করোনাভাইরাস মহামারিতে নানা দুঃসংবাদের মধ্যে অর্থনীতিতে স্বস্তিদায়ক একটি খবর এসেছে। এ সময় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ দুর্বল হলেও বিদেশি সহায়তায় সুবাতাস বইছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরপর দুই অর্থবছর বিদেশি সাহায্য ঋণ-অনুদান মিলে ৭০০ কোটি ডলার (৭ বিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে।
দেশের অর্থনীতিবিদরা এই প্রবণতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন।
সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে ঋণ-অনুদান মিলে মোট ৭১১ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেছে, বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ঋণের অংশই বেশি, যার পরিমাণ ৬৭৭ কোটি ডলার। অবশিষ্ট অংশ অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে।
এর আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঋণ-অনুদান মিলে পাওয়া গিয়েছিল ৭২৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৬৭৪ কোটি ডলার। বাকিটা অনুদান।
মূলত করোনার মধ্যেই বেশি পরিমাণ বাজেট সহায়তা ও বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানোর কারণে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপানসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বেশি ঋণ এসেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এত বেশি বিদেশি সহায়তা আর কখনো আসেনি। করোনার আগে গত কয়েক বছর ধরে গড়ে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়া যেত।
‘এখন তা ৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এটি আমাদের জন্য বড় অর্জন।’
করোনা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক, এডিবি বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার আশা করছে নতুন অর্থবছরেও প্রত্যাশিত বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে। ফলে এবারও বিদেশি ঋণ রেকর্ড ছাড়াবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকল্পের বিপরীতে ঋণের চেয়ে বাজেট সহায়তা সরকারের সবচেয়ে বড় সুবিধা। কারণ বাজেট সহায়তার টাকা করোনা প্রতিরোধসহ প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো শর্ত লাগে না। এ জন্য বেশি পরিমাণ বাজেট সহায়তা পেতে আগ্রহী সরকার।
প্রতিশ্রুতি ছিল আরও বেশি
সহায়তার পরিমাণ বাড়লেও প্রতিশ্রুতি ছিল আরও বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিদায়ি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল ৯৩৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে পাওয়া গেছে ৭১১ কোটি ডলার।
অর্থাৎ প্রতিশ্রুত সহায়তার চেয়ে কম এসেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। এর আগের বছরে একই পরিমাণ সহায়তা কম এসেছিল।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিশ্রুতি মানে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি। আর সহায়তা পাওয়া মানে অর্থছাড়।
শর্ত পালনে জটিলতাসহ নানা কারণে অর্থ ছাড়ে দেরি হয়। এ জন্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সাহায্য পাওয়া যায় না।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক জ্যেষ্ঠ পরিচালক ও বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো খবর। তবে খেয়াল রাখতে হবে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ এখনও দুর্বল।’
তিনি আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। চলতি অর্থবছরও এর প্রভাব থাকবে। ফলে বিশাল বাজেট অর্থায়নে আরও বেশি বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে সরকারকে।
করোনাকালে স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও প্রণোদনাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত ৩ জুন নতুন অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বিশাল বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ কমে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়ে এ বাজেট বাস্তবায়নের কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিদেশি সহায়তার উচ্চ লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়।
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। সে জন্য বাজেটে অর্থায়নে আরও বেশি বিদেশি সহায়তার দিকে নজর দিতে হবে সরকারকে।
‘পাইপলাইনে (ছাড়যোগ্য বৈদেশিক সাহায্য) অনেক অর্থ আটকে আছে। ওই অর্থ ছাড়ের জন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এখান থেকে কিছু অংশ ছাড় হলে সরকারের বাড়তি ব্যয়ের চাহিদা পূরণ করা যাবে।’
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে পাইপলাইনে পুঞ্জিভূত সহায়তার পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা হলে দ্রুত ছাড় হবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পাইপলাইনে যে পরিমাণ সহায়তা আছে, তার ১০ শতাংশ অর্থ ছাড় করতে পারলে বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে। ফলে এ দিকে সরকারকে আরও মনোযোগ দেয়া উচিত।
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া শর্ত পালন করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হয়। এসব কারণে পাইপলাইনে পুঞ্জিভূত অর্থের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে বেশি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আশা করছি এবার বিদেশি সহায়তাও আরও বাড়বে।’
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য ক্রমশ হ্রাস পেলেও এখনও উল্লেখযোগ্য অংশ বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এডিপিতে অর্থ বরাদ্দের ৩০ শতাংশ বিদেশি সহায়তার মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এক দশক আগে এর অংশ ছিল ৪০ শতাংশের বেশি।
করোনাকালীন বাড়তি ব্যয় মেটানোর লক্ষ্যে ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতি প্রাক্কলন করে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়।
চলতি বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে অর্থপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয় প্রায় ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যা বিদায়ি অর্থবছরে ছিল ৭৬ হাজার কোটি টাকা।
এবারের এডিপিতে ১ হাজার ৫৩৮টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বাস্তবায়নাধীন বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের সংখ্যা ৩৬৫টি।
বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বহুপক্ষীয় এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদেশি সহায়তা পায়। বহুপক্ষীয় সংস্থার মধ্যে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেয় বিশ্বব্যাংক। আর দ্বিপক্ষীয়র মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ দেয় জাপান।
বর্তমানে ঋণ ও অনুদান দুটোই বাংলাদেশ পায়। তবে অনুদানের অংশ কম। এটা মোট সহায়তা প্রাপ্তির ৪ থেকে ৫ শতাংশ। অবশিষ্ট সিংহভাগ ঋণ হিসেবে দেয় উন্নয়ন সহযোগীরা।
আগে খাদ্য সহায়তার নামে কিছু অর্থ আসত। এখন পুরো টাকা প্রকল্প সাহায্যের নামে আসে।
ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ যে ঋণ নেয়, তার বেশির ভাগই মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে। এসব ঋণ নমনীয়। এ কারণে সুদ পরিশোধে চাপ কম থাকে।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বমানের বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:শিক্ষার্থী লেখাপড়া করবে, খেলাধুলা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তারওপর একজন কোরআনে হাফেজ, সে তো বসে থাকার কথা নয়, কোরআন তেলোয়াত করে, মাহফিল করে মঞ্চ মাতানোর কথা যার, বিধির নির্মম পরিহাস, সে মেধাবী রুহুল আমিন এখন লোহার শিকলে বন্ধি। একেই বলে মেধাবীরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধিকতায় আস্টে-পিস্টে আটকে আছে। রূপগঞ্জের জাঙ্গীর এলাকার হতদরিদ্র ঘরের সন্তান রুহুল আমিন। হয়েছিল কোরআনে হাফেজ, মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় পেয়েছিল জিপি-এ গ্রেড। এমনকি আজান প্রতিযোগীতায় জেলা পর্যায়ে হয়েছিল তৃতীয় স্থান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দাখিল পরীক্ষা দেওয়ার দুই দিন পর হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে সে। মানুষ দেখে অস্বাভাবিক আচরণ করার কারণে রুহুল আমিনকে ১৫ বছর ধরে জরাজীর্ণ একটি ঘরে শিকলে বন্দি করে রেখেছেন তার পরিবারের লোকজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর দারকাবো টেক এলাকার হতদরিদ্র ইদ্রিস আলীর চার ছেলের মধ্যে সবার ছোট রুহুল আমিন। বড় ছেলে সিএনজি চালক, মেজো ছেলে রং মিস্ত্রি আর সেজো ছেলে পেশায় স্যানেটারির কাজ করেন। অসুস্থতার কারণে রুহুল আমিনের বাবা ইদ্রিস আলি কোনো কাজ করতে না পারায় সংসারে বেড়েছে অভাব অনটন। পারছে না চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করতে। এলাকাবাসী জানায়, ছোট বেলা থেকেই মেধাবী হওয়ায় রুহুল আমিনকে লেখাপড়ার জন্য ভর্তি করা হয় স্থানীয় ফাজিল মাদ্রাসায়। হয়েছিলেন কোরআনে হাফেজ। ২০০৬ সালে জেলা পর্যায়ে জাতীয় শিশু কিশোর সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় আজানে তৃতীয় স্থান অর্জন করে সে। ২০১০ সালে দাখিল পরীক্ষার শেষের দিকে অসুস্থবোধ করে সে।
এদিকে ২০১৮ সালে পরিবারের লোকজন এলাকাবাসীর সহায়তায় রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। ২০২১ সাল পর্যন্ত সেখানে চলে তার চিকিৎসা। সর্বশেষে ২ মাস সেখানে ভর্তি রাখা হয়। কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছিল তার অবস্থার। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হয় বাড়িতে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন রুহুল আমিনকে রাজধানী যেকোনো সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে সমাজসেবা অধিদপ্তর সার্বিক সহায়তা করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি জানা ছিল না। রুহুল আমিনের উন্নত চিকিৎসার জন্য যা করা দরকার সব ব্যবস্থা করব। আর্থিক সহায়তা লাগলে উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে নিয়ে সবাই মিলে ব্যবস্থা করব।
মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কক্সবাজারের আশ্রয় শিবির থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এই পথের আগালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়বে।
গতকাল বুধবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে এসব কথা ওঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গা বিদ্রোহের ঝুঁকি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শরণার্থীদের মধ্যে থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য সদস্য সংগ্রহের ঝুঁকি এবং তা প্রশমনে পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির ক্রমাগত অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠনগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতায় জড়িত থাকা এই গোষ্ঠীগুলো গত নভেম্বরে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সহিংসতা কিছুটা কমলেও সদস্য সংগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে ধর্মীয় আহ্বানকে কেন্দ্র করে, যেহেতু আরাকান আর্মির পেছনে রাখাইনের বৌদ্ধ জনগণের সমর্থন রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রায় পুরোই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার প্রচেষ্টা নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে নামলে আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে বাড়তি অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। যদিও অতীতে এই গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করেছিল, এবার আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে তারা ভিন্ন অবস্থান নেয়। তবে সেনাবাহিনীর এই কৌশল শেষ পর্যন্ত বড় কোনো সাফল্য বয়ে আনতে পারেনি।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। শরণার্থী শিবিরে সহিংসতা হ্রাস করে ঐক্য প্রচেষ্টায় সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশের। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে তাদের প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগের পরিকল্পনা আছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে যে এলাকাগুলো থেকে রোহিঙ্গাদের উৎখাত করা হয়েছিল, সে স্থানগুলো এখন আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। এদিকে জান্তা সরকারের বিরোধিতার জন্য সাধারণ জনগণের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে আরাকান আর্মির পিছে। রোহিঙ্গারা তাদের বিরোধিতা করলে বরং শরণার্থীদের প্রতি মিয়ানমারে আরও বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, বাংলাদেশের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো, রাখাইনে বাণিজ্য ও সহায়তা জোরদার করা এবং শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব কমানো। এতে সীমান্তে স্থিতিশীলতা আসবে এবং রোহিঙ্গা নাগরিক সমাজ গড়ে উঠবে। আরাকান আর্মির উচিত রোহিঙ্গাদের আস্থায় আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং প্রমাণ করা যে তারা সবাইকে নিয়ে শাসন চালাতে সক্ষম। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৈদেশিক সহায়তা কমাচ্ছে, তাই আন্তর্জাতিক দাতাদের উচিত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরে সহায়তা আরও বাড়ানো।
আগামী ২১ ও ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর অধীনে সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই দিনও খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মূলত রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে এনবিআর। গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২২ জুন বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে। এটি সাময়িক হিসাব। ভ্যাটের রিটার্ন দাখিলের হিসাবের এই সংখ্যা আরও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
এনবিআরকে চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের ক্যাটাগরি ‘সি’-এর সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে।
আসন্ন এ নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়েসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে উপদেষ্টা এ সমর্থন কামনা করেন।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। আমাদের ১টি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মোট ৪টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে নদনদী ও মেরিটাইম সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান তিনটি বৃহৎ সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় চুয়ান্নটি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে। হাজারের ওপর নদনদী দেশজুড়ে জালের মতো বিস্তৃত। দেশে ১০ হাজার কিলোমিটারের অধিক বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ নৌপথ রয়েছে। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরকে আরো এগিয়ে নিতে এবং মেরিটাইম সেক্টরের বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখতে বাংলাদেশ আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘোষণা করেছে।
এ সময় উপদেষ্টা বাংলাদেশের সামুদ্রিক ঐতিহ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান অবদান তুলে ধরেন।
তিনি জানান, মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশ গ্রহণ রয়েছে। এ সেক্টরের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়েও বাংলাদেশের ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ হাজারের বেশি জাহাজ, ৯৫টি সমুদ্রগামী ও ২০ হাজারের বেশি উপকূলীয় জাহাজ আসে।
তিনি টেকসই সামুদ্রিক উন্নয়নের প্রতি দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আইএমওয়ের কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, জাহাজ পুনর্ব্যবহার খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ১২০ জনের বেশি নারীসহ ২১ হাজার প্রশিক্ষিত নাবিক দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নাবিক কল্যাণ ও জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে। উপদেষ্টা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জাহাজ শিল্পে নরওয়ে সরকারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জাহাজ নির্মাণ ও পুনর্ব্যবহার খাতে নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানি ও জাহাজ শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আইএমও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও সমুদ্র দূষণ রোধে বাংলাদেশের সতর্ক অবস্থানের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, মাতারবাড়ি ও মোংলা গভীর সমুদ্রবন্দরের ডকইয়ার্ড নির্মাণে নরওয়ে কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক বিনিয়োগ করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও ক্ষমতার পরিসর নিয়ে আজ আলোচনার শুরুতেই একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুরুতে এই কথা জানান কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় কম। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে একমত হয়ে জুলাই মাসের মধ্যে “জুলাই সনদ” চূড়ান্ত করতে হবে। কমিশনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এসবের মধ্যেও আলোচনা ফলপ্রসূ করতে সবার সাহায্য প্রয়োজন।’
আলী রিয়াজ জানান, যেসব বিষয়ে আজও সমঝোতা হবে না, সেগুলো নিয়ে আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় বসা হবে।
আজ চতুর্থ দিনের আলোচনায় যে বিষয়গুলো থাকছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো— প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ।
গতদিন যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে আজকের আলোচনার সূচনা হবে বলে জানান কমিশনের সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবারের এই বৈঠকে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এনসিপির হয়ে রয়েছেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। আর জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কিছু কিছু পত্রিকায় ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন সম্পর্কে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার বক্তব্য বিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। এপ্রেক্ষিতে বিভ্রান্তি দূর করার স্বার্থে জানানো যাচ্ছে যে, ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সিদ্ধান্ত হয়নি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আইন উপদেষ্টা তার সর্বশেষ বক্তব্যে বলেছেন, সময়মতো রাজনৈতিক দল, ছাত্রনেতৃত্ব ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এবিষয়ে কি করা যায়; তা চিন্তা করা হবে।
‘তিনি তার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যেও বলেছেন, এধরনের কমিশন গঠনের কথা ভাবা যেতে পারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত গণহত্যার বিচার হওয়ার পর এবং গণঅভ্যুত্থানে পতিত দলটির নেতাদের অনুশোচনা প্রকাশ সাপেক্ষে। তার বক্তব্য ছিল, গণহত্যাকারীরা যে জাতি থেকে বিচ্ছিন্ন ও পরিত্যাজ্য এটি প্রতিষ্ঠার জন্যও এধরনের কমিশন গঠনের কথা ভাবা যায়,’ বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
এরআগে গেল ১০ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘দেশে একটি ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা হবে। এই লক্ষ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টাসহ একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ আফ্রিকাতে যাচ্ছে। ফিরে এসে এই কমিশন গঠন করার সময় বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (দ্বিতীয় খসড়া) বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তখন এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন লেখক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিনাকী ভট্টাচার্য। তিনি এই খসড়া আইনের বেশকিছু ধারা নিয়ে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনন্তকাল হানাহানি করে এ জাতির মুক্তি হবে না, তাই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। যারা গণহত্যার মতো, মানবতা বিরোধী অপরাধের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করেছে, তারা খুব বেশি সংখ্যক না। তাদের উপযুক্ত ও যথেষ্ট পরিমাণ শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। তারা যে এই জাতির মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন, সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য হলেও ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন করতে হবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘যারা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের উপযুক্ত বিচার করে, তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার জন্য যা যা করা যায়, সেটা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। একই সাথে সরকার গুমসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচারের জন্য আইন করে যাবে, যাতে এই অপরাধগুলো ভবিষ্যতে আর না হয়।’
টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করছেন সরকারি কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটি বাতিল না হলে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। পরে সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যাননুরুল ইসলাম জানান, চাকরি অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
সরকারি কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। । এটি বাতিল করার জন্য সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, কর্মবিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও কয়েকজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
মন্তব্য