করোনাভাইরাস মহামারির প্রথম বছর ব্যাংকগুলো চাপে থাকলেও বছর শেষে পরিচালন মুনাফায় উল্লম্ফন যতটা অবাক করেছে, দ্বিতীয় বছরে অর্ধবার্ষিকে গত বছরের তুলনায় দেড় থেকে দুই গুণ, এমনকি তিন ও চার গুণ আয় সৃষ্টি করেছে বিস্ময়।
দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন সীমিত, প্রণোদনার ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পরও যখন বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক, তখন কীভাবে এত বেশি মুনাফা হয়, তা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন।
করোনাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পরিশোধে যে ছাড় দিয়েছে, কিস্তি না দিলেও খেলাপির তালিকায় না ফেলা, সঞ্চিতি সংরক্ষণে ছাড় দেয়ার যে ব্যবস্থা করেছে, সেটিই এর কারণ কি না, তা নিয়ে আলোচনা আছে। ঢালাও একটি বিশ্বাস ছড়িয়েছে যে, ঋণের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয়, সেটি না করাই এর কারণ কি না।
বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। এটি শতকরা ১ শতাংশ থেকে শুরু করে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। করোনাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সঞ্চিতি সংরক্ষণে ছাড় দিয়েছে।
তবে ব্যাংকগুলোর ব্যালান্স শিট তা বলছে না। ঋণের বিপরীতে কোনো কোনো ব্যাংক সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে তার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি।
তাহলে কেন এই মুনাফা
ব্যাংকাররা বলছেন বেশ কয়েকটি বিষয়। আমানতের সুদহার কমতে কমতে এখন দেড় শতাংশের কাছাকাছি নামিয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক। আগের নেয়া বেশি সুদহারের আমানত মিলিয়েও এখন গড় সুদহার ৪ শতাংশের নিচে নেমেছে। আর সুদহার এখন ৯ শতাংশের কম হলেও আমানতের সুদের যে খরচ হয়, তার প্রায় দ্বিগুণ অর্থ পাওয়া যায় ঋণের সুদহার থেকে।
আবার করোনাকালে ব্যাংকগুলোর শাখা বিধিনিষেধের কারণে খোলা রাখতে হচ্ছে সীমিত সময়ের জন্য। বন্ধও রাখা হচ্ছে কখনো কখনো। এতে কমেছে পরিচালন খরচ। বিশেষভাবে যাতায়াত খরচ কমেছে অনেক বেশি।
আবার পুঁজিবাজারে ব্যাংকের যে বিনিয়োগ ছিল, সেখান থেকে ব্যাপক মুনাফা এসেছে। পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের সময় তারা বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু বিশেষ করে গত বছর ব্যাপক লোকসান হয়েছে। সেগুলোর বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হতো, সেটি এখন করতে হচ্ছে না।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংক মুনাফায় রয়েছে। ২৯টি ব্যাংক জুন শেষে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে লোকসানে থাকা একটির আয় বাড়েওনি, কমেওনি। তিনটির আয় কমেছে, বেড়েছে বাকি ২৫টির মুনাফা।
গত বছরের তুলনায় আয় তিন গুণের বেশি বাড়াতে পেরেছে দুটি ব্যাংক। দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে পেরেছে চারটি ব্যাংক।
দেড় গুণের বেশি বাড়াতে পেরেছে পাঁচটি ব্যাংক। এক-তৃতীয়াংশের বেশি বাড়াতে পেরেছে দুটি ব্যাংক। আর ২৫ শতাংশের বেশি বাড়াতে পেরেছে তিনটি ব্যাংক।
২০ শতাংশের বেশি ও ২৫ শতাংশের কম বেড়েছে আরও তিনটি ব্যাংকের। বাকিগুলোর আয় বাড়ার হিসাব খুব একটা বেশি নয়।
ব্যাংকাররা কী বলছেন
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো আগের বছরের তুলনায় খরচ অনেক কমিয়েছে। বেতন খরচ ছাড়া অন্যান্য অপারেটিং খরচ কমিয়ে আনা হয়েছে। এটার প্রভাব পড়েছে অনিরীক্ষিত মুনাফার হিসাবে। ব্যালান্স শিট ভালো ম্যানেজ করেছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল খরচ কমানো, সেটা আমরা পেরেছি।’
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আরফান আলী বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিটে ইন্টারেস্ট রেট লো। করোনার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া সুবিধার কারণে ব্যাংকগুলো বাড়তি প্রভিশনিং (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) করেনি। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দেয়া করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজের বাইরে নতুন তেমন ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকগুলো আগের নিয়মে প্রভিশনিং করছে। এ কারণে মুনাফা বাড়তি দেখাতে পেরেছে।’
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ নেই, ঋণ বিতরণ কমে গেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে জুন পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়েছে। এর ফলে প্রভিশনিংয়ে ব্যাংকগুলো কিছুটা ছাড় পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের আয়ে। আর নতুন ঋণ বিতরণ তেমন নেই বললেই চলে। এ জন্য সঞ্চিতি সংরক্ষণেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না।’
আহসান এইচ মনসুর এটাও বলেন, ‘আমরা (ব্র্যাক ব্যাংক) ৩৫০ কোটি টাকা সঞ্চিতি রেখেই ছয় মাসের হিসাব দেখিয়েছি।’
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘সিটি ব্যাংকের ২০২০ সালের পরিচালন মুনাফা থেকে আমরা অতিরিক্ত ১৭০ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) করেছি। চলতি বছরও পরিচালন মুনাফা থেকে ২০০ কোটি টাকা বাড়তি সঞ্চিতি রাখতে চাই।’
অর্ধবার্ষিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা করা পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম খান চৌধুরী বলেন, ‘ঋণ বিতরণ কমলেও বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সেখান থেকে ব্যাংকের আয় বেড়েছে।
‘পাশাপাশি যারা আগে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছিল, তারা ভালো মুনাফা পাচ্ছে। ওই মুনাফায় কর নেই, তা থেকে আলাদা সঞ্চিতিও রাখতে হয় না। এ ছাড়া শেয়ারবাজার থেকেও আয় বেড়েছে। এ ছাড়া ঋণ নতুন করে খেলাপি না হওয়ায় ব্যাংকের খরচ কমেছে।’
তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে আমাদের ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে যাদের মুনাফা বেড়েছে, তাদেরও একই ধরনের ব্যবসা বেড়েছে।’
একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখিয়ে, খেলাপি ঋণের বিপরীতে সুদ আয় দেখিয়ে, আমানতের সুদের বিপরীতে সংরক্ষিত সঞ্চিতি ও ঋণের বিপরীতে সম্ভাব্য সুদকে আয় হিসেবে দেখিয়ে মুনাফা বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল কারণ হলো আমানতে সুদহার অনেক কম। ঋণ বিতরণ একদম হচ্ছে না, সেটা নয়। যেসব ঋণ নিয়মিত রয়েছে, ওই সব ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আয় খাতে নেয়া হচ্ছে। এ কারণেই বেড়েছে ব্যাংকের মুনাফা।’
ব্যাংকের হিসাবে বিভিন্ন টার্ম রয়েছে। মেয়াদি আমানতের বিপরীতে বার্ষিক সুদ বা মুনাফার অংশ ‘পেয়েবল’ হিসেবে সঞ্চিতি রাখতে হয়। কোনো কোনো ব্যাংক ওই পেয়েবল হিসেবে রাখা টাকাকে আয় খাতে প্রদর্শন করছে।
এ ছাড়া ঋণের বিপরীতে সম্ভাব্য আয় নির্ধারণে ‘রিসিভেবল’ হিসেবে টাকা রাখা হয়। ভবিষ্যতে আয় হতে পারে এমন একটি অঙ্ক রিসিভেবল আয় হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু ওই অঙ্কেই আয় প্রকৃতপক্ষে না হলেও তা আয় হিসেবে প্রদর্শন করছে ব্যাংকগুলো। এতেও বাড়ছে মুনাফা।
নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ ১১ ব্যাংক, পুঁজিবাজারের ৬টি
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
এই খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৬৮ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
১১ ব্যাংকের তালিকায় চারটি সরকারি, বেসরকারি ছয়টি ও বিশেষায়িত একটি ব্যাংক রয়েছে।
বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, বেসিক, অগ্রণী ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রূপালী ব্যাংক।
বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এর মধ্যে কমার্স ছাড়া বাকিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।
বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও এই কাতারে রয়েছে।
জানুয়ারি-মার্চ শেষে ১১ ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি ১২ হাজার ৬৪৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
বাকি ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দিয়েছে। এ কারণে ওই ব্যাংকগুলোর বিপুল ঘাটতি অনেকটাই কম দেখাচ্ছে।
গত ডিসেম্বর শেষে সার্বিকভাবে সব ব্যাংকের মোট ৬৩ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা সঞ্চিতি রাখার কথা ছিল। তবে ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করে ৬৩ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। তখন ঘাটতি ছিল ১২৫ কোটি টাকা।
মার্চ শেষে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি জনতা ব্যাংকের ৫ হাজার ২৫৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এরপরই বেসিক ব্যাংকের ৩ হাজার ৫৬৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ৭৮৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
মার্চ শেষে কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৫৫৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ঢাকা ব্যাংকের ২৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৯৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩৩৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৭৩ কোটি টাকা এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি ১৫৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঞ্চিতি ঘাটতি ১৬৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ‘বেসরকারি’ খাতের জন্য সংকোচন নীতি নেওয়া হলেও সরকারের জন্য তা দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
গতকাল শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বাজেট বিতর্ক: প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতিকে দমন করার জন্য সুদের হার বাড়ায়া দিছি। ভালো কথা। আমরা সংকুচিত রাজস্ব নীতি করতে গিয়ে বাজেটের আকার ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কী, যে এটা বেসরকারি খাতের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্যই শুধু সংকুচিত মুদ্রানীতি এবং সংকুচিত রাজস্ব নীতি।
‘যেই মাত্র এটা সরকারের জন্য, সরকারের জন্য আসে তখন আর এটা ওদের (সরকারের) জন্য সংকুচিত না।’
উদাহারণ দিয়ে মিন্টু বলেন, ‘গত দেড় বছরে বাংলাদেশে মোট ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকে আমানত পাইছে। এর ভিতরে ২ লাখ ৭০ কোটি টাকা নিয়ে গেছে সরকার। তো তাদের জন্য সংকুচিত রাজস্বনীতি তো আমি দেখতেছি না।’
এজন্য সরকারকে সকল দিক বিবেচনায় এনে ‘বিচার-বিশ্লেষণ’ করে নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন এ ব্যবসায়ী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের কথা বলা হলেও বিএনপি নেতা মিন্টু মতে, তা দেখা যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত বাজেটেও অর্থনীতির চিহ্নিত সমস্যার সংস্কার দেখা না যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম, আরেক দিক থেকে মূল্যস্ফীতি বেশি। এই দুইটার সমন্বয়ের যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি আমাদের দেশে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু সংস্কার করা যেত এই বাজেটে। কিন্তু সেটা আসলে আমি দেখি নাই।’
গত ২ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেটের আকার ছোট করলেও তা হয়েছে উন্নয়ন বাজেটে, যার দ্বারা সরাসরি উপকৃত হয় দেশের নাগরিক।
অপরদিকে অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের আকার দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।
আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ অন্য উৎসের মধ্যে সরকার ব্যাংক খাত থেকে নিতে চায় ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়াও সঞ্চয়পত্রপত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ২১ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
‘দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য’ দেখছেন উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আলোচনা সভার প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
‘অন্দরমহলের খবর দিতে চাই’- এ কথা বলে তিনি তার নয় মাসের উপদেষ্টা জীবনের তদবিরের গল্প তুলে ধরেন।
বলেন, ‘একটা জিনিসের ব্যাপারে আমি জাতীয় ঐক্যমত্য দেখতে পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য। সবাই দুর্নীতি করতে চান। কেউ কিন্তু বাদ নাই। রাজনীতিবিদ, আমলা, অধ্যাপক, কেউ বাদ নেই।’
উদাহরণ দিয়ে বলেন, আপনারা দেখবেন যে প্রথম আলোতে একটা সংবাদ এসেছে যে আমি যেগুলো দেখি (যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) তার মধ্যে একটা হচ্ছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের তারা করেছেন কী, যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পুনর্বাসনের জন্য কতগুলো ভবন করেছেন। তো ভবন করতে গিয়ে ওনারা আবিষ্কার করলেন যে কিছু জায়গা বেঁচে গেছে।
‘তো এখন কী করতে হবে? তো এটা সব সরকারি কর্মকর্তাদের দিতে হবে। অথচ সেতু বিভাগের ভবন বানানো কিংবা আবাসনের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ই আছে। যেটাকে আমরা পূর্ত মন্ত্রণালয় বলে থাকি। …এখানে অকল্পনীয় ছিল যে ক্যাবিনেট সচিবরা পর্যন্ত অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন।’
তদবির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে আমরা যে অফিসে আসি। আমার সঙ্গে এখন তো রাজনীতিবিদরাও দেখা করেন। কিন্তু কেউই কিন্তু চান না যে দুর্নীতির অবসান হোক। সবাই চান যে দুর্নীতি চলুক, তবে দুর্নীতিটা এবার আমাকে করার সুযোগ দিতে হবে।
‘সবাই বলেন, দেখেন ফ্যাসিস্ট আমলে জানেনই তো ব্যবসা করতে পারি নাই, এখন একটু খেয়াল রাখবেন। তো আমরা সে পথে যাচ্ছি না।’
এর বিপরীতে সরকারের চেষ্টা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যে অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। যেই ব্যবসা পাবেন, প্রতিযোগিতা হবে সেখানে। আমরা সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’
আসছে জুলাই-আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলেও উপদেষ্টা আশার কথা শোনান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ।
পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ খুঁজে বের করতে, একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে এবং ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে শিগগিরই একটি যৌথ কমিটি গঠন করবে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধিরা থাকবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
তারা বলেন, ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি কমিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় দীর্ঘমেয়াদি মূলধন কীভাবে এবং কোনো প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজার থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে সে বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং এর তারল্য বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়।
সবশেষে, এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহ, বিএসইসি চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনার ফারজানা লালারুখসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের নামে পাওনা রয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ( প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে ) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ। এখনকার বিনিময় হার ধরলে যার পরিমাণ ৩৯৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ। ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের দায় ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে দায়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, আমনাতকারীদের পাওনা এবং পুঁজিবাজারে বাংলাদেশের নামে বিনিয়োগের অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, যা বাণিজ্য কেন্দ্রিক অর্থ বলে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার করা সম্পদ হতে পারে বলে ধারণা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ড বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সম্বলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি।
সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের শ্রীলঙ্কায় তথ্য-প্রযুক্তি ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপ-অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা।
গতকাল বৃহস্পতিবার কলম্বোয় শ্রীলঙ্কা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান তারা। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি দেশটির পররাষ্ট্র ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি বৈঠকে অংশ নেয়।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতারা শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপঅর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমার সঙ্গে কলম্বোতে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে আরুন হেমাচন্দ্র বলেন, দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হলে আগামীতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে এবং বাংলাদেশ সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে সরকার পূর্ণ সহায়তা দেবে।
তিনি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তার দেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং এলক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানসমূহে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধারা পরিবর্তন হচ্ছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, তবে প্রযুক্তি, পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং উদ্ভাবনের দিক থেকে শ্রীলংকা বেশ এগিয়ে রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে দুদেশের বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ উভয় দেশের মধ্যে একটি এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যকার সংযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকার ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী এবং শ্রীলংকার উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংঙ্কার অর্থনীতি প্রায় একই ধাঁচের যেখানে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবিক অর্থে ততটা কার্যকর হবে না। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডিসিসিআই’র ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে শ্রীলংকার উপ-অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা বলেন, আমাদের একসাথে কাজ করার অবারিত সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা, ঔষধ, চা, জ্বালানি, আর্থিক সেবা ও পর্যটন খাত যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাময়।
তিনি জানান, শ্রীলংকা ইতোমধ্যেই একটি উচ্চাভিলাষী ডিজিটাল রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে এবং এই পরিকল্পনার অধীনে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং প্রতিটি সেবা স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকায় অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের শ্রীলংকার ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। যাতে দেশটির স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্য আরও কঠোর করার পর মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে পতন ঘটে, যা যুদ্ধকে আরও সম্প্রসারণ করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পঞ্চম দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি করেন এবং মার্কিন হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেন।
ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচক ০.৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪২,২১৫.৮০ পয়েন্টে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৮ শতাংশ কমে ৫,৯৮২.৭২ পয়েন্টে এবং প্রযুক্তি খাতভিত্তিক ন্যাশডাক কম্পোজিট ০.৯ শতাংশ কমে ১৯,৫২১.০৯ পয়েন্টে নেমে আসে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এখন বিনিয়োগকারীদের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। একই সময়ে তারা ফেডারেল রিজার্ভের দিকে নজর রাখছে। যা বর্তমানে দুই দিনের আর্থিক নীতিমালা বৈঠকে রয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ আপাতত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কারণ, তারা ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছে।
গতকাল বুধবার ফেড তাদের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশ করবে, যাতে থাকবে প্রবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা দুর্বল অর্থনৈতিক তথ্যের প্রভাবও মূল্যায়ন করছেন। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট খুচরা বিক্রি এপ্রিলের তুলনায় ০.৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭১৫.৪ বিলিয়ন ডলারে। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, এপ্রিলে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় যে ভোক্তারা আগেভাগে পণ্য কিনে নিয়েছিলেন, মে মাসে সেই কেনাকাটার গতি কমে গেছে।
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ১১টি খাতের মধ্যে ১০টিতেই দরপতন হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জ্বালানি খাত, যা তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
প্রতিরক্ষা খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোও লাভ করেছে। লকহিড মার্টিন ২.৬ শতাংশ এবং নর্থরপ গ্রুমান ১.২ শতাংশ বেড়েছে।
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় টেক ব্র্যান্ড রিয়েলমি কোম্পানির স্মার্টফোনের খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয়ে সম্প্রতি ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে। রিয়েলমি সার্ভিস ডে উপলক্ষ্যে এই ক্যাম্পেইনের অফার চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত।
এ ক্যাম্পেইন চলাকালে ইউজাররা সকল অ্যাকসেসরিজ ও সেফগার্ড সার্ভিসে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট লুফে নিতে পারবেন। শুধুমাত্র দেশজুড়ে অবস্থিত রিয়েলমি’র অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারগুলো থেকে এই অফার পেতে পারবেন গ্রাহকরা।
এছাড়াও- স্মার্টফোনের ওয়ারেন্টি বিষয়ক সার্ভিস, ক্লিনিং ও মেইনটেন্যান্স, সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন, প্রটেক্টিভ পেপার ফিল্মস ও প্রটেক্টিভ ফোন কেসে থাকবে বিভিন্ন ছাড়।
এখানে উল্লেখ্য যে- ঘোষিত অফারটি শুধুমাত্র রিয়েলমি’র অফিসিয়াল স্মার্টফোনগুলোর জন্যই প্রযোজ্য।
এসব অফার ছাড়াও- রিয়েলমি অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে ডিভাইস পাঠানোর ক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের রিয়েলমি অথরাইজড কালেকশন পয়েন্টস ব্যবহার করতে পারবেন।
অফার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইউজাররা ফেসবুকে রিয়েলমি’র অফিসিয়াল আফটার-সেল সার্ভিস পেজ "realme Service BD" ভিজিট করতে পারেন।
তাই ভিজিট করুন আপনার কাছেরই কোনো আউটলেট এবং ক্যাম্পেইন শেষের আগেই ডিসকাউন্ট উপভোগ করুন
১৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৪০তম সভা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, গুলশান-১, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব মুঃ ফরীদ উদ্দীন আহমদ। সভায় পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোঃ হুমায়ুন কবীর, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম জাহীদ, জনাব মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সর্বজনাব শফিউদ্দিন আহমেদ এবং মোহাম্মদ ইকবাল কার্যপোলক্ষ্যে সভায় যোগদান করেন। সভায় ব্যাংকের ব্যবসা বাণিজ্য, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আদায়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
মন্তব্য