বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি নতুন করে জোরালোভাবে আলোচনায় আসায় এই সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে; দামও বেশ ভালো। গতবারের চেয়ে মণে প্রায় হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। কৃষকরা বাড়তি এ দাম পেয়ে খুশি। তবে ভরা মৌসুমে এই দাম থাকবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রধান বাজারগুলোতে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করায় রপ্তানিকারকরাও এই খাতটি থেকে গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আনতে নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন।
দেশের সব জেলাতেই কম-বেশি পাটের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ হয় ফরিদপুর জেলায়।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হজরত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, জেলায় এবার ৮৫ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮৪ হাজার ৪২৭ হেক্টর জমিতে। তার আগের মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে।
গত মৌসুমে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশি জমিতে চাষ করেছেন বলে জানান হজরত আলী।
এই মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ১ লাখ ৮৮ হাজার মেট্টিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাট ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে তারা কিনছেন। সপ্তাহখানেক আগে ৩ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন।
‘মাত্র নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। ভরা মৌসুমে দাম কেমন থাকবে বোঝা যাচ্ছে না। তবে গতবারের চেয়ে বেশি থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।’
গতবারের চেয়ে দাম বেশি কেন হবে জানতে চাইলে বাবলু বলেন, ‘রপ্তানি বাজার ভালো। গত অর্থবছরে প্রচুর পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এবারও চাহিদা আছে। তাই দাম বেশিই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।’
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার পাটচাষি শুক্কুর মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, এবার পাট উৎপাদনে খরচ বেশি হয়েছে। প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে না পারলে তাদের লোকসান হবে।
গতবার ভরা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। তবে মৌসুম শেষে ডিসেম্বরের দিকে প্রতি মণ পাটের দাম বেড়ে ৬ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। মে মাস পর্যন্ত ওই বাড়তি দামে বাজারে পাট বিক্রি হয়।
পাট রপ্তানির পালে হাওয়া
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ (১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
এর আগে এক বছরে এ খাত থেকে এত বেশি বিদেশি মুদ্রা কখনোই আসেনি।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত থেকে ১০২ কোটি (১ দশমিক ০২ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
ওই একবারই পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছিল।
গত অর্থবছরে পাটসুতা (জুট ইয়ার্ন) রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ। কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার ডলার; আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি ডলারের। আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাট ও পাটসুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১২ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ।
এ ছাড়া পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের।
পাট এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত
পাট দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশ-বিদেশে পাটের অনেক চাহিদা রয়েছে। একসময় এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে আসত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। তা থেকে রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসায় পাটকে বলা হত ‘সোনালি আঁশ’। কিন্তু কালের আবর্তে তা হারিয়ে যেতে থাকে। দিন যত গড়িয়েছে, পাটের গৌরব তত ম্লান হয়েছে।
প্রায় অর্ধ শতক পর করোনাভাইরাস সংকটকালে যখন দেশের রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকেছে, তখন পাটে দেখা দিয়েছে আশা। আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেই পাট।
এখন পাটের উৎপাদন বাড়ছে; বাড়ছে রপ্তানি; কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে। পাশাপাশি পাটপণ্যের বহুমুখী উৎপাদনও বাড়ছে।
পাট এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে চামড়া খাতকে পেছনে ফেলে রপ্তানি পণ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে পাট।
২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়জাত পণ্য রপ্তানি করে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া খাত থেকে এসেছে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। পাট খাত থেকে এসেছে ১১৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
গত কয়েক বছর ধরে পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলসহ আরও কয়েকটি খাত থেকে বেশি-বিদেশি মুদ্রা আসতে থাকায় মোট রপ্তানিতে তৈরি পোশাক খাতের অংশ খানিকটা কমেছে।
তিন বছর আগে মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ আসত পোশাক খাত থেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, বর্তমানে দেশে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখের মতো। দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) পাট খাতের অবদান প্রায় ০.৩ শতাংশ। কৃষি জিডিপিতে তা ১.৫ শতাংশ।
গত বছর সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়ার পরও সোনালি আঁশ পাটের ‘সোনালি দিন’ ফিরে আসার হাতছানি দেখা যাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকেরা আশার কথা শুনিয়েছেন।
এবার লক্ষ্য ১৪৩ কোটি ডলার
গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার প্রত্যাশায় নতুন অর্থবছরেও পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে বেশি রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
গত ৬ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে, তাতে ২৩ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে ১৪৩ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
এবার সাড়ে আট লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এবার আট থেকে সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। আর এ থেকে কম বেশি ৯০ লাখ বেল পাটের আঁশ উৎপন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশে উৎপাদিত পাটের আঁশের প্রায় ৫১ শতাংশ পাটকলগুলোয় ব্যবহৃত হয়, ৪৪ শতাংশের মতো কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানি হয় এবং মাত্র ৫ শতাংশের মতো লাগে ঘর-গৃহস্থালি আর কুটিরশিল্পের কাজে।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে পাট হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। মাঝে তা ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরে নেমে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক আঁশের চাহিদা বাড়ায় ২০১০-১৫ সাল নাগাদ চাষের এলাকা বেড়ে ৭ লাখ হেক্টরে পৌঁছায়। এরপর থেকে তা আরও বাড়ছে।
আগে ১২ লাখ হেক্টর এলাকা থেকে যে পরিমাণ পাট পাওয়া যেত, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখন ৭-৮ লাখ হেক্টর জমি থেকেই তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
সরকারি হিসাবে পাটচাষির সংখ্যা ৫০ লাখ হলেও কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ পাট চাষ এবং চাষ পরবর্তী বিভিন্ন প্রক্রিয়া, যেমন প্রক্রিয়াজাতকরণ, আঁশ বাঁধাই, গুদামজাতকরণ, পরিবহন/স্থানান্তর ও বিপণনের মতো কাজে যুক্ত।
আঁশ ছাড়ানোর পর পাওয়া পাটকাঠি গ্রামে জ্বালানির প্রধান উৎস; পাটচাষ কমে গেলে পাটকাঠি না পেয়ে বৃক্ষ নিধনের প্রবণতা বাড়তে পারে, যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
কৃষিবিদরা বলছেন, পাট চাষ কৃষকদের অন্য পেশায় বা অন্য স্থানে পেশার তাগিদে উপার্জনের জন্য স্থানান্তর কমাতেও ভূমিকা রাখে।
বন্ধ পাটকল চালুর উদ্যোগ নেই
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন, পরিত্যক্ত ও সাবেক ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ৭৮টি পাটকল নিয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে মিলের সংখ্যা বেড়ে হয় ৮২। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের সময় ৩৫টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটটি পাটকলের পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৯০ সালের পর বিশ্বব্যাংকের পাট খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১১টি পাটকল বন্ধ, বিক্রি ও একীভূত করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০২ সালের জুনে বন্ধ হয় দেশের বৃহত্তম আদমজী জুট মিল।
শেষ পর্যন্ত বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে চালু ছিল ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও তিনটি নন-জুট কারখানা। সেগুলোই গত বছরের জুলাইয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, অল্প সময়ের মধ্যে এই কারখানাগুলো আবার চালু করা হবে।
বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
তিনি বলেন, বিজেএমসির বন্ধ পাটকল দ্রুততম সময়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বা ইজারায় চালু হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পাটকল চালু হলে বন্ধের সময় যেসব শ্রমিক ছিলেন, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবেন। পর্যায়ক্রমে সব শ্রমিককে পুনর্বাসন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘পাট আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্বের সেরা মানের পাট উৎপাদন করে। সে জন্য পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার।’
লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৫ পাটকলের ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে গত বছরের ১ জুলাই পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।
সামনে সুদিন
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পৃথিবীতে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানিতে সুসময় চলছে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি পরিবেশের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনার জন্ম দেওয়ায় এ খাতের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে নতুন করে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমলেও পাটপণ্যের চাহিদা কমেনি; উল্টো বেড়েছে। সে কারণেই গত অর্থবছরে আমরা বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি করেছি। খাদ্যের জন্য ফসল ফলাতেই হবে। আর সেই ফসল প্যাকেট বা বস্তাবন্দি করতে পাটের থলে লাগবে।
‘মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে পরিবেশের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনায় এমনিতেই পলিথিন ব্যবহার কমে আসছিল বেশিরভাগ দেশে। কোভিড-১৯ সঙ্কটের মধ্যে লকডাউনে দূষণ কমে আসার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে।
‘আমার বিশ্বাস, পরিবেশের বিষয়টি আগামীতে আরও জোরালোভাবে সামনে আসবে। আর তাতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে।’
বস্তা বা ব্যাগের পাশাপাশি কার্পেটের জন্যও বাংলাদেশের পাটের চাহিদা বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্পেট তৈরিতে আমাদের জুট ইয়ার্ন ব্যবহৃত হয়। কোভিড-১৯ আতঙ্কে অনেকেই বাসা বা অফিসের কার্পেট পরিবর্তন করবেন। তখন আমাদের পাটের কদর বাড়বে।’
বাংলাদেশের মতো এত ভালো মানের পাট পৃথিবীর কোনো দেশে উৎপন্ন হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এখন সেসব দেশে পাটপণ্যের চাহিদা অনেক বাড়বে। আমরা সে সুফল পাব বলে আশা করছি।’
সাজ্জাদ হোসাইন জানান, বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। কাঁচা পাটের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের মতো। বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে চাহিদা আরও বাড়বে। আমরা আমাদের সোনালি আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারব যদি এ খাতের দিকে একটু নজর দিই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপাদন হয়। বিশ্ব যত বদলাবে, পাটপণ্যের চাহিদা তত বাড়বে।’
সেই নজর দেওয়ার অংশ হিসেবে উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া, প্রয়োজনে প্রণোদনা দেওয়া, বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন বিজেজিইএ চেয়ারম্যান।
সরকার দেশে পাটের ব্যবহার বাড়াতে ২০১০ সালেই আইন করেছে। সে আইন অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তবে সব ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সোহেল।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, শুধু ধান, চাল ও গমে পাটের মোড়ক ব্যবহার হচ্ছে, সেটাও স্বল্প আকারে; রাজধানী ঢাকায়। জেলা-উপজেলায় কেউ মানছে না এই আইন।’
ছয়টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা গেলে দেশি পাট শিল্প আরও বিকশিত হতো এবং কর্মসংস্থানও বাড়ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
একই ধরনের মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘পাট থেকে বেশি অর্থ আসাটা ভালো খবর। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আগামী দিনগুলোতেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
‘বিশ্বব্যাপী যেভাবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে, তাতে পাটের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। এ বিষয়টি অনুধাবন করে আমরা যাতে ধারাবাহিকভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
‘নানা সংকটের মধ্যে করোনা যেহেতু একটা ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে, সেই সুযোগটা সবাই মিলে কাজে লাগাতে হবে।’
আরও পড়ুন:পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে ঢাকাসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১ হাজার ৬১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিভিন্ন মামলার এবং ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ১ হাজার ৬০ জন এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িত ৫৫৬ জন রয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর আজ এ তথ্য জানান।
এ সময় একটি বিদেশী পিস্তল ও চার রাউন্ড কার্তুজ জব্দ করা হয়েছে।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে সরকার। কারখানাটি পুরোদমে উৎপাদনে থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আজ রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেডের (কেপিএমএল) অতিথি ভবনের সম্মেলনকক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কেপিএমএলের কর্মকর্তাদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। আজ এক তথ্য বিবরণীতে একথা জানানো হয়।
উপদেষ্টা বলেন, দেশে প্রচুর পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন, বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি না করে দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে। মিলের উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা হবে। বিদেশি ক্যামিকেলের ওপর নির্ভর না করে দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মতবিনিময় সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান, বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান, কেপিএমএলের এমডি শহীদ উল্লাহ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন, কেপিএমএল সিবিএ সভাপতি আব্দুল রাজ্জাকসহ কেপিএমএলের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভা শেষে তিনি কেপিএমএল কারখানা পরিদর্শন করেন এবং কারখানার বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন।
দেশের খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো ও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল আরিচায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বান্দরবানে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ শুক্রবার ভোর ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ১৪ মিনিটে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আগামী ছয় মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। এর ফলে এই সব মামলায় জড়িত ব্যক্তিরা চিরতরে সকল কলঙ্ক ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি মনে করি, মন্ত্রণালয় আগামী ছয় মাসে কমপক্ষে ২০ হাজার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মিথ্যা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই প্রায় ১২ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে, যা কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।’
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ পর্যন্ত (২৮ মে পর্যন্ত) ১৬টি বৈঠকে ১১ হাজার ৪৪৮টি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে এবং এ বিষয়ে আরও কাজ চলছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তাও চেয়েছিল তারা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারে সরকার কর্তৃক অবহেলার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয় এই আহ্বান জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জেলা পর্যায়ের কমিটি ও আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর শাখা প্রেরিত তালিকা ও সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে কমিটি রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজনৈতিক দলগুলোও প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে রাজনৈতিক মামলার তালিকা পাঠাতে পারে।
এর আগে ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘এই পরিপ্রেক্ষিতে, বিএনপি ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার মামলার তালিকা পাঠিয়েছিল এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০টি মামলার তালিকা পাঠিয়েছিল।’
তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি, নিজস্ব উদ্যোগে কাজ করে, ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধেক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।
আইন উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল দুটিকে তাদের মামলার তালিকার সঙ্গে প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) ও চার্জশিট (যেখানে প্রযোজ্য) এর মতো প্রাসঙ্গিক নথি না পাঠানোর জন্যও দোষারোপ করে বলেছেন যে, এটি মামলা প্রত্যাহার বিলম্বিত হওয়ার প্রধান কারণ।
উপদেষ্টা সম্প্রতি তার যাচাইকৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে বলেছেন, ‘অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ২০ মে, ২০২৫ তারিখে ৪৪টি মামলার তালিকা দাখিল করেছে। মামলাগুলোর নথি পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ইতোমধ্যে এই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলার তালিকাসহ এফআইআর ও চার্জশিট জমা দিতে আইন মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে।
অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
আজ চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দ্বিতীয় দফায় তাকে ফের দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনায়েদ তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ২২ জুন রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন ২৩ জুন তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরে বাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার। অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাফিজুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।
আয়কর অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন অফিসে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপির নামে আন্দোলন চালিয়ে একটি ‘কুচক্রী মহল’র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘যারা আয়কর অফিসে বা অন্যান্য বিভাগে বিএনপির নামে আন্দোলন করছেন—তারা বিএনপির অংশ নয়। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই এটা করছে।’
শুক্রবার (২৭ জুন) রথযাত্রা উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রিজভী এই মন্তব্য করেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং সরকারি অফিসে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নামে নতুন নতুন কার্যকলাপ শুরু করার চেষ্টা করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী তাদের সকলেরই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। তারেক রহমান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও অনেকে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’
রিজভী বলেন, তিনি এমন একজনের কথা শুনেছেন যিনি বিএনপির নাম ব্যবহার করে আয়কর অফিসে আন্দোলন করছেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি (সেই ব্যক্তি) এখন (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণের চেষ্টা করছেন এবং ভবিষ্যতে অন্য কাউকে অপসারণের চেষ্টা করবেন। কে তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছে? আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব—আমি এ বিষয়ে জানি না। আপনি নিজেই বিএনপির নাম ব্যবহার করে একটি অফিসে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেখানে আরও অনেক বিএনপি নেতা আছেন, কেউ এ সম্পর্কে জানেন না।’
বিএনপির নামে যারা অপকর্ম করছে তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান রিজভী। বলেন, ‘রক্তপাত এবং সংগ্রামের মাধ্যমে সৃষ্ট সুযোগ আগামী দিনে একটি উন্নত রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতির সমালোচনা করলেও সরকারের ভালো কাজের প্রতি সমর্থন জানায় বিএনপি।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে আলোচনা অনুসারে, সরকার যুক্তিসঙ্গত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল স্বীকার করেছেন যে, ২০২৪ সালের নির্বাচন ছিল একটি ভুয়া নির্বাচন। ‘তার এই মন্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে (শেখ) হাসিনার আমলে সমস্ত নির্বাচন অবৈধভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’
বিএনপি নেতা দাবি করেন, প্রশাসনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কিছু লোক—যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। তারা বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’
দেশব্যাপী ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ যথাযথভাবে উদযাপনে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কমিটি ও অর্থনৈতিক) মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে ৩৫ সদস্যের একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন-জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (সভাপতি); পুলিশ সুপার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, সিভিল সার্জন, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার; নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ; নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ; উপপরিচালক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; নির্বাহী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর; নির্বাহী প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জেলা কমান্ড্যান্ট, আনসার ও ভিডিপি/অধিনায়ক, আনসার ব্যাটালিয়ন, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (সকল), জেলা সদরের সরকারি কলেজের একজন প্রতিনিধি (অধ্যক্ষ মনোনীত), সরকারি মহিলা কলেজের একজন প্রতিনিধি (অধ্যক্ষ মনোনীত), বেসরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষ (জেলা প্রশাসক মনোনীত), মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষ (জেলা প্রশাসক মনোনীত), জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর; উপপরিচালক, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর; উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক (জেলা প্রশাসক মনোনীত), বালিকা বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক (জেলা প্রশাসক মনোনীত), কওমি মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষ (জেলা প্রশাসক মনোনীত), জেলা কালচারাল অফিসার, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি. ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এ শহিদ পরিবারের দু’জন সদস্য (যদি থাকে, জেলা প্রশাসক মনোনীত), আহত দু’জন সদস্য (যদি থাকে, জেলা প্রশাসক মনোনীত), জেলার পাঁচজন রাজনৈতিক নেতা/গণ্যমান্য ব্যক্তি (একজন মহিলা অন্তর্ভুক্তসহ, জেলা প্রশাসক মনোনীত), কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় নির্বাহী কমিটির পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন, জেলা পর্যায়ের বাস্তবতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান এবং জাতীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটি কর্তৃক অর্পিত কাজ করবে জেলা বাস্তবায়ন কমিটি।
কমিটি প্রয়োজনে নতুন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে এবং প্রয়োজন অনুসারে সভা আহ্বান করা যাবে। এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে।
মন্তব্য