সারা দেশে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। এই মুহূর্তে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো ছাড়া কোনো প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নে নেই গতি।
প্রায় বছর ধরে নির্মাণসামগ্রীর মুখ্য উপকরণ রড, সিমেন্ট ও ইট-পাথরের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
দাম স্থিতিশীল রাখতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ইস্পাত এবং সিমেন্ট শিল্পে আগাম কর প্রত্যাহার করে নেয়। পাশাপাশি লৌহজাত পণ্য প্রস্তুতে ব্যবহার্য কয়েকটি কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ ভেসেল ও পিভিসি, পিইটি রেজিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ইথানল গ্লাইকলসহ বিভিন্ন পণ্যের আগাম কর অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু বাজেট কার্যকরের পর এক মাস পার হলেও বাজারে কমেনি এসব নির্মাণ উপকরণের দাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের হাতে এখন ছোট-বড় ও মাঝারি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার প্রকল্পের উন্নয়নকাজ চলমান আছে। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কাজও চলছে। এ ছাড়া আবাসন চাহিদা পূরণেও খাতসংশ্লিষ্টদের হাতে রয়েছে সহস্রাধিক প্রকল্প। উৎপাদনমুখী বিভিন্ন খাতেও শিল্প-কারখানা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ হচ্ছে। এর বাইরে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত কয়েক লাখ ঘর-বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে।
এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান উন্নয়নযজ্ঞে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার টন রড, সিমেন্ট, ইট ও পাথরের জোগান প্রয়োজন হচ্ছে। কিন্তু দেশে-বিদেশে করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং দফায় দফায় লকডাউনে এসব উপকরণের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, যা সার্বিক উন্নয়নের লাগাম টেনে ধরছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় থাকা পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেলসহ হাতেগোনা কয়েকটি প্রকল্প ছাড়া অন্য সব প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রাখায় ভাটা পড়েছে।
উপকরণের মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে বাড়তি খরচ সমন্বয়ের সুযোগ না থাকায় বেঁকে বসছে অধিকাংশ ঠিকাদার। জরুরি বিবেচনায় আগের চুক্তিমূল্যেই যারা কাজ চালিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের কাজের গতিও খুব ধীর এবং সেখানে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অন্যদিকে দাম কমার আশায় ব্যক্তি উদ্যোগে ঘর-বাড়ি নির্মাণকাজ এবং উদ্যোক্তাদের চলমান অনেক উন্নয়নকাজও এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (রিহ্যাব) জানিয়েছে, শুধু চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই দেশে অবকাঠামো নির্মাণে খরচ বেড়েছে কমপক্ষে ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই) জানায়, প্রকৌশল বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝে ৩৮ থেকে ৪২ শতাংশ রড, ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ ইট বা পাথর এবং ১৮-২২ শতাংশ পর্যন্ত সিমেন্ট ব্যবহারের দরকার পড়ে। অর্থাৎ কোনো একটি অবকাঠামোর কমপক্ষে ৯০ শতাংশজুড়েই থাকে এসব উপকরণ। এর কোনো একটির ঘাটতি হলে অবকাঠামোর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
গত বছর ডিসেম্বর থেকে এই সময় পর্যন্ত উপকরণভেদে রডের দাম ৩২ থেকে ৩৫ শতাংশ, পাথরের ৩৫ শতাংশ, সিমেন্টের ১৫ শতাংশ এবং ইটের ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের রডের দাম প্রতি টনে বেড়েছে ১৮-২২ হাজার টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে ভালো মানের ৭৫ গ্রেডের এমএস (মাইল্ড স্টিল) রড এখন কোম্পানিভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭৪ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর নভেম্বরে এই গ্রেডের রড বিক্রি হতো ৫২-৫৪ হাজার টাকার মধ্যে।
৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৭ হাজার টাকায়। গত বছর নভেম্বরে এই দাম ছিল ৪২-৪৪ হাজার টাকার মধ্যে। সাধারণ ৪০ গ্রেডের প্রতি টন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৬৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬৪ হাজার টাকায়। একই রড গত নভেম্বরে ছিল ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া বাংলা রড (গ্রেড ছাড়া) বিক্রি হচ্ছে ৬১ হাজার ৫০০ টাকায়। গত বছর নভেম্বরে এর দাম ছিল মাত্র ৩৮ হাজার টাকার মধ্যে।
বাজারে এখন সিমেন্টের সর্বনিম্ন দাম বস্তাপ্রতি ৪১০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকার মধ্যে। এই সময়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বস্তাপ্রতি সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৩০-৫০ টাকা।
প্রতি টন পাথরের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে ৪০০-৬০০ টাকা এবং ইটের দর প্রতি হাজারে এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত।
চাহিদা বনাম সরবরাহ
দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০টি ইস্পাত কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ টন। আর অভ্যন্তরীণ ইস্পাত ব্যবহারের পরিমাণ ৭৫ লাখ টন।
সিমেন্ট কারখানার সংখ্যা ৩৮টি। উৎপাদনে আছে ৩৪টি। সব কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪ কোটি টন। কিন্তু কারখানাগুলোর সক্ষমতার তুলনায় বাজারে চাহিদা কম। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী ২ কোটি ৪০ লাখ টন থেকে সোয়া ৩ কোটি টন উৎপাদনে সীমাবদ্ধ থাকছে কোম্পানিগুলো।
খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) তথ্য বলছে, উন্নয়ন-কর্মকাণ্ডের কারণে এখন প্রতি বছর পাথরের চাহিদা তৈরি হচ্ছে ৭০-৮০ লাখ টন। এর ৮৩ দশমিক ৪ ভাগই আমদানিনির্ভর। মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ পূরণ হয় দেশীয় উৎপাদন থেকে। অর্থাৎ গড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টন পাথর আমদানি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি পিস ইটের চাহিদা তৈরি হয়। সারা দেশে ছোট-বড় আধুনিক ও সনাতনী সাড়ে ৬ হাজার ইটভাটা থেকে তার চেয়ে বেশিই ইট উৎপাদন করছে, যার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ইট সরকারি প্রকল্পে ব্যবহার হয়।
দাম নিয়ে সংকটের নেপথ্যে
লাগামহীন দাম বৃদ্ধির পেছনে এসব উপকরণের স্থানীয় উৎপাদক ও বাজারজাতকারীরা দায়ী করছেন আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের ঊর্ধ্বগতি এবং জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধিকে।
খাতসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, চাহিদার বিপরীতে প্রায় সব উপকরণেরই সরবরাহ আছে দেশে। তবে দেশে এসব উপকরণ উৎপাদনের বেলায় সারা বছর নির্ভর করতে হয় কাঁচামাল আমদানির ওপর।
বাংলাদেশে স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) চেয়ারম্যান শেখ মাসুদুল আলম মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, স্টিল ও রডের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ‘বিলেট ও স্ক্র্যাপ’-এর প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর। কিন্তু করোনার গ্যাঁড়াকলে আন্তর্জাতিক বাজারে এ কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রতি টন স্ক্র্যাপের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ছিল ২৭০-৩৫০ ডলারের মধ্যে। এখন তা ৫৬০-৫৭০ ডলারে ওঠে গেছে। বিলেটের বাজারমূল্য ছিল ৭৫০-৮০০ ডলারের মধ্যে। এখন সেটি ১ হাজার ৩৫০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
আগে দেশে এক কনটেইনার মেল্টিং মেটাল আমদানিতে খরচ পড়ত ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ডলার। এখন একই পরিমাণ মেল্টিং মেটাল আমদানিতে খরচ পড়ে ২ হাজার ৮০০ ডলার পর্যন্ত। দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
একইভাবে বেড়েছে কেমিক্যালের দামও। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় দেশেও এর দাম সমন্বয় করতে হয়েছে।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির বলেন, দেশে সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের ৭৫ ভাগ আমদানিনির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে এই ক্লিংকারের দাম বাড়ার পাশাপাশি দেশে জাহাজীকরণের খরচও বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, আগে ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনাম এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতি টন ক্লিংকার পরিবহনে ২২ থেকে ২৪ ডলার খরচ হতো। এখন তা গুনতে হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত। এ ছাড়া প্রতি টন ক্লিংকারের সিএফআর মূল্য পড়ছে ৬০ থেকে ৬৫ ডলার, যা গত বছর নভেম্বরে ছিল ৫৫-৫৭ ডলার।
বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুল জানান, ইট পোড়ানোর প্রধান কাঁচামাল হলো কয়লা। এর ৬৫-৭০ ভাগই আমদানি হচ্ছে। রপ্তানিকারক দেশগুলোতে দাম বেশি। আনতে ভাড়াও লাগছে বেশি। শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। এর প্রভাব ইটের দামে পড়েছে।
জানা গেছে, প্রতি টন কয়লার দাম বেড়ে এখন ১৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। আগে এর দাম ছিল ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে।
একই তথ্য দিয়েছেন পাথর আমদানিকারকরাও। দেশে প্রয়োজনীয় পাথরের ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হচ্ছে। পদ্মা সেতুসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পাথরের চাহিদা বেড়েছে। রপ্তানিকারক দেশগুলো বাড়িয়ে দিয়েছে টনপ্রতি পাথরের দাম।
পাথরের আমদানি মূল্য টনপ্রতি ৬ ডলারের বেশি নয়। কিন্তু দাম বাড়াচ্ছে পরিবহন ও মজুরি খরচ। ৪ থেকে ৬ ডলারের মধ্যে এলসি করা পাথর ওই দেশের কোয়ারি থেকে জাহাজে উঠানো ও চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে মোট আমদানি মূল্য দাঁড়ায় টনপ্রতি ১৯ থেকে ২২ ডলার পর্যন্ত। অর্থাৎ পাথরের এলসি মূল্যের চেয়ে পরিবহন ও উঠানো-নামানোর খরচ বেশি।
সবচেয়ে নিকটবর্তী রপ্তানিকারক দেশ ভারতে প্রতি টন পাথরের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরবরাহ চেইনেও আছে জটিলতা
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দফায় দফায় লকডাউনে পড়েছে দেশ। একই পরিস্থিতি ছিল উপকরণের রপ্তানিকারক দেশগুলোতেও। ফলে সর্বত্র বিঘ্নিত হয়েছে উৎপাদন। এ কারণে কমেছে রপ্তানি।
অন্যদিকে বিশ্বের বৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ চীন আগে মেল্টিং স্ক্র্যাপ আমদানি করত খুব কম। নিজস্ব খনিজ লোহা দিয়েই তারা স্টিল উৎপাদনে ছিল। এখন বিভিন্ন কারণে চীন মেল্টিং স্ক্র্যাপ আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। ফলে বিশ্বব্যাপী স্ক্র্যাপ মেটালের একটা বড় অংশ এখন সেখানেই যাচ্ছে।
সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার এবং পাথর ও কয়লার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে। এতে আমদানিও দীর্ঘসূত্রতায় পড়ছে। দেশেও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ চেইনেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া দফায় দফায় লকডাউন শুরু হওয়ায় উপকরণের বাজারমূল্য আরও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
আবাসন খাতে কী ক্ষতি
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংগঠনের সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১৫১। গড়ে একটি করে ধরলেও সমপরিমাণ প্রকল্পের চাহিদা আছে। কিন্তু বাড়তি খরচের ভয়ে এখন নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেয়ার সাহস করছে না কেউ। সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছে। অথচ সবার এখন নতুন প্রকল্প শুরু জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালের শুরুর দিকে আবাসন ব্যবসায়ীদের হাতে প্রায় ৬ হাজার রেডি ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট অবিক্রিত ছিল। গত এক বছরে তার থেকে ৫ হাজার ৫১৮টি বিক্রি হয়ে গেছে। অর্থাৎ আবাসন খাতে রেডি ফ্ল্যাট স্মরণকালের সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে এসেছে।
নানা বাস্তবতার কারণে দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ফ্ল্যাট কেনায় আগ্রহ বহুগুণ বেড়েছে। তারা সক্ষমতা অনুযায়ী ছোট ফ্ল্যাট সুলভমূল্যে পেতে চায়। ফলে এখনই কয়েক হাজার ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ শুরু করা জরুরি। তার ওপর দেড় হাজারের বেশি ফ্ল্যাটের বুকিং অর্ডার রয়েছে। কিন্তু নির্মাণ উপকরণের মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে এখন কোনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে বড় পরিসরের ফ্ল্যাট নির্মাণও শুরু করা যাচ্ছে না।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, উপকরণসামগ্রীর দামে এখনই লাগাম পরানো না গেলে অধরাই থেকে যাবে মধ্যবিত্তের নিজস্ব আবাসনের স্বপ্ন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আবাসন খাতে।
সরকারি প্রকল্পে ধীর গতি, ক্ষতিতে ঠিকাদাররা
আবাসন ব্যবসায়ীদের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি এখন সরকারি উন্নয়নকাজের ঠিকাদারদের।
এ প্রসঙ্গে বিএসিআইর প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এস এম খোরশেদ আলম নিউজবাংলাকে জানান, সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো ফিক্সড প্রাইস চুক্তিতে চলে। কাজ সম্পাদনের নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেয়া থাকে। কিন্তু দেশে নির্মাণ উপকরণের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ায় প্রায় বছর ধরে কোনো কিছুই ঠিকভাবে চলছে না।
তিনি জানান, সরকারি কোনো প্রকল্পেরই চলমান কাজ এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ প্রকল্পের উন্নয়নকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি বিবেচনায় কয়েকটির কাজ চালিয়ে নেয়া হলেও উপকরণের বাড়তি দামে প্রকল্পের ব্যয় আগের সীমায় আটকে রাখা যাচ্ছে না। এতে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন ঠিকাদাররা। উপকরণের দাম বৃদ্ধির হার অনুযায়ী কাজ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাড়তি খরচ আদায় করা যাচ্ছে না। ফলে আগের নির্ধারিত চুক্তিমূল্য থেকে ২০ শতাংশ বাড়তি খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর এখন প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদাররা সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে না পারছেন প্রকল্প গুটিয়ে চলে যেতে, আবার না পারছেন লোকসান দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন দীর্ঘসূত্রতায় গড়াচ্ছে। আবার উন্নয়নকাজের মান নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও প্রকট হবে, যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর।
বিএসিআইর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এস এম খোরশেদ আলম দাবি করেন, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সুফল পৌঁছায়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এর বাস্তবায়ন হওয়ার পাশাপাশি এগুলোর মানসম্পন্ন বাস্তবায়নও দরকার। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিক্সড প্রাইস কনট্রাক্টের চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যদি তা বহালও থাকে, তাতে সময়ে সময়ে পরিপত্র জারির মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া উপকরণগুলোর দাম সমন্বয় করে ভ্যারিয়েশন বিল দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। একইভাবে পিপিআরের বিধান অনুযায়ী ভবিষ্যতে আহ্বানকৃত সব দরপত্রের প্রাইস সমন্বয়ের ধারা অন্তর্ভুক্ত করা না হলে প্রকল্পের বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা কমানো যাবে না।
উপকরণের বাজার মনিটরিংয়ের পরামর্শ
দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিয়মিত মনিটরিং হয়। বিভিন্ন সময় বাজারভেদে পরিচালনা করা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য না হলেও নিয়মিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রতিদিন ব্যবহার হয় হাজার হাজার টন রড, সিমেন্ট, পাথর ও ইট; যার দামের ঊর্ধ্বগতি দেখার নেই কেউ।
এ পরিস্থিতিতে এসব উপকরণের প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ রেখেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান।
তিনি বলেন, উচ্চ মুনাফানির্ভর এসব খাতের সরবরাহকৃত উপকরণে ভোক্তারা ঠকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটা যাতে না হয়, সে জন্য ভোগ্যপণ্যের মতো ফিনিশড পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণেও বাজার মনিটরিং সুফল দিতে পারে। এর পাশাপাশি সরকার বাজেটে যে শুল্ক সুবিধা দিয়েছে, তা কতটা কার্যকর হয়েছে, সেটি না হলে গলদ কোথায় কিংবা গৃহীত উদ্যোগ যথেষ্ট কিনা, না হলে আরও কী করা যেতে পারে, সমষ্টিগত উন্নয়ন স্বার্থে তা বিবেচনায় নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
কী ভাবছে সরকার
বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়। এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের প্রধান আমদানি কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফীকুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, ‘এটা ঠিক, দেশে নির্মাণসামগ্রীর দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। এ ধরনের উপকরণের দাম বেড়ে গেলে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন খরচই বাড়ে। এতে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতার বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল। সেখানে দাম বাড়লে দেশেও বাড়ে।
এক প্রশ্নের জবাবে দেশের প্রধান এই আমদানি কর্মকর্তা জানান, ‘উত্তরণের উপায়টি কারও একার হাতে নেই। এটি সম্মিলিত উদ্যোগের বিষয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দুই ভাবে কাজ করছে। বিশ্ববাজার থেকে যেসব কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে, তা দেশে আনার খরচ অত্যধিক বেড়েছে। এর যৌক্তিকতা নিয়ে আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার উপায়ও বের করার চেষ্টা চলছে।
‘এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে উপকরণের কাঁচামালের দাম বেড়েছে, তা দেশে কারখানায় ফিনিশড পণ্যের উৎপাদন শেষে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা কতটা যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক সেটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ মাধ্যমে ট্যারিফ কমিশনকে প্রতিবেদন দেয়ার অনুরোধ করা। এর মধ্যে বাজার পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে না এলে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:হালকা ইস্পাতের রড থেকে ইলেকট্রনিক্স বা খাবার- সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে সব পণ্যের বিজ্ঞাপন কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকার মান কমে যাওয়া ও ব্যাংকের উচ্চ সুদহারের কারণে তাদের খরচ কমাতে হচ্ছে।
এ ছাড়াও, কয়েকটি কারখানা অফিস ইউটিলিটি ব্যবহার ও ব্যাংক নির্ভরতা কমানো এবং অর্থায়নের বিকল্প উৎস খোঁজার পথে হাঁটছে।
অন্যরা পরিচালন খরচ পর্যালোচনা করছে। অতিরিক্ত খরচ কমানো ও সীমিত সংখ্যক কর্মী দিয়ে সর্বাধিক উৎপাদন পাওয়ার চেষ্টা করছে।
ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের প্রস্তুতকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো মার্ট গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আফসার বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই কঠিন।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইলেক্ট্রো মার্ট খরচ কমানোর অংশ হিসেবে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন বিজ্ঞাপনসহ প্রচারণামূলক কার্যক্রম কমিয়েছে।
ক্রমবর্ধমান আর্থিক চাপ সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি পণ্যের দাম বাড়াতে পারেনি এই ভয়ে যে চলমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে তাদের পণ্য বিক্রি আরও কমে যেতে পারে। এর পরিবর্তে তারা খরচ কমানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানান নুরুল আফসার।
তিনি আরও জানান, ব্যাংক সুদের হার ১৭ শতাংশের বেশি হওয়ায় তার প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমেছে।
তিন বছর আগেও ব্যাংকগুলোর সুদহার ছিল ১০ শতাংশের নিচে। সেসময় ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮০ টাকা। মূল্যস্ফীতি ছিল ছয় থেকে সাত শতাংশ।
নুরুল আফসার বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর তুলনায় উচ্চ সুদহারের কারণে আমাদের মুনাফা অনেক কমেছে। বাড়তি খরচ মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর চেষ্টা করছি।’
এই প্রচেষ্টার মধ্যে আছে ইউটিলিটি ব্যবহার সীমিত করা ও অফিসের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো।
‘যেখানেই অর্থ সাশ্রয়ের সুযোগ আছে, সেখানেই খরচ কমিয়ে আনছি,’ যোগ করেন তিনি।
বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘ব্যাংকের সুদহার ক্রমাগত বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিও অসহনীয় পর্যায়ে। এসব মোকাবিলায় আমরা খরচ কমানোর বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছি।’
তার ভাষ্য, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে খরচ কমানো ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চ সুদহার ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করছি।’
‘কর্মীদের বেতন নিয়মিত রাখতে খরচ কমানোয় মনোযোগ দিচ্ছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কেবল সেখানেই খরচ করি সেখানে খরচ না করলেই নয়। প্রচারের বাজেট কমিয়ে আনা হয়েছে।’
বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেওয়া জরুরি। কিন্তু, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার এড়ানো সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এ দিকে, ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।
দেশের অন্যতম শীর্ষ এই শিল্পগোষ্ঠীর প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘টিকে থাকার জন্য ব্যাংক ঋণ কমাতে হয়েছে। খরচ কমাতে হয়েছে। নতুন কিছু চিন্তা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।’
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন খরচ ও ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং টাকার বিকল্প উৎস খোঁজার দিকে মনোনিবেশ করছে।
‘আমাদের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। খরচ কমানো ও দক্ষতা বাড়াতে ক্রমাগত উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রয়োগ করছি।’
আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে ব্যাংকের বাড়তি সুদহার ও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘ইউটিলিটি বিলের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের সংকট আরও বেড়েছে।’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ব্যাংকের উচ্চ সুদহার আমাদের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।’
এমন পরিস্থিতিতে অনেক কারখানার মালিক পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি জীবনযাত্রার বাড়তি খরচে পিষ্ট মানুষের ওপর সরাসরি বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মতো বলে মনে করেন তিনি।
গত বছরের তুলনায় এ বছর পণ্য বিক্রি ও মুনাফা কমে যাওয়ার কথা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এতটা হিমশিম খায়, তাহলে তালিকাভুক্ত নয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্দশা কত বেশি তা কল্পনাও করা যায় না।’
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে বিসিআইয়ের সাম্প্রতিক মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘জরুরি নীতিগত উদ্যোগ নেওয়া না হলে গভীর স্থবিরতা দেখা দেবে।’
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে টানা পাঁচ দিনের মতো চলছে কর্মকর্তাদের কলমবিরতি কর্মসূচি। এই কর্মবিরতির ফলে দেশের রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে এবং এ নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার প্রক্রিয়া আরও চাপে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালক ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে অবশ্যই রাজস্ব আদায়ে বিঘ্ন ঘটছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ ধরনের কর্মবিরতিতে যাওয়া উচিৎ হয়নি।’
এই কর্মবিরতির ফলে সৃষ্ট ক্ষতি পরবর্তীতে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ‘এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই’ বলে জানান তিনি।
সরকার সম্প্রতি এনবিআর ভেঙে দুটি নতুন সংস্থা—রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও রাজস্ব নীতি বিভাগ—গঠনের সিদ্ধান্ত দিলে এর প্রতিবাদে কলমবিরতির ঘোষণা দেন এনবিআর কর্মকর্তারা। এর ফলে দেশের রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুনর্গঠন কার্যকর হয়।
সরকারের দাবি, এর ফলে রাজস্ব সংগ্রহ ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া আরও দক্ষ হবে। তবে হঠাৎ নেওয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর আপত্তি জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তাদের আশঙ্কা, নতুন কাঠামোয় তাদের দায়িত্ব ও চাকরির নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
কর্মবিরতির ফলে আয়কর রিটার্ন প্রক্রিয়া, কাস্টমস ছাড়পত্র ও ভ্যাট আদায়ে বিলম্ব হচ্ছে। এতে করে রাজস্ব আদায়ের ওপর বিদ্যমান চাপ আরও বেড়েছে।
২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই–ডিসেম্বর) এনবিআর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় করেছে, যা ২৫ শতাংশ ঘাটতি। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, কিন্তু আদায় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মার্চ মাস পর্যন্তই রাজস্ব ঘটতি হয়েছে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা।
এই ঘাটতির জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমদানির হ্রাস ও কর ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এনবিআর কর্মকর্তাদের চলমান কর্মবিরতি রাজস্ব আদায় আরও ব্যাহত করছে, যার ফলে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
পলিসি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পূর্বাভাস দিয়েছে, রাজস্ব আদায়ের এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরের শেষে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে ব্যয় সংকোচন করতে হতে পারে কিংবা বাড়াতে হতে পারে ঋণগ্রহণের পরিমাণ, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই সংকট মোকাবিলায় কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া এনবিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্বেগের অবসান ঘটানো এবং নতুন কাঠামোকে তারা যাতে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই এই আলোচনা।
তাছাড়া কর্মবিরতি চলাকালে জরুরি রাজস্ব আদায় কার্যক্রম সচল রাখতে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবছে সরকার। তবে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় আস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই সংকটের সমাধান করে নতুন রাজস্ব বিভাগের সফল বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘কর্মবিরতি যে ক্ষতিসাধন করেছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার আনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। সমস্যাটির সমাধান তাড়াতাড়ি এলে ঘাটতি পূরণ বড় কোনো সমস্যা হবে না।’
টানা দুই দিন পতনের পর ঢাকার পুঁজিবাজারে উত্থান হলেও সূচক কমেছে চট্টগ্রামে। তবে দুই বাজারেই বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৮ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচক শরীয়া ভিত্তিক ডিএসইএস ৫ পয়েন্ট এবং বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ বেড়েছে ৮ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯০ কোম্পানির দাম বেড়েছে বেশিরভাগের। ২২১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১০৪ এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৫ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ক্যাটাগরির হিসাবে এ, বি এবং জেড- তিন ক্যাটাগরিতেই বেড়েছে শেয়ারের দাম। লভ্যাংশ দেয়া ভালো শেয়ারের এ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হওয়া ২১৩ কোম্পানির মধ্যে ১০৬ কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে। দর কমেছে ৭০ এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
দাম কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৬ মিউচুয়াল ফান্ডের বেশিরভাগের। ১৩ কোম্পানির দর পতনের বিপরীতে দর বেড়েছে ১০ এবং অপরিবর্তিত আছে ১৩ কোম্পানির।
৩১ কোম্পানির ২৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে ডিএসই ব্লক মার্কেটে। ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড সর্বোচ্চ ১১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
ঢাকার বাজারে সারাদিনে মোট ২৯৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ২৮৮ কোটি টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে ডিএসইতে শীর্ষ শেয়ার ফুওয়াং ফুড। অন্যদিকে ৬ শতাংশের ওপর দর হারিয়ে তলানিতে ইউসিবি ব্যাংক।
চট্টগ্রামে পতন
ঢাকায় উত্থান হলেও সূচক কমেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। সারাদিনের লেনদেনে সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ৭ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেয়া ১৭৪ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯, কমেছে ৬৫ এবং অপরিবর্তিত আছে ৪০ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা গত কার্যদিবসে ছিল ১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা।
১০ শতাংশ দাম বেড়ে সিএসইতে শীর্ষ শেয়ার শমরিতা হাসপাতাল এবং ১০ শতাংশ দর হারিয়ে তলানিতে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
গত মার্চ মাসে মোবাইলে ১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক এক পরিবর্তন এনেছে মোবাইল ব্যাংকিং। এখন প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
কেবল টাকা পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিং। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ প্রবাসী-আয় বা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন অন্যতম পছন্দের মাধ্যম। এই সেবার কারণে বেড়েছে নতুন কর্মসংস্থান।
গত মার্চ মাসে মোবাইলে ১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। এর আগে চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল, যা ছিল এতদিন সর্বোচ্চ।
মার্চে প্রতিদিনের গড় হিসাবে লেনদেনের হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা; আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই অঙ্ক ছিল ৫ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক শনিবার মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৩ টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকায় নেমে আসে।
পরের মাস আগস্টে লেনদেন বেড়ে হয় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। অক্টোবরে বেড়ে হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে তা আরও বেড়ে হয় ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইল ফোনে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮০ কোটি টাকায় নেমে আসে।
হাতের মোবাইল ফোনই এখন ব্যাংক। হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিই হয়ে উঠেছে সব ধরনের লেনদেনের অপরিহার্য মাধ্যম। এসব লেনদেনের হিসাব খুলতে কোথাও যেতে হয় না। গ্রাহক নিজেই অনায়াসে নিজের হিসাব খুলে লেনদেন করতে পারছেন। মোবাইল ফোনের সাহায্যে অন্যকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, টিকেট কেনাসহ কত সেবা যে মিলছে, তা এক দমে বলা খুবই কঠিন। সব মিলিয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে।
২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইলে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয় ১ লাখ ৩০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। মার্চে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।
এপ্রিল ও মে মাসে লেনদেন হয় যথাক্রমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা।
তার আগের মাস অক্টোবরে এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় এক লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে লাখ কোটি টাকার নিচে, ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর থেকে প্রতি মাসেই লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
এভাবেই বাংলাদেশে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
গ্রাহক ২৪ কোটি ৩৬ লাখ
মোবাইল লেনদেনে গ্রাহক সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। মার্চে সেই গ্রাহক সংখ্যা ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজার ২৮ এ দাঁড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ২৪ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৪। জানুয়ারিতে ছিল ২৩ লাখ ৯৩ লাখ ২ হার ৯৯১।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৩। নভেম্বরে ছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫। অক্টোবর ছিল ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৭১৩। সেপ্টেম্বরে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৩। একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে, এটা বলা যায়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ব্যবসা চলমান থাকবে। ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা এখনও অফিসিয়ালি কিছু জানি না। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর ব্যবস্থা নিতে পারবো। যদি সমস্যা দেখা দেয় বা তৈরি হয় তাহলে উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো।
উপদেষ্টা আজ রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজ থেকে আমরা জেনেছি তারা স্থলবন্দর বিশেষ করে আখাউড়া, ডাউকিস্থ বন্দরসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি অঞ্চলের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনই আমাদের বড় লক্ষ্য। এটা দু’দেশের জন্য লাভজনক বিষয়। আমরা মনে করি ভারত নিজেও একটা টেক্সটাইল বা বস্ত্র শিল্পে সমৃদ্ধ দেশ। এরপরও যখন আমাদের দেশ থেকে এসব পণ্য রফতানি হয় সেটা আমাদের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করেই হয়।
তিনি আরো বলেন, ট্রান্সশিপমেন্টের প্রভাব আমাদের নেই। আমরা নিজেদের সক্ষমতা ব্যবহার করে নিজস্বভাবেই এ সমস্যার সমাধান করেছি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা যেহেতু ভৌগোলিকভাবে কানেক্টেড একটা দেশ, আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা, পরিবহণ ব্যয়সহ অন্যান্য বিষয়গুলো নির্দিষ্ট। এক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সময় আমাদের কৃষিপণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি, ভারতও করে। এটা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া এবং আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি। সেখানে যদি সমস্যা দেখা দেয় বা তৈরি হয় তাহলে উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো।
উপদেষ্টা বলেন, আমি উদার বাণিজ্যে বিশ্বাসী। আমার কাছে বাণিজ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমার দেশের ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য উদারীকরণ ও বাণিজ্য ইনক্লুশন ছাড়া আর কোনো রাস্তা আমি দেখি না। বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদের বৈচিত্র্যকরণ ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কাজ করবো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ফের পিছিয়ে আগামী ২ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত। রবিবার (১৮ মে) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল।
তবে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়।
পরে ওই টাকা ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। দেশের অভ্যন্তরের কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থপাচার করে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতানামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন।
মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে উত্থান দিয়ে শুরু হলেও প্রথম ঘণ্টার পর কমতে শুরু করে লেনদেন সূচক। প্রথম ধাক্কায় বেশিরভাগ কোম্পানির দাম বাড়লেও সূচকের অকস্মাৎ পতনে দোলাচলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার।
লেনদেনের প্রথমার্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক কমেছে ৯ পয়েন্ট। বাকি দুই সূচকের মধ্যে শরীয়া ভিত্তিক ডিএসইএসও নিম্নমুখী।
বাছাইকৃত কোম্পানির ব্লুচিপ শেয়ার ডিএস-৩০ কমেছে ৩ পয়েন্ট।
এ ছাড়া, লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৬০ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ১৫৭ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত আছে ৭৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সব মিলিয়ে প্রথমার্ধে ঢাকার বাজারে লেনদেন ১৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে, বড় উত্থান দিয়ে লেনদেন শুরু করলেও দুই ঘণ্টার মধ্যে সূচকে ধস নামে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। সিএসইতে সার্বিক সূচক কমেছে ৮২ পয়েন্ট।
লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৭ কোম্পানির মধ্যে ৭১ কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দর কমেছে ৭৮ এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮ কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সিএসইতে প্রথমার্ধে ৪ কোটি টাকার ওপর শেয়ার এবং ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
মন্তব্য