ করতে হবে। বিশেষ করে সবুজ প্রকল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।
ডিজিটাল দেশ গড়ার জন্য স্মার্ট টেকনোলজি, গবেষণা ও উদ্ভাবনে আরও বেশি অর্থ ও সময় বিনিয়োগ করতে হবে।
মৌলিক পরিষেবা সরবরাহের উন্নতি, বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতের উন্নতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য এ দুই খাতের মান উন্নয়নই প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নেও নজর দিতে হবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে কটেজ, মাইক্রো ও স্মল এন্টারপ্রাইজ (সিএমএসই) খাতে সুযোগ বাড়ানো, শহরে দারিদ্র্য নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বৈষম্য কমাতে হবে। এসজিজির ১৬ নম্বর লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে সুশাসনের ওপর আবারও জোর দিতে হবে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সরকার এবং সরকারের বাইরে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য