ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নিতে যে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব একটা আকর্ষণীয় হারে সুদ দেবে এমন নয়। তার পরেও যেহেতু একেবারেই অলস অর্থ সেখানে বিনিয়োগ করা হবে, সে কারণে যাই পাওয়া যাবে, সেটিই ব্যাংকের লাভ।
করোনায় ব্যাংকের উপচে পড়া মুনাফা বিস্ময় জাগিয়েছে। এর মধ্যে একেবারে অলস বসে থাকা টাকা থেকেও যদি কিছুটা আয় হয়, সেটিও তাদের কোষাগারকে কিছুটা হলেও স্ফীত করবে।
এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত তারল্য আছে, যার মধ্যে ৬২ হাজার কোটি টাকা একেবারেই অলস। এই টাকা বসিয়ে রেখে এক পয়সাও আয় হচ্ছে না ব্যাংকগুলোর।
ব্যাংকে অলস অর্থ পড়ে থাকার চেয়ে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগ করা ভালো বলে মনে করেন মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত তারল্য অনুৎপাদনশীল খাতে চলে যাওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সুদহার কী হবে তা স্পষ্ট নয়।’
সুদহার কত হবে
২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর নিলামে নামমাত্র সুদে একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে ৭ দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে ধার দেয়। এরপর থেকে নিলাম বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর অতিরিক্ত তারল্য আছে। ফলে আমানতের সুদহার তলানিতে নেমেছে। এতে আমানতকারীরাও অস্বস্তির মধ্যে আছে। তাই সব কিছু চিন্তা করে বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, “ব্যাংকের হাতে অলস তারল্যের বিপরীতে ব্যাংকের কোনো আয় নেই। এ অবস্থায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে’ বিনিয়োগ করে যে অর্থই পাওয়া যাবে, সেটি ব্যাংকের জন্য মঙ্গল। কলমানি বাজারের সুদহার এখন ১ শতাংশের নিচে। সরকারি ট্রেজারি বিলের ইল্ডহারও ১ শতাংশের বেশি নয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ এর ইল্ড অনেক বেশি প্রত্যাশা করা ঠিক নয়।”
তবে সুদহার খুব বেশি কম হলে ব্যাংকগুলো টাকা দিতে চাইবে না বলে মনে করেন মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড এখনো ৫ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো ১/২ শতাংশ ইল্ডে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। চোখের সামনে বিনিয়োগের বিকল্প খাত থাকলে ব্যাংকাররা বিল-বন্ডমুখী হবে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে এর বিপরীতে সুদহার কম রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সুদহার কম না হলে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশি বিনিয়োগ করতে চাইবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ মুদ্রাবাজারে তারল্যের জোগান ও বাজার থেকে তারল্য তুলে নেয়ার কাজ করে। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক খাত থেকে ঋণের জোগান দেয়ার দায়িত্বও পালন করে বিভাগটি।
ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্য বলছে, ২ আগস্ট ৯১ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে এক হাজার কোটি টাকা তোলা হয়।
ওইদিন এ বিলের ইল্ডহার ছিল দশমিক ৫৫ শতাংশ। একই দিন অনুষ্ঠিত ৩৬৪ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ইল্ডহার ছিল ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। এরপর ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের নিলামে ইল্ডহার ছিল ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
দুই বছর আগেও এ ধরনের বিল ও বন্ডের ইল্ডহার ৫ শতাংশের বেশি ছিল।
এ পরিস্থিতিতে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’- এর ইল্ডহার ১ শতাংশের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন ব্যাংকাররা।
নিলাম কবে
‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম হবে।
চলতি আগস্ট মাসেই হবে আরও ৮টি নিলাম। সবমিলিয়ে এ মাসে ৯টি নিলাম হবে। তবে এই নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে মোট কত টাকা তুলে নেয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি সর্বশেষ ব্যাংকগুলো থেকে এভাবে টাকা তুলে নেয়া হয়েছিল।
৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি এসব বিলের ইল্ডহার নির্ধারিত হবে ব্যাংকগুলোর বিডিংয়ের ওপর। অর্থাৎ বিলের চাহিদার ভিত্তিতেই অকশন কমিটি ইল্ডহার নির্ধারণ করবে।
৯, ১৬ ও ২৫ আগস্ট ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদি বিলের ৬টি নিলাম হবে। আর ১১, ২৩ ও ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ৩০ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম।
ইতোমধ্যে এ সব নিলামের বিস্তারিত গত বৃহস্পতিবার সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশে নিবাসী সকল ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও বিড করতে পারবেন।
যে কারণে এই নিলাম
ইতিহাসের সর্বোচ্চ তারল্য এখন ব্যাংক খাতে। তলানিতে নেমে গেছে আমানতে সুদহার। মহামারির আগে যেসব ব্যাংক গ্রাহকদের ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য ৬ শতাংশ সুদ দিত, তারাই এখন সুদহার এক-দেড় শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আশানুরূপ ঋণ চাহিদা না থাকায় অলস টাকার পরিমাণও বাড়ছে। আবার ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহেও আগ্রহী হচ্ছেন না। এতে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নিতে আড়াই বছর পর ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’-এর নিলাম হতে যাচ্ছে। এতে করে ব্যাংকগুলো আবার আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আবার এরই মধ্যে নির্দেশ এসেছে, প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব ছাড়া অন্য হিসাবে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম হতে পারবে না। এখন মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ফলে আমানতের সুদহার অন্তত ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ হতে হবে।
বাজার থেকে টাকা তোলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব পন্থা
বাজার থেকে টাকা তুলতে বেশ কয়েকটি মাধ্যম ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো—রিভার্স রেপো, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ও নগদ জমার হার (সিআরআর)। এর মধ্যে প্রথম দুটির মাধ্যমেই ব্যাংকগুলোর সুদ আয় বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ।
আর ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের’ সুদহার বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তবে তা কলমানির সুদহারের চেয়ে কিছুটা কম হয়। বর্তমানে ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ চালু রয়েছে। এর মানে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের’ মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে টাকা জমা রাখতে পারবে।
প্রণোদনার ঋণ ছাড়া নতুন ঋণ চাহিদা নেই বললেই চলে। মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
এ সব কারণেই ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত টাকা জমা হয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে, জুন শেষে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা একেবারেই অলস; অর্থাৎ এই টাকা থেকে কোনো ধরনের সুদ বা মুনাফা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।
বাকি টাকায় কেনা হয়েছে বিভিন্ন বিল ও বন্ড। অনেক ব্যাংক অলস টাকার অপব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ আছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) সঙ্গে ৪০ কোটি ডলারের অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার।
‘ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম – সাবপ্রোগ্রাম ২’ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এই ঋণ বাজেট সহায়তা হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
গতকাল সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ এবং এআইআইবির পক্ষে রজত মিশ্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। রজত মিশ্র এআইআইবির পাবলিক সেক্টর (রিজিয়ন ১) ও ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড ফান্ডস (গ্লোবাল) ক্লায়েন্টস বিভাগের অ্যাক্টিং চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ও পরিচালক।
এই ৪০ কোটি ডলারের ঋণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যয় করা হবে।
অর্থ বিভাগ পরিচালিত এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য তিনটি: সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ তৈরি, অভিযোজনমূলক উদ্যোগ বাস্তবায়ন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা।
এ উদ্যোগ সরকারের জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়নে জলবায়ু সংবেদনশীলতা সংযোজনের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সহনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঋণের মেয়াদ ৩৫ বছর, যার মধ্যে প্রথম ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ড। এ ঋণ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেটভিত্তিক সুদ এবং একটি পরিবর্তনশীল স্প্রেডে নির্ধারিত, যেখানে ফ্রন্ট-এন্ড ফি ০.২৫ শতাংশ; যা এআইআইবির প্রচলিত শর্তানুসারে নির্ধারিত হয়েছে।
উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সচেতন নীতিগত সংস্কারের পথ সুগম হবে।
চলতি (জুন) মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে ১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এসময়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার।
এর আগেও প্রবাসী আয় প্রবাহে ইতিবাচক ধারা ছিল। সদ্যবিদায়ী মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে গত মার্চে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এরপর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
আসছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ‘বেসরকারি’ খাতের জন্য সংকোচন নীতি নেওয়া হলেও সরকারের জন্য তা দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু।
গতকাল শনিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বাজেট বিতর্ক: প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতিকে দমন করার জন্য সুদের হার বাড়ায়া দিছি। ভালো কথা। আমরা সংকুচিত রাজস্ব নীতি করতে গিয়ে বাজেটের আকার ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দিছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কী, যে এটা বেসরকারি খাতের জন্য, বেসরকারি খাতের জন্যই শুধু সংকুচিত মুদ্রানীতি এবং সংকুচিত রাজস্ব নীতি।
‘যেই মাত্র এটা সরকারের জন্য, সরকারের জন্য আসে তখন আর এটা ওদের (সরকারের) জন্য সংকুচিত না।’
উদাহারণ দিয়ে মিন্টু বলেন, ‘গত দেড় বছরে বাংলাদেশে মোট ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যাংকে আমানত পাইছে। এর ভিতরে ২ লাখ ৭০ কোটি টাকা নিয়ে গেছে সরকার। তো তাদের জন্য সংকুচিত রাজস্বনীতি তো আমি দেখতেছি না।’
এজন্য সরকারকে সকল দিক বিবেচনায় এনে ‘বিচার-বিশ্লেষণ’ করে নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন এ ব্যবসায়ী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের কথা বলা হলেও বিএনপি নেতা মিন্টু মতে, তা দেখা যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত বাজেটেও অর্থনীতির চিহ্নিত সমস্যার সংস্কার দেখা না যাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম, আরেক দিক থেকে মূল্যস্ফীতি বেশি। এই দুইটার সমন্বয়ের যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি আমাদের দেশে, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু সংস্কার করা যেত এই বাজেটে। কিন্তু সেটা আসলে আমি দেখি নাই।’
গত ২ জুন নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেটের আকার ছোট করলেও তা হয়েছে উন্নয়ন বাজেটে, যার দ্বারা সরাসরি উপকৃত হয় দেশের নাগরিক।
অপরদিকে অনুন্নয়ন বা পরিচালন ব্যয় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ২৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের আকার দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।
আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ অন্য উৎসের মধ্যে সরকার ব্যাংক খাত থেকে নিতে চায় ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়াও সঞ্চয়পত্রপত্র থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার ২১ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
‘দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য’ দেখছেন উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আলোচনা সভার প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
‘অন্দরমহলের খবর দিতে চাই’- এ কথা বলে তিনি তার নয় মাসের উপদেষ্টা জীবনের তদবিরের গল্প তুলে ধরেন।
বলেন, ‘একটা জিনিসের ব্যাপারে আমি জাতীয় ঐক্যমত্য দেখতে পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, দুর্নীতির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য। সবাই দুর্নীতি করতে চান। কেউ কিন্তু বাদ নাই। রাজনীতিবিদ, আমলা, অধ্যাপক, কেউ বাদ নেই।’
উদাহরণ দিয়ে বলেন, আপনারা দেখবেন যে প্রথম আলোতে একটা সংবাদ এসেছে যে আমি যেগুলো দেখি (যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) তার মধ্যে একটা হচ্ছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের তারা করেছেন কী, যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের পুনর্বাসনের জন্য কতগুলো ভবন করেছেন। তো ভবন করতে গিয়ে ওনারা আবিষ্কার করলেন যে কিছু জায়গা বেঁচে গেছে।
‘তো এখন কী করতে হবে? তো এটা সব সরকারি কর্মকর্তাদের দিতে হবে। অথচ সেতু বিভাগের ভবন বানানো কিংবা আবাসনের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয়ই আছে। যেটাকে আমরা পূর্ত মন্ত্রণালয় বলে থাকি। …এখানে অকল্পনীয় ছিল যে ক্যাবিনেট সচিবরা পর্যন্ত অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ অন্যায়-উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন।’
তদবির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে আমরা যে অফিসে আসি। আমার সঙ্গে এখন তো রাজনীতিবিদরাও দেখা করেন। কিন্তু কেউই কিন্তু চান না যে দুর্নীতির অবসান হোক। সবাই চান যে দুর্নীতি চলুক, তবে দুর্নীতিটা এবার আমাকে করার সুযোগ দিতে হবে।
‘সবাই বলেন, দেখেন ফ্যাসিস্ট আমলে জানেনই তো ব্যবসা করতে পারি নাই, এখন একটু খেয়াল রাখবেন। তো আমরা সে পথে যাচ্ছি না।’
এর বিপরীতে সরকারের চেষ্টা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যে অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা। যেই ব্যবসা পাবেন, প্রতিযোগিতা হবে সেখানে। আমরা সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’
আসছে জুলাই-আগস্টে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলেও উপদেষ্টা আশার কথা শোনান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমিতির আহ্বায়ক মাহবুব উল্লাহ।
পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের পথ খুঁজে বের করতে, একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে তুলতে এবং ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে শিগগিরই একটি যৌথ কমিটি গঠন করবে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির প্রতিনিধিরা থাকবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
তারা বলেন, ব্যাংক ঋণের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি কমিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় দীর্ঘমেয়াদি মূলধন কীভাবে এবং কোনো প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাজার থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে সে বিষয় বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়াও দেশে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং এর তারল্য বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়।
সবশেষে, এসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. হাবিবুর রহমান, গভর্নরের উপদেষ্টা মো. আহসান উল্লাহ, বিএসইসি চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও কমিশনার ফারজানা লালারুখসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে ২০২৪ সালে তাদের দেশের ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সাল শেষে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশের নামে পাওনা রয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় ( প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে ) যার পরিমাণ ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে যার পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ। এখনকার বিনিময় হার ধরলে যার পরিমাণ ৩৯৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৩ গুণ। ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশের কাছে সুইজারল্যান্ডের দায় ছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে দায়ের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, আমনাতকারীদের পাওনা এবং পুঁজিবাজারে বাংলাদেশের নামে বিনিয়োগের অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা, যা বাণিজ্য কেন্দ্রিক অর্থ বলে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে থাকা অর্থের একটি অংশ পাচার করা সম্পদ হতে পারে বলে ধারণা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কয়েক বছর ধরে সুইজারল্যান্ড বার্ষিক ব্যাংকিং পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বা বিএফআইইউ সুইজারল্যান্ডের এফআইইউর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু ব্যক্তির তালিকা সম্বলিত কোনো তথ্য তারা দেয়নি।
সুইজারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অবৈধভাবে কেউ অর্থ নিয়ে গেছে এমন প্রমাণ সরবরাহ করলে তারা তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্য দেশের নামে অর্থ গচ্ছিত রাখে তাহলে তা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা পরিসংখ্যানের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের শ্রীলঙ্কায় তথ্য-প্রযুক্তি ও ওষুধ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপ-অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা।
গতকাল বৃহস্পতিবার কলম্বোয় শ্রীলঙ্কা সফররত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান তারা। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি দেশটির পররাষ্ট্র ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি বৈঠকে অংশ নেয়।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতারা শ্রীলঙ্কার উপপররাষ্ট্র ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী আরুন হেমাচন্দ্র এবং উপঅর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমার সঙ্গে কলম্বোতে তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে আরুন হেমাচন্দ্র বলেন, দুই দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হলে আগামীতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে এবং বাংলাদেশ সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে এলে সরকার পূর্ণ সহায়তা দেবে।
তিনি বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের তার দেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহে বিনিয়োগের আহ্বান জানান এবং এলক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানসমূহে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধারা পরিবর্তন হচ্ছে এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, তবে প্রযুক্তি, পণ্যের মূল্য সংযোজন এবং উদ্ভাবনের দিক থেকে শ্রীলংকা বেশ এগিয়ে রয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে দুদেশের বেসরকারিখাতের যৌথ উদ্যোগে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ উভয় দেশের মধ্যে একটি এফটিএ স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যকার সংযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি জানান, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রীলংকার ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী এবং শ্রীলংকার উদ্যোক্তারাও বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলংঙ্কার অর্থনীতি প্রায় একই ধাঁচের যেখানে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) বাস্তবিক অর্থে ততটা কার্যকর হবে না। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ডিসিসিআই’র ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে শ্রীলংকার উপ-অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. হর্ষনা সুরিয়াপেরুমা বলেন, আমাদের একসাথে কাজ করার অবারিত সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সেবা, ঔষধ, চা, জ্বালানি, আর্থিক সেবা ও পর্যটন খাত যৌথ বিনিয়োগের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাময়।
তিনি জানান, শ্রীলংকা ইতোমধ্যেই একটি উচ্চাভিলাষী ডিজিটাল রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে এবং এই পরিকল্পনার অধীনে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তর এবং প্রতিটি সেবা স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকায় অত্যাধুনিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ এগিয়ে আসতে পারেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের শ্রীলংকার ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। যাতে দেশটির স্থানীয় চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্য আরও কঠোর করার পর মঙ্গলবার ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে পতন ঘটে, যা যুদ্ধকে আরও সম্প্রসারণ করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পঞ্চম দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ দাবি করেন এবং মার্কিন হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেন।
ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচক ০.৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৪২,২১৫.৮০ পয়েন্টে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৮ শতাংশ কমে ৫,৯৮২.৭২ পয়েন্টে এবং প্রযুক্তি খাতভিত্তিক ন্যাশডাক কম্পোজিট ০.৯ শতাংশ কমে ১৯,৫২১.০৯ পয়েন্টে নেমে আসে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এখন বিনিয়োগকারীদের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। একই সময়ে তারা ফেডারেল রিজার্ভের দিকে নজর রাখছে। যা বর্তমানে দুই দিনের আর্থিক নীতিমালা বৈঠকে রয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ আপাতত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কারণ, তারা ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে মুদ্রাস্ফীতির গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছে।
গতকাল বুধবার ফেড তাদের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশ করবে, যাতে থাকবে প্রবৃদ্ধি, বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা দুর্বল অর্থনৈতিক তথ্যের প্রভাবও মূল্যায়ন করছেন। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট খুচরা বিক্রি এপ্রিলের তুলনায় ০.৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭১৫.৪ বিলিয়ন ডলারে। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, এপ্রিলে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় যে ভোক্তারা আগেভাগে পণ্য কিনে নিয়েছিলেন, মে মাসে সেই কেনাকাটার গতি কমে গেছে।
এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ১১টি খাতের মধ্যে ১০টিতেই দরপতন হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল জ্বালানি খাত, যা তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
প্রতিরক্ষা খাতভুক্ত কোম্পানিগুলোও লাভ করেছে। লকহিড মার্টিন ২.৬ শতাংশ এবং নর্থরপ গ্রুমান ১.২ শতাংশ বেড়েছে।
মন্তব্য