বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি নতুন করে জোরালোভাবে আলোচনায় আসায় এই সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে; দামও বেশ ভালো। গতবারের চেয়ে মণে প্রায় হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। কৃষকরা বাড়তি এ দাম পেয়ে খুশি। তবে ভরা মৌসুমে এই দাম থাকবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রধান বাজারগুলোতে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় রপ্তানিকারকরাও এই খাতটি থেকে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনতে নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।
দেশের সব জেলাতেই কম-বেশি পাটের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ হয় ফরিদপুর জেলায়।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হজরত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, জেলায় এবার ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮৪ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে। তার আগের মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে।
গত মৌসুমে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি জমিতে চাষ করেছেন বলে জানান হজরত আলী।
এই মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্টিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাট ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে তারা কিনছেন। সপ্তাহখানেক আগে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন।
‘মাত্র নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। ভরা মৌসুমে দাম কেমন থাকবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে গতবারের চেয়ে বেশি থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’
গতবারের চেয়ে দাম বেশি কেন হবে জানতে চাইলে বাবলু বলেন, ‘রপ্তানি বাজার ভালো। গত অর্থবছরে প্রচুর পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এবারও চাহিদা আছে। তাই দাম বেশিই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।’
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পাটচাষি শুক্কুর মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, এবার পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে না পারলে তাদের লোকসান হবে।
গতবার ভরা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। তবে মৌসুম শেষে ডিসেম্বরের দিকে প্রতি মণ পাটের দাম বেড়ে ৬ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মে মাস পর্যন্ত ওই বাড়তি দামে বাজারে পাট বিক্রি হয়।
পাট রপ্তানির পালে হাওয়া
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ (১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
এর আগে এক বছরে এ খাত থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা কখনোই আসেনি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত থেকে ১০২ কোটি (১ দশমিক ০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
ওই একবারই পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল।
গত অর্থবছরে পাটসুতা (জুট ইয়ার্ন) রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ। কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার; আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ডলারের। আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাট ও পাটসুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১২ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের।
পাট এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত
পাট দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশ-বিদেশে পাটের অনেক চাহিদা রয়েছে। একসময় এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। তা থেকে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসায় পাটকে বলা হত ‘সোনালি আঁশ’। কিন্তু কালের আবর্তে তা হারিয়ে যেতে থাকে। দিন যত গড়িয়েছে, পাটের গৌরব তত ম্লান হয়েছে।
প্রায় অর্ধ শতক পর করোনাভাইরাস সংকটকালে যখন দেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছে, তখন পাটে দেখা দিয়েছে আশা। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেই পাট।
এখন পাটের উৎপাদন বাড়ছে; বাড়ছে রপ্তানি; কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে। পাশাপাশি পাটপণ্যের বহুমুখী উৎপাদনও বাড়ছে।
পাট এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে চামড়া খাতকে পেছনে ফেলে রপ্তানি পণ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে পাট।
২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়জাত পণ্য রপ্তানি করে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে এসেছে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। পাট খাত থেকে এসেছে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
গত কয়েক বছর ধরে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলসহ আরও কয়েকটি খাত থেকে বেশি-বিদেশি মুদ্রা আসতে থাকায় মোট রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের অংশ খানিকটা কমেছে।
তিন বছর আগে মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসত পোশাক খাত থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, বর্তমানে দেশে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) পাট খাতের অবদান প্রায় ০.৩ শতাংশ। কৃষি জিডিপিতে তা ১.৫ শতাংশ।
গত বছর সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার পরও সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা যাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকেরা আশার কথা শুনিয়েছেন।
এবার লক্ষ্য ১৪৩ কোটি ডলার
গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার প্রত্যাশায় নতুন অর্থবছরেও পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে বেশি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
গত ৬ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তাতে ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে ১৪৩ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এবার সাড়ে আট লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবার আট থেকে সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আর এ থেকে কম বেশি ৯০ লাখ বেল পাটের আঁশ উৎপন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশে উৎপাদিত পাটের আঁশের প্রায় ৫১ শতাংশ পাটকলগুলোয় ব্যবহৃত হয়, ৪৪ শতাংশের মতো কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানি হয় এবং মাত্র ৫ শতাংশের মতো লাগে ঘর-গৃহস্থালি আর কুটিরশিল্পের কাজে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে পাট হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। মাঝে তা ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরে নেমে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক আঁশের চাহিদা বাড়ায় ২০১০-১৫ সাল নাগাদ চাষের এলাকা বেড়ে ৭ লাখ হেক্টরে পৌঁছায়। এরপর থেকে তা আরও বাড়ছে।
আগে ১২ লাখ হেক্টর এলাকা থেকে যে পরিমাণ পাট পাওয়া যেত, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখন ৭-৮ লাখ হেক্টর জমি থেকেই তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
সরকারি হিসাবে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখ হলেও কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ পাট চাষ এবং চাষ পরবর্তী বিভিন্ন প্রক্রিয়া, যেমন প্রক্রিয়াজাতকরণ, আঁশ বাঁধাই, গুদামজাতকরণ, পরিবহন/স্থানান্তর ও বিপণনের মতো কাজে যুক্ত।
আঁশ ছাড়ানোর পর পাওয়া পাটকাঠি গ্রামে জ্বালানির প্রধান উৎস; পাটচাষ কমে গেলে পাটকাঠি না পেয়ে বৃক্ষ নিধনের প্রবণতা বাড়তে পারে, যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
কৃষিবিদরা বলছেন, পাট চাষ কৃষকদের অন্য পেশায় বা অন্য স্থানে পেশার তাগিদে উপার্জনের জন্য স্থানান্তর কমাতেও ভূমিকা রাখে।
বন্ধ পাটকল চালুর উদ্যোগ নেই
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময় ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটটি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৯০ সালের পর বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় দেশের বৃহত্তম আদমজী জুট মিল।
শেষ পর্যন্ত বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও তিনটি নন-জুট কারখানা। সেগুলোই গত বছরের জুলাইয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অল্প সময়ের মধ্যে এই কারখানাগুলো আবার চালু করা হবে।
বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
তিনি বলেন, বিজেএমসির বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালু হলে বন্ধের সময় যেসব শ্রমিক ছিলেন, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবেন। পর্যায়ক্রমে সব শ্রমিককে পুনর্বাসন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘পাট আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের সেরা মানের পাট উৎপাদন করে। সে জন্য পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার।’
লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৫ পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে গত বছরের ১ জুলাই পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।
সামনে সুদিন
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পৃথিবীতে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে সুসময় চলছে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ায় এ খাতের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে নতুন করে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমলেও পাটপণ্যের চাহিদা কমেনি; উল্টো বেড়েছে। সে কারণেই গত অর্থবছরে আমরা বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি করেছি। খাদ্যের জন্য ফসল ফলাতেই হবে। আর সেই ফসল প্যাকেট বা বস্তাবন্দি করতে পাটের থলে লাগবে।
‘মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে পরিবেশের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় এমনিতেই পলিথিন ব্যবহার কমে আসছিল বেশিরভাগ দেশে। কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে লকডাউনে দূষণ কমে আসার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে।
‘আমার বিশ্বাস, পরিবেশের বিষয়টি আগামীতে আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
বস্তা বা ব্যাগের পাশাপাশি কার্পেটের জন্যও বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্পেট তৈরিতে আমাদের জুট ইয়ার্ন ব্যবহৃত হয়। কোভিড-১৯ আতঙ্কে অনেকেই বাসা বা অফিসের কার্পেট পরিবর্তন করবেন। তখন আমাদের পাটের কদর বাড়বে।’
বাংলাদেশের মতো এত ভালো মানের পাট পৃথিবীর কোনো দেশে উৎপন্ন হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন সেসব দেশে পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বাড়বে। আমরা সে সুফল পাব বলে আশা করছি।’
সাজ্জাদ হোসাইন জানান, বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। কাঁচা পাটের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের মতো। বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে চাহিদা আরও বাড়বে। আমরা আমাদের সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারব যদি এ খাতের দিকে একটু নজর দিই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপাদন হয়। বিশ্ব যত বদলাবে, পাটপণ্যের চাহিদা তত বাড়বে।’
সেই নজর দেওয়ার অংশ হিসেবে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া, প্রয়োজনে প্রণোদনা দেওয়া, বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন বিজেজিইএ চেয়ারম্যান।
সরকার দেশে পাটের ব্যবহার বাড়াতে ২০১০ সালেই আইন করেছে। সে আইন অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে সব ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সোহেল।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, শুধু ধান, চাল ও গমে পাটের মোড়ক ব্যবহার হচ্ছে, সেটাও স্বল্প আকারে; রাজধানী ঢাকায়। জেলা-উপজেলায় কেউ মানছে না এই আইন।’
ছয়টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা গেলে দেশি পাট শিল্প আরও বিকশিত হতো এবং কর্মসংস্থানও বাড়ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই ধরনের মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘পাট থেকে বেশি অর্থ আসাটা ভালো খবর। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আগামী দিনগুলোতেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
‘বিশ্বব্যাপী যেভাবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, তাতে পাটের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। এ বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা যাতে ধারাবাহিকভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
‘নানা সংকটের মধ্যে করোনা যেহেতু একটা ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে, সেই সুযোগটা সবাই মিলে কাজে লাগাতে হবে।’
আরও পড়ুন:বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দয়া করে দেশটাকে বাঁচান। এখন আর বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। এখন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে দেশটাকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেবেন না। যারা বিভিন্ন দাবি তুলছে, তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। তারা নির্বাচনটাকে বন্ধ করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়। দয়া করে এসব আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচনটা শেষ করতে দিন।’
গতকাল বুধবার ঠাকুরগাঁও-১ আসনের গড়েয়া ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের মানুষকে বাঁচাতে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আর বিভাজন সৃষ্টি করবেন না, আর কোনো নতুন দাবি তুলে বিভেদ তৈরি করবেন না। গণভোট ও পিআর নিয়ে আর আন্দোলন করবেন না। নির্বাচনটা হতে দেন, দেশের মানুষ বাঁচুক।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পিআর নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে, সেটা পরবর্তী সংসদে আলোচনা করতে পারেন। কিন্ত এ জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার প্রয়োজন নেই। দেশের মানুষকে বাঁচাতে দ্রুত নির্বাচন হতে দেন।’
তিনি বলেন, ‘আর কোনো হিংসার রাজনীতি আমরা চাই না। শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রই বিএনপির চাওয়া। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ফ্যামিলি কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ আরও সুন্দর হয়। সংস্কারের মাধ্যমের দেশটাকে সুন্দর, সমৃদ্ধ করতেই তো ছুটছি আমরা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণ যে প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তিনি সংসদে গিয়ে আপনাদের জন্য কথা বলবেন সেটাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সে নিয়মে ভোট হয়ে এসেছে। তবে এবারের নির্বাচন একটু ভিন্ন, যেখানে পার্লামেন্টে দুটা কক্ষ থাকবে, উচ্চ ও নিম্নকক্ষ। নিম্নকক্ষে দল থেকে মনোনীত ও আপনাদের ভোটে নির্বাচিত প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। আর উচ্চকক্ষে যারা প্রতিনিধি হবেন, সেখানে আলেম সমাজের মানুষ, বিজ্ঞ সমাজ, হিন্দু-বৌদ্ধ সবাই থাকবেন। যারা আপনাদের নিয়ে কাজ করবেন, আপনাদের পক্ষে কথা বলবেন। সবাই মিলে থাকাটাই বাংলাদেশ। শত ফুল ফুটতে দাও। সকল ফুল ফুটলে সৌরভ ছড়িয়ে যাবে।’
জুলাই সনদ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীকাল শুক্রবার এ সনদে স্বাক্ষর করা হবে। কঠিন শব্দ জনগণ কম বোঝে, তারপরও এটা করা হবে। সবাই যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে, তা নিয়ে সনদ হবে। সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে একমত হয়েছে, সেগুলো স্বাক্ষরিত হবে। আর যেগুলোতে সম্মত হয়নি, সেগুলো জনগণের মতামত লাগবে।’
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট টানতে নিজ সংসদীয় আসনে জনসংযোগ করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত মঙ্গলবার থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ের এক প্রান্ত অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন বিএনপির এ শীর্ষ নেতা।
জনসংযোগের সময় বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলা সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিনসহ দলটির অনেক নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের তৈরি করা অবৈধ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে পুড়ে যাওয়া রাসায়নিক গুদাম আলম ট্রেডার্সও ছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইটেন্যান্স) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
তাজুল ইসলাম আরও জানান, সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি তিনবার ওই গুদামে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। এখন ওই গুদাম অভিযান চালানোর পর্যায়ে ছিল।
পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামের পোশাক কারখানার তৈরি কাপড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিজিএমইএর তালিকাভুক্ত নয়।
মূলত কারখানাটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পোশাক তৈরি হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে সেফটি-সিকিউরিটি কিছুই ছিল না। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এর মালিক আনোয়ারের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পাশের রাসায়নিক গুদামটির নাম আলম এন্টারপ্রাইজ এবং এর মালিক আলমেরও খোঁজ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনোটিরই লাইসেন্স ছিল কি না, তা-ও নিশ্চিত করা যায়নি।
গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। এই আগুন বিস্ফোরিত হয়ে পাশের চারতলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে মিরপুরের রূপনগরে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ভবনটির দোতলায় স্মার্ট প্রিন্টিং নামের একটি কারখানায় টি-শার্ট প্রিন্ট করা হয়। আর তিন ও চারতলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা আছে। পরে চারতলা ভবনের দোতলা ও তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ১০ জনের মরদেহ শনাক্তের দাবি করেছেন স্বজনেরা।
কেমিকেল গোডাউনের আগুন প্রায় ২৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কেমিকেল গোডাউনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এর আগে দুপুরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) কাজী নজমুজ্জামান বলেছেন, সকালে আমরা কেমিকেল স্যুট পরে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে রাসায়নিক গুদামের দরজা খুলেছি। ভেতরের অবস্থা দেখেছি। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে ধোঁয়ার কারণে এখন আমাদের অভিযান চালানো নিরাপদ নয়। অভিযান শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কেমিকেল থেকে টক্সিক গ্যাস তৈরি হয়েছে। এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে গেলে মানুষের ত্বক, ফুসফুস, হার্টের সমস্যা হতে পারে। আমরা মাইকিং করে স্থানীয়দের বলছি- সবাই দূরে থাকুন, নিজেদের নিরাপদে রাখুন। আমরা ঘটনাস্থলে কাজ করছি, যখন নিরাপদ হবে তখন এটি খুলে দেওয়া হবে। রাসায়নিকের বিষয়টি খুবই বিপদজনক। রাসায়নিক সামগ্রী গুদামজাত করার যে নীতিমালা রয়েছে, সেটি না মানা হলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের মিশ্রণে বড় ধরনের বিক্রিয়া হতে পারে। এই কারণে একটু বেশি সময় লাগবেই।
এদিকে মিরপুরের অগ্নিকাণ্ডে নিহত প্রত্যেক শ্রমিক পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার। এছাড়া আহত শ্রমিকদের চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে এ সহায়তা দেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডের কারণ, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ ও ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লস্কার তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে কমিটি।
এছাড়া দুর্ঘটনার জন্য দায়ি ব্যক্তিদের শনাক্ত করা, দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরি, পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় কোনো গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখবে এ কমিটি। আগামী এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে একটি সুপারিশ দেবে তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘এই সংস্কার সারা জাতি চায়, আমরাও চাই। যে দলই ক্ষমতায় আসুক বা জাতীয় সংসদে যারাই মেজরিটি পাক, তাদের এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব, যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্ন মত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে, ওগুলো একদম পরিষ্কারভাবে দফাওয়ারি উল্লেখ থাকবে- কী কী বিষয়ে, কীভাবে নোট অব ডিসেন্ট আছে। কারণ নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার এখতিয়ারের জন্যই তো আমরা ঐকমত্য কমিশনে আলাপ-আলোচনা করেছি।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আগামী ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় যে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে, তার আগে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সবাই অংশগ্রহণ করে এবং এটাকে একটা ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আমরা সংরক্ষণ করি, স্বাক্ষর করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সম্মত হয়েছি। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার সুযোগ হয়নি। কয়েকজন বক্তব্য রেখেছেন, সব দল অংশগ্রহণ করেনি। আমি আমার বক্তব্যে বলেছি, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যেই আমরা যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন হোক, অন্যান্য কর্মকাণ্ড হোক, সব কিছুর লক্ষ্য হবে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা- সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং একটা ক্রেডিবল ইলেকশন।’
‘এখন সেটা করার লক্ষ্যে আমরা জুলাই জাতীয় সনদ যেটা প্রণয়ন করছি তার সঙ্গে সম্পর্ক কী? আমি মনে করি, জুলাই জাতীয় সনদের সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই,’ যোগ করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘এই সংস্কার সারা জাতি চায়, আমরাও চাই। যে দলই ক্ষমতায় আসুক বা জাতীয় সংসদে যারাই মেজরিটি পাক, তাদের এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে। গণভোটের কথা আমরা বলেছি, সেই গণভোটে যাতে জনগণের পক্ষ থেকে একটা সার্বভৌম এখতিয়ার, কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়। যাতে সেটা ম্যান্ডাটরি হয় জাতীয় সংসদের ওপর, সমস্ত সংসদ সদস্যদের ওপরে। যাতে এই সংস্কারগুলো, যেগুলো জনগণ পক্ষে রায় দেবে সেটা যেন গ্রহণ করি।’
‘কথা থাকল জুলাই জাতীয় সনদে কি কোনো প্রশ্ন থাকবে গণভোটের ব্যাপারে? একটাই প্রশ্ন থাকতে হবে, আমরা সবাই জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব, যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্ন মত আছে, নোট অব ডিসেন্ট আছে, ওগুলো একদম পরিষ্কারভাবে দফাওয়ারি উল্লেখ থাকবে- কী কী বিষয়ে, কীভাবে নোট অব ডিসেন্ট আছে। কারণ নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার এখতিয়ারের জন্যই তো আমরা ঐকমত্য কমিশনে আলাপ-আলোচনা করেছি।’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আলোচনার উদ্দেশ্যই ছিল যে সমস্ত বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত, সেগুলো সংকলিত করা। যে সমস্ত বিষয়ে দ্বিমত অথবা ভিন্ন মত সেগুলো সংকলিত করা। আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে উইথ নোট অব ডিসেন্ট। যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্ন মত আছে, সেগুলো স্পষ্ট উল্লেখ করে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সেভাবেই জুলাই জাতীয় সনদ প্রণীত হলে, স্বাক্ষরিত হলে গণভোটে একটাই প্রশ্ন থাকতে পারে যে, জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, জনগণ তার পক্ষে আছে কি নাই; হ্যাঁ অথবা না বলুন।’
‘আমরা আশা করি, এই গণভোটে না ভোটের পরিমাণ হাতে গোনা যাবে। কারণ সমগ্র জাতি তো সংস্কারের পক্ষে। সুতরাং আমরা ধরেই নিতে পারি জনগণ সংস্কারের পক্ষে আছে। আমরা সবাই আছি। সকল রাজনৈতিক দল আছে। এভাবে গণভোটে যে ফলাফল আসবে, তার একটা কারণ হলো- সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ যাতে গণভোটের মধ্য দিয়ে এমন একটা এখতিয়ার-কর্তৃত্ব দেয় সংসদকে, যাতে করের সেটা বাধ্যবাধকতা থাকে প্রতিপালনে-বাস্তবায়নে,’ বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সেটাকে বলা হচ্ছে গাঠনিক ক্ষমতা। সেই সংসদকে দেওয়া হচ্ছে এবং সেটার অনুবলে যখন কোনো সংস্কার বা সংশোধনী গৃহীত হবে, সেটা চাইলেও জুডিশিয়ারি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। এটাই হচ্ছে গণভোটের ভিত্তি। আমরা অপেক্ষায় আছি আগামীকাল শুক্রবার (১৭ তারিখ) আমাদের ঐতিহাসিক দলিল জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এবং সেটার পরে সেই স্বাক্ষরিত দলিল সবার কাছে দেওয়া হবে। জাতির জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তার পরে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন প্রক্রিয়াসহ সুপারিশ করবে।’
‘সেই সুপারিশ হিসেবে আমরা বলেছি যে, গণভোটের মধ্য দিয়ে একইদিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সেই সম্মতিটা নেওয়া যায়। যার মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের সমস্ত প্রস্তাবগুলো যেগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে, নোট অব ডিসেন্টসহ সেটা বাস্তবায়ন হবে,’ যোগ করেন তিনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসেই হবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গতকাল বুধবার রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘অতি জরুরি’ বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবেই। এটা এই যে ঐকমত্য কমিশনের যে সনদ, এটা সনদেরই অংশ এখন। এটার সঙ্গে এটা জড়িত। এই যে ঘোষণা আমরা করলাম, এটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এটা এমন না যে কথার কথা বলে ফেলেছি। ওই রকম না। এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং ওই যে বারবার বলেছি, এটা উৎসবমুখর নির্বাচন হবে।’
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা যেমন সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন, আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো- সবাই মিলে উৎসবমুখর নির্বাচনটা করে দেওয়া। তাহলেই আমাদের কাজ পরিণত হলো।’
রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনকে একান্তভাবে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য তিনি এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, কঠিন কঠিন বিষয়ে আলোচনা করা এবং সন্তোষজনকভাবে রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন মিলে এর সমাপ্তি আনায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধন্যবাদ জানান। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন, এটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর পলিটিক্যাল সিস্টেমের (রাজনৈতিক ব্যবস্থার) ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।’
জুলাই সনদ রচনাকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান, এই অভ্যুত্থানের এটাই আমার মনে হয় পরবর্তী অধ্যায় সঠিকভাবে রচিত হলো। যে সংস্কারের কথা আমরা মুখে বলে যাচ্ছিলাম, আপনারা সেই সংস্কার, প্রকৃতপক্ষে যে সংস্কার হবে, তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। কাজেই আমরা এই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সারা জাতি বড় রকমের উৎসবের মধ্যে আমরা শরিক হব।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে কলম দিয়ে স্বাক্ষর করা হবে, সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। মানুষ তাদের ভুলতে পারবে না। এটা এমন একটা ঘটনা যে ঘটনার ভেতরে থেকে এর বিশালত্ব বোঝা যাচ্ছে না। মাসের পর মাস বৈঠক করে হতাশা এসেছে, মনে হয়েছে, এটা হয়তো অসমাপ্ত থেকে যাবে। তবে এটা অসমাপ্ত থেকে যায়নি। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ জাতির জন্য একটা মস্ত বড় সম্পদ হয়ে রইল।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যেসব দলিল তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো হারিয়ে যাবে না। এগুলো জনসাধারণের মধ্যে সহজ ভাষায় প্রচার করা হবে। যাতে করে সবার মনের মধ্যে থাকে, কেন একমত হয়েছি।’ সরকার হিসেবে জুলাই সনদ ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তাদের।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যেসব বিতর্ক হয়েছে, সেগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে ও বই করে রাখা হবে, যেন এগুলো সম্পদ হিসেবে থাকে, হারিয়ে না যায়। যাতে করে সবাই জানতে পারে, কেমন জাতি গড়ার জন্য এগুলো করা হয়েছে।
সনদ ও নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কোনো জিনিস নয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উত্তরণটা কীভাবে হবে, এটা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সেটার উত্তরও জুলাই সনদে দেওয়া আছে। এই উত্তর নিয়ে যেন সন্তোষভাবে উত্তরণটা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেভাবে রূপান্তরটি হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিপূর্ণ প্রচেষ্টা হবে, আপনারা যত কষ্ট করে এগুলো রচনা করছেন, সেটা যেন আমরা বাস্তবে রূপান্তর করতে পারি। নির্বাচনের মাধ্যমে এবং আমাদের দৈনন্দিন রাজনৈতিক মাধ্যমে যেন আমরা সেটাকে রূপান্তর করতে পারি। এই হলো আমাদের আশা। আগামীকাল শুক্রবারে আমরা সেই আশাকে সারা জাতির সামনে নিয়ে আসব।’
আগামীকাল শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উৎসবমুখরভাবে সেখানে যাব এবং এই দলিলে সই করব এবং উৎসব করব। সবাই, সারা জাতি এটায় শরিক হবে। আপনারা তাদের সামনের সারির মানুষ, যারা প্রকৃত সই করছেন। সারাদেশের মানুষ চিন্তার মধ্যে, তাদের ভাবনার মধ্যে আপনাদের সঙ্গে সই করছে। জাতির জন্য এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, উচ্চ আদালতে অনেক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। উচ্চ আদালতে বেঞ্চগুলো গঠনের কাজকে বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রয়োজন রয়েছে। মামলার যে সিরিয়াল হয় সেখানে আগের মামলা পেছনে চলে যায় আবার পেছনের মামলা আগে চলে আসে। এটা কীভাবে হয় সেটা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন রয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে অনলাইন (ই-বেইলবন্ড) কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা অনেক কাজ করেছি। সময় বাঁচানোর জন্য আমরা ফৌজদারি কার্যবিধিতেও আমরা অনেক পরিবর্তন এনেছি। সরকারি ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্মকর্তাদের সাক্ষী আমরা অনলাইনে নেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য বিচার নিতে মানুষকে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেটা যেন হ্রাস পায় এর ব্যাবস্থা করা।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায়ই দেখি বাচ্চার কাস্টডি’কে পাবে, দুই লাখ টাকার চেকের মামলা এ রকম ছোট বিষয়গুলোর জন্য যেন কোর্টে যেতে না হয় সে জন্য আমরা সংস্কার করছি। এটা পাইলট প্রজেক্ট আকারে আছে। দুয়েক মাসের মধ্যে আমরা এটা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারব। নিন্ম আদালতে সংস্কার করে ফেললাম কিন্তু উচ্চ আদালতে সংস্কার হরো না, তাহলে কিন্তু কোনো লাভ হয় না। নিন্ম আদালতে যে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয় উচ্চ আদালতে তা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। শিশু আছিয়ার ঘটনায় আমরা আইন বদলে এক মাসে বিচার করলাম। কিন্তু উচ্চ আদালতে এটা কয়েক বছরেও নিষ্পত্তি হবে কি না, আমরা জানি না।
তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারকরা নিন্ম আদালতে ইনস্পকেকশনে যান আদালত ঠিকমতো চলছে কি না, দেখতে। তখন এটা একরকম আনন্দভ্রমণে পরিণত হয়। বগুড়ায় এক জায়গায় ইনস্পেকশনে দুই লাখের অধিক টাকা খাবারের বিল দিতে হয়েছে। এই টাকা দিয়েছে নিন্ম আদালতের গরিব বিচারকরা।
তিনি আরও বলেন, নিন্ম আদালত সংস্কার করব কিন্তু উচ্চ আদালত আগের মতো থাকলে লাভ হবে না। এতে বিচারপ্রত্যাশীরা লাভবান হবে না। আমরা যতদিন আছি সংস্কারের কাজ করব। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন আমরা বিচারব্যাবস্থাকে আগের চেয়ে অনেক সুন্দরভাবে সাজাতে পারব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানসহ প্রমুখ।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ আজ বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে বাহিনীর চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। সফরকালে তিনি বাহিনীর সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, অপারেশনাল সক্ষমতা উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুসংহত রাখতে আনসার ও ভিডিপির সমন্বিত দায়িত্ব ও কার্যকর ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বান্দরবানের সুয়ালক আনসার ব্যাটালিয়ন (১০ বিএন)-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মহাপরিচালক স্বাধীনতা-পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সময়ে পার্বত্য অঞ্চলে আনসার ব্যাটালিয়নের অবদান স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “আনসার বাহিনী ১৯৭৬ সাল পূর্বকাল থেকেই মাতৃভূমির স্বার্থরক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে নিবিড় সমন্বয় ও সামঞ্জস্য বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ফলে বাহিনী অর্জন করেছে দেশবাসীর অবিচল আস্থা।” “পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ, সবুজ বাংলাদেশ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সুয়ালক আনসার ব্যাটালিয়ন আয়োজিত গাছের চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক মহোদয়ের হাত থেকে বান্দরবানের সুয়ালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা গাছের চারা গ্রহণ করে। আনসার সদস্য ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডে সম্মিলিত অংশগ্রহণ কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই নয়, বরং টেকসই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা গঠনে বাহিনীর দীর্ঘদিনের দায়বদ্ধতাকে পুনর্ব্যক্ত করে।
রুমা আনসার ব্যাটালিয়ন (১৬ এবিএন) পরিদর্শনকালে মহাপরিচালক সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মানদণ্ডে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বহিঃশত্রু বা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি, সামাজিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা কিংবা নিরাপত্তা পরিধি স্খলনের যেকোনো ঝুঁকি প্রতিহত করতে আনসার বাহিনীর ভূমিকা হবে শক্তিশালী ও অবিচল।” মহাপরিচালক দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “বর্তমানে আনসার বাহিনীর অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হলো সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষ অর্জন।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা প্রদান, যৌথ টহল কার্যক্রম (এসআরপি, এলআরপি) এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আনসার বাহিনীর সক্রিয়, সহনশীল ও পেশাদার ভূমিকা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। সফরের শেষাংশে মহাপরিচালক চট্টগ্রামের পটিয়া আনসার ব্যাটালিয়ন (৩৭ বিএন)-এর চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের প্রতি দেশ ও জাতির কল্যাণে একনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, আগামীকাল মহাপরিচালক চট্টগ্রামের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় চলমান ভিডিপি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন বলে আনসার-ভিডিপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। মহাপরিচালকের এ সফরকালে আরও উপস্থিত ছিলেন উপমহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোঃ সাইফুল্লাহ রাসেল, উপমহাপরিচালক (চট্টগ্রাম রেঞ্জ) ড. সাইফুর রহমানসহ বাহিনীর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানী বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দল, মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আমরা এই আদর্শকে ধারণ করি, লালন করি। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল, গণহত্যা চালিয়েছিল তখন একজন দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার শহীদ জিয়াউর রহমান পাকিস্তানীদের এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তান সরকারের সাথে। আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে কোর্ট মার্শালে জিয়াউর রহমানের ফাঁসি হতো এই বিদ্রোহ ঘোষণার কারণে। নিশ্চিত ফাঁসি জেনেও তিনি দেশ মাতৃকার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজি মন্টু কলেজ মাঠে আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এসএম জিলানী বলেন, ইতিহাস থেকে জেনেছি, যখন কোনো দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তখন সেই দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের নেতা সে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে থাকেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন নাই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সেদিন দিকবেদিক নেতৃত্ব শূণ্যতায় ছিল। জিয়াউর রহমান অপেক্ষায় ছিলেন হয়তো স্বাধীনতার ঘোষণা কেউ দিবে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের নেতা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না। জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করলেন যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না দেই তাহলে বাংলাদেশর মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে না। আর যদি বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হতে পারব না।
সমাবেশে কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী আবুল খায়ের। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান হাওলাদার, মুক্তিযোদ্ধা মোদাচ্ছের ঠাকুরসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সিনিয়র নেতারা।
মন্তব্য