করোনাভাইরাস মহামারিতে নানা দুঃসংবাদের মধ্যে অর্থনীতিতে স্বস্তিদায়ক একটি খবর এসেছে। এ সময় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ দুর্বল হলেও বিদেশি সহায়তায় সুবাতাস বইছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরপর দুই অর্থবছর বিদেশি সাহায্য ঋণ-অনুদান মিলে ৭০০ কোটি ডলার (৭ বিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে।
দেশের অর্থনীতিবিদরা এই প্রবণতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন।
সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ঋণ-অনুদান মিলে মোট ৭১১ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেছে, বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ঋণের অংশই বেশি, যার পরিমাণ ৬৭৭ কোটি ডলার। অবশিষ্ট অংশ অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।
এর আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণ-অনুদান মিলে পাওয়া গিয়েছিল ৭২৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৬৭৪ কোটি ডলার। বাকিটা অনুদান।
মূলত করোনার মধ্যেই বেশি পরিমাণ বাজেট সহায়তা ও বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর কারণে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপানসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বেশি ঋণ এসেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এত বেশি বিদেশি সহায়তা আর কখনো আসেনি। করোনার আগে গত কয়েক বছর ধরে গড়ে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়া যেত।
‘এখন তা ৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এটি আমাদের জন্য বড় অর্জন।’
করোনা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক, এডিবি বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার আশা করছে নতুন অর্থবছরেও প্রত্যাশিত বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে। ফলে এবারও বিদেশি ঋণ রেকর্ড ছাড়াবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকল্পের বিপরীতে ঋণের চেয়ে বাজেট সহায়তা সরকারের সবচেয়ে বড় সুবিধা। কারণ বাজেট সহায়তার টাকা করোনা প্রতিরোধসহ প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো শর্ত লাগে না। এ জন্য বেশি পরিমাণ বাজেট সহায়তা পেতে আগ্রহী সরকার।
প্রতিশ্রুতি ছিল আরও বেশি
সহায়তার পরিমাণ বাড়লেও প্রতিশ্রুতি ছিল আরও বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিদায়ি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল ৯৩৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ৭১১ কোটি ডলার।
অর্থাৎ প্রতিশ্রুত সহায়তার চেয়ে কম এসেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। এর আগের বছরে একই পরিমাণ সহায়তা কম এসেছিল।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিশ্রুতি মানে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি। আর সহায়তা পাওয়া মানে অর্থছাড়।
শর্ত পালনে জটিলতাসহ নানা কারণে অর্থ ছাড়ে দেরি হয়। এ জন্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সাহায্য পাওয়া যায় না।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক জ্যেষ্ঠ পরিচালক ও বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো খবর। তবে খেয়াল রাখতে হবে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ এখনও দুর্বল।’
তিনি আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। চলতি অর্থবছরও এর প্রভাব থাকবে। ফলে বিশাল বাজেট অর্থায়নে আরও বেশি বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে সরকারকে।
করোনাকালে স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও প্রণোদনাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ জুন নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়ে এ বাজেট বাস্তবায়নের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিদেশি সহায়তার উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়।
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। সে জন্য বাজেটে অর্থায়নে আরও বেশি বিদেশি সহায়তার দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে।
‘পাইপলাইনে (ছাড়যোগ্য বৈদেশিক সাহায্য) অনেক অর্থ আটকে আছে। ওই অর্থ ছাড়ের জন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এখান থেকে কিছু অংশ ছাড় হলে সরকারের বাড়তি ব্যয়ের চাহিদা পূরণ করা যাবে।’
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে পাইপলাইনে পুঞ্জিভূত সহায়তার পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা হলে দ্রুত ছাড় হবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পাইপলাইনে যে পরিমাণ সহায়তা আছে, তার ১০ শতাংশ অর্থ ছাড় করতে পারলে বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে। ফলে এ দিকে সরকারকে আরও মনোযোগ দেয়া উচিত।
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া শর্ত পালন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হয়। এসব কারণে পাইপলাইনে পুঞ্জিভূত অর্থের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে বেশি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আশা করছি এবার বিদেশি সহায়তাও আরও বাড়বে।’
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য ক্রমশ হ্রাস পেলেও এখনও উল্লেখযোগ্য অংশ বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের ৩০ শতাংশ বিদেশি সহায়তার মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এক দশক আগে এর অংশ ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
করোনাকালীন বাড়তি ব্যয় মেটানোর লক্ষ্যে ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতি প্রাক্কলন করে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়।
চলতি বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে অর্থপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয় প্রায় ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যা বিদায়ি অর্থবছরে ছিল ৭৬ হাজার কোটি টাকা।
এবারের এডিপিতে ১ হাজার ৫৩৮টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা ৩৬৫টি।
বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদেশি সহায়তা পায়। বহুপক্ষীয় সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয় বিশ্বব্যাংক। আর দ্বিপক্ষীয়র মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ দেয় জাপান।
বর্তমানে ঋণ ও অনুদান দুটোই বাংলাদেশ পায়। তবে অনুদানের অংশ কম। এটা মোট সহায়তা প্রাপ্তির ৪ থেকে ৫ শতাংশ। অবশিষ্ট সিংহভাগ ঋণ হিসেবে দেয় উন্নয়ন সহযোগীরা।
আগে খাদ্য সহায়তার নামে কিছু অর্থ আসত। এখন পুরো টাকা প্রকল্প সাহায্যের নামে আসে।
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ যে ঋণ নেয়, তার বেশির ভাগই মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে। এসব ঋণ নমনীয়। এ কারণে সুদ পরিশোধে চাপ কম থাকে।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বমানের বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে একটি পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপের মধ্যে পড়ে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১১টার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের পূর্ব নেমাজপুর গ্রামে মাঠের মধ্যে থাকা ওই পাইপ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মানসিক প্রতিবন্ধী রনি বর্মনকে (২৩) অবশেষে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, বিএমডিএর গভীর নলকূপটির পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায়, নতুন করে আরেকটি গভীর নলকূপ কিছুদিন আগে বসানো হয়, ফলে আগেরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। ওই পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপের মধ্যেই পড়ে যান রনি বর্মন।
নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তারেকুর রহমান জানান, প্রায় ৫ ঘণ্টার বেশি সময়ের চেষ্টায় বিকেলে সোয়া ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রনি বর্মনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষে পুলিশ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।
স্থানীয়রা জানান, রনি বর্মন গভীর নলকূপের ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। সকালে পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপের কাছে গেলে,পড়ে যান। এ সময় মাঠের কয়েকজন কৃষক ওই নলকূপের কাছে পানি খাওয়ার জন্য এসেছিলেন, তারা ছেলেটির কান্নার আওয়াজ শুনে সবাইকে জানান, খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
মানিকগঞ্জে মাদ্রাসার ছাদে খেলার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে মাহিয়া আক্তার নামের এক ছাত্রী নিহত হয়েছে।
শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার বাসস্ট্যান্ডের কাছে অবস্থিত আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
১৭ বছর বয়সী মাহিয়া আক্তার মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বড় কালিয়াকৈর এলাকার আল মামুনের মেয়ে। সে আয়েশা সিদ্দিকা মহিলা মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্রী ছিল।
মাদ্রাসার শিক্ষিকা শারমিন আক্তার জানান, সকালে ক্লাসের ফাঁকে মাদ্রাসার ছাদে খেলাধুলা করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাদ্রাসার ভবনের চার তলা থেকে নিচে পড়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছিল, কিন্তু ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. হাবিল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শেরপুরে দুর্বৃত্তের হামলায় ভূমি অফিসের দুই কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। ঘটনার পর হামলাকারীরা ‘ভূমিদস্যু’ বলে অভিযোগ করেছেন আহত কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের নন্দীবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত দুই কর্মকর্তা হলেন- সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. শহীদুল ও কামারেরচর ভূমি অফিসের নায়েব শহীদুল ইসলাম।
শেরপুর সদর থানার ওসি এমদাদুল হক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার কামারেরচর থেকে কাজ শেষে মোটরসাইকেলে শহরে ফেরার পথে শেরপুর-জামালপুর সড়কের নন্দীবাজার এলাকায় কয়েকজন ব্যক্তি ওই দুই কর্মকর্তার গতিরোধ করেন। এ সময় সার্ভেয়ার মোটরসাইকেলটি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে অতর্কিত পেছন থেকে তাদের দুজনকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে থাকে এবং একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সার্ভেয়ার শহীদুলের মাথায় আঘাত করে। এ সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এরপর স্থানীয়রা তাদের শেরপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে আহত সার্ভেয়ার শহীদুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপরজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যান।
আহত সার্ভেয়ার ও নায়েব বলেন, লসমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার মো. সেলিম মিয়া ও তার ছেলেসহ আরও কয়েকজন এ হামলা চালান। হামলাকারীরা এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু। তাদের নামে শেরপুর সি আর আমলী আদালতে জাল দলিল তৈরি করে ভূমি জালিয়াতি করায় সরকার পক্ষের একটি মামলা চলছে। এরই জেরে তারা পরিকল্পিত এ হামলা চালিয়েছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন, অথচ বিএনপি দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে এতটা হীন মনোবৃত্তির পরিচয় তারা দিচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে তাদের বাস্তবতা বোঝা উচিত।’
শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। খবর বাসসের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্য থেকে বিএনপি নেতাদের প্রকৃত সত্য শিক্ষা নেয়ার আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নতি ও উচ্চতা, এটা দেখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ লজ্জিত। তখন পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের কাছে মনে হতো বোঝা। এখন সে বোঝাই অনেক উন্নয়নে এগিয়ে গেছে। সে উন্নয়ন দেখে তিনি লজ্জিত হন। বিএনপি যতটা অপপ্রচার করে তাদের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রকৃত সত্য শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে।
বৃহস্পতিবার করাচিতে সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে তাকালে এখন তাদের লজ্জা হয়। সে সময় ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ দেশের বোঝা মনে করা হতো। কিন্তু তারা শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব যুদ্ধ-সংঘাতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-হামাস পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আগ্রাসী অভিযান শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছেন। সব প্রকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও এ যুদ্ধকে না বলার জন্য বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কুড়িগ্রামে শতাধিক দুস্থ অসহায় বাবা মায়ের জন্য ভ্রাম্যমাণ শাড়ি লুঙ্গির হাটের আয়োজন করেছে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ভ্রাম্যমাণ এ হাটে আট টাকা দরে একটি শাড়ি, একটি লুঙ্গি এবং দুই টাকায় একটি ব্লাউজের পিস বিক্রি করা হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের কুমোরপুর দাখিল উলুম মাদ্রাসা মাঠে শুক্রবার দুপুরে এসব শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করা হয়েছে।
আট টাকায় শাড়ি পেয়ে বৃদ্ধ আমেনা বেওয়া বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে একটা শাড়ির দাম নিম্নে ৩০০ টাকা। সেই শাড়ি আট টাকায় পেয়ে খুব উপকার হলো।’
লুঙ্গি পেয়ে হামিদ মিয়া বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সে কোন দিন দেহি নাই আট টাহায় এহান (একটা) লুঙ্গি পাওয়া যায়। আইজ সেই আট টাহায় লুঙ্গি কিনলাম। খুব খুশি নাগছে।’
ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, “‘ফুল’ দীর্ঘদিন ধরে জেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অসহায় বাবা মাকে নিয়ে কাজ করে আসছে। তাদের আজকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
ফাইট আনটিল লাইটের নির্বাহী পরিচালক আবদুল কাদের বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সামাজিক সংগঠন ফুল শহর গ্রাম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষ মাঝে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে।
‘আমরা ত্রাণে নয়, বিনিময়ে উপহার দিয়ে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে চাই। তাই অসহায় বাবা-মায়ের কাছে মাত্র আট টাকার বিনিময়ে শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি।’
আরও পড়ুন:অতি তীব্র দাবদাহের মধ্যে মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
সীমান্তবর্তী জেলাটিতে শুক্রবার বেলা তিনটায় ৪২ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জেলায় অতি তীব্র দাবদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়।
তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমজনিত রোগী। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। তা ছাড়া অতি গরমে নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘এই তাপে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে কৃষিকাজ করা যাচ্ছে না।
‘ধানের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানে বেশি সেচ লাগছে, কিন্তু সেচ পাম্পে ঠিকমতো পানিও উঠছে না।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ অব্যাহত রয়েছে। আগামী তিন দিন এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।’
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির গভর্নর হাউসে শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ মন্তব্য করেন বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে সহযোগিতা জোরদারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, খাদ্য নিরাপত্তা, পর্যটন, জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি, আইসিটি, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগের ক্ষেত্রে এবং বিমসটেকের অধীনে আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।’
এর আগে দুই নেতা গভর্নর হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে ১৫ মিনিটের জন্য একান্ত বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি—একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও একটি লেটার অফ ইনটেন্ট (এলওআই) সই করা হয়।
মধ্যাহ্নভোজে শেখ হাসিনা বলেন, নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব আমাদের ঐতিহাসিক, ভাষাগত ও অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন, জনগণ থেকে জনগণে যোগাযোগ ও সংযোগসহ সহযোগিতার বহুমুখী ক্ষেত্রে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী থাভিসিন ও তিনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করতে এবং দুই দেশের সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আরও আলাপ-আলোচনাকে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছি। একইভাবে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের প্রসার ও সুবিধার্থে আমাদের সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ঢাকা ও ব্যাংকক যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য একটি দৃঢ় কাঠামো প্রদান করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সফরটি ‘প্রতিবেশী’ নীতির বৃহত্তর ফোকাসের অংশ, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি আরও নবায়নের জন্য দুই দেশকে চমৎকার সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গতি সঞ্চার করবে।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারি সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
‘আগামী দিনগুলোয় আমাদের জনগণ ও দেশের পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমাদের সম্পর্কের নতুন গতি বজায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য