মহামারি কেরোনাভাইরাসের এই মহাসংকটের সময়ে কৃষিই বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। এই কঠিন সময়ে কৃষি খাতের কোনো ক্ষতি হয়নি। উল্টো উৎপাদন বেড়েছে, বেড়েছে কর্মসংস্থান।
অন্যদিকে শিল্প ও সেবা খাত করোনার ছোবলে তছনছ হয়ে গেছে। শিল্প খাতের উৎপাদন তলানিতে নেমে এসেছে। চাকরি হারিয়ে দিশেহারা লাখ লাখ পরিবার।
সেবা খাতেরও একই অবস্থা। প্রায় দেড় বছর ধরে ছোট-বড় সব ধরনের হোটেল-রেস্টুরেন্ট, বিপণিবিতান, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ। বাস-ট্রেনসহ অন্য পরিবহনও চলছে না ঠিকমতো। বহু মানুষ কাজ হারিয়ে গ্রামে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া যায়।
এই প্রথমবারের মতো দুই অর্থবছরের জিডিপির হিসাব একসঙ্গে প্রকাশ করল পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০১৯-২০ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রাথমিক হিসাব প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তাতে দেখা যাচ্ছে, চূড়ান্ত হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। আর প্রাথমিক হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
এই দুই বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তার আগের দুই অর্থবছর ২০১৮-১৯ এবং ২০১৭-১৯ অর্থবছরে এই হার ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯২ এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে শিল্প খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এক ধাক্কায় ৩ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক দশকে সবচেয়ে কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় তিনগুণ ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১৭-১৯ অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ০৬ শতাংশ।
সেবা খাতের অবস্থাও বেশ খারাপ হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেবা খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সেবা খাতের এই প্রবৃদ্ধিও এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৭-১৯ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
তবে, নয় মাসের (২০২০ সালের ১ জুলাই-২০২১ সালের ৩০ মার্চ) হিসাব কষে পরিসংখ্যান ব্যুরো গত ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে হিসাব দিয়েছে, তাতে অবশ্য শিল্প ও সেবা খাতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশ খানিকটা বেড়েছে।
বিবিএস বলেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্প খাতে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আর সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ হয়েছে।
প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরে পণ্য উৎপাদন ও সেবা সৃষ্টি হয়ে কত টাকার মূল্য সংযোজন হয়, সেটাই জিডিপির হিসাবে ধরা হয়। মোটাদাগে কৃষি, শিল্প ও সেবা- এই তিন খাত দিয়ে জিডিপি হিসাব করা হয়। এসব খাতকে গণনা করা হয় সব মিলিয়ে ১৫ খাত দিয়ে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল সরকার।
এর মধ্যে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীন থেকে ছড়াতে শুরু করে নতুন এক করোনাভাইরাস, অল্প সময়ের মধ্যে তা বিশ্বজুড়ে মহামারির রূপ নেয়।
ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে দেশে লকডাউন শুরু হয়, বন্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট, ফলে বিশ্ব বাণিজ্য এক কথায় অচল হওয়ার দশা হয়।
বাংলাদেশে মহামারির ধাক্কা শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। শনাক্ত রোগী বাড়তে শুরু করে বাংলাদেশও অন্যান্য দেশের পথ অনুসরণ করে, ২৬ মার্চ থেকে সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
সরকারি ভাষায় ওই ‘সাধারণ ছুটি’ চলে টানা দুই মাস, এই সময় অর্থনীতির চাকা একপ্রকার অচল হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের শিল্পোৎপাদনও প্রায় বন্ধই থাকে।
মহামারির প্রথম ধাক্কায় অর্থনীতির ওই পরিস্থিতির মধ্যেও সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সাময়িক হিসাব দিয়েছিল। তবে তাতে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন অর্থনীতিবিদদের অনেকে।
এখন পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, ওই অর্থবছর সরকারের ধারণার চেয়েও ১.৭৩ শতাংশ পয়েন্ট কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মহামারির ওই সংকটে অর্থনীতির চাকা যেটুকু সচল ছিল, তার মূল কৃতিত্ব কৃষিখাতের।
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় দেড় বছর ধরে মহামারির ছোবলে শিল্প ও সেবা খাত তছনছ হয়ে গেছে; এখনও হচ্ছে। যতদিন না পর্যন্ত আমরা দেশের বেশির ভাগ মানুষষকে টিকা দিতে না পারব, ততদিন এই দুই খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
‘তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, এই দেড় বছরে আমাদের কৃষি খাতের কোনো ক্ষতি হয়নি; উল্টো এ খাতের উৎপাদন আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কৃষক ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসলের ভালো দাম পেয়েছে। তার প্রতিফলনই আমরা বিবিএসের হিসাবে দেখতে পাচ্ছি।’
২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে হিসাব পরিসংখ্যান ব্যুরো দিয়েছে, সেটাকে ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় বাস্তবভিত্তিক’ বলে মনে হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুরের।
তিনি বলেন, ‘মহামারির ওপর কারও হাত নেই। অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে এটা আঘাত এনেছে। এই মহামারির কারণে ভারতে প্রায় ১০ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি শুনে ভালো লাগছে।’
করোনার ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি এখনও যেহেতু পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি, তাই প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ না দিয়ে চলতি অর্থবছরে ‘সঠিক নীতি সহায়তা’ দিয়ে অর্থনীতিকে সঠিক পথে রাখার ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘মহাসংকটের সময়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটাই সবচেয়ে বড় অর্জন বলে আমি মনে করি। এই কঠিন সময়ে ৩/৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও যদি হয়, সেটাকেও আমি “অসম্ভব অর্জন” বলে মনে করব।’
বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, কী একটা ভয়াবহ কঠিন সময়ে পার করছে গোটা বিশ্ব। সব দেশের প্রবৃদ্ধিই হোঁচট খেয়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতসহ অনেক বড় বড় দেশের প্রবৃদ্ধি কমেছে। এর মধ্যে কৃষি খাত ভালো করায় আমাদের প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখেছি।’
মহামারির এই সংকটের সময়ে শিল্প ও সেবা খাতসহ অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থান কমলেও কৃষি খাতে বেড়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় দেখা যায়, মহামারিকালে কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বেসরকারি খাতে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। তারা গড়ে ৯৫ দিনের মতো কাজ পায়নি। পরে তাদের অনেকেই কাজ পেয়েছে। তবে আয় কমেছে। এর পরিমাণ গড়ে ১২ শতাংশ। করোনার কারণে শিল্প ও সেবা খাতে চাকরি কমেছে। আর কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জেলার ২ হাজার ৬০০ খানার (পরিবার) ওপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য পেয়েছে সিপিডি।
কৃষি খাতে কর্মসংস্থান কেন বেড়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোভিডকালে রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরের অনেকেরই চাকরি চলে যাওয়ায় তারা গ্রামে ফিরে গিয়ে কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। কেউ নিজের জমিতে চাষাবাদ করছে। অনেকে অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করছে। আবার অনেকে দিনমজুরির কাজে যোগ দিয়েছে।’
সে কারণেই শিল্প ও সেবাসহ অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থান কমলেও কৃষিতে বেড়েছে বলে জানান তিনি।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মোট জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে (বর্তমান বাজারমূল্যে) ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।
আর মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২৪ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ২২৭ ডলারে পৌঁছেছে।
গত অর্থবছর জাতীয় বিনিয়োগ (বর্তমান মূল্যে) জিডিপির ২৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এ সময়ে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২২ দশমিক ০৬ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশে। তবে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১-২১ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশে।
আরও পড়ুন:আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কনসিকন্সিয়াল’ (গুরুত্বপূর্ণ পরিণতিযুক্ত) উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) প্রস্তুত থাকার এবং কারো পক্ষে কাজ না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি)। এছাড়া অস্তিত্বের প্রশ্নে হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতেও তিনি ইউএনওদের নির্দেশনা দিয়েছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে ইউএনওদের এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
এ সময় অস্তিত্বের প্রশ্নে হিম্মত ও সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
ইসি সানাউল্লাহ মনে করেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির স্বার্থে ইউএনওদের এখনই প্রস্তুত থাকতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এই সুযোগ কাজে লাগানোরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে কনসিকন্সিয়াল নির্বাচন’ হিসেবে উল্লেখ করেন ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, পরিবেশ তৈরির স্বার্থে আগে থেকেই ইউএনওদের প্রস্তুত থাকতে হবে, কারো পক্ষে কাজ করা যাবে না। এ সরকার এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের মনোবল ও সততার বিষয়ে জোর দেন। তিনি স্বীকার করেন, ৫ আগস্টের পর কিছুদিন অস্থিতিশীল ছিল, অমুক তমুক এর কথায় অনেক কিছু হয়েছে। কর্মকর্তাদের এখন আর সে ভয় নেই।
তিনি বলেন, দুইটা কেয়ারটেকার সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষমতায় স্বাধীনতা পেয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তৈরির আবহ হচ্ছে দেখছি। আপনাদের ভয় নেই, আমরা পাশে আছি।
সরকারি কর্মকর্তাদের মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি এই নির্বাচনকে ‘এই সরকারের অধীনে সততা নিষ্ঠা দেখানোর সুযোগ’ হিসেবে দেখেন। আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ভয় পাওয়া যাবে না, হিম্মতের সঙ্গে কাজ করতে হবে অস্তিত্বের প্রশ্নে।’
তিনি ইউএনওদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শিডিউল ঘোষণার পর দেখবেন আশেপাশে কেউ নেই।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দু'পক্ষ থেকে ধরতে হবে, ধরলে ছাড়া যাবে না নির্বাচনের আগে। মোবাইল কোর্ট স্বচ্ছ হতে হবে। মোবাইল কোর্ট নিয়মিত করতে হবে।
ঢাকার বায়ুদূষণের মূল উপাদান হলো বাতাসে থাকা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (PM ২.৫)। আজ সকালে এই পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মানদণ্ডের চেয়ে ১৬.৫ গুণ বেশি পরিমাপ করা হয়েছে।
ঢাকার মধ্যে আজ সবচেয়ে দূষিত বাতাস বিরাজ করছে মিরপুরের পল্লবি এলাকায়।
এরপরের স্থানে রয়েছে—মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা
তেজগাঁও শান্তা ফোরাম, পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, মাদানি সরণির বেজ এজওয়াটার আউটডোর, গুলশানের গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
উল্লিখিত সব এলাকায় আজ বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আজ বিশ্বের বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরগুলো হলো— দিল্লি, ভারত – বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ লাহোর, পাকিস্তান – বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’
কিনশাসা, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র – বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’, কলকাতা, ভারত – বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’
ঢাকার অবস্থান পঞ্চম স্থানে থাকলেও বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে।
আইকিউএয়ারের এয়ার কোয়ালিটি স্কোর মানদণ্ড : ০–৫০: ভালো, ৫১–১০০: মাঝারি/সহনীয়, ১০১–১৫০: সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১–২০০: অস্বাস্থ্যকর, ২০১–৩০০: খুবই অস্বাস্থ্যকর।
ঢাকার বর্তমান স্কোর ১৭০ হওয়ায় এটি অস্বাস্থ্যকর শ্রেণীতে পড়ে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেনা কর্মকর্তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সারোয়ার বলেন, গত ৮ অক্টোবর তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে তিনটি আদেশ হয়েছে। সেই তিনটি মামলায় সাবেক-বর্তমান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর এসব কর্মকর্তাকে এটাচ (হেফাজতে নেওয়া) করে সেনা কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ সেনা সদরের হেফাজতে রাখা হয়। আজ ওই তিনটি মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই তারিখে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন তারা। আমাদের ওকালতনামা স্বাক্ষর করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আমরা তিনটি আবেদন করেছি। আবেদনগুলা পরবর্তী তারিখে শুনানি হবে। এর মধ্যে একটি জামিনের আবেদন রয়েছে। এছাড়া প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন ও তাদের যেন সাবজেলে রাখা হয়।
সাবজেল নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, এ ব্যাপারটি জেল কর্তৃপক্ষ দেখবেন। যারা পলাতক রয়েছেন তাদের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য একটা তারিখ আছে। শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছে ২০ নভেম্বর। এখন তাদের সেনানিবাসে যে সাব জেল (উপ কারাগার) ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, টেকনিক্যালি প্রসিকিউশন বলেছে গ্রেপ্তার। তবে আমরা বলি আত্মসমর্পণ। কারণ তারা আজ সকালে স্বেচ্ছায় এখানে এসেছেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সুবিধার জন্য তাদের একটা গাড়িতে আনা হয়েছে। নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক সুবিধার কারণে এই ফ্যাসিলিটিটা ব্যবহার করা হয়েছে। তারা প্রকৃতপক্ষে আত্মসমর্পণ করেছে।
এদিন সকাল ৮টার পর তিন মামলার ওপর শুনানি হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে আদালতে হাজির হওয়া ১৫ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।
এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আজ তিনটি মামলার মোট ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে র্যাবের টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৭ আসামির ১০ জনকে আনা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সাতদিন তথা ২৯ অক্টোবরের মধ্যে এ বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। একইসঙ্গে আগামী ২০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়।
জেআইসি বা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে গুমের অভিযোগে আরেকটি মামলায় ১৩ আসামির তিনজনকে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ মামলায় পরবর্তী শুনানিও একই দিন ঠিক করা হয়।
এছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাজির হওয়া দুজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তবে পলাতক দুই আসামি হাজির না হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে, ৮ অক্টোবর পৃথক এ তিন মামলায় মোট ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এর একটিতে ১৭, আরেকটিতে ১৩ ও অন্যটিতে ৪ জনকে আসামি করা হয়। তবে দুটিতেই শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। এর মধ্যে সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন ২৫ জন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ১১ অক্টোবর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সেনাসদর।
১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম। ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
এদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা উপলক্ষ্যে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোর থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালসহ হাইকোর্টের মাজারগেট এলাকা। এখানে পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি-সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা গেছে। সবমিলিয়ে বাড়ানো হয় ব্যাপক নিরাপত্তা।
রংপুরের তারাগঞ্জে উল্টো পথে আসা একটি বাসের চাপায় মোতালেব হোসেন (৩৫) নামে এক ইজিবাইক চালক নিহত হয়েছেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৫টার দিকে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের ইকরচালী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মোতালেব নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত একজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা সৈয়দপুরগামী ভাই ভাই মুরাদ ক্লাসিক পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ইকরচালী বাসস্ট্যান্ডে এসে হঠাৎ উল্টো পথে ঢুকে পড়ে। এ সময় মহাসড়কের বিপরীত দিক থেকে আসা ইজিবাইকটিকে চাপা দিয়ে সড়কের পাশে থাকা দোকানের সামনে থাকা পিলারে আটকে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক মোতালেব হোসেন মারা যান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসটি বাম দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও ডান দিকে সড়কের ধারে রাখা পিলারে আটকে আছে। উৎসুক লোকজন, স্কুল শিক্ষার্থীরা বাসটি ঘিরে রেখেছেন। এতে সড়কের একাংশ সংকুচিত হওয়ায় আবারও দুর্ঘটনা শঙ্কা রয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য দেখা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ভাতের দোকানদার আতিয়ার রহমান বলেন, আমার দোকানের সামনেই ঘটনা। সকালে দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি বাসটা বাম থেকে ডান দিকের লেনে হাই স্পিডে ঢুকে যায়। এ সময় ডান দিক থেকে আসা অটো গাড়ির নিচে চাপা পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে একজন মারা যায়।
পাশের আরেক দোকান মালিক জিয়াউর প্রামনিক বলেন, প্রায়ই দেখি উল্টো পাশ দিয়ে গাড়ি এই স্ট্যান্ডে ওভারটেক করে। এর আগেও এমন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অনেক মানুষের। কিন্তু এগুলো বন্ধ করার উপায় নাই।
তারাগঞ্জ হাইওয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অটোরিকশা চালক মোতালেব হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা ও মুরাদ পরিবহনের বাসটি জব্দ করা হয়েছে। বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে হবে। বাসচালক পালিয়ে গেছে।
মানবতাবিরোধী গুমের অপরাধের মামলায় হেফাজতে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো সেনা কর্মকর্তারা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (এখন অবসরকালীন ছুটিতে); র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম। ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিনজন পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
গুমের অভিযোগে করা দুটি মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আর গত বছরের ১৮ ও ১৯ জুলাই রামপুরায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলায় শুনানির জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে সকাল সোয়া ৭টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সাড়ে ৭টার দিকে প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে তাদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম-খুন ও জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আলাদা তিনটি মামলায় হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে।
তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি রয়েছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে একটিতে ১৭, আরেকটিতে ১৩ ও একটিতে চার জনকে আসামি করা হয়। আর দুটিতে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। তবে ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন হেফাজতে রয়েছেন।
বরিশালের হিজলার মেঘনা নদীতে নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশেষ আভিযানিক টিম কর্তৃক ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে।
গত সোমবার দিনব্যাপী নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশেষ টিম ও নৌপুলিশ বরিশাল অঞ্চল যৌথভাবে হিজলার মেঘনা নদীতে বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি কুসুম দেওয়ানের সার্বিক নির্দেশনায় ও নৌপুলিশের ডিআইজি মো. মিজানুর রহমান পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে সরকার ঘোষিত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫ উপলক্ষে এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে ৮ লাখ ২৫ হাজার মিটার অবৈধ জাল ও ১৮০ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ এবং ৭টি নৌকা উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া ২৩টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাসহ ৩ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে নিয়মিত মামলা রুজু করে প্রয়োজনীয় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অভিযানে জব্দকৃত জাল ধ্বংস করা হয় এবং মাছ স্থানীয় গরিব, অসহায় ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
ওই অভিযানে নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইনান্স) মাসুমা আক্তার, নৌপুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার এসএম নাজমুল হক বিপিএম (বার), পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল পিপিএম (বার), মো. ইমরান হোসেন মোল্লা পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (বরিশাল/ পটুয়াখালী জোন) ও সোহেল মিয়া, সহকারী পুলিশ সুপার (প্রকিউরমেন্ট)-সহ নৌপুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত অফিসার ও ফোর্স অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ আভিযানিক টিমের পাশাপাশি ওইদিন নৌপুলিশের বরিশাল অঞ্চলের হিজলা নৌপুলিশ ফাঁড়ি, কালীগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ি ও অস্থায়ী ক্যাম্পসমূহ তাদের চলমান অভিযান জোরদারভাবে অব্যাহত রাখে। অপারেশনাল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সরকারি আদেশ অমান্য করে অবৈধ কারেন্ট জালসহ বিভিন্ন জাল দিয়ে মা ইলিশ ধরা জেলেদের কার্যক্রম সনাক্ত করার জন্য হিজলা এলাকাধীন মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা চলাকালে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে লিফলেট বিতরণ ও জনসচেতনামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌপুলিশ। এ লক্ষ্যে নৌপুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে দিনে-রাতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। উল্লেখ্য গত ৪ অক্টোবর থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে এবং আজ ২২ অক্টোবর (বুধবার) পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লার চান্দিনায় মানবিক সংগঠন ‘চেষ্টা’-এর উদ্যোগে দুঃস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন ও উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গত সোমবার চান্দিনা পৌরসভার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে চারজন দুঃস্থ নারী ও একজন বীর কন্যার হাতে মোট পাঁচটি সেলাই মেশিন এবং বিভিন্ন উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। আয়োজনে ছিল ‘চেষ্টা’ সংগঠন এবং সহযোগিতায় ‘চান্দিনা আল রাজি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার’। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চান্দিনা উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ফয়সাল আল নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন চেষ্টা সংগঠন এর সভাপতি লায়লা নাজনীন হারুন ও চান্দিনা আল রাজি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান আল আমিন।
ঢাকা থেকে আগত ‘চেষ্টা’ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক গুলসান নাসরীন চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ শারমিনা খানম, সাংগঠনিক সম্পাদক কানিজ মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক সাকেরা খান এবং সদস্যরা দিলরুবা মাহমুদ রুবি, সাহনাজ মান্নান, মনোয়ারা তাহির ও আইভী মামুন। সভায় অতিথিরা বলেন, ‘চেষ্টা’ একটি অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সংগঠনটি সুদীর্ঘ ১৫ বছর থেকে, মানবতার সেবায় নিয়োজিত। এই সংগঠনটি ২০১৩ সালে নারী ও শিশু অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত। সংগঠনটি সমাজে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর এবং ৭১ এর বীর কন্যাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
সভাপতি লায়লা নাজনীন হারুন, ‘চেষ্টার’ কার্যক্রম অতিথী ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন।
সেক্রেটারি গুলসান নাসরীন চৌধুরী, মানবতার পক্ষে ‘চেষ্টা’ সংগঠন কীভাবে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে, সে বিষয়ে উপস্থিত সন্মানিত অতিথিদেরকে অবহিত করেন।
অতপর, সিমা রানী সাহা, ফারজানা বেগম, রোকসানা ইসলাম, লুৎফা বেগমসহ ৫ জন অবহেলিত মহিলাকে ৫ টি সেলাই মেশিন, শাড়ি ও উপহারগুলো তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। চেষ্টার সভাপতি সমাজের বিত্তবানদের কাছে এই মহৎ কাজে সহযোগিতা কামনা করেন।
মন্তব্য