‘একটা মহিলা মানুষ দুই লাখ-তিন লাখ ট্যাকা জমাইলো কষ্ট কইরা, সেই ট্যাকা সঞ্চয়পত্র কিনন্যা রাখব। কিন্তু ইনকাম ট্যাক্সের কাগজ দিতে হইব। এইডা করলে তো বৎসর বৎসর আবার রিটার্ন দিতে হইব। ইনকাম ট্যাক্স অফিস সম্পর্কে আমগো ধারণা নাইক্যা। এখন সে (মেয়ে) টাকা জমাইতে রাজি হইতেছে না। কয় এই ঝামেলায় যামু না।’
বললেন কবীর শেখ নামে পুরান ঢাকায় বাস করা এক ব্যক্তি। সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করার শর্ত নিয়ে ক্ষুব্ধ তিনি। নিজ মেয়ের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন করা নিয়ে তিনি ঝক্কি-ঝামেলার কথা তুলে ধরেন।
বলেন, ‘আমার মেয়ে বলতেছে, তার দ্বারা সম্ভব না। টিন সার্টিফিকেট করমু, ইনকাম ট্যাক্স করমু, মহা ঝামেলা।’
কবীর শেখ জানান, তার মেয়ের স্বামী বিদেশে থাকেন। স্বামীর পাঠানো অর্থ থেকে সঞ্চয় করছেন তার মেয়ে। আয়করসংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করা তাদের জন্য বিরাট ঝামেলা।
সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম সঞ্চয়পত্র। ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে এই ব্যবস্থায় মুনাফা বেশি। আছে নানান স্কিম। কিন্তু অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে জুড়ে দেয়া হয়েছে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন সার্টিফিকেট জমা দেয়ার শর্ত।
১ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের ওপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর দেয়ার বাধ্যবাধকতা আনা হয়েছে গত বছর থেকে। এতে দুর্ভোগের মুখে সাধারণ বিনিয়োগকারী। চলতি বাজেটে কেনার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয় অর্থমন্ত্রী। বলা হয়, টিআইএন নম্বর ছাড়া ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা ও পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। কিন্তু তারপরেও স্বস্তি নেই।
বিনিয়োগকারীদের আক্ষেপ
করযোগ্য আয় নেই। তারপরেও কর শনাক্তকরণ নম্বর দিতে হচ্ছে। এটা ঝামেলার কাজ বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী আবুল কালাম। পোস্ট অফিসের লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া খুবই জটিল কাজ।’
মুনাফা তুলতে আসা সোলাইমান জানান, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করার জন্য টিআইএন শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি খুবই বিরক্তিকর কাজ। বলেন, অনলাইনে কেনা এবং মুনাফা তোলার কাজটি কচ্ছপ গতিতে এগোচ্ছে।
বিনিয়োগকারী নাসিমা খাতুন জানান, ‘ব্যাংকের চেয়ে সুদহার ভালো বলে এখানে আমরা বিনিয়োগ করতে চাই। কিন্তু কর নম্বর দেয়া কঠিন কাজ। সাধারণ মানুষ এই কঠিন মারপ্যাঁচ বোঝে না।’
সীমা খাতুন জানান, অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু কর সার্টিফিকেট করতে পারেন না বলেই করেন না।
আলিমুজ্জামান জানান, টিআইএনের ঝামেলার কারণে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে অর্থ রাখছেন। বেশি মুনাফার লোভে ‘হায় হায় কোম্পানিতে’ টাকা বিনিয়োগ করে পরে সব টাকাই খোয়াচ্ছে।
বিলকিছ আলম বলেন, ২ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা রাখতে টিআইএন নম্বর লাগবে না। কিন্তু পোস্ট অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও সেই চিঠি আসে নাই।
সুমন দাস জানান, ‘প্রতি তিন মাস পর এসে মুনাফা তোলার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। লম্বা লাইন, আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু লাইন একটু কমেনি। অনলাইনে হলে ভালো হয়।’
বাজেটে সিদ্ধান্ত, বাস্তবায়ন নেই
কর শনাক্তকরণ নম্বর ছাড়াই ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা ও পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে– বাজেটে এমন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতদিন এ সুবিধা ছিল ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর আগে অবশ্য কোনো সঞ্চয়পত্র কিনতেই টিআইএনের প্রয়োজন ছিল না।
কিন্তু বাজেট পাস হওয়ার পর দেড় মাসের বেশি সময় চলে গেলেও নতুন সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। অর্থাৎ সঞ্চয় অধিদপ্তর, পোস্ট অফিস এবং ব্যাংকে এখনও এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবগত নয়।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মোতালেব হোসেন জানান, এ বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। ফলে আগের নিয়মেই কেনা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র।
সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে বিক্রি কমাতে ২০১৯ সালের মে মাস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনায় বিভিন্ন কঠোরতা আরোপ করে সরকার। টিআইএনের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র কেনা ও মুনাফা নেয়ার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা কমানো এবং ঘোষণার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে সব অফিস থেকে অভিন্ন সফটওয়্যারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।
ব্যাংক নয়, সঞ্চপত্রেই সুবিধা বেশি
ব্যাংক খাতে জুন শেষে আমানতের বিপরীতে গড় সুদহার ৪ দশমিক ১৩ ভাগ। অন্যদিকে একই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হারও দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ ভাগের বেশি। অথচ পাঁচ বছর আগেও সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সুদহার যতটুকু, তার সবটাই আবার হাতে আসে না। বাদ দিতে হয় ব্যাংকের চার্জ ও সরকারের শুল্ক। এর মানে টাকার মূল্যমানের অবচয় বিবেচনায় আমানতকারী যে পরিমাণ টাকা রাখছেন, বছর শেষে পাচ্ছেন তার চেয়ে কম।
এ কারণে ব্যাংকে টাকা রেখে সঞ্চয়কারীরা এখন আর প্রকৃত অর্থে লাভবান হতে পারছেন না।
ব্যাংকের সুদহারের সাথে বড় ধরনের তফাতের কারণে গত কয়েক বছরে সাধারণ মানুষের টাকা জমা রাখার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছিল সঞ্চয়পত্র।
তবে এখানে বিনিয়োগে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে কেউ সঞ্চয়পত্র কেনার পর এক বছরের মধ্যে ভাঙালে কোনো সুদ পান না। তবে সুদহার বেশি হওয়ার কারণে গত কয়েকটি অর্থবছরে এর বিক্রি সরকারের বাজেটে ধরা লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে থাকে।
লক্ষ্যের চেয়েও বিক্রি বেশি
২০২০-২১ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৭০ হাজার ২২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এ হিসাবে গেল অর্থবছরের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ আসে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
অটোমেশন কার্যক্রম
২০১৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারিতে শুরু হয় অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা কার্যক্রম। ফলে এই সময়ের পর যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের মুনাফার অর্থ গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। কিন্তু এর আগে যারা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, তাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ শেষ হবে অটোমেশন কার্যক্রম। তখন সনাতনী ব্যবস্থায় যারা সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, তাদের স্কিম পূর্ণ হবে। এরপর নতুন করে যারাই বিনিয়োগ করবেন, তারাই পাবেন অনলাইন সুবিধা।
সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন স্কিম
বর্তমানে দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র স্কিম প্রচলিত আছে। এর মধ্যে পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ তিন বছর। পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পাঁচ বছর। পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা মাসিক কিস্তিতে তোলা যায়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা মাসিক ও ত্রৈমাসিক উভয় ভিত্তিতে তোলা যায়।
২০১৫ সালের ২৩ মে থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। তার আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
বিশ্লেষণ
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ বেশি নেয়া হয়।
চলতি অর্থবছরে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ধরা হয়েছে ৪৫ শতাংশের বেশি। বাকি ৫৫ শতাংশ দেশি উৎস থেকে। কিন্তু দেখা গেছে বছর শেষে সরকারের এ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকে না। প্রতিবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরে রাখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ব্যাংকে প্রচুর তারল্য উদ্বৃত্ত আছে। সরকার ব্যয়বহুল এ খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। বিদেশি ঋণের সুযোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে এখান থেকে আরও অর্থ ছাড়ের সম্ভাবনা থাকত। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ সহনীয় মাত্রায় রাখা উচিত। সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে। এগুলো শিথিল করলে বিক্রির প্রবণতা আরও বাড়বে।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মোতালেব হোসেন বলেন, টিআইএন বাধ্যতামূলক করার শর্ত পাঁচ লাখ টাকা থেকে করা হলে সুবিধা হতো। তিনি বলেন, স্বল্প বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়েন।
তিনি আরও জানান, টিআইএন শর্ত আরও শিথিল করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:বৈশাখের শুরুতেই তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চুয়াডাঙ্গায় আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে (৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এ অবস্থা সপ্তাহজুড়ে চলমান থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সেইসঙ্গে জলীয়বাষ্পের কারণে ভ্যাপসা গরম অস্বস্তি বাড়াবে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এ সময় বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ২২ শতাংশ। মঙ্গলবারও এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় (৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
প্রচণ্ড তাপদাহে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেইসঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূর্যের তাপ, তীব্র প্রখরতায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে চারপাশে।
প্রচণ্ড গরমে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, ইজিবাইকচালক ও ভ্যান-রিকশাচালকদের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। প্রয়োজনের তাগিদেও ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা। ছন্দপতন ঘটছে জেলাবাসীর দৈনন্দিন কাজকর্মে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপ্রবাহ বয়ে চলছে। এ অবস্থা আরও কিছুদিন চলতে পারে। তবে এখনই বৃষ্টির সম্ভবনা নেই।’
এদিকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ঢাকা, রংপুর, বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে এবং কিছু কিছু স্থানে তা প্রশমিত হতে পারে।
এ সময়ে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে বলেও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাতে কারণে বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বি.দ্র.: চুয়াডাঙ্গার তাপপ্রবাহের তথ্য নিউজবাংলার চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।
আরও পড়ুন:মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জের ধরে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি’র মোট ২৬১ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বুধবার একজন ও আগের দিন আসা ৪৬ রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে বুধবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তপথে বিজিপি’র এক সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এপারে চলে আসেন আরও ৪৬ জন বিজিপি সদস্য। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি তাদের সবাইকে হেফাজতে নিয়েছে।
আইন-শৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান বিদ্রোহীদের গোলাযোগ চলছে৷ মঙ্গলবার রাতেও সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সংঘাতে আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা।
স্থানীয়দের দাবি, রাতের অন্ধকারে ৪৬ জন বিজিপি সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বিজিবি তাদের নিরস্ত্র করে মঙ্গলবার সকালে আশ্রয় নেয়া ১২ জনের সঙ্গে নতুনদেরও হেফাজতে রেখেছে।
বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে নতুন করে ৪৬ জন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি ক্যাম্পের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়া আজ (বুধবার) নতুন করে আরও একজন আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে মোট ২৬১ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
মার্চ মাসে সারা দেশে মোট ৫৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এসব দুর্ঘটনায় মোট ৫৬৫ জন নিহত এবং এক হাজার ২২৮ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্চ মাসে রেলপথে ৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত ও ৮৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া নৌপথে ৭টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ১৮১ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৩ জন নিহত, ১৬৬ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৭৮ শতাংশ, নিহতের ৩৫.৯২ শতাংশ ও আহতের ১৩.৫১ শতাংশ।
এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় এ বিভাগে ১৬৫ জন নিহত ও ৩০৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, যেখানে ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও ৯২ জন আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৮৩ জন চালক, ৮২ জন পথচারী, ৮২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩১ জন শিক্ষার্থী, ৭ জন শিক্ষক, ১০৯ জন নারী, ৭০ শিশু, ৩ জন চিকিৎসক, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- ৫ পুলিশ সদস্য, ১ আনসার, ৩ সৈনিক, ২ জন চিকিৎসক , ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১৩০ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৭৮ জন পথচারী, ৬৪ জন নারী, ৬৩ শিশু, ২১ শিক্ষার্থী, ৩১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬ জন শিক্ষক, ও ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৭৯৩টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৪.৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫.৮৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১১.২২ শতাংশ বাস, ১৬.৩৯ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫.১৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১০.৪৬ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৬.৪৩ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭.৪২ শতাংশ গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৭.২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১.৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২.৮৩ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং শূন্য দশমিক ৭২ ট্রোন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৪.৬০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৭.২১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৯.৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৭.৭৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, প্রকাশিত এই তথ্য দেশে সংঘঠিত সড়ক দুঘর্টনার প্রকৃতচিত্র নয়। এটি কেবল গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য। দেশে সংঘঠিত সড়ক দুঘর্টনার একটি বড় অংশ (প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত) গণমাধ্যমে স্থান পায় না। তাই এসব তথ্য আমাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ‘দেশে সড়ক দুঘর্টনার প্রাথমিক উৎসস্থল দেশের হাসপাতালগুলোতে দেখলে এমন ভয়াবহ তথ্য মেলে। ঢাকা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) মার্চ মাসে ১৩৬৯ জন সড়ক দুঘর্টনায় গুরুতর আহত পঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বিজ্ঞান বলে একটি দুঘর্টনায় ১০ জন আহত হলে তার মধ্যে কেবল একজন গুরুতর আহত বা পঙ্গু হয়।
‘বাংলাদেশে ১০ হাজার সরকারি ও ৬ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে এসব হাসপাতালে প্রতিবছর সড়ক দুঘর্টনায় আহত প্রায় ৩ লাখের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ গণমাধ্যমে তার ১০ ভাগের এক ভাগ তথ্যও প্রকাশিত হয় না বলে আমরা ঘটনার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে পারি না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ
১. ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি।
২. মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
৩. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং ও সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার।
৪. সড়ক-মহাসড়কে নির্মাণত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও অদক্ষ চালকের হার ব্যাপক বৃদ্ধি।
৫. ফুটপাত দখল, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো ও সড়কে চাদাঁবাজি।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ
১. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রাথমিক উৎস থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ডাটা ব্যাংক চালু করা।
২. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান।
৪. রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা; চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৭. ব্লাক স্পট নিরসন করা, সড়ক নিরাপত্তা অডিট করা ও স্টার মানের সড়ক করিডোর গড়ে তোলা।
৮. দেশে সড়কে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ-এর চলমান গতানুগতিক কার্যক্রম অডিট করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করা ও প্রাতিষ্ঠানিক অকার্যকারিতা সংস্কার করা জরুরি।
ইসরাইলে ইরানের হামলাকে ‘সীমিত আকারের’ বর্ণনা করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, যদি ইরান বড় কোনো হামলা করতে চাইত, তাহলে ইহুদি শাসকগোষ্ঠীর (ইসরাইল) কিছুই অবশিষ্ট থাকত না।
বুধবার তিনি ইরানের রেভলুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) বার্ষিক প্যারেডে দেয়া ভাষণে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন।
রাইসি বলেন, ‘এই হামলার জবাবে ইসরাইল যদি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আক্রমণও চালায়, তাহলে তার জবাব হবে বিশাল ও কঠোর।’
ইসরাইল-ইরান সংকট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যখন একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের হুমকি বিরাজ করছে, সে সময়ই এই হুংকার দিলেন ইব্রাহিম রাইসি।
সিরিয়ায় গত ১ এপ্রিল ইরানের কনস্যুলেটে হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তেহরান। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ভূপাতিত করে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো।
হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেটিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। এ হামলায় সাত বছর বয়সী এক ইসরায়েলি শিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। এর বাইরে বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ওই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে বার বার বিরত থাকার আহ্বান জানানো হলেও জবাব দেয়ার অঙ্গীকার করেছে ইসরাইল।
শনিবারের ওই হামলার প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। তিনি জানান, ওই হামলার নাম দেয়া হয়েছে ‘ট্রু প্রমিজ’। একইসঙ্গে ইসরাইল থেকে সম্প্রতি যে হুমকি দেয়া হচ্ছে তার জবাব কঠোর ও অগ্নিঝরা হবে বলে পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
১৩ই এপ্রিল ইসরাইলে ইরানের চালানো হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই অপারেশনের পরে বিশ্ববাসী দেখেছে যে, ‘ট্রু প্রমিজ’ ইহুদি রাষ্ট্রের মিথ্যা আধিপত্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
ভাষণে ইসরাইলি মিত্রদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব দেশ এই নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাইছে, তারাও তাদের জাতির কাছে লজ্জিত হবে।’
আরও পড়ুন:টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মেরিনা তাবাসসুম। বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা স্থপতি সেরা উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করে টাইম ম্যাগাজিন। তাবাসসুমকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে লিখেছেন অ্যামেরিকান স্থপতি স্যারাহ হোয়াইটিং।
তাবাসসুমকে ‘নিঃস্বার্থ স্থপতি’ উল্লেখ করে স্যারাহ লিখেছেন, ‘‘তাবাসসুমের স্বার্থহীনতার পরিচয় তার নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও দেখা যায়। পৃথিবীর সম্পদে ভাগ বসানো প্রাণিকুলের অংশ হিসেবে তিনি তার নিজের সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল।
“আগা খান পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকার বাইত উর রউফ মসজিদ নিয়ে তাবাসসুম নিজে বলেছেন, ‘কৃত্রিম কোনো সাহায্য ছাড়াই একটা ভবনকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দিতে হবে।’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়।’’
বাইত উর রউফ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্তম্ভ মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। আগা খান পুরস্কার ছাড়াও ২০২১ সালে সোন পুরস্কার পান এই স্থপতি।
টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় এবারে জায়গা করে নিয়েছেন এনএফএল সুপারস্টার প্যাট্রিক মাহোমস, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, ভারতীয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট ও ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা।
মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির দিকে যথাযথ নজর রাখতে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু হলে এবং সৃষ্ট উত্তেজনা দীর্ঘ সময়ে গড়ালে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নির্দেশ দেন সরকার প্রধান। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ফলে সম্ভাব্য রি-অ্যাকশন কী হতে পারে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই সে বিষয় বিবেচনায় প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কনফ্লিক্ট যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, সেটি কীভাবে আমরা মোকাবিলা করব, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমরা কী করতে পারি; সেগুলোর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখতে বলেছেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, যুদ্ধ যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তখন বিভিন্ন সেক্টরে যে ইমপ্যাক্ট পড়তে পারে, সেটি সংশ্লিষ্ট সেক্টর থেকে এক্সারসাইজ করে তা মোকাবিলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলেছেন সরকার প্রধান। তিনি বলেছেন, যার যার সেক্টরে সবাই যেন প্রস্তুতি নেয়।
ক্রাইসিস তৈরি হলে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে। তখন কী করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সচিব জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে মন্ত্রিসভাকে জানাতে বলেন।
দেশে এখনও ১৬টি আইন তালিকাভুক্ত করা হয়নি উল্লেখ করে সচিব মাহবুব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিগগির আইনগুলো বাদ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রিসভা ‘মহেশখালী ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমআইডিএ) অ্যাক্ট-২০২৪’ এবং ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা) আইন-২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বিত প্রক্রিয়ায় পরিচালনার জন্য একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের লক্ষ্যে এমআইডিএ আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব।
আইনটির আওতায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন এবং এটি ১৭ সদস্যের বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হবে। গভর্নিং বোর্ড ছাড়াও সরকার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে, যিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অফিসটি পরিচালনা করবেন।
কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- প্রায় ৫৫ হাজার ৯৬৮ একর জমির নির্দিষ্ট এলাকার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা, সেখানে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনা, বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা এবং এলাকাটিকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা) আইন-২০২৪’ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি মূলত প্রচলিত ইংরেজির বাংলা সংস্করণ এবং এই সংস্করণে কোনো পরিবর্তন নেই। এর আগে এই আইনের ইংরেজি ভার্সন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি যে বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও সেই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ আইনটিই পুনরায় বাংলায় করা হয়েছে। সেটির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:গাইবান্ধা জেলা কারাগারে এক নারী হাজতিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, এক প্রধান কারারক্ষীর সঙ্গে এক নারী কয়েদির ‘অবৈধ কর্মকাণ্ড’ দেখে ফেলায় তার মেয়েকে এই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী হাজতির নাম মোর্শেদা খাতুন সীমা। তিনি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে। সীমা মাদক মামলায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে গাইবান্ধা কারাগারে বন্দি।
লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে হাজতি সীমার উন্নত চিকিৎসা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর মা করিমন নেছা। সেই অভিযোগের কপি নিউজবাংলার হাতেও এসেছে।
অভিযুক্তরা হলেন- গাইবান্ধা জেলা কারাগারের প্রধান কারারক্ষী (সুবেদার) আশরাফুল ইসলাম, নারী কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা, কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা, সিআইডি আনিছ ও হাবিলদার মোস্তফা।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসককে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, হাজতি মোর্শেদা খাতুন সীমা একটি মামলায় (হাজতি নং-৫০৮) প্রায় ৫ বছর ধরে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দি। কিছুদিন আগে কারাগারে কর্মরত সুবেদার আশরাফুল ইসলাম ও মহিলা কয়েদি (রাইটার) মেঘলা খাতুনের মধ্যে চলমান অবৈধ কার্যকলাপ দেখে ফেলেন নারী হাজতি সীমা।
বিষয়টি জানতে পেরে সুবেদার আশরাফুল ও মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন সীমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। ঘটনা জানাজানির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তারা কারাগারের ভেতরে সীমাকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন।
একপর্যায়ে সুবেদার আশরাফুল ও তার সহযোগীরা হাজতি সীমার স্বামী খোকন মিয়াকে গাইবান্ধা কারাগারে ডেকে আনেন। তারা অভিযুক্তরা সীমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সীমার সংসার ভেঙে দেন।
এতোসবের পর হাজতি সীমা এসব ঘটনা জানিয়ে জেল সুপারের কাছে বিচার দেবেন জানালে সুবেদার আশরাফুল তাকে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন। এক পর্যায়ে ২০ মার্চ দুপুরে সুবেদার আশরাফুলের নেতৃত্বে মহিলা কয়েদি মেঘলা খাতুন, রেহেনা ও আলেফা এবং কারারক্ষী তহমিনা ও সাবানা কারাগারের মহিলা ইউনিটের ভেতরের বারান্দায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে সেলের ভেতরে নিয়ে সীমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রশি দিয়ে দুই পা বেঁধে আবারও মারধর করেন। উপরন্তু নির্যাতনের এসব ঘটনা বাইরে প্রকাশ করলে সীমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করিমন নেছা একাধিকবার তার মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। অবশেষে হাজিরার তারিখে আদালতে মেয়ের সাক্ষাৎ পান মা করিমন নেছা। এদিন সীমা মায়ের কাছে নির্যাতনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন দেখান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা কারাগারের অভিযুক্ত প্রধান কারারক্ষী আশরাফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টির সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমার নামটা কেন আসতেছে জানা নেই।
‘ঘটনাটি এক মাস আগের। আরেক প্রধান কারারক্ষী মোস্তফার ডিউটির সময়ের। কিন্তু আমার নাম কেন হচ্ছে বিষয়টি জানি না।’
অপর অভিযুক্ত মহিলা কারারক্ষী তহমিনা আক্তার মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেদিন যা ঘটেছিল তার বিপরীত ঘটনা তুলে ধরে অভিযোগ করা হয়েছে। আরেফিন নামে এক নারী কারারক্ষী ও তার স্বামীর মদদে এই বন্দি এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’
কারারক্ষী তহমিনা আরও বলেন, ‘এই বন্দী (সীমা) একাধিক মামলার আসামি। প্রশাসনের লোকজনের ওপর হাত তোলার একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনার দিনও সাবানা নামে এক নারী কারারক্ষীর গায়ে হাত তুলেছিলেন এই বন্দি।’
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কারাগারের জেল সুপার জাভেদ মেহেদী মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) এডিসি মহোদয় তদন্তে এসেছিলেন। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে ভেতরের ব্যাপারে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে একটি ব্যাপার তৈরি হয়েছে, যা ফোনে বলা সম্ভব নয়। তবে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি) মো. মশিউর রহমান মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) বিষয়টির তদন্ত করেছি। খুব দ্রুত জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। এরপরই জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জেলা প্রশাসন।’
মন্তব্য